#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -২১
ইনায়ার ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে আরেকটি নোটিফিকেশন পেয়ে। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “সামিন আইয়াজ ” নামের একটা ছেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। কালো শার্টে ফরমাল লুকে প্রোফাইলে ছবি দেওয়া। আর মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে রয়েছে সামিরা। সামিরার সাথে অ্যাড আছে বিধায় ইনায়া আইডির ভেতরে ঢুকে।ছবিতে ক্লিক করতেই ইনায়ার কাছে এক টানা নোটিফিকেশন আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ফোন হ্যাং করলে ইনায়া বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দেয় নেট অফ করে। কিছুক্ষণ পর আবার নেট অন করে আইডি তে ঢুকতেই দেখে ইনায়ার শেয়ার করা প্রায় অর্ধ শতাধিক পোস্টে রিয়্যাক্ট। ইনায়া চোখ বড় করে সেদিকে তাকায়।
বিড়বিড় করে বলে,
-অপিরিচিত একটা ছেলে এভাবে এসে আমার আজাইরা পোস্টে রিয়্যাক্ট কেন দিচ্ছে!
ইনায়ার লাস্ট পোস্টে একটা কমেন্ট ও করে ছেলেটা। “তোমারে দেখিবার মনে চায় ” নিয়ে করা পোস্টে কমেন্ট করে,
“বহু রুপ মহিমা তোমার তুমি রুপের মুরোতি
দেখতে শোভা মনো লোভা, তাই তো করি আরোতি”
ইনায়ার অবাক হওয়ার সীমানা ছাড়িয়ে যায় এবার। সাথে সাথে কল দেয় সামিরাকে।
তাড়াহুড়ো করে বলল,
-হ্যা…হ্যালো
-হু হুঁ বল
-সামিন আইয়াজ কে?
-ওহ্ ঐটা আমার ভাইয়া। সুন্দর না?
-আরে রাখ তো তোর সুন্দর! আমার পোস্টে কমেন্ট করছে এসে।
-দোস্ত এইতো পারফেক্ট সময়। তোর নীল ভাইকে ভুলে যা।
ইনায়া কোনো জবাব দেয় না। সামিরা আবার বলে,
-নীল ভাই তো তোকে পাত্তা দেয় না। এখন দেখ তুই কী করবি।
বলেই কল কেটে দেয়।
ইনায়া ঘর জুড়ে হাঁটাহাঁটি করে কিছুক্ষণ। নানা পরিকল্পনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় এই ছেলেকে ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত করবে। উদ্দেশ্য নীল ভাইকে জ্বালানো। ওমনি চট করে একসেপ্ট লেখাতে ক্লিক করে দেয়। অ্যাড হতেই ইনায়ার ইনবক্সে অনেক গুলো মেসেজ চলে আসে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার আগে থেকেই সামিন ম্যাসেজ পাঠিয়ে রেখেছিল।
ম্যাসেজ গুলো ছিল,
“ম্যাম!”
“এই যে ম্যাম! শুনছেন?”
“আপনার একটা ম্যাসেজের আশার আমি সামিন চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছি ম্যাডাম।”
“একটু কথা বলে আমার জীবনটা সার্থক করে দিন ম্যাম”
একটানা এতোগুলো ম্যাসেজ আসায় ইনায়া বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
মনে মনে ভাবল,
-সুন্দর ছেলেরাও ছ্যাচড়া হয়? কিন্তু নীল ভাই এমন করে না কেন?
নীলের কথা আবার মনে আসতেই নিজেকে শান্ত করল ইনায়া। নিজের পোস্টে গিয়ে সামিন আইয়াজ এর করা কমেন্টটা কয়েকবার দেখলো। তারপর কিছু একটা ভেবে উপুড় হয়ে শুয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে সে কমেন্টের রিপ্লাই লিখলো,
“সব রূপ তো আপনার কাছে,আমার কাছে সামান্য এসেছে”
কমেন্ট টা করে ইনায়া নীলের আইডিতে গিয়ে নীলের একটা ছবি বের করে। সে ছবিতে বারবার জুম করে করে দেখে আর সেদিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-আপনার হবু বউ কে নিয়ে অনেক দেমাগ তাই না? আমারও কেউ একজন থাকবে এবার থেকে।
.
.
.
.
নীলের মেজোবাবা হুমায়ূন দেওয়ান ঢাকায় অফিসে বসে কম্পানির কাজ সামলাচ্ছেন। তার বয়স বাড়ায় এবার নীলকে দেশের বাইরে পাঠান। তাতে নীলও দ্বিমত পোষণ করেনি। সবার সাথে ডিল ফাইনাল করে, মিটিং অ্যারেন্জ করে ,অ্যাটেন্ড করে দেশে আসতে আরো দশ পনেরো দিন লেগে যাবে। বাংলাদেশ সময়ে এখন দুপুর তিনটা,আর অস্ট্রেলিয়ার সময় অনুযায়ী এখন সাতটা বাজে। নীল আজকের মিটিং শেষ করে কল দেয় শিমু জাহানকে। ভর দুপুরে তিনি ইনায়া আর আনায়াকে নিয়ে গল্প করছিলেন। নীলের কল আসতেই তার দৃষ্টি চকচক করে।
দ্রুত ফোন ধরেই বলে,
-বাবা কেমন আছো? সব ঠিক আছে?
নীলের ঠান্ডা জবাব,
-হ্যাঁ মা। একদম ঠিকঠাক। কী করছিলে?
-তোর বোনদের নিয়ে বসেছিলাম।
-বোন মানে অনু?
-অনু ইনু দুটোই।
নীল কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে। ইনায়া বিষয়টা বুঝতে পেরে শিমু জাহান কে বলল,
-তোমরা কথা বলো বড়মা,আমি আসছি।
শিমু জাহান ইনায়ার হাত টেনে বলেন,
-চুপ করে বোস।
তারপর ফোনটা নিয়ে আনায়ার কাছে দেন। বলেন,
-তুই কথা বলে ইনু কে দিবি।
আনায়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এরপর নীলকে বলে,
-বড় ভাইয়া,তোমায় মিস করছি!
-আমিও করছি ছোট্ট বোন আমার। দুষ্টুমি কেমন হয় এখন?
আনায়া মাথা চুলকে নীলের দিকে তাকায়। নীল পুনরায় বলে,
-সাবধানে থাকবি। পঁচা ফুলের মধ্যে ভালো ফুল থাকলেও কিন্তু তার নষ্ট হয়ে যায়।
আনায়া বোকার মতো নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ইনায়া তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে।আনায়া কিছুক্ষণ থেমে প্রশ্ন করে,
-কী?
-কিছু না।
নীল আনায়ার সাথে কথা বলছে।ভিডিও কলের মাধ্যমে আসে পাশের সব কিছু দেখায়। অনুও আগ্রহ নিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ পরে আনায়া নীলকে ডেকে বলেল,
-ইনুপুর সাথে কথা বলো বড়ভাইয়া।
সাথে সাথে নীল ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-বোনু আবার পরে কথা বলব,তোর বড়মাকে বলিস। এখন একটু কাজ করতে হবে।বাই।
নীল ফোন কেটে দেয় শিমু জাহান কিছু বলার আগেই। এদিকে ইনায়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। চোখে পানি ছলছল করছে। কোনো রকমে চোখ নামিয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে যায়।
.
.
.
.
আনান ডায়েরি খুলে বসেছে ইনায়াকে চিঠি লেখার জন্যে। খুব সুন্দর করে দ্বিতীয় পাতায় লিখল,
“তুই যে গানটা পোস্ট করেছিলি না ইনু? ঐ গান টা আমি তোকে গেয়ে শোনাবো। কবে শুনবি বলতো? তোকে তো আবার সব সময়ই দেখতে মন চায় আমার।সব সময় দেখা দিবি আমায়। কমেন্ট করব? কিন্তু সবাই বুঝে যাবে। সে বুঝুক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ভালোবাসলে ভয় নাই। দাঁড়া,কমেন্ট করে আসি।”
আনান ডায়েরি বন্ধ করে ইনায়ার আইডি তে যায়। কমেন্ট বক্সে যেতেই দেখে চকচকা প্রোফাইল পিকচার বিশিষ্ট এক ছেলের আইডি থেকে কমেন্ট এসেছে। সেখানে ইনায়া খুব সুন্দর করে রিপ্লাই ও করেছে। আনানের হার্টবিট যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যায়। সাথে সাথে ঐ ছেলের আইডি তে যায়। রাগে গা ছমছম করছে।
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ম্যাসেজ দেয়,
“কে আপনি ভাই?”
.
.
শিমু জাহান এর ঘর থেকে ইনায়া তার ঘরে এসে দ্রুত দরজা আটকিয়ে লক করে দেয়। বেলকনিতে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।নীল বারে বারে তাকে অপমান করে।
কান্না করতে করতে বলল,
-আর কত নীল ভাই?কয়েকদিন ধরেই এমন করছেন,ছোটবেলায় যেমন করতেন!
যেমন বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ থেকে ঠিক তেমনি যেন ইনায়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলছে,সাথে ইনাায়ার কান্না করার গতিও। বেশ কিছুক্ষণ পরে ইনায়া চোখ মুছে,দু গাল মুছে বিছানায় বসে। ফোন হাতে নিয়ে সামিন আইয়াজ নামক আইডি থেকে আসা ম্যাসেজে রিপ্লাই করে,
“কিছু বলবেন?”
ইনায়ার পাঠানো ম্যাসেজের সাথে সাথে জবাব আসে,
“ছিলো তো কত কথাই বলার। কোনটা আগে শুনতে চান ম্যাম?”
কত বছরের চেনা মনে করে ম্যাসেজ দিল? ম্যাসেজ পড়ে ইনায়ার মনে হতে লাগে,
-লোকটার কথাবার্তা এমন কেন? এতো মাখো মাখো কেন? সব মেয়ের সাথেই এভাবে কথা বলে?
সেই সাথে টাইপও করে ফেলে,
“আপনি কি সব মেয়ের সাথেই এভাবে কথা বলেন?”
“আমি মেয়েদের সাথে কথা বলি না ম্যাডাম। আপনিই ফার্স্ট,আপনিই লাস্ট। “
“ও”
“তো পরীক্ষা কেমন হলো আপনার?”
“ভালো,আপনি জানলেন কী করে?”
“সামিরা বলেছিল”
“আচ্ছা”
“আপনি কি জানেন কান্না করলে রূপবতী মেয়েকে বেশি মায়াবতী লাগে?”
ইনায়া আশে পাশে তাকায় হঠাৎ করে। দ্রুত পায়ে বেলকনিতে গিয়ে রাস্তার দিকে তাকায়। পুরো রাস্তা জনমানবশূন্য। বৃষ্টির জন্যে কেউ বের হচ্ছে না। ইনায়ার ফোনে আবার ম্যাসেজ আসে।
“যদি সত্যিই বলি আমি আপনার বেলকনির নিচে দাঁড়িয়ে, বিশ্বাস করবেন?”
ইনায়া জবাব দেয় না। ফোন বন্ধ করে রাখে। মাথায় অনেক চিন্তা আসে তার। সিলিং বরাবর তাকিয়ে ভাবে,
-এই লোকটা তো ভারী অদ্ভুত। কী সুন্দর কথা বলে,মনে কৌতুহল তৈরী করলো কীভাবে!
আশে পাশে তাকিয়ে গায়ে ভালো মতো ওরনা জড়িয়ে নেয়। চুল কানের পাশে গুজে রুমের সব দেয়াল,জিনিস চেক করতে থাকে,যদি কোথাও হিডেন ক্যামেরা থাকে। কিছুক্ষণ রেস্ট করে একা একাই কথা বলতে থাকে জোড়ে জোড়ে,
-আপনি কি আমায় দেখছেন এখনো?
একটু হাত নাড়িয়ে হাই দিল এলোমেলো ভাবে। তারপর বলল,
-আমার কথা শুনলে এক্ষুনি কল দিবেন আমায়।
(চলবে……)
#Running
#episode:21
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE