#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৪৬
নীলের মুখে বউ শব্দ টা শুনে লাজুক হাঁসে ইনায়া। পায়ের নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ করে দৌড়ে নিচে চলে যায় । লম্বা আঁচল মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আলতা রাঙা পা,সাথে লজ্জায় লাল হওয়া মুখ। এক দৌঁড়ে ঘরে গিয়ে দরজা লক করে দিলো ইনায়া। বিছানায় বসে নীলের পড়িয়ে দেওয়া নুপুরে পরম যত্নে হাত লাগায়। টকটকা লাল আলতা পড়ানো
পায়ে হাত রেখে মুচকি হেসে টাইমলাইনে পোস্ট করে,
“সারারাত ছিল স্বপনের রাত
স্মৃতির আকাশে যেন বহুদিন পর
মেঘ ভেঙে উঠেছিল পূণিমা চাঁদ”
শাড়ি পরিহিত অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। এদিকে নীল ছাদে থাকে আরো কিছুসময়। আকাশপানে চেয়ে প্রার্থনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে।
দুহাত তুলে বলল,
“সারাজীবন যেন আমার ব্যক্তিগত সুখকে সাথে নিয়ে এভাবেই বেঁচে থাকি,একসাথে…”
দু চোখ বন্ধ করে বুক ভরে প্রশান্তির শ্বাস নেওয়ার মাঝে এ নির্জন জায়গায়ও কারো পায়ের আওয়াজ কানে ভেসে আসে নীলের। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি।পেছন ফিরে তাকাতে দেখে আনান দাঁড়িয়ে। এমন অসময়ে আনানকে দেখে তার কাছে এগিয়ে এলো নীল।
ভ্রু কুঁচকে বলল,
-কী হয়েছে? এতো রাতে ছাদে কেন?
-তুমি এখানে কেন?
-প্রশ্নটা আমি আগে করেছি আনান।
-কিন্তু উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। ইনু এখানে কেন এসেছিলো?
নীল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আনানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
-অতিরিক্ত কিছু ভালো নয়।
আনানকে ঠেলে সরিয়ে নিচে নেমে আসে নীল। একধ্যানে নীলের যাওয়া দেখে আনান মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে।তার কাছে তিমির রাত্রির মতো লাগছে এই পূর্ণিমার রাত। মন ভেঙেচুরে চুরমার হচ্ছে। মুহুর্তেই সে হাঁটু গেড়ে ধপ করে বসে পড়ে ছাদে। কান্না করে গম্ভীর কণ্ঠে। সে কন্ঠে চাপা কষ্ট, আর্তনাদ। একটু আগে একই ভঙ্গিমায় এক প্রেমিক পুরুষ তার মানের কথার জানান দিল। এখন ঠিক একই জায়গায় বসে আরেক প্রেমিক পুরুষের মন ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো। আনান আকাশের দিকে তাকায়।
চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে,
“আমার ইনুকে দাও,নাহলে তোমার কাছে নিয়ে যাও। জীবন্ত লা*শ হয়ে কেন বাঁচবো আমি? শুধু আত্মহ*ত্যা মহাপাপ বলে? সব পাপ থেকে মুক্তি দিন আমায়!”
দুহাত তুলে করা প্রার্থনা। দুজনেই আকাশপানে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলো,
“একজন চাইলো সুখের বিনিময়ে সুখ,আরেক জন চাইলো কষ্টের বিনিময়ে মৃ*ত্যু।”
.
.
.
.
বেশ ফুরফুরে মেজাজে ঘুম থেকে ওঠে ইনায়া। পড়নে শাড়ি দেখে দ্রুত খুলে নেয়। সকাল সকাল কেউ দরজা ধাক্কালে খুলতে সময় লেগে যেতে পারে। শাড়ি টা কোনোরকমে খুলে জড়সড় করে আলমারি তে ঢুকিয়ে রাখে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে গুনগুন করতে করতে নিচে চলে আসে। আকবর দেওয়ান মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছেন সোফায় বসে। পায়ের উপর পা তুলে,আর হাতে চায়ের কাপ। তার পাশে কামরুল দেওয়ান। মুখোমুখি সোফায় বসেছে নীল। ইনায়ার পায়ের ঝুনঝুন শব্দে সকলে সেদিকে তাকায়। তবে সব দৃষ্টি উপেক্ষা করে ইনায়া সোজা রান্না ঘরে যায়।
শিমু জাহান কে জড়িয়ে ধরে বলল,
-বড় মা! আমি হেল্প করি?
-ওমা! কী হয়েছে মেয়ের?
-কাজ করতে পারি না?
-কাজ করলে তো বিয়ে দিতে হবে।
ইনায়া আড় চোখে নীলের দিকে তাকায়।
বলে,
-না থাক! কাজ করবো না….
রুবিনা ইয়াসমিন টেবিল গোছাতে গোছাতে বললেন,
-নূপুর কবে পড়লি ইনু?
-এইতো কাল,মেজোমা।
আয়েশা আক্তার কাছে এগিয়ে গেলেন ইনায়ার। নূপুরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-এটা কার? তোর তো এমন কোনো নূপুর নেই।
ইনায়া বিপাকে পড়ে। বারবার ঢোক গিলে নীলের দিকে তাকায়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উঠে পড়ে নীল। তাদের কাছে এগিয়ে এসে কাপ নামিয়ে রাখলো।
শান্ত গলায় বলল,
-আমি এনে দিয়েছিলাম গতকাল। কোনো সমস্যা হয়েছে?
-না,কী সমস্যা হবে। তুই দিলে সমস্যা নেই। মায়েদের সব খোঁজ রাখতে হয়। মেয়ে বড় হলে খুব যন্ত্রণা।
ওর বড় বড় দুটো ভাই আছে বলে একটু নিশ্চিন্ত থাকি আমি।
শিমু জাহান তাকায় নীলের দিকে। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ইশারায় সবাইকে টেবিলে বসতে বললেন। ইনায়া গুনগুন করে গান গেয়েই চলেছে।
ইনায়া, নীল চেয়ার টেনে বসলো। ইনায়ার পাশের চেয়ার টা ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
নীল সেদিকে তাকিয়ে বলল,
-আনান উঠেনি?
রুবিনা ইয়াসমিন ঠান্ডা গলায় বললেন,
-কত বার তো ডাকলাম। কোনো পাত্তা নেই স্যারের। খেয়ে নে তোরা।
আকবর দেওয়ান পেপার নামিয়ে বললেন,
-ভার্সিটিতে যাবে না?
-যখন উঠবে রেডি করে পাঠিয়ে দেবো।
.
.
.
ভার্সিটির অফিস রুমে নীল আরান মুখোমুখি বসে রয়েছে।শত ব্যস্ততা কাটিয়ে বন্ধুর কথাতে শর্মীকে নিয়ে এসেছে ভার্সিটিতে ভর্তি করতে। ইনায়ার ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি হবে শর্মী। বহুদিন পরে দুজন দুজনকে দেখে খুশিতে আত্মহারা। গলা জড়িয়ে ক্লাস রুমে চলে গিয়েছে। তবে আরানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। নির্বাচনের প্রেশার সামনে,তার সাথে বিপক্ষে ফারিন চৌধুরী।
পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে বলল,
-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো এমন উপনির্বাচন হবে দোস্ত। মুখে না বললেও তোর বন্ধু ভয় পাচ্ছে মামা।
নীল পায়ের উপর পা তুলে হালকা করে নাক মুছলো। বলল,
-ভয় কি ঐ ফারিনের জন্য?
-এহ্ আসলে…
-বিপক্ষ দল যত শক্তিশালী,খেলাতে মজা তার থেকে বেশি দ্বিগুণ। আর তোর বন্ধু দেওয়ান নীল।শুধু ১৭ আসনের কথা বাদ দে,যে আসনেই থাকবি তোকে জিতানোর দায়িত্ব আমার।
-সে ভরসা আছে…. কিন্তু পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড?
নীল উঠে দাঁড়ালো। টাই ঠিক করে বলল,
-আমার কাছে ব্যাকগ্রাউন্ড মানেই নীল। মানুষের বাপ দাদাকে গোনার সময় নেই। আরেকটা কথা কী বলতো?
ইহান দেওয়ান ফারিন চৌধুরীর প্রেমিক হওয়ার আগে আমার ভাই! Understand Mr. Aran khan?
-যাহ্ ক্লাস নে, ইনোসেন্ট ম্যান…আমি আসি। আমার বউ এর খেয়াল রাখিস।
-সরি ব্রো,পরের বউ এর খেয়াল আমি রাখি না। নিজের বউকে নিজের করে পেয়ে গেছি।
-সিরিয়াসলি?
-ইয়েস্ মিঃ খান।
-ওয়েলকাম মিঃ দেওয়ান! এই অন্ধকার জগতে আপনাকে স্বাগতম। এতো কাল খুব কষ্ট লাগতো যে আমি একা কেন অন্ধকারে। এখন আমি আনন্দিত। তোর বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাবো কাল।
-আমাকে এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই । আমার বউ এর জন্য এমনিও আমি সব করতে পারি।
আরান টেনে হাঁসে। গুনগুন করতে করতে বেরিয়ে যায় রুম থেকে-
মাথা থাকে সবার উপরে
ঝুঁকিয়ো না মাথা বন্ধু..
ঝুঁকিয়ো না কারোর তরে
আর প্রেম জাগিলে মা*রবা তারে
কুতুমেরা হয়রে তালুই
এক নিমিশে ঘরে ঘরে
আমি ঘর ছেরেছি পর ছেরেছি
অই আমি ঘর ছেরেছি পর ছেরেছি
নিজেকে ,নিজেকে সৈন্য হতে দিবো না
ভাই সৈন্য হতে দিবো না!
.
.
.
ইনায়া আর শর্মী একসাথে বসেছে। শর্মীকে পেয়ে যেন অনেক দিনের দীর্ঘ অভিযোগ একসাথে ঢেলে দিল ইনায়া। সূচনার কাছে গিয়ে বলল,
-তোমাকে অন্য সিটে যেতে হবে।
সূচনা বেশ অবাক হয়ে জবাব দেয়,
-কেন?
-নেতার বউ এসেছে। সে আমার পাশে বসতে চায়। তুমি না সরলে ঝামেলা হবে।
সূচনা চুপচাপ মানুষ। শর্মীকে ভয়ে ভয়ে আড় চোখে দেখলো। তারপর নিজের বই খাতা নিয়ে চলে যায় পেছনে। ক্লাসের সবাইকে নিয়েই বাড়তি বাড়তি তথ্য দিচ্ছে ইনায়া শর্মীকে। তবে সবার কথাই বলছে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে। শর্মী ইনায়ার হাত টা চেপে ধরে।
ফিসফিস করে বলে,
-হাত দিয়ে দেখাচ্ছিস কেন! ওরা বুঝে যাবে।
-আচ্ছা আর দেখাবো না।
হাত ছাড়িয়ে পুনরায় আঙ্গুল দিয়ে দেখানো শুরু করে সবাইকে। শর্মীর চাহনি দেখে আবার হাত নামিয়ে বলল,
-মুদ্রা দোষ দোস্ত। শোন শোন! ঐ যে ঐ মেয়েটা,
-হাত নামা।
-আচ্ছা,ঐ মেয়েটা খুব খারাপ দোস্ত। ছেলেদের গায়ের মধ্যে সবসময় ওকেই দেখবি। আর এই যে সূচনাতে দেখছিস না?
-ধুর্! ইনু এভাবে আঙ্গুল দিস না। বুঝেছি আমি। সবাই খারাপ। ভালো শুধু আমরা।
-হুম হুম…
.
.
.
ভার্সিটির আটতলা ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে আনান। একে তো দেরি করে এসেছে, তারউপর এসে ক্লাসে যায়নি। তর্জনী মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে চেপে ধরা জলন্ত সি*গারেট তার। এক প্যাকেট সি*গারেট কিনে সোজা ছাদে।তিন চার বার মুখে দিয়ে টান দেয় তাতে। তবে গুনে গুনে বারো বার কেশে বসে পড়লো মেঝেতে। প্যাকেটে থাকা বিশটা সি*গারেট শেষ করে আনান। পা*গলের মতো কিছুক্ষণ বসে থেকে নিচে চলে আসে। ভার্সিটির সামনে ফুটপাতে বসানো চায়ের দোকানে আসে।
দোকানদারের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
-মামা,এক প্যাকেট বে*নসন!
জীবনে সি*গারেট ছুয়ে না দেখে ছেলে আনান,বুঝতে অসুবিধা হয়না দোকানদারের। গোল্ড*লিফ সিগারেট বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-ঐডা নাই।
আনান হাত বাড়িয়ে নিয়ে নেয়। মনে মনে বলে,
-খাবোই যখন,একটা খেলেই হয়।
চলে যায় সে বন্ধু দের কাছে,যারা একসময় সিগারেট খাওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করতো। আজ তাদের সাথে আড্ডায় যুক্ত হয় আনান।
ক্যাম্পাসে গিটার হাতে বসলো সে। আশে পাশে দেখতে ইনায়ার ক্লাস রুম বরাবর চোখ যায়। বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলল,
-আমি গাই,আজ।
সকলে উৎসুক হয়। আনান শুরু করে,
লাল শাড়ি পড়িয়া কন্যা র*ক্ত আলতা পায়
আমার চোখের জল মিশাইলা নিলানা বিদায়
তুমি ফিরাও চাইলা না একবার চইলা গেলা হায়
জানি আজ রাতে হইবা পরের আর ভাইব না আমায়…
…
গান গাইতে গাইতে এক পর্যায়ে কাশি উঠলে গিটার পাশে নামিয়ে রাখে। পানির বোতল থেকে একটু চুমুক পানি খেয়ে সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-বাকিটা গাবো নিশ্চিত,তবে অন্য একদিন। ছাদে চল এখন।
(চলবে……)
#Running
#episode:46
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭