Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ৭


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (০৭)

সোফিয়া_সাফা

ফুল চা বানাচ্ছে আর ভাবছে এটা সে কোথায় এসে পড়ল। তার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন বলে ওঠে,
“আজকের ডিনারের মেন্যু নোট করো?”

আচানক মেয়েলি কন্ঠ শুনে ফুল কিছুটা ভড়কে গেল। চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাতেই মেয়েটি বিস্মিত চোখে ফুলের দিকে তাকায়,
“এই মেয়ে, কে তুমি?”

ফুল নরম গলায় বলল,
“আমার নাম ফুল।”
“Fool?”

ফুল কিছুটা তেঁতে উঠল। এই বাড়ির মানুষগুলো এরকম কেন! আর এদের সাথে উদ্যানের সম্পর্কটাই বা কি?
“No, my name is Phool. Phool means flower, not fool.”

সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কিছুক্ষণ ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
“হোয়াটএভার! তোমাকে নতুন রাখা হয়েছে? কে রেখেছে তোমাকে? আমাকে কেন বলল না?”

ফুল মেয়েটির থেকে চোখ সরিয়ে কাজে মন দিল। চা নিয়ে যেতে দেরি হলে মনস্টার টা আবার অ্যাটাক করবে। এদিকে ফুলের থেকে উত্তর না পেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি চটে গেল,
“হাউ ডেয়ার ইউ? আমার কথা এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পেলে কোথায়?”

মেয়েটির ধমকে ফুল কেঁপে উঠল। সব কাজ রেখে মেয়েটির দিকে মনোযোগ দিল,
“আ’ম স্যরি। আসলে চা নিয়ে যেতে দেরি হলে মাস্টার আমাকে পানিশ্ট করবেন।”
“মাস্টার? কে তোমার মাস্টার?”

ফুল একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“উদ্যান মাস্টার।”

মেয়েটির চোখ বড়বড় হয়ে গেল,
“উদ্যান কে? এই এক মিনিট তুমি তেহুর কথা বলছো?”
“হ্যাঁ তার কথাই বলছি। সে-ই আমাকে এখানে এনেছেন।”
“আনবিলিভাবল। যাই হোক তোমাকে কিসের জন্য এনেছে?”

তাদের কথার মাঝেই ড্রইংরুমে থাকা একজন যুবক কিচেনের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল,
“আই থিংক স্পেশাল কেউ হিসেবে এনেছে।”

মেয়েটির চোখমুখে ফুটে ওঠা বিস্ময় আরও বিস্তর হল। এদিকে ফুলের চা বানানো কমপ্লিট। মেয়েটি ফুলের দিকে তাকিয়ে এবার হাসিমুখে বলল,
“যেহেতু তুমি এখন থেকে এখানেই কাজ করবে সেহেতু পরিচিত হয়ে নেই। আমার নাম অনিলা। তোমার অনি স্যারের ওয়াইফ।”

অনি নামটা শুনে ফুল অবাক চোখে তাকায়। তাকে অবাক হতে দেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি বলে ওঠে।
“তখন ড্রইংরুমে যেই দুজন বসে ছিল তাদের মধ্যে একজন লুহান আর আরেকজন অনি ছিল। আর আমি হচ্ছি সোহম।”

ফুল এবার সরু চোখে তাদের দুজনের দিকে তাকাল। অনিলা নামের মেয়েটির গায়ের রঙ শ্যামলা। চেহারার গঠন দেখে বাঙালি বলে মনে হচ্ছেনা। চুলগুলো একটু কোকড়া আর বাদামী রঙের। পরণে ব্রাউন রঙা কার্ডিগান আর ব্লু রঙা জিন্স। সোহম নামের ছেলেটিকে বাঙালি মনে হচ্ছে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। পরণে হলুদ টি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। ফুল জোরপূর্বক হেসে বলল,
“মাস্টারের রুমটা কোনদিকে?”

সোহম অনিলার উদ্দেশ্যে বলল,
“আমি ওকে তেহুর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেফকে ডিনারের মেন্যু বুঝিয়ে দিও। আর হ্যাঁ সবার জন্য পপকর্ণ আর কফি বানাতে বোলো। আজকে কিন্তু সবাই মিলে মুভি দেখব।”
“আচ্ছা।”

সোহম এবার ফুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“তো মিস বিউটিফুল যাওয়া যাক?”

‘বিউটিফুল’ নামটা শুনে ফুল থতমত খেয়ে গেল। তবুও বিনাবাক্যে সোহমকে অনুসরণ করতে লাগল। সিঁড়িবেয়ে দোতলায় আসতেই ফুলের চোখজুড়ে বিস্ময় নেমে এলো। পুরো দোতলা টা যেন একটা গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে। এতো বড় হলওয়ে সে আগে দেখেনি। খানজাদা নিবাসের চেয়ে কয়েকগুণ বড় হলওয়ে। তাকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে সোহম ডেকে উঠল,
“হারিয়ে যেওনা, কেয়ারফুল।”

ফুল হাতে থাকা ট্রে টি শক্ত করে চেপে ধরল। এই সোহম যে তাকে টিজ করছে সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। হাটতে হাটতে তারা একটা দরজার সামনে এসে থামল। দরজার পাশে লাগানো কলিংবেলে একবার প্রেস করে সোহম ফুলের উদ্দেশ্যে বলল।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

ফুল গায়ে থাকা ওড়নাটা ঠিকঠাক করে মাথা নিচু করে বলল,
“হ্যাঁ বলুন,”
“তেহ আমার কথা তোমাকে বলেছে?”

এহেন প্রশ্নের অর্থ বুঝে উঠতে পারলোনা ফুল। তার তাকানো দেখে সোহম ঠোঁট কামড়ে হাসল, ফুলের মুখ বরাবর ঝুকে গিয়ে বলল,
“অ্যাকচুয়ালি আমি ওকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা মেয়ে খুঁজে আনতে। সিংগেল লাইফ বোরিং লাগছে।”

সোহম এতো কাছে আসাতে ফুলের শরীর শিরশিরিয়ে উঠল। উপায়ন্তর না পেয়ে দুরত্ব স্বাভাবিক করার প্রয়াসে যতটা সম্ভব পেছনের দিকে বেঁকে গেল ফুল। এরইমাঝে ‘খচ’ শব্দে সামনের দরজাটি খুলে যায়। দরজা খুলে সোহমকে ফুলের এতোটা কাছে দেখে উদ্যান ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে,
“দূরে সর।”

সোহম নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। দুপা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
“তুমি কাজ শেষ করে নিচে এসো কালারফুল। বাকি কথা সেখানে হবে।”

কথাটা বলেই সোহম দ্রুতপায়ে স্থান ত্যাগ করল। সে চলে যেতেই ফুল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু তার এই স্বস্তি দীর্ঘমেয়াদি হলো না। উদ্যান একটানে তাকে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। হঠাৎ এরকম করাতে ট্রে-তে থাকা কাপটা পড়ে যেতে নিল, কিন্তু তার আগেই ফুল উদ্যানের থেকে হাত ছাড়িয়ে সেটাকে সামলে নেয়।
“সোহমের সাথে কি কথা হচ্ছিল?”

উদ্যানের প্রশ্নে ফুল চোখ তুলে উদ্যানের দিকে তাকায়। উদ্যানের গায়ে বাথরোব, কপালের উপরে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ফুলের নজর গিয়ে থামে উদ্যানের বুকের উপর। উন্মুক্ত বুক জুড়ে পানির কণা লেপ্টে আছে। সেসবের মাঝে ফুলের দৃষ্টি আটকে গেল একটি ক্ষতের উপর। ক্ষতটি পুরোপুরি দৃশ্যমান নয়। শুধু আংশিক অংশটুকুই দেখা যাচ্ছে। ফুলের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের বুকের দিকে তাকাল উদ্যান। একহাতে নিজের বাধরোব ঠিকঠাক করে আরেক হাতে ফুলের হাতে থাকা আইসড টি তুলে নেয় উদ্যান। সেটায় একটা চুমুক দিয়ে বলে ওঠে,
“দৃষ্টি সংযত কর। তোর চাহনি বড্ড বিরক্তিকর।”
“পুরো আমিটাই যেখানে বিরক্তিকর সেখানে বিয়ে করতে বাধ্য না করলেই তো পারতেন। কেন আমার জীবনটা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছেন?”

ফুল জানে উদ্যানের সমুখে এই সমস্ত কথা বলাটা দুঃসাহসের মধ্যে পড়ে। তবুও মনের মাঝে কথাগুলো খচখচ করছে। শত বারণ করার পরেও মনটা মাঝে মাঝে সাহসী হয়ে উঠতে চায়।
“এটাই ফার্স্ট আর এটাই লাস্ট। তোকে আমি বিয়ে করেছি এই বাক্যটা দ্বিতীয় বার উচ্চারণ করবিনা। ক্লিয়ার?”

উদ্যানের কথায় ফুল এবার সরাসরি উদ্যানের চোখের দিকে তাকাল,
“যেই বাক্যটা শুনতেও খারাপ লাগে সেই বাক্যটাই কেন বাস্তবায়িত করলেন?”
“কারণ আমি জানি বাক্যটা শুনতে আমার যতটা না খারাপ লাগে তার চেয়ে শতগুণ বেশি তোর খারাপ লাগে। আর তোর এই খারাপ লাগাটাই আমাকে সন্তুষ্ট করে। তোর চোখে আমি আবেশের জন্য ভালোলাগা দেখেছিলাম। আবেশ থাকলে আমার সৃষ্টি করা ক্ষতের উপর মলম লাগিয়ে দেবে। তোকে দেয়া আমার কষ্ট গুলো ভাগাভাগি করে নেবে। তোকে বিয়ে করার মাধ্যমে তোর উপর সর্বোচ্চ অধিকার পাবে, তারপর সেই অধিকারের জেরে আমার থেকে তোকে প্রটেক্ট করবে। এসব আমার অসন্তুষ্টির কারণ। আবেশের জন্য আমি পুরোপুরি স্যাটিসফাই হতে পারছিলাম না। তাই ব্যপারটার ইতি ঘটানো জরুরী ছিল। আর আমি এও জানি তুই আমাকে ঘৃণা করিস, তাই তোকে বিয়ে করেও আমি স্যাটিসফাই হয়েছি।”

কথাগুলো শুনে ফুলের কন্ঠরোধ হয়ে এলো। কান্না গুলো গলার ভেতর দলা পাকিয়ে গেল। চোখজোড়া নোনাজলে ভরে উঠল,
“আমাকে কষ্ট দিয়ে যখন আপনি এতোই স্যাটিসফাই হন তখন আমাকে একেবারে মেরেই ফেলছেন না কেন? এভাবে যন্ত্রণা না দিয়ে একেবারে নাহয় মে*রেই ফেলুন আমায়।”

কিং সাইজ বেডের উপর আয়েসি ভঙ্গিতে বসে গ্লাসে আবারও চুমুক দিল উদ্যান। কিছুক্ষণ পর তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“সেই গরীব কৃষকের গল্প পড়েছিস নিশ্চয়ই, যার কাছে একটা সোনার ডিম পাড়া হাঁস ছিল। কৃষকটা লোভের বশবর্তী হয়ে সবগুলো ডিম একেবারে পাওয়ার আশায় হাঁসটার পেট চিরে ফেলেছিল। তো তারপর কি হয়েছিল, সে কি সবগুলো ডিম একেবারে পেয়েছিল? পায়নি। তোকে মে*রে ফেলে আমি হয়তো উচ্চ লেভেলের শান্তি পাবো কিন্তু সেই শান্তিটা হবে স্বল্পস্থায়ী। তারপর? তারপর আমি স্যাটিসফাই হবো কিভাবে?”

কথাগুলো শুনে ফুল ঠোঁট চেপে কেঁদে ওঠে। তার চোখে পানি দেখে উদ্যান ঘাড় কাত করে বলে উঠল,
“তোর অশ্রুসজল চোখজোড়া আমাকে বিশ্রী ভাবে সন্তুষ্ট করে। আরও তীব্রভাবে কাঁদ।”

উদ্যানের বরফ গলা কন্ঠস্বর ফুলের শরীরে কাপন ধরিয়ে দিল। উদ্যান তাকে কষ্ট দিয়ে এতোটা আনন্দ পায় ভাবতেই বিতৃষ্ণা লাগছে। সে আনমনেই ডান পাশে তাকায়। উদ্যানের রুমটা আকারে বিশাল। ডান পাশের পুরোটা দেয়াল কাঁচের তৈরি। রাতের আঁধারেও আবছা আবছা বাইরেটা দেখা যাচ্ছে। বাইরের অংশটা হয়তো বাগানে ঘেরা। গাছপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে চাঁদের আলো ঢলে পড়েছে রুমের সাথে লাগোয়া সুবিশাল ব্যালকনি লাউঞ্জের ফ্লোরে। ফুল ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করল উদ্যানের রুমটা আর পাঁচটা সাধারণ রুমের মতো নয়। রুমটা যেন আস্ত একটা রাজ্য, হ্যাঁ রাজ্য বলাটা বাড়াবাড়ি হবেনা। রুমটার ভেতরে সে আরও কয়েকটা রুম লক্ষ্য করেছে। আপাতত এখানে দাঁড়িয়ে কোন রুমের ভেতরে কি আছে তা অনুমান করা দুষ্কর।
“যা এখান থেকে।”

ফুল ভাবনার জগতে ডুবে ছিল, উদ্যানের ঝাঝালো কন্ঠ সেই ভাবনায় ধস নামাল। ফুল কম্পিত হস্তে উদ্যানের রেখে দেওয়া গ্লাসটি হাতে তুলে নিল। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যেতেই উদ্যান পেছন থেকে বলে ওঠে,
“ডিনারে আমার জন্য রাইস উইথ পালং-পনির আর বাটার গারলিক চিকেন রান্না করবি। অল্রেডি রাত সাড়ে ৯ টা বাজে। আমি ১১ টা নাগাদ ডিনার করবো।”

ফুল হকচকিয়ে উদ্যানের দিকে তাকায়। মিনমিনিয়ে বলে,
“আমি তো এসব…
“রান্না করতে পারিসনা?”

ফুল নাবোধক মাথা নাড়ল। উদ্যান বিরক্তিতে গজগজ করে উঠল,
“তাহলে কি পারিস তুই? শেফের কাছ থেকে আজকের মধ্যে সব রান্না শিখে নিবি।”
“একদিনে কিভাবে সম্ভব?”

কথাটা শুনে উদ্যান অগ্নিদৃষ্টিতে ফুলের দিকে তাকাতেই ফুল একটা শুকনো ঢোক গিলল,
“আমি সব শিখে নেবো মাস্টার।”
“গেট আউট।”

উদ্যানের ধমকে ফুল দ্রুতপায়ে রুম ত্যাগ করল।
সিঁড়িবেয়ে নিচে আসতেই ফুল লিভিংরুমে সবাইকে বসে থাকতে দেখল। তাদের মাঝে মেলোও ছিল। ফুল এখনও বুঝে উঠতেই পারছেনা যে এরা আসলে কারা। আর কেনোই বা উদ্যানের সাথে এই বাড়িতে আছে। ফুলকে নেমে আসতে দেখে সোহম এগিয়ে এলো,
“এইযে জয়ফুল। তোমার আশাতেই বসে ছিলাম। চলো আমাদের সাথে একসাথে মুভি দেখব। খুব মজা হবে।”

ফুল বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করে কড়া ভাষায় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। একে তো সোহমের সাথে উদ্যানের সম্পর্ক সম্পর্কে তার ধারণা নেই। তার উপর সোহম পুরুষ মানুষ। যেখানে এই বাড়িতে তার আপন বলতে কেউ নেই। সেখানে সোহমকে প্রথম দিনই কড়া কথা শুনিয়ে শত্রু বানিয়ে ফেলাটা ঠিক হবেনা।
“ফুল তুমি এখানে কি করছো?”

মেলোর প্রশ্নে ফুল তার দিকে তাকাল। মেলোর পরণে লেডিস্ শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। লাইটের সাদা আলোয় মেলোকে অতিরিক্ত ফর্সা দেখাচ্ছে। একদম ভূতের মতো। আজগুবি চিন্তাগুলো সাইডে সরিয়ে ফুল বলল,
“জি আপু। আপনাদের তেহ আমাকে জোর করে তুলে এনেছে।”

ফুলের উক্ত কথাটি শুনে উপস্থিত সবাই চমকে গেল। লুহান বসা থেকে উঠে ফুলের দিকে এগিয়ে গেলো,
“জোর করে এনেছে মানে? তোমার সাথে তেহুর সম্পর্ক আছে? আর থাকলেই বা তোমাকে জোর করে তুলে আনবে কেন?”

ফুল আরও কিছু বলতেই যাবে তার আগেই উদ্যানের কন্ঠ ভেসে আসে।
“এই মেয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছিস কেন? ডিনার রেডি কর গিয়ে।”

উদ্যানের কন্ঠ অনুসরণ করে সবাই দোতলার দিকে তাকায়। ফুল তো উদ্যানকে দেখে একছুটে কিচেনের দিকে চলে যায়। উদ্যান স্বাভাবিক গতিতে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে এসে দাঁড়াতেই অনি প্রশ্ন ছুড়লো,
“হচ্ছেটা কি? মেয়েটা কে? মেলোর কথা শুনে বুঝতে পারলাম তোর আর মেয়েটার মাঝে সম্পর্ক আছে। কি সেই সম্পর্ক?”

উদ্যান দায়সারা ভাবে সোফায় গা এলিয়ে দিল,
“সম্পর্ক নয় অসম্পর্ক। ওর সাথে আমার অসম্পর্ক আছে। আর সেই অসম্পর্কের নাম শত্রুতা। আমি ওর শত্রু আর ও আমার হাতের পুতুল।”

মেলো বাদে সবাই বেকুবের মতো উদ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“এসব কি কমপ্লিকেটেড কথাবার্তা?”

লুহানের কথার পিঠে মেলো কিছু বলতেই যাবে তার আগেই সোহম বলে উঠল,
“আরে তেহ মজা করছে। আসলে ও মেয়েটাকে আমার জন্য এনেছে তাইনা রে?”

অনি চোখ বড়বড় করে সোহমের দিকে তাকাতেই সোহম লাজুক হেসে বলল,
“তোদের মনে নেই সেদিন আমি তেহুকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা মেয়ে এনে দিতে। ও তো সেই জন্যই পিসফুলকে এনেছে।”

সোহমের কথা শুনে অনিলা আর অনি মিটিমিটি হাসলেও মেলো গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“তুই তোর ফুপাতো বোনকে এখানে কেন এনেছিস তেহ?”

মেলোর প্রশ্নে বিস্ময়ে সবার মুখ হা হয়ে যায়। লুহান বিড়বিড় করে বলে ওঠে,
“ফুপাতো বোন? মেয়েটা তোর ফুপাতো বোন হয়?”

উদ্যান বিরক্তিতে নিজের ঘাড় চেপে ধরে শক্ত গলায় বলে উঠল,
“ইয়েস, মেয়েটা আঠারো বছর যাবত আমার টাকায় বিলাসবহুল লাইফ লিড করেছে তাই সেসবের ফি হিসেবে আগামী আঠারো বছর আমি ওকে নিজের মেইড করে রাখবো বলে ডিসাইড করেছি।”

মেলো পাল্টা প্রশ্ন করল,
“শুধু ওকেই কেন তেহ? আমি লক্ষ্য করেছি তুই অকারণেই মেয়েটার সাথে বাজে বিহেভ করিস। কেন করিস?”
“বিকজ ওর সাথে আমার পার্সোনাল শত্রুতা আছে।”

লুহান আরও কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে উদ্যান বলে ওঠে,
“দ্যাটস ইট! আর একটা প্রশ্নের এন্সারও দেবোনা।”

উদ্যানের কথায় সবাই একদম চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর সোহম বলে উঠল,
“মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে তেহ। আমি তোর জন্য আরও ভালো কোনো মেইডের ব্যবস্থা করে দেবো। একদম হান্ড্রেডে হান্ড্রেড হবে। তুই তোর কাজিনকে আমায় দিয়ে দে।”

সোহম অনেক আশা নিয়েই আবদার টা করেছিল। কিন্তু উদ্যান একবাক্যেই না করে দিল,
“তুই আমার শত্রুকে চাইছিস সোহম। আর ইউ সিরিয়াস? আমার শত্রুকে চাওয়া মানে আমার শত্রুর লিস্টে নাম লেখানো। আশা করি তুই উত্তরটা পেয়ে গেছিস।”

সোহম আশাহত হল। তবে এই নিয়ে উদ্যানের সাথে মন কষাকষি করবেনা সে।
“রিদমের কি খবর? কাজটা সম্পূর্ণ করতে পেরেছে?”

উদ্যানের প্রশ্নে অনি একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“কাজটা কমপ্লিট হয়ে গেছে কিন্তু ও নিজের পার্সোনাল কাজে ইন্ডিয়া গেছে। কবে আসবে ঠিক নেই।”

চলবে,,,

[পরবর্তী পর্ব পেতে লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকুন]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply