Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ৯


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (০৯)

সোফিয়া_সাফা

⚠️ সতর্কবার্তা: এই পর্বে শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক সহিংসতার স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সংবেদনশীল পাঠকদের জন্য এটি অস্বস্তিকর হতে পারে। পাঠের আগে মানসিক প্রস্তুতি নিন।

রাত দেড়টা। অন্ধকার নির্জন রাস্তা, দু’পাশে ঘন গাছের সারি। হালকা কুয়াশা আর শুকনো পাতার গন্ধে চারপাশে এক অচেনা শীতলতা বিরাজমান। উদ্যানের Ducati Diavel V4 বাইকটি গর্জন তুলে সেই নীরবতা কেটে এগোচ্ছিল। হেডলাইটের তীব্র সাদা আলো সামনের পথটুকু আলোকিত করে দিচ্ছিল, বাকিটুকু ডুবে ছিল কালো অন্ধকারে। গাছের ফাঁক গলে চাঁদের ক্ষীণ আলো কখনো রাস্তার ওপর ঝরে পড়ছে, কখনো আবার হারিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে মাঝে মাঝে পাতার সরসর শব্দ, সব মিলিয়ে পরিবেশটা যেন অকারণেই ভীতিকর।
শহরের কাছাকাছি চলে এসেছিল উদ্যান। আর কিছুটা পথ পাড়ি দিলেই নিজের গন্তব্যে পৌঁছে যেত সে। তন্মধ্যেই ফুলের ফোন কল উদ্যানের সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে। উদ্যান কিয়ৎক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে হঠাৎ বাইকটা ঘুরিয়ে নিল, সরাসরি সোলার এস্টেটের পথে। ইঞ্জিনের গর্জন সঙ্গে সঙ্গে আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল, আর গাছের ছায়াগুলো দ্রুত পেছনে সরে যেতে লাগল।
সোলার এস্টেট, ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা একটুকরো প্রাসাদসম। বিশ মিনিটের মাথায় উদ্যানের আগমন ঘটে সোলার এস্টেটে। লিভিং রুমে এসেই সে গর্জে ওঠে,
“ইউ ব্লাডি মিস্টেক, কোথায় তুই? এদিকে আয় কুইক!”

উদ্যানের চিৎকারে বাড়ির সবাই লিভিং রুমে জড়ো হলো। কিন্তু ফুলকে কোথাও দেখা গেল না।
“কি হয়েছে তেহ, বাড়িঘর মাথায় তুলছিস কেন?”

অনির প্রশ্নে উদ্যানের মাথা আরও গরম হয়ে গেল,
“অতিরিক্ত সাহস দেখাতে আসিস না। নিজেদের স্থান ভুলে যাসনা। হারামির বাচ্চা টা কোথায়? ওকে বের হতে বল।”

উদ্যানের লালাভ চেহারা দেখে প্রত্যেকের শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। উদ্যান একমুহূর্তে অপেক্ষা না করে ফুলকে খুঁজতে লাগল। খোঁজার সময় সামনে যা কিছু পাচ্ছিল সবকিছু আছাড় মে*রে গুড়িয়ে দিচ্ছিল। রুমা আর নাদিয়া ভয়ের চোটে এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে।
“মাস্টার কিন্তু অনেক রেগে আছে,”

রুমার কথায় তাল মেলায় নাদিয়া,
“হ্যাঁ, আমাদের উচিৎ ফুলকে তার হাতে তুলে দেয়া নয়তো মাস্টার কিন্তু সর্বপ্রথম আমাদের উপরেই অ্যাটাক করবে।”

হলোও তাই উদ্যান ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগল রুমা আর নাদিয়ার দিকে। হাতের কাছে কিছু না পেয়ে লুহানকে অর্ডার করল,
“লোবো, গেট দ্য রড। কুইক।”

‘লোবো’ সম্মোধনটা যেন লুহানের উপর ম্যাজিকের মতো কাজ করল। সে সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা সামান্য নিচু করে উল্টো দিকে চলে গেল। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা শক্তপোক্ত দেখতে লাঠি এনে উদ্যানের হাতে দিল। লাঠিটা হাতে নিয়ে উদ্যান ঘাড় কাত করে রুমা আর নাদিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“বাস্টার্ড টাকে বের করে আন। নইলে তোদের দুটোকে পানিশ্ট করবো।”

রুমা আর নাদিয়া আঁড়চোখে একবার সোহমের দিকে তাকাল। তাদের এই সুক্ষ্ম অভিব্যক্তি উদ্যানের নজর এড়ালো না। উদ্যান এবার পাশ ফিরে সোহমের উদ্দেশ্যে আওড়ায়,
“সল, ব্রিং দ্যাট বিটচ হিয়ার।”

সাথে সাথেই সোহম মাথা নিচু করে নিল। উদ্যানের কমান্ড এড়ানোর কথা চিন্তা করাও অপরাধ। সোহম রোবটের মতো পা বাড়ালো গার্ডেনের দিকে। সে চলে যেতেই বাকি সবাই বুঝতে পারল আজ একটা অঘটন ঘটবেই। ১ মিনিটের মাথায় সোহম ফুলকে নিয়ে লিভিং রুমে হাজির হলো। ফুল তো সোহমের হাত থেকে ছোটার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সোহম শক্তহাতে ফুলের বাহু চেপে ধরে রেখেছে। ফুল একবার মুখ তুলে সোহমের দিকে তাকায়। সোহমের নির্জীব মুখটা দেখে ফুলের হৃদয় ছলকে উঠল। এই অবস্থায় সোহমকে যন্ত্রচালিত রোবট বলেই মনে হচ্ছে। ফুল তার থেকে চোখ সরিয়ে উদ্যানের দিকে তাকাতেই দেখল উদ্যান ধীরপায়ে তার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ফুল সোহমের পেছনে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করল। তন্মধ্যেই উদ্যান খপ করে তার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিল।
“ইউ ব্লাডি মিস্টেক, এই বাড়িতে এসেছিস একদিনও হয়নি তার মধ্যেই তুই আমাকে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলতে বাধ্য করেছিস। তোর জন্য আমাকে গন্তব্য চেইঞ্জ করে পুনরায় ফিরে আসতে হয়েছে।”

কথাটা বলে বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করলো না উদ্যান। এক ঝটকায় ফুলকে কাঁধে তুলে নিয়ে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়াল। ফুল তো নিজের সর্বশক্তি দিয়ে উদ্যানের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তার সমস্ত চেষ্টাই বৃথা বলে গন্য হচ্ছে। শুধু ছোটার চেষ্টাই করছেনা সে, নানা ভাবে আকুতি মিনতিও করছে,
“আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর করবো না। দোহাই লাগে আপনার।”

লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকে শুধু নির্লিপ্ত চোখে তাদের চলে যাওয়া দেখল।
উদ্যান ফুলকে রুমে এনে সোজা ফ্লোরে ছুড়ে মারল। ফ্লোরে কার্পেট বিছানো থাকায় মারাত্মক আঘাত পায়নি ফুল। উদ্যান একহাতে দরজা বন্ধ করে আরেক হাতে থাকা লাঠিটার অগ্রভাগ দিয়ে ফুলের থুতনি উঁচু করল।
“তোর কোথায় সমস্যা হচ্ছে বল আমাকে। হোয়াট প্রবলেম মেইড ইউ নিড ইওর পু* ফর আ সলিউশন?”

উদ্যানের এহেন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ফুল। কথাটা যেন তার লোমকূপে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে খেই হারাল ফুল একহাতে লাঠিটা মুঠ করে ধরে রুক্ষ কন্ঠে জবাব দিল,
“মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার তেহজিব খানাজাদা। আই অ্যাম নট দ্যাট কাইন্ড অফ গার্ল।”

ঝাড়া মেরে লাঠিটা দূরে ফেলে দিল উদ্যান। ফুল চমকিত নয়নে সেইদিকে তাকাতেই দ্বিগুণ ক্ষিপ্রতা সহিত ফুলের গাল চেপে ধরল উদ্যান। তার খসখসে হাতের শক্ত চাপে ফুলের গাল খসে পড়ার উপক্রম।
“তুই কোন ধরনের মেয়ে তা জানতে ইন্টারেস্টেড নই আমি। শুধু বল কোন দুঃখে তুই আবেশকে কল দিয়েছিলি।”

ফুল দুহাত দ্বারা উদ্যানের হাত সরানোর প্রয়াস করতে লাগল। উদ্যান আরেক হাতে তার দুহাত চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
“ও তোকে দুবার জান বলে ডেকেছে। সেই ডাক শুনে তুই খুব স্যাটিসফাই হয়েছিস তাইনা? ও তোকে কিস ও করেছে। কোথায় কিস করেছে?”

উদ্যান ফুলের গাল থেকে হাত সরিয়ে নিল। ফুল অশ্রুসিক্ত নয়নে উদ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। গালের চামড়া ছিলে গিয়ে ইতোমধ্যেই রক্ত বের হচ্ছে। ব্যাথায় টনটন করছে, কিন্তু উদ্যানের হিংস্রতা যেন কমার বদলে বেড়েই চলেছে। গায়ে থাকা ডার্ক গ্রিন রঙা শার্টটা ঘামে ভেজা। এসির শীতল তাপমাত্রাও যেন উদ্যানের মাঝে সৃষ্ট দাবানল নেভাতে অক্ষম। কপালের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো কপালের সাথেই লেপ্টে গেছে। চক্ষুদ্বয় দিয়ে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। মুখমণ্ডল পাথরের ন্যায় শক্ত। উদ্যান হঠাৎ করেই ফুলের ডান কানের লতিতে আঙুল ছোয়াল,
“এখানে কিস করেছে?”

উদ্যানের হাস্কিস্বর যেন ফুলের সর্বাঙ্গে কাপণ ধরাল। উদ্যান এবার ফট করেই ফুলের চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে দিল। ফলস্বরূপ খোঁপা করে রাখা চুলগুলো বাধনহারা হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল। ফুলের মুখ নিজের মুখ বরাবর এনে উদ্যান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“কতবার ওর সাথে ইন্টিমেট হয়েছিস?”

ফুল এবার ডুকরে কেঁদে উঠল। কোনো মেয়েই নিজের চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য সহ্য করতে পারেনা।
“আপনি নিজের সেন্সে নেই।”

কান্নার মাঝে শুধু এটুকুই বলতে সক্ষম হল ফুল।
“আমি সেন্সে নেই, একদম সেন্সে নেই। আমি সেন্সলেস হয়ে গেছি। মানুষ জাতি সেন্সলেস হলে অজ্ঞান হয়ে যায় আর আমি সেন্সলেস হলে হিংস্র হয়ে যাই। বিকজ আই অ্যাম আ কোল্ড ব্লাডেড মনস্টার।”

কথাটা বলে উদ্যান উঠে দাঁড়াল। তারপর শার্টের হাতা ভালোভাবে গুটিয়ে নিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা লাঠিটা হাতে তুলে নিল। উদ্যানের মনোভাব বুঝতে পেরে ফুল সশব্দে কেঁদে উঠল। বসে থাকা অবস্থাতেই পিছিয়ে যেতে লাগল। তার প্রতিক্রিয়া দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মনস্টার টা স্বভাবতই জিভের অগ্রভাগ অভ্যন্তরীণ গালের দেয়ালে ঠেকাল।
“কিস খেয়ে খুব সন্তুষ্ট হয়েছিস এবার তোকে পানিশ্টড করে আমি সন্তুষ্ট হবো।”

পিছিয়ে যেতে যেতে ফুলের পিঠ কাভার্ডের সাথে গিয়ে ঠেকল। উদ্যান এখনও আগের গতিতেই তার দিকে এগিয়ে আসছে। দিশাবিশা হারিয়ে ফুল উদ্যানের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ল,
“আমাকে মা*রবেন না। ছেড়ে দিন আমাকে।”

আচমকা ফুলের এহেন কান্ডে উদ্যান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল বোধহয়। ফুল দুহাত দিয়ে উদ্যানের বাম পা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কিছুসময় পেরিয়ে গেল তারপর হঠাৎ করেই উদ্যান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ফুলকে,
“তোর জন্য এটা জাহান্নাম। তো জাহান্নামে তুই ক্ষমা পাবি বলে আশা করিস কিভাবে? তার চেয়ে বরং তুই তোর আবেশ ভাইকে ডেকে বল তোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে।”

পরিধেয় কামিজের একপাশ খামচে ধরে ফুল চোখ বন্ধ করল। সাথে সাথেই পুরো রুম জুড়ে ঠাস ঠাস শব্দ ছড়িয়ে পড়ল। উদ্যানের করা প্রত্যেকটা আঘাত শরীর ভেদ করে রূহ অবধি পৌঁছে যাচ্ছে। একপর্যায়ে কাপড় ছিড়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। আঘাতের উপর আঘাত যেন ফুলের শরীর অবশ করে দিচ্ছে। পুরো শরীর ঝিমঝিম করছে। এতগুলো আঘাত করার পরেও উদ্যান শান্ত হতে পারছেনা। সন্তুষ্ট হতে পারছেনা। ফুলের অবস্থা খারাপ হয়ে আসলে উদ্যানের হাত থেমে যায়। বুঝতে পারে ফুল আর সহ্য করতে পারবেনা। সেই লোভী কৃষকের মতো একেবারে তৃপ্ত হতে গিয়ে সে ফুলকে জানে মে*রে ফেলতে পারবেনা।
উদ্যান থেমে গেলে ফুল নিভু নিভু চোখে তার দিকে তাকায়। শরীরের শক্তি হারিয়ে বহুক্ষণ আগেই কাভার্ডের উপর ঢলে পড়েছে ফুল। উদ্যান নিজেও এবার ফুলের সামনে বসে পড়ল। ফুলের রক্তাক্ত বাহুদ্বয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল উদ্যান। মনের ভেতর তীব্র অশান্তি হচ্ছে, আশ্চর্য! ফুলকে এতোগুলো আঘাত করার পরেও কেন উদ্যান সন্তুষ্ট হতে পারছে না? কেন এখনও পাগল পাগল লাগছে নিজেকে?
“তোর কষ্ট হচ্ছে?”

ঘৃনায় শরীর রিরি করে উঠল ফুলের। ইচ্ছা করছে একদলা থুতু ছুড়ে মা*রতে। তবে শক্তিতে কুলাচ্ছে না, তার উপর ঠোঁট থেকে গলা অবধি শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। উদ্যান একদম চট করেই ফুলের ঘাড় চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিল। মৃদু কন্ঠে বলল,
“তোর কর্মকান্ড আমাকে মাত্রাতিরিক্ত হিংস্র করে তুলেছে। এতো আঘাত করেও শান্ত হতে পারছিনা। আই থিংক তুই পর্যাপ্ত কষ্ট অনুভব করিস নি। এর কারণ কি বুঝতে পারছি না। আবেশের জান ডাক আর কিসটা তোকে এতোটাই প্রভাবিত করেছে যে তুই কম কষ্ট অনুভব করছিস? তোর কি আবেশের দেয়া সুখগুলোর কথা মনে পড়ে গেছে? সেসবের প্রভাবেই কি তুই এখন আর আমার দেয়া আঘাতে কষ্ট পাচ্ছিস না?”

ফুল অনুভূতি শূন্য চোখে তাকিয়ে রইল উদ্যানের দিকে। তার এই চাহনি যেন উদ্যানকে আরও হিংস্র করে তুলল। সে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বিরাট মাপের অঘটন ঘটিয়ে ফেলল। ফুলের বাম কানের লতিতে নিজের শুষ্ক অধরদ্বয় চেপে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় ফুলের পুরো শরীর শিউরে উঠল। অনুভূতিহীন চোখজোড়ায় একরাশ বিস্ময় নেমে এলো। অন্যদিকে যেই মুহুর্তে উদ্যানের ঠোঁট ফুলের ত্বক স্পর্শ করল ঠিক সেই মুহুর্তে উদ্যানের কানে অদ্ভুত এক স্পন্দন ভেসে এলো। কয়েক মুহুর্তের ব্যাবধানে সে যেন চলে গেলো অন্য এক জগতে। তার সেই বিচরণে বিঘ্ন ঘটিয়ে তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রয়াসে ধাক্কা দিলো ফুল। কিছুক্ষণের জন্য যেন উদ্যান বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলল, ফুলের নাজুক ধাক্কাতেও সে বেশ অনেকটা দূরে ছিটকে পড়ল।
এদিকে উদ্যানের ঠোঁটের স্পর্শে ফুলের শরীর বিষিয়ে উঠল। অজানা উন্মাদনায় ওড়না দিয়ে নিজের কান ঘষতে শুরু করল। এতোক্ষণ সব কষ্ট সহ্য করে নিলেও এবার আর সহ্য করতে পারলো না ফুল, বুকভাঙা কষ্টে গগনবিদারী আর্তনাদে ফেটে পড়ল,
“এভাবে আমাকে নোংরা করলেন কেন? এরচেয়ে আমাকে আরও একশোবার আঘাত করতেন আমি মুখ বুজে সহ্য করে নিতাম। কিন্তু এটা ক…কি করলেন?”

ফুল একপ্রকার হামাগুড়ি দিয়ে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গেল। তারপর বহু কষ্টে শরীর টাকে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এদিকে উদ্যান এখনও ঘোরের মধ্যে আছে। অদ্ভুত ভাবে এখন নিজেকে স্বাভাবিক লাগছে। যাক এবার গিয়ে স্যাটিসফাইড হতে পেরেছে। উদ্যান ঘাড় বাকিয়ে দরজার দিকে তাকাল, তারপর বিড়বিড় করে বলল,
“আমার ছোঁয়াতে তুই এতোটা অসন্তুষ্ট হোস জানলে আরও আগেই ছুয়ে দিতাম তোকে। বিকজ তোর অসন্তুষ্টিই যে আমাকে সন্তুষ্ট করে।”

উদ্যান এবার ফ্লোরে পড়ে থাকা রক্তের ফোঁটা গুলোর দিকে তাকাল,
“আহ এতো স্যাটিসফাইড এই জন্মে হই নি। কিন্তু ওই শব্দতরঙ্গ কোথা থেকে ভেসে এসেছিল? স্ট্রেইজ!”

ত্রস্ত পায়ে ফুলকে নামতে দেখে লিভিং রুমে থাকা উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকাল। যদিও লিভিং রুমে শুধু সোহম, লুহান, রুমা আর নাদিয়াই আছে। বাকিরা কিছুক্ষণ আগেই ঘুমাতে চলে গেছে।
“ওয়াশরুম কোনদিকে?”

ফুলের প্রশ্নে সবার ভাবনায় ছেদ পড়ল। সোহম এগিয়ে গিয়ে বলল,
“তোমার ওয়াশরুম নয় ডক্টর কোনদিকে আছে সেটা জিজ্ঞেস করা উচিৎ।”

ফুল রাগান্বিত চোখে তাকাতেই সোহম ম্লান হেসে বলল,
“মনস্টার টা শুধু তোমার নয় আমাদের সবার মাস্টার। এক টেবিলে বসে খাবার খেলেও পরিশেষে এটাই সত্যি। তাই তার অর্ডার ফলো করতেই হয়। স্যরি তোমাকে তখন হেল্প করতে পারিনি। তবে এখন তোমাকে হেল্প করব। আমি ডাক্তার ডেকে দিচ্ছি। পেইন কিলার খেয়ে নিলে দেখবে সব ব্যাথা ভ্যানিশ হয়ে যাবে।”

ফুল হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, “আমি ব্যাথা না ওই মনস্টার টাকে ভ্যানিশ করতে চাই। সবার আগে ওনার নোংরা ঠোঁট জোড়া ভ্যানিশ করব।”

কান্নার তোড়ে ফুলের কথা কারো বোধগম্য হলোনা। রুমা আর নাদিয়া ফুলকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলো,
“আহারে এভাবে কেউ মা*রে। খুব ব্যাথা করছে তাইনা?”

নাদিয়ার কথায় ফুল চোখ মুছে বলল, “দয়া করে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দেও।”

নাদিয়া বিনাবাক্যে ফুলকে নিজেদের রুমে নিয়ে গেল। ফুলের কাপড়ের ব্যাগ গুলোও রুমা সেখানেই গুছিয়ে রেখেছিল। ফুলকে কাপড় নিতে দেখে নাদিয়ার ভ্রু কুচকে গেল,
“তুমি এই অবস্থায় শাওয়ার নিতে চাইছো?”

ফুল ঠোঁট চেপে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। নাদিয়ার মনে আপনা আপনি আজেবাজে চিন্তা ভাবনা আসতে শুরু করল। উদ্যানের রুম থেকে এসেই ফুল কেন শাওয়ার নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে? নিজের চিন্তায় নিজেই ভড়কে গেল নাদিয়া।
“ছিহ এসব আমি কি চিন্তা করে ফেললাম।”

নাদিয়ার এহেন কথা শুনে ফুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই নাদিয়া জোরপূর্বক হেসে বলল,
“বলছিলাম কি ক্ষতস্থানে পানি লাগলে জ্বলবে। এই অবস্থায় শাওয়ার নেওয়ার কি দরকার?”

কান্নারা দলা পাকিয়ে ফুলের কন্ঠরোধ করে ফেলল। সে জানেনা কেন কিন্তু প্রচন্ড পরিমাণে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ হৃৎপিণ্ড টাকে চেপে ধরে রেখেছে। কেন এতো কষ্ট হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছেনা। উদ্যানের ঠোঁটের স্পর্শে কি জেহের ছিল? সেই জেহের কি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে? সে কি ম*রে যাবে? ফুলের ঠোঁটজোড়া নিজে থেকেই ফাঁক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ যেতেই সে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে লাগল। ফুলের অবস্থা বেগতিক দেখে নাদিয়া গলা ফাটিয়ে ডেকে ওঠে,
“সোহম স্যার…

চলবে,,,

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply