#আড়ালে_তুমি |১০|
#_সাইদা_মুন
সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘের আজ ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছে নেই তবুও যেতে হচ্ছে বিচ্চু গুলোর জন্য। রাস্তা পুরো ফাকাঁ আশেপাশে কোনো গাড়িও নেই। এই ঝুম বৃষ্টিতে কেই বা বের হবে। অগত্যা বাধ্য হয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে হাটতে থাকে, সামনে যদি কোনো রিকশা পায় সেই আশায়। তবে প্রায় অর্ধেক পথ যেয়েও কোনো খালি রিকশার দেখায় মিলেনি।
হঠাৎ মেঘের চোখ যায়, রাস্তার পাশে এক বয়স্ক মহিলার দিকে। মাথায় একটা ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে এই বৃষ্টির মাঝেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে তেমন কিছুই লাভ নেই, ভিজেই গেছে। মেঘের ভীষণ মায়া লাগলো, সে আশেপাশে তাকিয়ে মহিলাটির কাছে গিয়ে তাকে নিজের ছাতা টা দিয়ে দেয়। মহিলাটি মেঘের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে মুখে সে কি অমায়িক হাসি, সেই হাসিতেই যেনো মেঘের জন্য অঢেল দোয়া সম্মান বলে দিচ্ছে।মেঘও হালকা হেসে দৌড়ে গিয়ে পাশের ছাউনির নিচে দাঁড়ায় বৃষ্টি কমার আশায়।
প্রায় ৩০ মিনিট পর বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয় এর মধ্যে একটি রিকশা ও পেয়ে যায়। সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। ভার্সিটিতে পৌছাতে পৌছাতে ১০:১০ বেজে গেছে। অলরেডি প্রথম ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তারাহুরো করে করিডোর পেরিয়ে ক্লাসের দিকে এগোয়।
দু’তলার তিন নাম্বার ক্লাসটা তাদের। মেঘ দু’তলায় উঠে প্রথম ক্লাস পেরিয়ে যেতেই হঠাৎ কেউ তার হাত ধরে টান দিয়ে ক্লাসের ভেতর ঢুকিয়ে সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা জানালা বন্ধ হওয়ায় ক্লাস অন্ধকার হয়ে আছে। মেঘ হঠাৎ ঘটনায় নিশ্চুপ হয়ে যায়। পরক্ষণেই সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে তবে ব্যার্থ অন্ধকারে কিছু দেখছে না। ভয়ের চোঁটে সে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে,
-“ক…কে
তবে অপরপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। শুধু নিশ্বাসের শব্দ হচ্ছে। মেঘ পূর্ণরায় জিগ্যেস করে,
-“কে…? কথা বলছেন না কেনো”
এবারো কোনো উত্তর আসেনি তবে সামনের ব্যাক্তিটি তার দিকে এগিয়ে আসছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। মেঘের বুক ধরফর করছে। তাড়াতাড়ি পিছিয়ে গিয়ে অন্ধকারেই হাতরিয়ে দরজার কাছে যেতে চায়, তবে তার আগেই সেই লোকটি মেঘের হাত ধরে ফেলে। মেঘের শরীর কেপেঁ উঠে। লোকটার শরীরের থেকে আসছে তীব্র পুরুষালি সুবাস। তা আস্তে আস্তে আরও তীব্র হচ্ছে। ছেলেটি একদম মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে আসে কানের লতির সাথে ঠোঁট ছুইছুই, ফিসফিসিয়ে বলে,
-“হুসস এতো তাড়া কিসের তোমার,….”
মেঘ থমকে যায় কন্ঠটি শোনে, একটা রুক্ষ অথচ কোমল স্বর, শোনা মাত্রই মেঘের বুকে ধক করে উঠে। তবে এতোক্ষন অন্ধকারে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি নিজের ভর ছেড়ে দেয় ধপ করে নিচে বসে যায়, তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছে না জুড়ে জুড়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ মেঘকে এমন করতে দেখে অন্ধকারের ছেলেটি বিচলিত হয়ে উঠে হাটু গেড়ে বসে মেঘের দুই কাধ ঝাকিয়ে বলে,
-“হেই হোয়াট হেপেন্ড? আর ইউ ওকে?
তবে মেঘ কিছুই বলছে না শুধু হাত এদিক সেদিক হাতরাচ্ছে, অস্থিরতা করছে। তা দেখে সে আরও চিন্তিত হয়ে বলে,
-“এই বোকাফুল, কি হয়েছে এমন করছো কেনো? “
মেঘ কথাই বলতে পারছে না তবুও কোনোভাবে শ্বাস নিয়ে নিয়ে বলে,
-“আ..আমার অন্ধকারে ফো…বিয়া শ্বাস নিতে প…পারছিনা ধম বন্ধ হয়ে আস..ছে।”
-“শিট..”
ছেলেটি সাথে সাথে মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে মেঘের দিকে ধরে। আলোর দেখা পেয়ে মেঘের ভয় কিছুটা কাটে, সে কিছুক্ষন সেভাবেই বসে থাকে,ব্যাগ থেকে ইনহেলার বের করে নিয়ে নেয়, আগের থেকে একটু স্বাভাবিক হতেই তার টনক নড়ে সে সাথে সাথে সামনে তাকায় ছেলেটির মুখ দেখতে। তবে লাইট মেঘের মুখের দিকে তাক করায় আর ছেলেটির মুখের দিকে তাকাতে পারেনি চোখে আঙুল দিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। আর সেই সুযোগে ছেলেটি ফ্ল্যাশ অফ করে দরজা খুলে চলে যায়। মেঘ দরজা খোলার শব্দে চোখ থেকে হাত সরাতেই দেখে লোকটি বেরিয়ে গেছে । সাথে সাথে উঠে দরজার বাহিরে যায় তবে কেউ নেই। কোথায় গেলো লোকটি, মেঘ ভেবে পাচ্ছেনা কি হলো মাত্র তার সাথে। কে সেই লোক, মুখও দেখতে পারেনি তবে শার্টের কোনা দেখেছে বের হওয়ার সময়, গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট। এছাড়া কিছুই দেখতে পারেনি এতো দ্রুত যাচ্ছিলো। আর কিছু না ভেবে দ্রুত ওয়াশরুমে যায় চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।
————————
-“মেঘ আসতে এতো দেরি করলি কেনো?”
-“যেই বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে আটকে গেছিলাম “
-“আচ্ছা এবার চল আমাদের শাড়িটা নিয়ে আসি সবাই যার যার নিয়ে চলে এসেছে তর জন্যই বসেছিলাম আমরা।”
পিহুর কথায় সবাই উঠে যায় রুদ্রদের উদ্দেশ্যে। রিহার্সাল হলেই এখন রুদ্ররা থাকার কথা যেহেতু সবকিছু লিড করছে, তাই সেদিকেই পা বাড়ায় তারা। হলে ঢুকতেই দেখে যারা যারা পার্টিসিপেট করেছে সবাই প্রেক্টিস করছে। পাশেই রুদ্র সাথে তার ফ্রেন্ডরা বসে খাতায় কিছু লিস্ট করছে।
মেঘের নজর যায় রুদ্রের দিকে। কথা বলছে আর নিচের দিকে হালকা ঝুকে কিছু লিখছে, মাঝে মাঝে কপালে ভাজ পড়ছে। চুলগুলো এলোমেলো, কপালের একপাশ ছুয়েঁ আছে। পড়নে গাঢ় বাদামি রঙের জ্যাকেট, জ্যাকেটের সামনের সব বোতাম খুলা। ভেতরে গাঢ় সবুজ রঙের ইন ছাড়া পড়া শার্ট। শার্টের দিকে নজর যেতেই মেঘের তখনকার ছেলেটির কথা মনে পড়ে। বিষ্ময় নিয়ে তাকায় রুদ্রের দিকে। তবে কি “রুদ্র”?
তখনি রাহুলের ডাকে মেঘের ঘোর কাটে। তাদের সামনে ডাকছে। মেঘ রাহুলের দিকে তাকাতেই দেখে সেও সেইম কালার শার্ট পড়ে আছে।কনফিউজড হয়ে যায়। মুহুর্তেই সে নিজেকে সামলে নেয়, সেইম কালার শার্ট পড়তেই পারে তাই বলে না জেনে সন্দেহ করা উচিত না। তবে “কে সেই ছেলে?” প্রশ্ন মাথায় থেকেই যায়।
রুদ্র মাথা উঠিয়ে মেঘের দিকে তাকায়। চোখ ছোট ছোট করে কপাল বাজ করে মেঘকে পরখ করে। মেয়েটি চশমা পড়েছে। গোলগাল মুখে চশমা যেনো বেশ মানিয়েছে, অনেক কিউট লাগছে মেয়েটিকে। রুদ্র মনে মনে তাকে নাম দেয় “চশমিশ”।পরমুহূর্তে তাকে সেই নামেই ডাকে,
-“এই চশমিশ এদিকে আসো “
মেঘ চমকে তাকায় রুদ্রের দিকে। চোখে এলার্জির সমস্যা ইদানীং ধরেই বেড়েছে, আজকে চশমা পড়ে এসেছে হালকা ঝাপ্সা লাগছিলো তাই আর আজকেই কিনা চশমিশ উপাদি পেয়ে গেলো। সাথে সাথে আবার রুদ্র ডেকে উঠে,
-“হেই মিস চারব্যাটারি কানে শোনোনা?
পিহুরা মিটমিট হাসছে। মেঘ নাক ফুলিয়ে রুদ্রের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
-“জ্বি ভাইয়া বলুন,”
-“সকাল থেকে এতোগুলো কল দিলাম ফোন সুইচড অফ করে রেখেছো কেনো?”
-“মোবাইল ভেঙ গেছে, ঠিক করানো হয়নি তাই অফ”
রুদ্র ব্রু কুচকে শান্ত কন্ঠে বলে,
-“কিভাবে? “
মেঘ কি বলবে কালকের ঘটনা তো আর বলতে পারবে না।
-“ওই আরকি হাত থেকে পড়ে।”
-“ওহ নাও এই লিস্ট টা আমি বলছি তুমি লিখো “
মেঘের হাতে খাতা টা ধরিয়ে রুদ্র নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে। মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
-“আমি কেনো?”
রুদ্র কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে বলে,
-“তুমি যে আমার অ্যাসিসটেন্ট ভুলে গেছো?”
বলেই আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
-“অবশ্য ভুলেই যাওয়ার কথা, তোমাকে অনেক ছাড় দিয়ে রেখেছি। তবে আজকে কোনো ছাড় নেই। ফাস্ট স্টার্ট করো আরও কাজ বাকি।”
মেঘ মুখটা ভোতা করে লেখা শুরু করে। সকালের সেই ছেলেটির কথা মাথা থেকে বেরিয়েই যায়।
রুদ্র পিহুদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“তোমাদের কোনো কাজ আছে?”
তারা মাথা নাড়িয়ে না বলতেই তাদেরকেও কাজে লাগিয়ে দেয়। রিককে রাহুলের সাথে পাঠায় ফুলের অর্ডার দিয়ে আসতে, সুমনা আর পিহু সাথে আরও কয়েকজন মেয়েকে লাগায় করিডোর গুলোতে সুন্দর নকশা আকঁতে। বাকি টুকিটাকি ছেলেদের কাজ সায়ান শান্তরা করছে, আর মেঘ এদিকে রুদ্রের মুখোমুখি বসে বসে লিস্ট করছে। তার হাতটা চলছে, তবে মন ছটফট করছে এক অদৃশ্য জ্বালায়। রুদ্রের সামনাসামনি আসলেই কেমন জানি অনুভুতি হয় তার বর্ণনা তার কাছে নেই। একদম সামনেও নয় তার থেকে দুই হাত দূরেই বসা। নিজের মনের অনুভুতিকে সাইডে রেখে সে রুদ্রের কথায় মন দেয়।
লিস্ট লেখা শেষ হতেই মেঘকে আরেক কাজ দেয়। যারা ডান্স করছে তাদের মিউজিক আর টাইমিং চেক করতে, প্রত্যকটা যেনো ৪ মিনিট এর কম হয় নির্দেশনা দিয়ে পাঠায়। মেঘ একটি চেয়ারে বসে বসে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে সবার ডান্স টাইমিং আর গান নোট করেছে। তার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে স্পিকার এর গান শুনতে শুনতে। ধরা মাথা নিয়েই রুদ্রের কাছে যায়। দেখে রুদ্র স্টেজ ডেকোরেশন এর কাজে ব্যাস্ত। ডেকোরেশনের লোকেরা এসেছে স্টেজ বাধছে তারাই তবে রুদ্র ডিরেকশন দিচ্ছে।
মেঘ দূর থেকেই রুদ্র কে কয়েকবার ডাকে তবে শোনে না সে ওদিকটায় ব্যাস্ত তাই বাধ্য হয়ে সে এগিয়ে যায়। রুদ্রের পিছে দাঁড়িয়ে আবার ডাকে তাকে। মেঘের ডাকে রুদ্র পেছন ফিরে তাকায়, সাথে একটি লোক স্টেজর সাইডের বাশঁ লাগাচ্ছিলো হঠাৎ মেঘের কন্ঠ শোনে সেও তাকাতে যেয়ে হাত ফসঁকে বাশ টা নিচে একদম মেঘের উপর পড়তে নেয়। তা দেখে রুদ্র দ্রুত মেঘকে টান মেরে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে আচমকা টানে মেঘ গিয়ে পড়ে রুদ্রের বুকে। যার ফলে রুদ্রের শরীরের স্মেলটা অতি সহজেই তার নাকে এসে লাগে। তার চেনা চেনা লাগছে স্মেলটা তবে বেশিক্ষন ভাবতে পারেনি। মেঘের মাথা যেয়ে বাড়ি খায় রুদ্রের থুতনিতে বেচারা আউচ করে উঠে, মেঘ তড়িঘড়ি করে দূরে সরে আসে। রুদ্র চোখমুখ কুচকে থুতনি ঘষছে। ফর্সা হওয়ায় একদম লাল হয়ে গেছে। বেশি ব্যাথা পেয়েছে ভেবে ভীতু কন্ঠে বলে,
-“স্যরি স্যরি স্যরি “
রুদ্র নিজের থুতনি ঘষতে ঘষতে রেগে বলে,
-“এই মেয়ে এতো কেয়ারলেস কেনো দেখোনি এদিকে স্টেজ বাধঁছে জায়গাটা রিস্কি , এখানে আসতে গেলে কেনো ইডিয়েট নিজে তো বেচেঁ গেলে মাঝে আমি ব্যাথা পেলাম উফফ।”
মেঘ রুদ্রেএ কথা না শোনেই দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। রুদ্র রাগী চোখে তার যাওয়া দেখে “বেয়াদব” বলে সম্মোধন করতে ভুললো না। তবে কয়েক মিনিট এর মাথায় মেঘ আবার হাজির হয়। রুদ্রের সামনে যেয়ে হাতে করে আনা আইস কিউবটা তার থুতনিতে ধরে।
রুদ্র সামনের একটি লোককে কিছু বলতে ব্যাস্ত ছিলো হঠাৎ তার ঠান্ডা অনুভব হতেই নিচের দিকে তাকায় দেখে মেঘ আইসকিউব নিয়ে এসেছে। কিছুটা অবাক হয় পরমুহূর্তে বলে,
-“এই মেয়ে আবার এসেছো এই জায়গায়”
মেঘ কিছু একটা ভেবে শান্ত সরে বলে,
-“পরে চিল্লায়েন এখন ওই সাইডটায় আসুন তো”
বলে মেঘ নিজেই রুদ্রের হাত ধরে পাশের চেয়ারের দিকে হাটা দেয়। রুদ্র পুরাই থ হয়ে গেছে। সে যেনো জমে গেছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে মেঘের হঠাৎ স্পর্শে। সে শুধু মেঘের সাথে পায়ে পা মেলাচ্ছে। মেঘ রুদ্রকে চেয়ারে বসিয়ে থুতনিতে অনেক্ষন আইস দিয়ে ধরে রাখে। রুদ্র কিছুই বলছেনা শুধু মেঘকে দেখছে। মেয়েটাকে অন্যরকম লাগছে তার। প্রায় ৫ মিনিট পর মেঘ হাত সরিয়ে নেয়। রুদ্রের দিকে তাকাতেই তার টনক নড়ে। সজ্ঞানে আসে, নিজের কাজ নিজের বোধগম্য হতেই লজ্জারা ঘিরে ধরে। কি করছিলো সে। দ্রুত রুদ্রের হাতে খাতাটা দিয়ে সে সেই জায়গা ত্যাগ করে।
এদিকে রুদ্র তাকিয়ে আছে মেঘের যাওয়ার পানে,পরক্ষনেই মাথা চুলকায় । মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে বেশ বুঝতে পেরেছে, তার গালের লাল আভা আর লাল হয়ে যাওয়া নাকটাই তার লজ্জার শাক্ষি।
————————
মেঘ পিহু সুমনা বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়। রিক অলরেডি চলে গেছে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে এখনো মেঘকে পিহু ছাতা দিয়ে এগিয়ে রাস্তার পাশের একটি ছাউনির নিচে দাঁড় করিয়ে যায়। যদিও সে বারবার বলছিল তার গাড়িতে যেতে ড্রপ করে দিবে তবে মেঘ না করে দেয়। অনেক্ষন দাঁড়িয়েও গাড়ি পাচ্ছেনা আবার সেই ঝুম বৃষ্টি শুরু এখন কেমনে কি করবে ছাতাও নেই যে হেটে যাবে।
হঠাৎ সেখানে কয়েকটি ছেলে এসে দাঁড়ায়, দেখতে বখাটে টাইপের। মেঘ তাদের দেখে একসাইড হয়ে দাঁড়ায়। ছেলেগুলো মুখে সিগারেট নিয়ে মেঘকে উপর থেকে নিচ অব্ধি স্ক্যান করছে। মেঘ খুবই আনইজি ফিল করছে। বারবার উরনা ঠিক করছে। তবুও ছেলেগুলোর চোখ সরছে না। উল্টো সিগারেটের ধোঁয়া উড়োয়, চারিপাশে সিগারেটের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মেঘ মুখ চেপে ধরে তার এই গন্ধ সহ্য হয়না । মেঘকে এভাবে দেখে একটি ছেলে বলে উঠে,
-“এহ কি ঢং, দিনশেষে ভাতারের সিগারেট খাওয়া ঠোঁটেই চু*ম্মা লয় আবার এখানে ভাব মারায় “
ছেলেটার কথা শুনতেই বাকিরা হেসে উঠে। মেঘ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাকাচ্ছেও না তাদের দিকে। ছেলেগুলো আজেবাজে গান গেতে লাগে। মেঘের ভীষণ অস্বস্থি হচ্ছে। হঠাৎ একটি কালো গাড়ি এসে মেঘের সামনে থামে। মেঘ সেদিকে তাকাতেই দেখে পিহু ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসছে। মেঘ তাকে দেখে একটু সাহস পায় দ্রুত সেও এগিয়ে গিয়ে পিহুর ছাতার নিচে যায়। পিহু তাকে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে। মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগে,
-“বাচাঁলি বোন। ছেলেগুলো এতো বাজে, কিসব বাজে ইশারা করছিলো সিগারেটের ধোঁয়া উরাচ্ছিলো।”
পিহু কিঞ্চিৎ রেগে বলে,
-“তোকে টাচ করেনি তো?”
মেঘ ভয়ে ভয়ে বলে,
-“না তবে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো…”
আর বলেনি বেচারি এমনি ভীতু তার উপর এমন সিচুয়েশনে পড়েছে। এদিকে কেউ একজন মেঘের কথা শোনতেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কপালের রগ ফুলে উঠে। মোবাইলে কাউকে মেসেজ পাঠায়,”ছেলেগুলোকে যেনো আমি সন্ধ্যার মধ্যেই গোডাউনে পাই”।
মেঘ তার এড্রেস আগেই বলে দিয়েছিল। তার বাসার সামনে আসতেই মেঘ বলে উঠে,
-“ড্রাইবার আংকেল ডান পাশের গেইটের সামনে দাড়ান ওইযে ব্লু কালার গেইট ওটা “
মেঘের মুখে ড্রাইবার আংকেল নাম শোনতেই গাড়ি থামিয়ে সামনের ড্রাইবিং সিটে বসা রুদ্র পেছনে ফিরে তাকায়। বিষ্ময় ভরা চোখে বলে,
-“হোয়াট? আমাকে তোমার ড্রাইভার মনে হয়? আবার আংকেল? “
মেঘ রুদ্রকে ড্রাইভারের জায়গায় দেখে চমকে যায়।
-“আ..আপনি এখানে কি করছেন?”
রুদ্র ব্রু কুচকে বলে,
-“আমার গাড়িতে আমি থাকবো না তো কে থাকবে”
মেঘ অবাক হয়ে একবার পিহুর দিকে তাকায় দেখে সে মিটিমিটি হাসছে আবার রুদ্রের দিকে তাকায়। পিহুর দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে ফের তাকাতেই পিহু ফরফর করে বলে উঠে,
-“ইনি রুদ্র চৌধুরী অরফে আমার একমাত্র বড় ভাই “
মেঘ অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। রুদ্র পিহুর ভাই হলে সে এতোদিন বলেনি কেনো আর পিহুর কাছেই কিনা তার ভাইয়ের নামে যাতা বলতাম ইয়া আল্লাহ । সে চমকিত নয়নে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এতোদিন বলিসনি কেনো?”
পিহু বলল,
-“এমনি ভাইয়ের পরিচয়ে ভার্সিটিতে থাকার ইচ্ছে নাই তাই পরিচয় দেইনি কাউকে “
রুদ্র কথার মাঝে কর্কশ গলায় বলে,
-“তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি “
মেঘ দ্রুত নেমে যায় গাড়ি থেকে। পিহু মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“সন্ধ্যায় গাড়ি পাঠাবো চলে আসবি আমার বাসায় প্রেক্টিস বাকি কিন্তু আর তর বড় আব্বুর সাথে কথা বলে নিয়েছি উনি রাজি আছেন সো কোনো বাহানা না।”
মেঘ মাথা নেড়ে যেতে যেতে একবার রুদ্রের দিকে তাকায় সেও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। চোখাচোখি হতেই রুদ্র চোখ সরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
এদিকে পিহু রুদ্রকে ড্রাইভার বলে বলে মজা উরিয়েছে সারা রাস্তা।
চলবে……
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি (সারপ্রাইজ পর্ব প্রথমাংশ)
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪৫