#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৩৪
আজ থেকে সারা বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সকাল দশটা থেকে পরীক্ষা শুরু। ইনায়ার টেনশনে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। সকাল সাতটায় শিমু জাহান নাস্তা রেডি করে ইনায়াকে ডেকে যায়। তবে ইনায়া বই নিয়েই স্থির হয়ে বসে হয়েছে। বমি বমি পাচ্ছে তার। পেটের মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে। বই খাতা সামনে রেখে এক করে সব পড়া রিভিশন দেওয়ার মধ্যিখানে দরজায় দুবার টোকা পড়ে। তবে ইনায়ার সেদিকে কোনো ধ্যান জ্ঞান নেই । নীল এক হাতে প্লেট আরেক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে ভেতরে ঢুকে। ইনায়ার সামনের চেয়ার পা দিয়ে টেনে বসল সে। প্লেট আর গ্লাস টেবিলে রেখে বলল,
-মা ডেকে গিয়েছিল না?
ইনায়া পড়ার ভঙ্গি করে বই এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-উমমমমম হুমমমমম…
-এখন না খেলে যাওয়ার আগে নাকে মুখে খেয়ে যাবি?
ইনায়া বই থেকে চোখ তুলে নীলের দিকে তাকায়। ভয়ে ভয়ে বলে,
-নীল ভাই…. প্রশ্ন কমন না পড়লে? আমার খুব ভয় করছে। খাব না আমি।
-থাপ্পড় খাবি! চুপচাপ হা কর!
নীল খাবার তুলে হাত বাড়িয়ে দেয় ইনায়ার মুখের সামনে। ইনায়া কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলেও অবশেষে মুখ খোলে। নীল পানির গ্লাস ইনায়ার হাতে ধরিয়ে বলল,
-এতো টেনশন করতে হবে না। সব কমন পড়বে। প্রশ্ন তো তোর একার জন্য করবে না। সবাই যেন পারে এমন ভাবেই করা। তাই উল্টা পাল্টা চিন্তা করে অসুস্থ হওয়ার মানে নেই ইনু। বুঝেছিস?
ইনায়া খেতে খেতে উপর নিচ মাথা ঝাঁকায়। নীল আবার বলল,
-তুই শুধু মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন পড়বি,আর সব উত্তর করবি। শুরু তে ধীরে লিখে, শেষে গিয়ে জগাখিচুড়ী করবি না একদম!
-আচ্ছা…
-এই যে বুকশেলফ এ এতো গল্প উপন্যাসের বই,এগুলো পড়া মেয়ে কখনো বাংলা পরীক্ষা নিয়ে ভয় পায়? উত্তর না জানলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত লাইন মিলিয়ে লিখে আসবি। সাথে দিবি ছোট খাটো ব্যাখ্যা ।
ইনায়া ফিক করে হেঁসে দেয় নীলের কথা শুনে। আসলেই তো,এতো সাহিত্য পড়ে কী লাভ যদি বানিয়েই না লিখতে পারে। ইনায়া মনের মধ্যে সাহস আনে। নাস্তা খেয়ে পানি খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে। নীল এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-রেডি হব।
-ওকে।
-ওকে কী? বের হন।
নীল আড় চোখে ইনায়াকে দেখে চুলে হাত দেয়। টিশার্ট ঠিকঠাক করে ঠিক যেভাবে গ্লাস প্লেট নিয়ে ঢুকেছিল
সেভাবেই সেগুলো নিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
.
.
ডাইনিং টেবিলে বসে সকলে নাস্তা করছে। নীল ইনায়ার রুম থেকে এসেই টেবিলে বসেছে।আটটার পর পরই বের হব ইনায়াকে নিয়ে সে। আকবর দেওয়ান খেতে খেতে নীলকে বললেন,
-আজ ইনায়ার এতো বড় একটা পরীক্ষা,কামরুল গিয়ে দিয়ে আসুক।তোমার যাবার প্রয়োজন নেই।
নীল বাবাকে কোনো জবাব দেয় না। তবে কামরুল দেওয়ান বড় ভাইয়ের কথায় বাঁধা দিয়ে বললেন,
-না না ভাই,নীল ও যাক। এতো বছর ধরে সব সময় ও সাথে থেকেছে।
আকবর দেওয়ান গলা ছেড়ে বললেন,
-শুধু শুধু ভিড় না বাড়ানো ভালো ।
নীল প্লেটেই পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-ইনুকে আমিই নিয়ে যাব। আপনারা চাইলে পুরো পরিবার ধরেই আসতে পারেন, তবে আলাদা,গাড়িতে করে।
আকবর দেওয়ান সহ উপস্থিত সবার চোখ নীলের উপর। শিমু জাহান রান্নাঘর থেকে তেড়ে আসেন। নীলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কী বলছিস তুই? বাবার সাথে এভাবে কথা বলতি আগে?
-আজ ইনুর এতো বড় পরীক্ষা,কীভাবে ওকে গাড়িতে যাওয়ার কথা বলে? যাতে ও পরীক্ষা না দিতে পারে? অসুস্থ হয়ে বাড়ি চলে আসে?
-চুপ করো নীল।কথাটা ভালো করে বললেই পারতে।
নীল কোনো জবাব দেয় না। সোজা নিজের রুমে চলে যায়। অফ হোয়াইট প্যান্ট আর সাদা ফরমাল শার্ট পড়ে ডান হাতে ঘড়ি পড়ে সে। বাম হাতে বাইকের চাবি নিয়ে নিজের রুম লক করে ইনায়ার রুমের দরজায় নক করল। চেঁচিয়ে বলল,
-বের হ ইনু,যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
ইনায়া ঝটপট করে দরজা খোলে। চুল দুপাশে বেনি করা,হাতে ট্রান্সফারেন্ট ফাইল। নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-ডান!
-বের হই তাহলে?
-হুম হুম।
নীল ইনায়াকে নিয়ে নিচে নামে। তারপর সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
-আপনারা যে যে যাবেন, গাড়িতে করে আসেন। অসুবিধা নেই কোনো।
কামরুল দেওয়ান আয়েশা আক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-যাবে তুমি?
তবে আয়েশা আক্তার মানা করে দেন। গলার স্বর নিচু করে বললেন,
-এতো মানুষের কী দরকার। আপনি যান।
কামরুল দেওয়ান বের হলেন। আনান ও তার সাথে যাবে। ইনায়ার প্রথম পরীক্ষা,আর আনান যাবে না তা হয় না। আনায়া যেতে চাইলেও রুবিনা ইয়াসমিন কোনো রকমে মেয়েকে আটকে রেখেছে।
.
.
ইনায়া শক্ত করে নীলের কাঁধে হাত রেখেছে। আগে বাইকে উঠলে ইনায়া নীলকে ছুঁতো না। তবে ইদানিং তাকে কিছু বলতেও হয় না। নিজে থেকেই নীলকে ধরে বসে। বিষয়টা নীল উপভোগ করলেও ইনায়ার সামনে গম্ভীর ভঙ্গি ধরে রাখে। ইনায়া নীলকে হালকা স্বরে ডাক দেয়।
-নীল ভাই…
-হু
-আমি এই বাইক নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলাম।
-পড়া নিয়ে ভাব। উল্টা পাল্টা কথা মাথায় আনলে খবর আছে।
-আচ্ছা।
-আমি বাইকে তোকে বসিয়ে যে অমনোযোগী হয়ে চালাবো এটা তোর মনে হয়? কখনো দেখেছিস জোড়ে টান দিয়েছি?
-উহু…
-তোকে নিয়ে আমি অনেক সচেতন ইনু,আল্লাহ না করুক খারাপ কথা মনেও আনবি না।
-আচ্ছা।..
নীল একটু থেমে প্রশ্ন করল,
-ভয় পাচ্ছিস?
-না,এখন আর লাগছে না নীল ভাই।
-good good,very good.
-হুঁ
-তুই যেদিন প্রথম স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিলি,সেদিনের কথা মনে আছে?
-উমমম একটু একটু…
-আচ্ছা এমন কোনো দিন আছে যেদিন আমি তোকে স্কুলে বা কলেজে নিয়ে যাইনি?
ইনায়া কিছুক্ষন ভাবে। তারপর জবাব দেয়,
-আপনিই তো সবসময় নিয়ে যেতেন,আর আপনি না গেলে ঐ দিন কোনো না কোনো ভাবে আর যাওয়া হতো না।
-কেন বল তো?
-কোনো কাজ বা ঝামেলা পড়ে যেত।
নীল বিড়বিড় করে বলল,
-গা*ধী..
-কী?
-কিছু না। তোকে প্রথম স্কুলে ভর্তি করার দিনও আমি গিয়েছিলাম।
-হুঁ..আচ্ছা।
-রিল্যাক্স ইনু। তোকে টেনশন ফ্রি রাখতে এতো কথা বলছি আমি। এতো ভয় পায় না..
-হুঁ।
নীল পরীক্ষা কেন্দ্রের থেকে একটু আগে এসে থামে। শিক্ষার্থী অভিভাবক দের উপচেপড়া ভীড়। ইনায়া নেমে হেলমেট খুলে নীলের হাতে দিলে নীল তাকে বলল,
-ইনু, দাঁড়া। চাচ্চু আসছে,দেখা করে যা।
ইনায়া দাঁড়িয়ে পড়ে। ইনায়ার মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে নীল হালকা কাশি দিয়ে বলল,
-কোনো ভয় নেই। পরীক্ষা মানে জীবন না। শোন! তুই সর্বোচ্চ খারাপ রেজাল্ট করলেও আমাকে ঠিক এমনই পাবি। তাই কী হবে কী হবে এগুলো ভাবিস না।
ইনায়া চোখ বড় বড় করে নীলের দিকে তাকায়। তার নীল ভাই আজ প্রথম বার এমন কথা বলল। এই মুহূর্তে সে নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে করছে।নীল পুনরায় বলল,
-তুই শুধু নিজের সর্বোচ্চ টা দে। আমি পাশে আছি। ঠিক এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব আগামী ৩ ঘন্টা। তাই যদি অসময়ে মনে হয় বের হয়ে আসবি,তাহলে এখানেই আসিস। আমি থাকব।কোনো ভয় নেই
ইনায়া উৎফুল্লতার সাথে মাথা নাড়ে। এরই মাঝে কামরুল দেওয়ান আর আনান চলে আসে। কামরুল দেওয়ান মেয়ের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দেন। আনান ও শুভকামনা জানায় ইনায়াকে। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ইনায়া নীলের সামনে দাঁড়ালো। বলল,
-আসছি নীল ভাই…
-আমি সব স্যারদের সাথে কথা বলে রেখেছি। সবাই তোকে চিনবে পরিচয় দিলেই,তাই কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই নির্দ্বিধায় জানাবি। সাবধানে যা। মন দিয়ে পরীক্ষা দিবি,আমি এখানেই আছি।
ইনায়া চলে যায়। যেতে যেতে মনে মনে আওড়ায়,
-এমন দায়িত্বশীল পুরুষের প্রেমে পড়তে যে কেউ বাধ্য হবে। এটা বাধ্যতামূলক।
ইনায়া চলে যেতে কামরুল দেওয়ান নীলকে বললেন,
-চল,আমরাও চলে যাই।
-আপনারা চলে যান। আমি থাকব এখানে। যদি বেশি নার্ভাস হয়ে কোনো অসুবিধা হয় ওর?
একটু থেমে আবার বলল,
-আপনি চিন্তা করবেন না,আমি থাকি সমস্যা নেই । অফিসের কাজ মেজো চাচ্চু সামলিয়ে নিবেন,কথা হয়েছে আমার।
কামরুল দেওয়ান কথা বাড়ায় না। আনানকে সাথে নিয়ে চলে যান ।
(চলবে……)
#Running
#episode:34
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৮
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩২