Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ১৯


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:১৯

#তানিশা সুলতানা

“শাফিন ভাইয়া এখান থেকে চলো। এদের ফালতু কথা শোনার থেকে আমাদের আনুকে খুঁজে বের করা বেশি ইমপটেন্ট।

নওয়ানের ঠোঁটের ভাজে থাকা সিগারেট প্রায় শেষর পথে। তাতে শেষ টান দিয়ে ছুড়ে ফেলে রেস্টুরেন্টের ফ্লোরে। তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে বেনসন সিগারেট এর প্যাকেট বের করে। প্যাকেটের গায়ে লেখা “ধুমপান স্বার্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে ক্যান্সার হয়” নুপুরের পড়ে সেদিকে। সে কপালে ভাজ ফেলে নওয়ানের ঠোঁট পানে তাকিয়ে থাকে। এতো সিগারেট টানে তবুও কি সুন্দর টকটকে লাল। আর কালকে এই ওষ্ঠ দ্বারাই ভাবতেই গা শিওরে ওঠে নুপুরের। তারাহুরো করে নজর ফেরায়।

নওয়ান একখানা সিগারেট বের করতে করতে বলে

“হু ইজ আনু?

আবিরের বেড পার্টনার?

নুপুরের রাগ তরতর করে বেড়ে যায়। সে আঙুল তুলে বলে

“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ।

নওয়ান দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকায়। রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সকলে নজর তাদের দিকে। বল্টু কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে নুপুরের উপর। পাবলিক প্লেসে তার বসের সাথে এরকম ব্যবহার কেনো করবে সে? সে কি জানে না নওয়ান তালুকদার বাংলাদেশের রাজার একমাত্র রাজপুত্র। তার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলা মানা। তাকে সম্মান করতে হবে।

নওয়ান আশেপাশে তাকায়। তারপর সিগারেট ঠোঁটের ভাজে পুরে সঙ্গে সঙ্গে বল্টু লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সিগারেট টানতে টানতে দাঁড়িয়ে পড়ে নওয়ান। সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে

“পুরুষ মানুষ গোটা দুনিয়ার কাছে বাঘ হলেও বউয়ের কাছে ভেজা বিড়াল। আমি নওয়ান তালুকদারও তার ব্যতিক্রম নয়। উনি হচ্ছে আমার পার্সোনাল ইঁদুর। আর আমি তার ভেজা বেড়াল।

গাইস যার যার খাবারে মনোযোগ দাও। এদিকে তাকালে চোখ তুলে লুডু খেলবো।

আহি নামের মেয়েটাও এদিকে তাকিয়ে থাকে। কত সুন্দর করে নিজের বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সবাইকে। প্রাউডলি বলল এই মেয়েটা তার বউ। অথচ মেয়েটার চোখে মুখে একরাশ বিরক্ত। যেনো নওয়ান তালুকদারের থেকে বউ পরিচয় পেয়ে সে অপবিত্র হয়ে গেলো।

মানুষ বলে না

আমরা সব সময় ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলি।

যারা আমাদের গুরুত্ব দেয় না আমরা তাদের থেকেই গুরুত্বের আশা করি। যাদের চোখে আমাদের জন্য এতোটুকু মায়া নেই আমরা তাদের চোখে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব দেখতে চাই।

আমরা মরে গেলেও যাদের কিছু এসে যায় না আমরা তাদের সাথে বাঁচতে চাই।

এইযে আহি। নওয়ান যদি তার সাথে একটু হেসে কথা বলতো তাহলেই সে কত খুশি হয়ে যেতো। মনে হতো পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তি সে। এক জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকতো না।

অথচ নুপুর নামের মেয়েটি গোটা নওয়ান তালুকদার কে পেয়েও খুশি নয়।

আচ্ছা একেকজনের খুশি একেক রকম কেনো? একজন যেটাকে নিজের পৃথিবী মনে করে। আরেকজন সেটাকে আগাছা মনে করে কেনো?

অবশ্য এমনটা না হলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়তো।

আহি ভাবনার মাঝে খেয়াল করে নওয়ান পুনরায় নুপুরের পাশে বসে পড়েছে। দূর থেকে বোধহয় একটা ছেলে ভিডিও করতে ছিলো। শুদ্ধ পুরুষটি নুপুরের মুখের সামনে নিজের হাতটা রাখে। ভয়ংকর দৃষ্টিতে ছেলেটার পানে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলে

“আমার বউয়ের ভিডিও করার পারমিশন তোকে কোন শালা দিছে? সী ইজ মাই ওম্যান। দ্বিতীয়বার তার দিকে ক্যামেরা তাক করার আগে চারবার ভাববি। ইটস মাই লাস্ট ওয়ার্নিং।

ছেলেটা তাড়াহুড়ো করে ফোনটা নামিয়ে নেয়। দুহাতে কান চেপে ধরে অনবরত স্যরি বলতে থাকে।

নুপুর বিরক্ত স্বরে বলে

“আপনার ড্রামা শেষ হয়েছে? বিশ্বাস করুন এখন এইসব দেখার একদমই সময় নেই আমার।

শাফিন নিজের ফোন খানা দেখতে দেখতে বলে

“নুপুর আনুর ফোনের লাস্ট লোকেশন পেয়ে গেছি। পাটুরিয়া ফেরিঘাট। আমাদের এক্ষুনি সেখানে যাওয়া দরকার।

নুপুর নিজের ব্যাগখানা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে

“চলো ভাইয়া

শাফিন নওয়ানের পানে তাকিয়ে ভীতু স্বরে বলে

“ভাই নুপুর কে নিয়ে যাবো? আমাদের যাওয়াটা খুব দরকার। আনুর লাইফ রিক্সে রয়েছে।

নওয়ান পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসে। নুপুরের মুখপানে তাকিয়ে সিগারেটে টান দেয়। ধোঁয়া গুলো শূন্যে উড়াতে ওড়াতে বলে

“বউটা কিন্তু আমার।

এটা সব সময় মাথায় রাখবি।

শাফিন অনবরত মাথা নেড়ে বলে

“ও আমার বোন। আপন বোনের মতো ভালোবাসি।

“গুড

যাহহহ

নুপুরের এসব শোনার সময় নেই। সে নওয়ানকে ডিঙিয়ে বড় বড় পা ফেলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। ওর পেছন পেছন শাফিনও যায়।

শাফিনের বাইক রয়েছে। রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক খানা দাঁড় করানো। শাফিন গিয়ে বাইকে ওঠে। হেলমেট মাথায় পড়তে পড়তে খেয়াল করে নওয়ান এদিকে এগিয়ে আসছে।

ওর বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পানজাবিতে রাখা সানগ্লাস খানা হাতে নিয়ে নুপুরের চোখে পরিয়ে দেয়।

নুপুর সেটা খুলতে চাইলে নওয়ান বাঁধা দিয়ে বলে

“বাইকে যাবা রাস্তায় প্রচুর ধুলোবালি তার ওপর প্রচন্ড বাতাস। চোখে ময়লা ঢুকে যাবে।

থাকুক এটা খুলিও না।

শাফিন মৃদু হাসে। নওয়ান তালুকদার যে খুব বাজে ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে নুপুর শিকদারকে এটা সে বুঝতে পারে।

কিন্তু বুঝতে পারে না নুপুর। সে তাচ্ছিল্য হেসে বলে

“লোক দেখানো ভালোবাসা বন্ধ করুন নওয়ান তালুকদার।

এখানে ভালোবাসা দেখানোর কম্পিটিশন হচ্ছে না। আর না তো কেউ আপনাকে নোবেল দেবে। সো প্লিজ স্টপ ইওর ফাকিং ড্রামা।

বলেই চোখে চশমা খানা খুলে ফেলে। সেটা ফেলে দেয় রাস্তায়।

“ভাইয়া চলে তো তাড়াতাড়ি

শাফিন বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। নওয়ান তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নুপুরকে দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে।

বল্টুর চোখ দুটো টলমল করছে। তার ভাইকে বাজেভাবে অপমান করা হলো। কান্না পাবে না বুঝি?

রেস্টুরেন্ট উপস্থিত সকলে এবং রাস্তাঘাটে কতশত মানুষ সকলেই তাকিয়ে আছে নওয়ান এর পানে। মনে মনে হাসছে হয়তো। তাচ্ছিল্য করে বলছে

“ছি নওয়ান তালুকদার একটা মেয়ের কাছে দুর্বল। একটা মেয়ে তাকে কিভাবে অপমান করলো।

নওয়ান বল্টুর মুখ পানে তাকায়।

ওকে কাঁদতে দেখে একটু অবাক হয়। বল্টুর কাঁধে হাত রেখে বলে

“কিরে তুই কান্না করছিস কেনো?

বল্টু হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে

“ভাবী আপনাকে অপমান করলো। মানুষজন কিভাবে দেখলো। এসব দেখে কান্না পাবে না বুঝি?

বল্টু সরলতা দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে নওয়ান।

“বল্টু সবে তো শুরু। ইন ফিউচার তুই আমি দুজনে একসাথে কাঁদবো নি।

আমাদের শেষ পরিণতি কান্নাই হবে।

___

কাঠের পুতুলের মত বসে আছে আনু। না আছে চোখে পানি আর না আছে কোনো অনুভূতি। নিজেকে বাঁচানোর এতোটুকুও যেনো ইচ্ছে নেই তার। বৃষ্টি একের পর এক অনেক কথা বলে চলেছে।

মূলত আবিরের সঙ্গে বৃষ্টির প্রেম ছিলো। তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। তারপর এই ঘরটা তাকে উপহার দিয়েছে।

বৃষ্টি বাঁচার জন্য কত চেষ্টা করেছে। কতবার পালাতে চেয়েছে।

কিন্তু পারে নি। এখান থেকে পালানোর যে কোনো রাস্তা নেই।

তবে এখন ইচ্ছে করলে পালাতে পারে। তার জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এখন আর পালাতে ইচ্ছে করে না। হাজার পুরুষের ছোঁয়া শরীরে লেগে গেছে। বাবা-মা মৃত বলে জেনেছে। সমাজের চোখে সে কলঙ্কিনী।

এই জায়গাটাই তার জন্য সেভ। বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ।

আনু বৃষ্টির মুখপানে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর দেখতে সে। ডাগর ডাগর চোখ, কোমর সমান চুল, ধবধবে ফর্সা। এক্কেবারে পারফেক্ট একটা নারী।

তার সঙ্গে কি আবির সংসার করতে পারতো না? আনু না হয় সুন্দর নয়, শ্যাম বর্ণের। তাকে ভালোবাসা যায় না। তবে পুতুলের মত মেয়েটিকে তো ভালোবাসা যেতো। তাকে কেনো ভালো বাসলো না?

বৃষ্টি আবার বলে ওঠে

“জানো আনু।

জীবন তো কয়েকদিনের। একদিন তো মরেই যাবো। আমিও মরবো আর আবিরও মরবে।

আমার বিচার শুধু আল্লাহর কাছে। যে আমার ফুলের মত জীবনটাকে নষ্ট করে দিলো আমার আল্লাহ তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিক।

আনুর বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আতঙ্কিত স্বরে বলে

“এভাবে বলিও না

সে ভালো থাকুক। তার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারবো না। এ পৃথিবীর সবটুকু সুখ তার হোক।

বৃষ্টি অনুর বাহুতে মাথা রাখে।

“এত বেশি ভালো কেনো বাসো আপু?

ভালোবাসাটা কমাও। সে যে ভালো মানুষ নয়। আমাদের এতো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা তার নেই। তাকে ঘৃণা করা উচিত। ঘৃণা করো আপু।

আনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে

“ভালোবাসাকে কি ঘৃণা করা যায়? আমি তো পারি না। সে যদি এখনো এসে বলত “আনু আমি ভুল করে ফেলেছি। তুমি চলো আমার সাথে। আমরা ছোট্ট একটা সংসার বাঁধবো। তুমি আমি খুব ভালো থাকবো” বিশ্বাস কর আমি তৃতীয়বার তাকে বিশ্বাস করবো।

বৃষ্টি খিলখিল করে হেসে উঠে বলে

“একটু পরে নতুন মানুষ আসবে। তোমার ছোট দেহটার উপর ইচ্ছে মত জোর খাটাবে। তারপর হাতে একগুচ্ছ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যাবে। এমনটাই চলবে এখন থেকে প্রতিদিন।

এটার জন্য প্রিপারেশন নাও। তোমার আবির আর কোনদিনও আসবেনা তোমাকে নিতে। কিছুদিন পর সে নতুন একটা মেয়ে নিয়ে আসবে আমাদের সঙ্গে করতে।

তখনই সীমা আসে।

ঝাঁঝালো স্বরে বলে

“বৃষ্টি ওকে তৈরি করো। এখন গল্প করার সময় নাকি? নিয়ম কানুন সব ভুলে যাচ্ছো?

বৃষ্টি তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে পড়ে। মাথা নিচু করে বলে

“এক্ষুনি তৈরি করছি মা। একটু সময় দিন আমায়।

সীমা চলে যায়। আনু বলে

“তাকে মা বলে ডাকো কেনো?

“ওনাকে আমার মায়ের মতো দেখতে। মাঝেমধ্যে মায়ের মতই আদর করে। ওনার শরীর থেকে মা মা একটা গন্ধ আসে।

“মা কি তার মেয়েকে এভাবে

আনুর কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি বলে ওঠে

“উনিও হয়তো তোমার আর আমার মতোই নিরুপায়।

___

পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে উপস্থিত সকলকেই আনুর ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় “এই মেয়েটিকে দেখেছেন কি না”

সকলে অস্বীকার করে। বলে এই মেয়েটি এদিকে আসেনি।

অথচ নুপুরের কেনো জানি মনে হচ্ছে সকলেই মিথ্যে বলছে।

আনু এসেছিলে এখানে। এরা সবাই দেখেছে আনুকে।

শাফিন পুরো পুলিশ সোর্স নিয়ে এসেছে। আনুর ফোনের লাস্টে লোকেশন দেখাচ্ছে নদীর কাছে। দুজন ডুবুরিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা ফোন খুঁজছে।

হঠাৎ একটা লোক এসে দাঁড়ায় শাফিনের সামনে। বলে

“এই মেয়েটিকে আমি দেখেছি। আজ ভোরে একটা ছেলের সাথে এখানে এসেছিলো। পানিতে ফোন ফেলে দিয়ে আবার সেই ছেলের সঙ্গে চলে গেছে। ওই তো ওখান থেকে বাস নিয়ে ঢাকার দিকে গেছে।

নুপুর নিজের ফোন ঘেটে আবিরের একখানা ছবি বের করে। সেটা লোকটিকে দেখে বলে

“দেখুন তো এই ছেলেটা ছিল কিনা ওর সাথে।

লোকটা নুপুরের ফোন হাতে নিয়ে ছেলেটার ছবি ভালো করে দেখে

তারপর বলে

“না না এই ছেলে ছিলো না। অন্য ছেলে ছিলো।

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply