Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৭


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (১৭)

সোফিয়া_সাফা

“শুধু শুধু আপনাদেরকে বিরক্ত করার জন্য আমরা দুঃখিত মিস্টার সিদ্দিক।” এসপি আরাফাত সানি কিছুটা নরম গলায় বললেন,

অনি মুখে হাসি টেনে বলল, “আমি কি জানতে পারি আমার নামে কে অভিযোগ করেছে?”

“না মিস্টার সিদ্দিক সেটা জানাতে পারবো না। নিষেধাজ্ঞা আছে। আমরা আজ আসি।” এসপি আরাফাত সানি অনির সাথে হাত মিলিয়ে জিপে উঠে বসলেন। এদিকে রিদম উর্বীর সামনে এসে দাঁড়ায়, তাকে দেখে উর্বী মুখ বাকিয়ে চলে যেতে নিলে রিদম বলে ওঠে,
“আপনি কি সবার সাথেই খারাপ আচরণ করেন, নাকি শুধু আমার সাথেই করলেন?”

জিপের দরজায় হাত রেখে উর্বী বলল, “যাদের দেখে আমার খারাপ ফিলিংস আসে আমি তাদের সাথেই খারাপ বিহেভ করি মিস্টার ছন্দ।”

রিদম কিছুটা রেগে গেলেও বুঝতে দিল না, “আপনি বলতে চাইছেন আ’ম ব্যাড পারসোন?”

“একদম না, আমি সেরকম কিছু বলতে চাইনি। উল্টো আপনার মনে হয়েছে আমি আপনার সাথে খারাপ আচরণ করেছি। বাস্তবে তো আমি আপনার সাথে নরমাল বিহেভই করেছি। একজন অপরিচিত লোকের সাথে এর থেকে স্বাভাবিক আচরণ কিভাবে করে আমার জানা নেই।”

স্বভাবতই হেসে উঠল রিদম, “ওহ তাই বলুন আমি তো ভাবলাম আপনি আমাকে আকারে ইঙ্গিতে খারাপ বুঝিয়েছেন। যাই হোক আপনি চাইলে আমরা পরিচিত হতেই পারি। আমি ইন্ডিয়ান, অনি সিদ্দিকের বন্ধু।”

উর্বী এবার দরজা ছেড়ে দাঁড়াল। বুকে হাত বেধে বলল, “আমাদের কাছে খবর ছিল উক্ত সিন্ডিকেটে আপনারা একের অধিক লোক জড়িত আছেন।”

“ওসব কথা বাদ দিন মিস উর্বী। আমাদের শত্রুর অভাব নেই। যেই দেখল আমাদের কোম্পানির সুনাম ধীরে ধীরে ম্যাক্সিকো ছাড়িয়ে বাইরের দেশে ছড়িয়ে পড়ছে অমনি তাদের চুলকানি শুরু হয়ে গেছে।” বেফাঁস কথাটা বলে দিয়ে রিদম আড়ঁচোখে উর্বীর দিকে তাকায়। তবে ব্যাড ওয়ার্ড শুনেও উর্বীর অভিব্যক্তি স্বাভাবিক ছিল যা দেখে রিদম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। উর্বী এবার গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। রিদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, মেয়েটার সাথে আরেকটু কথা বলার ইচ্ছা ছিল। অনেক চেষ্টা করেও অভিযোগ কারীর নাম বের করা যায়নি। রিদম ফিরে আসতে নেবে তার আগেই উর্বী গাড়ির জানালা দিয়ে হাল্কা উঁকি দিয়ে পেছন থেকে বলে ওঠে,
“বাই দ্য ওয়ে আমি মিস নই, মিসেস উর্বী! মিসেস উর্বী সেন।”

রিদম পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল উর্বীর মুখে হাসি। ঠিক হাসি বলা যায়না। মেয়েটা হয়তো দুঃখ লুকানোর জন্যই হাসছে। অবাক হলো রিদম, এভাবে হাসার কারণ বুঝে উঠতে পারল না। উর্বী সোজা হয়ে বসে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যেতেই রিদমের ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানের কাছে ধরতেই অপর পাশ থেকে লুহান অস্থির গলায় বলে ওঠে,
“তেহ কোথায়? এখনও আসেনি কেন? ও কি জেদ ধরে ওখানেই থেকে গেছে?”

লুহানের কথায় রিদম ফোনের স্ক্রিন সামনে এনে সময়টা দেখে নেয়। এখন সময় ১ টা,
“আরে ইয়ার, তেহকে তো পাঠিয়ে দিয়েছি। ও এখনও পৌঁছায় নি? দাড়া ওকে কল করে দেখছি।”
“তোর কি মনে হয় ওকে কল না করেই আমি তোকে কল করেছি?”
“মানে?”
“মানে ওর ফোন নট রিচেবেল বলছে।” লুহানের কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রিদম।

“কি বলছিস? এতোক্ষণে তো পৌঁছে যাওয়ার কথা। বাইকে করে যেতে তো এক থেকে দেড়ঘন্টার বেশি লাগার কথাই না।” রিদমের কথা শুনে লুহান কল কেটে দিয়েছে।

“কি হয়েছে রিদম?” অনি এগিয়ে আসতে আসতে প্রশ্ন করল,

“তেহ নাকি এখনও পৌঁছায় নি।” রিদমের কথা শুনে অনি দ্রুত হাতে ফোন বের করে উদ্যানের নম্বর ডায়াল করে। কিন্তু উদ্যানকে ফোনে পায় না।
“নট রিচেবেল বলছে।”

খানিকটা ভয় পেয়ে গেল রিদম, “কি হলো বল তো? তেহ তো এরকম করে না। কোথাও গেলেও তো সবসময় জানিয়ে যায়। তান অসুস্থ থাকাকালীন তেহ রাতের সময়টা হসপিটালে কাটিয়েছে সেটাও আমদেরকে বলেই গেছে। তাহলে আজ কি হলো?”

অনি একমূহুর্ত অপেক্ষা করল না; পার্কিং এরিয়ার দিকে হাটা ধরল, “আমাদের এখনই ওকে খুঁজতে বের হওয়া উচিৎ।”

রিদমও পা মেলাল তখনই আবারও তার ফোনে কল আসে। এবারও লুহানই কল করেছে। রিদম কলটা রিসিভ করে ভারী গলায় শুধায়,
“কিরে তেহুর খোঁজ পেয়েছিস?”

“হুম শান্ত হ তেহ কে পেয়ে গেছি।” কথাটা বলেই লুহান কল কেটে দিল।

নেবুলাইজারের শো শো শব্দে উদ্যানের অবচেতন মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যায়। আধো চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে ড্রইংরুমের সোফার উপর আছে, সামনেই লুহান, সোহম আর মেলো বসে আছে। লাইটের তীব্র আলোয় উদ্যান আমারও চোখ বন্ধ করে নেয়। তৎক্ষনাৎ মানসপটে ভেসে ওঠে কিছুক্ষণ আগে ঘটা ঘটনার প্রতিচ্ছবি,
ধরফরিয়ে উঠে বসে উদ্যান। মস্তিষ্কে এখনও ঠিকঠাক ভাবে অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না। মাথা ঘুরচ্ছে, মাথা চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল উদ্যান। তার অবস্থা দেখে মেলো চিন্তিত গলায় বলল,
“আর ইউ ওকে? শ্বাস নিতে পারছিস এখন?”

উদ্যান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে, “আমি কতোক্ষণ ব্ল্যাকআউট ছিলাম?”

মেলো নিম্ন গলায় বলল, “তাতো জানিনা, তুই ঠিক কতক্ষণ লিফটে পড়ে ছিলি। সোহম আর লুহান তোকে খোঁজার জন্য বের হতে গিয়ে তোকে লিফটে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছে।”

দেয়ালে ঝোলানো ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে উদ্যান দেখল এখন রাত দুটো। তার মানে সে একঘন্টার মতো অচেতন ছিল। সব ভাবনা সাইডে রেখে উদ্যান সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল, “মেয়েটাকে জঙ্গলের মাঝে ফেলে রেখে এসেছি এখনই গিয়ে নিয়ে আয়।”

উদ্যানের কথা কেউই বুঝে উঠতে পারল না।
“কোন মেয়েটার কথা বলছিস?” লুহান জিজ্ঞেস করল,

উদ্যান মাথা ঝাকিয়ে একহাতে নেবুলাইজার মাস্ক নিল তারপর নিজের মুখে চেপে ধরল, খানিকক্ষণ শ্বাস নিয়ে আবারও বলে ওঠে,
“আরে ওই মেয়েটার কথা বলছি।”

“ওই মেয়েটা কোন মেয়েটা? ক্লিয়ার করে বল বাপু।”
সোহমের কথায় উদ্যানের মাথার মধ্যে টগবগ করে উঠল।
“ওই মেয়েটা মানে আমি আমার পার্সোনাল মেইডের কথা বলেছি। ওকে আমি জঙ্গলে ফেলে রেখে এসেছি। এক্ষুনি গিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে আয়। কুইক,”

“কিহ! তুই হার্মফুলকে একা জঙ্গলের মাঝে ফেলে রেখে চলে এসেছিস? আর ইউ ক্রেজি?”

“নোহ, আমি ঠিক আছি। পরিস্থিতি এরকম হয়ে গিয়েছিল যে আমি বাধ্য হয়েই ওকে ফেলে রেখে চলে এসেছি। তোরা তাড়াতাড়ি যা।”

লুহান মাথা নেড়ে হাটা ধরল। সোহম অবিশ্বাসী চোখে উদ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকে বিরসমুখে বলে ওঠে,
“মেয়েটাকে যখন ফেলে রেখেই আসবি তাখন সোলার এস্টেটেই রেখে এলে পারতি। শুধু শুধু জঙ্গলে রেখে আসার কি দরকার ছিল। মাঝ রাতে একা একটা মেয়ে জঙ্গলে তো শেয়াল কুকুরও থাকে। তাছাড়া সেদিন চার্লস মেয়েটার কাছে যাওয়ার পর কি হয়েছিল ভুলে গেছিস? আজকেও যদি তেমন কিছু হয়?”

চোখ বড়বড় হয়ে গেল উদ্যানের আবারও নেবুলাইজার মাস্ক টা মুখে চেপে ধরল। কিয়ৎক্ষন বাদেই বলে উঠল,
“আমি তোকে যেতে বলেছি সল। এখনই যা।”

সোহম শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়, দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও পিছু ফিরে বলল,
“কোথায় খুঁজবো? ক্লু আছে? ক্লু না থাকলে তো লোকেদের কল দিয়ে আনতে হবে খোঁজার জন্য। তাতে তো অনেক টাইম লাগবে। পুরো জঙ্গল খুঁজতে গেলে সকাল হয়ে যাবে।”

“আমি ক্লু রেখে এসেছি, সামনে একটা ভাঙা ট্রি হাউজ আছে। বাইকে করে গেলে ১০ মিনিটের পথ। আমি সেখানে অনেকগুলো ডালপালা ভেঙে রেখে এসেছি। খুব সহজেই পেয়ে যাবি। তাড়াতাড়ি যা।”

“ওকে যাচ্ছি।” সোহম আর লুহান চলে যেতেই উদ্যান সোফার উপর হেলে পড়ে।
“তুই ঠিক নেই তেহ।” মেলোর শান্তকণ্ঠে উদ্যান চোখ বন্ধ করে নেয়। সে আসলেই ঠিক নেই, একদম ঠিক নেই। সেদিনও ঠিক ছিলো না। যেদিন সে ফুলের কানে কিস করেছিল। তৎক্ষনাৎ সে বেশ সন্তুষ্ট হলেও কিছুক্ষণ যেতেই সে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল। ফুলকে ছাড়া তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। সেদিনই উদ্যান মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল এরকম কিছু আর কখনও করবেনা। এরকম কিছু কেন করবে যেটা তাকে দূর্বল করে দেয়। যেটা তাকে মানসিক চাপে ফেলে দেয়?
মূলত দূর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কাতেই উদ্যান ফুলকে ফেলে রেখে চলে এসেছে। অবশ্য উদ্যান আজকে আরও একটা বিষয়ে আশ্চর্য হয়েছে, যেই মেয়েটা সেদিন তার সেইটুকু স্পর্শই সহ্য করতে পারেনি। যেই মেয়েটা চার্লসের হাত থেকে বাচার জন্য সুই*সাইড অ্যাটেম্পড করেছিল। সেই মেয়েটাই কেন আজকে পাগলের মতো আচরণ করল? শুধু কি অসুস্থতা জনিত কারণেই এরকম করেছে? উদ্যান জানেনা মেয়েটা কেন এসব করেছে। সে বোঝেনা এসব, আর নাতো বুঝতে চায়। ফুল তার শত্রু, শত্রুকে নিয়ে এমন উদ্ভট চিন্তা করার মানেই হয়না।
“অনেক বছর যাবৎ তোর ব্রিদিং প্রবলেম হয়নি তেহ। তবে আজ কি হয়েছিল? দেড় মাস আগেই বা কি হয়েছিল? তুই কি নিয়ে এতোটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কোন জিনিসটা তোকে ট্রিগারড করছে? আমি অনুমান করতে পারছিনা, তুই ঠিক কতোটা চাপে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিস। এনিথিং রঙ তেহ?”

মেলো রয়েসয়েই কথাগুলো বলেছে। যদিও সে উত্তর পাওয়ার আশা রাখেনি। উদ্যান মানসিক চাপে থাকলেও সেটা যে কারো সাথে শেয়ার করবে না। এটা মেলোও জানে। আর হলোও তাই উদ্যান প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “তান কোথায়? ওকে নিয়ে আয়।”

উঠে দাঁড়াল মেলো। চলে গেল তানকে আনতে। উদ্যান বসা থেকে উঠে শার্টের বাটন খুলতে লাগল। ভেজা শার্টে শরীর ভার লাগছে। সে শার্টটা খুলে পেছনে তাকাতেই দেখল মেলো গোলগোল চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তান ছুটে এলো উদ্যানের কাছে। এদিকে মেলোর চাহনিতে বিব্রত হয়ে পড়ল উদ্যান। দ্রুত ভারী গলায় বলল,
“নিজের রুমে যা মেলো।” মেলো যেন কথাটা শুনলোই না। এবার বিরক্তিতে চিল্লিয়ে উঠল উদ্যান,
“আই সেড গো টু ইওর ওন ড্যাম রুম, এম।”

এবার মেলো নড়েচড়ে উঠল। মাথা নেড়ে উল্টো ঘুরে নিজের রুমে চলে গেল। উদ্যান নিচু হয়ে তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। তানও জিভ বের করে উদ্যানের সাথে লেগে দাঁড়াল।
“এটুকু সময়েই মিস করেছিস? দ্যাটস আ ব্যাড হ্যাবিটস তান। কাউকে মিস করাটা একটা অসুখ। আর আমি চাই আমার তান সুখে থাকুক।” তান এবার ঘেউ ঘেউ করে উঠল। উদ্যান ভ্রু কুচকে প্যান্টের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তান জানতে চাইছে এই রাতের বেলা প্যান্ট ভেজা কেন?
“আপদ নিয়ে বাইকে উঠেছিলাম তান; তাই বিপদে পড়ে পানিতে হাবুডুবু খেয়ে এসেছি। তুই থাক আমি চেঞ্জ করে আসছি। কেমন?”

উদ্যান নিজের রুমে এসে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। এটা সোহমের অ্যাপার্টমেন্ট, দেশে এলে সোহম এখানেই থাকে। আর আজ থেকে আগামী কিছুদিন তারাও এই অ্যাপার্টমেন্টেই থাকবে। কয়েক মিনিট পর উদ্যান ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে খাটের উপর বসল। সে বের হতেই তান আদুরে ভঙ্গিতে উদ্যানের সাথে ডলাডলি করতে লাগল। তন্মধ্যেই মেলো একপ্রকার ছুটে আসে উদ্যানের রুমে। দরজার সামনে এসে ব্যস্ত গলায় বলে,
“ফুলকে ওরা খুঁজে পাচ্ছেনা তেহ।”

কথাটা শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় উদ্যান, “কিহ! ভালো করে খুঁজেছে?”

মেলো এবার রুমে এসে ফোনটা উদ্যানের দিকে এগিয়ে দিল। উদ্যান ফোনটা কানের কাছে নিতেই অপরপাশ থেকে সোহম বলে ওঠে,
“আমরা চিহ্নিত জায়গাতেই আছি। ভাঙা ট্রি হাউজের সামনে। এখানে ভাঙা ডালপালাও আছে কিন্তু রিগ্রেটফুলকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।”

হাতে থাকা ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরল উদ্যান।
“তোরা আশেপাশে খুঁজে দেখ আমি আসছি।”

কল কেটে দিয়ে উদ্যান ফোনটা মেলোর দিকে এগিয়ে দিল। “ফোনের লক খুলে দে, আমার ফোন হারিয়ে গেছে।”

মেলো বুঝতে পারল উদ্যানের কথা। তাই সে দ্রুত নিজের ফোনটার লক খুলে উদ্যানের হাতে দিয়ে দিল।


অনিলা নিজের রুমে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখনই অনি রুমে আসে।
“তুমি হঠাৎ?”

অনি ধীরপায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“হঠাৎ? আমাকে কি তুমি প্রতিরাতে এক্সপেক্ট করো?”

অনিলা প্রতিউত্তরে কিছুই বলল না। অনি এসে অনিলার পাশে বসতেই অনিলা কিছুটা দূরে সরে বসে।
“আমাকে এতোটা ঘৃনা না করলেও পারো।”

“ঘৃনা ছাড়া আর কি করবো তোমাকে? আমার লাইফ টাকে হেল করে দিয়ে বলছো ঘৃনা না করলেও পারি? ইয়া নো পুয়েদো মাস, দে বেরদাদ নো পুয়েদো।”

অনিলার মুখে স্প্যানিশ ভাষা শুনে অনি বিরক্তিমাখা চোখে তাকাল,
“এই বেয়াদব মহিলা, বেশি স্প্যানিশ ঝাড়বা না। পুরো ৬ বছর স্পেশাল টিচার রেখে বাংলা শিখিয়েছি। যদিও স্প্যানিশ বুঝি আমি তবুও ভালো লাগেনা শুনতে।”

“বাংলায় বলতেছি, আমি পারিনা তোমাকে ঘৃনা ছাড়া কিছু করতে, মুক্তি দাও আমায়। আর কয়বছর আটকে রাখবা? এবার অন্তত ছেড়ে দাও।” অনিলা হাত ছুড়ে ছুড়ে কথাগুলো বলছিল। অনি তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের গালে ঠেকালো।
“আমি যেদিন মরে যাবো সেদিন তুমি মুক্তি পেয়ে যাবা। তার আগে মুক্তি নেই তোমার।” কথাটা শুনে অনিলা অবাক চোখে তাকায়, “এভাবে তাকিও না, আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা। এভাবে তাকালে তোমাকে মুক্তি দিয়ে আমার ম*রে যেতে ইচ্ছা করে।” অনিলা মাথা নিচু করে নিল। অনি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল,
“আমার জীবনে তোমার আসা উচিৎ হয়নি অনিলা। সেদিন আমাকে নিজের ছাতার নিচে ঠাই দেওয়াটা তোমার উচিৎ হয়নি। আমি বৃষ্টিতে ভিজে গেলে যেতাম, কেন সহমর্মিতা দেখালে আমাকে? আমি যে সহমর্মিতার জন্য বড্ড কাতর ছিলাম। কেন লোভ লাগিয়ে দিলে? তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতে পারতে তাহলে হয়তো আমিও তোমাকে এড়িয়ে যেতাম।”

চোখের কোণে জল জমলো অনিলার। চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিল। হঠাৎ করে পুরোনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ে গেল।
“কি অদ্ভুত আমি আমার আসল নামটা পর্যন্ত ভুলে যেতে বসেছি। তুমি হয়তো সফল হয়েই যাচ্ছো অনি। তুমি আমাকে ফেনেলা থেকে সত্যি সত্যিই অনিলা বানিয়ে ফেলছো। তবে ট্রাস্ট মি আমি অনিলা হতে চাইনা। আমি ভুলে যেতে চাইনা নিজের শেখরকে।”

“আমিও চাইনা, আমি শুধু তোমাকে নিজের দখলে রাখতে চাই। একটু সহমর্মিতার জন্য। এইযে সুযোগ পেলেই তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো ব্যস এটুকুই।”

“বছরখানেক হলো তুমি আমার উপর জোরাজুরি কোরোনা। ব্যাপার কি? ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছো? তুমি আগের মতো হয়ে গেছো তাইনা অনি? আমার অগোচরে মেয়েদের সাথে নাইট স্পেন্ড করো?”

বিদ্যুৎ গতিতে অনি উঠে বসল। একহাত অনিলার মাথায় রেখে বলল, “বিশ্বাস করো তোমাকে বিয়ে করার পর আর কোনো মেয়ের দিকে বাজে চোখে তাকাই নি পর্যন্ত অনিলা।”

“তাহলে? তুমি থাকো কিভাবে? আগে তো না পেরে আমার সাথে জোরাজুরি করতে।”

“আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি অনিলা। আর ভালোবাসার সাথে জোরাজুরি করা মানায় না। আমার খারাপ লাগে, সেই জন্যই তো রুম আলাদা করে ফেলেছি। যাতে তোমার সাথে মনের ভুলেও বাজে কিছু করতে না পারি। আমি বুঝতে পেরেছি মনের সন্তুষ্টি শারীরিক মেলামেশা ছাড়াও লাভ করা যায়। এইযে তোমার মুখখানা দেখলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। এটাই তো আত্মতুষ্টি।”

অনিলা ঠোঁট চেপে মাথা নিচু করে নিলো। অনিও হাল্কা হেসে আবারও অনিলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।

জঙ্গলের মাঝে হন্যে হয়ে ফুলকে খুঁজে চলেছে উদ্যান, লুহান, সোহম। রিদমও কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন নিয়ে এসে পড়বে।
যেই গাছটার সাথে ফুলকে বেধে রেখে গিয়েছিল। ফিরে এসে সেই গাছের সাথে ফুলকে খুঁজে পায়নি উদ্যান।
“আমার মনে হয় ডাউটফুল সুযোগ পেয়ে পালিয়ে গেছে। ভুলে গেলি হসপিটাল থেকেও তো বেশ কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।”

সোহমের কথায় উদ্যান রুক্ষ গলায় বলল, “ও পালিয়ে যাবার মতো কন্ডিশনে ছিলো না। তার উপর আমি অনেক শক্ত করে গাছের সাথে প্যাচিয়ে ওর হাত বেধে রেখে গিয়েছিলাম। কারো সাহায্য ছাড়া মুক্ত হওয়াটাও অসম্ভব ছিল। সেখানে কি করে পালিয়ে যাবে? ভালো করে খোঁজ, আমার মনে হচ্ছে ও আশেপাশেই আছে।”

ভোর পাঁচটা, ফুলকে খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উদ্যান। আর পারছেনা, মেয়েটা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? মেয়েটাকে খুঁজে না পেলে উদ্যান কি করবে? ভাবনা টা মাথায় আসতেই উদ্যান নিজের ঘাড় চেপে ধরল। বাকি সবাই এদিক সেদিক খোঁজাখুজি করছে। উদ্যান থেমে গিয়ে হাপিয়ে উঠল, হঠাৎ হাটুমুড়ে বসে পড়ল। চারপাশ থেকে যেন ফুলের বলা কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে,
“আপনি একটা ল*ম্পট, বোধবুদ্ধি হীন দানব। যার মধ্যে না আছে হৃৎপিণ্ড আর না আছে মেরুদণ্ড।”

“হ্যাঁ আমি সবকিছু তবে আমি ল*ম্পট নই, আমি নই তেমন। তাছাড়া সবকিছু আমি, আমি স্বীকার করছি। তবে তুইও স্বীকার করে নে, তুই বিধ্বংসী, তুই সর্বগ্রাসী, তুই আপদ, তুই সর্বনাশী।”

উদ্যান একবার আশেপাশে তাকালো ফের চারপাশ থেকে ভেসে এলো, “আপনার থেকে একটু রহম আশা করেছিলাম। স্ত্রী হিসেবে না হোক একজন নারী হিসেবে একটু রহম করতেই পারতেন। আমি আর আশা করবো না কিছু, নিজেকে প্রোটেক্ট করতে না পারলে শেষ করে ফেলবো তবুও শেষ নিশ্বাস অবধি কলঙ্ক মুক্ত থাকব।”

দ্বিতীয় বারের মতো উদ্যানের কণ্ঠরোধ হয়ে এলো, সে বিরবির করে বলে উঠল, “তোকে একা রেখে যাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছিল। আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তুই আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দে তবুও আমি আর তোকে গাছের সাথে বাধবো না। ফিরে আয়, ফিরে আয়। আমার ঋণ শোধ না করে তুই হারিয়ে যেতে পারিস না। অনেক দেনাপাওনা আছে আমাদের মাঝে। তুই অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছিস আমার থেকে। এভাবে কিভাবে চলে যেতে পারিস?”

উদ্যান হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো? মেয়েটা তো সেই রকম নয়। মেয়েটা তো প্রমাণ করে দিয়েছিল সে সবার থেকে আলাদা। মেয়েটা তো সেসব সহ্য করতে পারবেনা। লোভী কৃষকের মতো কি তবে এবার উদ্যানও হারিয়ে ফেলবে তার সন্তুষ্টিকে?
“নাহ, প্রিমরোজ……

উদ্যানের চিৎকারে চারপাশ কেঁপে উঠল। হঠাৎ তার চিৎকারে আশেপাশের গাছে থাকা পাখি গুলো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ডানা ঝাপটে এদিকে সেদিকে উড়াউড়ি করতে লাগল। উদ্যান থামল না; আবারও ডেকে উঠল,
“প্রিমরোজ! হোয়ার আর ইউ? কাম আউট ফাস্ট।”

উদ্যান এবার ছুটে ছুটে ফুলকে খুঁজতে লাগল। অন্যদিকে তার অবস্থা দেখে বাকি সবাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে চারদিকে।

চলবে,,,

[নেক্সট পর্ব পেতে রেসপন্স করুন]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply