Golpo romantic golpo অবাধ্য হৃৎস্পন্দন

অবাধ্য হৃৎস্পন্দন পর্ব ১


অবাধ্য_হৃৎস্পন্দন (০১)

সোফিয়া_সাফা

চা বানিয়ে আনতে মাত্র কয়েক মিনিট দেরি হওয়াতেই পুরোটা চা ফুলের মুখ বরাবর ছুড়ে মারল তারই মামাতো ভাই। ফুল নিজেকে বাচানোর প্রয়াসে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিল। তবুও শেষ রক্ষা হলোনা। বেশ কিছুটা গরম চা তার বাম গালের উপর আছড়ে পড়ল।
“কখন বলেছিলাম চা বানিয়ে আনতে?”

কথার তীক্ষ্ণতায় ফুল আড়ষ্ট হয়ে দুপা পিছিয়ে গেল, কম্পিত কন্ঠে বলল,
“২৫ মিনিট আগে।”

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি রাগে অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করল। হাতে থাকা কাপটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে দ্বিমত পোষণ করল,
“নোহ ইউ আর রঙ, ঠিক ৩২ মিনিট আগে আমি তোকে চা বানিয়ে আনতে বলেছিলাম। চা বানাতে কতক্ষণ লাগে?”
“আ…মি আস…লে
“একদম চুপ, ইডিয়টের মতো আমতা-আমতা করবিনা। যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার এন্সার দে।”

ফুল ডান হাত বাম গালে ঠেকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“গ্রিন টি বানাতে ৫ মিনিট, ব্ল্যাক টি বানাতে ১০ মিনিট, আইসড টি বানাতে ১৫ মিনিট,”
“আমি কোন টি চেয়েছিলাম?”
“ব্ল্যাক টি।”
“তুই কত মিনিট লেট করেছিস?”

ফুল হাত কচলাতে লাগল। বাম গালটা যেন জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।

“বুঝেছি তুই আজকে মা’র খাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিস।”
যুবকটি কয়েকপা এগিয়ে গিয়ে ফুলের হাত মুচড়ে ধরে গর্জে উঠল,
“জবাব দে, নইলে তোর হাত ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো।”

ফুল কোমল চোখে যুবকটির দিকে তাকাতেই যুবকটি আরেকহাতে তার গালজোড়া চেপে ধরল,
“ইউ ব্লাডি মিস্টেক! কত মিনিট লেট করেছিস বলছিস না কেন?”

ফুল এবার বহু কষ্টে উচ্চারণ করল,
“২২ মিনিট।”

যুবকটি টেবিলের উপরে থাকা লাঠিটি হাতে নিয়ে পুনরায় ফুলের সামনে এসে দাড়াল, বাজখাঁই কন্ঠে বলল,
“২২ মিনিট, দ্যাটস রাইট। এখন তোর শাস্তি পাওয়ার পালা। হাত এগিয়ে দে।”

ফুলের নেত্রপল্লব থেকে কয়েকফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল,
“আমার ভুল হয়ে গেছে, এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। নিচে আপনার হবু বউয়ের মেহেন্দি অনুষ্ঠান চলছে… আপনিই তো বলেছিলেন আমি যেন তার হাতে মেহেন্দি দিয়ে দিই…
“হ্যাঁ তো? আমি এখনো বলছি মেলোর হাতে তুই-ই মেহেন্দি দিয়ে দিবি। যদি একটুও মিস্টেক হয় তাহলে তোর হাত ভেঙে ফেলবো আমি।”

ফুল টলমলে নয়নে যুবকটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার হাত দুটো তো আপনি সঠিক কন্ডিশনেই রাখবেন না, আমি কিভাবে মেহেন্দি দিয়ে দেবো?”
“সেটা তোর ব্যাপার। তুই কিভাবে দিয়ে দিবি সেটা আমি কিভাবে জানবো?”

ফুলের মাঝে অভিব্যক্তি না দেখে যুবকটি রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“যেই কয় মিনিট লেট করবি, সেই কয়মিনিটের জন্য এক্সট্রা শাস্তি পাবি। এবার ডিসাইড কর।”

কথাটা শ্রবণগোচর হতেই ফুল কাপা কাপা হাতদুটো সামনে এগিয়ে দিল৷ মুহূর্তেই পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো ঠাস ঠাস শব্দ। লাঠি আর ফুলের হাতের ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট হওয়া শব্দগুলো বড়ই নিষ্ঠুর শোনাল। প্রতিটি আঘাত ফুলের অস্থিমজ্জা কাপিয়ে দিল। একপর্যায়ে ফুল ব্যাথা সইতে না পেরে ডুকরে কেদে ওঠে,
“ছেড়ে দিন উদ্যান ভাই…

তার মুখ নিসৃত এই এক টুকরো বাক্য শুনে উদ্যানের হাত থেমে গেল। এদিকে ফুল বুঝতে পারল সে চরম ভুল করে ফেলেছে,
“হোয়াট ডিড ইউ সে? ইউ ব্লাডি মিস্টেক!”
“কিচ্ছুনা মাস্টার কিচ্ছুনা… এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”

কিন্তু ক্ষমা তো তার কপালে নেই। লাঠির আঘাতে হাতের তালু ফেটে রক্ত ঝরতে লাগল। চোখে অন্ধকার দেখলেও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেল। এছাড়া সে আর করবেই বা কি? তার মাথার উপর যে বাবা নামক বটগাছের ছায়া নেই। মা আছে, কিন্তু উদ্যানের সামনে দাড়ানোর সাহস তারও নেই। কোনো এক অজানা কারণে ফুলের মা উদ্যানের মুখোমুখি হয়না বললেই চলে। উদ্যান সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তার হাত থেমে যায়।
“যা, দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।”

ফুল হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে রুম থেকে বের হতেই কেউ একজন তার কব্জি ধরে টান দিল, ফুল চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল উদ্যানের ছোট ভাই আবেশ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফুল এবার শব্দ করে কেদে উঠল। আবেশ ফুলকে নিজের রুমে নিয়ে এল। তাকে বিছানায় বসিয়ে হাতজোড়া সামনে আনল। হাতদুটোর অবস্থা দেখে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে উঠে গেল, ফার্স্ট এইড বক্স থেকে মেডিসিন এনে ফুলের হাতে আর গালে সযত্নে লাগিয়ে দিতে লাগল। ফুল একদৃষ্টিতে আবেশের দিকে তাকিয়ে আছে। এক ভাই আরেক ভাই থেকে কতটা আলাদা ভাবতেই অবাক লাগে। একজন র*ক্তাক্ত করেছে আরেকজন মলম লাগিয়ে দিচ্ছে,
“কেন যে ডেবিলটা তোর সাথে এমন করে।”
“তোমরা কেনো বাচাতে আসোনা আমাকে?”

আবেশ ফুলের চোখে চোখ রাখল,
“মম বারণ করেছে ডেবিলের ধারে কাছে যেতে। সেই জন্যই কিছু বলতে পারছিনা। কিন্তু আমার মনে হয়না এসব কিছু আমি বেশিদিন টলারেট করতে পারবো। ডেবিলটা ১৫ বছর পর কেনো যে দেশে ফিরেছে কে জানে। আর তোর সাথে যে তার কোন জন্মের শত্রুতা সেটাই বুঝতে পারছিনা। আমার সাথে তো মনের ভুলেও কথা বলেনা। তবে তোর সাথে ডেবিলগিরি না করলে যেন ওনার পেটের ভাত হজম হয়না।”

ফুল কিছু বলতেই যাবে তার আগেই বড় দেয়ালঘড়ির প্রকট আওয়াজ ভেসে আসে। ফুল মনোযোগ সহকারে প্রত্যেকটা শব্দ গুনে বুঝতে পারে এখন ৮ টা বাজে। ব্যপারটা বোধগম্য হতেই সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
“তুমি নিচে যাবেনা?”

আবেশ না বোধক মাথা নাড়ে,
“ওই ডেবিলের মেহেন্দি অনুষ্ঠানে যোগদান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।”
“মাস্টার মেহেন্দি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেনা। তুমিও চলোনা।”

আবেশ বিরক্তি সূচক শব্দ উচ্চারণ করে বলল,
“আমার সামনে মাস্টার বলবিনা তো।”

ফুল আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“মাস্টার না মনস্টার, উন্মাদ দ্য মনস্টার।”

বলেই ফিক করে হেসে উঠল, তার হাসির রিনিঝিনি শব্দে আবেশ পুলকিত নয়নে ফুলের দিকে তাকায়, মেয়েটা বড্ড বাচ্চা। উদ্যান আসার আগপর্যন্ত এরকমই কথায় কথায় হেসে উঠত কিন্তু উদ্যান আসার পর যেন ফুলের হাসি বিলুপ্তির পথে।
“ফু…ল এই ফুল,”

ডাক শুনে ফুল ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল তার মামি তাকে খুঁজতে খুঁজতে এদিকেই আসছে, ফুল এগিয়ে গেল তার দিকে,
“জি মামি বলো।”

উদ্যান আর আবেশের মা মাহবুবা সুলতানা তাড়াহুড়ো করে বলল,
“নিচে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে, তুই নাকি মেলোকে মেহেন্দি দিয়ে দিবি বলেছিস?”

ফুল উপরনিচ মাথা নেড়ে হাটা ধরতেই আবেশ বলে ওঠে,
“আর ইউ ক্রেজি ফুল? তোর হাতের এই অবস্থা নিয়ে কিভাবে মেহেন্দি দিয়ে দিবি?”

মাহবুবা সুলতানা অবাক চোখে ছেলের দিকে তাকায়,
“হাতের কোন অবস্থার কথা বলছিস আবেশ?”

ফুল হাতজোড়া ওড়নার নিচে লুকিয়ে নিল। আবেশ এসে জোরপূর্বক হাতজোড়া মেলে ধরল। ফুলের হাতের অবস্থা দেখে মাহবুবা সুলতানা ভারী রেগে গেলেন,
“একি? ওর হাতের এই অবস্থা কিভাবে হল?”
“কিভাবে হবে আবার? তোমার অতি আদরের বড় ছেলে ‘তেহজিব উদ্যান খানজাদা’, সে ছাড়া আর কে এতবড় স্পর্ধা দেখাবে?”

উদ্যানের নাম শুনে মাহবুবা সুলতানার চোখেমুখে জ্বলে ওঠা রাগ ধপ করে নিভে যায়।
“কি হলো মম? আজও কিছু বলবেনা? তোমার ওই ছেলের প্রবলেম টা কি? কেন ফুলের সাথে এতো রূঢ় বিহেভ করছে? মাথায় গ্যাস্টিক আছে নাকি?”

মাহবুবা সুলতানা কথাটা এড়িয়ে গিয়ে ফুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুই এই অবস্থায় কিভাবে মেহেন্দি দিয়ে দিবি?”

ফুল শুষ্ক ঢোক গিলল,
“মাস্টার বলেছে আমি মেহেন্দি না দিয়ে দিলে উনি আবারও মার*বেন।”

আবেশ বলে উঠল,
“বললেই হলো নাকি? আমি থাকতে আর কেউ তোকে মা*রতে পারবেনা। দরকার হলে আমি তোকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”

মাহবুবা সুলতানা চমকে তাকাল আবেশের দিকে,
“তোকে আগেও বলেছি উদ্যানের ব্যাপারে কিছু বলবিনা। এর পরেও যদি আমার কথা অমান্য করেছিস তাহলে আমাকে মম বলে ডাকার অধিকার হারিয়ে ফেলবি।”

কথাটা বলেই মাহবুবা সুলতানা হাটা ধরল, ফুলও মাথা নিচু করে তার পিছুপিছু চলে গেল।

চলবে,

(প্রথম পর্ব পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন।)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply