Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ২০


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (২০)

সোফিয়া_সাফা

ঘড়ির কাটা ১১ টা ছুইছুই। খাটের উপর মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে ফুল। হঠাৎ করেই জ্বরটা বেড়েছে। পাশে বসেই মাথায় পানি ঢালছে আবেশ। তারা বর্তমানে দুই রুমের এক ফ্ল্যাটে অবস্থান করছে। বছর দুয়েক আগে আবেশ কক্সবাজার ট্যুরে এসেছিল। তখন তার পরিচয় হয়েছিল এক লোকের সাথে। সেই লোকের বদৌলতেই কক্সবাজার শহরের এক ফ্ল্যাটে উঠেছে আবেশ।
চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে ফুল। জ্বরের ঘোরে শুধু ‘মা’ ‘মা’ বলে কান্না করছে। আবেশের খুব কষ্ট হচ্ছে ফুলের অবস্থা দেখে। তার চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে ফুলের ‘মা’ ডাক শুনে। একাধারে পানি ঢালছিল আবেশ। হঠাৎ তার হাত থেমে গেল; এভাবে বসে থাকা ঠিক হবেনা। ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবেশ বলল,
“আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি ফুল। বেশি সময় লাগবে না, আসার সময় কয়েকটা ফার্মেসী দেখেছিলাম। আর একটু সহ্য কর, কেমন?”

উত্তর দিলোনা ফুল। অবশ্য উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থাতেও নেই সে। আবেশ আর অপেক্ষা করলো না। বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে চলে গেল। রুম জুড়ে নেমে এলো নিস্তব্ধতা। ফুলের ঠোঁট জোড়া নড়ছে তবে শব্দ বের হচ্ছে না। চোখের কোণ বেয়ে নীরব ধারায় অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে। আচমকাই লোডশেডিং হলো। চোখ বন্ধ থাকায় ফুল আন্দাজ করতে পারেনি অবশ্য।
এ যাবৎ সব ঠিক থাকলেও হঠাৎ জানালার পর্দা নড়ে উঠল। অন্ধকার রুমের মাঝে জানালার পর্দা জ্বলজ্বল করছে। যার দরুন বোঝা যাচ্ছে লোডশেডিং শুধু এই রুমেই হয়েছে। আশেপাশের ফ্ল্যাট, দোকানে বিদ্যুৎ আছে। ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেছে ফুলের, ওষ্ঠদ্বয় আপনা-আপনি ফাঁক হয়ে গেছে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায়। চোখ লেগে গিয়েছিল ফুলের তন্মধ্যেই ‘খচ’ শব্দে ফুলের মুখ বিরক্তিতে কুঁকড়ে গেল। পরপরই বিকট শব্দ তুলে ব্যালকনির দরজা টা খুলে যায়।
আধো চোখে তাকাতেই ঘাবড়ে গেল ফুল। বুঝতেই পারল না সে চোখ খুলেছে নাকি বন্ধ করেই রেখেছে। চোখ খুলেও কেন অন্ধকার দেখছে? ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে ফুল, উটকো এক গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। মনে হচ্ছে কেউ একজন মাথার সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখ বরাবর ধোঁয়া ছাড়ছে, সাধারণ ধোঁয়া নয়; নিকোটিন যুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় ফুলের নিঃশ্বাস ক্রমশঃ বন্ধ হয়ে আসছে। মুহুর্তেই অক্সিজেন সংকটে ছটফট করতে শুরু করলো ফুল। ঠোঁটের ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো,
“পা…রছি না, ম…রে যাচ্ছি।” ফুলের কণ্ঠ বাতাসের শব্দের ন্যায় ক্ষীণ শোনাল। তবুও যেন সেই ছায়ামানব তার কথা বুঝতে পারল। ধোঁয়া সরে যেতেই ফুল বড় একটা শ্বাস নিল।
কেটে গেল কয়েক মিনিট। এই সমস্ত ঘটনাকে ভ্রম হিসেবেই ধরে নিয়েছে ফুলের অবচেতন মস্তিষ্ক। ফলস্বরূপ কিছুক্ষণের ব্যবধানে আবারও ঘুমিয়ে যায় ফুল। ঘুম আবারও ভেঙে যায় কারো ডাকে। কেউ খুব অভিমানী স্বরে ডাকছে,
“প্রিমরোজ, প্রিমরোজ।”

তড়াক করে চোখ খুলল ফুল। তবুও পূর্বেই ন্যায়েই চারপাশ অন্ধকার। উঠে বসতে চাইল ফুল। ঘাড় উঁচু করতেই সেই ছায়ামানব ঝড়ের বেগে ফুলের চুলের ভাজে হাত গলিয়ে তাকে নিজের দিকে টেনে নিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফুলের কপাল ধাক্কা খেল শক্তপোক্ত এক বক্ষপটে; শুধু কপাল নয় তার সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল। ছায়ামানবটি ফুলের ঘাড় চেপে ধরে নিজের উদম বুকের মাঝে ফুলের মুখ ঠেসে ধরে রেখেছে,
“তোকে কিস করতে দেইনি বলে পালিয়ে এসেছিস? নে, যত ইচ্ছা কিস কর এবার।”

দিশেহারা হয়ে পড়ল ফুল। সেই কাঙ্ক্ষিত পুরুষালি গন্ধে তার সমস্ত সত্তা কেঁপে উঠল। দু’হাতে জাপ্টে ধরল ছায়া পুরুষটির শার্টের অংশ। প্রখর গন্ধটি মুহুর্তেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল তাকে। সমস্ত চিন্তা ভাবনাকে ওলট পালট করে দিয়ে নেশা ধরিয়ে দিল। ফুলের ঠোঁটের নরম স্পর্শে ছায়া পুরুষটি নিজেও উত্তেজনায় কাঁপতে লাগল। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“তুই নিজেও ধ্বংস হবি; আমাকেও ধ্বংস করবি। কেন এভাবে টানছিস আমাকে? তোর জানের ভয় নেই? নিজের শত্রুকে কেউ এভাবে আলিঙ্গন করে? তোর সাথে থাকতে থাকতে আমিও ষ্টুপিড হয়ে গিয়েছি। নইলে তোর মতো আপদের পেছনে নিজের মূল্যবান সময় অপচয় করি?”

ফুল মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ছায়া পুরুষটির উন্মুক্ত বক্ষপটে নাক ঘষছে, মাঝে মাঝে ঠোঁট ছুইয়ে দিচ্ছে। সে যতবার এমন করছে ততবার ছায়া পুরুষটি গুঙিয়ে উঠছে। একপর্যায়ে ছায়া পুরুষটি শক্ত করে চেপে ধরল ফুলের কোমড়। বেশ অনেকটা ঝুকে গেল ফুলের দিকে। কোমড় থেকে হাত সরিয়ে আঁকড়ে ধরল ফুলের বাহু। হঠাৎ আঘাতপ্রাপ্ত বাহুর উপর শক্ত চাপ পড়ায় আৎকে উঠল ফুল। কেঁদে উঠতে যাবে তার আগেই ছায়া পুরুষটি একহাতে ফুলের কামিজের সামনের অংশ তুলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গেই উন্মোচিত হয়ে গেল ফুলের ফর্সা পেট। এবার মোচড়ামুচড়ি করতে লাগল ফুল, তবে পেরে উঠল না। ছায়া পুরুষটি এক হাত দিয়েই ফুলের উভয় হাত চেপে ধরে রেখেছে। এবার খানিকটা বিরক্ত হল হয়তো ছায়া পুরুষটি। ফুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“এমনি এমনি আমি কাউকে কিছু দেই না। এটা আমার স্ট্র‍্যাটেজির বাইরে। আমি তোকে আমাকে স্পর্শ করতে দিয়েছি বিনিময়ে তোকেও একটু টেস্ট করবো। তাছাড়াও আগের পাওনা আছে। রাতে তুই আমার পাওনা না বুঝিয়ে দিয়েই চলে এসেছিলি। এখন সেটাও বুঝে নেবো।”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে ফুলের পেটের উপর হামলে পড়ল ছায়া পুরুষটি। তীব্র আক্রোশ নিয়ে ফুলের পেটে কর্তৃক ফলিয়ে; ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে লাগল।
“আহহহ…”

ছাড়া পাওয়ার চেষ্টায় বিছানার উপর শরীর ছেড়ে দিল ফুল। পেছনের দিকে হেলে পড়ল, তবুও বিন্দুমাত্র ছাড়া পেল না। উল্টো ছায়া মানবটি আরও সুবিধা করে ফুলের পেটে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে। ফুলের মনে হচ্ছে পেটের চামড়ায় কেউ কাটা চামচ বসিয়ে দিয়ে মনমতো আঁকিবুঁকি করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও হিংস্র হয়ে উঠছে ছায়ামানবটি। এমনভাবে ফুলকে চেপে ধরে রেখেছে যে ফুল নড়তেও পারছেনা। গলা শুকিয়ে গেছে ফুলের, মনে হচ্ছে কয়েক যুগ ধরে পানি খায়নি। ঠোঁট জোড়া কাপছে অনবরত। এতোক্ষণ শীত লাগলেও এখন ঘেমে গেছে ফুল। কপালের উপর বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে, সেই সাথে বয়ে চলেছে ফুলের চোখের জল। গলা দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না, এ যেন এক দুঃস্বপ্ন।

আচমকা গুম গুম শব্দ ভেসে এলো। বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করল ছায়ামানবটি। ফুলের পেট থেকে মুখ তুলে থম মেরে বসে রইলো। কিছুক্ষণ যেতেই দ্রুত হাতে ফুলের জামা ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুল তাকিয়ে আছে সেইদিকে। ছায়া মানবটি হাল্কা ঝুকে ফুলের মুখে ফু দিল, কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই ফুলের চোখে লেগে গেল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া পুরুষটি তার কানের কাছে এসে ভরাট গলায় বলল,
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, মিস্টেক। ইউ’আর নাথিং বাট দ্য আফটারম্যাথ অফ ইয়োর পেরেন্টস’। ইউ এগজিস্ট অনলি বিকজ ইয়োর পেরেন্টস মেড আ ব্লাডি মিস্টেক…এক্স‍্যাক্টলি নাইনটিন ইয়ার্স আগো টুডে। আগামী জন্মদিনে তোকে স্পেশাল গিফট দেবো প্রমিস।”


ডাক্তার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল আবেশ। রুমে এসে দেখতে পেল ফুল আগের মতোই শুয়ে আছে। পার্থক্য এটুকুই আগে ফুলের চুলগুলো খোপা করা ছিল। বর্তমানে চুলগুলো বেশ পরিপাটি ভঙ্গিতে বুকের উপর ছড়িয়ে রাখা। কাঁথাটাও পেট পর্যন্ত টেনে দেওয়া। নৈশব্দে ঘুমিয়ে আছে ফুল। ডাক্তার এসে বসল ফুলের সামনে। আলতো হাতে ফুলের গালে চাপ দিয়ে জিভের নিচে থার্মোমিটার রাখল। কিছুক্ষণ পর তাপমাত্রা চেক করে বলল,
“ওনার শরীরের তাপমাত্রা তো স্বাভাবিকের ঘরেই নেমে এসেছে। আই থিংক জ্বর ছেড়ে দিচ্ছে।”

ডাক্তারের কথা শুনে আবেশ ভ্রু কুচকে ফুলের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ আগেই তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল শরীর। এরইমাঝে জ্বর ছেড়ে দিয়েছে?
“যাক, খুব চিন্তা হচ্ছিল আমার। ধন্যবাদ ডক্টর।”


সমুদ্রের ভেজা বালির উপর বসে আছে এক মানব। পাশেই পড়ে আছে ৩-৪ টা শূন্য কাঁচের বোতল। ক্ষণে ক্ষণেই গর্জন তুলে সমুদ্রের নোনাপানি তীরে আছড়ে পড়ছে। চাঁদের ম্লান আলোয় নীলাভ দেখাচ্ছে চারিপাশ। হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠল। এই নিয়ে অগণিত বার এই একঘেয়ে রিংটোন বেজে চলেছে। এবার কলটি রিসিভ করা হলো,
“হ্যালো তেহ! কি হয়েছে তোর? কোথায় আছিস? কি ছেলেমানুষী শুরু করেছিস বলতো।”
“রিদম তুই নিজের সীমা ভুলে যাচ্ছিস। রাফায়েল সিলভা কে বিডিতে এনে তারপর আমাকে কল দিবি।”
“আমি নিজের সীমা ভুলে তোর ক্ষতি তো করিনি তেহ। এইসব সীমা তো কাজের প্রয়োজনে তৈরি করা হয়েছে। কাজের বাইরে কি আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই?”

“আমি কক্সবাজার আছি।” ফোনের এপাশ থেকে নির্লিপ্ত সুরে বলল উদ্যান।

রিদম চমকালো না। বরং স্বাভাবিক গলায় বলল, “ভালো তো, জানিয়ে গেলেই পারতি। তোকে বিরক্ত করতে আমাদেরও ভালো লাগেনা। জানিয়ে গেলে শুধু শুধু কল দিতাম না।”
“না জানিয়ে এলেও কল দিতে হবেনা। আমি এসব পছন্দ করিনা।”

এরইমাঝে হঠাৎ করে রিদমের হাত থেকে ফোন নিয়ে গেল লুহান,
“রাফায়েল সিলভাকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাকে দিয়ে তুই কি করবি সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো জানতাম তুই হেইট করিস তাকে।”
“আমি হেইট করিনা কাউকে।”

চমকে গেল লুহান, “মানে? আরে তুই ডিটেইলসে বল। তুই তাকে লাভ করিস? শেষ মেষ তুই বেডা মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হলি? তাও আবার রাফায়েল সিলভার মতো টাকওয়ালা বুড়া বেডা তোর মনে ধরলো?”

‘টুট টুট’ আওয়াজে কল কেটে যায়। লুহানের মুখটা চুপসে গেল।
“তেহকে নিয়ে কি যে করবো। ও মানুষ? নাকি পাথর? ভাবলাম রেগেমেগে বলবে ‘নো আই অ্যাম স্ট্রেইট।’ তা না করে কল কেটে দিলো?”

লুহানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে গেল রিদম, “আমি কিছুই বুঝতে পারছি না লুহান। তেহ অদ্ভুত বিহেভ করছে। এর আগে ওকে এতোটা ডেস্পারেট আর এগ্রেসিভ হতে দেখেছিস কখনও?”

লুহান তাল মেলালো, “আমিও সেটাই ভাবছি। হঠাৎ ও এরকম বিহেভ কেন করছে?”


বাংকারের মাঝ বরাবর এক কাঠের চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে রাফায়েল সিলভাকে। সামনেই বসে আছে উদ্যান। তার একপাশে লুহান আরেকপাশে সোহম। চিরাচরিত রূপে নেই তারা, রোবটের ন্যায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“লোবো, টেক দ্যা গ্যাগ অফ হিজ মাউথ।” (লোবো, ওর মুখের বাধন খুলে দে।)

লুহান মাথা নেড়ে রাফায়েল সিলভার মুখের বাধন খুলে দিতেই সে বিশুদ্ধ স্প্যানিশ ভাষায় বলল, [A/N: উদ্যান আর রাফায়েল সিলভার স্প্যানিশ ভাষার কথোপকথন গুলো বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় দেওয়া হলো।]

“মিস্টার টি’কে আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেন?”

উদ্যান এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“ইউ গাইজ, গেট আউট অফ হিয়ার। আই ওয়ান্ট টু স্পীক টু হিম এলোন.”

উদ্যানের কথায় লুহান আর সোহম বেরিয়ে গেল। তারা চলে যেতেই উদ্যান বলে ওঠে,
“তোকে আমি বলেছিলাম আমার হার্ট বিট রেট কমে যাচ্ছে। এমন কিছু কর যাতে আমি ম*রে না যাই। তুই বলেছিস নিজের হার্টকে সচল রাখতে এমন কিছু করতে যেটাতে আমি স্যাটিসফাইড হই। আমি সেটাই করেছি আর ফলস্বরূপ আমার হার্ট এখন আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেছে। তুই এটাকে কিভাবে দেখছিস?”

ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে রাফায়েল সিলভা। মনে পড়ে গেল ৩ বছর আগের কথা যেদিন উদ্যানকে নিয়ে রিদম আর লুহান তার কাছে গিয়েছিল। রিদম আর লুহানের ধারনা ছিল উদ্যান মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। যদিও তারা উদ্যানকে এটা বলেনি যে সিলভা একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তবে উদ্যানের সাথে একান্তে কথা বলার সময় উদ্যান খুব সহজেই ধরে ফেলে যে সে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তারপর উদ্যান নিজেই তাকে বলে যে, তার বন্ধুদের যেন বলে; সে মানসিক ভাবে একদম সুস্থ আছে। কোনো সমস্যা নেই। ডাক্তারও উদ্যানের কথায় রাজী হয়ে যায়। কারণ তখনও সে ধরতে পারেনি যে উদ্যান আসলে একজন সাইকোপ্যাথ। যতদিনে সে বিষয়টা বুঝতে পারল ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। উদ্যান তাকে বাধ্য করেছে বিষয়টা চেপে রাখতে,

“কি ভাবছিস ডাক্তার?” উদ্যানের প্রশ্নে রাফায়েল সিলভার বুক কেঁপে উঠল। চশমা টা কোথাও পড়ে যাওয়াতে স্পষ্ট ভাবে উদ্যানকে দেখতেও পাচ্ছে না। সে ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমি তো সেটাই করেছি যেটা আপনি চেয়েছিলেন। এখন আপনার হার্ট সুস্থ আছে জেনে ভালো লাগলো। কিন্তু আপনি আমাকে এভাবে তুলে এনেছেন কেন?”

মাথা গরম হয়ে গেল উদ্যানের। চোখের রঙ পরিবর্তন হয়ে রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে লাগল,
“তুই আমার অনেক বড় উপকার করেছিস। আমাকে টেনে হিচড়ে ১৫ বছর আগের আমি তে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিস।”

কথাটা বলতে বলতেই উদ্যান গান বের করল। চোখের পলকেই শ্যুট করে দিল রাফায়েল সিলভার পায়ে। ব্যথায় ককিয়ে উঠল রাফায়েল সিলভা, তার আর্তনাদ শুনে উদ্যানের বিরক্তির মাত্রা তরতর করে বেড়ে গেল। দাঁতে দাঁত পিষে গলা চেপে ধরল রাফায়েল সিলভার। তীক্ষ্ণ গলায় রয়েসয়ে বলল,
“আমি টোটালি ইমোশনলেস হয়ে গিয়েছিলাম। তোর জন্য, শুধু মাত্র তোর জন্য আমি ফিল করতে পারছি। তোর বোকামোর জন্য আমার মাঝে উদ্ভট সব ফিলিংস জন্মাতে শুরু করেছে। এই কু*ত্তার বাচ্চা, তুই কি আমার শত্রুপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছিলি? স্বীকার কর। নইলে সবগুলো গুলি তোকে খাইয়ে দেবো।”

গলা চেপে ধরাতে চোখ উল্টে যেতে লাগল রাফায়েল সিলভার। সেই মুহুর্তেই উদ্যান ছেড়ে দিল তাকে। কয়েকটা বড়বড় শ্বাস নিয়ে হাপাতে হাপাতে রাফায়েল সিলভা বলতে লাগলেন,
“আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনার শত্রুপক্ষের সাথে হাত মেলাই নি, যেখানে আপনি ২৪ ঘন্টা আমার উপর নজর রাখেন সেখানে আমি কিভাবে হাত মেলাবো? আমি তো আপনার কথা মতোই কাজ করেছি। আপনি বলেছেন আপনার ডিসঅর্ডারের কথা গোপন রাখতে আমি সেটাও করেছি। আপনার সুস্থতার কথা চিন্তা করেই তো বলেছিলাম এমন কিছু করুন যেটা আপনাকে স্যাটিসফাইড করে। আপনি তো বুঝতেও পারছিলেন না কিসে আপনি স্যাটিসফাইড হবেন। সেটা নির্ণয় করতেও আমি আপনাকে হেল্প করেছিলাম। আপনার শত্রুকে যোগ্য শাস্তি দিতে বলেছি। আপনি কি সেটা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারেন নি?”

প্রচন্ড ক্রোধে উদ্যানের শরীর থরথর করে কাপছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে, ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে। সে শকুনি চোখে তাকাল রাফায়েল সিলভার দিকে,
“একদিকে আমি ওকে সঠিক শাস্তি দিতে পারছি না। সেই জন্য আমার মাঝে তীব্র অশান্তি হচ্ছে আরেকদিকে আমার নিজের হার্ট আমার সাথে বেঈমানি করছে। শত্রুকে কাছে পেয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছে। শত্রুর ছোঁয়ায় তৃপ্তি পাচ্ছে। এই ডাক্তার, আমার কি করা উচিৎ বল আমাকে। কি করা উচিৎ?”

ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলল রাফায়েল সিলভা। উদ্যানের মতো সাইকোপ্যাথ তাকে যখন তখন মে*রে ফেলতে পারে সেটা সে জানে।
“আমি আপনাকে বলবো। আমাকে মারবেন না প্লিজ।”

কথাটা শুনে উদ্যানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। আজ পর্যন্ত সে যার সামনে হেসেছে তার মৃত্যু কর্নফার্ম করেই থেমেছে। যদিও এটাকে হাসি বলা যায়না। তবুও খুবই ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে তাকে,
“ইউ চুজ ইয়োর ডেসটিনি? ভেরি গুড। তুই বলেছিলি আমার শত্রুকে শাস্তি দিতে পারলেই আমি স্যাটিসফাইড হবো। আর বর্তমানে তুই আমার শত্রু। তুই মরতে চাসনা মানে; বেচে থাকতে চাস। দ্যাটস মিন তোর মরে যাওয়া উচিৎ।”

কথাটা বলে একমুহূর্ত থামল না উদ্যান। গান তুলে রাফায়েল সিলভার মুখ বরাবর গু’লি চালিয়ে দিল। একটা দুটো নয়। সবগুলো গু’লি চালিয়ে ঝাঝড়া করে ফেলল রাফায়েল সিলভার মুখাবয়ব।

চলবে,

[পরবর্তী পর্ব পেতে রেসপন্স করুন]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply