আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১
[ কপি করা নিষিদ্ধ ]
-” মেঘ, এভাবে কিছু ছুঁড়িস না। কারো মাথায় পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। পরে খবরের হেডলাইন হবে, ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই টিসি পেল দুই বান্ধবী।”
বলতে বলতেই, দু’তলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা ইটের টুকরো গিয়ে পড়ে এক ছেলের কপালে। সঙ্গে সঙ্গে কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে ছেলেটি। আশেপাশের সব স্টুডেন্টই সাথে সাথে জড়ো হয়ে যায়।
ভয়ে মেঘ সুমনার হাত টেনে নিচে বসে পড়ে, যেন কেউ তাদের না দেখতে পায়। সুমনার ভয়ে একদম মুখ শুকিয়ে গেছে।
-“আল্লাহ, কী করলি মেঘ, ছেলেটার কপাল ফাটিয়ে দিয়েছিস! এখন কী হবে রে?”
মেঘেরও অবস্থা ভয়াবহ। সে তো এমন কিছু করতে চায়নি। দ্রুত সুমনাকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকে যায়, একদম লাস্ট বেঞ্চে বসে তাড়াতাড়ি বই খুলে সামনে রাখে। ক্লাসে ৪-৫ জন স্টুডেন্ট ছাড়া আর কেউ নেই। মেঘ নখ কামড়ে বলে,
-“এখন কী হবে?”
-“কতবার না করলাম! শুনলি না তো, এখন যদি ধরা পড়ি?”
-“আমি তো ইচ্ছা করে করিনি! আমি ভালো করে দেখে ছুঁড়েছি, কেউ ছিল না তখন। এই ছেলে উড়ে এসে জুড়ে বসে নিজের কপাল নিজেই ফাটালে আমার দোষ কী?”
ঠিক তখনই ক্লাসে দলবেঁধে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে ঢুকে পড়ে। সবাইকে জিজ্ঞেস করতে থাকে বারান্দায় কেউ ছিল কিনা। মেঘের তো তখন প্রাণটা মুখ দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কেউ যদি দেখে ফেলে। তবে কেউ কিছু বলেনি, সবাই পড়ায় ডুবে ছিল।
তারা এবার মেঘদের কাছে আসে।
একজন ছেলে ধমকে জিজ্ঞেস করে,
-“এই মেয়ে, ক্লাসে আছো কতক্ষণ ধরে?”
মেঘ আর সুমনা একসাথে বলে ওঠে,
-” ১৫ মিনিট”
-” ২০ মিনিট”
দুজনের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর শুনে কিছু বলতে যাবে, তখন মেঘ উঠে বলে,
-“এইতো ভাইয়া, ১৫-২০ মিনিট হবে। আমি আসার একটু আগে সুমনা এসেছে।”
তাদের কথায় মনে হলো বিশ্বাস করেছে। এবার আরেক মেয়ে প্রশ্ন করে,
-“৫ মিনিটের মধ্যে কাউকে ক্লাসে ঢুকতে দেখেছো?”
দেখবে কী, তারাই তো ঢুকেছে। তবে নিজেদের সামলে বলে,
-“না আপু, লক্ষ্য করিনি। পড়ছিলাম তো, তাই।”
একটি ছেলে বলে,
-” আমাদের রুদ্র ভাইয়ের কপাল ফাটিয়েছে কেউ, এই দু’তলার বারান্দা থেকে ইট ছুঁড়ে মেরে। কী সাহস, ভাইকে কেউ মারতে পারে! পুরো ভার্সিটি গরম হয়ে আছে। একবার হাতে পেলে খবর আছে। তোমরা সন্দেহজনক কাউকে পেলে আমাদের জানিও।”
মেঘ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারা চলে যেতেই মেঘের কাঁপুনি দ্বিগুণ হয়ে যায়। সুমনা বলে,
-“একটি ছেলের জন্য পুরো ভার্সিটি ক্ষেপে গেছে। ভাই, এটা কোনো সাধারণ ছেলে না। ধরা পড়লে জেল কনফার্ম।”
-“বইন, এমনিতেই জান কাপতেছে, আর বাড়াইস না। আমি কি জেনে বুঝে করেছি নাকি?”
১০ মিনিট পর কয়েকজন মেয়ে এসে মেঘদের সামনে বসে। তারা নিজেদের মধ্যে বলছে,
-“ভাই, কার এত সাহস যে রুদ্র চৌধুরীর উপর অ্যাটাক করেছে! সবাই ক্ষেপে গেছে। মেয়েরা বেশি ক্ষেপেছে।”
-” তো ক্ষেপবেই না কেন? ভার্সিটির ডিপি, টপার বয়, আর সব মেয়েদের ক্রাশ। আমারই তো রাগ লাগছে, সামনে পেলে থাপড়াই মুখের মানচিত্র বদলাই দিবো।”
এই কথা শুনে মেঘ বুঝলো বাঘের গুহায় পা দিয়েছে। একবার ধরতে পারলে টিসি তো হবেই, সাথে জেলও আর নয়তো জনগণের থুক্কু স্টুডেন্টসের ধোলাই।
তার কিছুক্ষন পর স্যার এসে ক্লাস শুরু করান। প্রথম দুই ক্লাস করেই সুমনা বলে,
-” চল বাসায় যাই। মন বসছে না টেনশনে।”
-” দূর, এত টেনশন করিস না। ওরা তো আমাদের দেখেনি। নয়তো প্রথমেই ধরা খেতাম।”
-“না, তাও আমি যাবো। তুই থাকলে থাক।”
বলেই সুমনা হাঁটা শুরু করে।
-” আরে এ! দাঁড়া! আমিও যাবো! একা বাঘের গুহায় ফেলে যাস না।”
মেঘ আর সুমনা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। আশেপাশে তখনো সবাই সেই ঘটনার কথা বলছে। মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ।
-” সুমনা, একটু ক্যান্টিনে চল না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আর একটুখানি হলে মরেই যাবো।”
সুমনা মেঘের অবস্থা বুঝে আর কিছু না বলে ক্যান্টিনে নিয়ে যায়। তবে কথায় আছে, “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়।”
ক্যান্টিনে ঢুকতেই দেখে একপাশে ১০-১২ জন গোল হয়ে বসে আছে, আর তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রুদ্র চৌধুরী। মাথায় ব্যান্ডেজ, এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে।
ব্যস! এদের দেখেই মেঘের হেঁচকি উঠতে থাকে। একের পর এক হেঁচকি, হেঁচকির শব্দে সবাই তাদের দিকে তাকায়। সুমনাও পড়ে বিপাকে। একদিকে সবাই তাকাচ্ছে, অন্যদিকে মেঘ থামছেই না।
ক্যান্টিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে হেঁচকি তুলতে দেখে, তাদের দলে থাকা অনুপমা এগিয়ে এসে বলে,
-” এই মেয়ে, হেঁচকি উঠেছে তো পানি খাচ্ছো না কেন? এভাবে সং-এর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন, স্ট্রেঞ্জ।”
বলেই মেঘকে একটি চেয়ারে বসিয়ে পানি এগিয়ে দেয়। মেঘ তাড়াতাড়ি দু’গ্লাস পানি খেয়ে নেয়। একটু শান্ত হয়ে ধন্যবাদ আপু বলে উঠে দ্রুত বেরিয়ে যায়।
রুদ্র অনেকক্ষণ ধরে মেঘকে লক্ষ্য করছিল। বেবি পিংক রঙের চুড়িদার পড়া, গলায় ওড়না ঝুলানো, চুল বেনি করে কোমরের নিচ পর্যন্ত, সামনের কিছু বেবি হেয়ার কানের পাশে গোঁজা, ফর্সা গোলগাল গাল, মুখে ভয় ফুটে আছে। তার মনে হচ্ছে “এই রকম ওড়নাই সে দু’তলায় দেখেছিল। যে মেরেছে সে যে মেয়ে এটা নিশ্চিত, তবে ওড়নার রঙ ঠিক মনে করতে পারছে না,” তাই এখনো কাউকে কিছু বলেনি। তাছাড়া সবার রাগ এমনিতেই চরমে।
তবে রুদ্রও তাকে ছেড়ে দেবে না।
মেঘরা সেখান থেকে সরাসরি রিকশা নিয়ে বাসায় চলে যায়। আজ আর কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
বাসায় পৌঁছে মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
-” আল্লাহ, এবার তো বাঁচিয়ে দিলে।”
তবে ঘরে ঢুকতেই মেঘের গালে একটা চড় পড়ে। হঠাৎ থাপ্পড়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায়।
চলবে….
#আড়ালে_তুমি |০১|
#_সাইদা_মুন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১৪
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৭
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫০