সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব ১৬০
এভাবে কেটে গেল দুদিন ।নূরে শরীরটা এখন সুস্থ তবে নূরকে বিছানা থেকে নামতে দিচ্ছে না ।অবাক হয়ে যাচ্ছে এরকম তুলু তুলু করছে কেন ?নুর কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।নিচে তো নামতে দিচ্ছে না বেড থেকেও নামতে দিচ্ছে না।এদিকে নিচে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে নুরকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে ।নুর মা হতে চলেছে এটা খুব সাধারণভাবে জানালে হবেনা। নুরকে একটু আলাদাভাবে জানাতে চায় সাদাফ।যেন নূর সারপ্রাইজড হয়ে যায় ।খুশিতে যেন এবার নুর কেঁদে ফেলে যেমন বাড়ি প্রত্যেকটা সদস্য কেঁদেছিল।
কাল থেকে তোর জোর চলছে অনুষ্ঠানের ।নুরকে কিছুই জানাতে দেওয়া হচ্ছে না ।নুরকে খাবার দাবার দিয়ে সুন্দর করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
নুর যেহেতু জানে নূরের শারীরিক প্রবলেম রয়েছে তাই ভাবছে হয়তো সেই জন্যই নূরকে আলাদাভাবে কোন ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে বা ডক্টর হয়তো বলে দিয়েছেন নুর কে বিছানা থেকে নামতে মানা ।তাই নুর আর নিচে নেমে যায়নি।
দুপুরে খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে ছিল নুর।উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।ঘুম থেকে উঠল নুর ।উঠে দেখল সাদাফ রুমে নেই এই সুযোগ একটু নিচের দিকে যাবে ।যেই বিছানা থেকে নামলো ওমনি সাদাফ কে দেখল হরলিক্স নিয়ে ভিতরে ঢুকেছে।
হরলিক্স খেতে ইচ্ছে করে না নুরের। চা কফি খেয়ে অভ্যস্ত কিন্তু দুই তিন দিন ধরে নূরকে শুধু এই বিচ্ছিরি স্বাদের হরলিক্স খাওয়াচ্ছে।
চায়ের বদলে যেন ভালো কিছু খেতে পারে যাতে পেটের বাচ্চাও ভালো থাকে নুরেরও শক্তি হয় সেজন্য বেশি করে বাদাম দিয়ে হরলিক্স দিয়ে ব্লেন্ড করে সুন্দর করে কুসুম কুসুম গরম ড্রিংকস বানিয়ে নিয়ে আসে সাদাফ।
নুর কে নামতে দেখে বললো,” থা*পড়ে দাঁতগুলো ফেলে দিব তুই আবার নিচে নামছিস কেন ?বলেছি না কিছু হলে আমাকে ফোন দিবি নিচে নামা যাবে না।”
নূর বললো,” আমি শুয়ে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে গেছি আর ভালো লাগছে না আমার ।এখন আমাকে নামতে হবে প্লিজ নামতে দিন।এমন কি অসুস্থ হয়েছি আমি ?ডাক্তার বলেছে বিছানা থেকে নামা যাবে না ?”
সাদাফ বললো,” বিছানা থেকে নামা যাবে না এমন নয় তবে আমি চাচ্ছি তুই একটু নিজের শরীরের যত্ন নে এই আর কি।”
নুর বললো,” হ্যাঁ খুব চাচ্ছেন আমার ভালো ।এ জন্যই তো হানিমুনে নিয়ে গেলেন না ।”
দুদিন ধরেই হানিমুনে না যাওয়ার জন্য খোটা শুনতে শুনতে কাহিল সাদাফ।তাকিয়ে বললো,” ঠিক আছে আগামী কালকে থেকে একটু একটু নামিস তোকে পারমিশন দিলাম আজকে না।”
নুর জানে তর্ক করে লাভ নেই এই লোকের সাথে তর্কে কখনোই জিততে পারবে না নূর। তাই হাতে হরলিক্স টি নিয়ে ধীরে ধীরে একটু একটু করে পান করতে শুরু করলো ।ঘুম থেকে উঠে নূরে ক্ষুধা পেয়েছে।
নুর কে সন্ধ্যায় নাস্তা সুন্দর করে খাইয়ে দিয়ে সাদাফ বললো,” তোকে আমি রেডি করে দিচ্ছি তোর জন্য একটু পরে একটা সারপ্রাইজ আছে।”
নুর অবাক হয়ে গেল ! সারপ্রাইজ ?নুর জানতে চাইলো কি সারপ্রাইজ ?
সাদাফ বললো,” আধাঘন্টা পরে বুঝতে পারবি ।তোকে আমি সুন্দর করে নিজ হাতে রেডি করে দিব ।”
বলেই আলমারি থেকে একটি শাড়ি বের করলো সাদাফ সাথে ম্যাচিং করা সব কিছু বের করেই নূরকে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,”পেটিকোট আর ব্লাউজ টি পড়ে নে শাড়ি আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”
নূর বললো,” ঠিক আছে আমি ওয়াশরুম থেকে পরে আসছি ।”
সাদাফ বললো ,”এত রং ঢং করতে হবে না ।সবকিছুই আমার দেখা ।এখানে বসে বসে পড় ।”
নুর অবাক হয়ে গেল কি বলছে এই লোক ?এখন বিছানায় বসে বসে এগুলো করবে?
নুর আমতা আমতা করছে ।সাদাফ জানে নূর এখনো লজ্জা পাচ্ছে তাই সাদাফ চোখ বন্ধ করে বললো,” আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম ।এবার পড়ে নে ওয়াশরুমে যেতে হবে না।”
নূর পেটিকোট এবং ব্লাউজটি পরে ফেললো। ব্লাউজের হুক লাগাতে লাগাতে হঠাৎই সাদাফ ঠাস করে চোখ খুলে ফেলল।
নুর বললো,” চিটিং করলেন কেন ?আপনার তো চোখ খোলার কথা ছিল না ।”
সাদাফ বললো,” তো কি হয়েছে যা আমার তা আমার দেখলে সমস্যা কি ?”
বলেই বললো ,”দাঁড়া আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ।”
বলেই ব্লাউজের উপরে দুটি হুক লাগাতে লাগলো ।সাদাফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।ইচ্ছে করছে এখনই বুকে নিয়ে পিষে ফেলতে কিন্তু না এখন এগুলো করা যাবে না ।নূর অসুস্থ নূরের দিকে আরো খেয়াল রাখতে হবে বেশি করে। কষ্ট হলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে ।মনে মনে ভাবছে সাদাফ। নুরকে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠিয়ে সুন্দর করে শাড়িটি পরিয়ে দিল সাদাফ। পেটে ছোট্ট একটি চুমু একে দিয়ে বুকের আঁচলটি ঠিক করে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো।
নুর লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু অবাক হচ্ছে আর ভাবছে ,”দুই তিন দিন ধরে এমন করছে কেন উনি?উনি কি আসলেই সত্যি সত্যি হানিমুন পিরিয়ড ঘরে বসেই পালন করছে ?এজন্যই বলেছিল আমেরিকা যা হবে তা এখানেই হবে?”
সাদাফ নুরের চুলগুলো হালকা ঠিক করে দিল আঁচড়িয়ে ।তারপরে ঠোঁটে হালকা একটু লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়ে বললো,” আর কিছু করতে হবে না আমার নূর পরী এমনি সুন্দর। পারফেক্ট।”
নূর আর কিছু বলল না ।সাদাফের চোখে সুন্দর মানে নুর আসলেই সুন্দর ।অন্য কোন কিছু দিয়ে আর সুন্দর হতে চায় না নুর।তারপর বললো,” আচ্ছা বলুন এবার কি সারপ্রাইজ ?”
সাদাফ নুরের চোখে হাত রাখল ।রেখে বললো,” আমাকে বিশ্বাস করিস ?তাহলে আমার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে হেঁটে আয়।”
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,” হাত দিতে হবে না আমি আপনাকে এমনি বিশ্বাস করি ।আপনি নিজে ব্যথা পাবেন কষ্ট পাবেন কিন্তু আমাকে একটি ফুলের টোকা লাগতে দিবেন না ।”
বলেই সাদাফের হাত ধরে নূর হাঁটতে লাগলো।
সাদাফ সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,” এবার আমার হাত ধরে ধরে একটু একটু করে হেঁটে আয় ।”
সাদাফ নুরের পায়ের প্রতিটি কদমে নজর রাখছে কোথায় থামতে হবে কোথায় ডানে যেতে হবে কোথায় বামে যেতে হবে সবকিছুই দিকনির্দেশনা দিয়ে একটু একটু করে নিচে নিয়ে আসলো সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে।
সবাই নিচে দাঁড়িয়ে আছে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কিন্তু সবাই চুপ ।মুখে কোন কথা নেই ।নূরকে সাদাফ বললো,” এবার চোখ খোল নূর ।”
নুর চোখ খুললো। দেখলো পুরোটা অন্ধকার ।নুর সাদাফের হাতটি আরো জোরে ধরলো বললো,” এখানে তো অন্ধকার কিছুই নেই।”
সাথে সাথে পুরো সোফার রুম আলোকিত হয়ে উঠল। পুরো ড্রয়িং রুম বিভিন্ন কালারের আলোক শয্যায় সজ্জিত ।বিভিন্ন জায়গায় বেলুন দিয়ে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে ।নূর দেখে অবাক হয়ে গেল ।আজ তো নূরের জন্মদিন নয় ।এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ নুরের চোখ গিয়ে ঠেকলো একটি ছবিতে।
ছবিটি যদিও কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন করে বানানো হয়েছে কিন্তু ছবিটি দেখে নুর যেন হী হয়ে গেল ।কি বলবে কি বুঝবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না নূর ।নুর সাদা একটি শাড়ী পরিহিত।শাড়ীটি চিনে নুর। কিন্তু নূরের করলে ছোট্ট একটি শিশু। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল ছবিটির দিকে ।ছবিটির দিকে এগিয়ে এগিয়ে ছবিটিতে হাত রাখল ।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না নুর ।মিনিট দু এক নুর এইভাবে তাকিয়ে রইল ।সবাই নূরের দিকে তাকিয়ে আছে ।সাদাফের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি ।সাদাফ জানে নূরের এ মুহূর্তে কি ভাবছে ।হঠাৎ করে নূরের যেন কিছু একটা মনে হল ।সাথে সাথে নূর ডান হাত দিয়ে ছবিটি ধরে রাখল বা হাত পেটে রাখল ।কিছু কি অনুভব করলো নুর?পেটে হাত রেখেই সাথে সাথে সাদাফের দিকে তাকালো নুর।
সাদাফ কাঁদছে কিন্তু ঠোঁটে হাসি ।নূরের যেন আর কিছুই বুঝতে বাকি নেই ।নূর এবার দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকলো। ঢেকে চিৎকার করে কান্না করে দিল।
সাদাফ দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরল ।সাথে সাথে সবাই চলে আসলো নূরের কাছে ।ফজলুর রহমান নূরের মাথায় হাত রেখে বললো,” তুই মা হচ্ছিস ।আমার মা। আমাদের মা তো তুই আগে ছিলি এখন ছোট্ট একটি বাবুর মা হবি ।আমার ছোট্ট মা হবে ভাইজান ।দেখেছেন আপনি ?আপনি বলেছিলেন না নুরের কিছু হবে না ?দেখেন আমার ছোট্ট মা সত্যিই মা হবে।”
সায়মন এগিয়ে এসে নূরকে নিয়ে নূরের কপালে চু*মু খেয়ে বললো,” আমার ছোট্ট বোনটা কবে এত বড় হয়ে গেল ?কিছুদিন পর ছোট্ট একটা নূর বাড়িতে টুকটুক করে হেটে বেড়াবে ।আমাকে মামা মামা বলে ডাকবে।”
সাথে সাথে রিমা বলে উঠলো ,”তোমাকে মামা মামা বলে ডাকবে না তোমার কান ধরে টানবে বলবে দুষ্টু মামা পচা মামা বলে ডাকবে।”
সায়মন রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,”আর তোর তো চুল ধরে টানবে বলবে আমার শা*কচুন্নি ফুফু।”
রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে বললো,” কি আমি শা*কচুন্নি ?আর তুমি কি তাহলে?”
নওরিন আফরোজ বললেন ,”থামবি তোরা ?সব সময় ঝগড়া শুরু হয়ে যায় তোদের ।”বলেই এগিয়ে এলেন নূরের কাছে ।সামিহা বেগম ও এগিয়ে এলেন ।নওরিন আফরোজ নুরকে জড়িয়ে ধরে বললেন ,”আমার মা লক্ষী সোনা মা কিছুদিন পর তুই মা হবি ।আমরা তো বিশ্বাস করতে পারছি না ।এতদিন ধরে তো আমরা তোকে সামলাতেই হাপসে যেতাম কি করে সামলাবো ভাবতাম। এখনতো তোর আরো ছোট্ট একটা নূর আসবে নাকি ছোট্ট একটা সাদাফ?জানিনা কিন্তু ওকে সামলাতে সামলাতে আমরা পুরো বাড়ি হিমশিম খেয়ে যাব।”
নুর তাকিয়ে রইলো নরিন আফরোজ এর দিকে ।চোখে পানি ।নুর কিছুই বলতে পারছে না ।নুর একদম চুপ হয়ে গেছে ।শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।সামিহা বেগম নুর কে জড়িয়ে ধরে বললেন ,”আমার লক্ষী সোনা মা আর কাঁদিস না ।কাদার দিন শেষ ।এখন থেকে শুধু হাসবি।”
সবার কথা শুনলেও নূরে দৃষ্টি জোড়া যেন আবার নিবদ্ধ হলো শুধু সাদাফের দিকে ।নুর কোন সংকোচ করলো না ।ধীরে ধীরে এগিয়ে এগিয়ে সবার সামনেই সাদাবকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
সাদাফ ও সবার সামনেই নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,” কাদিসনা নুর ।আর কাঁদতে হবে না ।অনেক কেঁদেছিস।আমার হাসি তোর।তোর কান্না গুলো আমার হোক।”
সন্ধ্যাটা যে খুব সুন্দর করেই পার হলো নূরের ।যেন স্বপ্নের মত ।এইরকম একটি সন্ধ্যা নূরের জীবনে আসবে নুর কখনো কল্পনাও করতে পারেনি ।
পার হয়ে গেল নয় মাস। এইভাবে পার হয়নি সাদাফের অতিরিক্ত কেয়ার অতিরিক্ত ভালোবাসা সাথে পুরো বাড়ির এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না এটা খাওয়া যাবে না সেটা খাওয়া যাবে না ।হাফসে গিয়েছে নুর নয় মাসেই। বিছানায় বসে পেটে হাত দিয়ে বলছে নুর,”ছোট্ট সাদাফ নাকি ছোট্ট নূর ?তোরা কবে পৃথিবীতে আসবি ?আমাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দে। তোরা পৃথিবীতে আসলে যে আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো ।তোকে পেয়ে এরা থাকবে না হলে এরা থামবার নয়।”
হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করলো নুর অসহনীয় ব্যথা নূর বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু নামতে পারছেনা । সাদাফ নুরের জন্য নিচে ফল আনতে গিয়েছিল হঠাৎ নূরের একটি চিৎকারে শুনতে পেলো সাদাফ।
সাথে সাথে সাদাফ নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বললো,” মা নুরের ব্যথা করছে হয়তো।সামিহা বেগম কাজ রেখে বলল ,”আপা ভাবি সময় হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি বলেন গাড়ি বের করতে।”
সাদার দৌড়ে চলে গেল নূরের কাছে। নূর সাদাফকে দেখেই পেটে হাত রেখে বললো,” ভীষণ ব্যথা করছে ।সহ্য করতে পারছি না ।”
নূরের হাত ধরে সাদাফ বললো,” কিছু হবে না নুর।এই তো আমি আছি।”
হসপিটালে বসে আছে সবাই ।ভিতরে অটি রুমে অপারেশন চলছে নূরের ।নরমাল ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোনোভাবেই হচ্ছে না ।বাচ্চার নাকি পজিশন উল্টে গিয়েছে এরকম বেশি সময় হলে বাচ্চার পালস্ বন্ধ হয়ে যাবে তাই অপারেশন করতে হবে ।সাদাফ অনুমতি দিয়ে দিয়েছে অপারেশন করার।
প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গিয়েছে অপারেশন রুমে ঢুকেছে বিশ মিনিট পরে দেখল অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো ডক্টর ।বের হয়ে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললো,” কংগ্রাচুলেশন মেয়ের বাবা হয়েছেন। “
ডঃ যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করেছে নুরের তাই বললো সাদাফের দিকে তাকিয়ে ,”পুরো হসপিটালে মিষ্টি খাওয়াবেন আর পরীর মত মেয়ে হয়েছে আপনার।”
সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল ।ডঃ বললেন একটু পরে নার্স বেবিকে নিয়ে আপনাদের কাছে আনবে তবে নুরকে বেডে দিবে আরো ঘন্টা দুয়েক পর ।নূর এখন ইনজেকশনের প্রভাবে ঘুমাচ্ছে। বেডে দিলেই দেখা করতে পারবেন তবে বাবু একটু পরে দেখতে পারবেন ।ফ্রেশ করে আপনাদের কাছে নিয়ে আসবে।
ডাক্তার চলে গেল ।সাদাফ তাকিয়ে রইল ওটির দিকে ।নূরকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে কিন্তু ২-৩ ঘণ্টার আগে নূরকে বেডে দিবে না ঠিক এমন সময় নার্স একটি ছোট্ট পরী বাবুকে সাদা কাপড়ে সুন্দর করে মুড়িয়ে নিয়ে আসলো বাইরে। এসেই বললো,”বাচ্চার বাবা কোথায় সবার আগে বাচ্চার বাবার কাছে দিতে হবে ।”
ফজলুর রহমান হুমায়ুন রহমান রহমান নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম রিমা সবাই দৌড়ে গেলেন বাবুর কাছে ।সবাই বাবুকে দেখতে লাগলেন ।কি কিউট বাবু বললো রিমা।”
সাদাফ ওমনি দাঁড়িয়েছিল। নার্স টি বুঝতে পেরেছে সাদাফ বাবা তাই নার্স বললেন ,”সবার আগে বাবাকে কোলে নিতে দিন ।আপনাদের পেসেন্ট অজ্ঞান করার আগেই বলে গিয়েছে সবার আগে যেন বাচ্চার বাবার কোলে দেওয়া হয় তার মেয়েকে।”
কথাটি শুনে সাদাব ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো বাবুটির কাছে ।এসে কাঁপাকাঁপা হাতে ছোট্ট নূর কে কোলে তুলে নিল ।নিয়েই আবার ঝরঝরিয়ে কেঁদে দিল সাদাফ।
কাঁদতে কাঁদতে হালকা করে সাদাফ নিজের সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া কন্যা শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,” আমার ছোট্ট পরী আম্মু।”
তিন বছর পর ।পুরো বাড়ি আবার আলোকসজ্জায় সজ্জিত ।আজ সায়মন ও রিমার বিয়ের দিন ।
॥ কিভাবে কিভাবে বিয়ে ঠিক হল আগামী পর্বে অবশ্যই জানবেন ॥
পরী বসে চকলেট খাচ্ছিল ।সাদাফ ছিল একটু সামনে কাজ করছিল ।হঠাৎ করে নূর এসে পরীর হাত থেকে চকলেট নিয়ে খেতে খেতে বলল,” ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল ।আর তুমি এত চকলেট খাও কেন সারাদিন ?দাঁতে পোকা ধরবে ।”
বলেই আবার কাজে চলে গেল নুর।
পরী কান্না করে দিল সাথে সাথে ।সাদাফ পিছনে তাকিয়ে দেখলো পরী কান্না করছে ।সাদাফের কলিজা যেন উড়ে গেল ।সাথে সাথে দৌড়ে এলো মেয়ের কাছে । বললো,” কি হয়েছে আমার পরী টার?”
পরী বলল,”নূর পচা তুমি ওকে বিয়ে করেছো কেন ?”আমার সব চকলেট খেয়ে ফেলে ।”
সাদাফ তাকালো নুরের দিকে ।সবসময় এরকম করে নূর ।ক্ষধা লাগলেই পরীর চকলেট গুলো খেয়ে ফেলে ।যদিও সাদাফ নুরের জন্য চকলেট আনে তারপরও সব সময় পরীর টাই খেতে হয় এই মেয়ের।
সাদাফ বললো,”সরি আম্মু ।আমি তোমাকে আরো বেশি করে চকলেট এনে দিবো ।আর পঁচা মেয়েটাকে বাবা অনেক ভালবাসে।”
পরী আধো আধো বোলে বললো,” ব্যাড চয়েস ।তোমাকে আমি আমার পুতুলের সাথে বিয়ে দিব। নূর পচা।”
সাদাফ পরীর কানে কানে বললো,” ধীরে ধীরে বলো আম্মু ।না হলে পচা মেয়েটা শুনে তোমার পাপাকে ঝাড়ু দিয়ে মা*রবে।”
চলবে_
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রনা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৬১(শেষ)
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫১+১৫২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১+৩২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭১
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২৩+১২৪
-
এক শ্রাবণ মেঘের দিনে পর্ব ১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬০