Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব_২৮

#তানিশা_সুলতানা

“বল্টু আমি ঠিক কত পারসেন্ট খারাপ?

নওয়ানের এহেম প্রশ্নের চট করে জবাব দিতে পারে না বল্টু। তার নজরে নওয়ান তালুকদার পৃথিবীর সব থেকে ভালো মানুষ। তার থেকে ভালো আর কেউ নেই। তবে বাকিদের কাছে এই মানুষটা খারাপ। বল্টু মাঝেমধ্যে চিন্তা করে

“সে আমার সাথে যেমন আচরণ করে বাকি সবার সাথে তেমন কেনো করে না? তবে কি নওয়ান তালুকদার শুধু এবং শুধুমাত্র বল্টুকেই ভালোবাসে?

ভাবতেই বুকের ভেতরে শীতলতা অনুভব করে। হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে।

নওয়ান সিগারেট টান দিতে দিতে বল্টুর মুখ পানে তাকায়। তাকে হাসতে দেখে কপাল কুঁচকে বলে

“হোয়াট হ্যাপেন্ড বল্টু?

“ভাই আপনি ভালো। খুব ভালো আপনি।

নওয়ান ঠোঁট বাঁকায়।

হাত ঘড়িতে নজর বুলায়। রাত দুইটা বাজে পাঁচ মিনিট। সেই সন্ধ্যা থেকে একই ভাবে এখানে বসে আছে সে। আর বল্টু তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য হয়ত বল্টুর পায়ে ব্যাথা করছে। নওয়ান অবশ্যই তাকে বেশ কয়েকবার বসতে বলেছে।

কিন্তু বল্টু বসতে নারাজ।

“ভাই একটা কথা বলি?

নওয়ান জবাব দেয় না। সুইমিং পুলের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো গভীরভাবে কিছু একটা চিন্তা করছে।

অনুমতি না পেয়ে দমে যায় না বল্টু। বরং কন্ঠে খাত নামিয়ে বলে ওঠে

“ভাবির বাড়িতে যাইতে চাইলেন না?

গেলেন না কেন?

নওয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। ঠোঁটের ভাঁজ থেকে সিগারেট বের করে আসমান পানে তাকায়। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে

“চাইলেই কি আর সব করা যায়?

“আমার বস চাইলেই সব করা যায়।

“প্রসঙ্গ যখন চাঁদ

তখন আমার

বাকিটা শেষ করার আগেই স্নেহা ব্যস্ত পায়ে ছুটে আসে নওয়ানের নিকটে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে

“চাঁদের ভাইকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। কিন্তু সে ইনোসেন্ট।

স্নেহার চোখ দুটো টলমল করছে। যখন তখন দু গাল বেয়ে টপ টপ করে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়বে। নওয়ান ছোট ছোট নয়নে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে কান্না ভেজা মুখপানে।

” আপনি কিছু করুন নওয়ান।

চাঁদ কল করছে আপনাকে। ধরুন প্লিজজ।

এবারেও জবাব নেই নওয়ানের মুখে। চতুর স্নেহা ঠিক বুঝে যায় নেহাল কে পুলিশে ধরার পেছনে নওয়ানের হাত রয়েছে।

“অভির সঙ্গে নুপুরের ভাইয়ের সম্পর্ক ভালো বলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেন?

চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে নওয়ানের।

ধমকের স্বরে বলে

“আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা। বিরক্ত লাগছে তোকে।

“এমনটা হলে কিন্তু নুপুর আপনাকে ছাড়বে না। ওকে চিনেন না আপনি।

কথা শেষ করে স্নেহা চলে যায়। নুপুর মানিকগঞ্জ সদর থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাত তো অনেক হয়েছে। মেয়েটা একা, যদি কোনে বিপদ হয়ে যায়? তাই তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য স্নেহাও ছোঁটে থানার উদ্দেশ্যে।

অথচ বোকা স্নেহা জানেই না

নুপুরকে পাহারা দেয়ার জন্য থানার আশেপাশে ৫০ জন লোক রাখা রয়েছে। একটা ফুলের টোকাও পড়বে না নুপুরের গায়ে।

বল্টু স্নেহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে

“আপনি যাবেন না ভাই? ভাবির এখন আপনাকে খুব দরকার।

নওয়ান জবাব দেয় না। পাশে থাকা গিটারটা নিয়ে টুং টাং আওয়াজ তুলে তাতে। তারপর মৃদু সুরে গেয়ে ওঠে।

“আমি আবার ক্লান্ত পথচারী

এই কাটার মুকুট লাগে ভারি

গেছে জীবন দুদিকে দুজনারই

মেনে নিলেও কি মেনে নিতে পারি?

ছুঁতে গিয়েও যেনো হাতের নাগালে না পাই

এভাবে হেরে যাই

যেই ঘুরে তাকাই

কেমন জানি আলাদা আলাদা সব

___

আজকের রাতটা ছিলো নুপুরের পরিবারের জন্য দুঃস্বপ্ন। সোনিয়া বিরিয়ানি রান্না করেছিলো। অভি নাসির এবং নেহাল খেতে বসেছে। সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে তিনজন বেশ অনেকটা সময় গল্পের আসর মজিয়েছিলো। এখনো তাদের গল্প শেষ হয়নি। খেতে খেতে এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে তারা।

নুপুর সালাত কেটে সবে টেবিলে নামিয়েছে তখনই পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে আসে। তাদের বাড়ির সামনেই থামানো হয় গাড়ি। এবং মুহূর্তেই দশ বারো জন পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে।

খেতে থাকা নেহালের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দেয়। আর অভিকে দুজন মিলে জাপ্টে ধরে। তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুজনকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।

নাসির জানে তার ছেলে কোন অপরাধ করেনি। রাজনৈতিক কারণে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হল। হয়তো আর কোনদিনও ফিরবে না। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ফেলল সে।

ভাবতেই বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এবং মুহূর্তেই সেটা স্ট্রোকে পরিণত হয়। প্রচন্ড ঘাম ঝড়তে থাকে। ঘাড়ের রগ ফুলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে। নুপুর ভাইয়ের পিছনে চলে গেলেও সোনিয়া বেগম স্বামীকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে। তার চিৎকারে আশেপাশের বাড়ি থেকে মানুষজন আসে এবং নাসিরকে ধরাধরি করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়।

নুপুর পুলিশের গাড়ির পেছনে দৌড়াতে থাকে। নিজের শরীরের যতটুকু শক্তি ছিল সবটা প্রয়োগ করে সে দৌড়ায়। জুতো জোড়া পায়ে চাপানোর সময় পায় নি। পিস ঢালা রাস্তার সংঘর্ষে পায়ের পাতায় কয়েক জায়গায় জখম হয়ে যায়। সেখান হতে রক্ত গড়াতে থাকে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই নুপুরের।

___

নায়েব তালুকদার এসেছে পতিতালয়ের এই ছোট্ট বাড়িতে। তার দুহাত ভর্তি ছিলো হাজার রকমের খাবার জিনিস। সাথে ছিলো কিছু সংখ্যক দেহরক্ষী। আবিরও ছিলো সঙ্গে। আনুর জন্য আলাদা একটা কক্ষ দেয়া হয়েছে। সারাটা সময় সে ওই কক্ষেই বসে থাকে। বাইরের আলো বাতাস তার আর ভালো লাগেনা। মানুষের আনাগোনা তো একদমই পছন্দ নয়।

তবে আজকে অনেকদিন পরে আবিরের কণ্ঠস্বর কক্ষে জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। প্রথমেই নজর পড়ে আবিরের দিকে। নায়েব তালুকদারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের উচ্চতা সমান সমান। গায়ের রংটাও একই রকম। চেহারায়ও অনেকটা মিল পাওয়া যায় ভালো ভাবে খেয়াল করলে। আনু খেয়াল করে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে দুজনকেই। বেহায়া আঁখি পল্লব ভিজে উঠতে চায়। তবে আনু কড়া ধমক দিয়ে তাকে থামায়।

মেয়ে মানুষের এতোটা বেহায়া হওয়া উচিত নয়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয় আনু। জানলাটা বন্ধ করে শব্দ করে। মনে মনে বলে

“যতটা যন্ত্রণা তুমি আমায় দিয়েছো

তার থেকে দ্বিগুণ বেশি যন্ত্রণা তুমি পাবে। আমার চোখের প্রতিটা ফোটা পানির হিসেব দিতে হবে তোমাকে।

আমার সুন্দর জীবনটাকে নষ্ট করার অপরাধে তোমার মরণব্যাধী অসুখ হবে। বাঁচার জন্য ছটফট করতে থাকবে তুমি। অনবরত ক্ষমা চাইবে আমার কাছে। কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করব না।

কোনদিনও না

কক্ষনো না।

____

নায়েব তালুকদার কে দেখে সিমা খুশি হলো কিনা বোঝা গেল না। তবে ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে

“হঠাৎ এখানে আসার কারণ?

নায়েব তালুকদার তার পেছনে থাকা গার্ড দের দিকে তাকায়। এবং বলে

“তোমরা এখানেই দাঁড়াও। পাঁচ মিনিটে আসছি আমি।

বলেই পায়ের জুতো জোড়া খুলে সীমার ছোট্ট কুটিরে ঢুকে পড়ে। আবির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

নায়েব খাটের উপর পা তুলে বসে। হাতে থাকা ছোট্ট ব্যাগ খানা সীমার দিকে বাড়ি দিয়ে বলে

“তোমাকে অনেকদিন দেখি না।

তাই দেখতে আসলাম।

তাচ্ছিল্য হাসে সীমা। তাকে যে দেখতে আসেনি এটা ভালো করেই জানে সে। উদ্দেশ্য ভয়ংকর। না হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি ছেড়ে এখানে ছুটে আসতো না স্বার্থপর লোভী মন্ত্রী।

“এখানে ডায়মন্ডের নেকলেস আছে। এটা তোমার।

“আমি বড্ড লোভী। সামান্য ডায়মন্ড দিয়ে আমাকে কেনা যাবে না।

“তাহলে কি চাই তোমার?

“মুক্তি।

এখানে আমি আর থাকতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। কি এমন পাপ করেছিলাম আমি?

শুধু তো একটু সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম।

বিরক্ত হলো নায়েব। হাতে তার সময় কম। যত দ্রুত সম্ভব কথা শেষ করে ফিরতে হবে তাকে।

“সীমা এখানে যতগুলো মেয়ে আছে আমি তাদের বিদেশে প্রচার করতে চাই।

কালকে ক্লাইন্ট আসবে। তুমি নিজ দায়িত্বে মেয়েদের তৈরি করবা।

“আমি পারবো না

“নায়েব তালুকদার কে না বলার সাহস হয় কি করে তোমার?

“কি করবেন আপনি? মেরে ফেলবেন? ফেলুন।

বাঁকা হাসে নায়েব। বিছানা থেকে নেমে সীমার গালে হাত রাখে

“ঠিক আছে

তুমি যা চাচ্ছো তাই হবে

বলেই পক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। জুতো জোড়া পরিধান করে চলে যেতে থাকে পতিতালয় নামক এই অভিশপ্ত স্থান থেকে।

যেতে যেতে নিজের গার্ডের কিছু একটা ইশারা করে। তারা সীমার কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। চমকে উঠে আবির। এখন ঠিক কি হতে পারে ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার। চিৎকার করে ওঠে। দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে বলে

“তোমরা দরজা খোলো

আমার খালামনিকে কাছে যেতে দাও।

আবিরের আর্তনাদে সকলেই তাদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। আনুও বের হয়।

কক্ষের ভেতর থেকে সীমা বেগমের আর্তনাদ এবং কক্ষের বাইরে আবিরে চিৎকারে আনুর কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে।

____

“আমার ভাইয়ের কি অপরাধ? তাকে কেনো অ্যারেস্ট করা হলো?

মানিকগঞ্জ সদর থানার এসিপি আশিক রহমানকে প্রশ্ন করে নুপুর। তোর চোখে ভয়ের ছিটেফোঁটাও নেই।

সারারাত থানার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এক পা নড়েনি সে।

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply