#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১৮
#তানিশা সুলতানা
সীমা আক্তার। বয়স চল্লিশ বছর। ঝিটকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছিলেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে। ১৯৯২ সালে গোটা মানিকগঞ্জ জেলায় প্রথম হয়েছিলেন৷ খেলাধুলায়ও বেশ ভালো ছিলো। কিন্তু পরিবারের নিষেধ থাকায় খেলাধুলায় মন দেয় নি। বাবা মায়ের বড় আদরের এবং ভাইদের চোখের মনি ছিলেন তিনি। চার ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার ছোট। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি আর দুষ্টুমিতে মেরে থাকতেন। ভাইয়েরা পড়ালেখার তেমন সুযোগ না পেলেও বোন দুটোকে স্কুলে দিয়েছিলেন। দুই বোন একই ক্লাসে পড়তেন। বয়সের পার্থক্য দেড় বছর। ভালোই চলছিলো সবটা। তারপর একটা ঝড় আসলো।
বাবা ভাইদের আদরের রাজকন্যা থেকে হয়ে গেল দৌলতদিয়ায় অবস্থিত এই পতিতালয়ের একজন। ২৩ বছর হয়ে গেলো এই অভিশপ্ত স্থানে রয়েছে সে।
প্রথম প্রথম বেরুনোর পথ খুঁজতো কিন্তু ধীরে ধীরে মেনে নিলো।
খুব ভালো বিজনেস।
প্রতিদিন খদ্দের আসে বড় মাপের কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দেহ টাকে ভোগ করে।
বর্তমানে এখানে ৫৮ জন মেয়ে রয়েছে। তাদের ভোগের বিনিময়ে খদ্দেররা যত টাকা দেয় সব টাকা সীমার হাতে এসে পড়ে। সেখান থেকে সে কিছু টাকা নিজে রাখে এবং কিছু টাকা মেয়েগুলোকে দেয় হাত খরচের জন্য। এই তো চলছে জীবন।
আনু বুঝে গেছে তার সাথে ঠিক কি হলো। দ্বিতীয় বার ঠকে গেলো সে। না না এইবার অল্পশল্প ঠকে নি। পুরোপুরি ঠকে গেছে। আবিরের মায়াভরা মুখ পানে কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকে আনু। তার তৃষ্ণা মিটছে না। চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে যাক। আরও কিছু মুহুর্ত আনু দেখুক আবিরকে।।
কে বলতে পারে “এটাই হয়ত শেষ দেখা”
আবির চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। অনু আবিরের হাত টেনে ধরে। চোখ ভর্তি পানি অথচ ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
“থাকো না আর একটু
তোমাকে শেষবার নয়নে ভরে একটু দেখি।
হয়ত আমাদের আর কখনো দেখা হবে না। বা দেখা হলেও তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আর থাকবে না।
আবিরের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সেও কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকে আনুর চোখ দুটোর দিকে। কি দারুণ আকুতি দুচোখে। এক আকাশ সমান লোভ তার সঙ্গে থাকার।
মেয়ে মানুষের এতো লোভী হওয়া ঠিক নয়।
আবির নজর ফিরিয়ে নেয়। হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে বলে
” সময় নেই।
আনু তাচ্ছিল্য হেসে কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে আবিরের চুলের ভাজে হাত বুলায়।
ধরে আসা স্বরে বলে
“আমার আল্লাহ তোমায় ভালো রাখুক।
এই পৃথিবীর সব সুখ তোমার হোক।
আমার সাথে যেটা করলে আল্লাহ যেনো তোমার সাথে সেটা না করে।
চলে যায় আবির। পকেট থেকে ফোন করে সেটা দেখতে দেখতে বড় বড় পা ফেলে ছোট ছোট ঘর ডিঙিয়ে মেইন গেইট পেরিয়ে বেরিয়ে যায়। একটা বার পেছন ফিরে তাকায় না। অথচ আনু দেখতে থাকে।।
ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে থাকে। দ্বিতীয় বার ঠকিয়ে দেওয়া পুরুষটির থেকে তার নজর সরছেই না।
___
“দ্বিতীয়বার ঠকে গেলাম নুপুর। আমাদের বোধহয় আর কখনো দেখা হবে না।”
ব্যাস আর কিছু লেখা নেই। তবু যেন এই গুটি কয়েক শব্দের মধ্যে অনেক কথাই খুঁজে পেয়েছে নুপুর। অনুভব করতে পেরেছে আনু নামক মেয়েটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার জীবন সংকটে। আবির পুনরায় তার সঙ্গে কিছু করেছে। এইবার নুপুর ছাড়বে না। একদম ছাড়বে না। আনুর চোখের একেকফোঁটা পানির মূল্য দিতে হবে আবিরকে।
নুপুরের খালাতো ভাই সাফিন। মানিকগঞ্জ সদর থানার একজন পুলিশ তিনি। থানা জিনিসটা বরাবরই অপছন্দ নুপুরের। তাইতো রেস্টুরেন্টে দেখা করতে এসেছে শাফিন। বলা বাহুল্য আনুকে অসম্ভব পছন্দ করে এই ছেলেটা।
নুপুরের থেকে বিস্তারিত শুনে মুহুর্তেই ফোন ট্যাগ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোথা থেকে ফোন খানা বন্ধ হয়েছে জানা গেলে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।
নুপুরের চোখ দুটো টলমল করছে। সাধারণত সে ভীষণ শক্ত মনের মানুষ। সহজে কান্না পায় না। তবে আজকে পাচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে বসে বলতে ইচ্ছে করছে “আমার আনুকে চাই। যেভাবে পারো সেখান থেকে পারো এনে দাও শাফিন ভাই”
নওয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক থামায়। বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকে মিষ্টির দোকানের পাশে নতুন রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে। ৮০% শেয়ার নওয়ানেরও রয়েছে এখানে।
বল্টু সেখানেই দাঁড়িয়েছিলো। তার হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এবং সাদা রঙের একটা কাগজ ভাঁজ করা। লাভ লেটার হবে হয়ত।
বেচারা বেশ ভয় পেয়ে আছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
নওয়ান হেলমেট খুলে বাইকের উপর রাখে। বড়বড় চুল গুলো দুই হাতে পেছনে ঠেলে পকেট থেকে সিগারেট বের করে। একটা সিগারেট ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালায়। সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়ে আসমান পানে তাকায়। ধোঁয়া গুলো শূন্যে উড়িয়ে বাইক থেকে নামে।
বল্টুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে
“কিরে
তোকে লাভ লেটার কে দিয়েছে? প্রেম টেম করছিস?
বলতে বলতে বল্টুর চুলের ভাজে হাত বুলায়।
বল্টু যেনো হুশে ফিরলো। হাতে থাকা ফুল এবং চিঠির পানে এক পলক তাকিয়ে পরবর্তীতে তাকায় রেস্টুরেন্টের একদম সামনে টেবিলে বসে থাকা একটা মেয়ের পানে। ভয় বুঝি তার বাড়লো।
এই তো কিছু মুহুর্ত আগের ঘটনা। নুপুরকে একটা ছেলের সাথে দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খায় বল্টু। সাহস হয় না রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢোকার। চুপিসারে আড়ালে আবডালে গিয়ে নওয়ানকে কল করে। কথা শেষ করে ফোন পকেটে পুড়তেই দুটো মেয়ে এসে দাঁড়ায় তার সামনে। লম্বা সালাম দিয়ে বলে
“আসসালামু আলাইকুম বল্টু ভাই। আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
সরল বল্টুর সালামের জবাব নিয়ে বলে
“কি কথা বলুন।
দুটো মেয়ের মধ্যে ফর্সা করে যে মেয়েটি সে স্কুল ব্যাগ থেকে কিছু গোলাপ ফুল আর একটা চিরকুট বের করে। সেটা বল্টুর দিকে এগিয়ে দেয়।
বল্টু তো ভেবেছিলো তাকে প্রপোজ করছে। তাই খানিকটা লাজুক হেসে ফুলগুলো হাতে তুলে নেয়।
তখনই মেয়েটা বলে
“এগুলো নওয়ান তালুকদার কে দিয়ে বলবেন আহি দিয়েছে। সে যেনো গোলাপ গুলো যত্ন করে তুলে রাখে। আর মধ্য রাতে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে চিরকুট খানা যেন পরে।
তারপর বল্টুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেয়ে দুটো চলে যায়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে সব থেকে প্রথম সারির দুটো চেয়ার দখল করে বসে পড়ে।
বল্টুকে চুপ থাকতে দেখে নওয়ান ধমকের স্বরে বলে ওঠে
“কিরে কথা বলছিস না কেনো?
বল্টু খানিকটা চমকে উঠে। তাড়াহুড়ো করে বলে
” ভাই এসব আমার জন্য না৷ ওই মেয়েটা আপনার জন্য দিয়েছে।
নওয়ানের কপালে ভাঁজ পড়ে। বল্টু হাতের আঙ্গুলের ইশারায় রেস্টুরেন্টের প্রথম শ্রেণীতে বসা মেয়ে দুটো দিকে দেখায়। নওয়ান এক পলক তাকায় পরবর্তীতে বল্টুর হাতের দিকে তাকায়।
লাভ লেটার, রোজ তাও আবার তার জন্য?
মেয়েটার কলিজা কত বড়?
দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে ফেলে নওয়ান।
বল্টু কে উদ্দেশ্য করে বলে
“ওই মেয়েটার দু গালে চারটে থাপ্পড় মেরে আয় যাহহ।
বল্টু শুকনো ঢোক গিলে। আজ ওবদি একটা মশাও মারতে পারে নি সে। কিভাবে একটা মেয়ের গায়ে হাত দিবে?
” পারবি কি না?
সিগারেটক টান দিতে দিতে বলে নওয়ান। বল্টু জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। তারপর মিনমিন করে বলে
“আপনি বললে পারবো।।
” তো আমিই তো বললাম। যাহহহ
বলেই বল্টুর হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় তারপর পা রাখে ফুলের ওপর। লেটার খানা দুই টুকরো করে আসমানে উড়িয়ে দেয়। উড়তে উড়তে কোথায় গিয়ে পড়ে সেদিকে খেয়াল নেই।
বল্টু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে। মনের মধ্যে একরাশ ভয় দানা বেধেছে। জুতো পেটা খেতে না হয় আজকে।
রেস্টুরেন্ট এর কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে। একটুখানি কষ্টই হয়ে যায় দরজা খানা খুলতে। বেশ শব্দ। রোগা পাতলা বল্টুর এতো শক্তি আছে না কি?
মেয়েটা বল্টুকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ে।
ভীষণ উৎসাহিত স্বরে বলে
“কি বললো উনি? ফুলগুলো ফেলে দিলে কেনো? উনার কি রোজ এ এলার্জি আছে?
বল্টু মাথা নিচু করে নরম সরে বলে
“ওই যে পেছনের দিকে সাদা কলেজ ড্রেস একটা মেয়ে বসে আছে। উনি হচ্ছে নওয়ান তালুকদারের বউ।
আমার বস বউ ছাড়া আর কোন মেয়ের দিকে তাকায় না। আপনি দয়া করে পরবর্তীতে কখনো ফুলটুল দিবেন না। না হলে সে ভীষণ রাগ করবে।
ব্যাসস বল্টু কথা শেষ করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে নেয় তবে বেশি দূর যেতে পারে না। কারণ ইতিমধ্যেই নওয়ান চলে এসেছে।
ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে থাকা সিগারেট টানতে টানতে সামনে এগোতে থাকে। বল্টু তাকে অনুসরণ করে পেছনে পেছন যেতে থাকে। রেস্টুরেন্ট এ উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে সালাম দেয় মহারাজকে। কিন্তু তিনি কারো দিকে ফিরেও তাকায় না।
সোজা পুরের সামনে এসে দাঁড়ায়। দাঁড়ায় বললে ভুল হবে একটুখানি দাঁড়িয়ে নুপুরের পাশে বসে পড়ে ঠাস করে।চিন্তিত নুপুর চমকায়। পাশ ফিরে নওয়ানকে দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
শাফিন দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।
নওয়ান সালামের জবাব না নিয়ে হাতের ইশারায় শাফিনকে বসতে বলে।
” এখানে কি চাই?
নওয়ান এক হাত মেলে দেয় নুপুরের পেছন দিয়ে। পিঠ ছুঁই ছুঁই হয় কিন্তু ছোঁয়া লাগেনা।
অপর হাতে ঠোঁটের ফাঁকা থেকে সিগারেট বের করে জবাব দেয়
“বউকে দেখার ক্রেভিং উঠেছিলো। তাই চলে আসলাম।
এই বল্টু বল পানি ছাড়া মাছের মতো ছটফট করতেছিলাম না চুমু খাওয়ার জন্য? বল
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৫(৫.১+৫.২)
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১২
-
অন্তরালে আগুন গল্পের লিংক
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৩
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪