Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৪৮


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৪৮

নীলের মুখে মায়াবতী ডাক শুনলে ইনায়ার হার্টবিট বেরে যায়। 

বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল,

-হু…বুঝেছি…কাউকেই উত্তর দেবো না…

-এই তো গুড। সুন্দর মতো খেয়ে রেস্ট করবি কিছুক্ষণ। দরজার বাইরে বের হওয়ার দরকার নেই। আর ১১.৫০ এ বারান্দায় যাবি। 

-কেন? 

-কারন আমি নিচে দাঁড়িয়ে উইশ করবো,আর আমাকে সুন্দর একটা জবাব দিবি।

ইনায়া খুশি খুশি চাহনি নিয়ে তাকায় নীলের দিকে। 

টেনে টেনে বলল,

-এমনিতেও শুধু আপনি উইশ করলেই আমার হবে। আর কাউকেই দরকার নেই নীল ভাই।

-ভাই ভাই করে মুখে এতো ফেনা তুলতে হবে না।

কথাটা বলেই ইনায়ার ফোন নিয়ে নীল বেড়িয়ে যায়। নীলের 

বের হওয়ার পরপরই ইনায়া চেঁচিয়ে ওঠে,

-আরে নীল ভাই! প্লেট?

তবে আশেপাশে আর নীলের ছায়া দেখা যায় না। ইনায়া মুখ মলিন করে খেতে থাকে। কার্টুন দেখে ভাত খাওয়ার সুযোগ টাও নীলের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেলো।ধীরে ধীরে খেতে খেতে প্রায় বিশ মিনিট পরে তা শেষ করে  হাত ধুতে ওয়াশরুমে গেলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ব্রাশে পেস্ট লাগায়। একবারে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে টেবিলে তাকিয়ে দেখে প্লেট গ্লাস আর নেই। ইনায়া চোখ ডলতে ডলতে আবার তাকায়। একটা বক্স রেখে দেওয়া। দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো বক্সের নিচে ছোট্ট একটা চিরকুট। 

লেখা-

“দরজা বন্ধ করে দে। ১১.৫০ এ বেলকনিতে থাকবি”

ইনায়া গায়ের ওরনা দিয়ে দ্রুত হাত মুছে নেয়। বেশ তাড়াহুড়ো করে বক্সটা হাতে নিয়ে খুলতে শুরু করলো। একেবারে গাঁঢ় খয়েরী রঙের জামদানি শাড়ি রাখা। শাড়ির সাথে আরেকটি চিরকুট। 

লেখা-

“শাড়িটা পড়লে আপনাকে পূর্ণিমার চাঁদ লাগবে,আমার মায়াবতী! ১১.৫০ ও বেলকনিতে থাকবেন।”

ইনায়া শাড়িটা তুলে নেয়। নিচে আরেকটা বক্স রাখা। তার ভেতরে সুন্দর ২ ডজন কাঁচের চুড়ি। সাথে আরো একটা চিরকুট।

“চুড়ি গুলো দেখে মায়া লাগছিলো। মনে হলো এগুলোর জায়গা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাতে হওয়া উচিত।তোমার সুন্দর হাতে তাদের কিছু সময়ের জন্য জায়গা দিতে পারো।তবে বেশিক্ষণ না,কারন নীল অনেক পসেসিভ তার মায়াবতীকে নিয়ে।১১.৫০ এ বেলকনিতে থাকবে!”

তিনটে চিরকুটেই একটি কমন কথা লেখা। তুই,আপনি আর তুমি বলে সম্বোধন করে। ১১.৫০ এ যেন ইনায়া বেলকনিতে যায়। 

.

.

.

ছাদের দরজা বন্ধ করে আনান পা ছাড়িয়ে বসে রয়েছে। সামনে রাখা একশো টা চিঠির খাম। আর হাতে কাঁচের বোতল,যার অর্ধেকটা খালি। আনানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে কপাল মুছে চিঠির খাম গুলো ধরে। 

সেদিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

-এসব আজই,একটু পরেই তোকে দেওয়ার কথা ছিলো ইনু। কিন্তু তুই কোনো দিন জানতেই পারবি না কেউ একজন তোকে অন্ধ পা*গলের মতো ভালোবাসে।কেউ একজন তোকে এক তরফা ভালোবেসে ধীরে ধীরে মৃ*ত্যুর পথ বেঁচে নিয়েছে। আমি তো তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না,বুঝিস না? হয় আমার জীবনে তুই থাকবি,না হয় আমার জীবন থাকবে না। 

আনান খামগুলো নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতের বোতলে থাকা অ্যালকোহল পুরো টা শেষ করে বলল,

-কিন্তু তুই তো আমার হবি না। তাই এই ছাদের কিনারে থেকে আমি পড়ে যাবো! ইয়ে! ইনু পড়ে যাবে আনান।

আনান ছাদের কোনায় যায় ধীর পায়ে। রেলিংয়ের উপর পা ঝুলিয়ে বসলো। ১২ টা বাজতে এখনো দশ মিনিট। 

বিড়বিড় করে বলল,

-তোর জন্মদিনের সেরা উপহার পাবি তাই না?? আর দশ মিনিট অপেক্ষা কর।

.

.

.

.

ইনায়া শাড়ি পড়ে দু হাতে চুড়ি পড়েছে। সবশেষে নিজের চুল ছেড়ে দিয়ে আয়নাতে প্রতিচ্ছবি দেখলো মন দিয়ে। আসলেই কি সুন্দর মানিয়েছে শাড়িটা! ইনায়া ঘড়ির দিকে তাকায়। ১১.৫২ বাজে। 

জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,

-ইশশশ,২ মিনিট লেট!

শাড়ির আঁচল টেনে সামনে এনে বারান্দায় যায়। আশেপাশে কেউ নেই । ইনায়া অধৈর্য্য হয়। বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকায় আর বিড়বিড় করে বলে,

-১২ টা বাজছে না কেন! 

বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করে বেলকনিতে ইনায়া। এপাশ ওপাশ করতে করতে নীলের দেখা পায়। বেলকনি থেকে সোজা বরাবর নীল হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। 

ইনায়াকে ইশারায় বলল,

-আর এক মিনিট।

ইনায়া মুচকি হাসে। তার জীবনের সেরা জন্মদিন বোধ হয়। চোখ বুজে দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ড পড়েই নীলের থেকে তুলনামূলক চিকন কণ্ঠস্বরের চিৎকার ভেসে আসে ইনায়ার কানে। ইনায়া দ্রুত চোখ খোলে। নীলের দিকে তাকায়। কেউ একজন চিৎকার করে বলেছে,

-happy birthday Inu…

ইনায়া আশেপাশে দেখতেই সামনের আকাশ আলোকিত হয়ে যায়। অসংখ্য ফানুস উড়ছে। চারদিক আলোকিত। প্রত্যেকটা ফানুসের উপর লেখা,

“শুভ জন্মদিন আমার মায়াবতী”

ইনায়ার চোখের মনিতে লাল কমলা ফানুস গুলোর প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চোখে পানি ছলছল করছে। উল্টো দিকে ঘুরে চোখের কোণে জমা পানি মোছে। পুনরায় নীলের দিকে তাকালো। 

নীল তর্জনী বৃদ্ধা এক করে ইনায়াকে বোঝালো,

-অনেক সুন্দর লাগছে।

ইনায়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। নীল ঠোঁট মিলিয়ে বলল,

-শুভ জন্মদিন মায়াবতী….

ইনায়াও বিড়বিড় করে বলল,

-ধন্যবাদ নীল ভাই…

নীল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ইনায়ার দিকে।আর ইনায়া তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।

মনে মনে বলল,

-এতো সুন্দর স্নিগ্ধ রাত! কত ভাগভাগ্যবতী হলে কেউ এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে…..

ফানুস গুলো চোখের আড়াল হলে নীল ইনায়াকে ভেতরে চলে যেতে বলে। যেই বলা সেই কাজ। ইনায়া দ্রুত পা বাড়িয়ে চলে যায়। 

নীল কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে একই স্থানে। কিছুক্ষণ পর  নিজের পা সরায়। পায়ের তলে চাপা পড়ে আছে অনেক গুলো চিঠির খাম। ইনায়ার ঘরের দিকে আরেকবার তাকিয়ে ছাদের দিকে তাকায়। এরপর সতর্কতার সাথে সবগুলো কাগজ তুলে নিয়ে ভেতরে চলে আসলো নীল। 

.

.

.

আনান রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে পা ছাড়িয়ে বসে রয়েছে। ১২ টা বাজতেই সে জোড়ে চিৎকার করেছিলো। ইনায়াকে উইশ করে সমস্ত চিঠি উড়িয়ে দিয়েছে। 

বিড়বিড় করে বলল,

-আত্মহ*ত্যা মহাপাপ ইনু। তাইতো আমি পড়িনি,ফেলেছি আমার কষ্ট,আমার আবেগ,আমার শ্রমকে ।

আনান হাঁসতে হাঁসতে কান্না করে দেয়।

.

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে ছাদের রেলিংয়ে হেলান দেওয়া অবস্থায় পায় আনান। চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। দু হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে প্যান্টে বাড়ি দিলো যেন ময়লা লেগে না থাকে। চুলে হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দরজা খুলে নিচে নেমে আসে। বাড়িতে শুধু আনায়া,শিমু জাহান,আয়েশা আক্তার আর রুবিনা ইয়াসমিন রয়েছেন। বাকি সবাই যে যার কাজে। নীল ইনায়া একসাথেই বেরিয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্য। 

রুবিনা ইয়াসমিন আনানকে দেখে কাছে গিয়ে বলল,

-চোখ এমন লাল কেন? শরীর খারাপ?

আনান মাথা নাড়ায়। 

-তোর ঘরের সামনে গিয়েছিলাম সকালে। দেখলাম এখনো দরজা লাগানো,তাই আর বিরক্ত করিনি।

আনান অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

-আমার রুমের?

-হ্যাঁ।

.

.

.

ইনায়া ক্লাসরুমে ঢুকতেই শর্মী এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। পাঁচটা গোলাপ ফুল আর দুটো চকোলেট দিয়ে বলল,

-happy birthday dst….

ইনায়া হা করে তাকিয়ে থাকে শর্মীর দিকে। 

শর্মী কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

-কী হলো? খুশি হসনি?

-না না হয়েছি!

-কিছু বললি না যে?

-আসলে দোস্ত…

-কী?

-নীল ভাই বারণ করেছে,কাউকে যেন কোনো উত্তর না দেই…

শর্মী আড় চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। বলে,

-এখনই এই অবস্থা? বিয়ের পরে যে কি হবে! যদিও বিয়ে হলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়!

-ইয়ে মানে…

-বাদ দে,আজকে তোকে একটা গোপন কথা বলবো।

-কী গোপন কথা?

-তোর নীল ভাই এর ফোনের পাসওয়ার্ড টা মনে আছে?

-হুম আছে তো। অদ্ভুত সংখ্যা গুলো ছিলো,462961,এমন কিছু ছিলো….

-এর  মানে জানিস?

-উহু…DFB-dewan family bow? 

-হ্যাঁ আমার মাথা!

-তুই জানিস?

-হুম হুম।

-কী?

-ঐ পাসওয়ার্ড মানে হলো তুই। আর শেষে যে 1,ঐটা মানে হলো আজকের দিন। মানে তোর জন্ম তারিখ।

ইনায়া অবাক হয়ে তাকায় শর্মীর দিকে।বলে,

-ধুর্ আমি হবো কীভাবে? নীল ভাই তো আমাকে সহ্যই করতে পারতো না তখন। মাথা তোর খারাপ হয়ে গেছে।

-আচ্ছা বুঝিয়ে দিচ্ছি পাসওয়ার্ড টার মানে।.

(চলবে……)

#Running 

#episode:48

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply