#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:১০
#তানিশা সুলতানা
পুরে যাওয়া হাত নিয়েই লঙ্কাা বাটে নুপুর। যন্ত্রণায় কলিজা কেঁপে উঠছে। চোখ দুটো টলমল করছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে “এই যন্ত্রণার থেকে মৃত্যুও ভালো” জীবন এ কোন পরিক্ষার মধ্য দিয়ে নিচ্ছে তাকে? তবে হ্যাঁ নুপুর হার মানবে না। কখনোই না কিছুতেই না। হারতে শিখে নি সে।
স্নেহা পাশেই বসে আছে। ইতিমধ্যেই কয়েকবার বলেছে
“নুপুর প্লিজজ আমাকে দাও। কষ্ট হচ্ছে তোমার।
সত্যি বলতে নুপুরের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না স্নেহার। ভীষণ নরম মনের মানুষ কি না?
তবে স্নেহার কথার প্রতিত্তোরে নুপুর জবাব দিয়েছে
” এর থেকেও দ্বিগুণ কষ্ট ভেতরে জমে আছে। এটা কিছুই নয়৷ একরা জানোয়ারের সঙ্গে রাড কাটাতে হচ্ছে।
স্নেহা রেগে গেলো কি না বোঝা গেলো না৷ তবে গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
“ওনাকে অসম্মান করে আমার সামনে কিছু বলিও না নুপুর। সে আমার ভীষণ শখের একটা মানুষ।
তোমার কাছে জানোয়ার হলেও আমার কাছে চাঁদ।
নুপুর মনে মনে ভেংচি কাটে। এতো ভালোবাসা কোথা থেকে আসে? একটা খারাপ মানুষ। যে সারাক্ষণ সিগারেট খায়। মানুষকে দুই টাকার সম্মান দেয় না। প্রকাশ্যে খু/ন করে। বড় দের সাথে বাজে বিহেভিয়ার করে। তাকে কি করে কেউ ভালোবাসতে পারে?
উনি তো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না।
নুপুরের মনের কথা বুঝতে পারলো বোধহয় স্নেহা।
সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে ওঠে
“এই খারাপ মানুষটাকেই তুমি একদিন অসম্ভব ভালোবেসে ফেলবে। ঠিক আমারই মতো।
সেইদিন বুঝবে খারাপ মানুষদের মধ্যে মায়া বেশি। তাদের ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না।
___
তালুকদার বাড়ির সকল পুরুষ খাবার টেবিলে বসে পড়েছে। স্নেহা এবং আমিনা সকলের প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছে। সবিতার কপালে ভাজ। বেজায় বিরক্ত যেনো তিনি। মজনু তালুকদার এবং রাশেদুল ইতিমধ্যেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। বেশ মজা করেই খাচ্ছেন তারা। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি। এবং লাল লঙ্কা বাটা। ব্রেকফাস্টে এমন কিছু হলে খিদা যেনো দ্বিগুণ বেড়েই যায়।
মজনু মুখে খাবার পড়ে সবিতার পানে তাকিয়ে বলে
“খাচ্ছো না কেনো? খেয়ে দেখো ভীষণ মজা হয়েছে।
কথা খানা পছন্দ হলো না সবিতার। ওই মেয়ের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো সে রান্না করতে জানে না। ভেবেছিলো আবোল তাবোল কিছু একটা বানিয়ে ফেলবে। সেটা কেউ খেতে পারবে না। আর উনি গাল ভরে কথা শোনাবেন। কিন্তু সেসব কিছুই হলো না।
স্নেহা সবিতার পাশে বসে নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে
“দাদু ভেবেছিলো নুপুর রান্না করতে পারবে না। তাকে কথা শোনাবে। ঠিক যেমনটা ছোট মাকে শোনাতো আগে।
মীরা চোখের ইশারায় মেয়েকে থামতে বলে। তবে স্নেহা থামার নাম নেয় না। পূণরায় বলে
“দাদি সে তোমার নাতি বউ। তাকে ভালোবাসা উচিত।
সবিতা তাচ্ছিল্য হেসে বলে
“যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
“করিও না চুরি। আমি মেনে নিয়েছি। তুমিও মেনে নাও। এবং সবাইকে মানতে বলো।
সবিতা বলে
” তুই পাগল। কপাল পোড়া।
“আমার কপাল নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি শুধু নুপুরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না। গরম পানি ফেলে হাত দুটো কি জঘন্য ভাবে পুরিয়ে দিলে। নেক্সট টাইম এমন করলে আমি চুপচাপ মেনে নিবো না দাদু। সাবধান করলাম তোমায়।
সবিতা দমে যায়। নুপুর স্নেহাকে বলে দিবে সেটা সে ভাবে নি। মেয়েটা তো ভাড়ি বেয়াদব। এই কথা নওয়ানের কানে গেলে সেও ছেড়ে কথা বলবে না তাকে।
রাশেদুল বলে
“ঠিক করেছো মা। ওই মেয়ে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে হওয়ার যোগ্য নয়। নওয়ান ওকে বাড়িতে এনেছে ঠিক আছে। তবে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে আমি পারবো না।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমিনা বলে ওঠে
“আমি বাজান কে ডেকে আনি। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তোমরা খাও
তখনই পেছন থেকে নওয়ানের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। সিগারেট টানতে টানতে এগিয়ে আসে। বড়বড় চুল গুলো এলোমেলো এবং ভেজা। চোখে মুখেও পানি লেগে আছে। হাতাকাটা টিশার্ট হওয়ার সুবিধার্থে দুই হাতের ফুলো ফুলো পেশি গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোলাপি অধর জোড়ায় জায়গা পেয়েছে এক আঙুল সাইজের সিগারেট। নওয়ান চেয়ার টেনে বসে বলে
“চাচ্চু তোমাকে কে বলেছে ও বাড়ির বউ?
সী ইজ মাই বেড পার্টনার। এন্ড তোমাদের জন্য মেইড। এক কথা কয়বার বলবো?
আমিনা বেগম নওয়ান এর প্লেটে ব্রেড ডিম পোচ দেয়। তবে নওয়ানের নজর পড়ে খিচুড়ির দিকে। এমনিতে সে খিচুড়ি বাটা তেল মশলা যুক্ত খাবার পছন্দ করে না। তবে আজকে কেন জানি খেতে ইচ্ছে করলো। তাইতো ঠোঁটের পাশে থাকা সিগারেট খানা শূন্যে ফেলে দেয় আমিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” মা খিচুড়ি না কি এটা খাবো।
আমিনা একটু খানি অবাক হয়। তবে ছেলেকে প্রশ্ন না করেই অল্প খিচুড়ি এবং বাটা প্লেটে দেয়। নওয়ান হাত না ধুয়েই খাওয়া শুরু করে।
নুপুর এখনো কিচেনে। স্নেহা হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছে। এখন বেশ আরাম লাগছে। কোথায় যাবে? কোন রুমে যাবে? সেটা বুঝতে না পেরে কিছু নেই বসে ছিল ঘাপটি মেরে।
খাবার টেবিলে হওয়া সকল কথোপকথন তার কানে আসে। নওয়ানের বলা বেড পার্টনার কথাটা কলিজায় আঘাত করে। ওই লোকটার থেকে কোন রকম এক্সপেক্টেশন নেই তার। সে কি বলল, কি করলো, মরলো, না বাঁচলো কোনো কিছুতেই মাথা ঘামাতে চায় না। তবুও কেনো জানি বারবার তার মেইড এবং বেড পার্টনার বলাটা মেনে নিতে পারছে না। অজান্তে চোখের কোণে অশ্রু জমে যাচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। নওয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলতে ইচ্ছে করছে
“সম্মান দিতে না জানলে বিয়ে কেনো করলেন?
সর্বক্ষণ কথার আঘাতে মেরে ফেলতেই বুঝি আমাকে জড়ালেন আপনার বেপরোয়া জীবনের সঙ্গে?
___
কলেজের জন্য বেরিয়েছে নুপুর। বাড়ির কাউকে জানিয়ে আসে নি। বেওথা থেকে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের দ্রুত খুব বেশি নয়। তবুও মেইন রোড হওয়ার সুবিধার্থে সকলেই রিকশা অটো এসবেই যাতায়াত করে। নুপুরের হাতে টাকা নেই। সেজন্যই পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। গতকাল রাত থেকে এই পর্যন্ত পেটে এক ফোঁটা পানিও পড়েনি। মাথা ঘুরছে, পা দুটো যেনো চলছে না। আর আজকে সূর্যমামা একটু বেশিই তাপ দিচ্ছে। যেন মাথা ভেদ করে মস্তিষ্কটাকে শুষে নিয়ে যাবে।
টলমলে পায়ে এগোতে থাকে নুপুর। পরনে কালকের সেই জামাখানাই। ব্যাগ বই কিছুই নেই কাছে।
স্বাধীনতা চত্বরে কাছাকাছি আসতে নিত্যদিনের মতো ভিড় দেখতে পায়। নুপুর বুঝতে পারে নওয়ান তালুকদারের রাজত্ব চলছে এখানে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আরো দুই পা এগোয় নুপুর।
তখনই দেখতে পায় নওয়ান একটা ছেলেকে বেদম পেটাচ্ছে। স্বাধীনতা চত্বরের মাঝখানে থাকা ছোট্ট পুকুরের ডানপাশে সুন্দর ফুল গাছ লাগানো। এবং রাস্তাটাকে অদ্ভুত সুন্দর ডিজাইন করা হয়েছে। সেখানে ছেলেটার রক্তাক্ত দেহখানা পড়ে আছে। বাঁচার তাগিদে ছটফট করছে। হাত জোড় করে নওয়ানের কাছে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে।
নুপুর কপালে তিনটে ভাজ ফেলে সেদিকে এগোতে থাকে। ছেলেরা
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি”
বলে সালাম দেয়। কেউ কেউ তো বলে
“এই সাইট ডে। ভাবিরে যাইতে দে।
নুপুর নয়নের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
বল্টু বলে ওঠে
“ভাবি আপনি এইহানে?
নুপুর জবাব দেয় না।
নওয়ানের বাহুতে হাত রেখে বলে
“নওয়ান ছেড়ে দিন ওনাকে। মরে যাবে তো।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৬+২৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৯