Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৩


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (১৩)

সোফিয়া_সাফা

লুহান, সোহম, অনি আর রিদম ছুটে এসেছে লিভিংরুমে। তারা সার্ভেন্ট রুমের দিকে অগ্রসর হতেই দেখল উদ্যান ত্রস্ত পায়ে এদিকেই আসছে। প্রত্যেকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে, উদ্যানের বাহুডোরে ফুলের উপস্থিতি সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
“সোহম যতদ্রুত সম্ভব ওকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।”

উদ্যানের কথায় সোহম তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ফোন বের করল। কোনো একজনকে কল দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“প্রিপেয়ার দ্য হেলিকপ্টার কুইক।”

উদ্যান দাঁড়িয়ে নেই সে ইতোমধ্যেই দোতলায় পৌঁছে গেছে। বাকিরাও তাকে অনুসরণ করছে। লুহান ফোনে কাউকে বলছে,
“ক্লিয়ার দ্য রুফটপ, দ্য হেলিকপ্টার উইল এড়াইভ ইন নো টাইম।” (রুফটপ ফাঁকা করো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টার আসবে।)

রুফটপে এসে হেলিকপ্টারে উঠে বসল সবাই। ফুলকে পাঁজকোলা করে বসেছে উদ্যান। কাঁচের খন্ড টা রুমে বসেই বের করে ফেলেছিল সে। তখনই ক্ষতস্থানে ওড়না চেপে ধরে কোনমতে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল, এখনও সেটাই করছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুলের শরীর নিজ তাপমাত্রা হারিয়ে ফেলছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে উদ্যান আনমনেই ফুলের নাকের কাছে দু আঙুল নিয়ে নিঃশ্বাস পরীক্ষা করতে লাগল। কিন্তু এভাবে সে সিওর হতে পারল না। উদ্যান কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে রইল ফুলের পানে। ফ্যাকাসে মুখ, ঠোঁটে আর থুতনিতে রক্ত লেগে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গলায় প্যাচিয়ে আছে। উদ্যান একহাতে ফুলের চুলগুলো ঠিক করতে লাগল। একভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফট করেই সে ফুলের বুকের বা পাশে মাথা গুজে দিল। উদ্দেশ্য হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করা। তাকে এরকম করতে দেখে সামনের সিটে বসে থাকা অনি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে কি করছিস?”

উদ্যান উত্তর দিলো না। চোখ বন্ধ করে একভাবে ফুলের বুকে কান চেপে ধরে রাখল।
“তুই হার্টরেট চেক না করে পালস রেট চেক করতে পারিস।”

উদ্যান এবার সোজা হয়ে বসল। গম্ভীর গলায় বলল,
“পালস রেট অনেক স্লো। তাই নিশ্চিত হতে…

উদ্যান থেমে গেল, অনিও আর ঘাটালো না।
১৩ মিনিটের মাথায় হেলিকপ্টার ল্যান্ড করল রাজধানীর সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হসপিটালের রুফটপে। সেখানে আগে থেকেই লোকজন রেডি ছিল। হেলিকপ্টার থেকে নামতেই একটা স্ট্রেচার নিয়ে চারজন ওয়ার্ডবয় এগিয়ে আসে কিন্তু উদ্যান তাদের কাছে ফুলকে না দিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলে,
“দ্রুত ডাক্তার রেডি করুন। আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

৭ তলায় নামতেই দুজন অভিজ্ঞ নারী ডাক্তার এগিয়ে এলো। সোহম আগে থেকেই কল করে সব ঠিক করে রেখেছিল। এর আগেও তানকে নিয়ে তারা এই হাসপাতালেই এসেছিল। যদিও এটা পশুদের হসপিটাল নয়; তবুও এখানেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সিনিয়র ডাক্তার মারিয়া, চল্লিশোর্ধ্ব নারী। তিনি ফুলের পালস রেট চেক করলেন।
“অবস্থা খুব ক্রিটিকাল, অনতিবিলম্বে ওনার সার্জারী করতে হবে।”

ফুলকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। ১৫ মিনিটের মাথায় একজন নার্স বের হয়ে বললেন,
“পেশেন্টের জন্য ইমিডিয়েটলি O নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত লাগবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করুন।”

এতক্ষণ যাবত চুপচাপ করিডরে বসে ছিল উদ্যান। এবার সে একটু নড়েচড়ে বসল। পাশে থাকা সোহমের দিকে তাকাতেই সোহম ফোন হাতে তুলে নেয়,
“লোক লাগিয়ে, তুই নিজেও যা ব্লাডের খোঁজে, অনিকেও সাথে নিয়ে যা। এই ব্লাডগ্রুপের রক্ত পাওয়া দুষ্কর।”

সোহম মাথা নেড়ে চলে গেল, সঙ্গে অনিও। করিডর জুড়ে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। রিদম একপাশে দাঁড়িয়ে আছে, লুহান কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত। উদ্যান শান্তচোখে তাকিয়ে আছে অপারেশন থিয়েটারের কাঁচের দরজার দিকে। পরণের শুভ্র রঙা শার্টের বেশ অনেকটা অংশ ফুলের র*ক্তে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। রিদম একটু পরপর আঁড়চোখে উদ্যানের দিকে তাকাচ্ছে। উদ্যানকে লাস্ট চিন্তিত হতে সেদিন দেখেছিল যেদিন তান অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যদিও আজ তার চেহারা দেখে চিন্তিত বলে মনে হচ্ছেনা। বরাবরের মতোই অনুভূতি শূন্য, তবুও মনস্টার টার এমন ছন্নছাড়া ভাবটা বিরল বৈকি। যে নিজের আঘাতের জন্যও কখনো ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়না সে কিনা একটা মেয়েকে পাঁজকোলা করে হসপিটালে এনেছে। শুধু হসপিটাল অবধি আনেনি। একদম থিয়েটারের বেডে শুইয়ে রেখে এসেছে। বিষয়টা হেলাফেলার নয়,
“তোকে বলেছিলাম মেয়েটার সাথে যা ইচ্ছা কর কিন্তু ওর শ্বাস প্রশ্বাসে হস্তক্ষেপ করবি না।”

আচমকা উদ্যানের গর্জনে নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল, রিদম একটা শুকনো ঢোক গিলে দুপা পিছিয়ে যেতে নেয় তার আগেই উদ্যান উঠে গিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরে,
“বলিনি?”

রিদম দেয়ালের সাথে সিটিয়ে গেল। উদ্যান আজকে তার জান ভিক্ষা দিলে সে পুরো একদিন মেয়েদের দিকে তাকাবে না বলে মনে মনে পণ করে নিল।
“আমি মিস্টার চার্লসকে বলে দিয়েছিলাম যেন মেয়েটাকে আঘাত না করে। তারপরেও কিভাবে এসব হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”

উদ্যান প্রচন্ড রেগে গেল, দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ওই অ্যা*সহোল’টাকে আমি ছাড়ব না। আর মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তোকেও ছাড়ব না।”

উদ্যানকে খেই হারাতে দেখে লুহান কল কেটে দিয়ে উদ্যানের পাশে এসে দাঁড়ায়,
“রিদম বারণ করার পরেও মিস্টার চার্লস এরকম কিছু করেছে; যার মানে, সে আমাদের শত্রু। অল্রেডি চার্লসকে বন্দি করে ফেলা হয়েছে। কু*ত্তাটা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলে গিয়েছিল।”

এই সুযোগে রিদম তাল মিলিয়ে বলল, “ওর মাঝেই ঘাপলা আছে। নইলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে কেন?”

উদ্যান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে রিদমকে ছেড়ে দেয়। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ল। যতই সময় যাচ্ছে ততই সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।
এদিকে সোহমের অবস্থা ওষ্ঠাগত, হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে ও নেগেটিভ রক্ত নেই। কল দিয়ে একের পর এক জায়গায় খোঁজ নিচ্ছে সোহম,
“ও নেগেটিভ লাগবে, ইটস আর্জেন্ট।”

একটা, দুটো, তিনটে ফোন; কোনো জায়গায় মেলে না। অবশেষে শহরের অন্য প্রান্তের ব্লাড ব্যাংক থেকে খবর এল,
“দুই ব্যাগ ও নেগেটিভ র*ক্ত আছে, পাঠিয়ে দিচ্ছি এমার্জেন্সিতে।”

সোহমের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। ব্লাড নিয়ে আসার সাথে সাথেই ফুলের সার্জারী শুরু হয়। লাল আলো জ্বলে ওঠে দরজার ওপরে।
চার ঘণ্টা কেটে গেল, সার্জারি চলল টানা। পুরোটা সময় উদ্যান থম মেরে বসে ছিল। মেলো আর অনিলা এসেছে কিছুক্ষণ আগেই, অবশেষে বেলা সাড়ে আটটার দিকে ফুলের সার্জারী সফলভাবে শেষ হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে স্ট্রেচারে করে ফুলকে বের করা হয়, উদ্যান করিডরে বসে নিস্প্রভ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। ফুলকে শিফট করা হলো হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে। ফুলের স্ট্রেচার চোখের আড়াল হতেই উদ্যানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে সোজা চলে যায় ফুলের কেবিনের সামনে। কাঁচের দরজার এপাশ থেকে দেখা যাচ্ছে ফুল শুয়ে আছে, উদ্যান এবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঘোরাতে লাগল। কিন্তু দরজা টা ভেতর থেকে লক করা, ডাক্তার বলেই গেছেন পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ফুলকে গভীর অবজারভেশনে রাখা হবে। এই সময়ে কাউকেই ভেতরে এলাউ করা হবেনা। উদ্যান অবশ্য ডাক্তারের কথা শোনেনি। সোহম আর লুহান শুনেছিল। উদ্যান তো সেই সময়ে ফুলের স্ট্রেচারের দিকে তাকিয়ে ছিল। উদ্যান এবার কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল।
“ওপেন দ্য ফা*কিং ডোর।”

উদ্যান বিরামহীন ভাবে দরজায় আঘাত করে যাচ্ছে। বাকিরা এসে উদ্যানের পেছনে দাঁড়াল ঠিকই কিন্তু তাকে বাধা দেওয়ার হিম্মত জোটাতে পারল না। তন্মধ্যেই দরজা খুলে গেল। হঠাৎ দরজা খুলে যাওয়াতে উদ্যান ভারসাম্য হারিয়ে কেবিনের মধ্যে ঢুকে যায়। তার এহেন আচরণে দায়িত্বরত নার্স প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। বলে রাখা ভালো এই নার্স আগে উদ্যানকে দেখেনি। সে তো এসেছিল পেশেন্টের ড্রেস-আপ করে দিতে।
“আজব! আপনি এমন করছেন কেন? এভাবে ডিস্টার্ব করার মানে কি? আপনি পেশেন্টের রিলেটিভ হতেই পারেন তাই বলে এরকম আচরণ করবেন?”

উদ্যান চোখ কটমট করে নার্সের দিকে তাকাল। ডাক্তারকে উপরনিচ পরখ করে ঘাড় কাত করে বলল,
“ডিস্টার্ব তোরা আমাকে করেছিস, এই চার ঘন্টার প্রত্যেকটা সেকেন্ড বিরক্তিকর ছিল। প্রথম সাক্ষাৎ বলে বেচে গেলি৷ দ্বিতীয় বার এই টোনে কথা বললে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো।”

উদ্যানের এহেন কথা শুনে নার্স যতটা না ভয় পেয়েছে; তার থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছে উদ্যানের মুখের ভয়ঙ্কর অভিব্যক্তি দেখে। তবুও উদ্যানের হুমকি তার ইগোতে লাগল। নার্স বলে কি এভাবে কথা বলবে! নিজেকে সামলে নিয়ে নার্স বলল,
“আপনি কোন দেশের প্রেসিডেন্ট হ্যাঁ? এভাবে কথা বলছেন…

আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেলো তাকে সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। উদ্যান রেগে গিয়ে সামনে থাকা চেয়ারে লাত্থি দিল তারপর ধীরপায়ে এগিয়ে গেল বেডের দিকে। অপারেশন সফল ভাবে শেষ হয়েছে। বেডের উপর ফুলের নিথর দেহটা পড়ে আছে, নাসারন্ধ্র বেয়ে ঢুকে গেছে এক সরু স্বচ্ছ নল, সেটার অপর প্রান্তে ঝুলছে অল্প রক্তমিশ্র তরলভরা ব্যাগ। প্রতি কয়েক সেকেন্ড পরপর টুপটাপ শব্দে ফোঁটা ফোঁটা তরল জমে উঠছে তাতে। নড়াচড়া নেই ফুলের শরীরে, শুধু বুকটা ধীরলয়ে উঠানামা করছে। গায়ে নীল রঙের পেশেন্ট গাউন, লম্বা চুলগুলো দুপাশে বেণি করে রাখা। একহাতে ক্যানুলা লাগানো, যা দিয়ে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে। উদ্যান ধপ করে বেডের সামনে থাকা টুলে বসে পড়ল। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল ফুলের দিকে। তার অভিব্যক্তি দেখে বাকিরা অবাক হলো। অনি এগিয়ে এসে উদ্যানের কাধে হাত রাখল,
“কি হয়েছে তোর? এতোক্ষণ তো অকারণেই ক্ষেপে ছিল। হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলি কেন?”

উদ্যান নিজের শার্টে লেগে থাকা রক্তের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালো লাগছে। এখন শান্তি পাচ্ছি।” “এতোই যখন শান্তি পাস তখন মরে যেতে দিলেই পারতি। কেন বাচানোর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলি?”
“ও এখন কষ্ট পাচ্ছে, ম*রে গেলে কষ্ট পেতো না। উল্টো ওকে কষ্ট দিতে না পেরে আমি জ্বলে যেতাম।”

উদ্যানের অদ্ভুত লজিকের সাথে অনি পেরে উঠল না। সোহম বলল, “ডাক্তার বলেছে, অতিরিক্ত ব্লাড লস হওয়ায় আনুমানিক ৬ ঘন্টার আগে সিকফুলের জ্ঞান ফেরার চান্স নেই।”

কথাটা যেন উদ্যান ঠিক শুনতে পেল না। সে কোনো একটা কিছুর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে উদ্যান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর ঝড়ের বেগে ফুলের গলায় হাত রাখল, আঙুলের ডগা দিয়ে সেখানে থাকা কালো বিচ্ছিরি কামড়ের দাগগুলোকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল। তাকে এরকম করতে দেখে বাকিরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। উদ্যান কি করছে কারোরই বোধগম্য হলো না। এদিকে প্রচন্ড অস্থির হয়ে পড়ল উদ্যান, এই দাগগুলো; এই জঘন্য দাগগুলো তার চোখ ঝলসে দিচ্ছে। মুহুর্তেই উদ্যান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। সামনের দিকে ঘুরে লুহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“অ্যা*সহোল টা কোথায়?”

লুহান একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“বাংকারে।”

উদ্যান আর কিছু বলল না শুধু ধুপধাপ পা ফেলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। তার পিছুপিছু লুহান আর সোহমও বেরিয়ে গেল।
“অনিলা, আর আমি এখানে থাকছি রিদম আর মেলো গিয়ে গেস্টদের বিদেয় কর।”

অনির কথায় সম্মতি জানিয়ে রিদম আর মেলোও কেবিন ত্যাগ করল।


অন্ধকার আচ্ছন্ন বাংকারে হাতপা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে চার্লস। সামনেই লাঠি হাতে বসে আছে উদ্যান,
“হাউ ডেয়ার ইউ, কাম ইন্টু মাই কেভ অ্যান্ড হান্ট মাই প্রে?”
(কোন সাহসে আমার গুহায় এসে আমার শিকারকে শিকার করলি?)

চার্লস ভয়ে ভয়ে উদ্যানের দিকে তাকাল। সে কি করেছে? মেয়েটাই তো নিজেকে আঘাত করেছিল। হ্যাঁ সে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল কারণ রিদম তাকে মেয়েটাকে আঘাত করতে নিষেধ করার পরেও সে মেয়েটাকে চড় মে*রে দিয়েছিল। তারপর আবার এরকম ঘটনা ঘটে যাওয়াতে সে একটু বেশিই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। উদ্যান বসা থেকে দাঁড়িয়ে চার্লসের দিকে যেতেই চার্লস বলে ওঠে,
“আই… আই ডিডন’ট ডু এনিথিং। দ্য গার্ল… শি হার্ট হারসেল্ফ। ইট ওয়াজন’ট মি, আই সোয়্যার!”
(আমি কিছু করিনি, মেয়েটা নিজেই নিজেকে আঘাত করেছিল।)

উদ্যান লাঠিটা দিয়ে সজোরে চার্লসের পায়ে বাড়ি দিল,
“লায়ার দ্য গার্ল ইজন’ট ফুলিশ ইনাফ টু হার্ট হারসেল্ফ। অ্যান্ড আই অ্যাম নট স্টুপিড টু বিলিভ ইউ। এভরি ওয়ার্ড ইউ স্পিক রিকস অভ ডিসিট।”
(মিথ্যুক, মেয়েটা বোকা নয় যে নিজেই নিজেকে আঘাত করবে। আর নাতো আমি নির্বোধ যে তোর ভিত্তিহীন কথাগুলো বিশ্বাস করে নেবো।)

কথাটা বলেই উদ্যান এলোপাথাড়ি চার্লসকে মারতে লাগল। চার্লস অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, বাচার জন্য আকুতি করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উদ্যান তাকে আধমরা করেই থেমেছে। যেখানে সে নিজের লোকেদেরই ছাড় দেয়না সেখানে শত্রুদের ছাড় দেবে আশা করাটাও আকাশ কুসুম কল্পনা।

বিকেল বেলা,
উদ্যান লিভিং রুমে বসে অ্যা*লেকোহল গিলছে। চোখদুটো দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে,
“মিস্টার চার্লসকে তো হেল থেকে ঘুরিয়ে এনেছিস এখন তো পরিস্থিতি ঘেটে যাবে।”

সোহমের কথায় উদ্যান শান্ত গলায় বলল,
“আই ডোন্ট কেয়ার!”

কিছুক্ষণ যেতেই লুহান হতাশার সুরে বলল,
“হাতপা ভেঙেছিস, ঠিক আছে। কয়েকমাসেই জোড়া লেগে যেতো; কিন্তু দাঁতগুলো ভেঙেছিস কোন দুঃখে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। বেচারার দাঁত গুলোর জন্য আমারই মায়া লাগছে।”
“বেশি মায়া লাগলে তোর গুলোও ভেঙে দিচ্ছি। একে অপরের গলা ধরে কাঁদতে পারবি।”

উদ্যানের কথায় ভড়কে গেল লুহান। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“আমি ভাবছি, মিস্টার মরগ্যান নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে জানলে আমাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে দেবে।”
“ওসব দু-একটা চুক্তির পরোয়া তেহজিব করেনা। তাছাড়া তার প্রাণপ্রিয় ভাই যে আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে তার সাথে বিট্রে করতে রাজি হয়ে গিয়েছিল সেটার প্রমাণ আছে।”

তাদের কথার মাঝেই সোহমের ফোনে অনির কল আসে। সোহম কলটা রিসিভ করে অনির সাথে কথা বলল। তারপর কল কেটে দিয়ে উদ্যানের দিকে তাকাল,
“সিকফুলের জ্ঞান ফিরেছে।”

কথাটা কর্ণগুহরে পৌঁছানো মাত্রই ঠোঁটে চেপে ধরা গ্লাসটা ঘুরিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর রাখল উদ্যান। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে,,,

(পরবর্তী পর্ব পেতে রেসপন্স করুন)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply