Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-১১


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ১১

শর্মীর বিয়ের পাকা কথা হয়েছে। আগামী বুধবারই সব ঠিকঠাক করছে। সামিরা আর ইনায়া বেশ খুশি, বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা। তবে পরীক্ষার সময়ও এগিয়ে আসছে। 

পড়তে পড়তে ইনায়ার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

-নীল ভাই এর গার্লফ্রেন্ড নিশ্চয় অনেক ভালো পড়াশোনা

 তে। নীল ভাই এর মতোই হবে। না হলে তো উনি পছন্দই করতো না। আবার যেহেতু একসাথেই কলেজে জয়েন করবে!

ইনায়া পড়াতে মন দেয়। নীলের কত্তো অহংকার ঐ মেয়েকে নিয়ে! ইনায়া মনে মনে নীলকে দু চারটে গালি দেয়।

-আমাকে গরু, গাঁধা বলে! আর ঐ মেয়ে কি খুব ভালো নাকি! আমিও দেখিয়ে দিব। 

বই কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে মুখের মধ্যে কলম দিয়ে কামড়াতে কামড়াতে বলল,

-একটু ছোঁয়া লাগলে ওনার গা জ্বলে যায়! বাইকে উঠিয়ে কাঁধে হাত রাখতে মানা করলো আমায়!! সুন্দর হয়েছে তো কী হয়েছে! আমি কি ড্রেনের ময়লা? 

নীলের করা আজকে সকালের ব্যবহার ইনায়ার মনে পড়ে যাচ্ছে। নিজের গালে থাপ্পর দিয়ে বলল,

-কেন যে পরে হাত টা রাখলাম! তুই একটা ছ্যাচড়া,ইনু…

ইনায়া সিদ্ধান্ত নেয় সে আর নীলের সাথে কথা বলবে না। যে তাকে বোন হিসেবে মানে না,আবার পাত্তাও দেয় না তার সাথে আর কিসের সম্পর্ক। ইনায়া পুরো দমে পড়তে বসে যায়। যে করেই হোক ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। 

এর মাঝে অনু ইনায়াকে খেতে ডাকে। তাতেও ইনায়া না করে দেয়। সকাল থেকে কেমন যেন তার হার্টবিট দ্রুত চলছে,কেমন বমি বমি পাচ্ছে,অস্থির লাগছে। লক্ষণ ভালো না। ইনায়া শান্ত হয়ে বসে। ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে গা এলিয়ে শুয়ে পরে। 

ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-এতো সুন্দর আগে লাগেনি কেন?

.

মিনিট বিশেক পর ইনায়া রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। 

আওয়াজ পেয়ে ইনায়া বসে পরিপাটি হয়ে আওয়াজ দেয়,

-আসো।

নীল গম্ভীর চেহারা নিয়ে ভেতরে ঢোকে। টেবিলের উপর থেকে ইনায়ার একটা খাতা তুলে নিয়ে দেখতে দেখতে বলে,

-খেতে আসিসনি কেন?

-ভালো লাগছে না।

-তোর উপর আমি রেগে আছি বলে তুই খেতে আসিসনি, বাড়ির সকলের এমন ধারনা।

-কে ধারনা করেছে?

-মা বাবা সহ সবাই। আমি এসব দায়ভার নিতে চাই না। 

ইনায়া জবাব দেয় না কোনো। 

নীল আবার বলে,

-না খেয়ে থাকলেই যে  আমার রাগ কমে যাবে,এমনটা ভাবিস না। যে বাইরের ছেলের জন্যে আপন মানুষ কে আঘাত করতে পারে,তাকে মাফ করার প্রশ্নই আসে না।

ইনায়া সবে শুকানো ঘাঁ তে পুনরায় আঘাত দিয়ে কাঁচা করে ফেললো নীল। ছলছল চোখ নিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,

-নীল ভাই! আমি বুঝিনি সেদিন..

-ভাই বলিসনা ,তোর মুখে মানায় না। খেতে যা এখন।

চোখ মুছে ঢোক গিলে ইনায়া  বলল,

-সত্যিই খেতে খেতে ইচ্ছে করছে না।

-কেন?

-বমি বমি পাচ্ছে সকাল থেকে,বুকের মধ্যে ধুক ধুক করছে অনেক, অস্থির লাগছে।

-ওহ্, গ্যাস্ট্রিক এর জন্য হতে পারে।

-সবাই তাই-ই ভাববে নীল ভাই। কিন্তু আমার অনেক বড় সমস্যা হয়েছে। যা কাউকেই বলতে পারছি না।

-প্রেমে পড়েছিস নাকি?

ইনায়া চকিত দৃষ্টিতে তাকায় নীলের দিকে। নীল ইনায়ার খাতা পুনরায় টেবিলে রেখে বলে,

-তোর মতো মেয়ের জন্যে সবই সম্ভব।

  বলেই বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

.

.

.

সময় খারাপ যাচ্ছে ইনায়ার। বুক ফেটে আবার কান্না পাচ্ছে। একটু গান শুনে দেখলে বোধহয় ভালো লাগবে। প্লেলিস্টের প্রথম গানটিই সামনে চলে আসল। 

ফোনে বাজতে থাকে সে গান,

“লালন ফকির ভেবে বলে সদাই

ঐ প্রেম যে করে সে জানে….—-“

দ্রুত ফোন বন্ধ করে দেয় ইনায়া । এমনিতেই কষ্ট পাচ্ছে,তার মধ্যে আবার এই গান।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ইনায়া। পুরো রুম ধরে কিছুক্ষন পায়চারি করে। খেতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। তার নীল ভাই তো তাকে পাত্তা দেয় না,সে না খেয়ে থাকবে কেন! আর ভাববে না নীলের কথা। এসব ভেবে রুম থেকে বের হওয়ার পথে নীলের ঘরে উঁকি দেয় ইনায়া। নীল হেঁসে হেঁসে কারো সাথে কথা বলছে। 

নীল ইনায়াকে দেখে বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালো। বিষয়টা বুঝতে ইনায়ার দেরি হয় না। 

দ্রুত নিচে চলে যায়। 

অল্প পরিমাণে খাবার নিয়ে শিমু জাহানকে বলে,

-খেতে ইচ্ছে করছিল না বলে তখন আসিনি। নীল ভাইকে দোষ দিও না। ওনাকে শুধু শুধু আমাকে ডাকতে পাঠালে,উনি বিরক্ত হন বড়মা।

শিমু জাহান অবাক হয়ে তাকায় ইনায়ার দিকে। হেঁসে বলে,

-মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি পড়তে পড়তে? অনুকে পাঠিয়েছিলাম,ও বলল তুই পড়ছিস। তাই আর ডাকিনি। তোর নীল ভাইকে কেন পাঠাতে যাব! 

ইনায়ার মুখে ভাত নিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে শিমু জাহান এর দিকে। পানি দিয়ে কোনো রকমে গিলে বলে,

-তোমরা আমার জন্য ওনাকে বকোনি?

-পাগল হয়েছিস,যা খেয়ে ঘুমাতে যাও। 

ইনায়া কোনো রকমে খেয়ে উঠে পরে। গন্তব্য এখন নীলের ঘর। দ্রুত পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যা সে। নীলের রুমে আচমকা ঢুকেই বলে,

-মিথ্যা বললেন কেন?

নীল কান থেকে ফোন নামায়,তবে কল কাটে না। ইনায়াকে ইশারা দিয়ে বলে,

-কী?

-আমি খেতে যাইনি বলে তো আপনাকে কেউ কিছু বলেনি! তবে আমি না খেয়ে আছি বলে আমায় নিয়ে চিন্তা করছিলেন?

নীল কলে আছে বিধায় ইনায়া একটু বাড়িয়ে বলে,

-আপনি আমায় এতো ভালোবাসেন! আমায় নিয়ে কত্তো চিন্তা করেন। আর কাউকেই এতোটা করেননি কখনো,আমি জানিতো! 

নীল ইনায়ার বাড়াবাড়ি দেখে জোড়ে এক ধমক দিয়ে বলে,

-ওরা আমায় কিছু বলেছে এটা তোকে কখন বললাম আমি? আমি বলেছি,সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছে যেন তারা ধারনা করছে তুই আমার জন্যে খেতে আসিসনি। আর এসব থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে পড়তে বয়। ডিস্টার্ব করবি না এখন একদম।

একটানা কথা গুলো বলেই নীল ফোন পুনরায় কানে নিল। বলল,

-না না,ওর কথা ধরে লাভ নেই। মাথায় প্রবলেম আছে। না না,জানে না। 

ইনায়ার মনের মধ্যে অস্থির লাগছে। ভাবতে থাকে,

-কী জানি না আমি? আমার মাথায় সমস্যা? 

দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে ইনায়া। বাচ্চাদের মতো করে বলে,

-নীল ভাই!

নীল ফোন কেটে জবাব দেয়,

-ভাই ভাই করবি না! কী বলবি বল।

-আপনি যাকে ভালোবাসেন সে কি অনেক সুন্দর?

নীল মুচকি হাসে। হাত থেকে ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,

-অসম্ভব সুন্দরী। তার সাথে কারো তুলনা হয়না। সব দিক থেকে পারফেক্ট ।

কথাটা বলে নীল ইনায়ার দিকে আগাতে থাকে। হাত দুটো বুকের উপরে ভাজ করে এগিয়ে যায় ইনায়ার দিকে নীল। ইনায়াও এক পা করে পেছাতে থাকে। দরজা পর্যন্ত গেলেই নীল বলে,

-তোর মতো গাঁধী তো না অ্যাট লিস্ট! 

বলেই দরজা লাগিয়ে দেয় নীল। অপমানে ইনায়ার শরীর পুড়ে যাচ্ছে। 

-এই গাঁধীর জন্যেও ছেলেরা পাগ*ল হতে পারে,নীল ভাইকে বোঝাতেই হবে। 

দ্রুত রুমে গিয়ে ইনায়াও দরজা লাগিয়ে দেয়। 

.

.

.

শর্মীর বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইনায়া ওর সকালের সব কাজ শেষ করে সুন্দর করে রেডি হয় শপিং এ যাওয়ার জন্য। শর্মী আর সামিরা দুজনেই বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছে। ইনায়া বেড়িয়ে দেখে,আরান আর আরানের কাজিন রিদও এসেছে। আরান ইনায়াকে একা বের হতে দেখে বলে,

-নীল কোথায়?

ইনায়া ভাব দেখিয়ে জবাব দেয় ,

-জানি না!

আরানও সাথে সাথে জানিয়ে দেয়,

-নীল না গেলে আমি তোমায় নিতে পারব না।

-আপনাকে নিতে হবে না ভাইয়া। এই শর্মী! চল,আমরা তিন জনই যাব।

শর্মীও সাথে সাথে আরানকে বলে,

-হ্যাঁ পাংখু, ওকে নিতে না পারলে তোমাকে যেতে হবে না।

-আরে রেগো না। নিজের ঘর আগে বাঁচাতে হবে। চলো সবাই। 

আরান নীলকে কল দিয়েই চলেছে। কিন্তু অফিসের মিটিংয়ে আটকে যাওয়ায় নীল জবাবও দিতে পারছে না। মিটিং শেষ করে নীল আরানকে কল করতেই নীলের চোখ র*ক্ত লাল হয়ে যায়। বাইকের চাবি নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায় অফিস থেকে। শপিং মলের অ্যাড্রেস নিয়ে সেখানে গিয়ে আরানকে কল করে নীল। শর্মী তার বিয়ের জন্যে বেনারসি কিনছে,ইনায়া আর সামিরা পাশেই। 

দোকান থেকে এক আঙ্কেল ইনায়াকে ডেকে বলে,

-মা ,তোমায় একজন ডাকছে। 

ইনায়া সেদিকে আগাতে গেলে ট্রায়াল রুমের সামনে থেকে কেউ ইনায়াকে টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে মুখ চেপে আটকে রাখে। বেশ কিছুক্ষণ করে কানে ভেসে আসে অতি পরিচিত কণ্ঠ স্বর। 

নীল ফিসফিস করে বলে,

-এতো নির্লজ্জ কেন তুই? ও তোকে বলেছিল না যে তোকে আনতে পারবে না?

ইনায়া মুখ দিয়ে হুঁ হুঁ শব্দ করে।

নীল ইনায়াকে নিয়ে বের হয়ে বলে,

-চুপচাপ বাড়িতে যাবি এক্ষুনি।

ইনায়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বলল,

-ওদের বলে আসি।

-না! আরান বলে দিবে। আর তুই যা যা দেখেছিস, পছন্দ করেছিস,সব বাড়িতে চলে যাবে।

বলেই ইনায়াকে নিয়ে টানতে টানতে বেরিয়ে যায় নীল।

(চলবে……)

#Running 

#episode:11

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply