#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৩৭
নীলের প্রতি মেয়েদের গায়ে পড়া ভাবের জন্য শুরু থেকেই ঈশানের ভীষণ রাগ লাগছিল। তবে সে রাগ এখন শত্রুতায় পরিণত হয়েছে। পুরো এক ঘন্টা ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। ঈশান হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লাসের বাইরে।এতোগুলো মানুষের সামনে অকারণে অপমানিত হতে হলো তার। ক্লাস শেষে ইনায়া এলোমেলো হেঁটে কোনো রকমে আকবর দেওয়ান এর কাছে যায়। কামরুল দেওয়ান,নীলও সেখানেই বসেছিল।
ইনায়া কিছুক্ষন থতমত খেয়ে তাকিয়ে থেকে নীলের কাছে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,
-নীল ভাই!
-বলুন মিস. ইনায়া? কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়েছে?
-হ্যাঁ! অনেক কিছু। অনেক কিছুই বুঝতে অসুবিধা হয়েছে!
-ঠিক আছে,আগামী ক্লাসে সলভ করে দিব।
-আমি কি আপনার সাথে মজা করছি?
-একদম না।
-আমায় জানালেন না কেন আপনি প্রফেসর হিসেবে যোগ দিয়েছেন?
-গত দুমাসে দু মিনিট আমার সাথে কোনো জীবন সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন?
-আমি জানলে তো শুনতাম ই। কিন্তু আপনার তো দায়িত্ব ছিল আমায় বলা…
-দায়িত্ব? তোর প্রতি কীসের দায়িত্ব ? ছোট বোনের প্রতি বড় ভাই এর যেমন?
ইনায়া কিছুক্ষনের জন্য থেমে যায়। আকবর দেওয়ান ইনায়াকে দেখে তার মাথা হাত দিয়ে বলল,
-তোর সামনেই তো তোর ভাই এর সাথে কথা হয়েছিল। মনে নেই?
ইনায়ার মনে পড়ে,
বড়বাবা নীল ভাইকে বলেছিল ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন হওয়ার জন্য। আর..আর নীল ভাই জবাব দিয়েছিল,যোগ্য মানুষদেরকেই ভার্সিটিতে একসাথে দেখবেন।
ইনায়ার ভেতরতা কম্পিত হয়ে ওঠে। এসি রুমের মধ্যে মুখে গলায় হাত দিয়ে ঘাম মুছলো সে।
বিড়বিড় করে বলল,
-তার মানে নীল ভাই এর সাথে আরো একজন এই ভার্সিটিতে এসেছে,যাকে নীল ভাই ভালোবাসেন।
আর কে ভার্সিটিতে এসেছে এ কথা কী করে জিজ্ঞেস করবে ইনায়া ! তা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে তার। শুকনো ঢোক গিলে নীলের দিকে তাকালো সে।
তারপর চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
-না না,আমি কিচ্ছু জানতে চাই না, কিচ্ছু শুনতে চাই না। যা খুশি হবে, কিন্তু নীল ভাই আমার মনে এভাবেই থাকবে।
ইনায়া তার ভাবনা থেকে বের হয় আনানের ডাকে।
-আমি কি আসতে পারি ?
ইনায়া পেছনে ঘুরে দরজার দিকে তাকায়। আনানের গায়ে হাতাকাটা লাল জার্সি,ঢিলা লাল শর্টস, সাদা মোজা আর সাদা জুতা। চুল ভিজে পানি কপাল চুয়ে পড়ছে। দুএক ফোট এসে থেমেছে কণ্ঠমণির উপরে। হাতে বাস্কেটবল।
আনান আশেপাশে সবাইকে দেখে ইনায়ার কাছে এসে বলটা তার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর ওরনার এক পাশের অংশ নিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বলল,
-তোর ক্লাসে গিয়েছিলাম ইনু। তারপর না পেয়ে ভাবলাম এখানেই থাকবি। এতো গরম!
কপাল থেকে সরিয়ে ওরনা গলার কাছে নিতেই নীল ডান হাত দিয়ে ওরনা আনানের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। বাম হাত দিয়ে আনানের হাতে টিস্যু গুজে দিয়ে বলল,
-এগুলো কোন ধরনের কাজ? টিস্যু থাকতে তুই ওর ওরনায় কেন টাচ করলি?
-ওর অসুবিধা নেয়,তাহলে তোমার কী বড় ভাইয়া?
নীল দাঁত কিড়মিড় করে ইনায়ার দিকে তাকালো।
বলল,
-তোর অসুবিধা নেই?
নীলের চাহনি দেখে ইনায়া বেশ অপ্রস্তুত হয়। হাত থেকে ওরনার অংশ টা নিয়ে বলল,
-অবশ্যই আছে।
ফ্রেশারদের নিয়ে ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম হবে। তাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন আকবর দেওয়ান এবং কামরুল দেওয়ান। তারা যেন বিরক্ত না হন এজন্য নীল ওদের কে রুম থেকে বাইরে আসতে বলে। ইনায়া বের হতে হতে আনানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-দেখলে ভাইয়া! ভিজিয়ে ফেলেছো।
-আহ্ থাম! চল এখন আমার সাথে।
-কোথায়?
-যেখানে নিয়ে যাব।
ইনায়া আনানের পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলে নীল ইনায়ার বাম হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। আনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-ও যাবে না।
আনান নীলের হাতের দিকে তাকায়। সেদিকে তাকিয়েই বলল,
-ও যাবে।
আনানের ভাবসাবে পরিবর্তন এসেছে। ইনায়ার শেষ পরীক্ষায় দোতলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আনান নীলকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে পরখ করেছিল। সে দৃষ্টি আজও অপরিবর্তিত। নীল ইনায়ার হাত ছেড়ে বলল,
-যাবি তুই?
ইনায়া পরেছে কেমন এক যাঁতাকলে। বিরক্ত হয়ে বলল,
-আরে বাবা কোথায় যাব?
আনান ইনায়ার চোখে চোখ রাখে। শান্ত গলায় বলে,
-আমি বাস্কেটবল খেলব। তুই একটু পাশে দাঁড়িয়ে চিয়ার আপ করবি…
-ওহ্! আগে বললেই হতো। আচ্ছা চলো।
নীল ডান হাত মুঠো করে। বাম হাত দিয়ে কপাল থেকে মাথা পর্যন্ত চেপে বলল,
-এক মিনিট আনান।
আনান দাঁড়ায়। নীল বলে,
-তুই যা। আমি ওকে নিয়ে আসছি।
আনান ইনায়ার দিকে তাকায়। এদিকে ইনায়ার চোখ চকচক করছে। নীল ভাই এর সাথে সাথে থাকা যাবে ভেবে আনান কে বলল,
-হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া! তুমি চলে যাও। আমি আসছি নীল ভাই এর সাথে।
আনান ইনায়ার দিকে তাকায় না। বলটা নিয়ে চলে যায় ভার্সিটির বাস্কেটবল কোর্টে।
.
.
.
.
অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য পড়তে পড়তে প্রায় আধমরা অবস্থা সামিরার। ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স হওয়াতে তার বাবা চায় কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ স্নাতক করুক। কিন্তু সামিরার ইচ্ছা সম্পূর্ণ আলাদা। নিজের ইচ্ছে মতো সাবজেক্ট পেতে হলে সরকারি যেকোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হলেই তার হবে । সেই জের ধরেই পড়ছে সে।তবে এতো ব্যস্ততার মাঝেও রোজ একবার করে আনানকে দেখা বাদ যায় না। ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একবার করে আনানের আইডি তে ঢোকে,কোনো কোনোদিন ম্যাসেজ ও দেয়। আজও কিছু একটা ভাবতে ভাবতে আনানের আইডিতে ঢুকলো সে।
ম্যাসেজ করল,
“একটা উপকার করবেন?”
আনান বাস্কেটবল কোর্টে ঘেমে নেয়ে বসে আছে। নীল ইনায়া এখনো আসেনি। অসম্ভব রাগ নিয়ে বল এদিক সেদিক জোড়ে জোড়ে মারছে। এরই মাঝে ফোন ভাইব্রেট করলে বের করে দেখে সামিরার ম্যাসেজ। আনান বিরক্ত হয়। কপাল কুঁচকে ফোন পকেটে ঢুকাতে গেলে কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। ইনায়ার বেস্ট ফ্রেন্ড সামিরা,রিপ্লাই না করলে ভবিষ্যতে সাহায্য পাবে না।
তাই ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়,
“হ্যাঁ বলো।”
সামিরার হাতে যেন আকাশের চাঁদ! আনানের ইনবক্সেই বসে ছিল সে।
দ্রুত দুহাত চালিয়ে রিপ্লাই দিল,
“অ্যাডমিশনের জন্য সাজেশন পেতে পারি?”
“পড়লেই হবে,আর কী সাজেশন দিব?”
সামিরা হতাশ হয়ে তাকালো ফোনের দিকে। বলল,
“আপনি কি সব জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছিলেন?”
“মোটামুটি বলা যায়। ঢাকার মধ্যে সব দিয়েছিলাম। পাশাপাশি চট্টগ্রাম আর বরিশাল।”
“বাকি জায়গায় নয় কেন?”
“চট্টগ্রাম আমার নানুবাড়ি। বরিশাল ইহান ভাইয়ার নানুবাড়ি। এর বাইরে আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না,তাই দেইনি।”
সামিরা কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায়। বুকে হাত দিয়ে ভাবে,
-ইনায়া ম্যাসেজটা না দেখলেই হয়।
এদিকে আনানের বিরক্তির সীমা নেই। সে নিজেই অ্যাডমিশন টাইমে পড়েনি। অন্যকে আর কী বলবে!
বিরক্ত হয়ে সামিরা কে লিখলো,
“কোন সাবজেক্ট এর জন্য চেষ্টা করবে?”
“আইন”
“ইহান ভাইয়া তো আইন বিষয়ক বস ছিল”
সামিরা কিবোর্ডে হাত রেখে বসে থাকে। কী বলবে বুঝতে পারছে না।
কথার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করতে বলল,
“ইনু কোথায়?”
“তোমার বন্ধু,তুমি জানো না?”
“আপনি ওর ভাই”
“সরি,এতো ভাই এর দায়িত্ব পালন করতে পারব না। ওহ্ ভালো কথা। ইনু মাইক্রোবায়োলজি নিল কেন জানো?”
“হ্যাঁ জানি তো”
ম্যাসেজ টা পাঠিয়েই জিভে কামড় দিলো সামিরা ।
বিড়বিড় করে বলল,
-নীল ভাইয়ার আদেশে যে ইনু মাইক্রোবায়োলজি নিয়েছে,তার তো বলা যাবে না!
ভুল সংশোধন করে পুনরায় আনানকে বলল,
-না না জানি না।
ম্যাসেজ টা দেখে অদ্ভুত হাসি দেয় আনান।
মনে মনে বলে,
-maybe I know the reason…..
.
.
.
.
নীল হাতাকাটা গেঞ্জি পড়েছে,নীল রঙের। সাথে নীল শর্টস। বাস্কেটবল কোর্টে পানির বোতল হাতে নিয়ে আসছে সে। পেছন পেছন ইনায়া তাল মিলিয়ে দৌড়াচ্ছে। একটু পরপর বলছে,
-নীল ভাই..আস্তে। আস্তে…
-নীল আস্তে কিছু করে না ইনু।
-আমার কষ্ট হচ্ছে নীল ভাই।
-এই সামান্য তেই?
-নিজের দিকে তাকিয়ে আপনার সাইজটা একটু দেখেন নীল ভাই । তারপর আমার দিকে তাকান।
নীল পেছন ফিরে ইনায়াকে দেখে মুচকি হাসে। তবে পরক্ষনে সে হাসি বিলিন হয়ে যায়।
মুখ গম্ভীর করে বলল,
-যখন কোনো কাজ করবি,তার আগেই ভেবে নিবি ভবিষ্যতে পরিনাম কেমন হতে পারে।
-কী করেছি?
-জানি না।
ইনায়া হাঁপাচ্ছে। বাস্কেটবল কোর্টে এসে নীল আনানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। পুরো কোর্টে তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই।।
ইনায়া আশেপাশে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।
টেনে টেনে বলল,
-আর কেউ নেই!!??
নীল আর আনান একসাথে জবাব দেয়,
-আর কেউ থাকলে তুই এখানে থাকতি না।
কথাটা বলে দুজনে একে অপরের মুখের দিকে তাকায়।
নীল আনানের থেকে বলটা নিয়ে বলল,
-তাহলে শুরু করি?
-আমি আর ইনু খেলতে চেয়েছিলম ভাইয়া।
-কিন্তু আমি চাই না ও খেলুক। শুরু করি?
দু ভাই এর মধ্যে নীরবে যুদ্ধ চলছে। তবে দুজনের এমন পরিবর্তনের কোনো কারনই বুঝতে পারছে না ইনায়া ।
আনান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-খেলবি?
একই সাথে নীল ইনায়াকে দেখে।
শান্ত গলায় বলে,
-যখন কোনো কাজ করবি,তার আগেই ভেবে নিবি ভবিষ্যতে পরিনাম কেমন হতে পারে।
ঠিক এই কথাটাই একটু আগেই বলেছিল সে। ইনায়া আনানকে জবাব দেয়,
-না ভাইয়া,তোমরা খেলো। আমি দেখি…
আনান বিরক্ত। রাগ জেদ নিয়ে খেলা শুরু করে। এদিকে নীলের বডি ফিটনেস আর খেলার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা পটু। এক ধাপ এগিয়ে বল বাস্কেটে ফেলছে। আনানের থেকে তুলনায় অনেক এগিয়ে গিয়ে কপালে তর্জনী আঙ্গুল ঠেকিয়ে ঘাম মুছে ফেলে। জয়ী হয়ে ইনায়াকে দেখে কপাল ভাঁজ করে। ইনায়ার চোখে মুখে মুগ্ধতার ছোঁয়া। তার নীল ভাই এর উপর আরো দূর্বল লাগছে এখন।
নীলের থেকে বোতল নিয়ে পানি ঢকঢক করে শেষ করল সে।
সেদিকে এক নজর দেখে নীল কপাল ভাঁজ করেই বলল,
-পানি খাওয়ার কথা আমার,অথচ আপনি খাচ্ছেন।
-হুঁ হুঁ,খাবেন?
-না ঠিক আছে।
ইনায়া বোতল আটকায়। নীলকে মাথা নিচু করে বলে,
-নীলভাই?
-বলেন?
-আপনি এমন ড্রেস আর পড়বেন না।
-কেন?
-ভালো লাগেনি আমার। আপনার হাত যে এতো শক্ত,,তা খুব ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। আর..
-কী আর?
-প্যান্ট টা অনেক ছোট…
-মোজা দিয়ে কাভার করা তো।
-তবুও…
নীল ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়,
-আচ্ছা আর পড়ব না ।
নীলের পাত্তা না দেওয়া জবাব হলেও ইনায়া স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
(চলবে……)
#Running
#episode:37
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৯
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -২৮