#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব – ১৭
ইনায়া জোড়ে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো,
-উমমম্ সামথিং সামথিং…
সামিরা কোনো রকমে ইনায়ার মুখ চেপে ধরে জিভ কেঁটে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
-নাথিং নাথিং!
তবে ইনায়া মানতে নারাজ। চেপে ধরা মুখ দিয়েই আওয়াজ করছে সে। অস্পস্ট স্বরে বলল,
-আনান ভাইয়ার সাথে সামথিং সামথিং…
সামিরা ইনায়ার কথা থামাতে আরেকটু শক্ত করে মুখ চেপে ধরে পাশে তাকাতেই দেখে আনান আর নীল দাঁড়িয়ে। সামিরা দ্রুত ছেড়ে দেয় ইনায়াকে। আনানকে আড় চোখে আরেকবার দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে। অবুঝের মতো আনান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এখানে কী হচ্ছিল বিষয়টা বোঝার চেষ্টায় সে। এদিকে নীল ভ্রু কুঁচকে হাত ভাঁজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে ইনায়ার দিকে। তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চুল ঝাড়া দিয়ে ইনায়া গিয়ে খেতে বসে পড়ে। আনান আর নীল সেদিকে এগিয়ে যায়। সামিরাও যায় তাদের পেছন পেছন। গিয়ে বসে ইনায়ার পাশে।
.
.
.
.
শর্মীর সাথে বেশ অনেক্ষণ সময় কাটিয়ে ফেরার সময় ইনায়া সামিরা কে টেনে বলল,
-তুই আজকে আমাদের সাথে যাবি। নামিয়ে দিয়ে যাব।
-বাবা-মা একা যাবে নাকি!
-আমি দেখছি কী করা যায়, প্লিজ ভাবি…
সামিরা আড় চোখে ইনায়াকে দেখে।
ইনায়া এবার হাত ধরে বলল,
-আজকে তোকে আমার ভাবি বানানোর পাঁকা কথা বলেই রাখব দেখিস!
সামিরা বেশ লজ্জা পেলেও তা ইনায়ার সামনে প্রকাশ করে না। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ বুঝে ইনায়া নীলের কাছে যায় সরাসরি।
হাত কচলাতে কচলাতে বলে,
-নীল ভাই…
সানগ্লাস চোখে ফোন দেখছে নীল। ইনায়ার ডাক শুনে সে চমকায় না,যেন আগে থেকেই জানতো ইনায়া এখন আসছে।
ফোনের দিকে তাকিয়েই সে জবাব দেয়,
-বল
-আজ গাড়ি আনান ভাইয়া চালাক…
নীল এক হাতে চশমা খুলে ইনায়াকে দেখে। কপালে আপনাআপনি ভাঁজ পড়ে তার।
জিজ্ঞেস করল,
-সমস্যা কী?
-মানে,সামিরাও যাবে আমাদের সাথে…
-তো?
-তো আপনি বুঝবেন না। আনান ভাইয়াই গাড়ি চালাবে আজ।
একনাগাড়ে কথা বলেই ইনায়া পেছনে ঘুরে হাঁটা দেয়। তবে পিছন থেকে হ্যাঁচকা টানে তাকে থামিয়ে দেয় নীল।
একেবারে নিজের কাছে এনে বলে,
-এতো বেশি বুঝতে হবে না। পেছনে আনান আর তোর বন্ধু বসবে।
-অনু?
-ও মেজোমাদের সাথে আসবে।
নীলের এতোটা কাছাকাছি ইনায়া। হঠাৎ এই কম দূরত্বটা বুঝতে পেরে হার্টবিট বেড়ে যায় ইনায়ার। বুকে আঙ্গুল ছুঁয়ে শুকনো ঢোক গিললো সে। মনে হচ্ছে আওয়াজ নীলের কানেও যাচ্ছে।
ইতস্তত বোধ করে দূরত্ব বাড়িয়ে নিতে চাইলে নীল আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-ড্রেসের দিকে একটু খেয়াল রাখবি,যা-ই পড়িস না কেন।
বলেই নীল ইনায়ার চুলগুলো বাম কাঁধে এনে দিয়ে হাত ছেড়ে চলে যায়। ইনায়া চুলে হাত দিয়ে নীলের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষনের জন্য হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ নীলের বলা কথাগুলো ভেবে চুল সরিয়ে কাঁধে হাত দিতেই চোখ বড় করে ফেলে। জিভ কেঁটে বলে,
-ইশশশ্! এখন নীল ভাইয়ের সামনে যাব কী করে!
.
.
.
.
ইনায়া মাথা নিচু করে নীলের পাশে বসে রয়েছে। পেছনে আনান আর সামিরা।
ইনায়ার এমন অসস্তি বোধ করা দেখে নীল হালকা কেশে বলল,
-কোথাও ঘুরতে যাবি?
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে না বলে। তবে নীলের দিকে তাকায় না।
নীল পুনরায় বলে,
-রং ঢং এর মানে নেই কোনো। লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। আরো অনেক কিছু বাকি আছে।
ইনায়া আড় চোখে তাকিয়ে বলে,
-কী অনেক কিছু?
-এই ধর বিয়ে,বাচ্চা ,ইত্যাদি ইত্যাদি।
আনান এবার পেছন থেকে বলে ওঠে,
-বড় ভাইয়া,তুমি হঠাৎ ইনুর বিয়ে,বাচ্চাতে চলে গেলে কেন?
নীল ডান হাত স্টিয়ারিং এ আর বাম হাত গিয়ারে রেখে আনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-তোর বোন যেমন অল্পতে লজ্জা পায়। তাকে বোঝাতে হবে যে আরো বড় বড় বিষয় পড়ে রয়েছে এখনো।
ইনায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে। গাড়িতে উঠলে তার অসস্তি হয়,তার উপর এ সকল কথা বার্তা। সামিরা এদিকে আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে বান্ধবীর অসস্তি হচ্ছে তা বুঝতে দেরি হলো না তার।
ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ইনুউউউ
ইনায়া কপালে হাত রেখে আস্তে করে বলে,
-হু..
-চিঠি কেমন লাগে তোর?
-দারুণণণ
-আমারও,তুই কখনো পেয়েছিস?
-সে ভাগ্য হয়নি দোস্ত। এখনকার মানুষ চিঠির মর্ম বুঝে নারে। কেউ যদি আমাকে একশো এক টা চিঠি দিয়ে প্রোপোজ করতো! কিছুতেই না করতাম না!
সামিরা উত্তেজিত হয়ে বলে,
-ঠিক ঠিক। আমিও আমিও। আচ্ছা এখানের আর কেউ পছন্দ করে না?
আনানের চোখ চকচক করে ওঠে। সাথে সাথে জবাব দেয়,
-চিঠি লিখতে তো আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু কেউ বুঝেই না ব্যাপারটা কত সুন্দর।
ইনায়া সাথে সাথে পেছনে তাকায়। আনানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
-উমমম্ তারপর ?
-তারপর আর পর নেই।
-উফফ্,এই যে আমরা জলজ্যান্ত দুইটা মানুষ বললাম চিঠি আমাদের ভালো লাগে,তাতে তোমার হলো না? আমার বান্ধবী চিঠি পছন্দ করে। বুঝতে পারলে? তাও বললে যে এখন কেউ এই ব্যাপারটা বুঝে না।
-হ্যাঁ জানলাম ইনু,আর মাথায়ও রাখলাম।
সামিরা লজ্জা পায়। আনান তার বিষয়টা মাথায় রাখলো? তারমানে ইনু ঠিকই বলেছিল? আনান মাথা ঝুঁকিয়ে মুচকি হাসে।
মনে মনে বলে,
-তুই আগে বলবি না তোর চিঠি পছন্দ? রোজ একটা করে চিঠি লিখতাম তাহলে।
নীল ইনায়ার গালে হাত দিয়ে মুখ সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। শক্ত কণ্ঠে বলল,
-পেছনে তাকাবি না,মাথা ঘুরবে।
ইনায়া চুপচাপ সামনে তাকায়। নীলকে দেখলেই লজ্জা লাগছে তার।
সামিরার বাড়ির সামনে আসতেই ব্রেক করে নীল। গাড়ি থেকে নেমে ইনায়ার কাছে এসে বিদায় নেয় সে। আজ চোখে মুখে তার অন্যরকম উজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছে। নতুন প্রেমে পড়লে যেমন হয়।
.
.
.
দেওয়ান বাড়ির পরিবেশ একেবারে রমরমা। সকলেই উপস্থিত।ইনায়া,আনান আর নীল আসতেই বাড়িটা একেবারে পরিপূর্ণ।বাড়িতে আসতেই অনু ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-ইনুপু এতো দেরি করলে কেন?
-তোর প্রিয় বড়ভাইয়া কে জিজ্ঞেস কর।
অনু এবার নীলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-তোমরা ঘুরতে গিয়েছিলে?
-তোকে রেখে যাওয়া সম্ভব?
অনু খুশি হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। নীল সুন্দর করে হাসি দিয়ে ইনায়াকে বলে,
-ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস। আমি রাতে এসে পড়া ধরব।
কথা শেষ হতেই ইনায়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কোথায় যাবেন এখন?
নীল কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। পেছন ঘুরে ইনায়াকে দেখে । তারপর কিছু একটা ভেবে নরম করে হাসি দিয়ে বলল,
-অফিসের কাজে,একটু পরেই আসব। পড়া শেষ করে রাখ।
নীল আর দাঁড়ায় না। সদর দরজা পেরিয়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়।
সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়া । তার বিশ্বাস নীল এখন তার হবু বউ এর সাথেই দেখা করতে গেল। সারাদিন না দেখেই এমন অস্থির হয়ে গেছেন নীল ভাই? নাহলে কেউ বাড়িতে এসেই বেড়িয়ে যায় না। এসব ভেবে আজ জেদ হচ্ছে না তার। পড়তেও আগ্রহ পাচ্ছে না। অজানা অভিমান ভর করে ইনায়ার মনে।
(চলবে……)
#Running
#episode:17
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করলেন আমার জন্যে। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবার দোয়া আর ভালোবাসা আমি পর্যন্ত এসেছে। জানিনা কেমন লিখেছি। তবে একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বগুলোতে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE