Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি সিজন ২/এক শ্রাবণ মেঘের দিনে

এক শ্রাবণ মেঘের দিনে পর্ব ৩


সুখময়যন্ত্রনাতুমিসিজন

শ্রাবণেশ্রাবণেআমিতোমাকেচাই

পর্ব ৩

neela_rahman

পাঁকা নুরের কথা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিল সাদাফ।এই বয়সে নাকি ওর জন্য প্রপোজাল আসে।ভাবা যায়?আবার এই মেয়ের নাকি ক্রাশ আছে তার নাকি আবার সিদ্ধার্থ নাকি নাম।এরকম ছেলে পছন্দ ।সাদাফ বিরক্ত হয়ে বারান্দা থেকে ভিতরে চলে আসলো ।ঘুমাতে হবে ।প্রচণ্ড ঘুম পেয়েছে শুনতে চায় না এই মেয়ের কথা।

রুমে এসে কমফোর্টার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো সাদাফ।মিনিট দুয়েক ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করল কিন্তু অবচেতন মনেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে সার্চ দিল গুগলে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা লিখে ।

কেন করল সাদাফ জানেনা জাস্ট জানার জন্য যে আসলে কোন ছেলেকে পছন্দ হয় নূরের একটু দেখতে চায়।

তাছাড়া এই মেয়ে জীবনে কি করবে না করবে কাকে চায় কাকে চায় না এতে কিছুই যায় আসে না সাদাফের। সিদ্ধার্থ লিখে সার্চ দিতেই কয়েকটি ছবি চলে আসলো ।সেরকম হ্যান্ডসাম ছেলে ছবিগুলো দেখেই বুঝা যায়।সাদাফের যেন চক্ষু চড়ক গাছ ছবি দেখে।সাদাফ ও সুন্দর অনেক হ্যান্ডসাম তবুও এই ছেলেকে পছন্দ করে নুর কিন্তু দেখে মনে হল এ আর এমন কি ?কি এমন সুন্দর ছেলে ?এরকম মেকআপ করে থাকলে দিনরাত জিমে কাটালে সাদাফ কে এর চাইতে আরও হ্যান্ডসাম লাগবে এটা কোন ব্যাপার নয়।

পরক্ষণে চিন্তা করল,” সাদাফ কেন নিজেকে এই ছেলের সাথে কম্পেয়ার করছে ?সাদাফ নুরের সাথে সংসার করছে না বা নূরকে পছন্দ করেনা ।সাদাফ তো এসেছে শুধু নূরকে ডিভোর্স দিতে ।তারিয়াকে বিয়ে করতে ।”

সাথে সাথে মোবাইলটি বন্ধ করে রেখে বালিশে মুখ গুঁজে দিয়ে শুয়ে পড়লো সাদাফ। এই মুহূর্তে ঘুমাতে পারছে না সাদাফ এর দায়ও নূরের কাঁধে গিয়ে পরল ।বিরক্ত হচ্ছে নুরের প্রতি ভীষণ বিরক্ত ।চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো সাদাফ।

দুপুর বারোটা

সাদাফ ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেস হয়ে একটি হাফ প্যান্ট ও টি শার্ট পরেই ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে নিচে নামবে ঠিক এমন সময় সিঁড়ির কাছাকাছি আসতেই ধাক্কা খেলো নূরের সাথে ।নূর সাথে সাথে ওমাগো বলে চিৎকার করে সিঁড়িতে বসে পড়ল।

সাদাফ নুর কে ধরল না বরং ধমকের সুরে বললো,” চোখ কোথায় থাকে তোর? ঠিকমতো দেখে চলতে পারিস না?”

নুর পায়ে ব্যথার জন্য পায়ে হাত দিয়েই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো ।রেলিঙে ধরে থেকে বললো,” সেম কথাটা আমিও আপনাকে বলতে পারি ।আপনার চোখ কোথায় ছিলো আপনি যখন হাটছিলেন?”

সাদাফ বললো,” আমি জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না।”

নুর বললো,” তাহলে আমিও বাধ্য নই আপনার কাছে কোন জবাবদিহিতা করার ।আর আমার চোখ কোথায় ছিল সেটাও বলবো না ।”

সাদা বললো,”বলবি না মানে?”

নুর বললো,” এত বড় দামড়া লোক এর মানে বুঝেন না ?আপনি যেমন আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন আমি ও আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। আর ভুলে যাবেন না ব্যথাটা আমি পেয়েছি আপনি না।”

সাদাফ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি আমার সাথে এরকম বেয়াদবি করে কথা বলার কারণ কি নূর ?”

নূর চুপচাপ হয়ে রইল ।তারপর উত্তর দিল ,”আমিও ভাবছি আমার সাথে এইরকম ধমকের সুরে অপমান করে সব সময় কথা বলার কারণ কি আপনার?” বলেই সাদাফ কে পাশ কাটিয়ে হনহনিয়ে নুর নিজের রুমের দিকে যেতে লাগল ।

সাদাফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।এই পুচকি মেয়ে সাদাফকে কথায় কথায় হেনস্তা করছে ।আর কি বলে গেল ?জবাবদিহি করতে বাধ্য নয় ?দামরা লোক?”যদি বলতে পারতাম তোকে এই দামড়া লোকের বউ হস তুই আর আমি চাইলেই জবাবদিহি করতে বাধ্য তুই তাহলে দেখতাম তোর কি প্রতিক্রিয়া হয় ?”

কথাগুলো মনে মনে বললেও চুপ করে শুধু তাকিয়ে রইল সাদাফ নুরের যাওয়ার দিকে।

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে তা নিয়েও বসল সাদাফের পাশে তানিয়া এই দুইদিন শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে বাংলাদেশ সময়ও আমেরিকার সময়ে অনেক পার্থক্য থাকায় ঘুমাতে একটু সমস্যা হতো তানিয়া তবে আজ থেকে মোটামুটি আয়তকে চলে এসেছে তাই দুপুরে টাইম মতো খেতে উঠেছে। তানিয়া ও চেয়ার টেনে বসল সাদাফের পাশে সাদা ফের পাশে একটি চেয়ার খালি তার পাশে রিমা রিমার পাশের সাইমন পাশাপাশি দুই ভাই হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান সামিহা বেগম আফরোজ রান্নাঘরে ।নুর এখনো আসেনি।তাই রিমা নুরের জন্য জায়গা রেখেছে।সাদাফ হুমায়ুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন বাবা রাফি কখন আসবে সেই ছোট্ট ছয় বছরের দেখে গিয়েছিলাম আজ তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।

হুমায়ূন রহমান বললেন প্রায় ১৫ দিন হলো নানি বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে আসার কোন নাম গন্ধ নেই আর তুই যেহেতু বলে আসিস নি তাই আগে থেকে ওকে আমি রাখিনি তবে আজকে গাড়ি পাঠিয়ে দিব নিয়ে আসবে।

রাফি হচ্ছে সাদাফের ছোট ভাই সাদাফ তারপর রিমা তারপর রাফি রাফিকে ৬ বছরের রেখে বিদেশ গিয়েছিল রাফিকে ভীষণ ভালোবাসে সাদাফ। ফাইভ পাস করে এখন সিক্সে উঠবে তাই এই মাস টা বেড়াতে গিয়েছিল নানির বাড়িতে ।কিন্তু শুনেছে সাদাব ভাই এসেছে তাই রাতের মধ্যে গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসতে বলেছে।

সামিহা বেগম ও নওরিন আফরোজ খাবার টেবিলে সার্ভ করতে লাগলেন।সবার জন্য প্লেট লাগালেন ।নূরের জন্য লাগালেন ।নূরের সিটটা ঠিক সাদাফের পাশের সিট তাই কিভাবে যেন এই সিট টাই খালি রেখে বসেছে রিমা।

এমন সময় উপর থেকে নাম ছিল নুর। চুলগুলো ভেজা ও ছাড়া ।সদ্য গোসল করেছে ।চুল গুলো কোমর ছাপিয়ে পড়েছে।গোসলের পর মেয়েদের সৌন্দর্য বোধহয় বেড়ে যায়।সাদা রঙের একটি সালওয়ার কামিজ পড়া।ভেজা চুলে ঢেকে আছে কপাল।

সাদাফ ধীরে ধীরে চোখ নামিয়ে ফেললো। এতক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল নূরকে। হঠাৎ তানিয়ার ডাকে ঘোর ভাঙ্গে সাদাফের তানিয়া সাদাফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,” ঐখান থেকে পানি গ্লাসটা একটু দাও তো ।”
সাদাফ পানি গ্লাসটা এগিয়ে দিল তানিয়ার দিকে ।তানিয়া দেখতে সুন্দরী মডার্ন অভিযাত ফ্যামিলির মেয়ে। আচার-আচরণ বেশভূষা সব সময় অভিজাত্যের ভাব ফুটিয়ে তোলা যেন তানিয়ার পছন্দ ।তানিয়া চুল এতটা বড় নয় ঘাড়ে থেকে একটু বড় হবে হয়তো। কখনো তানিয়াকে এভাবে খুঁটিয়ে দেখেনি আজ কেন যেন আড় চোখে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল সবকিছু তবে প্রথম দেখেছিল নূরকে। সাদাফ চুপচাপ বসে রইল কিছু নিয়ে ভাবতে চায় না ।সবকিছুই বড্ড বিরক্ত লাগছে আজকাল ।সাদাফের হঠাৎ খেয়াল করলো নূর ধীরে ধীরে টেবিলের সামনে এগিয়ে এসে প্লেটটি নিয়ে আবার হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে সোফার রুমের দিকে ।সাদা বিরক্ত হলো খুব বিরক্ত হলো। মুখ ফসকে বলে উঠলো নুর তুই ওখানে যাচ্ছিস কেন এখানে চেয়ার খালি ছিল ।ফজলুর রহমান সাথে সাথে তাকালো সাদাফের দিকে । বললো,” যাক না ও যখন যেতে চাইছে ।”
সাদাফ বললো,”না বাবা এখানে চেয়ার খালি আছে ও কেন যাবে আজকে তো ওকে কেউ কিছু বলেনি বা উঠে যেতে বলেনি?”

নুর ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকালো ।তাকিয়ে সাদাফের চোখে চোখ রেখে বললো,” আমি প্রতিদিন আমাকে অপমান করার সুযোগ কাউকে দেই না ।যে কেউ আমাকে শুধু একবার অপমান করতে পারে পরে সে স্থান আমি নিজেই ত্যাগ করি। অপমানিত জায়গায় বারবার ফিরে গিয়ে সেখান থেকে আবার অপমানিত হওয়ার সুযোগ আমি কখনোই কাউকে দেই না ।”
বলেই নূর প্লেট নিয়ে সোফার রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল।

হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান জানতো নূরের আত্মসম্মানবোধ-প্রখর শুধুমাত্র নূরের জন্যই ফজলুর রহমান এই বাড়িতে আসতে চাননি ।সেটিও জানে হুমায়ন রহমান। হুমায়ূন রহমান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”বাদ দে ও যেখানে খেতে ভালো লাগে ও সেখানে খাক কোন কিছু তে ওকে জোর করবি না।

সাদাফ অবাক হয়ে তাকালো বাবার দিকে ।জোর করছে মানে ?এই মেয়েকে ভদ্রতা শিখাচ্ছে ।সবাই যখন এক টেবিলে খাচ্ছে তখন ও কেন উঠে যাবে ?মনে মনে ভাবল সাদাফ।পরক্ষণে নূরের বলা কথাটি সাদাফের মনের ভিতর যেন গিয়ে লাগলো ।”বারবার কাউকে অপমান করার সুযোগ দেয় না অপমানিত জায়গায় শুধু একবার যায় দ্বিতীয়বার অপমানিত হতে চায় না ।”

সাদাফ কি নুরকে অপমান করেছে যখন নুরকে বউ হিসেবে মেনে নেয়নি ?যখন জানবে নূর তখন নূরের প্রতিক্রিয়া কি হবে ?জীবনের সবথেকে বড় অপমান হয়তো সাদা নুর কে করেছে। যেখানে তানিয়ার মত আউট সাইডার একটি লোকের কথায় খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গিয়েছে আর কখনোই টেবিলে বসে খাবে না সেখানে যখন জানবে স্বামী নামক সবচাইতে আপন লোকের কাছ থেকে এত নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যান হয়েছে ছোটবেলায় তখন ওর প্রতিক্রিয়া কি হবে।

সাদাফ রাগে ক্ষোভে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল কেন যেন নূরের এই কথাগুলো মেনে নিতে পারছে না সাদাফ।

চলবে_
গল্পের নাম এবং শুধুমাত্র চরিত্র গুলোর নাম গুলো পরিবর্তন করার পিছনে একটি কারণ আছে ।কারণটি আমি আপনাদের সবাইকে জানিয়ে দিব ।তবে এতোটুকু মনে রাখবেন যদি পরিবর্তন করতে না হতো তাহলে হয়তো আমি পরিবর্তন করতাম না।

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply