Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৩২


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৩২

টানা রাত দশটা পর্যন্ত পড়ার পরে নীল ইনায়াকে ছুটি দিয়েছে। তাও আকবর দেওয়ান এর আদেশে। খাবার টেবিলে বসে বড় বাবার কাছে ইনায়া আহ্লাদ করে 

বলে,

-এখন আমার ছুটি চাই বড় বাবা….প্লিজ প্লিজ প্লিজ…

ইনায়ার মুখ থেকে কথাটা বের হওয়া মাত্র আকবর দেওয়ার নীলের দিকে স্থির চোখে তাকায়। আদেশ দিয়ে বলল,

-আবার কাল পড়াবে। আজ এখানেই শেষ।

ইনায়া প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। নীলের দিকে তাকানোর জন্য যে সাহস দরকার আপাতত তার কাছে সে সাহস নেই। প্লেটে আঙ্গুল ঘোরাতে ঘোরাতে মুচকি হাঁসে সে। নীল কোনো জবাব দেয় না বাবাকে। শান্ত গলায় ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

-কথাটা আমাকেও বলা যেত ইনু ,তুই ছোট বাচ্চা না যে এখনো নালিশ করবি।

ইনায়া আঙ্গুল নাড়ানো বন্ধ করে নীলের দিকে তাকায়। এখন অনুতপ্ত বোধ করছে সে। আকবর দেওয়ান বিষয়টা বুঝতে পেরে নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আহ্! খাবার সময় এতো কথা না নীল! আর ও ছোটমা আমাদের,ছোট বোন ভেবে নালিশ হিসেবে গ্রহণ করিও না।

-আমি কাউকে বোন হিসেবে ভাবতে পারব না। আর আমার বোন অনু আছে,ও তোমাদের ছোট মা। 

নীল দ্রুত চেয়ার ঠেলে উঠে চলে যায় কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে। ইনায়া হা করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। বুকের বা সাইডে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলল,

-হায়! নীল ভাই বোন হিসেবে স্বীকার না করলেই এখন ভালো লাগে।

নিজেও ঝটপট করে খেয়ে নেয়। ঘরে গিয়ে এখন সামিরা আর শর্মীকে কল দিতে হবে। ওরা সেই যে কল দিয়েছিল,তারপর থেকে ইনায়া কথা বলার জন্য ছটফট করছে। যেন বিরাট বড় কিছু মিস করেছে। বাকি খাবারটা নাকে মুখে খেয়েই ইনায়া দৌঁড়ে চলে যায় নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে নীল বেশ উচ্চ শব্দে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সে। এদিকে নীল আরানকে কল করে রাগারাগি করছে,

-পাসওয়ার্ড নিয়ে কিছু বলেছিস?

-আরে মামা শোন…

-yes or no?

-ও শপথ করে বলেছে কাউকে কিছুই বলবে না।

-তোর শপথ এর….

-থাম দোস্ত। কোনো ঝামেলা হবে না।

-আরান.. দেখ মামা…তুই তো সব জানিস। সব নষ্ট করে দিস না ভাই! আমার এতো বছরের পরিকল্পনা সব নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে ভাই।

-বেশি করতেছিস মামা তুই! একটা পাসওয়ার্ড এর জন্য এমন কিছুই হতো না। তবুও জানবে না।

-হবে! অবশ্যই হবে। আমি চাই না যে ও এখনই বুঝতে পারুক। ওর পরীক্ষা কিছুদিন পর। পড়াশোনা তে মন দিতে দে। আর তোর বউকে গিয়েও পড়া। সন্ধ্যায় কল দিয়েছিল, নিশ্চয়ই সব বলতো। আর আমি নিশ্চিত ইনু এখন আবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে। যাহ্ বউকে সময় দে।

নীল কল কেটে দেয়। এদিকে ইনায়া কথা বলছে সামিরা আর শর্মীর সাথে। এক পর্যায়ে শর্মী চেঁচিয়ে বলে উঠে,

-ইনু জানিস! একটা জিনিস জেনে গেছি….

সামিরা চট করে শর্মীকে থামিয়ে দেয়। বলে ওঠে,

-আরেহ্ দুলাভাই!

শর্মী পেছনে ঘুরে দেখে। আরান তো নেই। পুনরায় সামনে তাকিয়ে বলল,

-কোথায়?

-ডাকল মনে হলো। দেখে আয়।

শর্মী দ্রুত কল কেটে চলে যায়। নীলের সাথে কথা শেষ করে আরান সবেমাত্র অনলাইন কনফারেন্সে জয়েন হয়েছে। সে সময়েই শর্মী আরানের সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,

-ডেকেছো?

আরান ভয়েস মিউট করে বলল,

-নাহ্।

শর্মী উল্টো ঘুরে যেতে গেলে আরান পেছন থেকে ডাক দেয়। বলল,

-পাসওয়ার্ড নিয়ে কাউকে কিছু বলেছে?

শর্মী নিশ্চুপ। কোনো জবাব দেয় না। তবে এ নীরবতার কারণ আরানের বুঝতে কষ্ট হয় না। অসম্ভব রাগ নিয়ে বলল,

-মনে রেখো,ইনায়ার কানে কথা টা গেলে তোমার স্বামীর কোনো একটা ক্ষতি হবে। এখন যা করার কর।  

বলেই আরান পুনরায় কনফারেন্সে কথা বলতে শুরু করে। 

.

.

.

.

গ্রপ কল কেটে নীলের আইডে যায় ইনায়া। প্রোফাইলে থাকা ছবিটা জুম করে দেখতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে বসে নানা ভঙ্গীতে ছবিটা দেখে ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে সে। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

-আআআ… আমার নীল ভাই!

পুনরায় বিছানায় বসে ভাবতে থাকে,

-আচ্ছা,এতো রিয়্যাক্ট কারা দেয়?

নীলের পোস্ট টা বের করে সমস্ত রিয়্যাক্ট চেক করতে থাকে। রিয়্যাক্ট লিস্টে অসংখ্য মেয়ের আইডি। ইনায়া প্রত্যেক টা মেয়ে আইডি তে যায়। রাগে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তার। এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে ইনায়ার নীল ভাইকে লাভ,কেয়ার রিয়্যাক্ট দিয়েছে! নিশ্চয়ই ওদের সাথে কিছু আছে! ইনায়া কপালটা মুছে কোনো রকমে। তারপর কয়েকটা মেয়েকে ম্যাসেজ পাঠায়।

“নীল ভাই এর সাথে কথা বলেন আপনি?”

“নীল ভাইকে চিনেন কীভাবে?”

“কে আপনি?”

“নীল ভাই এর পোস্টে রিয়্যাক্ট দিয়েছেন কেন?”

একটানা অনেক মেয়েকে একেকটা করে ম্যাসেজ দিয়ে রাগে ফুঁসছে ইনায়া। 

এদিকে সামিন আইয়াজ এর থেকে অনেক ম্যাসেজ এসেছে। সেগুলো না দেখেই রেখে দিয়েছিল ইনায়া। অবশেষে  বিরক্ত হয়ে ম্যাসেজগুলো দেখে,

“ম্যাম?”

“কোথায় আপনি?”

“কোনো খোঁজ খবর নেই যে!”

“এই অসহায় মানুষটার দিকে তাকান একটু…”

ইত্যাদি ইত্যাদি…

ইনায়া টাইপিং করে,

“এতো ম্যাসেজ দেন কেন? কাজ নেই?”

“আছে তো। এই যে আপনার সাথে কথা বলা।”

“আমি ইচ্ছুক না”

“আমি তো কথা বলতে তো চাইনি শুরুতে। তবে আপনি আমার বোনকে বলেছিলেন আপনার জন্য ছেলে খুঁজতে। বলেননি?”

ইনায়ার হাত থেমে যায়। কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। আসলেই তো সামিরাকে বলেছিল সে। কিন্তু তা তো নীল ভাই এর উপর রাগ করে। মেয়েটা যে এমন সিরিয়াস হয়ে যাবে কে জানতো। সামিন আইয়াজ এর থেকে পুনরায় ম্যাসেজ আসে,

“কোনো মেয়ে নিজে থেকে ছেলে চেয়েছে। আমি কী করে মানা করি বলুন?”

“আরে ভাই! ওটা আমার হাসবেন্ড কে জ্বালানোর জন্যে বলেছিলাম। সামিরা মানে আপনার বোন যে এতো বোকা তা তো বুঝিনি।”

“তোমার হাসব্যান্ড?”

“আগেও তো বলেছি আমি বিবাহিত। সামিরাকে আমি ওনার উপর রেগেই ঐ কথা বলেছিলাম। এর বেশি আর কিছু না। কোনো ছেলের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। আর আমি বিরক্ত বোধ করি কারো সাথে কথা বলতে।”

“ঘুমান ম্যাম। অনেক রাত হয়েছে।”

ইনায়া নেট অফ করে ফোন রেখে দেয়।

.

.

.

.

ইনায়ার আইডিতে একবারে অনেকগুলো ম্যাসেজ আসায় ভাইব্রেট করে নীলের ফোন। ফোন হ্যাং করার জায়গায় নীলের মাথা হ্যাং করে গিয়েছে যে এতো রাতে এতো ম্যাসেজ কে বা কারা দিচ্ছে। দ্রুত ম্যাসেজে গিয়ে চেক করতে দেখে কয়েকটা  মেয়ের রিপ্লাই। তবে রিপ্লাই গুলো সাধারণ রিপ্লাই নয়,বেশ বাজে ব্যাবহার করে জবাব দিয়েছে তারা।

“Who the hell are you?”

“আপনি কে? আপনাকে কেন বলব?”

এই ধরনের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আরো অনেক কথা। নীল এসির ঠাণ্ডাতেও তরতর করে ঘামছে। ইনায়ার সাথে কেউ বাজে ব্যবহার করুক এটা নীলের সহ্য সীমার বাইরে। তাই আগ বাড়িয়ে প্রত্যেক কে জবাবে ম্যাসেজ দিল,

“উনি আমার হাসবেন্ড! আর এক্ষুনি ব্লকও করে দিবে।”

সবাইকে একই ম্যাসেজ দিয়ে ইনায়ার আইডি থেকে সমস্ত ম্যাসেজ ডিলেট করে সবাইকে ব্লক করে দেয় নীল। এরপর নিজের আইড তে গিয়ে প্রোফাইল লক করে,রিয়্যাক্ট দেওয়া সব মেয়েকে ব্লক দেয়। এসব করে রাগ না কমালে ঘুম হবে না কোনোভাবেই।চুলের ভেতরে দুহাতের দশ আঙ্গুল ঢুকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-এমন পা*গলামী কেন করিস ইনু? আমার তো ঐ সবকটাকে এখন শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। আমার হৃদয় জুড়ে যে আছে তার দিকে কেউ চোখ তুলে দেখলেও আমি দেওয়াল নীল তাকে ছাড়ি না! ভবিষ্যতেও ছাড়ব না তাকে যে এমন দুঃসাহস করবে। ওদের জীবনে দুঃখ ওরা নিজেরাই ডেকে আনল!

নীল রিসানকে কল করে। ফোন ধরা মাত্রই বলে,

-আমার ছবিতে যে কয়টি মেয়ে রিয়্যাক্ট করেছে সবার ডিটেইলস বের করে দিবি কালকের মধ্যেই।

-কে আপনি? কাকে চান? রিসান স্যার ঘুমিয়ে পড়েছে।

-রিসান স্যার কে ফোনের মধ্য দিয়ে থাপ্পড় পাঠালাম দুটো। খেয়ে উঠে পড়তে বলেন।

-স্যার এই মুহূর্তে বন্ধ আছে, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করুন।

-রিসান! তোকে কিন্তু আমি…

-আরে দোস্ত মজা করছিলাম…পেয়ে যাবি ডিটেইলস। কিন্তু ওদের সবার অপরাধ?

-সবার না,কয়েকজনের। তুই সবার ডিটেইলস ই বের করে রাখবি। আমার যার যার ডিটেইলস দরকার নিয়ে নিব।

-আচ্ছা বস্। ঐ যে ঐ মেয়ের ভাই এর কী খবর? ভাবিকে পটাতে পেরেছে?

-না বন্ধু,তোমার ভাবি বিবাহিত।

-দেখলি! শুধু শুধু রাগতি তুই। আগেই বলেছিলাম আমি। মাঝখান দিয়ে বেচারা সামিরা! ওকে একটু লোহা পোড়া পানিতে লবণ মিশিয়ে দোয়া পড়ে খাওয়া পারলে। 

-তুই করে দিস কাজটা।

-ঠিক আছেহ ব্রো। আমার আবার মায়া দয়া আছে। চরম ভয় পেয়েছিল রেহ্। ওর কান্না দেখে আমার চোখের ভেতরে ভিজে উঠছিল। মনে হচ্ছিল সে পানি আমিও বের করে আনি। আর ওকে বলি কেঁদো না,তোমার আইডি এর কিছুই হয়নি। এতো ভয় পেয়ো না সা…

নীল কল কেটে দেয়। এসব আজগুবি গল্প শুনলে সে আজ নিশ্চয়ই পা*গল হয়ে যাবে। ছেলেটার মনে হয় ঘুমে ধরেছে।

.

.

.

.

সকালের মিষ্টি রোদ ইনায়ার গায়ে লাগছে। নীলের কাঁধে অনেক সময় ধরে হাত রাখার চেষ্টা করে অবশেষে রেখেই দেয়। আনমনে বাইক চালাচ্ছে নীল। ইনায়া নীলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

-নীল ভাই! রেগে আছেন?

-হেলমেট টা আমায় পড়তে দিলি না। নিজে তো পড়তে পারতি ইনু!

-উহু! আমার ভালো লাগে না। আর আপনার এতো সুন্দর চেহারা ঢেকে থাকলে ভালো লাগে?

নীল পেছনে তাকায়। কপাল কুঁচকে বলে,

-জেদ করে করে বিপদ ডেকে আনিস তুই।এটা করতে হবে মানে করতেই হবে।

নীলের কথা শুনে ইনায়া মুচকি হাসলেও আচমকা চোখ দুটো বড় হয়ে যায়। চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

-নীল ভাই!

নীল ইনায়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখে বড় মালবাহী ট্রাক। কোনো রকমে হালকা ব্রেক করে ডানে বেঁকে যায়। ট্রাকটিও  কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে যায়।তবে মুহূর্তেই নীল ইনায়া ধাক্কা খায় বড় মেহগনি গাছের সাথে।বাইক সেদিকে বেধে ইনায়া ছিটকে পড়ে হাইওয়ের পাশের পুকুরে। অচেতন হওয়ার মতো অবস্থা তার, তবুও পানির ছোঁয়া পেতে মাথায় আসে ,

“নীল ভাই,আমাকে ছেড়ে দেবেন না। ভালোবাসি…”

(চলবে……)

#Running 

#episode:32

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আজকের পর্ব টা কিন্তু খুব স্পেশাল। সব মনে রাখবেন ভালো করে।😶‍🌫️

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply