Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২৬


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (২৬)

সোফিয়া_সাফা

সকালের আলো এখনো পুরোপুরি ফোটেনি। ফজরের নামাজ আদায় করে ব্যালকনিতে এসে তছবী পাঠ করছেন মাহবুবা সুলতানা। ছেলের শোকে দিনদিন পাথরে পরিনত হচ্ছেন। এই শোক যে লাঘব হওয়ার নয়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন আরও বেড়েই চলেছে। ছেলের কথা মনে পড়তেই গুমরে কেঁদে উঠলেন মাহবুবা সুলতানা। গত কাল থেকেই ছেলের জন্য খুব করে পরাণ পুড়ছে তার। ঝাপসা দৃষ্টে রাস্তার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত শিহরণ জাগানো দৃশ্য নজরে এলো। এক বড়সড় মাইক্রো বাড়ির সামনে থেমেছে। হন্তদন্ত পায়ে ৩-৪ জন লোক মাইক্রো হতে নেমে গাড়ির ডিকি থেকে কি যেন একটা টেনেহিঁচড়ে বের করছে। লোকগুলোর চালচলন সন্দেহভাজন ঠেকছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন মাহবুবা সুলতানা। চোখের চশমা ঠিক করে, বোঝার চেষ্টা করলেন কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। তবুও অজানা আশঙ্কায় কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই লোকগুলোর মধ্যে একজন সরাসরি তাকায় মাহবুবা সুলতানার দিকে। তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাতের ইশারায় বাকি লোকদের কিছু বলে, ঝড়ের গতিতে মাইক্রোতে উঠে বসে; দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায়।
নিজ স্থানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না মাহবুবা সুলতানা, ব্যপারটা ভালোভাবে খতিয়ে না দেখা পর্যন্ত শান্তি মিলবে না। উল্টো দিকে ঘুরে ত্রস্ত পায়ে নিচে নামতে শুরু করলেন। পথিমধ্যে দেখা হয় রেহানা বেগমের সাথে,
“এতো ব্যস্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছো ভাবী?”

মুখে কিছু বলতে পারলেন না মাহবুবা সুলতানা। শুধু হাত দিয়ে মেইন দরজার দিকে ইশারা করে সেই দিকে ছুটতে লাগলেন। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে সেইদিকে টানছে। তাকে এভাবে যেতে দেখে রেহানা বেগমও পিছু নিলেন।

(সোলার এস্টেট)

“ফুল… এই ফুল।” কারো অনবরত ডাকে চেতনা ফিরে পেল ফুল। পিটপিট চোখে চেয়ে দেখল সামনেই বসে আছে রুমা। তাকে দেখে ফুলের হুশ উড়ে গেল। বুঝতে পারল সে আবারও সেই গোলকধাঁধায় ফিরে এসেছে যেই গোলকধাঁধার প্রাচীর টপকে পালিয়ে গিয়েছিল সে। ব্যপারটা উপলব্ধি করে ফুলের অন্তরজ্বালা শুরু হলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে বসতেই প্রত্যেকটা শিরা উপশিরা ব্যথায় টনটন করে ওঠে। ডানহাতে বাম বাহু চেপে অশ্রুসিক্ত নয়নে আশেপাশে তাকিয়ে চিল্লিয়ে উঠল,
“আমাকে এখানে এনেছিস কেন? যেতে দে আমাকে। কি করেছিস আবেশ ভাইয়ের সাথে? মেরে ফেলেছিস?”

তাকে উত্তেজিত হয়ে পড়তে দেখে রুমা সামলানোর চেষ্টা করতে লাগল,
“কুল ডাউন ফুল। শান্ত হও।”

শান্ত হতে পারলো না ফুল। রুমাকে সরিয়ে দিয়ে দরজা পর্যন্ত দৌড়ে আসতেই শক্তপোক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেল। চোখ তুলে উদ্যানকে দেখে দ্বিগুণ ক্ষিপ্রতায় উদ্যানের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
“আমি তোকে ছাড়বো না, তুই একটা দানব। কি চাস আমার কাছে? আমাকে শেষ না করে তুই শান্তি পাবিনা? শেষ করে ফেল আমাকে।”

প্রচন্ড ক্ষোভে ফুলের শরীর থরথর করে কাঁপছে। মুখাবয়ব রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তার অশ্রুসজল হরিণীর ন্যায় চোখের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে উদ্যান। ফুল তো তার বুকে কিল ঘুষি দিচ্ছে আর পাগলের মতো চিৎকার করছে,
“আবেশ ভাইকে মেরে ফেলেছিস? জানোয়ার! তোর ভাই নয় বলেই তুই একজনকে মেরে ফেলবি?”

হঠাৎ করে ফুলের হাত ধরে ফেলল উদ্যান। শান্ত গলায় বলল,
“আমি মারিনি ওকে। বেঁচে আছে, পাগলামি বন্ধ করো।”

রাগে দিশাবিশা হারিয়ে ফেলেছে ফুল। উদ্যানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“কিসের এতো বাহাদুরি তোর? কেন আঘাত করেছিস আবেশ ভাইকে? তোর শত্রুতা তো আমার সাথে ছিল। আমাকে মেরে ফেলে সব শত্রুতা চুকিয়ে দিতি। তা না করে নিরপরাধ আবেশ ভাইকে আঘাত করেছিস কেন? লজ্জা করেনা তোর, বারবার নিজেকে দানব হিসেবে উপস্থাপন করতে?”

ফুলের ফোলাফোলা ভেজা গালের দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ গলায় উদ্যান বলল,
“লজ্জা কেন করবে? সত্যি প্রকাশে লজ্জা তো ভীতুরা পায়। আর আমি ভীতু নই, রইলো আবেশকে মারার কথা; সত্যি বলতে ওকে মারার কোনো প্ল্যান ছিলো না আমার। লাস্ট পর্যায়ে এসে ও এমন কিছু করে বসেছিল যে আমাকে নিজের প্ল্যানের বাইরে গিয়ে ওকে পানিশট করতে হয়েছে।”

কোনো কিছু শোনার বা বোঝার মতো অবস্থাতে ছিল না ফুল। উদ্ভ্রান্তের মতো হাত পা ছুড়ে উদ্যানকে আঘাত করে যাচ্ছিল,
“তুই আমাকে মেরে ফেল। নইলে আমি তোকে মেরে ফেলবো। আমি তোকে সহ্য করতে পারছি না। হয় আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা, নয় আমি নিজেই নিজেকে অন্ধ করে ফেলবো।”

একচিলতে বিরক্তি দেখা দিল উদ্যানের চোখে। বাম হাতে ফুলের দুহাত ধরে, ডান হাত সামান্য উঁচু করতেই একজন ডাক্তার প্রবেশ করলেন। দ্রুত পায়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেডিক্যাল ব্যাগ থেকে একটা ইঞ্জেকশন বের করে রেডি করতে লাগলেন।

“ছেড়ে দে আমাকে। আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার উপর তোর আর কোনো অধিকার নেই।”

কথাটা শুনে ডান হাতে ফুলের ঘাড় চেপে ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে নেয় উদ্যান। মুখ বরাবর ঝুঁকে ফুলের ঠোঁটের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রাগে ফুলের অধর যুগল কাঁপছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে হাড় কাপানো শীতে তুষার আচ্ছাদিত বাগানে ফেলে রাখা হয়েছে। ভ্রু কুচকে গেল উদ্যানের তবুও কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে আওড়াল,
“ডিভোর্স যে কমপ্লিট হয়নি সেটা তুমিও জানো পেটাল। তিনমাস সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তোমার স্বামী তোমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাছাড়াও, ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক স্ত্রীর হাতে তালাক নেওয়ার অধিকার না থাকলে স্বামী তালাক না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রী কোনোভাবেই মুক্ত হতে পারেনা। আমাদের বিয়েটা যেহেতু ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক হয়েছিল সেহেতু আমি তালাক না দেওয়া পর্যন্ত তোমার উপর কেবলমাত্র আমার অধিকার কায়েম থাকবে। উপরন্তু তুমি ছলচাতুরী করে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ রেখে তালাক নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলে। কারণ হিসেবে দেখিয়েছো আমি বিয়ের পর থেকেই তোমাকে নির্যাতন করতাম তারপর কয়েকমাস পর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছি। অথচ বাস্তবে তুমি নিজেই পালিয়ে গিয়েছিলে তাও আবার পরপুরুষের হাত ধরে, নির্যাতন করেছিলাম সেটার সত্যতা থাকলেও তোমার পদ্ধতি ভুল ছিল মাই ডেয়ার ওয়াইফি। সো, ক্যালকুলেশন করলে দেখা যায় সেই ডিভোর্সও কার্যকর হয়নি। পরিশেষে তিনমাস শেষ হওয়ার ঠিক আট মিনিট আগে আমি তোমাকে নিজের বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তোমাকে গ্রহণ করে নিয়েছি। আর কোনো প্রশ্ন?”

উদ্যানের কথাগুলো শুনে ফুল থমকে গেল। অস্ফুটস্বরে বলল,
“আমি কিভাবে তালাক নিয়েছি সেটা আপনি জানলেন কিভাবে?”

কথা বলার মাঝেই উদ্যান আলগোছে ফুলের হাতটা ডাক্তারের দিকে এগিয়ে দিয়ে মোহাচ্ছন্ন গলায় বলল,
“জানিনি তো, আন্দাজ করেছি। অ্যাজ ইওর হাজব্যান্ড তোমাকে পড়তে পারার ক্ষমতা আছে আমার। সবসময় না পারলেও মাঝেমধ্যেই আমি তোমাকে পড়ে ফেলি।”

কি মারাত্মক কথা বলে দিলো উদ্যান। কিন্তু ফুল সেই কথাগুলো পুরোপুরি বিশ্লেষণ করার পূর্বেই ঘুমের মূর্ছনায় উদ্যানের কোলে ঢলে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ উদ্যান সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল, অতঃপর ফুলকে কোলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিল।

“ও কতোক্ষণ ঘুমাবে?” উদ্যানের প্রশ্নে ডাক্তার মাথা নিচু করে বলল,
“উনাকে যেই পেইন কিলার দেওয়া হয়েছে সেটাতে সিডেটিভ প্রভাব আছে, মাস্টার। তার উপর উনি মানসিক চাপে আছেন, রাতের আগে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা নেই।”

উদ্যান মাথা নাড়তেই ডাক্তার নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ডাক্তার চলে যেতেই পুরো রুমে চোখ বুলায় উদ্যান। ঠিক তিন দিন পূর্বে কক্সবাজার যাওয়ার আগে এই পুরো রুমটাকে স্পেশালি ফুলের জন্য সাজিয়ে রেখে গিয়েছিল উদ্যান। ফুলকে জোর করেই আনতে হবে সেই বিষয়ে অবগত ছিল উদ্যান কিন্তু এভাবে সবকিছু ঘেটে ফেলতে সে চায়নি।

“মাস্টার আমি কি চলে যাবো?” রুমার প্রশ্নে তপ্ত শ্বাস ফেলল উদ্যান। বিছানা থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে বলল,
“হুম যা, কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর এসে ওকে দেখে যাবি।”

উদ্যান নিজেও রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।

*** রাত ১০ টা,

টেরেসে থাকা গোলাকৃতি টেবিলের চারপাশে বসে আছে সোলার এস্টেটের সদস্যবৃন্দ। টেবিলের উপর রাখা বিভিন্ন রঙের ড্রিংকস।

“তার মানে কক্সবাজার ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান বউকে ফিরিয়ে আনার জন্যই করেছিলি?” সোহমের প্রশ্নে হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে টেকিলা পূর্ণ গ্লাসে চুমুক দেয় উদ্যান,

“আমি এখনও বিশ্বাস করতেই পারছিনা তুই এভাবে আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিলি।” লুহান বলল,

“না জানিয়ে বিয়ে করেছিস সেটা মানলাম। কিন্তু লুকিয়ে রাখলি কেন?” রিদম প্রশ্ন ছুড়ল।

“লুকিয়ে রেখেছিলাম কোথায়? শুধুমাত্র জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। এটা তেমন বড় কোনো বিষয় ছিলো না।”

আঁড়চোখে তাকাল অনি। ভ্রু কুচকে বলল, “তা এখন জানালি কেন?”

ভাবলেশহীন গলায় উদ্যান বলল, “বিয়েটা বড় কোনো বিষয় ছিলোনা কিন্তু বর্তমানে বিয়েটাই সবচেয়ে বড় বিষয়ে পরিনত হয়েছে। তাই জানিয়ে দিলাম।”

“কিন্তু মেয়েটাকে খুঁজে পেলি কিভাবে?” অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর রিদম জিজ্ঞেস করল,

হাতে থাকা গ্লাসটার তলা দিয়ে টেবিলের উপর দুবার শব্দ করলো উদ্যান। সঙ্গে সঙ্গে একজন সার্ভেন্ট বোতল থেকে গ্লাসে টেকিলা ঢেলে দিল।
“লোক ভাড়া করেছিলাম ওকে খোঁজার জন্য।”

লুহান বলল, “আমাদেরকে বলতে পারতি। সাত দিনে খুঁজে বের করে দিতাম, সাত মাস লাগতো না।”

দু আঙুল দিয়ে কপাল চেপে ধরলো উদ্যান। বিরবির করে বলল,
“আমিই ধীরেসুস্থে খুঁজেছি ওকে। তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে চাইনি।”

“মেয়েটা বলছিল ও নাকি তিনমাস আগেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। এসব কেন বলেছিল? সত্যিই তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়নি তো?” রিদম জানতে চাইলো।

“ওর মাথা ঠিক ছিলো না। অতিরিক্ত ভয়ে পেয়ে উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছে।”

কিছুক্ষণ সবাই মৌনতা পালন করলো। তারপর সোহম বলে উঠল, “মেয়েটা কেমন যেন, স্বামীকে রেখে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিল। চার্লসের ঘটনার পর মেয়েটাকে আমি গ্রেসফুল ভেবেছিলাম।”

পুরোটা সময় নীরব থাকলেও মেলো এবার বলল, “অন্য ছেলে নয় আবেশ ফুলের মামাতো ভাই হয়। তাছাড়া তেহ ওর সাথে যেমন বিহেভ করেছে পালিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো।”

মেলোর কথা শুনে লুহান স্তম্ভিত চোখে তাকায় ওর দিকে। মেলো ফুলের হয়ে কথা বলছে? তাহলে কি সে কোনোভাবে মেলো সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পুষে রেখেছিল এতোদিন? কিন্তু সেটাই বা কিভাবে সম্ভব?

চোখমুখ কুচকে সোহম বলল, “তেহ বলেছে আবেশ নামের ছেলেটা ওর স্টেপ ব্রাদার। হাফ ব্রাদারও নয়। সো ছেলেটার সাথে সিনফুলের রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার কেমন যেন গা গোলাচ্ছে।”

“তোর গা গোলাচ্ছে কেন? বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাস নি তো? ডাক্তার ডেকে চেক-আপ করাবো?” উদ্যানের হটকারিতায় সবাই একসাথে তাকালো তার দিকে। অবশ্য খুব একটা অবাক হয়নি কেউ। উদ্যান প্রায়শই উদ্ভট উদ্ভট কথা বলে ফেলে।

“তেহ প্লিজ, এভাবে মান সম্মান লুটপাট করিস না। আমি বিয়ের পরেও প্রেগন্যান্ট হবো না। আফটার অল আমি পুরুষ।” সোহম অসহায় গলায় বলল,

উদ্যান এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে বলল,
“এরপর থেকে মেয়েটাকে নিয়ে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলবি। মেয়েটা আমার ওয়াইফ, সেটা ভুলে গেলে তোর কপালে দুঃখ আছে। আর রইলো গা গোলানোর বিষয়টা, গা গোলানোর মতো কিছুই করেনি মেয়েটা। ফ্ল্যাটে ওদের রুম আলাদা ছিলো। আর মেয়েটা নিজের ক্যারেক্টার সম্পর্কে বহু আগেই পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। সেই পরীক্ষার রেজাল্ট সবাই দেখেছিলি নিশ্চয়ই?”

উদ্যানের কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করলো। তারা দেখেছে ফ্ল্যাটে ফুল ও আবেশের আলাদা রুম ছিল। তার উপর ফুলের ক্যারেক্টার সম্পর্কে তাদের চেয়ে ভালো আর কেই-বা জানে? যেই মেয়েটা নিজের সম্মান রক্ষার্থে আত্মাহুতি দিতেও দুবার ভাবেনি সেই মেয়েটার ক্যারেক্টার নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতা তাদের মধ্যে কারো আছে কি? যেখানে তাদের নিজেদেরই ক্যারেক্টারের ঠিক নেই।
উদ্যান চলে যেতেই সোহম বলল, “আমি রেসপেক্টফুলের চরিত্র নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করিনি। আমি জানি মেয়েটার চরিত্র কতোটা উন্নত। আমি শুধু ওর আচরণে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আবেশ নামের ছেলেটার জন্য ওর কান্নাকাটি আমাকে হতবাক করে দিয়েছিল। আমি ভেবেই পাচ্ছিনা ও যেচে পড়ে মার খেতে গেলো কেন? যেখানে তেহ ওকে মারতে চাইছিলো না, সেখানে ও ইচ্ছাকৃত মার খেয়েছে। হাউ ড্রেডফুল!”

কথাটা শুনে গ্লাসে থাকা সবটুকু ওয়াইন ঢকঢক করে গিলে ফেলল মেলো। লুহান পুরোটা সময় তার গতিবিধি পরখ করে যাচ্ছে। সোহমের কথার প্রত্যুত্তরে অনি বলে,
“আই থিংক ফুলবানু আবেশ নামের ছেলেটাকে ভালোবাসে। ওর আচরণ দেখে সেটাই মনে হচ্ছিলো।”

অনির কথাটা যেন মুহুর্তেই চারদিক স্তব্ধ করে দিল। সবার মুখাবয়ব বিবর্ণ হয়ে গেল।
“নাহ! আমরা সেটা কিছুতেই হতে দেবো না। বোকাফুল যদি আবেশকে ভালোবেসেও থাকে তবুও সেই ভালোবাসা পরিণাম পাবেনা। ওর জীবন শুধুমাত্র তেহ নামক সুতোয় বাঁধা থাকবে। তেহ ওকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও; সেই স্বীকৃতি রক্ষা জীবনভর ওকেই কর‍তে হবে।”

রিদমের কথায় বাকিদের মুখে অদ্ভুত এক ঔজ্জ্বল্যের প্রতিফলন ঘটল। সবাই যেন তার কথায় সম্মতি জানাচ্ছে,
“কিন্তু আমি এখনও বিশ্বাস করতেই পারছিনা যে আমাদের এলার্জি ওয়ালা মনস্টার বিয়ে করে ফেলেছে। শুধু বিয়ে করেই থামেনি একদম ওয়াইফি ওয়াইফি করে গলা শুকিয়ে ফেলছে।”

লুহানের কথায় বিশেষ পাত্তা দিলো না কেউ। এতোক্ষণ যাবত দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিল মেলো। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর প্রয়াসে ফুলের হয়ে কথাও বলেছে। কিন্তু আর সম্ভব নয় তার দ্বারা, এবার নিজের অনূভুতি আঁকড়ে কিছু সময় একান্তে কাটানো প্রয়োজন। ভাবনা অনুযায়ী উঠে দাঁড়ায় মেলো।
“আমি আজ ডিনার করবো না, তাই অকারণে ডাকবি না। গুড নাইট।”

মেলো চলে গেল। লুহান সন্দিহান চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে অগোচরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা লক করে দিল উদ্যান। তারপর এগিয়ে গেল বাম দিকে থাকা নতুন রুমটার দিকে। দরজার চৌকাঠে পা রাখতেই থেমে যায় সে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও কাঙ্ক্ষিত বস্তু খুঁজে পায় না। রুম থেকে বেরিয়ে এক এক করে সবগুলো রুমে খুঁজতে শুরু করে উদ্যান। মেইন ডোর বাইরে থেকে লক ছিল, যার মানে মেয়েটা এই কক্ষের বাইরে যায়নি। বরং এখানেই লুকিয়ে আছে। উদ্যান এবার নিজের ঘাড় চেপে ধরে ধীরপায়ে ক্লোজেট এর দিকে এগোতে লাগল। উদ্যানের রুমের সাথে লাগোয়া বিশালাকৃতির ওয়াক-ইন ক্লোজেট রয়েছে। ক্লোজেটে ঢুকতেই উদ্যানের মনে হতে লাগল, সে যেই মেয়েটার খোঁজে নেমেছে সে-ই মেয়েটা এখানেই আছে। উদ্যান এবার শিস বাজাতে বাজাতে জুতোর সেলফের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। তন্মধ্যেই পোশাক সেলফের দিক থেকে কোনো কিছু পড়ার আওয়াজ ভেসে আসে। থেমে যায় উদ্যানের পা, ঘাড় বাকিয়ে শব্দ অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। সেখানে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ফুল।

ফুলকে এভাবে বসে থাকতে দেখে উদ্যান একদৃষ্টে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে,
“দ্বিধা ভুলে আসবে তুমি কবে?
ধরবে এ দু’টি হাত, সব অতীত মুছে যাবে
আশা নিয়ে… বেঁচে রবো দিনশেষে
সব সুখেরই ঠিকানা হবে আমাদের ঘরে।”

উদ্যান এবার এক পা দুপা ফুলের উদ্দেশ্যে হাটা ধরল,
“কাটে রাত, যায় দিন
অপেক্ষায়… দরজা খোলা মনের
কোন সাগরে মন ডুবে যায়
তীরের দেখা পাবে কি হৃদয়?
কখনো রোদ তুমি, কখনো জোছনা
তুমি ভালোবাসো; নাকি তুমি ভালোবাসো না?
কখনো বুঝি তোমায়, কখনো বুঝি না
তুমি ভালোবাসো; নাকি তুমি ভালোবাসো না?”

গানটা শুনে রীতিমতো ভড়কে যায় ফুল। বিস্ফোরিত চোখে তাকায় উদ্যানের পানে। ততক্ষণে উদ্যান একদম কাছাকাছি চলে গেছে। তাকে এতোটা কাছে দেখে ফুল পিছিয়ে যেতে চায় কিন্তু শেলফের জন্য পারেনা,
“পেটাল… হোয়াট আর ইউ ডুইং হিয়ার?
আর ইউ ট্রায়িং টু প্লে হাইড অ্যান্ড সিক উইথ মি?”

ভয়ে ভয়ে নাবোধক মাথা নাড়ে ফুল। দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। বুকের ভেতরে থাকা হৃৎপিণ্ড টা যেন বেরিয়ে আসার চেষ্টায় ছটফট করছে।

“তুমি লুকোচুরি খেলতে না চাইলে এখানে এসেছো কেন? আমি তোমার জন্য রুম সাজিয়েছি। তোমার পছন্দ হয়নি?”

উদ্যানের ব্যবহারে হাসফাস করতে লাগলো ফুল। কেন উদ্যান তার সাথে এভাবে কথা বলছে? এই উদ্যানকে তো সে চেনেনা।
“আপনি অপরিচিত সাজার চেষ্টা করবেন না।”

ফুলের ক্ষীণ গলায় বলা কথাটা শুনে নিজের গালে হাত রাখে উদ্যান। ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
“আমি মোটেও অপরিচিত সাজার চেষ্টা করছিনা পেটাল। আমি তোমার স্বামী সাজার চেষ্টা করছি।”

নিজেকে পাগল পাগল লাগছে ফুলের। শরীরের যন্ত্রণা কমে গেলেও মনের অবস্থা নাজেহাল।
“আপনি আমার স্বামী সাজার চেষ্টা কেন করছেন জানতে পারি?”

ফুলের মতো এবার উদ্যানও ফ্লোরে বসে পড়ল,
“অবশ্যই জানতে পারো। অ্যাকচুয়ালি, বত্রিশ বছর বয়সে এসে স্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছি। সেই উপলব্ধি থেকেই স্ত্রীর খোঁজে নেমে পড়েছিলাম।”

উদ্যানের ব্যবহার সহ্য করতে পারল না ফুল। উদ্যানের চোখে চোখ রেখে বলল,
“আপনি আমার সাথে নাটক করছেন? কেন করছেন? এটা কি আপনার নতুন প্ল্যান?”

একমূহুর্তের জন্য উদ্যানের চোখ জ্বলে উঠল। ফুল সেটা লক্ষ করার পূর্বেই উদ্যান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“আমাকে দেখে তোমার অভিনেতা বলে মনে হয়?”

ক্রুর হাসল ফুল, “ঠিক অভিনেতা নয়; আপনাকে দেখে আমার দানব বলে মনে হয়।”
“তোমার মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ আমি আসলেই মনস্টার।”
“আর আপনার ধারনা মনস্টার হওয়া গৌরবের?”
“তা জানিনা। আমি ভেবেচিন্তে মনস্টার হইনি।”

চোখ বন্ধ করে নিল ফুল। শান্ত গলায় আওড়াল,
“আবেশ ভাই কোথায়? কি করেছেন তার সাথে?”

আবেশের নাম শুনে উদ্যানের মুখে বিরক্তি দেখা দিল।
“হঠাৎ ওকে নিয়ে তুমি এতো ভাবছো কেন?”

চোখ খুলে উদ্যানের দিকে তাকায় ফুল। মনের ভেতর এক ফন্দি এঁটে বলে,
“আপনি বুঝতে পারছেন না?”

প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায় উদ্যান। ফুল এবার নাটুকে ভঙ্গিতে বলে,
“আমি ওকে নিয়ে ভাবছি কারণ আমি ওকে ভালোবাসি। এটুকু বোঝার বুদ্ধি নেই আপনার? অবশ্য শুধু বুদ্ধি হীন নন আপনি, কাজকর্ম হীনও বটে। এতোগুলো মাস নইলে আমাকে খোঁজার পেছনে অপচয় করতেন না।”

কথাটা শুনে উদ্যানের চোখে কঠোরতা ধরা দিল। আচমকাই একহাতে ফুলের গাল চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“একদম চালাকি করবে না আমার সাথে। তুমি ভালোবাসো না আবেশকে।”

নির্ভীক গলায় ফুল বলল, “আমি ভালোবাসি ওকে।”

ফুলের গাল ছেড়ে দিয়ে গলা চেপে ধরল উদ্যান। বিক্ষিপ্ত সুরে বলল,
“আর একবার এই মিথ্যা বাক্যটা উচ্চারণ করলে গলা চেপে মেরে ফেলবো। যদি ওকে তুমি সত্যিই ভালোবাসতে তাহলে বিগত মাস গুলোতে আমি সেটা বুঝতে পারতাম।”

বলেই গলা থেকে হাত সরিয়ে নিল উদ্যান। বড়বড় শ্বাস নিয়ে ফুল বলল,
“আপনি কিভাবে বুঝতে পারতেন? আপনি আমার উপর নজর রেখেছিলেন?”

শান্ত চোখে তাকায় উদ্যান। এই মেয়েকে যতটা বোকা ভেবেছিল ততটা বোকা নয়।
“তোমার উপর নজর রাখিনি আমি। অ্যাজ ইওর হাজব্যান্ড, মাঝেমধ্যে তোমার অনুভূতি বুঝতে পারি আমি।”

উদ্যানের এই কথাগুলো আর সহ্য করতে পারছে না ফুল।
“আমি আপনাকে হাজব্যান্ড হিসেবে মানি না, আর মানবোও না কোনোদিন। আপনার মতো একটা মানুষ রূপে থাকা দানবকে নিজের মনে জায়গা দেওয়ার পূর্বে আমি নিজের মৃত্যু কামনা করি।”
“মন কর্তৃক ঠকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও মিসেস ভুল। কারণ খুব শীঘ্রই তোমার মন তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছে।”
“সেদিন আমি মেরে ফেলবো নিজেকে।”
“তোমার মন তোমাকে সেটাও করতে দেবেনা।”

খেই হারায় ফুল। ধাক্কা দিয়ে উদ্যানকে সরিয়ে দিতে চায় কিন্তু পারেনা। উদ্যান যেন ক্রমশই তার উপরে লঘু হচ্ছে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে ফুলের,
“সরে যান, সরে যান। আমি ঘৃণা করি আপনাকে।”

উদ্যান আরও কিছুটা ঝুঁকে গেল ফুলের দিকে হিসহিসিয়ে বলল,
“আমি ভালোবাসি তোমাকে।”

উদ্যানের মুখ নিঃসৃত এই একটা বাক্যেই যেন ফুলের অনূভুতিতে ধস নামাল। লণ্ডভণ্ড করে দিল সবকিছু। ডুকরে কেঁদে উঠল ফুল, হৃদয়ে থাকা সবটুকু আক্রোশ ঢেলে দিয়ে বলল,
“আমাকে মেরে ফেলুন। আমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত কিন্তু আমার অনূভুতিতে আঘাত করবেন না। আপনি যেখান টাতে আঘাত করতে চাইছেন সেই জায়গাটা বড্ড নাজুক; সইতে পারবে না।”

উদ্যান কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে পুনরায় বলল, “আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি ওয়াইফি। অ্যান্ড দ্যাটস দ্য ড্যাম ট্রুথ।”

হাত দিয়ে কান চেপে ধরল ফুল। কিছুতেই সে উদ্যানের ফাঁদে পা দেবে না। উদ্যান তাকে শেষ করে দেওয়ার খেলায় মেতেছে। কিছুতেই ফুল এই কথায় বিশ্বাস করবে না। নাহ তাকে কিছু করতেই হবে, উদ্যানকে থামাতেই হবে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ফুল পেছনে থাকা ড্রেস শেলফ হাতড়ে অবচেতন মস্তিষ্কে কিছু খুঁজে চলেছে। তৎক্ষনাৎ হাতের নিচে একটা বেল্ট পড়ে। উদ্যান মেঝেতে বসে বসেই ফুলকে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ফুল এবার বেল্ট টা হাতে নিয়ে উদ্যানের দিকে তাকায়। পানিতে টলমল করতে থাকা চোখজোড়ায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখে উদ্যানের চোখ আটকে যায়। ব্যাকুল গলায় বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি; সেটা তুমি চলে যাওয়ার পর উপলব্ধি করতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে, তোমাকে ছাড়া আমার সবকিছু রঙহীন হয়ে গিয়েছিল। আমি তোমাকে এই সাত মাস কোথায় কোথায় খুঁজি নি। আর তুমি এখন আমার কথা বিশ্বাস করছো না?”

হাতের উল্টো পিঠে নিজের চোখ মুছে নিল ফুল। রুক্ষ গলায় বলল,
“আবেশ ভাইকে মেরেছিস কেন? আমাকে ভালোবাসাটাই কি তার দোষ ছিল?”

উদ্যান বুঝতে পারল ফুল প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলতে চাইছে,
“ওর কথা বাদ দিতে বলেছি।”

ফুল নাছোড়বান্দা। উদ্যানের পেট থেকে কথা বের করেই ছাড়বে। তার আসল উদ্দেশ্যে বুঝেই ছাড়বে।
“বল কেন মেরেছিস আবেশ ভাইকে?”

ফুলের কথা বলার স্টাইল ভালো লাগল না উদ্যানের। বসা থেকে উঠে সতর্ক গলায় বলল,
“তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না। জানো আমি বয়সে কত বড় তোমার থেকে?”

তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল ফুলের ঠোঁটের কোণে,
“যে যেই ভাষার যোগ্য তার সাথে সেই ভাষাতেই কথা বলতে হয়। নইলে সে বুঝতে পারেনা। এক কাজ কর, তুই যেহেতু আমাকে ভালোবাসিস সেহেতু আমাকে আবেশ ভাইয়ের কাছে রেখে আয়।”

“হোয়াট ননসেন্স? আমি আমার ওয়াইফকে পরপুরুষের কাছে রেখে আসতে যাবো কোন লজিকে?” উদ্যানের কণ্ঠে এবার কিছুটা রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল,

হাতে থাকা বেল্ট শক্ত হাতে চেপে ধরল ফুল। কণ্ঠে বিষ মিশিয়ে বলল,
“যেই লজিকে তুই সেই বিদেশিকে আমার রুমে ঢোকার পারমিশন দিয়েছিলি। সেই লজিকেই আমাকে আবেশের কাছে রেখে আসবি।”

এহেন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না উদ্যান। তাকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে দেখে শব্দ করে হেসে উঠল ফুল,
“কি? লজিক আছে তো নাকি? এবার তাহলে আমি যাওয়ার জন্য রেডি হবো?”

ফুল ভাবল এবার হয়তো উদ্যান রেগেমেগে নিজের আসল রূপে ফিরে আসবে কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। উদ্যান উল্টো অপরাধী গলায় বলল,
“আমার ভুল হয়ে গেছে। সেই ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত। সেই সব দিন গুলোতে আমি নিজের অনূভুতি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম।”

দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়ল ফুল। বুড়ো আঙুলের উপর ভর দিয়ে চেপে ধরল উদ্যানের শার্টের কলার।
“নাটকে তুই বড্ড কাঁচা। আমি তোর নাটক ধরে ফেলেছি।”

উদ্যান এবার আচমকাই ফুলের কোমড়ে হাত রেখে তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করল,
“আমি নাটক করতে জানিনা। তবে অনুভূতি প্রকাশে অবশ্যই কাঁচা।”

হার মানলো না ফুল। কিছুতেই হার মানবে না সে।
“আমি থাকবো না তোর সাথে, যদি আমাকে সত্যি কারের ভালোবেসেই থাকিস তাহলে আবেশ ভাইর কাছে রেখে আয়।”

উদ্যান এবার শক্ত হাতে চেপে ধরল ফুলের মসৃণ কোমড়। কঠোর গলায় বলল,
“যদি আমি বলি চার্লসের আর আবেশের উদ্দেশ্যে এক ছিলো তারপরও কি তুমি আবেশের কাছে ফিরে যেতে চাইবে?”

বিস্ময়ে ফুলের চোখ বড় হয়ে গেল। উদ্যানের দৃষ্টি তখনও নিষ্প্রাণ। কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে নিজেকে সামলে নেয় ফুল,
“তুই বললেই আমি বিশ্বাস করে নেবো সেটা ভাবলি কিভাবে?”

“আই ডোন্ট কেয়ার। আমি তোমাকে আবেশ কেনো কারো কাছেই আর যেতে দিচ্ছি না।”

উদ্যানের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে ফুলে শরীর কেঁপে উঠল। না না কিছুতেই না। উদ্যানের পাতা ফাঁদে সে পা দেবেনা। উদ্যানের থেকে ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগল ফুল। উদ্যান ছেড়ে দিতেই ফুল শেলফের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। অজানা আশঙ্কায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। বুকে হাত গুটিয়ে সমুখে দাঁড়িয়ে আছে উদ্যান। তীক্ষ্ণ চোখে ফুলকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। হাতে থাকা বেল্টের একপ্রান্ত ধরে চোখ বন্ধ করে একটা বড় শ্বাস নিল ফুল। পরপরই চোখ খুলে, বেল্টটাকে ঘুরিয়ে উদ্যানের দিকে ছুড়ে মারতেই উদ্যান বাম হাতে বেল্টটাকে ধরে ফেলে।

“পাগল হয়ে গেছো?” উদ্যানের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ফুল। অদ্ভুত এক উন্মাদনায় যেন নিজের মাঝেই নেই সে,
“ইউ হার্ট হিম। নাউ আই ওয়ান্ট টু রিটার্ন দ্য ফেভার।”

জোরালো গলায় উদ্যান বলে ওঠে, “সো ইউ ওয়ান্ট টু পানিশট মি?”

“ইয়েস, লেট মি পানিশট ইউ।”

বেল্টের অন্যপ্রান্ত ছেড়ে দিল উদ্যান। হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল সামনে। তার কান্ডে ফুলের প্রাণ যায়যায়। যদিও ফুল স্বীকার করে না এসব। নিজের অনুভূতিতে তো বহু আগেই লাগাম টেনেছে সে। আজ সেও দেখবে উদ্যান কতক্ষণ প্রিটেন্ট করতে পারে। বুকভরে শ্বাস টেনে সবটুকু শক্তি প্রয়োগ করে উদ্যানকে প্রহার করল ফুল। ছলকে উঠল হৃদয়, উদ্যানের নয় ফুলের হৃদয়। উদ্যান তখনও নিরুত্তর। যেন আঘাতটা ফুল তাকে করেনি নিজেকে করেছে। না না এসব সত্যি নয়, ফুল নিজেকে সামলে চোখ বন্ধ করে কল্পনায় উদ্যানের জায়গায় এক দানবকে বসালো। তারপর একাধারে প্রহার করতে শুরু করলো।

চলবে,,,

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply