Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-২৫


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -২৫

নীল ইনায়াকে ঘরে নিয়ে বসিয়ে রেখেছে এই ঘন্টা খানেক হলো। সাথে আনায়াও রয়েছে। ইনায়ার মাথায় ঢুকছে না নীল কেন এতো কড়াকড়ি করে ওকে বসিয়ে রেখেছে। আনায়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইশারায় বলল,

-বল অনু!

অনু ইশারায় জবাব দেয়,

-কী?

ইনায়া আবার ইশারা করলো। বললো,

-কীভাবে দেশে এলো জিজ্ঞেস কর।

নীলের ধ্যান ফোনের মধ্যে। কিছুক্ষণ পরে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইনায়াকে দেখে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকায় ইনায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,

-মায়া মায়া! আপনার চোখ এতো সুন্দর কেন নীল ভাই?

নীল ভ্রু যুগোল উঁচু করে প্রশ্ন করে,

-হ্যাঁ?

ইনায়া লজ্জা পায় কিছুটা। মাথা নিচু করে বলে,

-কিছু না।

নীল পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-তোর ফোনে চার্জ হয়নি?

ইনায়া জিভে কামড় দেয়।ডান হাত কপালে রেখে বলে,

-এই যা! ভুলেই গিয়েছিলাম নীল  ভাই। এক্ষুনি গিয়ে দিয়ে আসছি।

ইনায়া উঠে যেতে গেলেই নীল শক্ত করে ইনায়ার হাত ধরে। রেগে বলল,

-আমি যেতে বলেছি?

-উহু…

-এই ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি যখন দিব,তখন যাবি।

নীল ইনায়ার হাত ছেড়ে আবার ফোনের দিকে মনোযোগ দেয়। ইনায়ার এতো লজ্জা লাগছে,আগে নীল ভাই হাত ধরলে এমন লাগতো না। তবে আজ অন্যরকম লাগছে। ইনায়া হাতের দিকে তাকিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে বসে করে। বাম হাতে ডান হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে মুচকি হাসি দেয়। কিছুক্ষণ পর আনায়াকে আবার ধাক্কা দিয়ে বলল,

-কীরে! বল….

আনায়া কয়েকবার গলায় হাত রাখে। একটু কেশে বলল,

-বড় ভাইয়া…

-হু

-তুমি এতো জলদি আসলে কী করে?

-প্লেনে

ইনায়া অতি দুঃখে হেসে আনায়ার দিকে তাকায়। তারপর নীলকে বলে,

-সে তো জানি নীল ভাই। কিন্তু হঠাৎ এলেন যে? আপনার তো আরো কিছুদিন পরে আসার কথা ছিল…

-কেন? আমি আসায় আপনার কোনো ক্ষতি হয়েছে?

ইনায়া মাথা চুলকে বলে,

-না না…. কী ক্ষতি….

-ঐটাই। আপনি তো কাউকেই ভয় না যে কোনো ক্ষতি হবে।

ইনায়া বিড় বিড় করে বলল,

-পাই তো নীল ভাই। একজনকেই অনেক ভয় পাই।

নীল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আবার ইনায়াকে দেখলো। তারপর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

– ঝেড়ে কেশে কথা বলতে পারিস না?

-বলছিলাম যে,কীভাবে এতো দ্রুত এলেন বলুন না…

-গতকাল চারটায় রওনা হয়েছি অস্টেলিয়া থেকে,আর

-কেন?

-কথা শেষ করতে না দিয়ে প্রশ্ন করিস কেন?

-সরি….

-আজ সকালে বাংলাদেশে এসেছি,তারপর বাসায় গিয়ে শুনলাম তুই নেই । এইজন্যে ভাবলাম তোর এইচএসসি এক্সাম টা কেমন হলো শুনে আসি। বরিশাল ও ঘুরে দেখা হবে, পাশাপাশি ধর তোর এতো ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে পারব।

ইনায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। 

.

.

.

.

রিফাত কিছুক্ষণ পরে নীলের সামনে এসে হাজির হয়। কপালের ঘাম বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ফেলে। তারপর তাড়াহুড়ো করে বলে,

-ভাইয়া,সবাইকে বিদায় করেছি। একটা ছোটখাটো ঝামেলাও হয়েছে। 

-পরে শুনবো।

-ঠিক আছে ভাই,চল এখন।

নীল আনায়কে ডেকে বাইরে আসে। দরজার সামনে থেকে ইনায়াকে বলে,

-তুই কি ভেতরেই থাকবি?

ইনায়া সাথে সাথে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। সানজিদা ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটে। বলল,

-পিকনিক করলি তুই?

ইনায়া নীলের দিকে আড় চোখে তাকায়। তবে সে চোখ বলছে,

-সব আপনার জন্য নীল ভাই! 

রিফাত সানজিদা কে থামায়। ধমক দিয়ে বলে,

-তুই যে খুব কাজ করছিস তাও না! সব আমাকেই ম্যানেজ করতে হলো। আর শীলা আপু করেছে বাকিটা। তাই এখন কথা না বলে খেয়ে নে চুপ চাপ। 

সানজিদা খাওয়াতে মন দেয়। তবে ইনায়া অনেক অনুতপ্ত 

হয়। কত প্লান ছিল তার,কিছুই করা হয়নি।

নীল খেয়ে রিফাতকে আলাদা করে ডাকে। রিফাত নীলের কাছে যেতেই নীল হাত ভাঁজ করে প্রশ্ন করে,

-কী হয়েছে এবার বল

-ঐ ছেলেদের , মানে যাদের দেখলা ওরা আমাদের পার্টির। বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথেই পলিটিক্স করি। ইনায়াকে একজন পছন্দ করেছে দেখে..

নীল হাত শক্ত করে মুঠো করে । ভ্রু কুঁচকে রিফাতকে দেখে। রিফাত পুনরায় ভয়ে ভয়ে বলে,

-ইনায়াকে নিয়ে কি আলোচনা করছিল যেন,তাই আনান শুনে ওদের কিছু একটা বলেছিল। তারপর কথা কাটাকাটি। আমি গিয়ে সব থামিয়ে ওদের পাঠিয়ে দেই। 

এই গ্রামে তোমাকে আর ইনায়াকে একসাথে রাখতে আমারই ভালো লাগে না। একসাথে আসলেই কিছু একটা ঝামেলা হবেই। আর আমি পড়ি মাইনকার চিপায়। 

নীল রিফাতকে কোনো জবাব দেয় না। সরাসরি ইনায়ার কাছে গিয়ে বলে,

-খাওয়া শেষ হলে আমার সাথে দেখা করে তারপর ঘুমাবি।

ইনায়া মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে।

.

.

.

আনান ঘরের লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছে। এখনো রাগে ফুঁসছে সে। নীল এসে লাইট অন করতেই উঠে বসে। আনানের চোখ লাল। নীল কপালে হাত দিয়ে বলল,

-শরীর খারাপ?

-না কিছু না।

-আমি থাকতে তোকে কোনো পেইন নিতে হবে না। 

-আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে তোমাকে কেন পেইন দেব ভাইয়া?

-ব্যক্তি হিসেবে আমি বড়। রাইট?

-হ্যাঁ

-তাই ব্যক্তিগত বিষয় টা তোর থেকে আগে আমার ব্যক্তিগত হিসেবে থাকতে পারে। 

আনান চকিত দৃষ্টিতে তাকায় নীলের দিকে। প্রশ্ন করে,

-না বুঝেই বললে?

-কী বুঝবো বল?

-মানে ,আমি ব্যক্তিগত বিষয় বলেছি। কিন্তু বিষয়টা কি তা উল্লেখ করিনি। তাহলে আমার ব্যক্তিগত বিষয় তোমার কীভাবে হবে শুধু ব্যক্তি হিসেবে বড় হওয়ার কারণে?

-অনেক কিছু দলিল করা থাকে আনান,ঘুমা। চোখ লাল হয়ে আছে তোর। শরীর খারাপ করবে।

আনান কথা বাড়ায় না। দলিল করা আছে কথা শুনে আনানের মনে হয় নীল হয় তো সম্পত্তি নিয়ে কিছু ভেবেছে। 

এরই মাঝে ইনায়া আসে। দরজার সামনে থেকে আস্তে আস্তে ডাক দেয়,

-নীল ভাই…

-ভেতরে আয়

ইনায়া গুটি গুটি পায়ে ভেতরে ঢোকে। নীল কড়া গলায় বলে,

-তোর ঐ বোনটা,কী যেন নাম? … সানজিদা… হ্যাঁ ঐ মেয়েটা দেখি আমার সামনে পড়লেই কন্ঠ পরিবর্তন করে ফেলে। কর্কশ শব্দকে সুরেলা বানিয়ে দেয়। বিষয়টা আমার একেবারে অপছন্দ। ঐ মেয়ে কে এতো ঢং করতে মানা করবি আমার সামনে,আমার পছন্দ না এগুলো।

ইনায়া মাথা নাড়ে। নীল আবার বলে,

-তুই আমার কাছে একবার বলে আসতে পারতি না এখানে?

-আপনি আমার সাথে কথা বলছিলেন না নীল ভাই। কথা বললে আর এখানে আসতে হতো না।

নীল মনে মনে সরি জানায় ইনায়াকে। মুখে বলে,

-এখন থেকে আমাকে সব জানানোর সুযোগ থাকবে তোর কাছে। আশা করবো তোর প্রত্যেকটা কাজ করার আগে তা আমার কানে আসবে।

ইনায়া অনেক খুশি হয় নীলের কথা শুনে। তার দৃষ্টি চকচক করছে। 

-যা,এখন ঘুমিয়ে পড়। কাল বিকাল ৫টায় আমাদের ফ্লাইট। সব গুছিয়ে রাখিস। 

ইনায়া আচ্ছা বলে উঠে দাঁড়ালো। আনানকে এক নজর দেখে। ডান পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়েছে সে। বিষয়টা নিশ্চিত করে ইনায়া আবার নীলের দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বলে,

-নীল ভাই…

-কী?

-একটা কথা বলি?

-দ্রুত বলে চলে যাবি।

-আপনি কী পারফিউম মাখেন? এতো সুন্দর ঘ্রাণ! আপনি কাছে থাকলেই মনে হয় এই ঘ্রাণ আমায় মাতাল করে রাখছে।

নীল রেগে ইনায়ার দিকে তাকায়। ইনায়া কথার ধরন বদলে সাথে সাথে বলে,

-না মানে,আমিও কিনতাম আরকি….

-ঘুমাতে যা।

ইনায়া চলে যেতে নীল মুচকি হাসে। ঠোঁট কামড়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে। বিড়বিড় করে বলে,

-পা*গলি একটা তুই ইনু!

.

.

.

.

আনান সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বের হয়েছে। গতকাল রিফাতের বন্ধুদের বলা কথাগুলো সারারাত মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। সেই ছেলে বলেছিল সাহস থাকলে যেন সকাল সাতটায় ঈদগাহ্ এর সামনে দেখা করে। আনান বুক ফুলিয়ে যায় সেদিকে। রিফাতের কয়েকজন বন্ধু উপস্থিত সেখানে,সাথে তাদের বড় কিছু ভাই ব্রাদার নিয়ে এসেছে। হাতে হকিস্টিক,লাঠি । আনানকে দেখেই দূরে থেকে চিল্লিয়ে উঠলো তারা। 

-ঐ মেয়ের জন্য খুব পোড়ে তাই না?

আরেকজন মশকরা করে বলল,

-আরেহ্ আদর্শ ভাই হতে এসেছিল। এখন ম*রে বুঝবে কেমন লাগে। ঐ মেয়ে কে ভদ্র মতো হাতে তুলে দিলে কিন্তু বউ এর বড় ভাই হিসেবেই সম্মান করতাম।

আনান সজোরে থাপ্পড় দেয় ঐ ছেলেকে। ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে তার। চেঁচিয়ে বলল,

-বউ বানাবো তাকে আমার,এই জন্যই এই পর্যন্ত এসেছি। ওকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বলবি তো মে*রে ফেলবো।

আনানের শেষ কথা ওদের কাছে আগুনে ঘি ঢালার মতো লাগলো। মুহুর্তেই সবাই তেড়ে আসে আনানকে মারতে। হকিস্টিক দিয়ে হাতের কনুই এ,পায়ের হাঁটু তে,কপালে,মাথার পেছনে অনবরত আঘাত করতে থাকে। এতোগুলো মানুষের সাথে খালি হাতে আনান পেরে উঠতে না পারলেও নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। প্রথম ছোপ ছোপ র*ক্ত বের হতে থাকে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে। অবশেষে পড়ে গলগলিয়ে।

(চলবে……)

#Running 

#episode:25

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply