#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব – ১০
-আজ দুই দিন হলো নীল ভাই ঠিকমত খাচ্ছে না। আমাকে দেখলেই সে স্থান ত্যাগ করে । একবার তাকিয়েও দেখে না আমায় । এত অবহেলা কী জন্য ? আমি কি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি ?
এসব কথা সামিরাকে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইনায়া।
আজ খুব সকাল সকাল সামিরা ইনায়াদের বাড়িতে এসেছে । শর্মীকে আজ দেখতে আসার বিষয়ে ইনায়াকে সবকিছু জানানোর উদ্দেশ্যেই আসে সে । তবে এসে যে ইনায়ার এই হাল দেখতে হবে তা ছিল কল্পনার বাইরে । সামিরা ইনায়াকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।
শক্ত করে হাত ধরে বলল ,
-এইতো ,চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল ফেলে দিয়েছিস না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে । আজকে যে শর্মিকে দেখতে আসবে, এ অবস্থায় যাবি তুই? সকলে তো ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে।
সামিরার কথা শুনে ইনায়া ফিক করে হেসে দেয়।
বলে,
-কখন আসবে দেখতে?
-একটু পরেই,আমি তোকে নিয়েই একবারে যাব। শর্মীকে সাজিয়ে দিতে হবে। তুইও ওখানে গিয়েই রেডি হবি,এখন চল।
-আমি আর কী রেডি হব?
-তা দেখছি একটু পর। সকলে ভয় পেয়ে পালালে বিষয়টা ভালো লাগবে না।
ইনায়া ফ্রেশ হয়ে সামিরাকে নিয়ে নিচে চলে আসে। টেবিল ফাঁকা,এখনো কেউ খেতে আসেনি। বাড়ির তিন গিন্নি ইনায়ার সাথে সামিরাকে জোড় করে বসিয়ে খেতে দেয়।
.
.
.
শর্মির বাসার ড্রয়িং রুমে পাত্র পক্ষের প্রায় দশ বারো জন উপস্থিত। মেয়ে দেখতে আসার আয়োজনে কেনো কমতি নেই। শর্মীকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে সামিরা। ইনায়াকেও টুকটাক করে সাজিয়ে দিয়েছে। ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপস্টিক। সেই সাথে নিজেও তৈরি হয়ে নেয়।
শর্মীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
ইনায়া কাছে গিয়ে চোখ মুছিয়ে বলল,
-কান্না করিস না। তুই চাইলে বিয়ে ভেঙে দেওয়া যাবে।
শর্মী ইনায়ার হাত সরিয়ে বলে,
-একটা মেয়ের জেদ কতটা ভয়ানক হতে পারে আমিও দেখিয়ে দিব। এখন সামনে রাস্তার নব্বই বছরের ফকির কেউ থাকলেও আমি রাজি হয়ে যেতাম।
ইনায়া আর সামিরা মুখ চেপে হাসে।
তাই বলে এই অবস্থা!
ওরা দুজনে শর্মীকে ধরে নিয়ে যায় ড্রয়িং রুমে। সোফায় মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে পড়ে শর্মী। বিয়ের সব পাকা কথা চলাকালীন কালো রংয়ের শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে ভেতরে প্রবেশ করল নীল।
নীলকে দেখতে ইনার মুখ হা হয়ে যায়, মুখ থেকে বেরিয়ে আসে একটি কথা,
-নীল ভাই !
ইনায়া আর সামিরা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে ।ইনায়ার মুখে এমন কথা শুনে শর্মী মুখ তুলে তাকায় । নীলের দেখা মেলে,তবে সেই সাথে তার সামনাসামনি আরান কে দেখতে পায় সে। পাত্র হয়ে বসে রয়েছে। শর্মীর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয় আরান। তবে এই হাসি শর্মীর গা জ্বা*লিয়ে দিচ্ছে।
নীল কে অসময়ে এখানে দেখে সবাই অবাক। সামিরা ইনায়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
-তোর সো কল্ড ভাই এখানে কোনো?
ঠোঁট উল্টিয়ে ইনায়া জবাব দেয়,
-কী জানি!
নীল আড়চোখে একবার ইনায়াকে দেখে বলে,
-পাত্র-পাত্রী রাজী?
শর্মী এতোক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকলেও নীলের প্রশ্ন শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে ।
জবাব দেয়,
-না! আমি রাজি না।
সামিরা আর ইনায়া এ বিয়ের বিষয়ে সবটা জানতো। আরান সেদিন সামিরাকে কলেই জানিয়ে দেয় ,সে শর্মীকে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে চায়। পরবর্তীতে সামিরা ইনায়াকে এ বিষয়ে জানায়। কিন্তু শর্মী খুশি না হয়ে তো উল্টো যে অভিমান করে রইল। দুজনেই শর্মীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় সরি বলে। শর্মী সেসবে তোয়াক্কা করে না।
উপায়ন্তর না পেয়ে আরান উঠে বলে,
-আমরা একটু আলাদা কথা না বললে বিষয়টা তো আগাবে না। তাই একটু কথা বলার জন্য সময় দরকার।
আরানের প্রস্তাবে বাড়ির বড়রা রাজি হয়। তাদেরকে ছাদে কথা বলার জন্য পাঠানো হলেও,সাথে সামিরা,ইনায়া আর আরানের কাজিন রিদও যায়।
ছাদের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার মুহূর্তে হ্যাঁচকা টানে ইনায়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল নীল। ডান হাতের তালু দিয়ে ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিয়ে বলে,
-রাতে ঘুমাস না,সব সময় চোখে পানি,মনে এতো কষ্ট! তাহলে এখন সেজে গুজে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন? আবার নাচতে নাচতে ছাদেও চলে এলি,ঐ ছেলে কীভাবে তাকাচ্ছিল দেখিসনি?
-কোন ছেলে?
-ওহ্ তুই তো বুঝিসই না কিছু! যা নিচে যা! আমি বাড়িতে নিয়ে যাব একটু পরে।
ইনায়া অবাক হয়ে নীলের কথা শুনছে। ব্যাবহারে হঠাৎ এমন পরিবর্তন!
ইনায়া যেতে গেলে নীল আবার তাকে ডাক দেয়।
ইনায়া পেছন ফিরে তাকাতে নীল বলে,
-আর কখনো যেন বাইরে এভাবে লিপস্টিক নিয়ে থাকতে না দেখি।
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় নীলের দিকে।
নীল বলে,
-পে*ত্নির মতো লাগে!
মন খারাপ করে ইনায়া ঠোঁট ভালো করে মুছতে মুছতে নিচে নেমে যায়।
এদিকে আরান শর্মীর কাধ ঝাঁকিয়ে বলে,
-বিয়ে তে এখন রাজি না কেন???
-কারণ আপনি আমায় কিছু জানান নি!
-আপনি?
-হ্যাঁ।
-তোমাকে সারপ্রাইজ দিলাম। ভেবেছিলাম খুশি হবে।
-পাংখু আবুল এলে খুশি হতাম।
-হ্যাঁ তা তো বুঝিই। এই আশা নিয়েই তো সেজেগুজে গিয়েছিলে! কিন্তু আশায় নৈরাশ্য।
সামিরা তাদেরকে থামিয়ে বলে,
-আচ্ছা বাবা,আর ঝগড়া না। রাজি হয়ে যা বন্ধু।
-ঠিক আছে,তবে শর্ত আছে।
আরান আগ্রহ নিয়ে বলে,
-আমি রাজি,কী শর্ত?
-তোমাকে আমি পাংখু বলেই ডাকব। আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি।
আরানের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তবুও রাজি হয় সে,বিয়ে তো হোক আগে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীলের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে,
-ডান!
সামিরা কৌতুহল আর ধরে রাখতে না পেরে বলে,
-ভাইয়া,নীল ভাইয়াকে চিনেন আপনি?
-ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
শর্মী আর সামিরা একই সাথে অবাক হয়। শর্মী প্রশ্ন করে,
-আগে বলোনি কেন?
-দরকার হয়নি,আজ প্রশ্ন করলে তাই বললাম। আর তোমাকে আমি ওর কারনেই চিনেছি। আর বেশি কিছু জানতে চেয়ো না,বলা মানা।
.
.
নীল নিচে এসে সবাইকে জানিয়ে দেয়,
-জামাই বউ রাজি
ইনায়া খুশি ধরে রাখতে না পেরে তাল দিয়ে বলে,
-আব কিয়া করেঙ্গা কাজী!
পরবর্তীতে নীলের চাহনি দেখে চুপ হয়ে যায়।
.
.
.
বাইকে উঠে হেলমেট পড়ে ইনায়ার হাতেও আরেকটা হেলমেট বাড়িয়ে দিল নীল। হেলমেট পড়ে ইনায়া পেছনে উঠে নীলের কাঁধে হাত রাখে।
তবে বাইক স্টার্ট দিতেই নীল ইনায়াকে বলল,
-হাত সরা কাধ থেকে।
অবাক হয়ে ইনায়া তাকিয়ে থাকে নীলের দিকে। নীল পুনরায় বলে,
-শুনিসনি কী বললাম? হাত সরা।
ইনায়া হাত সরিয়ে নেয়।
ঘাড় ঘুরিয়ে ইনায়াকে এক ঝলক দেখে নীল।
বলে,
-তুই এসবে অভ্যস্ত জানি। বাট ইউ নো হোয়াট? আমি কমফোর্ট ফিল করি না।
বেশ অনেকদূর যাওয়ার পরে নীল অনেক জোড়ে ব্রেক করে।ইনায়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে নীলের গায়ের ওপর। ভয়ে শক্ত করে বুকে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। জিম করা শক্ত বডি,শার্টের প্রথম তিনটে বোতাম খোলা। নীলের উন্মুক্ত বুকে ছোয়া লাগে ইনায়ার হাতের। বুকের ধুকধুকানি ইনায়া অনুভব করছে। হঠাৎ ইনায়ার হার্টবিট বেড়ে যায়। শুকনো ঢোক গিলল সে।
নীল ইনায়ার হাত সরিয়ে বলতে থাকে,
-এই ব্রেকেই এই অবস্থা! বেশি দূরেই হাত চলে এসেছিল তোর । তার থেকে বরং কাঁধেই হাত রাখ। এতো মাখামাখি ভালো লাগে না।
নীলের বলা কথা ইনায়ার কাছে বাম্পার অফারের মতো লাগে। অপমান আজ মাথায় ঢুকছে না ,মন চাচ্ছে এই অফারটা লুফে নিতে। ঝট করে হাত দিয়ে নীলের কাধ আঁকড়ে ধরে ইনায়া।
(চলবে……)
#Running
#episode:10
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE