Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-১৩


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ১৩

ইনায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর বিয়েতে যাবে না।নীলের মুখোমুখি হতে একদমই ইচ্ছে করছে না তার।তাই সামিরাকে কল দেই সে। 

শক্ত গলায় বলল,

-হলুদে আমি যাচ্ছি না।

-সকাল সকাল কী পা*গলামি শুরু করলি ! কোনো স্বপ্ন দেখেছিস?

-আমি মজা করছি না,সিরিয়াস।

-কি আশ্চর্য! যাবি না কেন?

-এমনি , ভালো লাগছে না তাই। একটু পরেই তো হলুদ লাগিয়ে গোসল করাবে।তোরা যেন আমার জন্য অপেক্ষা না করিস তাই জানিয়ে রাখলাম। রাখছি এখন।

বলেই ইনায়া কল কেটে দেয়।

পড়ার টেবিলে বায়োলজি ১ম পত্র বই নিয়ে বসে রইল ইনায়া।দেওয়ান বাড়ির সব বউরা শর্মীর হলুদে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এরই মাঝে অনু দৌঁড়ে আসে ইনায়ার ঘরে।

তাড়াহুড়ো করে বলে,

-ইনুপু তুমি এখন রেডি হওনি? 

ইনায়া কোন জবাব দেয় না।ইনায়া অভিমান করেছে বুঝতে পেরে অনু ইনায়ার কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।

আহ্লাদ করে বলল,

-ইনুপু তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?

ইনায়া অনুর হাত সরিয়ে দেয়।

অনু আবার বলে,

-আমার কি দোষ? বড় ভাইয়া যে অমন রেগে যাবে তা জানলে আমি তোমায় কিচ্ছু বলতাম না। তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না ইনুপু্। 

অনু ছলছল করে ইনায়ার দিকে তাকায়। 

ইনায়া অনুর হাত ধরে বলে,

-রেগে নেই,তোরা যা। আমি পরে আসব। পরীক্ষার পড়া বাকি আছে। 

অনু চলে যায়। কথা বাড়ায় না আর।ইনায়া আবার বই নিয়ে বসে পরে। 

.

.

.

.

শর্মী আর আরানকে পাশাপাশি বসিয়ে সাবাই হলুদ মাখাচ্ছে। তবে সামিরা লক্ষ্য করে ইনায়া সত্যিই আসেনি। 

অনুকে দেখে তৎক্ষণাৎ ডেকে বলল,

-ইনু আসেনি কেন অনু?

-আপুতো বলেছে যে আপুর ভালো লাগছে না। 

-আমাকেও বলেছিল কল করে,আমি তো ভেবেছিলাম মজা করছে!

-সামিরা আপু জানো? আমার মনে হয় কি….

-কী মনে হয়?

-মনে হয় আপু রাগ করেছে…

-কেন?

-বড় ভাইয়া কাল আপুকে অনেক রাগ করেছে,হাতে ব্যাথা পেয়েছিল আপু। 

-কী বলছো! কেন?

-ঐ যে,যখন আমি নাচতে বলেছিলাম আপুকে,আর আপু রাজি হয়েছিল তখন।

সামিরার তিরতির করে রাগ বেড়ে যায়। এদিকে নীল আর আনান এসেছে সরাসরি অফিস আর ভার্সিটি থেকে। নীলের চোখ চারিদিকে ইনায়াকে খুঁজছে। সেই সাথে আনানও দেখছে,ইনায়া কোথায়। তবে দুজনেই ব্যর্থ হয় ইনায়াকে দেখতে। নীল অনুকে ডাক দেয়। সামিরা পেছন ঘুরে নীলকে দেখতে সেও অনুর সাথে সাথে যায়।  

নীল অনুকে এগিয়ে আসতে দেখে কয়েক হাত দূর থেকে প্রশ্ন করে,

-তোর ইনুপু কোথায়?

-আসেনি..

-কেন?

অনুর উত্তরের অপেক্ষা করল না সামিরা। 

নিজেই বলল,

-ভাইয়া কাল আপনি ইনায়ার সাথে যা করেছেন,ঠিক করেননি। 

আরান উঠে এসে নীলকে বলে,

-কী করেছিস মামা? শর্মী তো আমার সাথে ঝামেলা করছে। তুই আসলেই বেশি বাড়াবাড়ি করিস শা*লা! আমার বিয়ের আগেই আমার বউ এর সাথে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছিস! 

নীল জবাব দেয় না। তার মাথায় এখন ঘুরছে ইনায়া বাড়িতে একা কী করছে। আরান আবার বলে,

-যা নীল, দাঁড়িয়ে থাকিস না। আর মামা শোন! ও না এলে তুইও আসিস না। শর্মী আমায় বলেছে আমি নাকি বাইরের পলিটিক্স বাড়িতেও খাটাচ্ছি। বউ আমার এখন রাতেই পার্টি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

-আর একবার বউ বউ করলে আমি দিনেই তোর পার্টি খেয়ে দেব। সর্ শা*লা!

নীল হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়।

.

.

.

 বাসায় এসে নীল দেখে ইনায়া বই নিয়ে বসে আছে।সামনে থেকে বই সরিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,

-হলুদে যাসনি কেন?

-ভালো লাগছিল না । বইটা দেন।

-না,দেবো না।তুই চল এখন আমার সাথে।

-না,আমি যাবো না। বললাম তো ভালো লাগছে না!

-কেন?

-জানি না… বই দেন।

-ভালো লাগছে না কেন?

-আপনার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছিল না,হয়েছে? শুনেছেন? শান্তি এখন? বইটা দেন এবার!

-তোকে এক্ষুনি আমার সাথে যেতে হবে ইনু। ১০ মিনিট টাইম দিলাম রেডি হয়ে নে।

-বললাম না যাব না? আপনি যা ইচ্ছা করবেন,আর আমি কিছু করলে এমন করবেন,কেন নীল ভাই?  

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে,

-আপনি যে কাউকে ভালোবাসেন ,তার সাথে কী করেন না করেন তা নিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি? কিছু বললেই বলেন সে তুলনার বাইরে। আর আমাকে সস্তা লাগে? 

-পা*গলামি করিস না ইনু!

-আপনি যখন যা বলবেন আমি তাই শুনতে বাধ্য নই নীল ভাই।

-আমার বন্ধু আর তোর দুই বান্ধবী শুধু জোড় করছে বলে! নাহলে থা*প্পড় মেরে এখানে অ*জ্ঞান করে রেখে যেতাম । মুখে মুখে অনেক কথা বলছিস। দশ মিনিট সময় তোর হাতে। আমি বাইরে যাচ্ছি। দেরি যেন না হয়!

নীল দরজার বাইরে গিয়ে স্টপওয়াচ অন করে টাইম দেখতে শুরু করে।আর ২ মিনিট পরপর ইনায়াকে বলতে থাকে,

-ফাস্ট ইনু!

ইনায়ার প্রচুর রাগ হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে যেন কী হয়েছে। নীলকে দেখলেই অস্থির লাগে। নীলের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে হিংসা হয়,রাগ হয়,জেদ হয় নীলের উপর। আগে যেমন ভয় লাগতো নীলকে দেখে,সে ভয় এখন জেদে পরিণত হয়েছে। কোনো রকমে ইনায়া রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়।

ইনায়াকে দেখে নীল এমন এক হাসি দেয় যেন সে রাজ্য জয় করল মাত্রই। বের হয়ে যায় তাকে নিয়ে।

.

.

.

হলুদ সন্ধ্যা উপলক্ষে সবাইকে নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হয়। ছেলেদের নীল পাঞ্জাবী আর মেয়েদের নীল শাড়ি,সিল্ক মসলিন কাপড়ের। শর্মী পড়েছে হলুদ লেহেঙ্গা আর আরান পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবী সাথে লাল কোটি।সামিরা ,অনু শাড়ি পরে ছাদে চলে এসেছে। ইনায়াকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে তার মেজোমা রুবিনা ইয়াসমিন। 

সামিরা এসেই মাইক নিয়ে অ্যানাউন্সমেন্ট করে,

-অ্যাটেনশন গাইজ!

আরান,নীল ,রিদ,আনান,শর্মী ,অনু সহ সকলে সেদিকে তাকায়। সামিরা বলে,

-আজকে একজন বিশেষ অতিথি আমাদের মাঝে আসছে। যাকে ঘিরে এতো কাহিনী। তিনি আর কেউ নন,আমাদের প্রিয় কুদ্দুস মামা! 

আরান শিষ বাজিয়ে বলে,

-আরেহ্ পাংখু আবুল মামা!!! 

সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই একে একে আসতে শুরু করে।কুদ্দুস মামাও চলে আসে ফুচকা নিয়ে। এরই মাঝে  শাড়িতে ইনায়া উপস্থিত হয়। এক হাতে শাড়ির আঁচল আরেক হাতে মাথার চুল ঠিক করছে। নীলের সেদিকে চোখ পড়তেই বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পরে। 

নীলের এ অবস্থা দেখে তার আরেক বন্ধু রিসান নীলকে ধরে বলে,

-কীরে মামা! খারাপ লাগছে?

-জান শরীরে না থাকলে তো খারাপই লাগবে!

-জান আবার কই? 

-তোর ভাবির হাতে।

রিসান সামনে তাকাতেই ইনায়াকে দেখতে পায়। বোকার মতো তাকিয়ে বলে,

-হাতে তো শাড়ির আঁচল!

-তুই বুঝবি না পা*গলা! এই! তাকাস না কিন্তু,অন্যদিকে তাকা।

রিসান  নীলকে ছেড়ে দেয়। রেগে বলে,

-মুড়ি খা শা*লা!

ইনায়া,সামিরা,অনু সবাই কুদ্দুস মামার কাছে আসে ফুচকা খাওয়ার জন্য।সামিরা কুদ্দুস মামাকে বলে,

-মামা,আমাদেরকে আপনার বেস্ট ফুচকা খাওয়ান।

স্টেজে বসে শর্মী ইশারা দিয়ে বলে,

-আমার জন্যেও দে!!

ইনায়া হেসে কুদ্দুস মামার দিকে তাকিয়ে বলল,

-মামা,আপনার না হওয়া বউ ফুচকা খেতে চাচ্ছে,তার জন্য আলাদা করে বানিয়ে দিন।

কুদ্দুস মামা সবাইকে ফুচকা বানিয়ে দেয়।

নীল  একটু দূরে থেকে ইনায়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। অনু নীলের দিকে তাকিয়ে ইনায়ার দিকে তাকালো। ইনায়াকে ফিসফিস করে বলল,

-ইনুপু! তোমার পেট খারাপ হতে পারে!

-কেন?

-দেখ বড় ভাইয়া কীভাবে তাকিয়ে আছে তোমার দিকে।

ইনায়া তাকায় নীলের দিকে। নীলের চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। কেমন যেন না পাওয়ার ছোঁয়া লেগে আছে। 

মনে মনে বলল,

-নীল ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষের দিকেও কী উনি এভাবে তাকিয়ে থাকে?

(চলবে……)

#Running 

#episode:13

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply