#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -২৩
ইনায়া সারপ্রাইজের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠে।
আনানকে অনুরোধ করে বলে,
-প্লিজ ভাইয়া! বলো এক্ষুনি।
আনান একটা ভাব নিয়ে ইমোজি পাঠায়। সাথে একটা ভয়েস ম্যাসেজ,
-সময় হলে পেয়ে যাবি।
ইনায়ার এখন মেজাজ খারাপ লাগছে।আনানকে জ্বালানোর জন্য আনায়া পিকগুলো পাঠাতে বলেছিল। এখন উল্টো আনানই ওকে অর্ধেক কথা বলে রেখে দিল। আনানকে আর কোনো ম্যাসেজ দেয় না ইনায়া। তবে সামিনের আইডি টা একবার চেক করে। এখনো অফলাইন দেখাচ্ছে। ইনায়া নেট অফ করে ফোন রেখে দেয়। ছোট মামার মেয়ে সানজিদা আর ইনায়া প্রায় সম বয়সী। বড় মামার বড় মেয়ে শীলা। ছোট মেয়ে সম্পূর্ণা। আর ছোট মামার বড় ছেলের নাম রিফাত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি তে স্নাতক করছে। বয়সের দিক দিয়ে আনান আর রিফাত প্রায় কাছাকাছি।
ঘরের মধ্যে মুখ ভার করে বসে থাকা ইনায়াকে সানজিদা আর সম্পূর্ণা টেনে নিয়ে যায় উঠোনে । সেই সাথে আনায়াকেও নিয়ে যায়।
ইনায়া হকচকিয়ে প্রশ্ন করে,
-কী হয়েছে? টেনে নিয়ে এলি কেন?
সানজিদা ভ্রু ভাজ করে জবাব দেয়,
-এভাবে ঘরের ভেতর বসে থাকার জন্য এখানে এসেছিস?
ইনায়া মুখ ভেংচি কাটলো। সম্পূর্ণা আনায়ার কাছে গিয়ে বলে,
-আপু,চল কানামাছি খেলবো।
আনায়া সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। বলে ,
-ঠিক আছে,আমার চোখ বেঁধে দাও।
ইনায়া একবার আটকে বলে,
-পারবি তুই অনু? পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে?
-আমি এতো ছোট না ইনুপু।
-ছোট বড় বলে কিছু নেই, অভ্যাস আর অভ্যস্ত থাকা বিষয়।
-উফফ্ চোখ বেঁধে দাও।
সানজিদা একটা কাপড় এনে আনায়ার চোখ বেঁধে দেয়। তারপর গোল করে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়ে সকলে একসাথে বলে,
-এই যে,এখানে।
-অনু,এই যে আমি।
-অনু আপু, ধরো আমায়।
আনায়া আশে পাশে হাতরে হাতরে খুঁজতে থাকে ওদের তিনজনকে। বেশ কিছুক্ষণ দৌঁড়া দৌড়ি করে অবশেষে একজনকে ধরেই বেশ খুশি হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো আনায়া। বললো,
-ধরেছি ধরেছি।
সম্পূর্ণা অনেক জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকলে সানজিদা তাকে থামিয়ে বলে,
-চোখ খোল অনু্।
অনু এক টানে পেঁচানো কাপড় খুলতেই দেখে রিফাত বিরক্তি প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আনায়া দ্রুত গতিতে কয়েক হাত পেছনে চলে আসে।
ইনায়ার পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে বলতে থাকে,
-আমায় আগে বললে না কেন ইনুপু? তোমার এই ভাই টাকে আমার অনেক ভয় লাগে।
-আমারও লাগে অনু,তাইতো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না।
আনায়া আর কিছু বলে না। ছোট থেকেই এই গম্ভীর রিফাতকে দেখে ওরা দুই বোনই ভয় পায়। এখন আবার ভার্সিটিতে গিয়ে রাজনীতিও করে। রিফাত বেশ বিরক্ত হয়ে স্থান ত্যাগ করে।
.
.
.
.
সন্ধ্যাবেলায় ইনায়া,আনায়া, সানজিদা, সম্পূর্ণা গোল হয়ে বসে আমেনা আক্তার কে ঘিরে। তাদের সকলের আবদার ভূতের গল্প শুনবে। সকল নাতনিদের সাথে বহুদিন পরে এক হলেন আমেনা আক্তার,বড় নাতনি শীলা একমাত্র শশুর বাড়ি তে। তিনি আনন্দিত কন্ঠে বলল,
-কোন কাহিনী শুনবে?
ইনায়া জবাব দেয়,
-সত্য ঘটনা বল কিছু।ভূতের অবশ্যই।
আমেনা আক্তার শুরু করেন বলা,
-আমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে যে জঙ্গলটা আছে সেখানে আগে শুধু বাঁশের ঝাড় ছিল। একদিন ভোর বেলা তোমার নানা ফজরের আযানের সময় নিজেকে সেখানে দেখতে পায়। তার সামনে পচে যাওয়া শরীরের একজনকে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন সেখানে। এদিকে আমি ফজরের নামাজ পড়তে উঠেছি। পাশে দেখি তোমার নানা নেই। ভাবলাম ওযু করতে গিয়েছেন। তখন আবার শীতের সকাল ছিল। আমি ওযুখানার দিকে চাদর পেঁচিয়ে গেলাম। তবে সেখানে তোমার নানাভাইকে দেখিনি। একটু সামনে এগুতে আমার কাধে কেউ একজন আচমকা হাত রাখে।
আমেনা আক্তারের কথাটা বলা মাত্রই ইনায়া অনেক জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলো। দমকা হাওয়ায় দরজা বাড়ি খাচ্ছে বারেবারে। টিনের চালে আম পড়ার শব্দ। সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি আর ঘুটঘুটে অন্ধকার। ইনায়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-নানু,আমার কাঁধেও যেন কার হাত।
কথাটা বলেই ইনায়ার হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আনায়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,
-আপু আমি…ভয় লাগছিল, অন্ধকার তো। তাই তোমার কাছাকাছি ধরে বসতে চেয়েছিলাম।
ইনায়া রেগে আনায়ার কন্ঠস্বর অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। তবে সে দৃষ্টি আনায়া দেখতে পারে না। আমেনা আক্তার সবাইকে শান্ত করে বলে,
-বাকিটা শুনতে হবে না।
ইনায়া তার নানুকে আটকে বলল,
-না না,এটা শেষ করো… কাল না হয় আরেকটা শুনব।
আমেনা আক্তার আবার জোড়া দিয়ে বসলেন। বললেন,
-আমার কাঁধে কারো হাত পড়তেই চমকে পেছনে তাকাই। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার নানাভাই। কিন্তু সে অন্য কেউ ছিল। সাদা চাদরে মুখ ঢাকা। আমি বেশ চমকে পেছনে সরে যাই। বিশাল লম্বা শরীর তার। বড় বড় দাড়ি। সে মুখ ঢেকে আমাকে ঐ জঙ্গলের দিকে ইশারা করে। তারপর আমি ভয় পেয়ে তোমার বড় মামাকে ডেকে নিয়ে সেদিকে যাই। তবে তাকে আর দেখি না। হঠাৎ ই উধাও। এরপর জঙ্গলের দিকে আগাতেই দেখি তোমার নানা অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।তাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসার পর জ্ঞান ফিরলে তোমার নানাভাই বলেন তার কিছুই মনে নেই। যখন তার হুঁশ ফিরেছিল তখন ফজরের আযান হচ্ছে। আর ভয়ানক কিছু দেখে জ্ঞান হারিয়েছিল।
-তারপর?
-তোমার নানা নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তাই বড় কিছুই হয়নি। আর এই কাহিনী তো এখানেই শেষ।
ইনায়া আর আনায়া ভয়ে কাঁপছে। তবে সানজিদা আর সম্পূর্ণার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। ছোট থেকে বেশ অনেকবার এই গল্প শোনা হয়েছে তাদের। তাই ইনায়াকে ডেকে বলে,
-চল আম কুড়িয়ে আনি।
-এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে?
-এটাই তো মজা।
নেটের অবস্থা খুবই দূর্বল। ইনায়ার ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসতে দেখে সামিন আইয়াজ নামক আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে। প্রায় ঘন্টা চারেক পরে ম্যাসেজ পেয়ে ইনায়া আগ্রহের সাথে তার দেখে। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,
“আপনার নানুবাড়ির ওদিকের আবহাওয়া কেমন ম্যাম?”
ইনায়া কিছুক্ষণ ভেবে রিপ্লাই দেয়,
“ঝড় বৃষ্টি”
“ভিজবেন নাকি? “
“বুঝলেন কী করে? আম কুড়াতে যাব সবাই”
সামিন ম্যাসেজ সিন করে না। ইনায়া,আনায়া প্রস্তুত হয় আম কুড়াতে যাওয়ার জন্য। তখনি ইনায়ার ফোনে কল আসে। আনান কল দিয়েছে। ফোন ধরে ইনায়া কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে। তবে নেটের সমস্যার কারণে কথা বেঁধে বেঁধে যায়। ইনায়া জানালার কাছে গিয়ে আবার বলে,
-হ্যালো … ভাইয়া …
-ইনু.. শুনতে পাচ্ছিস?
-ভাইয়া বলো।
-বৃষ্টিতে ভিজিস না।
-তোমায় কে বলল?
-ভিজতে মানা করলাম সাবধান করতে। ঘরের মধ্যেই থাক।
-কী হয়েছে বলবে তো? কে বলল?
-কাজ আছে অনেক,রাখলাম। আর আম খেতে হবে না,সকালে খাবি যা খাওয়ার।
আনান কল কেটে দেয়। ইনায়া বেশ অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আনান হঠাৎ এই কথা বলে সাবধান করল কেন!
.
.
.
.
সকাল সকাল গত রাতে ঝড় বৃষ্টি তে পড়ে থাকা আম তোলে সকলে মিলে। সে সময়ে সানজিদা প্রস্তাব দেয়,
-চল আজকে আমরা পিকনিক করি।
বাকিরা একজোটে বলে,
-কখন?
-এই বিকালে। আমরা সব বোনেরা থাকবো। শিলা আপু আসবে।
-ওয়াও! এবার পরিপূর্ণ হবে।
-অবশ্যই আর আমরা সবাই শাড়ি পড়ব।
আনায়া ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমরা শাড়ি কোথায় পাব ইনুপু?
-নানু মামির আছে,নো টেনসন অনু!
পিকনিক প্লান করতে করতে ইনায়ার কাছে সামনের থেকে আবার ম্যাসেজ আসে।
“কী করছেন ম্যাম?”
“এইতো কাজিনদের সাথে একটা প্লান করছিলাম”
“কী প্লান বলা যায়,ম্যাম?”
“পিকনিক প্লান”
“কখন?”
“তা দিয়ে আপনার কী?”
“আপনার হাসব্যান্ড ভালো আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ”
“সে কি জানে পিকনিকের কথা?”
“সেটাও আপনাকে বলব না। আর তাছাড়া আমি কাউকে বলে কিছু করি না।”
“আচ্ছা, কিন্তু সাবধান। যে যা পছন্দ করে না তাই না করাই ভালো”
সামিন এর থেকে আর কোনো ম্যাসেজ আসে না। তবে ইনায়ার মনে আতঙ্ক ভর করে।
-আসলেই তো! নীল ভাই যদি শাড়ি পড়ার কথা জানে?
পরক্ষণেই ভাবে,
-ধুর্! উনি কীভাবে জানবে। আর জানলেই বা কী! ওনার তো বউ আছে। যদি রাগে করে তাও দেশে আসতে কম করে পনেরো ঘণ্টা লেগে যাবে। আজ শুনলে আসতে আসতে আগামীকাল।
ইনায়া শান্তির হাঁসি হাঁসে।
(চলবে……)
#Running
#episode:23
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE