#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৪৯
ইনায়া খুব আগ্রহ নিয়ে তাকায় শর্মীর দিকে। কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
-এটা কি সত্যি?
-তোর ফোনটা বের কর। প্রমান দিচ্ছি।
ইনায়া ঝটপট করে নিজের ফোন বের করলো।
শর্মী ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
-এমা! কোনো লক দিসনি কেন?
-আর লক! কাল জানিস নীল ভাই ফোন নিয়ে গিয়েছিলেন।
-কেন?
-কেউ যাতে উইশ করতে না পারে।
শর্মী জোড়পূর্বক হাঁসি দেয়। বলল,
-তোর ভাইয়া এইজন্যেই তোকে কল করতে মানা করছিলো। ইশশশশ্! লক দে একটা।
-কী লক দিব? প্যাটার্ন?
-উহু,পাসওয়ার্ড।
ইনায়া সেটিং থেকে পাসওয়ার্ডে গেলো। শর্মী বলল,
-এবার তোর নীল ভাই যে পাস টা দিয়েছিলো,ঐটা তুই ও দে।
ইনায়া টাইপ করে,
-462921
শর্মী খুব জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব ধরলো। দৃষ্টি সূক্ষ্ম করে বলল,
-ভালো করে দেখ এখন ইনু।
ইনায়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। ঠোঁট প্রশস্ত করে বলল,
-কী দেখবো?
শর্মী হতাশ হয়ে তাকালো ইনায়ার দিকে। বলল,
-নে আমার মাথা দেখ।
ইনায়া স্কেল এগিয়ে নিয়ে বলল,
– দে মাথা টা এগিয়ে। কত মোটা মেপে দেই…
শর্মী বিরক্ত হয়। বলে,
-আমাকে দেখে তোর মাথা মোটা মনে হচ্ছে?
ইনায়া শর্মীর মাথায় হাত রাখে । বলে,
-আরেহ্ দোস্ত ! কী করবো বল ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তুই কি বলতে চাচ্ছিস। নীল ভাই আমাকে পছন্দই করতে না । আমিই প্রথম ওনাকে বলি । উনি তো প্রথমে এক্সেপ্টও করছিল না। কান্নাকাটি দেখে আর কি রাজি হয়েছে। তাহলে তোর কথা আমি কিভাবে বুঝবো বল?
-ইনু তুই আসলে একটা গাঁধী। এদিকে দেখ। 4 এর নিচে কোন কোন অক্ষর দেওয়া বল।
ইনায়া মনোযোগ দিয়ে সেদিকে দেখলো । বলল,
-GHI
-6 এর নিচে?
-MNO
-2 তে?
-ABC
-9?
-WXYZ
-again 2?
-ABC
-এই তো ভালো ভালো।এবার দেখ। তোর নাম INAYA. এই অক্ষর গুলো কোন কোন সংখ্যার নিচে আছে?
ইনায়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে দেখে। এরপর চোখ বড় করে শর্মীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-46292!
-জ্বী হ্যাঁ!
-কীভাবে কী? আর শেষের ১?
-আজকের দিন।
ইনায়া ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিল। বলল,
-এর মানে উনিও আমাকে পছন্দ করতো? দাঁড়া আজই আমি লক দিবো ফোনে ।
-তুই কিন্তু তোর নীল ভাইকে আবার বলিস না এসব।
ইনায়া মাথা ঝাঁকায়।
.
.
.
বাড়ি ফিরে নাকে মুখে খায় ইনায়া। খেয়ে ঘরে গিয়েই শুরু করে নতুন মিশন। বেশ অনেকঅনেকক্ষণ ধরে চিন্তা ভাবনা করে ফোনের লক দেয়,
-196610
নিচের ঠোঁট কা*মড়ে মনে মনে বলল,
-আমাকে এই পাসওয়ার্ড নিয়ে কতো হয়রানি করিয়েছেন নীল ভাই! হুঁহ! দেখি আপনি এখন কী করেন।
মনে মনে বেশ খুশি হয় ইনায়া। তবে পরক্ষনেই মনমরা হয়ে যায়।
বিড়বিড় করে বলল,
-কিন্তু নীল ভাই যদি আমার ফোন না ধরে তাহলে বুঝবে কীভাবে? কীভাবে ধরানো যায়?
নীলের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় সাধারণত। এদিকে ইনায়া পুরো বাড়ি পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। নানা রকমের ফন্দি আঁটছে ঘুরতে ঘুরতে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় সে আনায়ার থেকে সাহায্য নিবে।
তার রুমে গিয়ে ডাকলো,
-এই অনু! ছাদে চল।
-এখন ইনুপু?
-হ্যাঁ বিকেলেই তো যেতে হয়। চল চল।
আনায়া সন্দেহের চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। তবে কিছু বলে না।
ছাদে যেতে যেতে ইনায়া বলতে থাকে,
-জানিস তো অনু,তোকে একটা কথা তো বলা ই হয়নি…
-কী কথা ইনুপু?
-আমাকে একটা ছেলে পছন্দ করেছে খুব। আমারও ভালো লেগেছে…
-হ্যাঁ! ইনুপু! কী বলছো তুমি???? ভাইয়ারা শুনলে তুমি শেষ!
-আরে ধুর্! কিচ্ছু বলবে না। জানেই তো সব।
-জানে?
-হ্যাঁ অনু,একই ভার্সিটি তো…
-ওহ্ আচ্ছা।
ইনায়া আর আনায়া ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। আনায়া ছাদের গাছগুলো নিয়ে গবেষণা চালায়।আর ইনায়া তাকিয়ে রয়েছে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে। নীলের আসার অপেক্ষা করছে। মেইন গেইটের বাইরে নীল বাইক নিয়ে ঢুকতেই ইনায়া উল্টো দিকে ঘুরে ফোন কানে নেয়। হাসতে হাসতে কথা বলার অভিনয় করে পুনরায় নীলের দিকে তাকয়। নীল সবে হেলমেট খুলছে। হেলমেট খুলে রেখে আড় চোখে ইনায়াকে দেখে।
এদিকে আনায়া জিজ্ঞেস করছে,
-কে কে?
ইনায়া ফিসফিস করে বলল,
-ঈশান ঈশান..
নীল কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইনায়ার দিকে।তবে ইনায়া দেখেও না দেখার ভান করে নাকে গালে ঠোঁটে হাত দিয়ে কথা বলতে থাকে। নিচ থেকে নীল চেঁচিয়ে আনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-অনু,কার সাথে কথা বলে তোর বোন?
-ঈশান ভাইয়া…
ইনায়া সাথে সাথে একটু সরে গিয়ে ফোন বুকের সাথে চেপে ধরে।
চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলল,
-ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন….
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নীল ছাদে আসে। শার্টের হাতা গুটিয়ে আনায়াকে বলল,
-নিচে যা।
অনু কপাল ভাঁজ করে বলল,
-কেন বড় ভাইয়া?
নীল কণ্ঠস্বর আরেকটু উঁচু করলো। বলল,
-নিতে যেতে বলেছি অনু!
আনায়া কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিচে চলে যায়। এদিকে নীল এক পা এক পা করে ইনায়ার দিকে আগাচ্ছে।
হাতে ধরে থাকা ফোনকে ইশারায় দেখিয়ে বলল,
-ফোনটা দে।
ইনায়া চোখ বুজেই ফোন দিয়ে দেয়। ফোন হাতে নিয়েই আকস্মিক চেঁচিয়ে উঠলো নীল।
-What the hell!
ইনায়া টিপটিপ করে তাকায় নীলের দিকে।চোখ হালকা লাল হয়ে রয়েছে। ইনায়া চুপ করে থাকা দেখে নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-খোল! দ্রুত।
ইনায়া ডান হাত কপালে তুলে বলল,
-নাআআআআআ! এ হতে পারে না নীল ভাই! কিছুতেই আমি খুলব না…
-তোর কি মনে হয় আমি নিজে খুলে নিতে পারবো না?
-আপনি আমার দেহ পাবেন নীল ভাই! কিন্তু মন? তা কী করে পাবেন?
-তোর কানের নিচ বরাবর আমার এই শক্ত হাতের একটা থা*প্পর পড়লে দেহ মন সব আপনা আপনি চলে আসবে।
ইনায়া ভয়ে ভয়ে তাকায় নীলের দিকে। বলল,
-১৯৬৬১০…..
নীল আড় চোখে ইনায়াকে দেখে লক খুলে। ফোন চেক করে বলল,
-কার সাথে কথা বলছিলি?
-কারো সাথেই না নীল ভাই। আপনার সাথে প্রাঙ্ক করলাম।
নীল ইনায়ার ফোন থেকে সিম খুলে নিয়ে ইনায়ার হাতে পুনরায় ফোন দিয়ে বলল,
-এটা আজকে থেকে আমার ফোনে থাকবে।
ইনায়া চমকিয়ে তাকায় নীলের দিকে।
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
-আআআ কেন নীল ভাই?
-দেওয়ান নীলের সাথে প্রাঙ্ক করার শাস্তি।
কথাটা বলেই হুরহুর করে বেড়িয়ে যায় নীল।
.
.
.
প্রায় ত্রিশ মিনিটের শাওয়ার শেষ করে নীল তোয়ালে কোমরে পেচিয়ে ঘরে আসে। রিসানের নাম্বার থেকে চল্লিশ টা মিসড কল। নীল ফোন তুলে কল ব্যাক করে,
-Any problem Risan?
-মামা ওকে কি হসপিটালে ভর্তি করতে দিবো? মানে ওর বাবা মা পা ধরে কানতেছে আরকি…
-মানে কি!
-আরে রাগিস না! এমনে আর কিছুক্ষন রাখলে তো বেচারা বাঁচবে না।
-তো হসপিটালে ভর্তি হতে দিসনি কেন?
-তোর অনুমতি ছাড়া কেমনে কী মামা!
-শিট্ ম্যান! দ্রুত অ্যাডমিট করে দে…..
রিসান কল কেটে দেয়।
নীল বিছানায় ফোন ফেলে বলল,
-তোর একটা প্রাঙ্কের জন্য ইনু! ছেলেটার যায় যায় অবস্থা….
নীল সিঁড়ি তে উঠতে উঠতে ঈশানের নাম ঠিকানা রিসানকে দিয়ে তারে মা*রতে অর্ডার করেছিলো। এদিকে হঠাৎই আরানের কল আসে। নীল কল ধরতেই আরান খুব দ্রুততার সাথে বলতে থাকে,
-নীল,তুই দ্রুত নির্বাচন অফিসে আয়। ফারিনের বাবা এসেছে।
নীল বিরক্তি সূচক শব্দ করে। বলল,
-ok f**k him..
-আস্তাগফিরুল্লাহ! তুই আয়।
-আচ্ছা থাক,আসছি। আর শোন, ধ*র্ষণ করতে হবে না বুড়োটাকে। আমার জীবনে আমার একমাত্র সোনা বউটাকে কিন্তু বুড়োর জন্যই পেয়েছি।
নীল কল কেটে দেয়। আয়রন করা সাদা পান্জাবী,সাথে সাদা পাজামা পরে ওয়ালেট,বাইকের চাবি আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে পরে । গন্তব্য এখন নির্বাচন অফিস।
(চলবে……)
#Running
#episode:49
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৫