সোনাডিঙি_নৌকো (৯)
মৃধা_মৌনি
দরজাটা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতেই শর্মিলার নাসিকাপথ ভেদ করে একদম পাতলা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। শিশিরের পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল বাইরে।
শর্মিলা ঘুরে তাকাল সায়েমা বেগমের দিকে।
তিনি নিঃশব্দে এসে ঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়েছেন, চোখদুটো আধখোলা। মুখে কঠিন ভঙ্গি- কিন্তু চোখের কোণে টলটল করছে কেমন একধরনের কাঁচা, চাপা জ্বালা।
শর্মিলা চাপা স্বরে বলল,
—“মা, আপনি কি একটু বসবেন? আপনার শরীরটা তো কাঁপছে।”
সায়েমা বেগম তার দিকে তাকালেন, কিন্তু সেই দৃষ্টিতে কোনো কোমলতা নেই- বুকভরা একটা চেষ্টা, সবকিছু শক্ত করে চেপে রাখার।
—“আমি ভালো আছি। ভালোই আছি আমি।”
গলায় অদ্ভুত একটা কাঁপুনি হলো কথাটা বলার সময়।
শর্মিলা দ্বিধা নিয়ে বলল,
—“মা, আপনি একটু বেশিই কড়া কথা বললেন না?”
সায়েমা বেগম চোখের পাতা নামিয়ে ফেলেন।
এক মুহূর্ত, দুই মুহূর্ত।
তারপর ধীরে ধীরে বলেন,
—“যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। ছেলে যদি নিজের ঘরের মান রাখতে না পারে… নিজের সংসারের সম্মান রাখতে না পারে… তবে মা হয়ে কি করব আমি? আদর? সোহাগ? আমি যে সোহাগ করেছি এতদিন, তারই ফল তো আজ দেখছি।”
কথাটা বলা শেষ হতেই তাকে মনে হলো যেন নিজের বুকেই কেউ চাবুক মারল।
বুকে হাত চেপে ধরলেন তিনি খুব আস্তে।
অথচ মুখ সেই একই রকম- অটল, কঠিন।
শর্মিলা কাছে গিয়ে বলল,
—“বের হওয়ার সময় বারবার আপনার দরজার দিকে তাকাচ্ছিল। একটু নাহয় বের হয়ে…”
—“চুপ।”
কথাটা এত দৃঢ়ভাবে বেরোল যে শর্মিলা নিজেই চমকে গেল। সায়েমা ধীরে ধীরে দেয়ালের দিকে ফিরলেন। চোখ তুলে তাকালেন ছাদের একটা জায়গায়- যেন ওখানেই শিশিরের সব খেলার স্মৃতি, সব দুষ্টুমি গুঁজে রাখা আছে।
তার নিশ্বাস ভারী হয়ে গেল। গলা শুকিয়ে আসছে।
খুব নিচু স্বরে বললেন,
—“আমি দেখিনি। শুনছিস? ও আমার দরজায় দাঁড়ায়নি। আমার দিকে তাকায়নি। আমি কিছুই দেখিনি। কিছুই শুনিনি।”
শর্মিলা বুঝে গেল এই কঠিন মা আসলে নিজের ভেতরেই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে।
শর্মিলা আস্তে আস্তে বলল,
—“একটু নাহয় বেরোতেন.. আবার আসে কি না…”
সায়েমা বেগমের গলার ভেতরটা একদম শুকিয়ে গেল। তিনি খুব দ্রুত মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন- যেন কারও চোখে ধরা না পড়ে যায় তার চোখ ভরে ওঠা মমতাময়ী অশ্রুজল!
কান্না চেপে বললেন,
—“ওকে দেখলে আমার দুর্বলতা বাড়বে। আর আমি… আমি মায়ের দুর্বলতা দেখালে সংসার ভাঙবে, শর্মিলা।”
চোখে একফোঁটা পানি জমে উঠল, কিন্তু তিনি হাতের পেছন দিয়ে তা মুছে ফেললেন এত তাড়াতাড়ি- যেন কোনো প্রমাণ রাখতেই চাইছেন না।
—“ওর ভুলে আমাদের নাম ডুবে গেছে। আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছিল তখন… তুমি জানো বড় বউমা? ওকে ভেঙে দিতে চাই আমি। কিন্তু ওকে যদি বারবার দেখি… আমার মন দুলে যাবে, বড় বউমা। ভেঙে পড়ব আমি। মা হয়ে যদি আমি শক্ত না থাকতে পারি… সংসারটা দাঁড়াবে কিভাবে আবার?”
—“কি এক ঝড় শুরু হলো! আপনি রাতেও ঘুমাতে পারেন না। এই দুটো রাতই আপনি জেগে জেগে কাটিয়েছেনে। এমন করলে আপনি কি সুস্থ থাকবেন মা?”
—“কি করব বলো? রাতে ঘুম আসে না। মনে হয়, দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয়, আমার ছেলেটা ডাকতেছে। আবার মনে হয়… ও সত্যিই এসেছে আমার দুয়ারে কিন্তু… আমি দরজা খুলিনি।”
এবার তিনি একটু কাঁপা হাতে কপাল চেপে ধরলেন।
ভাবুক গলায় বললেন,
—“জীবনে অনেক বড় কোনো পাপ করেছিলাম বলেই বিধাতা আমায় এতবড় শাস্তি দিচ্ছেন তাই না বড় বউমা? এটা আমার শাস্তি। মা হয়ে ছেলে ত্যাগ করা- এটা শাস্তি ছাড়া আর কি?”
শর্মিলা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার পাশে বসে পড়ল, একটুখানি সাহস করে হাত রাখল তার কাঁধে।
—“মা… হয়তো সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি একটু শান্ত হন।”
—“শান্তই আছি বড় বউমা। আমি শান্তই আছি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে। প্রচন্ড ভয়। ও না আবার এসে আর দুয়ারে দাঁড়ায়। আমি চাই, ও আর কখনো না আসুক। এই শিশিরকে আমি কোনোদিন দেখতে চাই না আমার চোখের সামনে। কক্ষনো না।”
কথা বলতে বলতে তার ঠোঁট কেঁপে উঠল।
একবার শুধু খুব নিচু স্বরে নিজেকেই যেন বললেন,
—“মা হয়ে আমি ওরে ক্ষমা করেও ফেলতে পারি… তাই দূরে থাকলেই ভালো…”
তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, মুখের কঠোরতা আবার আগের মতো ফুটে উঠল। একটি দৃঢ়, অচল, শূন্য মুখ।
সব মমতার নিচে লুকানো গভীর কষ্টটুকু যেন চেপে রেখেছেন সরু একটি সোনার বাক্সে- যার চাবি তিনি কাউকে দেবেন না। গটগট করে হেঁটে গেলেন নিজের ঘরে। দরজা আঁটকে দিলেন আবারও। শর্মিলা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারল না। আহ শিশির.. তোমায় ত্যাগ দিয়ে তোমার জন্মদাত্রী মা কতটা কষ্টে আছে যদি তুমি জানতে! তোমার করা একটা ভুলে কতগুলো মানুষের জীবন এলোমেলো… এর মাশুল কি করে দেবে শিশির?
শিশিরের দিনগুলো এখন ফ্যাকাশে, রংহীন।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বুঝতে পারে, আজও সে একই দুঃস্বপ্নের ভেতর আছে। সেই চুপ করে থাকা ঘর, সেই চার দেওয়ালের ভেতর বন্দি এক পুরুষের নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস। মায়ের বাসা থেকে সবকিছু নিয়ে আসার চার দিন পেরিয়ে গেছে… অথচ তার বুকের ভেতরের ভারটুকু যেন আরও গভীর হয়েছে।
ঘরের বাতাসে একটা দমবন্ধ করা স্থিরতা।
মেঝেতে ছড়ানো কয়েকটা কাগজ- সার্টিফিকেট, পুরনো ছবি, কিছু জামাকাপড়। সেগুলো গুছানোর শক্তিটুকুও তার নেই। চায়ের কাপটা টেবিলের এক কোণে পড়ে আছে, অর্ধেক চা ঠাণ্ডা হয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
শিশির চুপচাপ জানালার ধারে বসে থাকে বেশির ভাগ সময়। জানালার বাইরে সন্ধ্যার আলো ঢুকে পড়ে, ধুলো ভাসে বাতাসে। দূরের গাছের পাতারা ঝিরঝির করে দুলছে- কিন্তু শিশিরের মন যেন সেই দুলুনি অনুভবও করতে পারে না।
মায়ের সেই ঠান্ডা, শীতল, পাথর চাপা দৃষ্টিটা বারবার তার চোখে ভাসে। কতবার ভাসে? দিনে দশবার? না, তার চেয়েও বেশি। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সেই দৃষ্টি, দরজা না খোলা সেই মুহূর্ত- প্রতিটাই হৃদয়ের ভেতর খোঁচা দেয়।
দগদগে ঘায়ের ওপর বারবার লবণ ছিটানো হয় যেন।
এই সবের মাঝেও তৃণার যেন আলাদা একটা দুনিয়া।
ওর সঙ্গে আজকাল শিশিরের খুব একটা কথা হয় না।
শিশির নিজেই কথা বলতে পারে না- কণ্ঠে শব্দ উঠে আসে না, মুখ খুললেই কান্না নামতে চায়।
তৃণা জোরাজুরি করে বলেছিল, ও বাসা থেকে ওর ফোনটা এনে দিতে। শিশির তখনও ভেবেছিল, হয়তো তৃণা তার পাশে দাঁড়াবে, কিছুটা মমতা দেখাবে, একটা দুইটা কথা বলবে। কিন্তু ফোন পাওয়ার পর তৃণা যেন আবার নিজের দুনিয়ায় হারিয়ে গেল।
দুপুরবেলা তৃণা বিছানায় পা গুটিয়ে বসে স্ক্রল করে ফেসবুক। হাসির ইমোজি, ভিডিও, বন্ধুদের ছবি।
কখনো গিগগিগ করে হাসে, কখনো কারো সঙ্গে মেসেঞ্জারে লেগে থাকে। ফোন পেয়েই যখন মাকে ফোন দিয়ে গালাগাল খেয়েছিল- শুধুমাত্র ওই একদিনই মন খারাপ করে বসে ছিল। পরদিন আবার সব আগের মতো।
ঘরে তৃণার হাসির শব্দ ভেসে বেড়ায়।
আর তার ঠিক বিপরীত কোণায় শিশিরের নীরবতা ঘনীভূত হয় আরও বেশি।
শিশির বিছানার কিনারায় বসে থাকে, কনুই হাঁটুতে রাখা, দুই হাতের আঙুলগুলো সজোরে চেপে ধরে।
মন শুধু একটা কথাই বলে, “এবার কী করবে? কিভাবে দাঁড়াবে?”
খালি ঘরের ভেতর তার প্রশ্নগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায় না।
মনে হয় যেন জীবন তাকে মুখ থোবড়ানো অবস্থায় ফেলে রেখে হেসে পালিয়ে গেছে। সব গুছিয়ে ফেলতে হবে- জীবন, সম্পর্ক, নিজের ভাঙা আত্মসম্মান…
কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে?
এমন কোনো মানচিত্র নেই যা তাকে পথ দেখাবে।
তৃণা হয়তো চোখের কোণা দিয়ে তার দিকে তাকায় মাঝেমধ্যে, একটা হালকা বিরক্তির সঙ্গে। যেন ভাবে, এত চুপচাপ কেন সে। কিন্তু শিশির কিছুই বলে না।
তার ভেতরে যে এত বড় ঝড় উঠেছে, সেটা তৃণার রঙিন স্ক্রল করা পর্দায় দেখা যায় না।
দুজনই একই ঘরে কিন্তু সম্পূর্ণ দুই পৃথিবীতে।
একজনের মন জলে ডুবছে, আরেকজনের মন বাতাসে উড়ে যাচ্ছে।
এভাবেই কাটছে দিন।
শিশির শুধু ভাবছে—
“আজ আমি শেষ। কিন্তু আবারও কি ফিরতে পারব? কোনোদিন?”
তার বুকের ভেতর জ্বলে ভবিষ্যতের ভয়, অতীতের অপমান আর বর্তমানের শূন্যতা।
তৃণা ভাত রান্না করতে শিখে গেছে। যদিও একটু নরম হয় এখনো কিন্তু আগের মতো একদম গলে যায় না। সেই সঙ্গে ডালটাও রাঁধতে পারে। রসুনের পরিমাণটা ঠিকঠাক দিতে না পারলেও ঘোটাটা ভালো হয়। পাশের রুমে এক বড় আপা থাকেন, দীক্ষার বয়সী, সে তৃণাকে এসব শিখিয়েছে। আবার ডিম দিয়ে ডালের একটা রেসিপিও দেখিয়েছে। আজ সেটাই রান্না করেছিল সে। ওই আপা আবার একটু গরুর গোশত রেঁধেছিল, সেখান থেকে এক বাটি তৃণাদেরও দিয়েছে। অনেকদিন পর আজ পেট ভরে খেয়েদেয়ে ভাতঘুমের জন্য শুয়েছে সে। শিশির অবশ্য খায়নি। জিজ্ঞেস করায় গম্ভীরমুখে বলেছে, রেখে দাও, ক্ষিদে লাগলে খাবো। তৃণা আর ঘাটায়নি। ওকে ঘাটাতেও আর ভালো লাগে না। কলেজ যাওয়া হয় না কতদিন। তৃণার ভালো লাগে না। এই ছোট্ট খুপরি ঘরটায় ওর দমবন্ধ হয়ে আসে। মা কে ফোন দিয়েছিল, কোনো ভাবে বুঝিয়ে যদি গ্রামে ফেরা যায়! মা শুনলেনই না বরং যা তা ভাষায় গালিগালাজ করে মুখের উপর ফোন রেখে দিলেন। তৃণাও জেদ করে আর দেয়নি। শুনেছে দীক্ষা গ্রামের বাড়িতে আছে, মায়ের কাছে। সেই মেয়ে আর ও কেউ না! থাকুক বড় মেয়ে কে নিয়েই.. তৃণাও যাবে না।
এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই চোখটা প্রায় লেগে এসেছিল ওর, বালিশের নিচে বিপবিপ শব্দ হতেই আচ্ছন্ন ভাবটা কে টে গেল। তৃণা ফোন বের করে দেখল, রাসেল ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ওর খুব ভালো ফ্রেন্ড।
লিখেছে,
—“দুপুরে খেয়েছিস?”
তৃণা রিপ্লাইয়ে লিখল,
—“হুঁ, তুই?”
সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো,
—“না, খাইনি।”
—“কেন?”
—“এমনিতেই ভালো লাগছে না রে।”
রাসেল অনেকগুলো স্যাড রিয়েক্ট পাঠাল।
তৃণা উদ্বিগ্ন বোধ করল। তাড়াহুড়ো করে লিখল,
—“কি হয়েছে? বল আমাকে, আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার কাছ থেকে লুকাইস না।”
রাসেল আবারও একগাদা স্যাড ইমোজি পাঠাল। তার ভেতর কয়টা কান্নার রিয়েক্ট। তৃণার অস্থিরতা আরও বাড়ল। সে পর পর কয়েকবার রিকোয়েস্ট করতেই রাসেল ভীষণ করুণ ভাবে লিখল,
—“সমাপ্তি আমার সঙ্গে চিট করছে দোস্ত। অভির কথা মনে আছে তোর? প্রথম কয়েকদিন অনন্ত স্যারের ক্লাসে আসছিল যে? হ্যাঁ ওই নটরডেমের ছেলেটা। ওর সঙ্গে সমাপ্তির.. ওরা আজকে একটা রেস্টুরেন্টে একসাথে দেখা করছে। দু’জনে কিস ও করছে। আমাকে আবার সেই ছবি দিছে আরেকজন। এখন বল, এসব চোখের সামনে দেখে আমার কেমন লাগতেছে? আমি কি ঠিক আছি? আমি কি খেতে পারি?”
তৃণার বুক ভেঙে এলো।
রাসেল খুব ভালো ছেলে। পাক্কা তিনটা মাস যাবত ওকে দেখছে। এই তিন মাসেই অনেক গাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেছে দু’জনের। ক্লাসে সবচেয়ে হাসিখুশি ছেলে রাসেল। সবাইকে মাতিয়ে রাখে। ওর এই স্বভাবেই তো ভালোবেসেছিল সমাপ্তি। আর এখন কিনা…
মানুষ কীভাবে জেনে-বুঝে আরেকজনের হৃদয় ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে? একটুও কি মায়া হয় না? লজ্জাও করে না? আহারে… কয়টাদিন কলেজ যায়নি, তাতেই কত কিছু হয়ে গেছে… তৃণার ভীষণ খারাপ লাগছে। রাসেলের জন্য, কলেজ যেতে না পারার জন্যও।
সে রাসেলের ম্যাসেজে একটা স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে বলল,
—“বাদ দে। রিলেশনই তো, ভুলে যাবি।”
—“কীভাবে ভুলব তৃণা? তুই তো জানিস আমি সমাপ্তিকে কতটা ভালোবাসছি! তুই দেখিস নাই আমাদের বন্ডিং? একদিনও টিফিন টাইমে ওকে ছাড়া আমি খেতে বসি নাই। ও যা চাইছে, আমি ট্রাই করছি সবকিছু দেওয়ার। নিজের সিগারেট খাওয়া কমিয়ে ওর ফুচকা চটপটির বিল দিছি। আর ও আজকে…”
—“আই নো দোস্ত। বাট..তোকে স্বান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা নাই। তবে না খেয়ে থাকলে কি চলবে বল? জীবন এতও সহজ না। সমাপ্তির চেয়েও ভালো কেউ আছে তোর লাইফে। আমার কথাটা মিলিয়ে নিস।”
—“মেবি। তোর খবর কি? ক্লাসে কবে আসবি?”
তৃণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফোনের ওপাশের রাসেল সেটা দেখতে পারল না। সবাইকে মিথ্যে করে বলেছে, তার বোন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে তার সেবাযত্নে আছে, তাই ক্লাস মিস করছে। সত্যিটা জানানোর মুরোদ তো নেই। কীভাবে বলবে, সবসময় গুছিয়ে চলা তৃণার লাইফ এই মুহূর্তে সবচেয়ে অগোছালো স্টেজে আছে?
—“কিরে সিন করে রিপ্লাই দিচ্ছিস না কেন?”
তৃণা চটপট লিখল,
—“আসব, আপার শরীরটা একটু সাড়ুক, তারপর। এই অবস্থায় ক্লাসেও মন বসবে না।”
—“হুম। তোকে খুব মিস করিরে দোস্ত। তোর কাছে একটা আবদার আছে, রাখবি?”
—“বল।”
—“পসিবল হলে দেখা করতে পারবি? ঘন্টাখানেকের জন্য? আমার এত্ত ডাউন লাগতেছে, কাকে বলব বল? তুই আমার সবচেয়ে গুড ফ্রেন্ড। প্লিজ দোস্ত?”
তৃণা কি যে লিখবে… হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইল ফোনের স্ক্রিনের উপরে। ওদিক দিয়ে রাসেলের একের পর এক ম্যাসেজ ভেসে উঠছে। সমানে রিকোয়েস্ট করে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে হ্যাঁ বলল তৃণা। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। রাসেল তাতেই খুশি হলো। ফোন বালিশের নিচে রেখে আবারও শুয়ে পড়ল সে। তবে এবার আর ঘুম হলো না। নতুন ভাবনায় মগজ এলোমেলো- কীভাবে যাবে রাসেলের সঙ্গে মিট করতে?
সেই মুহূর্তে তৃণার বাহুতে একটা হাত রাখল শিশির।
তৃণা চমকে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
—“কি?”
শিশির ক্লান্ত গলায় বলল,
—“ভাত বাড়ো। ক্ষুধা লাগছে।”
তৃণা ধড়মড় করে উঠে বসে কাঠ গলায় বলল,
—“নিজেরটা বেড়ে খান। সকাল থেকে কত কাজ করি। কাপড় ধুইতে ধুইতে আমার হাত শেষ। আর আপনি সামান্য ভাতটা বেড়েও খেতে পারবেন না?”
—“তুমি সবসময় এত মেজাজ দেখাও কেন তৃণা? আগে তো এমন ছিলা না। তখন তো নরম,শান্ত,ভদ্র মেয়ের মতো থাকতে।”
—“এখনো আমি নরম,শান্ত,ভদ্র মেয়েই। কিন্তু যে সিচুয়েশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তাতে আপনি আর কি আশা করেন আমার কাছ থেকে? আপনাকে কোলে করে নাচব? পড়াশোনা চাঙ্গে উঠছে। আপনার জবটাও নেই। কোথায় ট্রাই করবেন তা না, সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন। বিয়েটাও করছেন না। এভাবে কি দিন যায় নাকি? আমার কোনো ফিউচার নেই? কে বলছিল বাল পাকনামি করে এখনই সবকিছু ফাঁস করে দিতে? যদি ম্যানেজ নাই করতে পারেন তাহলে গোপন রাখতেন। আপনার মোহে পড়ে আমার লাইফটাও শেষ। কি যে আছে কপালে, কে জানে।”
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে থামল তৃণা। বুক ভরে দম টেনে নিলো। শিশির ওর কাছে এগিয়ে এলো। গলার স্বর সামলে বলল,
—“আমিও তো তোমার মতোই সিচুয়েশনে আছি তাই না? আমার সাথে যা হচ্ছে তা কি এক্সপেক্টেড ছিল বলো? তবু আমি তো তোমাকে ফেলে দেইনি, ছেড়েও যাইনি। সময় চেয়েছি সবটা গুছিয়ে নেওয়ার জন্য।”
—“তো গোছান। গোছানো হলে কাছে আসবেন।”
তৃণা সরে শুয়ে পড়ল। শিশির ওর গায়ের উপর দিয়ে হেলে পড়ে বলল,
—“তোমার কি আমার কাছে একটুও আসতে ইচ্ছে করে না? আগে তো তোমার চোখে আমার জন্য আকুলতা দেখতাম। এখন সেসব কই?”
তৃণা চোখ বন্ধ করে কঠিন গলায় জবাবে বলল,
—“জাহান্নামে। যেদিন বিয়ে করবেন সেদিন কাছে আসবেন।”
—“বিয়ের আগে একসাথে এক বিছানায় থাকতে পারছ আর কাছে আসতে পারছ না?”
—“না পারছি না। মেয়েদের এই একটাই অস্ত্র। এটা জেনে গেলে আপনি ও আমাকে ছুঁড়ে ফেলবেন না তার কি গ্যারান্টি? আমি বোকা কিন্তু এতও বোকা নই। আগে বিয়ে তারপর থাকা থাকি…”
—“আমি যদি জোর করি তৃণা। ভুলে যেয়ো না আমি কিন্তু ম্যারিড পারসন। এসব সামলে আমার থাকতে কষ্ট হয়।”
তৃণা আবারও উঠে বসল,
—“হলে হোক।”
ধমকের সুরে বলল,
—“জোর করলে হাত-পা ভেঙে দিবো একদম। আমাকে এতই নরম ভাবছেন নাকি…”
ওর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো শিশির।
ক্ষণকাল- তারপর হো হো করে হেসে উঠল শব্দ করে। তৃণার ভ্রু কুঁচকে গেল।
—“এখানে হাসার কি হলো? মাথা টাথা কি গেছে নাকি?”
—“হুম গেছে। গেছেই তো। না গেলে তোমার মোহটাকে কেন রিয়েল ভাবলাম বলো তো? তুমি তো আমাকে ভালোইবাসোনি। আমার প্রতি কোনো টানই অনুভব করোনি। যা করেছো তা কেবলমাত্র একটা সাময়িক আবেগ থেকে… তাই না? আজ কয়টা দিন কি ভয়ানক বিষন্নতায় ডুবে রয়েছি আমি, একটা বার তো এসে কপালে হাত রেখে জানতে চাইলে না.. মন ভালো করে দিলে না.. একটু কাছেও আসলে না!”
তৃণা অপ্রস্তুত হয়ে উঠল, চোখ সরিয়ে নিতেই শিশির ওর থুতনিটা উঁচু করে তুলল,
—“কি হলো? এখন মুখে কথা নেই কেন? আমি না তোমার হাজবেন্ড হবো? তোমার ভালোবাসার মানুষ হবো। আমার জন্য তুমিও তো যুদ্ধ করছ, তাহলে কেন আমার প্রতি তোমার করুণাও নেই? সহানুভূতি তো দূরের কথা। বলো তৃণা, উত্তর দাও।”
দিশেহারা বোধ করছে সে। কী উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। শিশিরের প্রতি তার একটা তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল এ কথা সত্যি, কিন্তু এই জীবনটা ভালো লাগছে না। এই স্ট্রাগল পিরিয়ডটা সহ্য হচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে, একটা বড় ভুল করে ফেলেছে সে। কিন্তু এই কথাগুলো একান্তই তৃণা তার ব্যক্তিগত খামে আঁটকে রেখেছিল। শিশিরকে বুঝতে দিতে চায়নি। যদি শিশির রাগের মাথায় তাকে মাঝ রাস্তাতেই ফেলে চলে যায়? এখন তো মায়ের কাছেও ফিরে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু শিশির ঠিক বুঝে নিয়েছে… যা বলতে চায়নি তৃণা!
এখন কি করবে তৃণা? যদি শিশির ওকে চলে যেতে বলে? কোথায় যাবে? দীক্ষাকে চাইলেই আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে শিশির। আর ওকে ফিরিয়ে আনলে বাড়িতেও উঠতে দিবে উনার মা। মাঝখান থেকে তৃণার পিছে বাঁশ, হাতে হারিকেন টাইপ অবস্থা হবে।
তৃণার সত্যিই দিশেহারা লাগছে। নিজের অস্বস্তি অশান্তিতে এতোটাই ডুবে ছিল যে শিশিরের দিক টা একদম দেখা হয়নি। বলা ভালো- দেখা হয়েছিল কিন্তু পাত্তা দিতে ইচ্ছে করেনি।
শিশির তৃণাকে ছেড়ে দিলো। ঠোঁটের কোণে একটা নাই নাই হাসি তার, যেন ওর গোপন জিনিস জানতে পেরে বড্ড আনন্দ পেয়েছে সে।
তৃণা বুদ্ধি খাটাল। কিছু কিছু পুরুষ মানুষ নারীর আহ্লাদ অগ্রাহ্য করতে পারে না। শিশির সেই ক্যাটাগরিতে পড়ে। তাই তৃণা ওর গলা ধরে ঝুলে পড়ল হঠাৎ করেই। শিশির চমকালো। ওর পুরুষালি বুকে মুখ ঘষে বলল,
—“আপনি আমাকে এত ভুল বোঝেন! আপনার জন্যেই তো আমার এই হাল তাই না? আমি কি এভাবে থাকছি কোনোদিন? আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে পাপা’স প্রিন্সেস বলে ডাকত সবসময়। কখনো এত খারাপ পজিশনে আসিইনি। পড়াশোনাটাও অফ। আর আমার কি এইটা সংসার করার বয়স হুম? সবমিলিয়ে আমি নিজে কতটা ডিপ্রেশনে পড়ে আছি, আপনি কি সেটা বোঝার চেষ্টা করছেন? করেননি তো।”
তৃণা কেঁদে ফেলল শিশিরের বুকে মুখ লুকিয়ে।
ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে লাগল,
—“সবাই আসলে নিজেরটাই দেখে। অন্যেরটা দেখে না। আমার কেমন লাগে এই ছোট্ট খুপরি ঘরে, আমি জানি। কোথাও একটু বের হতে পারি না, কথা বলার একটা মানুষ পাশে পাই না, আপনি সারাদিন মুখ গোমড়া করে বসে থাকেন, অনলাইনে আমার ফ্রেন্ডদের ঘোরাঘুরি, লাইফ স্টাইল দেখে দেখে আমার নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বারবার মাথায় আসে। আর মানসিক ভাবে ট্রমাটিক লাগে। এগুলো আমি কাউকে বলতে পারছি না, বোঝাতেও পারছি না। আপনি ও বুঝলেন না… ভালোই।”
শিশির থতমত খেলো। হতবিহ্বল ভাবে তৃণার কান্না দেখতে লাগল। আহারে মেয়েটা.. সত্যি তো!
শিশির ভাবতে লাগল। তৃণার বয়স কত? আঠারো ক্রস করে উনিশে পড়েছে কয়দিন আগে। জন্মদিনের কেক কাটল সবাই মিলে। এই মেয়েটার এখন হেসে খেলে উড়ে বেড়াবার বয়সে কত বড় ধাক্কাটাই না খেতে হয়েছে। কি জন্যে? তাকে ভালোবেসে… তার সঙ্গে থাকতে চেয়ে…
মেজাজ তো এমনি এমনি খিটখিটে থাকে না সারাদিন। কারণ আছে! সেই কারণটা কেন দেখল না শিশির? উল্টো তাকেই দোষারোপ করল!
শিশির দু’হাতে জড়িয়ে ধরল তৃণাকে। ওর মুখটা তুলতে চাইলে তৃণা মুখ তুলল না। বারবার গুটিয়ে রইল ছোট্ট বেড়ালের মতোন। শিশির হাতের বাঁধন আরও শক্ত করে বলল,
—“আই এম সরি জান। প্লিজ সরি। এভাবে কেঁদো না। আমার কিন্তু সহ্য হচ্ছে না। আমার মাথাটাও তো ঠিক নেই। কি থেকে কি বলে ফেলেছি.. সরি জানপাখি, প্লিজ।”
বোকা শিশির! তৃণাকে ছোট্ট বেড়ালের সঙ্গে তুলনা করে নিজে ক্ষমা চাইতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলল। অথচ ভুলেই গেল, সুযোগ পেলে এই বেড়ালই কাঁটা সহ আস্তো মাছ খেয়ে ফেলতে পারে!
চারদিন পরের বিকেল।
শান্ত আজ সত্যি সত্যি অনেকটাই ভালো হয়ে উঠেছে। শরীরের জ্বরটা কাটতেই মনে হল ওই বাড়িটায় না গেলে চলবে না। মনে হচ্ছে কেউ তাকে টেনে নিয়ে চলেছে ওদিকে।
দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দীক্ষা হাসিমুখে ডাক দিলো উঠোন থেকে,
—“আরে আপনি! আছেন কেমন? শরীর ঠিক আছে?”
শান্ত জড়সড় হয়ে জবাব দিল,
—“জি জি, এখন পুরোপুরি ফিট। একেবারে চমলক্ক।”
—“যাক তাহলে তো ভালোই। কাজল বলেছিল, আপনার নাকি খুব জ্বর, বিছানা ছাড়তে পারছেন না।”
—“জি জি, আবহাওয়া চেঞ্জ হচ্ছে তো।”
—“নাকি সেদিন সেই পুকুরের আছাড় খাওয়াটাই আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল?”
দীক্ষা মিটিমিটি হাসতে লাগল। শান্ত আরও গুটিয়ে গেল। সেই সঙ্গে চোখে পানি চলে এলো সামান্য। তার এই এক সমস্যা। একটু কষ্ট পেলেই চোখে পানি চলে আসে। সে তড়িঘড়ি মাথা নিচু করে নিলো। দীক্ষা দেখলে আরও কেলেংকারী!
দীক্ষা আরো দু-চারটা খোঁজখবর নিলো, তারপর ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাল। শান্তের মনটা একটু হালকা হলো।
কিন্তু একটা জিনিস সে বেশ স্পষ্ট ভাবে বুঝল- বকুল আজ তাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলছে। না চোখ তুলে দেখছে, না কথা বলছে। যেন রাগে মুখে আলকাতরা মেখেছে।
শান্ত বারকয়েক কাশির ভান করল,
আশায় ছিল বকুল হয়তো বলবে- “কি হয়েছে? আবার গলা খারাপ? আদা চা দেবো শান্ত ভাই?”
কিন্তু না।
বকুলের ঠান্ডা মুখ দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর মানুষ যদি কেউ থাকে, সেটা শান্তই। মাথা নিচু করে কুলোয় চাল খুটছে বিরামহীনভাবে।
কিছুক্ষণ পর দীক্ষা রান্নাঘরের দিকে যেতেই সুযোগ বুঝে শান্ত উঠোনের কোণে বসা বকুলের কাছে গিয়ে বলল,
—“এই শোন, তোর কি হইছে রে? আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছিস না।”
বকুল চোখ ছোট করে তাকাল।
—“আপনি কি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ নাকি যে তাকাতেই হবে?”
শান্ত বিরক্ত হলো।
—“আচ্ছা, ধরলাম আমি সবচেয়ে সুন্দর মানুষ না… কিন্তু মানুষ তো! চারদিন জ্বরে পরে ছিলাম- একটাবার জিজ্ঞেস করতেও মন চাইল না?”
বকুল হাত গুটিয়ে দাঁড়াল,
—“শরীরে জ্বর ছিল নাকি গামছার ব্যবসার লাভক্ষতির হিসাব করতে গিয়া মাথা গরম হইছিল?”
শান্ত চোখ বড় বড় করে তাকাল,
—“ওমা! চারদিন ধরে জ্বরে আমি হয়রান হইছি আর তুই…”
—“হয়রান হইছেন নাকি? গামছার ম্যানেজার হওয়া এত চাপের বুঝছি!”
শান্ত এবার হাল ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,
—“দেখ, গামছা একটা সম্মানজনক ব্যবসা। সবকিছুর সাথে তোয়াক্কা করতে নাই।”
বকুল শুষ্ক মুখে বলল,
—“আমি তোয়াক্কা করার কে? বড় মানুষদের বড় বড় বিজনেস… যান গিয়ে আপার কাছে গিয়ে বলেন, হেই আপা, গামছা সাপ্লাইয়ের ফাইলটা আনেন, রেডি করি!”
শান্ত হেসে ফেলল,
—“তুই আমারে খেপানোর জন্য জন্মাইছিস নাকি?”
বকুল ঠোঁট উল্টালো,
—“না, আপনি আমার বেয়াই নাকি!”
শান্ত গম্ভীর ভাব করার চেষ্টা করে বলল,
—“দেখ, আমার রাগ কিন্তু খুবই খারাপ…”
বকুল দমকা হাসল,
—“আপনার রাগ? ওটাতে আমি গামছা ছুঁড়ে মা রি।”
শান্ত হাত তুলে বলল,
—“সত্যি কইতেছি, আর একবার যদি আমারে আরেকটু খ্যাপাস, এখনই এখানে গামছা মা রা র প্রতিযোগিতা শুরু করে দিবো!”
—“ওমা! গামছা মা রা র প্রতিযোগিতা?
আমাদের বাড়িতে গামছা আছে তিনটা- একটা পুরান, একটা ছেঁড়া, একটা দীক্ষা আপার।
কোনটা দিয়া মা র বে ন বলেন। নিয়ে আসি।”
—“তোরে তিনটা দিয়াই বাংলা ওয়াশ দিবো বেডি। কি একটা কথা বললাম, সেইটা নিয়া আমারে চূড়ান্ত অপমান! হুহ!”
বকুল এবার সত্যি সত্যি হেসে দিলো। রাগ ভেঙে মুখটা একটু নরম হলো।
শান্ত ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“এখানেই শেষ। আর একবার আমারে গামছার বিষয়ে কিছু বলবি না। আর শোন, আমি সিরিয়াস অসুস্থ ছিলাম। একবার কেমন আছি জিজ্ঞাসা করা ভদ্রতা! অবশ্য তুই আর ভদ্রতা- দুটা পাহাড়ের দু চূড়া অবশ্য।”
বকুল মুখ ভেংচালো। আবার নিচু হয়ে নিজের কাজে বসে গেল। শান্তও উবু হয়ে দেখতে লাগল।
দীক্ষা এগিয়ে এলো সেই সময়ে।
—“দু’জন ঝগড়া করছিলে নাকি? রান্নাঘর থেকে দেখলাম, আপনি পারেন না বকুলকে ধরে চ ড় ট ড় দিয়ে বসেন।”
বকুল কিছু বলার আগেই শান্ত দ্রুত বলল,
—“না না, আমরা তো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছিলাম।”
বকুল গম্ভীরভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল,
—“হুম আপা, ব্যবসা-বাণিজ্যের আলোচনা!”
শান্ত পেছন দিকে কিড়মিড় করে তাকাল। মনে মনে শুধালো, নাতির মাইয়া… বকুল মুখ চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করে।
(চলবে)
Share On:
TAGS: মৃধা মৌনি, সোনাডিঙি নৌকো
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৬
-
সোনাডিঙি নৌকো গল্পের লিংক
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ২
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ১
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৪
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৩
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ১২
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৭
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৮
-
সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৫