Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১৯


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (১৯)

সোফিয়া_সাফা

“লুহান তোর কি মনে হয়? লয়ার যেই পেপার গুলো দেখিয়েছে সেগুলো সত্য?”

উদ্যানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল লুহান, সোহমের প্রশ্নে সে জোর দিয়েই বলল,
“তেহ আর যাই করুক হুট করে বিয়ে করে ফেলবে না। তোর মতো বিয়ে পাগল হলে; পেপার গুলো সত্যি হওয়ার চান্স থাকতো, কিন্তু তেহুর বেলায় এমন কোনো চান্সই নেই। তাছাড়া এমন ফেইক ম্যারিজ সার্টিফিকেট তৈরি করা কোনো ব্যাপার না।”
“তার মানে তুই বলতে চাইছিস, পেপার গুলো ভুয়া?”
“অবশ্যই ভুয়া! যদি কেউ এসে বলে তেহ রেগেমেগে হাজার জনের মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে আমি সেটা বিশ্বাস করে নেবো তবুও ওর মতো দানব বিয়ে করে নিয়েছে এটা বিশ্বাস করতে পারবো না। ও নিজে এসে বললেও আমার ওকে মাতাল বলে মনে হবে। যদিও মনস্টার টা খুব সহজে মাতালও হয়না। মাঝে মাঝে ওকে তো আমার রোবট বলেই মনে হয়।” লুহানের কথাগুলো শুনে সোহম পেছনে ঘুরে তাকাল। লয়ারগুলো ইতোমধ্যেই স্থান ত্যাগ করেছে। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে নিল সোহম। উদ্যান বিয়ে করে নিলে সে আরও একটু সাহস পেয়ে যেতো বিয়ে করার। তবে লুহানের কথায় যুক্তি আছে। যেখানে মেয়েদের দেখলেও উদ্যানের চোখে বিতৃষ্ণা ফুটে ওঠে সেখানে বিয়ে করে নিয়েছে ভাবাটাও উচ্চ প্রত্যাশার মধ্যে পড়ে।

লুহান আর সোহম বাইরে এসে দেখল রিদম চলে গেছে। সোহম বলল,
“গেল কোথায় রিদম?”
“কোথায় আর যাবে! সুযোগ পেয়ে মেয়েদের সাথে লদকা লদকি করতে গেছে সিওর।”

স্তম্ভিত চোখে তাকাল সোহম, “এই সকাল বেলা?”

“আমি বলেছি মেয়েদের সাথে লদকা লদকি করতে গেছে, চাঁদের সাথে বলিনি। সকাল হয়েছে তো কি হয়েছে; মেয়ে কি সকাল বেলা পাওয়া যায়না? বারে বা ক্লাবে গিয়ে দেখ।”

লুহানের কথায় হেসে উঠল সোহম। লুহান রেগে গিয়ে বলল, “ইটস নট আ জোকস। একদিকে রিদম দিন দিন অভদ্রের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে তেহ পাথরে পরিনত হচ্ছে। আহ আমি যদি পারতাম ওর থেকে কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে তেহ মনস্টার টার মাঝে দিয়ে দিতাম। মনস্টার টা আসলেই মনস্টার।”

ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে সোহম। তাকে এভাবে হাসতে দেখে আচমকা তার পিঠে এক ঘুষি মেরে দিল লুহান,
“না হেসে নিজের কাজ কর গিয়ে। তোর ওইটুকু অ্যাপার্টমেন্টে বেশিদিন কিন্তু থাকতে পারবো না।”

সোহম চোখ রাঙিয়ে তাকাল, “তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস লুহান?”

শার্টের কলার ঠিক করতে করতে লুহান বলল, “হ্যাঁ তুলেছি তো?”
“বয়সে বড় বলে না-ইনসাফি করবি না লুহান। তোর চেয়ে আমি বেশি কাজ করি। আর আমার বাড়িতে থাকতে প্রবলেম হলে ম্যাক্সিকোতে চলে যা।”
“ভেবে বলছিস? আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই চলে যাবো।”
“হ যা চলে যা।”

লুহান হাটা ধরল বাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বলল,
“আচ্ছা আমার ভাগের কাজগুলো তুই করে দিস। আমি তেহকে বলে দেবো তুই আমাকে চলে যেতে বলেছিস। এসব ছোটোখাটো কাজ নাকি তুই একাই করতে পারবি।”

চোখ বড়বড় হয়ে গেল সোহমের। এরইমাঝে লুহান বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেছে। সোহম কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তড়িৎ গতিতে নিজের বাইকে উঠে বসল। লুহানকে ফলো করতে করতে উচ্চস্বরে বলল,
“নাহ, আমি পারবো না। আচ্ছা স্যরি বাপু, আমি নিজের কাজ তাড়াতাড়ি করবো যাতে সোলার এস্টেটে খুব দ্রুত ফিরে যেতে পারি।”

সোহমের কথা শুনে লুহানের গম্ভীর মুখাবয়বে হাসির রেখা ফুটে উঠল।

আকাশের পূর্বদিকে সূর্য নিজস্ব তেজ ছড়িয়ে দিচ্ছে। খানাজাদা নিবাসের পরিবেশ হরহামেশার মতোই নিস্তব্ধ। মাহবুবা সুলতানা কিচেনে বসে সার্ভেন্টদের ব্রেকফাস্ট বানানোর তদারকি করছেন। বাড়ি থেকে যে একজন উধাও হয়ে গেছে সেই সম্পর্কিত কোনো ধারণাই নেই মাহবুবা সুলতানার। তন্মধ্যেই ড্রইংরুম থেকে শোরগোল ভেসে এলো। ভ্রু কুচকে গেলো মাহবুবা সুলতানার। ব্যস্ত পায়ে ছুটে এলেন ড্রইংরুমে,

“বাড়ির সবাই কি মা*রা গেছে?”

ড্রইংরুমে এসেই উদ্যানকে দেখতে পাবে ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি মাহবুবা সুলতানা। তাকে ছুটে আসতে দেখে উদ্যান দ্রুত গতিতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“এইযে মিসেস খানজাদা আপনাদের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। অবশ্য এটাকে সাহস নয় ব্যর্থতা বলা ঠিক হবে। আপনি নিজের ছেলেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আপনাদের কি করা উচিৎ বলুন তো? সবাই মিলে আমার সর্বনাশ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। আর আমি কিনা আপনাদেরকে শান্তিপ্রিয় ভাবতাম।”

উদ্যানের কথাগুলো শুনে মাহবুবা সুলতানা থমকে গেলেন উদ্যানের কাঁধে হাত রাখতে গেলে উদ্যান হাত উঁচিয়ে দূরে থাকতে ইশারা করে,
“একদম কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আসবেন না। কোথায় আপনার নালায়েক ছেলে? নিজে থেকেই বেরিয়ে আসবে; নাকি আমাকে গিয়ে খাতিরদারি করে বের করে আনতে হবে?”

শাড়ির আঁচল কিছুটা টেনে নিল মাহবুবা সুলতানা। উদ্যান কি বলছে না বলছে বুঝে উঠতে পারছেন না,
“শান্ত হও বাবা, কি হয়েছে? বলো আমাকে। আবেশ কি করেছে?”
“কি করেছে? দুঃসাহস দেখিয়েছে। অবশ্য ওর অপরাধের পরিমাণ ৩০% বাকি ৭০% অপরাধ করেছে ওই হারামজাদী টা। আমার মাথায় আগুন জ্বলছে। এখনই আপনার ছেলেকে বের হতে বলুন।”

মাহবুবা সুলতানা দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের ছেলের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। কিন্তু আবেশ তো বাড়িতেই নেই। আবেশের রুমে এসে কলিজা শুকিয়ে গেল মাহবুবা সুলতানার। মুখ চেপে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। কোথায় গেল ছেলেটা। তার পিছু পিছু উদ্যানও এসেছে,
“কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ছেলেকে? ভালোয় ভালোয় বের করুন।”

কেঁদে উঠলেন মাহবুবা সুলতানা, “আমি জানিনা, বিশ্বাস করো আবেশ কোথায় গেছে আমি জানিনা। ঠিক কি করেছে আবেশ বলোনা আমাকে।”
“আবেশ ওই মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর আমি সিওর এর পেছনে আপনাদেরও হাত আছে।” কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে নিল উদ্যান। মাথা ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করে রাখছে জানেনা। ইচ্ছে তো করছে সব তছনছ করে দিতে,

“বিশ্বাস করো উদ্যান, আমি এই ব্যপারে কিছুই জানতাম না; মাত্রই জানতে পারলাম।” কথাটা শুনে রক্তচোখে তাকাল উদ্যান,
“আমাকে এই উইয়ার্ড নামে ডাকবেন না। আর আমি রেগে থাকা অবস্থায় তো ভুলেও না।”

কিছুটা দমে গেলেন মাহবুবা সুলতানা, বেখেয়ালি সুরে নিচু গলায় বললেন,
“নামের সাথে কিসের রাগ বাবা? যেখানে মানুষটাই বেচে নেই।”

উদ্যানের রাগের পরিধি আরও খানিকটা বিস্তৃত হলো। মাহবুবা সুলতানা হয়তো বুঝতেও পারছেন না সে অজান্তেই উদ্যানকে কতোটা ক্ষেপিয়ে দিচ্ছেন।
“আপনি এই ব্যাপারটাও জানেন তাইনা? কে বলেছিল আপনাকে এইসব?”

থতমত খেয়ে গেলেন মাহবুবা সুলতানা। আঁচলের কোণায় চোখের পানি মুছে বললেন, “তোমার বাবা বলেছিল। তার কাছ থেকেই শুনেছিলাম।”

“আমার বাপ? সে আদৌ আমার বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলেছে বলে তো মনে হয়না। আপনি শুনেছেন হয়তো সেই ডাইনী টার কাছ থেকে। আপনার ছেলের নামও তো সেই রেখেছিল। খুব সখ্যতা ছিল আপনাদের মাঝে। আমি জানি সবটা; মিথ্যা বলবেন না।” কথাগুলো বলেই মাহবুবা সুলতানাকে পাশ কাটিয়ে উদ্যান চলে গেল ফুলের রুমের সামনে। উদ্যান ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে আবেশ বা ফুল এই বাড়িতে নেই। যদিওবা তার আগে থেকেই ধারণা ছিল, এখানে ওদেরকে পাবেনা। আর মাহবুবা সুলতানা যে এই ব্যাপারে জানতেন না সেটাও উদ্যান বুঝতে পেরেছে। যদি ফুলের প্রতি এতোই টান থাকতো তাহলে উদ্যানের সাথে ফুলের বিয়েতে কখনোই রাজি হতেন না মাহবুবা সুলতানা। সবকিছু বিশ্লেষণ করে বলা যায়, মাহবুবা সুলতানা কখনোই এই ব্যাপারে ছেলেকে সাহায্য করবেন না। জেনে-বুঝে কেনোইবা সে উদ্যানের সাথে টেক্কা দিতে যাবেন?

ফজরের নামাজ আদায় করে অভ্যাসবশতই ফুলের রুমে এসেছিলেন রেহানা বেগম। রুমটা গোছগাছ থাকলেও প্রতিদিনই রুমটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখেন রেহানা বেগম।

“দর্শক নেই তো; শুধু শুধু নাটক করছেন কেন? নাকি নাটক করতে করতে এতোটাই অভস্ত্য হয়ে গিয়েছেন যে সত্য মিথ্যার পার্থক্য করার বোধটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন?”
হঠাৎ রাশভারী কণ্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকাতেই থমকে গেলেন রেহানা বেগম, দরজার সামনে বুকের উপর আড়াআড়ি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে উদ্যান। মুখাবয়ব রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তাকে দেখে দ্রুত হাতে চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে নিলেন রেহানা বেগম। বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে রাখা ফুলের ফটো ফ্র‍্যামটা সন্তর্পণে টেবিলের উপর রেখে উদ্যানের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।
“তুমি এতো সকাল বেলা?”
“একেই বলে ভাগ্য বুঝলেন, যাদের এই বাড়িতে থাকার কথা ছিল তারা কেউ-ই থাকতে পারেন নি। তাদের অবর্তমানে বাড়িটা আগাছায় ভরে গেছে। তাই আমাকেই আসতে হয় আগাছা গুলো পরিষ্কার করতে।”

সচরাচর রেহানা বেগম উদ্যানকে এড়িয়ে গেলেও আজকে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন।
“আগাছার ধর্মই তো অন্যের জায়গায় অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। নইলে নিজের অস্তিত্ব কিভাবে টিকিয়ে রাখবে? রক্ষণশীলতার অভাবে আগাছা জন্মানো-টাই কি স্বাভাবিক নয়? তোমার কি উচিৎ ছিলোনা বুঝদার হবার পরপরই আগাছা গুলোকে উচ্ছেদ করা? কেন এতগুলো বছর আগাছা গুলোকে প্রশ্রয় দিলে? আর কেনোই বা এতগুলো বছর বৈমুখ থাকার পর এমুখো হলে?”

কথার প্রেক্ষিতে উদ্যান রুমের ভেতর প্রবেশ করল। রেহানা বেগমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঘাড় কাত করে বলল,
“আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন? আর আপনার ধারণা আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো? আচ্ছা আমি নাহয় অনূভুতি শূন্য হয়ে গেছি; আপনাদের মনে তো অনূভুতি নামক জেহের আছে, নেই? না থাকার কারণটা কি? সব তো পরিপূর্ণ ছিল চারপাশে তাও কেন মানুষ হতে পারলেন না?”

পেছনে থাকা টেবিলের উপর ঢলে পড়ল রেহানা বেগম। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে ক্রমশই। এই জন্যই সে মুখোমুখি হয়না উদ্যানের। গলায় জমে থাকা কান্না গুলো গিলে কণ্ঠে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে রেহানা বেগম বললেন,
“একজন মানুষের ভয়, অসহায়ত্ব, দায়বদ্ধতাকে অমানুষী আচরণের কাতারে ফেলবে না উদ্যান। আমি যা করেছি ভয় থেকে করেছি। অসহায় আমি, ফুলের কাছে দায়বদ্ধ ছিলাম। আজ যদি আমাকে অমানুষ বলে চিহ্নিত করো তাহলে জেনে রাখো তুমিই আমাকে অমানুষ হতে বাধ্য করেছো। তুমিই আমাকে ভয় দেখিয়ে অসহায় বানিয়ে রেখেছো।”

দুপা পিছিয়ে গেল উদ্যান। অদ্ভুত ভাবে রাগ লাগছে না। রেহানা বেগনের কথাগুলো তাকে সন্তুষ্ট করছে তার এই অসহায়ত্ব এই ভয়ার্ত অভিব্যক্তি উদ্যানকে আনন্দিত করছে।
“আপনি বলতে চাইছেন শুরু থেকেই আমি আপনাকে বাধ্য করেছি? কাম অন ভুলের মা, নিজের দোষগুলো আমার উপরে চাপিয়ে দেবেন না। এতে করে আপনার মাঝে থাকা অমানুষটা আরও উৎসাহ পাবে। আপনি ভুলে যাবেন কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।”

কেঁপে উঠল রেহানা বেগম। উদ্যানের কথাগুলো এতোটা বিষাক্ত কেন? প্রত্যেক মুহুর্তে তাকে ভেতর থেকে গুড়িয়ে দিচ্ছে।
“আপনার সো কল্ড মেয়ে আমার হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে তাও আবার আবেশের সাথে। বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?”

চমকে গেলেন রেহানা বেগম।
“ফুল পালিয়ে গেছে? কিভাবে পালিয়েছে? আর আবেশকেই বা পেলো কিভাবে? রাতে তো ও নিজের রুমে বসেই ফুলের জন্মদিন পালন করছিল।”

“হারামীটার জন্মদিন আজকে? আই সি… তাহলে তো খুব ভালো ভাবেই জন্মদিন টা সেলিব্রেট করতে পারবে।” উদ্যান দাড়ালো না আর, উল্টো ঘুরে রুম থেকে বের হতেই মাহবুবা সুলতানা সামনে পড়ল। উদ্যান মেলোর ফোনটা বের করে মাহবুবা সুলতানার উদ্দেশ্যে বলল,
“আবেশের ফোন নম্বর টা দিন।”

কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মাহবুবা সুলতানা তারপর চলে গেলেন নিজ কক্ষে। নিজের ফোনটা নিয়ে আবারও ফিরে এলেন। সেখান থেকে আবেশের নম্বর দিলেন উদ্যানকে। দ্বিমত করার বা উদ্যানের কথার অবাধ্য হওয়ার সুযোগ নেই। তার চেয়ে আবেশকে উদ্যান যত দ্রুত খুঁজে পাবে ততই আবেশের জন্য ভালো হবে। ফোনের ডায়াল প্যাডে নম্বরটা তুলে উদ্যান কল লাগাল কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।
“আপনার ছেলে বেশ আয়োজন করেই আমার সাথে খেলতে নেমেছে মিসেস খানজাদা। আপনি একটা কাজ করুন ওর কার, বাইক, এন আইডি নম্বর সব দিন।” উদ্যানের গুরুগম্ভীর চেহারাটা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন মাহবুবা সুলতানা।


ঠিক দুপুর বেলা, সূর্যের অবস্থান মাথার উপর। জ্বরের ঔষধ খাওয়ার দরুন জ্বর কিছুটা কমলেও ঠান্ডায় ফুলের অবস্থা নাজুক। ভেজা কাপড়গুলো গায়েই শুকিয়ে গেছে। তাই আর চেঞ্জ করেনি। বলতে গেলে ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল।
“তোমার বাইক টা বিক্রি করে দিলে আবেশ ভাই?” ফুলের প্রশ্নে আবেশ মুখে থাকা ভাতটুকু গিলে বলল,
“হুম বাইকের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর থেকে আমাদের খুঁজে পাওয়া যেতো তাই বিক্রি করে দিয়েছি। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে বাস ছেড়ে দেবে।”

টেবিলের উপরে থাকা ভাতের প্লেটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ফুল। তারপর জিজ্ঞাসু কণ্ঠে শুধাল,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

ফুলের মলিন মুখটা দেখে আবেশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঠান্ডা-জ্বর একেবারে কাবু করে ফেলেছে মেয়েটাকে সঙ্গে কাঁধের ব্যথা তো আছেই। চোখমুখ কেমন যেন ফোলাফোলা দেখাচ্ছে,
“পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে যাচ্ছি। তোর তো ইচ্ছা ছিল সেখানে যাওয়ার। আমরা এখন থেকে সেখানেই থাকবো। যখন ইচ্ছা হবে তখন সমুদ্র দেখতে পারবি। ভালো হবেনা ব্যপারটা?”

থমকে গেল ফুল, “আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি?”

মাথা নাড়ে আবেশ, “হুম আমাদের গন্তব্য সেই অবধি। এখন আছি কুমিল্লাতে। এরপর চট্টগ্রামের রাস্তা ধরে গন্তব্যে পৌঁছাবো।”

অনিশ্চয়তার মাঝেও ফুলের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখে দিল।
“খাবার খেয়ে নে।” আবেশের কথায় ফুল খাওয়ায় মনযোগ দিল। তারা বসে আছে একটা খোলা রেস্তোরাঁয়। এর আগে কখনো এরকম জায়গায় বসে খাওয়া হয়নি। তবে ব্যপারটা ফুলের খারাপ লাগছে না। উদ্যানের বিশাল বাড়িতে থাকলেও খাবার তো তাকে ফ্লোরে বসেই খেতে হয়েছিল। ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো। একহাতে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে সবটুকু পানি খেয়ে নিল ফুল।

খাওয়া দাওয়া শেষে আবেশ নিজের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে মেডিসিন বের করে ফুলের হাতে দিল। ফুল একপলক সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আবেশের দিকে তাকাল,
“এগুলো ঠান্ডা-জ্বর আর ব্যাথানাশক ঔষধ। খেয়ে নে নইলে শরীরের কন্ডিশন আরও খারাপ হয়ে যাবে।”

মাথা নেড়ে ঔষধ গুলো হাতে নিল ফুল। পানি দিয়ে ঔষধগুলো গিলে ওড়নার কোনায় মুখ মুছে নিল। আবেশ কয়েক সেকেন্ড ফুলের দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনেই ফুলের হাত ধরল,
“চল যাওয়া যাক।”

আঁতকে উঠল ফুল। ঠোঁট চেপে হাতের দিকে তাকাল। তারপর খুবই সাবধানী ভঙ্গিতে আবেশের থেকে হাত ছাড়িয়ে মাথার ওড়না ঠিক করতে লাগল। বিষয়টা খেয়াল করল না আবেশ।

বিকেলের দিকে আবহাওয়া কিছুটা শীতল হয়েছে। সূর্যের তেজ এখন নেই বললেই চলে, জানালার পাশের সিটে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে ফুল। আবেশ বসে আছে পাশেই। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটাও অপ্রয়োজনীয় কথা বলেনি ফুল। বিষয়টা আবেশের অপরিচিত লাগছে। ফুল চঞ্চলা প্রকৃতি মেয়ে, কথা না বলে কিভাবে আছে? এতোদিন পর দেখা হলো তবুও কিছু বলছে না কেন? ভাবনাগুলো সাইডে রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দিল আবেশ,
“অবান্তর চিন্তা করছি কেন? ওর শরীর খারাপ, তার উপর জার্নি করতে হচ্ছে। নিশ্চয়ই ক্লান্ত, সেই জন্যই কথা কম বলছে।”

সিটের সাথে গাল ঠেকিয়ে বসে আছে ফুল। চোখ মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। তবে ঘুম নেই চোখে। উদ্দেশ্যহীন ভাবে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে। অবচেতন মস্তিষ্কে বারবার ফুটে উঠছে রাতের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো। উদ্যানের কতোটা কাছে ছিল সে। উদ্যানের সেই হৃৎস্পন্দন যা সে এখনও শুনতে পায়। কেনো সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যাক্তিটির কথাই দৃশ্যপটে ভেসে উঠছে।
“আমি নিজের অবস্থাকে ঘৃণা করি উন্মাদ। শুনেছি ঘৃণা আর ভালোবাসা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী হওয়ার পরেও সবচেয়ে কাছাকাছি। তাই বরাবরই আপনাকে ঘৃণা করতেও ভয় হতো আমার। তবুও আপনি নিজেই আমার মনে ঘৃণা সৃষ্টি করেই থেমেছেন। সেদিন হসপিটালের বেডে শুয়ে আমি বলেছিলাম আমি আপনাকে ঘৃণা করি। অথচ আমি আপনাকে ঘৃণা করতেও রাজী ছিলাম না। কারণ মানুষ দুজন ব্যাক্তিকে চাইলেও ভুলতে পারেনা, এক যাকে সে ভালোবাসে আর দুই যাকে সে ঘৃণা করে। আমি তো আপনাকে ঘৃণা করি তাইনা? ঘৃণা করাটাই কি স্বাভাবিক নয়? একটা মেয়ের উপর দিনের পর দিন নি*র্যাতন করে গেলেন। কারণটুকুও বললেন না। সেই মেয়েটা আপনাকে ঘৃণা ছাড়া আর কিইবা করবে?”

কথা গুলো ভেবে, বুকের ভেতর হু হু করে উঠল ফুলের। হৃৎপিণ্ড টা সংকুচিত হয়ে এলো, চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়েছে বহু আগেই, কান্নারা যেন গলা চেপে ধরেছে। তবুও কাঁদবেনা ফুল, কেন কাঁদবে? সেই স্বামী নামক আসামীর জন্য? যে কিনা শুধুমাত্র অত্যাচার করার নিয়তে তাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে নিজের দখলে নিয়েছিল? আচ্ছা ফুলের কান্নাই বা পাচ্ছে কেন? আবেশ পর্যন্ত তাকে কাদতে নিষেধ করেছে। বস্তুত, ফুলের কান্না পাচ্ছে কারণ সে নিজের মনের সাথেও মিথ্যাচার করার চেষ্টা করছে। সে এতোক্ষণ যাবৎ যা যা বলেছে তা আংশিক সত্য পুরোটা না। একজন মানুষের পক্ষে কখনোই নিজের মনের সাথে মিথ্যাচার করা সম্ভব নয়। ফুল এবার ঠোঁট চেপে মনে মনেই আওড়াল,
“স্বীকার না করলে দম বন্ধ হয়ে যাবে। প্রকৃতার্থে, আপনার অত্যাচার আমাকে এমন ভাবে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে যে আমি কাঙাল হয়ে গেছি। আমার বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আমি এতোটাই ভালোবাসার তৃষ্ণায় ভুগছি যে, আপনার মতো হৃদয়হীন পাথর মানবের বুকে হৃৎপিণ্ডের খোঁজে নেমে গিয়েছিলাম। আমি বেহায়া হয়ে গেছি, একি সর্বনাশ করলেন? আমাকে সর্বনাশী হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজেই আমার সর্বনাশ করে দিলেন? আপনার হৃৎপিণ্ড হীন প্রসস্থ বুকে কিসের ধুকপুকানি শুনেছিলাম আমি? সেটা কি মরিচিকা ছিল না? আমি কেন নিজের মনকে বোঝাতে পারছিনা? কিসের অভিলাষে অবাধ্য মনটা সেই মরিচিকার খোঁজে নেমে পড়তে চাইছে? কেনো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে খুন হওয়ার উন্মাদনা চেপেছে? কিসের লোভে আমার হৃৎপিণ্ড আপনার ঘ্রাণ বিহীন অক্সিজেন গ্রহণ করতে অস্বীকার করার দ্বারপ্রান্তে? আপনি আমার সেই হালাল পুরুষ যাকে মন কখনোই মেনে নেবেনা বলে পণ করেছিল তবে আজ সেই মন কিসের চাহিদায় বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইছে?”

অজান্তেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ফুল। তার কান্নার শব্দে আবেশ হকচকিয়ে গেল। হাত রাখলো কাঁধের উপর। ত্রস্ত হাতে চোখমুখ মুছে নিল ফুল।
“কি হয়েছে ফুল? শরীর বেশিই খারাপ লাগছে?”

নাবোধক মাথা নাড়ল ফুল। আবেশ ফুলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলল,
“বুঝতে পারছি খুব মনে পড়ছে তাইনা?” আবেশের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল ফুল। মাথা ঝাকিয়ে না বলতে লাগল পাগলের মতো। ঠোঁট ভেদ করে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো,
“আমার মনে পড়ছেনা একদম মনে পড়ছেনা। দরকার হলে আমি মনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবো তবুও এই অনর্থ মেনে নেবো না।”

হাল্কা হাসল আবেশ, তার হাসি দেখে শুষ্ক ঢোক গিলল ফুল। তবে কি আবেশ তার অন্তর্মুখী যুদ্ধসংকেত টের পাচ্ছে? সে কি বুঝতে পারছে ফুলের ভেতরে ধীরে ধীরে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে?
“মায়ের কথা মনে পড়ছে তাইনা? আজকের দিনে মায়ের কথা একটু বেশি মনে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।”

আবেশের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ফুল। যাক, আবেশ বিষয়টা বুঝতে পারেনি।
“মা তো ভালোই আছে। খুব একটা মনে পড়ছে না।”

সোজা হয়ে বসল ফুল। তখনই আবেশ জানালার কাঁচ খুলে দিল। বাতাসের ঝাপটা এসে ফুলের শরীরে কাপণ ধরাল। আবেশ বাইরের দিকে ইশারা করে বলল,
“ওইযে উঁচু নিচু পাহাড়গুলো দেখছিস, এগুলোই হলো সীতাকুণ্ডের সৌন্দর্য। এখান থেকেই চট্টগ্রামের ঢালু এলাকার শুরু।”

সীতাকুণ্ড নামটা শুনে ফুল আগ্রহ পেল। জানালা দিয়ে খানিকটা উঁকি দিয়ে মনমাতানো দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল। তাকে স্বাভাবিক হতে দেখে ম্লান হাসল আবেশ। নিজমনেই বলল,
“আমি তোকে বুঝতে চাইছিনা ফুল; একদম চাইছিনা। যেই অনর্থ তুই নিজে মেনে নিতে পারছিস না। সেই অনর্থ আমি কি করে মেনে নেই বল তো? জানিস ফুল? যারা নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করে তারা কিন্তু প্রাণঘাতী জেনেও করে। কেন করে জানিস? কারণ প্রাণঘাতী জিনিস গুলোর প্রতি মানুষ খুব সহজেই আসক্ত হয়ে যায়। কিছু মানুষ নিজেকে ধ্বংস করে প্রবল সুখ অনুভব করে। যেটা খুবই সমসাময়িক। আমি চাইনা তুই এমন কিছুর প্রতি আসক্ত হয়ে যাস। যা পরবর্তীতে তোর জন্য ক্ষতিকারক, জীবননাশক হিসেবে গণ্য হবে। তুই সেটাই গ্রহণ করবি যেটা তোর জন্য মঙ্গলজনক হবে। হোক তা হালাল বা হারাম।”

সীতাকুণ্ডের অপার্থিব সৌন্দর্যও যেন ফুলের মনের কোণে আলো জ্বালাতে পারল না। সবকিছুই ফিকে, রঙহীন লাগছে। কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে ফুল উৎসাহ হারিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিল। ঠোঁট জোড়া কাপছে অনবরত। কান্না পাচ্ছে ভীষণ,
“হে আল্লাহ আমাকে মেরে ফেলো তাও এমন দূর্বলতা দিওনা। আমি মৃত্যু মেনে নিতে পারবো; এই দূর্বলতা মেনে নিতে পারবো না। তার জন্য আমার মন ব্যাকুল হওয়ার পূর্বে আমার হৃৎস্পন্দন থামিয়ে দেও।”

ধরনীর বুকে ঘটা করেই রাত নেমেছে। সোহমের অ্যাপার্টমেন্টে শুধু মেলো আর লুহান আছে। সোহম আর রিদম নিজেদের কাজে গেছে। মেলো কপাল চেপে ধরে ড্রইংরুমে বসে আছে। মাইগ্রেনের ব্যথায় মাথা টনটন করছে। দুনিয়াদারী সব উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। অসহ্য ব্যথায় শরীর কাঁপছে, বা হাতে মাথা চেপে ধরে ডান হাতে টেবিলের উপর থেকে ভে** তুলে নিল মেলো। চোখমুখ কুচকে সেটা ফুকতে লাগলো। মুহুর্তেই সেটা থেকে ধোঁয়া বের হয়ে চারপাশ ঘিরে ফেলল,

“মেলো এসব কি করছিস? মাথা ব্যথা করছে ঔষধ খাবি। তা না করে এসব খাচ্ছিস?”

লুহানের কথায় বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করল মেলো, “বিরক্ত করবিনা লুহান। ভালো লাগছেনা, মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। যা এখান থেকে।”

লুহান কথা না বাড়িয়ে ধীরপায়ে মেলোর সামনে এসে দাঁড়াল। একটা কফির মগ এগিয়ে দিল মেলোর দিকে,
“এটা খা ভালো লাগবে। মেডিসিন খেয়েছিস?”

চোখ মেলে লুহানের হাতের দিকে তাকাল মেলো।
“আমি তো কফি চাইনি লুহান। তোর কাজ নেই? সেগুলো কর না গিয়ে। কেন বিরক্ত করছিস?”
“তেহ বললেও কি এরকম বিহেভ করতি?”

হঠাৎ উদ্যানের কথা শুনে মেলো কফির মগটা নিয়ে ঠাস করে টেবিলের উপর রাখল,
“তেহ আমাদের মাস্টার, আমি কেন বাকি সবাই ওর অর্ডার মানতে বাধ্য।”
“শুধু মাস্টার বলেই?”

একহাতে নিজের এলোমেলো চুলগুলো সামলে, চিল্লিয়ে উঠল মেলো।
“হোয়াট ডু ইউ মিন, লুহান?”
“আই ডিড’ট মিন এনিথিং। আমি শুধু তোকে বুঝতে চাইছি।”

সোফা থেকে বালিশ ছুড়ে মারল মেলো। হাসফাস করতে করতে বলল,
“আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি আমার থেকে দূরে থাক। তোর সিম্প্যাথি চাইনা আমার। কারো সিম্প্যাথি চাইনা। আই এম এনাফ ফর মাইসেল্ফ, আই ডোন্ট নিড এনিবডি।”

রেগে গেলো লুহান। একহাতে চেপে ধরল মেলোর গাল।
“বাট আই নিড ইউ। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”

হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় ক্ষেপে গেল মেলো। পা উঁচু করে লুহানের পেট বরাবর লাথি মেরে দিল। আচমকা আঘাতে কয়েকপা পিছিয়ে গেল লুহান। মেলো দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি। আদারওয়াজ আই’ল কিল ইউ।”

লুহান বুঝতে পারল মেলো সঠিক কন্ডিশনে নেই। মাইগ্রেনের ব্যথা সে অনুমান করতে পারবেনা। তাই চুপচাপ থাকাই শ্রেয়।
“ওকে কুল ডাউন। আমি আর কিছু বলবো না। মেডিসিন খেয়েছিস?”

উত্তর দিলোনা মেলো। সোফা থেকে উঠে ঝড়ের বেগে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। তাকে চলে যেতে দেখে নিরাশ হলো লুহান। ধপ করে সোফায় বসে কফির মগে চুমুক দিল। এরইমাঝে হঠাৎ করে তার ফোন বেজে ওঠে, ফোনটা সামনে আনতেই দেখে ‘মেলো’ সেভ করা নম্বরটা থেকে কল আসছে, লুহান একবার ঘাড় বাকিয়ে মেলোর রুমের দিকে তাকাল। তারপর ফোনটা রিসিভ করে বলল,
“স্টে অ্যাওয়ে বলে চেচিয়ে রুমে চলে গেলি। তারপর আবার আদিখ্যেতা করে কল দিচ্ছিস কেন? কেন যে আমাকে বুঝিস না। কতকিছু করলাম তোর জন্য তবুও স্টে অ্যাওয়ে বাদে আর কিছুই বলিস না।”

“এনাফ ইজ এনাফ। বাজে বকা বন্ধ কর।” হঠাৎ উদ্যানের বাজখাঁই কণ্ঠ শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল লুহান,
“তু….ই?”
“তোর ব্যপারটা পরে দেখছি। যেই জন্য কল দিয়েছি শোন, ডক্টর রাফায়েল সিলভা কে বিডিতে আনার ব্যবস্থা কর এজ সুন অ্যাজ পসিবল। ও আমার যেই উপকার করেছে; ওকে জাহান্নামে না পাঠিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছি না।” একাধারে কথাগুলো বলে কল কেটে দিল উদ্যান।

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা: ৩২০০+

[পরবর্তী পর্ব পেতে রেসপন্স করুন। আর হ্যাঁ আজকে নাইস নেক্সট বাদে কমেন্ট করবেন।]

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply