Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-১৫


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ১৫

রিদ মুখ ভর্তি জুস নিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে রয়েছে নীলের দিকে।না পারছে গিলতে,না পারছে ফেলতে।পকেট থেকে ১ লাখ টাকা খসে যাবে এখন,এই চিন্তায় আড়চোখে একবার আরানকে দেখল।এদিকে আরান বেচারা পড়েছে এক মাইনকার চিপায়।একবার তাকায় বন্ধুর দিকে,আরেকবার তাকায় ছোট ভাইয়ের দিকে।

নীল ইশারায় রিদকে বলে,

-খেয়ে ফেলো,খেয়ে ফেলো।

রিদ উপায় না পেয়ে চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেলে।

ইনায়া আর সামিরা মুখে হাত দিয়ে চেপে হাসছে।

রিদ অসহায় ভঙ্গিতে নীল কে বলে,

-ক্ষমা হয়েছে আমার,ভুল করে দিন।

জিভ কেটে থুতু ফেলে আবার বলে,

-ভাই,ভুল হয়েছে আমার,ক্ষমা করে দিন ,ভাই। 

রিদের এমন ভ্যাবাচেকা খাওয়া অবস্থা দেখে সামিরা গ্লাসটা হাত থেকে নিয়ে নেয়।বড়দের মতো করে আদেশ করে বলে,

-থাক,আর খেতে হবে না।

নীল একহাতে সানগ্লাস পরে,অন্যহাতে ইনায়াকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।

ঘটনার আগামাথা বুঝতে না পেরে  ইনায়া নীলকে প্রশ্ন করল,

-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

-ছেলেদের মাঝে দাঁড়িয়ে কি করবি?

-আপনি তো কিছু বুঝেনই না।গেট ধরার মজাটাই তো এখন।

-না,এসব করতে হবে না।সবাই তাকিয়ে ছিল তোর দিকে।

-আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথেও এমন করেন?

-এর চেয়েও বেশি..

ইনায়া ঠোঁট ভেটকিয়ে নীলের সাথে সাথে চলে যায়।

.

খাবার খাওয়ার সময় নীল একেবারে ইনায়াকে সাথে করে নিয়ে আসে। এদিকে সামিরা খুজতে খুজতে আধা পা*গল হয়ে গেছে। ইনায়াকে দেখতেই টেনে নিয়ে বলল,

-কতো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে খেতে! পরে কিন্তু আমি দুটো রোস্ট পাবো না ইনু!

-আরে রিলাক্স ভাবি।দরকার হলে আমার ভাইয়ের রোস্ট তোমায় দিব।

দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আনানকে ইশারায় বলে,

-ঠিক আছে?

আনান মুচকি হাসে। ইনায়া সাথে সাথে বলে,

-লারকা হাঁসা তো ফাঁসা..

.

সামিরাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,

-আনান ভাইয়া তার বিখ্যাত হাসি দিয়ে সম্মতি জানিয়েছে। চল বিসমিল্লাহ্ বলে খেতে যাই এখন।

.

.

বিয়ে পড়ানো হচ্ছে এখন। সকলেই উপস্থিত। নীল এসে ইনায়ার পাশে দাঁড়ায়। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানোর পরে সকলে একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে। ইনায়ার চোখে খুশির ঝলক। জোড়ে করে চেঁচিয়ে উঠল ইনায়া আর সামিরা,

-দুলাভাই জিতছে,জিতছে জিতছে!

আরান ইশারা করে নীল আর রিসান এর দিকে।

বলে,

-ইজ্জত বাঁচা মামা!

নীল ইশারায় গালি দেয়। তবে আরান এর অনুরোধে রিসান বলল,

-ভাবি জিতেছেন!

রিসান নীলকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

-তুইও বল শা*লা। পাল্লা হালকা হয়ে যাচ্ছে। একা চিল্লাতে পারবো না। 

নীল পাত্তা না দিয়ে বলল,

-বউ এর বান্ধবি জিতছে। 

রিসান নীল এর মুখ শক্ত করে চেপে ধরে ইনায়াকে দেখে। আরান দাঁত দিয়ে জিভ কেটে শর্মীর দিকে তাকায় । শর্মীর এসব কথা তে মনোযোগ ই নেই ।  সে ব্যস্ত এখন কান্না করতে। আরান হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সাথে সাথে তাকায় আবার ইনায়ার দিকে। ইনায়ার ও কোনো মনোযোগ নেই এদিকে। সে আনায়ার ছবি তুলে দিচ্ছে। নীলও সেদিকে তাকায়।

রিসানকে ধরে বলে,

-ও ছোট্ট পরী,শুনলেও বুঝবে নারে পা*গলা।

বলেই ডানে তাকাতেই দেখে সামিরা দাঁড়িয়ে। নীল গা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সানগ্লাস চোখে নেয়। 

রিসান এর দিকে তাকিয়ে বলল,

-এসব বাচ্চামো করার বয়স নেই আমাদের। পোলাপান দের দেখাদেখি কিছু করবি না। 

সামিরা আড় চোখে নীলকে দেখে ইনায়ার কাছে গিয়ে

 বলে,

-কীরে তোর সো কল্ড ভাই আমাদের পোলাপান ভাবে দেখি! 

-ওনার কথা বলিস না,নিজে বুড়ো হয়ে গেছে তো।

-আমাকে দেখেই ভাবভঙ্গি বদলে কেমন শক্ত হয়ে গেল যেন।

-ওসব ভাব দেখিয়ে করে,বাড়িতেও ওমন বাংলার পাঁচ করে রাখে মুখ। আমি তো ওনাকে হাসতেই দেখি না দোস্ত। এতো গম্ভীর।

-আর তোর আনান ভাইয়া?

-আমার ভাইয়া তো সেরাহ্ ভাবি! বিয়ের পরে তোমাকে হাসাতে হাসাতে পা*গল করে দিবে।

-উফফ্ ধুররর্

ইনায়া ঝুকে সামিরার মুখের দিকে তাকায়। 

মুচকি হেসে বলে,

-উমমম্, লজ্জা পাচ্ছে দেখি….

.

.

.

রজনীগন্ধা আর গোলাপ ফুলের মালা আনতে ইনায়াকে পাঠানো হয়। ইনায়া মালা আনতে যেতেই দেখে রুমের দরজার সামনে রিদ দাঁড়িয়ে। রিদ কে দেখে বেশ ঘাবড়িয়ে যায় ইনায়া। তখন ওসব খাওয়ানোর জন্য এখন যদি প্রতিশোধ নেয়?  

টিপ টিপ করে ঘরের দিকে পা বাড়াতেই রিদ ডাক দেয়,

-excuse me!

ইনায়া দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে মালা নিয়ে বেড়িয়ে আসে। 

রিদ পেছন থেকে ডেকে বলে,

-নাম্বার এর জন্য ডেকেছিলাম। আমি তো ভূত না যে খেয়ে ফেলবো!

তবে কে শোনে কার কথা।তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে নীলের গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে পড়তে গেলেই নীল ইনায়াকে শক্ত করে ধরে নেয়। 

চিন্তিত হয়ে বলল,

-কী হয়েছে?

-কি..কিছু না।

-সাবধানে চলাফেরা করবি। একা আসলি বলেই আমি আসলাম। 

ইনায়ার মনটা হালকা হয়। মনে মনে বলল,

-তারমানে ঐ ছেলের কথা শুনেনি নীল ভাই। নাহলে তো এ বিয়েতে ঝামেলা বেঁধে যেত।

-কী হলো? কী ভাবছিস?

-কিছু নাতো।

-এভাবে যেতে থাকলে আবার পড়ে যাবি,আর মালা গুলোও নষ্ট হয়ে যাবে। আমার হাতে দে ।

ইনায়া ঝটপট করে নীলের হাতে দিয়ে দেয়। তবে নীল হাতে নিয়েই ইনায়ার গলায় পড়িয়ে বলে,

-যা,এভাবে নিয়ে যা।

ইনায়া হকচকিয়ে যায়। তবে মনে মনে বেশ খুশি হয় সে। উপর উপর রাগ দেখিয়ে বলল,

-এটা কী করলেন নীল ভাই? বিয়ের মালা পড়তে হয় না।

নীল চট করে মালা খুলে নেয়। বলে,

-জানলাম। আমি দিয়ে আসছি এগুলো,তুই যা।

ইনায়া চলে যায়। তার খুশিতে এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। তার নীল ভাই তাকে মালা পরিয়ে দিয়েছে! 

সোজা গিয়ে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-আজ আমি অনেক খুশি…

-কেন কেন?

-আজকের মতো ভুলের যেদিন সঠিক হয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেদিন বলব।

-কী ছাইছাতা বলছিস! চল ,আয়না ধরবো এখন। 

-হু,চল। দেখি আমাদের জিজু কতো রোমান্টিক!

মালা পড়ানোর পরে ইনায়া শর্মী আর আরানের সামনে আয়না ধরতেই সামিরা আরানকে প্রশ্ন করল,

-ভাইয়া,আয়নায় কি দেখতে পাচ্ছেন?

আরান একটু ভাব নিয়ে শর্মীর দিকে তাকায়। বুক ফুলিয়ে বলল,

-আমার ভবিষ্যত বাচ্চাদের মাকে…

শর্মী ডান হাতের কনুই দিয়ে আরানকে ধাক্কা দেয়। এদিকে চারপাশ অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ছে। ইনায়া শর্মীর কানে কানে এসে বলে,

-বাচ্চাদের! বাচ্চাদের মানে এক ডজন শ্যিওর!

শর্মী লজ্জায় আর তাকাতে পারছে না। আরান পরিস্থিতি সামলে আবার বলল,

-আমার সারা জীবনের সকল ভালো কাজের ফসল।

-আর আর?

-আর আমার বউকে।

সবাই তখন হাততালি দেয়।

অনু  হঠাৎ করে শর্মীকে  বলে ওঠে,

-শর্মী আপু,তুমি আয়নায় কি দেখতে পাচ্ছো?

-ফুচকার মিষ্টি টকের মতন মিষ্টি একটা পাংখু জামাই।  

আরান দাঁত চেপে হেসে বলল,

-এখনো ভুলোনি নামটা?

-এ জনমে সম্ভব না পাংখু।

.

ইনায়া উঠে সামিরার কাছে যায়। পাশে বসে চোখ বুঝে বলতে শুরু করে,

-দোস্ত

-হুম

-কেমন আছিস?

সামিরা উঠে দাঁড়ায়। ভেংচি কেটে বলল,

-এটা কোনো প্রশ্ন?

ইনায়া চোখ বুজে। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে,

-কী করিস?

সামিরা কোনো জবাব দেয় না। ইনায়া আবার বলল,

-শোন…

…..

-আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া কতো রোমান্টিক। নীল ভাই এমন না কেন?

…..

-ইশশশ্ দোস্ত! আমি কল্পনায় কী কী ভেবেছি জানিস? কিন্তু নীল ভাই অনেক গম্ভীর…

……

-কথা বল… 

সামিরার কোনো জবাব আসে না। ইনায়া মুখ থেকে হাত সরায়। সামনে সামিরাকে না দেখে পাশে তাকায় ইনায়া। নীল পায়ের উপর পা তুলে ফোন চালাচ্ছে। ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলল,

-নী… নীললল ভা..ভাই…

নীল ফোন নামিয়ে জবাব দেয়,

-পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখা মেয়ের মুখে আমার নাম মানায় না,আবার আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কোনো কথাও মানায় না। 

ইনায়ার এখন নিজের গালে নিজে নিজে থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে করছে। আর কত অপমানিত হবে এভাবে সেচ্ছায়। কপালে হাত দিয়ে বসে রইল সে। নীল পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইমায়াকে বলল,

-যোগ্যতা হলে আমাদের কথা বলবি,তার আগে নয়।

(চলবে……)

#Running 

#episode:15

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply