Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৩১


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৩১

নীল ইনায়ার প্রত্যেক টা বিষয়ের নাম্বার খেয়াল করছে রেজাল্ট পেয়েই। কপাল ভাজ করে একটানা বড় একটা লেকচার দিয়ে বলল,

-মেরিট পজিশন কোনো ব্যাপার না! প্রত্যেক সাবজেক্টের নাম্বার টা আমার দরকার। মিনিমাম ৮০ পেতে হবে,ইনু, আন্ডারস্ট্যান্ড?

ইনায়া কোনো রকমে সব কথা হজম করে মাথা নাড়ায়। 

মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

-ষাট সত্তর খারাপ নাকি!  পাশ করলেই তো হয়!

নীল ইনায়ার সামনে তুড়ি বাজায়। রেগে বলল,

-এদিকে ! আমি কিছু বলছি তোকে! 

-হুঁ…

-এখন থেকে নিয়ম করে আমার কাছে পড়বি,রোজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে তোর ক্লাস। আর মাথা থেকে সব চিন্তা বের কর। কার বউ কে হবে,কার পাসওয়ার্ড কী,কে কাকে ভালোবাসে, কার বিবাহিত জীবন কেমন যাচ্ছে এসব ভাবার সময় পাবি অনেক। 

নীলের কথা গুলো শুনে ইনায়া বেশ লজ্জা পায়। আসলেই কয়েকদিন যাবত সে এসব বিষয় নিয়ে পড়ে আছে। নীল হাতে গ্লাভস পড়ে ইনায়ার হাতে হেলমেট ধরিয়ে দেয়। 

বলল,

-চলেন এখন? নাকি গবেষণাগার বসাবেন একটা? আরেকটু থাকব?

ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। নীলের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে যায় বাইকের কাছে। নীল সেদিকে তাকিয়ে আরানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। 

তর্জনী আঙ্গুল নাড়িয়ে হুমকি দিয়ে বলল,

-ইনুর কানে পাসওয়ার্ড নিয়ে কোনো কথা গেলে তোর খবর আছে।

শর্মী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সামিরার সাথে মহাখুশি তে গল্প করছে। কারন তার পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে। 

এবার আরানকে পাসওয়ার্ড বলতেই হবে। আরান একবার বন্ধুর দিকে তাকায়,আরেকবার বউ এর দিকে। কপালের ঘাম মুছে গাল টেনে জোড়পূর্বক একটা হাঁসি দেয়। নীলও কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়ে।

.

.

.

.

আনান সামিরার ইনবক্সে গিয়ে একবার ম্যাসেজ টাইপিং করছে,আরেকবার চট করে সব মুছে ফেলছে। বেশ অনেকবার এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থেকে অবশেষে ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ দিয়েই ফেলল,

“হ্যালো”

সামিরা সবে মাত্র বাড়িতে ফিরেছে। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। সামনে উচ্চ মাধ্যমিক এর টেনশন এখন। কলেজ পরীক্ষার যাত্রা গুলো কোনো রকমে পাড় হয়ে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে। বেশ বিরক্তি নিয়ে ফোন মুখের সামনে ধরে। 

সামনেই নোটিফিকেশন,

“Anan Dewan sent a message “

সামিরা চোখ বড় করে সেদিকে তাকাতেই ঠাস্ করে মুখের উপর ফোনটা পড়ে যায়। তবুও সেসবের তোয়াক্কা না করে শোয়া থেকে উঠে বসে সে। দ্রুত ফোনের লক খুলে ম্যাসেজ টা পড়ে। 

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিপ্লাই দেয়,

“Hi”

আনান ম্যাসেজ টা দিয়ে ইনবক্সেই বসে ছিল। সামিরার থেকে আসা ম্যাসেজ দেখে সে কোনো রকম ভনিতা করে না। সরাসরি প্রশ্ন করল,

-সামিন আইয়াজ কে?

সামিরাও ইনবক্সে বসে থাকে । তবে তার থেকে কোনো জবাব আসে না । ম্যাসেজ টা সিন করে রেখে দেয়। এদিকে আনানের রাগে সব ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে । জোড়ে জোড়ে বড় বড় শ্বাস নেয় সে। উল্টো করে দশ থেকে শূন্য পর্যন্ত গুনতে থাকে। এসব ছোটখাটো টোটকা কাজে দেয় অনেক সময়। তবে গুনতে গুনতে আনান শূন্য পার করে মাইনাস একশো তে চলে গিয়েছে। তবুও সামিরার থেকে রিপ্লাই পায় না। অবশেষ আরো একটা ম্যাসেজ দেয়।

“কিছু বলছো না যে?”

সামিরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেয় এবার,

“আমার ভাইয়া”

“কীসে পড়ে? কী করে? বয়স কত? বাসা কোথায়?…”

“আরেই আস্তে আস্তে! একবারে এতো কিছু বলা যাবে না। রোজ একটা করে তথ্য দিতে পারব।”

আনান রাগে চুল গুলো খামচে ধরে। নিজেকে কোনো রকমে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,

“আচ্ছা”

“বিনিময়ে আমি কিছু চাইলে কিন্ত দিতে হবে…”

“ঠিক আছে”

.

.

.

.

এদিকে বাড়িতে আসার পর থেকে শর্মী আরানের কাছে একটাই আবদার করেই চলেছে,

-ঐ পাসওয়ার্ড টা বলোওওও

আরান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

-আচ্ছা এটা যার বিষয়,সে যদি বলতে মানা করে,তাহলে কী করব?

-তুমি জানলে আমি কেন জানব না?

-কারণ ও আমার বন্ধু,তোমার নয়।

-বিয়ের পর আবার আমার তোমার কী? তোমার বন্ধু মানে আমারও বন্ধু। 

আরানের নিজের এমন করুণ অবস্থা দেখে তার নিজেরই মায়া হচ্ছে। শর্মীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে মনে মনে আওড়ালো,

-ওর ব্রেইন টা ঠিক কোন জায়গায় আছে?

আরানের নীরবতা দেখে শর্মী বলে ওঠে,

-এই ! কী ভাবছো?

-যা ভাবছি তা বলা যাবে না।

-সে না বললে, পাসওয়ার্ড টার মানে বল।

-মানে জেনে কী করবে? ইনায়াকে জানাবে?

-তুমি বলতে মানা করলে বলব না। ইনায়ার সামনে ইয়া বড় একটা দেয়াল আছে বুঝলে। অনেক বিষয় আছে। তুমি বুঝবে না। আমি আর সামিরা অনেক কিছুই তো ওকে বলি না। এর কারণ তোমাকে পরে বলব।

-হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি কিছু ই জানি না। পরেই শুনবো।

-আচ্ছা। তাহলে এখন পাসওয়ার্ড এর মানে টা বলো….

আরান শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। নেতা নেতা ভাব এনে বলল,

-বলছি,তবে কাউকে কিছুই জানাতে পারবে না।

-সামিরাকে?

-না,কাউকেই না। 

-ঠিক আছে। 

-শপথ নাও আগে।

-ধুর! কীসের শপথ! বলব না বললাম তো।

-পাসকোর্ড আছে না তোমার ফোনে? 

-হ্যাঁ হ্যাঁ ।

-বাটন ফোনে ম্যাসেজ করে কীভাবে কথা বলতে আমার সাথে মনে আছে?

– হুঁ আছে তো।

-ওখানের অক্ষরগুলো লিখতে যখন, তার সাথে নাম্বার দেওয়া থাকতো না?

-হুম….

-এখন পাসকোর্ড চেক করে। 4 এর সাথে কোন অক্ষর আছে?

শর্মী দ্রুত নিজের ফোন বের করে। একটু দেখে আরানকে বলল,

-G H I

-এখান থেকে I নাও। এবার 6 এর সাথে কোন কোন অক্ষর আছে?

-M N O

-এখান থেকে N নাও। একই ভাবে 2 এর টা বল…

-2 মানে A, উমমমম 9 মানে Y, 2 দিয়ে আবারও A

মানে INAYA… আর 1?

-ঐটা খুব সম্ভবত ওর জন্মদিনের তারিখটা।

-হ্যাঁ হ্যাঁ,ওর বার্থডে ১ আগস্ট! এই তো কিছুদিন পরে…. উমমমম তারমানে সব সত্যি ছিল….

-কী সব?

-পরে বলব….

-এই কথা টা কাউকে না বললেই হবে।

শর্মী শান্তির হাঁসি দেয়। বলে,

-এবার ঘুম হবে ঠিক করে! কাউকে কিছুই বলব না। 

কথা টা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় শর্মী। 

.

.

.

.

সাদা টিশার্ট আর ধূসর ট্রাউজার নীলের পরনে। কানে হেডফোন,হাতে বই, “Man’a search for meaning”। পুরো ঘর পায়চারি করছে আর বই পড়ছে। কানে হেডফোন মূলত শব্দ প্রতিরোধের জন্যে দিয়ে রাখা। ইনায়া বই খাতা নিয়ে নীলের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো। আস্তে আস্তে দুবার নীল ভাই বলে ডাকলেও তৃতীয় বার বেশ জোড়ে ডাক দেয়,

-নীল ভাই! আসব?

-হুঁ।

ইনায়া ভেতরে ঢোকে। নীল কান এক হাতে হেড ফোন নামায়। আরেক হাতে বই ধরে রেখে ইনায়াকে বলল,

-এই রুমে ঢুকতে অনুমতি নিতে হবে না,পড়তেই তো আসছিস। এসে পরবি সরাসরি।

ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে আচ্ছা বলে। নীল নিজের হাতের বই টা নামিয়ে ইনায়ার বায়োলজি বই তুলে নেয়।কোষ ও কোষের গঠন চ্যাপ্টার বের করে ইনায়াকে প্রশ্ন করে,

-ফ্লুইড মোজাইক মোডেলটা ডিটেইলসে বুঝিয়ে বল।

ইনায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

-এসব আসে না নীল ভাই। ডিএনএ রেপ্লিকেশন, আরএনএ, ট্রান্সফরমেশন,ট্রান্সলেশন এগুলো ধরেন….

-ওহ্ এখন আপনি শিখিয়ে দিবেন? 

-না, কিন্তু ওখান থেকে আসে নাতো নীল ভাই….

-না আসল। বল তুই।

-ভু..ভুলে গেছি….

নীল জোড়ে শব্দ করে বইটা টেবিলে রাখে। ইনায়া কেঁপে উঠলে নীল শান্ত হয়ে বলে,

-কিচ্ছু স্কিপ করা যাবে না, বেঁচে বেঁচে পড়লে আটকে যাবি। কাল এই চ্যাপ্টার সম্পূর্ণ শেষ করে দিবি। আন্ডারস্ট্যান্ড?

-জ্বী…

-যোগজীকরণ এর ম্যাথ গুলো করে দে।

ইমায়া নিশ্চুপ হয়ে বই খাতা খোলে। আজ আবার নীলকে দেখে তার  ভয় লাগছে। সেই পুরোনো নীলের মতো লাগছে। ইনায়া কাঁপা হাতে অংক করতে থাকে। দু তিনতে অংক করার পরে ইনায়ার ফোনে কল আসে। তবে ফোন ইনায়া ধরার আগেই নীল সামনে থেকে ছিনিয়ে নিল। কপাল কুঁচকে বলল,

-কে কল দেয় পড়ার সময়! 

স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ইনায়া,সামিরা আর শর্মীর ছবি। গ্রুপ কল। নীল শব্দ করে গ্রুপের নাম পড়ে,

-“জামাই কই” ! এইসব নামে গ্রুপ খুলিস? ছিহ্!

ইনায়া বেশ অবাক হয়ে যায়। বলে,

-এ গ্রুপ কে খুলল? আগে তো ছিল না… দেখি?

-দেখতে হবে না। কাল থেকে যেন ফোন ধরা না দেখি। পড়াতে মন দে।

গ্রুপ কলটা মূলত শর্মী দিয়েছে। ইনায়া কলে জয়েন না হলেও সামিরা জয়েন হয়। তাকে দেখা মাত্রই শর্মী বলে ওঠে,

-দোস্ত পাসওয়ার্ড এর মানে জেনে গেছি!

-কী?

-INAYA1,মানে ১ তারিখ যে ওর বার্থডে।

-কে বলল তোকে?

-তোদের ভাইয়া বলেছে । কাউকে জানাতে মানা করেছিল। তবে তোদের না জানালে আমি ঠিক শান্তি পাচ্ছি না। 

-শর্মী শোন! এই কথাটা যদি তুই ইনুকে বলিস তাহলে তোকে মে*রে জেলে না গিয়েও আমি শান্তি পাব না।মনে থাকবে? সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে নো ফাইজলামি!

শর্মী মুখ ভার করে তাকিয়ে থাকে। সামিরা আবার বলে,

-গ্রুপ কল থেকে বের হ এখন। আর এটা কী নাম দিলি? “জামাই কই? ” ঘরে জামাই রেখে যে এসব নাম দিচ্ছিস যে,ভাইয়াকে বলে দিব দাঁড়া।

-আরেহ্ তোদের জন্য দিলাম।

-আমাদের জামাই আছে। ইনুর তো আছেই,আর আমি যাকে বানাবো সে আজ আমায় ম্যাসেজ ও দিয়েছিল।

-সত্যি? 

-হ্যাঁ,খুব শীঘ্রই আমরা দেখাও করব। উনি রাজি! আমি যা চাব তাই ই দিবে।

(চলবে……)

#Running 

#episode:31

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

পাসওয়ার্ড জেনে শান্তি পেয়েছেন? আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply