Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-৮


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ৮

তীব্র বাতাসে ঘরের সবকিছু প্রায় উলটপালট হয়ে গিয়েছে। ভীষণ জোরে এক বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইনায়ার। সামিরা যাওয়ার পরপরই ইনায়া ঘুমিয়ে গিয়েছিল। চোখ খুলে এক ঝলক তাকায় ঘড়ির দিকে । বিকেল পাঁচটা বেজে গিয়েছে। ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ছে। ইনায়া উঠে চোখ ডলতে ডলতে নিচে যায়। বাড়ির সকলে গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে। কারণ-নীল এখনো বাড়ি ফেরেনি। 

ইনায়ার বুকের মধ্যে ধুক করে উঠে। 

“সেই যে বের হয়েছে।এখনো ফিরলো না কেন? “

সবাই একের পর এক ফোন করেই চলেছে। মুষলধারে বৃষ্টির সাথে,ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই সাথে কলিং বেল বেজে ওঠে। শিমু জাহান দৌঁড়ে যান দরজা খুলতে। বাকি সকলে নীরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে। দরজার বাইরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নীল। ভেজা চুল কপালে এসে ঠেকেছে,টুপ টুপ করে পানি গালে পড়ছে তার,তবে কোনো হেলদোল নেই। শরীরের সাথে ভেজা সাদা শার্টটা একেবারে মিশে রয়েছে। নীল ধীর পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। দূর্বল চোখে ইনায়ার দিকে তাকায়।চোখ লাল,তবে সে লাল রাগ প্রকাশ করছে না। প্রকাশ করছে অসুস্থতা।  ইনায়ার মনের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে। নীল সরাসরি এমনভাবে তাকায় যেন সে আগে থেকেই জানে ইনায়া এখানেই রয়েছে। রুবিনা ইয়াসমিন এবং আয়েশা আক্তার নীলের কাছে আসে। পরম যত্নে একজন কপালে হাত দেয়,অপরজন শাড়ির আচল দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে থাকে। নীলের কপালে হাত রেখে আঁৎকে উঠে রুবিনা।

শিমু জাহান এর দিকে তাকিয়ে বলল,

-ভাবি,জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। 

তবে নীল কথার তোয়াক্কা করে না। উপরে উঠে চলে যায় নিজের রুমে। 

ছেলের অবস্থা দেখে শিমু জাহান আর চুপ থাকতে পারছে না। মায়ের মন। 

আকবর দেওয়ান এর সামনে গিয়ে বলে,

-শান্তি পেয়েছো? 

আকবর দেওয়ান কোনো জবাব দেন না। শিমু জাহান অপেক্ষা না করে চলে যায় নীলের ঘরের দিকে। বাড়ির সকলের মনটা বিষন্ন হলেও সেখানেই উপস্থিত একজন ভুগছে তীব্র অনুশোচনা তে। মনের মধ্যে এমন যন্ত্রণা হচ্ছে,সেও আর সেখানে দাঁড়ায় না তাই। সোজা উপরে উঠে যায়, উদ্দেশ্য নীলের রুম।

.

.

নীলের রুমের বাইরে ইনায়া দাঁড়িয়ে। ভেতরে ঢুকতেও লজ্জা করছে তার। এতো কিছু তো তার জন্যেই হলো। 

এসব ভাবতে ভাবতে ইনায়া বলেই ফেলে লজ্জা সরিয়ে,

-বড়মা! ভেতরে আসি?

শিমু জাহান শান্ত স্বরে জবাব দেন,

-জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি? আয়।

ইনায়া চট করে ভেতরে ঢুকে পরে। 

রুমটা পর্যবেক্ষণ করে বলে,

-নীল ভাই কোথায় ,বড়মা?

শিমু জাহান ইশারা করে বাথরুমের দিকে। 

ইনায়া গিয়ে শিমু জাহানের পাশে বসে। তবে তার স্থায়িত্বকাল বেশিক্ষণ নয়। নীল বের হতেই সরাসরি চোখ পড়ে ইনায়ার দিকে। 

ক্ষিপ্ত হয়ে দূর্বল চোখে তাকালো মায়ের দিকে, বলল,

-ওকে এখান থেকে যেতে বলো মা! আমি নাহয় অনেক ঝামেলা করব। 

শিমু জাহান অসহায় চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে । কিন্তু সে দৃষ্টি ইনায়া বোঝেনা । কারণ তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। চোখের পানি পড়ার আগেই সে সেই স্থান ত্যাগ করে । দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কারণ দরজা খোলা থাকলে নীলকে দেখতে হবে। আর নীল তো তাকে সহ্যই করতে পারছে না!  এসব ভেবে ইনায়া বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলেছে। তার সাথে ইনায়ার কান্নার পরিমাণও।

.

.

.

.

এই বিকালে এমন ঝড়-বৃষ্টি সামিরার মোটেও ভালো লাগছে না। এই প্রেম করার মতো ওয়েদার তার মত সিঙ্গেল মানুষদের জন্য নয়।  

ওমনি মাথায় এক জটিল বুদ্ধি আসে তার,

“নিজে সিঙ্গেল হলেও আমার এক মিঙ্গেল বান্ধবী তো রয়েছে। ওকে ফোন দিয়ে জ্বলানো যাক। “

কথাটা দ্বিতীয়বার ভাবে  না সামিরা। দ্রুত কল দেয় শর্মীকে। প্রথমবার রিং বাজার সাথে সাথে শর্মী কল ধরে।

তবে ফোন রিসিভ করেই শুরু হয় তার ন্যাকা কান্না। 

-দোস্ত আরান আমার কল ধরছেনা। তুই একটু বলতো আমার কল যেন ধরে। 

-একি অদ্ভুত কথা বলছেন আপনি মামি ? আরান টারান আবার কে? পরপুরুষের নাম মুখে আনার দরকার নেই ।আপনি শুধু  ” কুদ্দুস কুদ্দুস” বলবেন দিনরাত।

-আমি কষ্ট পাচ্ছি আর তুই মজা নিচ্ছিস?

– না মামি ,আপনি কষ্ট পাবেন না দয়া করে । কুদ্দুস মামা,ওপস্ সরি! কুদ্দুস দুলা আপনাকে নিতে আসবে । একদম মন খারাপ নয়।

সামিরা নিজে হেসে কুটি কুটি হলেও শর্মীকে থামানো যাচ্ছে না । অবশেষে বাধ্য হয়ে আরানকে  কল দেয় সে। মিনিট পাঁচেক পরে পুনরায় শর্মীকে কল দিয়ে বলে,

-দোস্ত ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।

শর্মীর চোখ চিক করে ওঠে। আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করে ,

-কী বলল কী বলল???

– বলল তুই যেন থাকে ভুলে যাস। আর আমরা যে দুলাভাইকে তোর জন্য সিলেক্ট করেছি তাকে চুপচাপ বিয়ে করে নিতে।

 শর্মী সমিরাকে দ্রুত থামিয়ে বলল,

– এসব বিষয় নিয়ে মজা করিস না

-বিশ্বাস কর ! আমি সিরিয়াস । ভাইয়ার নিজে কুদ্দুস দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলতে যাবে । তোর বাসায় পরশুদিনই কুদ্দুস দুলাভাই তার পরিবার নিয়ে তোকে দেখতে আসবে । আমি যাই ,কাজ করি,অনেক কাজ আছে। ইনায়াকেও জানাতে হবে। 

ইয়ো বিয়ে,বিয়ে।

বলেই সামিরা কল কেটে দেয়। 

.

.

.

নীলের জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ইনায়ার দরজায় কড়া নাড়তেই ইনায়া দরজা খুলে দেয়। 

শিমু জাহান দাঁড়িয়ে,ইনায়ার গালে হাত রেখে বললেন,

-চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিস তো!

-ঘুমিয়েছিলাম বড়মা। কিছু বলবে?

-তোর নীল ভাইয়ের জ্বর অনেক বেড়েছে, তোর মা আর মেজোমা রান্না করেছে,আমি গিয়ে একটু দেখে আসি আর নিয়ে আসি। ততক্ষণে কি তুই একটু বসতে পারবি মা?

ইনায়ার কথাটা শুনে মনে হচ্ছে এখনো দৌঁড়ে নীলের রুমে চলে যেতে ।  তবে সে তার বড়মার জবাবে শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল । 

শিমু জাহান যেতেই ইনায়া দ্রুত নীলের রুমে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় নীলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পরখ করে দেখে ইনায়া। এতো রাগী বদমেজাজি জেদি মানুষটাকে কত নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ। সব সৌন্দর্য একত্রিত হয়ে এই শরীরে চলে এসেছে। ইনায়ার হাত আপনাআপনি চলে যায় নীলের কপালে। ফরসা মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে। হাত রেখেই ইনায়া চমকে ওঠে। মনে হচ্ছে জলন্ত কয়লার উপরে হাত রেখেছে সে। দ্রুত জলপট্টি নীলের কপালে রাখে । আরেকটা কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে হাতের তালুতে, কব্জি তে,পায়ের পাতায় দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে নেয়। শরীরের তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত এভাবেই দিতে থাকে। 

এতো আলতো ভাবে হাত ছোঁয়ায় যেন জ্বর নিজে থেকেই বলবে,

“আমি চলে যাচ্ছি”

শিমু জাহান রুমে আসতেই ইনায়া উঠে পরে। নীলের গায়ের তাপমাত্রা কমেছে দেখে বুঝতে পারে , মেয়েটাই কিছু জাদু করেছে,নীল অসুস্থ হলে সব সময় যেমন  করে সারিয়ে তোলে,ঠিক তেমন কিছুই।

.

.

.

,

 ২০৯ বার কল দেওয়ার পরে,আরান শর্মীর কল ধরে। ধরেই ১০০ টা অজুহাত দাঁড় করিয়ে দেয় কল না ধরার।

সেসব কথা এড়িয়ে শর্মী আরানকে সোজা প্রশ্ন করে,

-তুমি সামিরাকে কী বলেছো?

-কী?

-কাকে যেন আমাকে বিয়ে করে নিতে..

-ওহ্ হ্যাঁ। কোন এক কুদ্দুস দুলাভাই এর কথা বলছিল। লোকটি খুব সিরিয়াস দেখলাম। আমিও কথা বলেছি। পরশু আসবে বলল তোমায় দেখতে। 

-কী যা তা কথা এসব! 

-আসলেও খোজ নিয়েছি। ওনাকে ওনার এলাকার সবাই পাংখু আবুল বলে চিনে।ছেলে ভালো, বাড়ি আছে বড়,সেখানে গরু, ছাগল ,হাঁস, মুরগি সব আছে। এলাকায় গিয়ে “পাংখু” বললেই,ওনার বাসা সবাই দেখিয়ে দিবে।লোকটা বুড়ো হলেও ,কথার দাম অনেক। আসবে যখন বলেছে,তখন আসবেই!

-এখন উপায়? 

-উপায় তো দেখি না।

-পালায়ে যাই?

-ভেবে বলি…

-ভাবতে হবে না,কাল সকাল ১১ টায় আমি সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে থাকব। তুমি তার আগেই চলে আসবে। রাখি এখন,বাই বাই!

(চলবে……)

#Running 

#episode:8

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply