Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২১


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (২১)

সোফিয়া_সাফা

কক্সবাজার শহরের দু রুমের ফ্ল্যাটে এটা ফুলের দ্বিতীয় দিন। শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে ভীতিগ্রস্ত ফুল। জ্বরের ঘোরে সে নিজের স্বামী নামক দানবকে অনুভব করেছিল ভাবতেই শরীরে কাটা দিচ্ছে। এখনও বিশ্বাস করেই উঠতে পারছেনা যে সবটাই একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পেট গভীরভাবে পরীক্ষা করছে ফুল। এ নিয়ে কয়বার যে এভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে হিসেব নেই। কিন্তু নাহ বরাবরের মতো এবারও কোনো দাগ বা কামড়ের নিশান পেল না ফুল। কামিজ ঠিক করে স্বস্তির শ্বাস ফেলল, যদিও সে স্বস্তি পাচ্ছেনা। মনের ভেতর অজানা আশংকা খচখচ করছে। পা টিপে টিপে ব্যালকনিতে গেল ফুল। দোতলার ফ্লোরে রুম ভাড়া নিয়েছে তারা। এখান থেকে কেউ কিভাবে রুমে আসবে? নিজের মনকে এই বলেই সান্ত্বনা দিচ্ছে তবুও অবুঝ মন মানছে না।
“ধ্যাৎ এই খোলা ব্যালকনি টাই আমাকে শান্ত হতে দিচ্ছে না। ব্যালকনিতে গ্রিল লাগায় নি কেন কে জানে। আবেশ ভাইকে কিছু বলতেও পারছি না। নিজেই যেখানে সিওর যে দানবটা আসেনি সেখানে আবেশ ভাইকে কিছু কিভাবে বলি?”

গালে হাত ঠেকিয়ে নিজ মনেই বিড়বিড় করছে ফুল। তখনই পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে এলো। চকিত নয়নে ফুল পেছনে ঘুরে তাকাল,
“হায় আল্লাহ! চা বানানোর জন্য চুলায় দুধ বসিয়েছিলাম। ভুলেই গেছি।”

একদৌড়ে কিচেনে চলে গেল ফুল। কিন্তু ততক্ষণে দুধ টেনে গিয়ে পাতিল কালো হয়ে গেছে। ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে নিল ফুল। গভীর শ্বাস নিয়ে নিজের মাথায় চাপড় মেরে বলল,
“আর কতো ভুল করবি ফুল? তুই কি আসলেই ফ্লাওয়ার নাকি বোকা?”

কোমড়ে ওড়না প্যাচিয়ে নিল ফুল। পুড়ে যাওয়া পাতিল টা সিঙ্কে রেখে ধুতে লাগল। আর বলতে লাগল,
“ভাগ্যিস রাক্ষসটা তোর সাথে খারাপ বিহেভ করেছে নইলে তুই থাকতেই পারতি না। ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে। লাখ লাখ শুকরিয়া খোদা, আমার অবাধ্য মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। ভালোবাসার মতো পবিত্র অনূভুতি গুলো তার মতো রাক্ষস কেন্দ্রিক হওয়া আমার কাছে মৃ*ত্যুসম। কতোটা অবনতি হলে আমার অবচেতন মস্তিষ্ক রাক্ষসটাকে ইমাজিন করে ভাবতেও পারছি না।”

ফুল তো একা একাই বকবক করছে। ফ্ল্যাটে সে একাই আছে। তাই মনে মনে বলার প্রয়োজন বোধ করছে না। ইশ সে যদি জানতো তার ধারণা কতোটা ভুল তাহলে হয়তো নিজের মনের কথাগুলো এভাবে প্রাণ খুলে বলার মতো ভুল করতো না।
নিজের রুমে বসে টেকিলা পূর্ণ গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর সামনের বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে উদ্যান। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওয়ার্ক আউট করে বেজায় ক্লান্ত সে। ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো ঘামে ভিজে ত্বকের সাথে লেপ্টে আছে। ফুলের বলা প্রত্যেকটা কথা উদ্যান স্পষ্ট শুনেছে; সেই সাথে ফুল কি করছে না করছে সবকিছু অবলোকনও করছে।
“ইউ ব্লাডি মিস্টেক। আমি ওতটাও ষ্টুপিড হয়ে যায়নি যে তোর পেটে মার্ক করে রেখে চলে আসবো। চার্লসের সাথে তোর সেই ঘটনার কথা ভুলে যাইনি আমি। ঘুম থেকে উঠে পেটের উপর মার্ক দেখে তুই আত্মহত্যা করে ফেললে আমার কি হবে? দুনিয়ার কোনো কিছুই যে শান্ত করতে পারছে না আমাকে। আর কি বললি, ‘ভালোবাসার মতো পবিত্র অনূভুতি গুলো আমার মতো রাক্ষস কেন্দ্রিক হওয়াটা তোর কাছে মৃ*ত্যুসম। বাহঃ ইন্টারেস্টিং তো।’ তুই আমাকে ভালোবাসতে চাস না রাইট?”

কথাগুলো বলে কাউচের উপর গা এলিয়ে দিল উদ্যান। গত কালকে রাফায়েল সিলভাকে খু’ন করার পর কিছুটা স্বাভাবিক লাগলেও বর্তমানে উদ্যানের অবস্থা নাজেহাল। ইচ্ছা করছে ফুলকে এনে পানিশ্ট করতে কিন্তু ইতোমধ্যেই উদ্যান বুঝে গেছে ফুল কোনো না কোনো ভাবে উদ্যানের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফুলের মতো জাত শত্রুর ছোঁয়ায় সন্তুষ্টি খুঁজে পাওয়া টা কোনো ইতিবাচক লক্ষ্মণ নয়।
বোতলে অবশিষ্ট সবটুকু টেকিলা গ্লাসে ঢেলে নিল উদ্যান। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসেই পুরোটা গিলে নিল। তারপর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে পুনরায় ওয়ার্ক আউট রুমের দিকে পা বাড়াল। তন্মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল। ঘাড় বাকিয়ে সেদিকে তাকাল উদ্যান। একহাতে রিমোট চেপে টিভি অফ করে, দরজা খুলে দিতে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে দিতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিদম মিষ্টি হেসে বলল,
“তোর সাথে ওয়ার্ক আউট করতে চলে এলাম।”

রিদমের কথায় দরজা ছেড়ে দাঁড়াল উদ্যান। গম্ভীর গলায় বলল,
“তুই হঠাৎ ওয়ার্ক আউট করতে চাইছিস? ব্যাপার কি?”

উদ্যানের রুমে ঢুকে পড়ল রিদম। ওয়ার্ক আউট রুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
“হঠাৎ নয় হেফে, আমি মাঝে মাঝেই সোহম আর লুহানের সাথে মিলে ওয়ার্ক আউট করি।”

‘হেফে’(স্যার/মাস্টার) সম্মোধনে উদ্যান আঁড়চোখে তাকাল রিদমের দিকে। বুঝতে পারল রিদম কোনো না কোনো মতলবেই এসেছে এখানে।
“তো আজকেও ওদের সাথেই কর না গিয়ে। জানিস তো কারো কাম্পানি লাইক করিনা আমি।”

উদ্যানের কথায় থেমে গেল রিদম, “জানিনা তো, তোর অপছন্দ গুলো জানলেও; তুই কি কি লাইক করিস সেসব সম্পর্কে আমাদের আইডিয়া খুবই সীমিত।”

“হঠাৎ আমি কি লাইক করি সেসব জানতে আগ্রহী হয়ে পড়লি কেন?”
“কারণ আমরা তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ভাবছি, তোর পছন্দানুযায়ী মেয়ে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনবো।” রিদমের কথাগুলো ফালতু ঠেকল উদ্যানের কাছে।

“তুই আমার চিন্তা না করে নিজের চিন্তা কর।” কথাটা বলে উদ্যান চলে গেল ওয়ার্ক আউট রুমে। কোণায় থাকা স্টিলের র‍্যাক হতে একজোড়া ডাম্বেল তুলে নিয়ে ভারোত্তোলন করতে লাগল। তার পিছুপিছু রিদমও এসেছে। সে এসেই উদ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বলল,
“আমি ওসব নিয়ে কি চিন্তা করবো বল। যেই মেয়েকে দেখি তাকেই ভালো লেগে যায়।”

ভ্রুক্ষেপ করল না উদ্যান নিজের কাজে মন দিল। পাত্তা না পেয়ে শার্ট টা কাউচের উপর রেখে স্টিলের র‍্যাকের দিকে এগিয়ে গেল রিদম। একজোড়া ছোটো আকৃতির ডাম্বেল তুলে নিয়ে উদ্যানের পাশাপাশি বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রিদম বলল,
“রাফায়েল সিলভাকে একেবারে মে*রে ফেললি কেন? আমাদের জানামতে তো তার সাথে তোর কোনো শত্রুতা ছিল না।”

স্বভাবতই উত্তর দিলোনা উদ্যান। তবে রিদমও আজ কোমড় বেধেই নেমেছে। হাতের ডাম্বেল গুলো সাইডে রেখে একহাত হাটুতে ঠেকিয়ে উদ্যানের দিকে তাকাল রিদম। অভিমানী সুরে বলল,
“তুই আমাকে একটুও মূল্যায়ন করিস না তেহ। কথা ছিল শুধু কাজের ক্ষেত্রেই তোকে আমরা মাস্টার হিসেবে ফলো করবো। বাদ বাকি সময়…

কথা শেষ করতে পারল না রিদম তার আগেই উদ্যান কাঠকাঠ গলায় বলল, “বাদ বাকি সময় কি রিদম? তুই বলতে পারবি আমি অহেতুক তোদের ব্যবহার করেছি কখনও?”

ঠোঁট ফুলিয়ে নিল রিদম হতাশ গলায় বলল, “ব্যবহার করিস নি অথচ আমরা বন্ধু হিসেবে ব্যবহার হতে চেয়েছি তেহ। পাপাও কিন্তু এটাই চাইতেন। বাকিদের কথা বাদ দিলাম আমার সাথে তোর সম্পর্কটা কি আলাদা নয়? পাপা কি তোকে নিজের ছেলের মতো স্নেহ করতেন না? সে প্রশ্ন করলেও কি তুই এড়িয়ে যেতে পারতি?”

উদ্যানের হাত থেমে গেল। শান্ত চোখে তাকাল রিদমের দিকে। বিরক্তি মিশিয়ে বলল,
“স্যার কখনোই আমাকে এমন ফালতু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন না রিদম। সে কখনোই আমার পার্সোনাল লাইফে হস্তক্ষেপ করেন নি।”

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল রিদমের, “ভালোই তো মনে রেখেছিস পাপার কথা। তাহলে এটা ভুলে গেলি কিভাবে? মৃ*ত্যুর আগে পাপা বারবার বলে গেছেন তোকে বিয়ে করে নিতে।”

উঠে দাঁড়াল উদ্যান। তোয়াল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “তুই আবার বিয়েশাদির ব্যপারে কবে থেকে সিরিয়াস হলি?”
“প্রশ্ন এড়িয়ে যাসনা তেহ। তাছাড়া তোদের মতো একরোখা পুরুষদের বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি। সোহমকেই দেখনা বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছে। কিন্তু করতে পারছে না। তেমন কাউকে পাচ্ছেই না। একজনকে পেয়েছিল তাকেও তোর জন্য বিয়ে করতে পারল না।”

থমকে গেল উদ্যান। মনে পড়ে গেল ফুলের কথা। রিদম উঠে এসে উদ্যানের সামনে দাঁড়াল। কাধে হাত রেখে বলল, “অ্যাটলিস্ট পাপার কথা রাখার জন্য হলেও বিয়েটা করে নিস তেহ। তোকে মুখ ফুটে বলতে হবেনা। শুধু নিজের পছন্দ গুলো জানিয়ে দিস। আমরা সেই অনুযায়ী মেয়ে খুজে আনবো তোর জন্য।”

“বাট আই ডোন্ট লাইক উইমেন।” উদ্যানের কথা শুনে রিদমের কপালে গাঢ় ভাজ পড়ল,
“হোয়াট ডু ইউ মিন? নারীদের পছন্দ না করলে তুই পুরুষ হলি কেমনে? ওয়েট আ সেকেন্ড, তুই পুরুষদের প্রতি আর্কষণ ফিল করিস নাকি?”

রিদমের চোখজোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। শুকনো ঢোক গিলে সে দ্রুত হাতে নিজের শার্ট পড়তে লাগল। একনজর রিদমের দিকে তাকাল উদ্যান তারপর উদাসীন গলায় বলল,
“পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা আমাকে… এই তেহজিব কে আকৃষ্ট করতে পারবে। কারণ আর্কষণ ফিল করাটা এক ধরনের দূর্বলতা। তেহজিব সমস্ত দূর্বলতার উর্ধ্বে।”

হাল ছেড়ে দিল রিদম। কম চেষ্টা তো করেনি উদ্যানকে আকৃষ্ট করার। কতো কতো মেয়ে পাঠিয়েছিল উদ্যানের কক্ষে। কিছুতেই কিছু হয়নি। শেষ মেষ অনেক ভাবনা চিন্তা করে ছেলেও পাঠিয়েছিল। তবুও ফলাফল শূন্য, লাস্ট বার তো রেগেমেগে উদ্যান এক ছেলেকে মে*রেই ফেলেছিল। তারপর থেকে আর সাহস পায়নি উদ্যানের রুমে ছেলেমেয়ে পাঠাতে।
“তোর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সোলার বংশের নাম নিশান এখানেই মিটে যাবে।” বিরবির করে কথাগুলো বলে বেরিয়ে যেতে লাগল রিদম। সে বেরিয়ে যেতেই উদ্যান থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সে আছে অন্য চিন্তায়। ফুলের কথা মনে হতেই তার ভেতরে যে তান্ডব শুরু হচ্ছে। সেটা দমন করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে এই তান্ডব উদ্যানকে নিশ্চিহ্ন করেও ফেলতে পারে।
রুমে ফিরে এলো উদ্যান। গতকালকেই নতুন ফোন কিনেছে সে। ফোনটা খাটের উপরেই পড়ে আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিল উদ্যান। কল লাগালো লুহানের নম্বরে। দুবার রিং হতেই লুহান কল রিসিভ করল। একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে উদ্যান বলল,
“শোন লুহান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাইকিয়াট্রিস্টকে তুলে নিয়ে আয়। অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল।”


কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ফুল। এখন সময় বিকাল চারটা, আবেশ ফিরেছে কিছুক্ষণ আগেই। এখানে এসেই আবেশ চাকরির খোঁজে নেমে পড়েছে। তবে এখনও আশানুরূপ ফল পায়নি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু কড়া নাড়ল আবেশ। ফুল ওড়না ঠিক করে বলল,
“ভেতরে এসো।”

ধীরপায়ে খাটের উপর এসে বসল আবেশ। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিল। ফুল একমনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আয়নাটা গতকালই কিনে এনেছে আবেশ। অবশ্য আয়নার কথা ফুলই তাকে বলেছিল। বাকি সব জিনিসপত্র যেমন খাট, হাড়ি-পাতিল এগুলো আগে থেকেই রুমে ছিল। জিনিসপত্র সহ রুমটা রেন্ট নিয়েছে আবেশ।
“কেউ কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিল ফুল?”

আবেশের প্রশ্নে ফুল শ্বাস ফেলে বলল, “সামনের ফ্লোর থেকে আন্টি টাইপের এক ভদ্রমহিলা এসেছিলেন আজকে।”

ফুলের কথা শুনে আগ্রহী হয়ে পড়ল আবেশ। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলেছে?”

হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল ফুল। মাথা নিচু করে বলল, “বলেছে আমার স্বামী কোথায় গেছে।”

আবেশের দৃষ্টি নরম হয়ে এলো। ভারী গলায় বলল, “তুই কি বলেছিস?”

অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল ফুল। অস্বস্তিতে আড়ষ্ট হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল। ফুলের আচরণে হতাশ হলো আবেশ। উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল ফুলের দিকে। নিজের দিকে আবেশকে অগ্রসর হতে দেখে ফুলের পা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পিছিয়ে যেতে লাগল। পেছনে দেয়াল থাকায় আটকা পড়ল ফুল। আবেশ এসে ফুলের মাথায় আদূরে হাত রেখে মলিন হেসে বলল,
“ডেবিল টাকে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছিস ফুল। ভুলে যাসনা সেটা; তারপর আশাকরি আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় দিতে তোকে দ্বিধায় পড়তে হবেনা।”

নিজেকে আরও কিছুটা গুটিয়ে নিল ফুল। সরল গলায় শুধাল, “আমাকে তুমি বিয়ে করবে আবেশ ভাই?”

ফুলের প্রশ্নে আবেশ হাটুতে হাত রেখে ফুলের মুখোমুখি হলো। কোমল গলায় বলল, “হুম করবো তো, কেন তুই আমাকে বিয়ে করবি না?”

ফুলের সমগ্র শরীর শিরশিরিয়ে উঠল। চোখের কোণে পানি জমলো। ঠোঁট চেপে কান্না আটকে ক্ষীণ গলায় বলল, “আমাকে কেন বিয়ে করবে আবেশ ভাই? কেন এমন কাউকে বিয়ে করবে যে কিনা দেড় মাস স্বামী নামক এক দানবের সাথে সংসার করে এসেছে।”

ফুলের কথায় ধাক্কা খেল আবেশ। কণ্ঠরোধ হয়ে, বুকের ভেতর টা সংকুচিত হয়ে গেল। নিজেকে সামলাতে ফুলকে বন্দি করে দেয়ালে হাত রাখল আবেশ। চোখ বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“আমার কোনো সমস্যা নেই। রাক্ষস টা তোর সাথে কিছু করে থাকলে…জোরপূর্বক করেছে। আর জোরপূর্বক কিছু করাকে শুদ্ধ ভাষায় ধ/র্ষ/ণ করা বলে। আমি সেগুলোকে ধ/র্ষ/ণ হিসেবেই মেনে নেবো।”

চোখ খুলল আবেশ রিনরিনে গলায় বলল, “আমার ফুল ধ/র্ষ/ণের স্বীকার হয়েছে ভাবতেও আমার রূহ কেঁপে উঠছে ফুল। আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।”

ফুলের ঠোঁটজোড়া নড়ে উঠল। আবেশের ব্যাকুল কণ্ঠ শুনে ইতোমধ্যেই ফুলের চোখ থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে। সেই জল গাল বেয়ে নিচে পড়ার আগেই আবেশ একহাতে ফুলের চোখ মুছে দেয়। আবেশের ছোয়া পেয়ে ফুল ডুকরে কেঁদে ওঠে। ভারাক্রান্ত গলায় শুধায়,
“এতো কষ্ট কেন সহ্য করবে আবেশ ভাই?”

আবেশের মুখাবয়বের রঙ পরিবর্তন হয়ে ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। আবেশ এবার দুপা পিছিয়ে গেল। উল্টো দিকে ঘুরে নিজের চোখের পানি আড়াল করে বলল, “আমি ছাড়া আর কে করবে ফুল? আজ যদি ডেবিলটার জায়গায় অন্য কেউ তোর সাথে খারাপ কিছু করতো; আমি কি তোকে ত্যাগ করতে পারতাম? পারতাম না। তাহলে এখন কেন করবো? তোর উপর আমার দাবী আছে ফুল, আজীবন থাকবে। তুই শুধু আমার। ডেবিলটা নেহাতই তোর শরীরে কলঙ্কের দাগ লাগাতে সক্ষম হয়েছে। মনটা তো নিষ্কলঙ্ক আছে…”

আবেশ ঘাড় বাকিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে পুনরাবৃত্তি করল, “আছে তো ফুল?”

এহেন প্রশ্নে দিশেহারা হয়ে পড়ল ফুল। সকল জড়তা কাটিয়ে উপরনিচ মাথা দোলালো। তার মন নিষ্কলঙ্ক আছে। এটাই ফুল মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। তার মনে স্বামী নামক দানবের জন্য অনূভুতির কোনো স্থান নেই। ফুলের উত্তরে খুশি হলো আবেশ। চোখমুখ ভালো ভাবে মুছে ফুলের সামনে এসে দাঁড়াল,
“আমি আমার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে তোর সব কলঙ্ক ঢেকে রাখব ফুল। শুধু তোর মনের সবচেয়ে মূল্যবান জায়গাটুকু আমার নামে লিখে দিস। আর কিছু চাইবো না।”

কান্নার মাঝেও হেসে উঠল ফুল। হাসির আড়ালে লুকিয়ে ফেলল নিজের কষ্টটুকু। মনের সাথে চলা যুদ্ধের রেশ আবেশকে বুঝতে দিতে নারাজ সে। যেই ছেলেটা তার জন্য সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে বনবাসী হয়েছে। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ফুলের নেই। আর ফিরিয়ে দেবেই বা কার জন্য? এক দানবের জন্য? ব্যপারটা হাস্যকর—অযৌক্তিক হয়ে যাবেনা?

ভাঙচুরের বিকট আওয়াজে সোলার এস্টেটের সবাই একত্রিত হয়েছে উদ্যানের কক্ষের সামনে। গতকালকেই উদ্যান সহ বাকি সবাই সোলার এস্টেটে ফিরে এসেছে। এসেই উদ্যান অজানা কারণে একজনকে খু*ন করল তারপর এখন এভাবে ভাঙচুর করছে বিষয়টা নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে সবাই। লুহান নিজের ফোন বের করে নিজের ডান হাত লুইসকে কল দিল। লুইস গতকালকেই রাফায়েল সিলভাকে নিয়ে বিডিতে এসেছিল। অপর পাশ থেকে কল রিসিভ হতেই লুহান ব্যস্ত গলায় বলল,
“কিরে আর কতোক্ষণ লাগবে? যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারকে নিয়ে আয়।”

চলবে,

[পরবর্তী পর্ব পেতে রেসপন্স করুন]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply