Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৫


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (১৫)

সোফিয়া_সাফা

আচমকা দরজা খোলার ‘খট’ শব্দে ফুল হাটু থেকে মুখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। অন্ধকারের মাঝে কে এসেছে ঠাহর করতে পারে না; তবে এক ছায়ামানব খোলা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফুল হাতের উল্টো পিঠে চোখে মুছে ধরা গলায় শুধায়,
“কে… কে ওখানে?”

অবয়বটা উত্তর না দিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল। ফুল এবার বেশ ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত পায়ে উঠে গিয়ে লাইট অন করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে উদ্যান লাঠি হাতে এগিয়ে আসছে। লাঠিটা দেখে ফুলের দম আটকে এলো।
“কি… কি হয়েছে, আপনি এখানে?”
“তুই আবেশকে মিস করছিস?”

উদ্যানের গম্ভীর কণ্ঠে ফুল চকিত নয়নে উদ্যানের পানে চাইলো। উদ্যানের পরণে কালচে নেভি রঙের স্লিম-ফিট থ্রি-পিস স্যুট, কাঁধের কাট নিখুঁতভাবে দেহের গঠনকে ফুটিয়ে তুলছে। ভেতরে কালো সিল্কের শার্ট, গলার বোতাম খোলা। বাম হাতে কালো চামড়ার ব্রেসলেট, ডান কবজিতে চকচকে Rolex ঘড়ি; আঙুলে একটিমাত্র সিলভার রিং। ফুলের আর বুঝতে বাকি রইল না আজকে আসলেই পার্টি আছে। সেই সাথে তার কপালেও হয়তো দুঃখ আছে। উদ্যান যত এগিয়ে আসছে ফুলের ভয় তত বেড়ে যাচ্ছে, পিছিয়ে যেতে যেতে ফুলের পিঠ গিয়ে ঠেকল ওয়ারড্রবের সাথে৷ উদ্যান একদম তার কাছাকাছি এসেই থেমেছে,
“আবেশকে মিস করছিস?”

প্রশ্নটা শুনে ফুলের চোখ বড়বড় হয়ে গেল।
“উত্তর দে।”

উদ্যান এতোটা কাছে আসায় ফুলের দম বেরিয়ে আসার উপক্রম। উদ্যান ফুলের মুখ বরাবর ঝুঁকে গিয়ে বলল,
“আই থিংক তুই আবেশের চেয়েও লাঠিকে বেশি মিস করছিস। এই যে উত্তর না দিয়ে চুপচাপ আছিস; সবই তো লাঠির আদর পাওয়ার জন্য তাইনা?”

অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিল ফুল, চোখ বন্ধ করে বলল,
“আমি কাকে মিস করছি, না করছি তা জেনে আপনি কি করবেন?”
“আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়। তুই আবেশকে মিস করছিস কিনা সেটা বল।”
“না করছি না।”

কথাটা শুনে উদ্যান দুপা পিছিয়ে গেল। তারপর ফুলকে উপর নিচ পরখ করে বলল,
“আমি এইসব ফিলিংস টিলিংস বুঝিনা; তাই তোর কথাই বিশ্বাস করে নিলাম। এবার হাত এগিয়ে দে।”

ঘাবড়ে গেল ফুল, মনস্টার টা চাইছেটা কি?
“আপনি আমাকে শুধু শুধু মারতে পারেন না।”

হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে ফুলের ঘাড় প্যাচিয়ে ধরল উদ্যান। মুখটাকে ফুলের কানের কাছে নিয়ে বলল,
“শুধু শুধু কোথায়? তুই যে একটু আগে গান গেয়ে শোনালি তার পুরষ্কার দিতে হবেনা?”

চমকে গেল ফুল। মনস্টার টা কিভাবে জানল যে সে গান গেয়েছে? রুমে মাইক্রোফোন টাইপের কিছু লাগিয়ে রাখেনি তো? রাখতেও পারে,
“আমি গান গেয়েছি তাতে আপনার কি ক্ষতি হয়েছে?”

ফুলের প্রশ্নে উদ্যান শান্ত চোখে তাকাল ফুলের দিকে। তার চাহনির রোশনলে ফুলের হৃদয় কেঁপে উঠল।
“ক্ষতি হয়েছে আমার, ভালো লাগেনি তোর গান।”

ঘৃনায় রিরি করে ওঠে ফুলের শরীর। এমন অনুভূতি প্রথমবার হচ্ছেনা। উদ্যানের ভিত্তিহীন, যুক্তিহীন কথাগুলো শুনলেই তারমাঝে ঘৃনা কাজ করে। পুনরায় স্বাভাবিক দুরত্বে সরে গেল উদ্যান।
“তাড়াতাড়ি হাত এগিয়ে দে। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে আমার।”

ফুল নিরুপায় হয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। জানে এর থেকে রেহাই নেই। উল্টো তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এই মনস্টার টা তাকে না মেরে ক্ষান্ত হবেনা। হাত এগিয়ে দিয়ে নির্জীব পর্দাথের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে ফুল। উদ্যান লাঠি দ্বারা ফুলের হাতে আঘাত করতেই যাবে তন্মধ্যেই তার ফোন বেজে ওঠে। চোখজোড়া বন্ধ করে আঘাতের অপেক্ষায় ছিল ফুল, ফোনের টোনে চোখ মেলে তাকায়। উদ্যান বাম হাতে ফোনটা বের করে কানে চেপে ধরার পরমুহূর্তেই গর্জে উঠল,
“হু দ্য হেল শি ইজ?”

ফোনের অপর পাশ থেকে অনি বলল,
“ঠিক করে বোঝা যাচ্ছেনা। পুলিশ বা সি আইডির লোক হতে পারে।”

“আই ফা*কিং ডোন্ট কেয়ার। আসতে দে,” উদ্যান কল কেটে দিতে যাবে তার আগেই অনি বলে ওঠে,
“তোর মাথায় কি জং ধরতে শুরু করেছে? এভাবে নিজের পায়ে কুড়াল তো পাগলেও মারেনা। লুহান আর সোহম অল্রেডি সব গুটিয়ে নিয়েছে। তুই শুধু সেইফলি বেরিয়ে যা। কটা দিনেরই তো ব্যপার প্লিজ। সবকিছু ঘেটে ফেলিস না।”

উদ্যান চোখ উল্টে কল কেটে দিল। মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। উদ্যানের অভিব্যক্তি দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ফুল। লোকটার হঠাৎ কি হলো বুঝে উঠতে পারছেনা। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে লাঠিটা ফেলে দিল উদ্যান। তারপর হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এতোক্ষণ যাবত আটকে রাখা শ্বাস ত্যাগ করার ফুরসৎ পেল ফুল। শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে খাটের উপর বসে পড়ল। এতোক্ষণ যেন কেউ তার গলা চেপে ধরে রেখেছিল।

নিজের রুমে এসে তানকে খুঁজে না পেয়ে হুংকার ছাড়ে উদ্যান, এমনি হাতে সময় নেই তার উপর তান কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেল? এরইমাঝে ব্যস্ত পায়ে রিদম রুমে প্রবেশ করে,
“আরে তুই এখানে কি করছিস? লুহান আর মেলো যাওয়ার সময় তানকেও সঙ্গে নিয়ে গেছে। আর সোহমও হয়তো বেরিয়ে পড়েছে। তুই ইমিডিয়েট বের হ,”

ড্রয়ার থেকে চাবিটা আলগোছে হাতে নিয়ে হাটা ধরল উদ্যান। যাওয়ার আগে পেছন ফিরে বলল,
“এসব যে করেছে তাকে দেখে নেবো। আমার সাথে শত্রুতা করে নিজের ধ্বংস নিশ্চিত করেছে।”

“আমি সিওর এসব মিস্টার মরগ্যান করেছে। আমি ভেবেই পাচ্ছিনা চার্লস ধোঁকা দেওয়ার পরেও মিস্টার মরগ্যান কিভাবে ভাইয়ের হয়ে আমাদের এতোবড় ক্ষতি করে দিল।”

“আমি সব বুঝে গেছি। এসব ওদের ষড়যন্ত্র ছিল, চার্লস মরগ্যানের সাথে বিট্রে করতে রাজি হওয়ার ভান ধরেছিল। আসলে ও বিট্রে টা করতো আমাদের সঙ্গে।”

রিদম বার দুয়েক পলক ফেলে উদ্যানের কথার সারমর্ম বোঝার চেষ্টা করল। তার ভাবনার মাঝেই উদ্যান বেরিয়ে গেছে। তবুও রিদম যেন ভাবনার কিনারায় পৌঁছাতে পারছে না। যদি উদ্যানের ধারণা কোনোভাবে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। তাহলে তো এতে সবচাইতে বেশি রিদমের গাফিলতি আর ব্যর্থতা ফুটে উঠবে। সে-ই তো চার্লসের সাথে সিক্রেট ডিল নিয়ে আলোচনা করেছিল। ওহ নো! এসব যেন সত্যি না হয়। কোনোভাবে সত্যি হয়ে গেলে লাঠিচার্জ থেকে নিস্তার নেই।

ধুপধাপ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল উদ্যান। ড্রইংরুমে এসে থামতেই আশেপাশে তাকাল। পার্টি চলাকালীন সমস্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট টেরেসে করা হয়। অতিথিদের যাতায়াতের জন্য বাড়ির ভেতর দিয়ে ঢুকতে হয়না। টেরেসে যাওয়ার জন্য বাড়ির বাইরে আলাদা সিঁড়ি আছে। আজকের পার্টি, যা উদ্যানের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার জন্য ছিল অত্যন্ত ভ্যালুয়েবল অকেইজন, একেবারে হঠাৎ করেই বাতিল করতে হয়েছে।
এমন ঘটনা উদ্যানের জীবনে খুব কমই ঘটেছে। তার প্ল্যান মানে নিখুঁত শৃঙ্খলা একদম নির্ভুল আর নির্বিঘ্ন। অথচ আজকের এই বাধা যেন তার অহংকারের মর্মে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

উদ্যান মেইন দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েও থেমে গেল। উল্টো দিকে ঘুরে চলে গেল সার্ভেন্ট রুমের দিকে। রুমা, নাদিয়া খুচরো আলাপে মেতে ছিল। আজকের পার্টি বাতিল হওয়াতে নাদিয়ার মন খারাপ। নাচগান তার বেশ ভালো লাগে, তার উপর সে যা ইচ্ছা খেতে পারে। নিজ ইচ্ছায় চলতে পারে। সেসব আজ কিছুই হলো না। উদ্যানকে হঠাৎ আসতে দেখে রুমা, নাদিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে,
“মাস্টার আপনি?”

উদ্যান পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলল,
“মেয়েটা কোথায়?”

রুমা আর নাদিয়া একে অন্যের দিকে তাকাল। মেয়েটা? মানে কী? তারা কি মেয়ে নয়? নাকি উদ্যান তাদের মেয়ে বলে ভাবেই না? বিভ্রান্ত হয়ে গেল দুজনেই। ঠিক তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ফুল। চুলগুলো উঁচু করে খোপা করা, ওড়না টা সাধারণ ভাবেই বুকের উপরিভাগে জড়ানো। চোখেমুখে বিন্দু বিন্দু পানির কণার উপস্থিতি। সে বের হতেই উদ্যান ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে ফেলে। বিস্ময়ে ফুলের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম, সে একবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও উদ্যানের দিকে তাকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উদ্যান তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। অবাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ফুল শুধু তাকিয়ে রইল, তার পায়ের স্যান্ডেল মেঝেতে ঘষটে শব্দ তুলছে। সেদিকে উদ্যানের কোনো খেয়াল নেই।

দোতলা বাড়িটার সামনে এসে থামে বেশ কয়েকটা কালো রঙের জিপ। রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে ঢালাই করা রাস্তার দুপাশে লাগানো স্ট্রিট লাইট। একদম সামনের গাড়ি থেকে দ্রুত পায়ে নেমে আসে এক রমণী। পরণে পুলিশ ইউনিফর্ম থাকায় বোঝাই যাচ্ছে সে আদতে একজন পুলিশ ইনস্পেকটর। আসার পথে তার গাড়ির টায়ার দুবার পাংচার হয়েছিল। সে অবশ্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। তাই খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সবগুলো গাড়ি থেকে একে একে মানুষজন নামতে শুরু করে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বেশ তোড়জোড় সহিত এসেছে তারা।
বাড়ির বাইরের শ্বেত পাথরে খোদাই করা ‘SOLAR’ লেখাটায় চোখ বুলিয়ে রমণী তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
“আমরা সঠিক জায়গায়তেই এসেছি।”

হন্তদন্ত হয়ে কয়েকজন যুবক আর এক নারীকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে ড্রইংরুমে বসে থাকা অনিলা অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,
“আরে আপনারা কারা? এতো রাতে কোত্থেকে উদয় হলেন?”

পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিতা রমণী শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,
“আমি উর্বী, ইন্সপেক্টর উর্বী।” পাশে থাকা একজনকে দেখিয়ে বলল, “উনি এসপি আরাফাত সানি।”

অনিলা হা হয়ে গেল, “আপনারা আমাদের বাড়িতে কেন? ওগো শুনছো…

অনিলা গলা উঁচিয়ে ডাক লাগাল। তার ডাকে অনি সিঁড়িবেয়ে নেমে এলো। উর্বী এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর একটা কাগজ রেগে সোজা হয়ে দাঁড়াল তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমাদের কাছে এই বাড়িটা সার্চ করার ওয়ারেন্ট আছে।”

“হোয়াট? কি বলতে চান আপনারা? এভাবে আপনারা আমার বাড়ি সার্চ করতে পারেন না।” অনি কঠোর গলায় বলল,

উর্বী একহাত কোমড়ে রেখে চোখ উল্টে বলল,
“গত ৩ সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করার পর অবশেষে সার্চ ওয়ারেন্ট কালেক্ট করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা আমাদের কাজে বাধা দিতে আসলে ফল খুব খারাপ হবে।”

অনি দাঁতে দাঁত পিষে বলল, “দেখুন আমি কাজের সূত্রে মেক্সিকোতে থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা এভাবে মন চাইলেই আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।”

এবার এসপি আরাফাত সানি বললেন, “মিস্টার অনি সিদ্দিক, অনুগ্রহ করে আমাদের কাজটা করতে দিন।
আমরা একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেয়েছি যে, এই বাড়িতে অবৈধ মাদকদ্রব্য মজুদ রয়েছে এবং প্রাথমিক তথ্যে আপনার নামও ওই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বলে উঠে এসেছে। তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না, তাই অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করুন।”

অনি থমকে গেল, “এসব কি বলছেন? আমার মতো একজন বিজনেসম্যানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করাটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?”

উর্বী এবার বিরক্তি মিশিয়ে বলল, “আপনি কিন্তু আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।”

অনি এবার সোফায় বসে পড়ল, “ওকে সার্চ করুন তবে।”

এরইমাঝে রিদম নিচে এসে দেখল লোকজন ইতোমধ্যেই খোঁজাখুজি শুরু করে দিয়েছে। উর্বী সবাইকে গাইড করছে।
“এক্সকিউজ মি ম্যাডাম কতক্ষণ সার্চ করবেন?”

পেছনে ঘুরে হঠাৎ রিদমকে দেখে উর্বী বিরক্ত হলো।
“কে আপনি?”
“রিদম, যার মানে ছন্দ। আপনি?”
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।” উর্বী উল্টো ঘুরে কাজে মন দিল।

“এটা তো অন্যায় করলেন। পুলিশের লোক হয়ে অন্যায় করেন, ভেরি ব্যাড।”
আঁড়চোখে তাকিয়ে উর্বী বলে, “মানে?”
“মানে হলো আপনি আমার পরিচয় নিলেন কিন্তু নিজের পরিচয় দিলেন না। এটা অন্যায় হলো না? যদিও আপনার নেমপ্লেট দেখে আপনার নাম আর পদবি জেনে গেছি আমি; মিস ইনস্পেকটর উর্বী।”

উর্বী এবার ধারালো গলায় বলল, “বিরক্ত করার জন্য আমি আপনার উপর আইন প্রয়োগ করতে পারি। এক চুটকিতে আপনার ছন্দপতন করে দিতে পারি। সো দূরে থাকুন মিস্টার ছন্দ।”

“আইনের লোক যে এতো অহংকারী হয় জানতাম না।”

উর্বী বিরক্ত সূচক শব্দ উচ্চারণ করে অন্যদিকে চলে গেলো। রিদম বিরবির করে বলল,
“উর্বী তুই আমার পিছে পিছে ঘুরবি, তা না করে আমাকে ইগনোর করিস? হুহ তোকে বিরক্ত করতে বয়েই গেছে আমার; আমি তো শুধু তোকে ডিসট্রাক্ট করতে চাইছি।”

রিদম পকেটে হাত গুজে উর্বীর পিছে পিছে চলে গেল।

ঘন জংগলের মধ্যে দিয়ে বাইক নিয়ে ছুটে চলেছে উদ্যান। পেছনের সিটে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ফুল। উঁচু নিচু জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় ফুল বারবার ধাক্কা খাচ্ছে উদ্যানের পিঠের সাথে। প্রত্যেকবার উদ্যান ধমকের সুরে বলে ওঠে,
“নিজেকে সংযত রাখ।”

“হুহ সংযত রাখ, আমি যেন তার সাথে ইচ্ছা করে ধাক্কা খাচ্ছি। বলি তোর মতো দানবের সাথে ধাক্কা খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। পিঠ তো নয় যেন পাথর দন্ড। এমন পাথরে মাথা ঠুকে মরার আপাতত ইচ্ছা নেই। কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস, সেটা অন্তত বল।” মনে মনেই কথাগুলো বলল ফুল। আপাতত চুপ থাকাই বেটার, তবুও চুপ থাকতে পারল না ফুল। এভাবে কিভাবে চুপ থাকবে? বলা নেই কওয়া নেই বাইকের পেছনে উঠিয়ে ছুট লাগিয়েছে।

ফুল ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে কম্পিত কণ্ঠে শুধায়,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“আমার সাথে যাচ্ছিস যখন জাহান্নামেই যাচ্ছিস।”

কথাটা শুনে ফুলের ইচ্ছা করছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু বাইকের যেই স্পিড জায়গা থেকে নড়লেই মৃত্যু নিশ্চিত। সেদিন সাহস জুগিয়ে পেটে কাঁচ ঢুকিয়ে দিলেও, আজকে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা নেই। কথায় আছেনা মানুষ শেষ মুহুর্তেও বাচতে চায়। একদম উপায়হীন না হলে কেউই মৃত্যুর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়না। ফুল ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিল যে বাইকের স্পিড সম্পর্কে ভুলেই গেল। বাইকটা জংগলের সীমানা পেরিয়ে একটা বাকে হেলে গিয়ে ব্রিজের উপর উঠতেই যাবে এমন সময়েই ফুল বেখেয়ালি হয়ে বাইকের সাথে নিজেও হেলে গেল। মুহুর্তের ব্যবধানে তাল সামলাতে না পেরে রেলিঙের সাথে ধাক্কা খেয়ে সোজা পড়ে গেল অথৈ পানিতে।
“আহহহ…

ফুলের আর্তনাদে উদ্যান ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকাতেই থমকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষে বাইক থেকে নেমে যায় উদ্যান। অন্ধকারে কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চাঁদের আলোও বড্ড ক্ষীণ, চারপাশে কেবল ছায়া আর অন্ধকার। উদ্যান নিজের হেলমেট খুলে পকেট হাতড়ে ফোন বের করল। ফ্ল্যাশলাইট অন করে ঝিলের উপর মারতেই ফুলকে বাচার চেষ্টা করতে দেখতে পেল। মেয়েটা হাতপা ছিটিয়ে, বাচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। উদ্যান শ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল; জল কাঁপছে, ফুলের আর্তনাদ চারপাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
ফোনটা অদূরে রেখে উদ্যান পরণের স্যুট খুলে ফেলল। তারপর কোনোপ্রকার ভাবনা চিন্তা ছাড়াই ঝাপ দিল পানিতে।
প্রায় অনেকক্ষণের চেষ্টার পর অবশেষে উদ্যান ফুলকে স্থলভাগে তুলে আনতে সক্ষম হয়। মেয়েটার শরীর ছেড়ে দিয়েছে, উদ্যান ফুলকে মাটির উপর শুইয়ে শ্বাস প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে লাগল। মেয়েটার শ্বাস চলছে না, উদ্যান বিরক্ত হয়ে বিরবির করল,
“এর তো দেখি চুনোপুঁটির প্রাণ।”

উদ্যান ফুলের পেটের উপর চাপ দিতে গিয়েও থেমে গেল। এই প্রথম তার মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে। সে ফুলের হাত মুঠোয় নিয়ে সেটা দ্বারাই ফুলের পেটে চাপ দিতে লাগল। কিন্তু পানি বের হলো না, মেয়েটা পানি খেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেলেছে তবুও কেন পানি বের হচ্ছেনা।
“এতো ঢঙ করিস কিভাবে? পানি খেয়ে ম*রে যেতে চাস? বের কর। কতোদিনের তৃষ্ণার্থ ছিলি?”

উদ্যান বুঝলো এভাবে হবেনা। সে এবার ফুলের গালে মৃদু চাপড় দিতে লাগল। উদ্যানের খসখসে হাতের নিচে ফুলের গাল অত্যন্ত কোমল-নমনীয় ঠেকল। ফুলের মুখ বরাবর ঝুকে গেল উদ্যান। হিসহিসিয়ে বলল,
“দ্রুত পানি বের কর। নইলে সিপিআর দেবো, মাউথ টু মাউথ।”

ফুলের মাঝে হেলদোল নেই। পুরো শরীর যেন ঠান্ডায় বরফ হয়ে জমে যাচ্ছে। উদ্যান এবার ফুলের গাল চেপে ধরল, ধীরে ধীরে ফুলের ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

চলবে,,,

[নেক্সট পর্বে কি হবে জানতে রেসপন্স করুন]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply