Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৫০


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৫০

চৌধুরী শাজাহান রনি পায়ের উপর পা তুলে বসে রয়েছে নির্বাচন অফিসে। নীল নিজের বাইক বাইরে রেখে পান্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে ভেতরে যায়। শাজাহান রনির দিকে তাকিয়ে চওড়া এক হাসি দিয়ে বলল,

-আরেহ্ কাকা! বুড়ো বয়সে এতোদূর কষ্ট করে এলেন কেন? আমাকে একটা কল লাগালেই হতো। বন্ধুকে নিয়ে চলে যেতাম।

-সভ্য আর হলে না ইনান?

-আহা! হতে দিচ্ছেন কোথায়। চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। 

আরান কথার মাঝে বলল,

-নীল,তিনি আমাকে নিয়ে অভিযোগ করেছেন…

-who bro? My কাকা?

শাজাহান চৌধুরী ধমক দিয়ে বলল,

-you! Shut up! তুমি এখানে কেন?

-যে কারনে আপনি এখানে,কাককাআহ…কী হয়েছে বল এখন আরান।

-আমি আমাদের এলাকাতে গতকাল সকালে যে মিটিং রেখেছিলাম,তা নিয়ে অভিযোগ।

-ওটা তো তোর বাড়ির নিচে।

-ঐটাই তো দোস্ত! নিজের পোষা লোক দের দিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে,যে আমি সড়ক রোধ করেছি।

নীল ঘাড় বাঁকা করে শাজাহান চৌধুরীর দিকে তাকায়। 

বলে,

-what if কাকা,আপনার দল সভা বসিয়েছে পুরান ঢাকাতে, অর্থাৎ আপনার এলাকার বাইরে? নির্বাচনের নিয়ম লঙ্ঘন করে সড়ক আটকেছে।এরপর বিয়ে বাড়ির মতো লাইটিং, ব্যান্ড বাজনা করে আপনার মেয়ের ভোট প্রচার হলো,যা নিয়মের বাইরে। অতঃপর দেখা গেলো মাইক্রোফোন ব্যবহার করে শেষমেশ সবার হাতে পলিথিনের আবরন যুক্ত লিফলেট দেওয়া হলো। এগুলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিধিমালা ২০১৬ এর সংশোধনী -২০২৪, খোঁজ না নিয়ে ভোটে দাঁড় করালেন মেয়েকে?

চৌধুরী শাজাহান রনি চৌকশ ব্যক্তি। নীলের কথার ধরন বুঝে চেঁচিয়ে উঠলেন। বলল,

-কী যা তা বলছো!

-কা কা! আমার বন্ধু তারই বাড়ির নিচে মিটিং রাখলে যদি আপনি লিখিত অভিযোগ করান লোকবল দিয়ে। তাহলে একবার নীল কী করতে পারে তাই একটু ভেবে দেখবেন না? 

শাজাহান চৌধুরী ঘাবড়ে যায়। কাঁপা গলায় বলে,

-কী বলতে চাচ্ছো?

-বলতে তো চাই অনেক কিছুই, কিন্তু বউটার জন্যে আর বলা হয়ে ওঠে না। সে তো ভালো মানুষ চায়,খারাপ আমিকে দেখলে ভালোবাসা কমে যাবে না বলেন? সবাই তো আপনার মেয়ের মতো থার্ড ক্লাস হয়না!

-ইনান! 

-ইনান বলবেন না আমায়। এই নাম থেকে তো আরো আট বছর আগেই বিরতি নিয়েছি।

নীল একটু সময় নিয়ে হিসেব করলো। বলল,

-হ্যাঁ কাকা,এক্কেবারে আট বছর। বউটা আজ আমার আঠারোতে পা দিলো।

কথার মাঝে কল আসে শাজাহান চৌধুরীর কাছে। পুরান ঢাকায় ফারিন চৌধুরীর ভোটের প্রচার উদ্দেশ্য সভা বসিয়েছে। শাজাহান চৌধুরী খবর শুনে ঘাবড়ে নীলের দিকে তাকায়। নীল ঘাড় কাত করে বলল,

-এ কি কাকা! ওতো দূরে সভা বসালেন কেন? জায়গা দরকার হলে আমার পুরোন বাড়িটা পরিষ্কার করে দিতাম। সব ব্যবসায়ী দের কি ক্ষতিটা ই না হলো।

-ইনান থামো…

-১…২…৩

শাজাহান চৌধুরীর কাছে আরো একটা কল আসে। বিদ্যুতের অপচয় করে বিরাট বড় লাইটিং করে ফারিনের নাম ভোট প্রচার করা হচ্ছে। নীল মুখে হাত দিয়ে বলল,

-ছি ছি! এ তো বিদ্যুতের কঠিন অপচয়। নিষেধাজ্ঞা না মানে এসব করে ভোট প্রচার করছেন তাহলে?

-আমি আরানের নিয়ে করা অভিযোগ তুলে নিচ্ছি।

-দরকার নেই।সহজে পরাজয় মেনে নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী কে নীল হেইট করে।

-আচ্ছা ইনান ক্ষমা চাচ্ছি….

নীল শাজাহান চৌধুরীর কাছে এগিয়ে যায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-তোর ক্ষমা তুই তোর ভেতরে ভো*রে নে! 

আর জোড়ে জোড়ে বলল,

-ছি কাকা,এভাবে ক্ষমা চাইবেন না। আপনি আমার গুরুজন। আজ থাকেন,আবার দেখা হবে। আপনার মেয়ে ভোটে জিতলে বাড়িতে আসবেন অবশ্যই। যদিও আজই সব শেষ। ফারিন চৌধুরী কে আর দেখা যাবে না চৌধুরী শাজাহান রনি। কারন সে নির্বাচনের সব নিয়ম লঙ্ঘন করে ভোট প্রচার করেছে।

.

.

.

.

নীল আরানকে সাথে নিয়ে দেওয়ান বাড়িতে ঢুকেছে। হাতে একটা ছোট্ট গিফট বক্স। আয়েশা আক্তার কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-ইনু কি ওর ঘরে?

-হ্যাঁ,সামিরা শর্মী এসেছে।

নীল আরানকে ইশারায় ডাকে। ফিসফিস করে বলল,

-যাহ্,আমার বউ এর ঘর থেকে তোর বউকে বের কর। আর বোনটাকেও।

আরান আড় চোখে নীলকে দেখে। ইনায়ার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আরান ডাক দেয়,

-আমার ঝাঁসির রানী! বাইরে এসে।

শর্মী উকি মারে বাইরে। আরান কে দেখে বলে,

-কী হয়েছে?

-কত বছর দেখি না তোমায়। ভেতরে কী করছো নিজের স্বামীকে বাইরে রেখে?

শর্মী সন্দেহের চোখে তাকায় আরানের দিকে। বলে,

-ইনু কে সাজাচ্ছিলাম…

-বাহ্ ,তোমাদের কাজ শেষ তাহলে। যা নীল,পরের কাজ টা তুই করে দে…

শর্মী লজ্জায় লাল হয়ে সামিরাকে ডাক দেয়। 

নীল ভেতরে ঢুকে ইনায়াকে দেখতেই তার চোখ যেন কপালে। কিছু সময় থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। ইনায়া একটু কাছে এসে বলল,

-কেমন লাগছে আমায়?

নীল এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ায়। ইনায়া বলল,

-এতোটুকুই?

-গলা দিয়ে তো আওয়াজ বের হচ্ছে না মায়াবতী….

ইনায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল,

-এই ড্রেসটা বাবা দিয়েছে। সুন্দর না?

-নীল যেহেতু আছে, অবশ্যই সুন্দর।নীল কিন্তু তোর জন্যে তৈরী নীলা..

-কোন নীল?

-যে নীল তোর দরকার।

ইনায়া মুচকি হাসে। নীল গিফট বক্স টা এগিয়ে দিয়ে বলল,

-উমমম,ধরেন ম্যাম।

-এটা কী?

-খুলে দেখুন।

ইনায়া বক্সটা নেয়। আগ্রহ নিয়ে খুলে সেদিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। বাটারফ্লাই ইয়ারিং।

নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,

-আমার খুব পছন্দের বাটারফ্লাই নীল ভাই..পড়িয়ে দিবেন?

নীল কানের দুল টা হাতে নেয়। ইনায়ার আরেকটু কাছে গিয়ে চুল সরিয়ে কানের লতিতে স্পর্শ করতেই শিউরে ওঠে ইনায়া। সহসা চোখ বুজে নেয় নিজের। এদিকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আরান, শর্মী,সামিরা। তিনজনই কান পেতে রয়েছে ভেতরের কথা শোনার জন্য । আরান দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করলেও তার আর করেনি। তিনজন ফিসফিস করে বলল,

-কোনো চিল্লাচিল্লি তো হচ্ছে না।

শর্মী বলে উঠলো,

-এই চল তো! নীল ভাই অমন না…

সে মুহুর্তেই ইনায়া চেঁচিয়ে ওঠে। বলে,

-আআআ,আস্তে…লাগছে আমার।

নীল ভয়ার্ত কন্ঠে বলছে,

-তাহলে কি ছেড়ে দিবো? অন্য কখনো চেস্টা করবো না হয়?

-না না,আজই… কিন্তু একটু আস্তে।

দেয়ালের অপাশ থেকে শর্মী সামিরা বড় বড় চোখ করে একে অপরের দিকে তাকায়। সামিরা বিড়বিড় করে বলল,

-আমি ভাবতেও পারিনি ইনু…এমন বলবে…

নীল কানের দুল টা হাতে নিয়ে আবার পড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পড়ে হাল ছেড়ে বলল,

-নাহ্ ঢুকছে না….

-আরেহ্! ভয় পাচ্ছেন কেন নীল ভাই! একটু জোড়ে চাপ দেন না…

এসব শুনে আরান দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকায়। বলে,

-তোকে আমি কী ভাবতাম বন্ধু! আর এখন কী দেখতে হচ্ছে! আমার বাঘটা বেড়াল হয়ে গেলো!

ইনায়া নীলের হাত থেকে দুল টা নিয়ে নেয়। একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,

-থাক! আমি সামিরাকে বলছি। আপনি পারবেন না।

আরান আর শর্মী একসাথে তাকায় সামিরার দিকে। দুজনের কপালেই দৃশ্যমান ভাঁজ পড়ে রয়েছে। সামিরা দু হাত নাড়িয়ে না না করতে করতে ইনায়া বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দুল জোড়া সামিরার দিকে বাড়িয়ে বলল,

-ওহ্ তুই এখানেই আছিস…দেখ না নীল ভাই পড়াতে পারছে না। একটু কানে ঢুকিয়ে দে তো দোস্ত। কিন্তু আস্তে।

আরান এগিয়ে যায় নীলের কাছে। কাঁধে হাত রেখে বলে,

-ভেতরে তোরা এই কানের দুল পড়ানো নিয়ে কথা বলছিলি?

নীল আড় চোখে আরানকে দেখে। আরান পুনরায় বলে,

-আরেহ মামাহ্! আমি কী সব বাঘ,বেড়াল ভাবছিলাম। তুই তো ব্যাটা সিংহ দেখছি! 

.

.

.

.

দেওয়ান বাড়িতে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ। ছাদে ইনায়ার সব পছন্দের খাবার আনা হয়েছে। তার মধ্যে ফুচকার স্টল অন্যতম। ইনায়া গাঢ় নীল গাউন পড়েছে। বাড়ির সকলে ছাড়াও সামিরা,শর্মী,আরান,রিসান উপস্থিত। শুধু এতোগুলো মানুষের মধ্যে আনানের কোনো নাম গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেটার আজ সারাদিন ই খোঁজ নেয়। আনানের এমন পরিবর্তন নিয়ে রুবিনা ইয়াসমিন চিন্তিত। নীল,আরান আর রিসান একসাথে বসে রয়েছে। বাকিরা গল্প গুজব করলেও নীলের চোখ শুধু ইনায়ার দিকে আটকে আছে। এদিকে ইনায়া বসে বসে খুব মনোযোগ হয়ে সামিরা আর শর্মীকে তার পাসওয়ার্ড এর কাহিনী শোনাচ্ছে।

-দোস্ত ফোনের তো নতুন পাসওয়ার্ড দিয়েছি।

সামিরা বলল,

-কী পাস?

-মনে আছে নীল ভাই কী সব বুদ্ধি করে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো?

-হ্যাঁ তো,মনে আছে..

-তা তো থাকবেই। তোরা তো সব জানতি। আমায় কিছু বলিস নি। সমস্যা নেই,আমিও দিয়েছি। আমার টা আরো কঠিন।

-কী পাসওয়ার্ড?

-১৯৬৬১০

-এ আবার কী রে?

-জীবনেও পারবি না দোস্তরা!

সামিরা শর্মী মুখে মুখে হিসেব করতে বসে গেলো। নীলের দেওয়া পাসওয়ার্ড এর মতো করে বের করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বলল,

-১৯ কী? S? কিন্তু তোদের নাম তো I আর  N দিয়ে।

-বলবো না…

-৬৬ কী ইনু? আর ১০ই বা কী? তোদের জন্মতারিখ ও তো না।তবে?

-বলবো না…..

শর্মী বিরক্ত হয়ে যায়। আরানের কাছে গিয়ে সুর করে বলে,

-ইনুর ফোনের নতুন পাসওয়ার্ড টা অনেক কঠিন। আমার এখন জানতেই হবে পাসওয়ার্ড এর মানে কী…

-পাসওয়ার্ডের আবার মানে হয় নাকি।

-হ্য় বেবি। তুমি এখন মানে বলে দাও।

আরান জোড় করে হাসি দিয়ে বলল,

-আচ্ছা বলো..

-১৯৬৬১০…

-আচ্ছা,রাতে বলবো…তুমি যাও এখন।

শর্মী যেতেই আরান বিরবির করে বলল,

-নিজে তো পা*গল,এখন আমাকেও পা*গল বানাচ্ছে। 

নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,

-ভাই বিয়ে করিস না আর!

নীল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

-আর একটা করার ইচ্ছা আছে..আর শোন

-হু

-আমার বউ যে পাসওয়ার্ড দিয়েছে তার মানে একটা বলদও বুঝতে পারবে। তুই যদি না পারিস তাহলে তোর থেকে গাঁ*ধা কেউ নেই। তাই বাড়ি গিয়ে ভালো করে ভাববি। প্রমান করে দে তুই গা*ধা না!

(চলবে……)

#Running 

#episode:50

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply