সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১১৬
রাতে খাওয়ার পর ফজলুর রহমান নিজের ঘরে চোখ বন্ধ করে আরাম কেদারায় বসে ছিলেন ।এমন সময় সামিহা বেগম এসে পাশের সোফায় বসে তাকালো ফজলুর রহমানের দিকে ।তারপর গলা পরিস্কার করার বাহানায় হালকা একটু কেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো ফজলুর রহমানের ।
ফজলুর রহমান কপাল থেকে হাত নামিয়ে চোখ খুলে তাকালেন সামিহা বেগমের দিকে ।উনি ভালোই বুঝতে পারছেন সামিহা আবারও একই বিষয়ে কথা বলতে এসেছে তাই বললেন,” এত বাহানা না করে কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।”
সামিহা বেগম ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে আর কোন ভূমিকা করলেন না ।চুপচাপ সোজা হয়ে বললেন ,”আপনি কেন ছেলেটার সাথে এরকম করছেন ?আজকেও ছেলেটা বাসায় আসলো জোর করে রেখে দিলেন না।নূরের কত খেয়াল করে কত কেয়ার করে হারিকেন দিয়ে খুঁজলে কি এরকম জামাই পেতাম ?ঘরে বসে পেয়েছেন এজন্য আপনার নাকে লাগছে না?
মেয়েটা আমার সারা জীবন আমার চোখের সামনে থাকবে ওর সুখ দুঃখ সব আমি আমার চোখের সামনে দেখতে পারব এর থেকে বড় পাওয়ার কিছু আছে বলেন?
আমি কিছু জানি না আপনি বিয়ে মেনে নিবেন এই কয়েকদিনের মধ্যে মেনে নিবেন ধুমধাম করে ওদের দিয়ে দিবেন ।আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”
ফজলুর রহমান স্ত্রী সামিহা বেগমের কথা শুনে দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেললেন ।উনার কি সাদাফকে পছন্দ নয় ?সাদাফ যে ওনার নিজের সন্তান তাহলে কেন পছন্দ হবে না ?উনি শুধু চাচ্ছে দুজনেই যেন কষ্ট না পায়।সাদাফ ও উনার ছেলে যদি কখনো নূর মা না হওয়ার কারণে সাদাফ কষ্ট পায় সাদাফের কষ্ট তো ওনাকে ও স্পর্শ করবে।
নুর এখন সাদাফকে অনেক ভালোবাসে ।কিন্তু দুজনের বৈবাহিক সম্পর্কটা যদি শুরু হয়ে যায় ওই মুহূর্তে যদি সাদাফ কোনো কারণে নূরকে অবহেলা করা শুরু করে উনার বাচ্চা মেয়েটা যে সহ্য করতে পারবে না ! এই কষ্ট ফজলুর রহমান কি করে নিজের চোখে দেখবে?
একই বাড়িতে থাকবে এমন নয় সংসার না টিকলে নূরকে নিয়ে আসলো নুর নিজে ধীরে ধীরে ভুলে গেল ।ব্যাপারটা তো এমনও হবে না !একই বাড়িতে থাকবে একই বাড়িতে দুজনের আসা যাওয়া দেখাশোনা হবে।
তাই সাদাফের সাথে আগে কথা বলতে হবে ।সাদাফ যদি এটা শুনে জেনে শুনে মেনে নেয় তাহলে এই বিয়েতে উনার কোন অমত নেই কিন্তু যদি না মানে তাহলে উনি বিকল্প অন্য কিছু ভাববেন ।একই বাড়িতে নূরকে সাদাফ কে রাখা যাবে না ।এর জন্য যদি প্রয়োজনে অন্য কোথাও চলে যেতে হয় প্রয়োজনে উনি চলে যাবেন কিন্তু একই বাড়িতে থাকা যাবে না।
একসাথে থেকে সারা জীবন কষ্ট পাওয়ার চেয়ে দূরে গিয়ে অল্প কিছুদিনের কষ্ট টাই মনে হয় ভাল হয়।মনে মনে ভাবলেন ফজলুর রহমান।
সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ঘুমাও সামিহা আমি চিন্তা করছি ভাবছি সমস্যা নেই ।আমি সাদাফ এর সাথে কথা বলব ।তুমি ঘুমাও ।”
সামিহা বেগম খুশি হয়ে গেলেন যে আজ অন্তত ফজলুর রহমান না তো করেনি ।বলেছে ভাববে তার মানে ভাববে ।তাই বললো,” অবশ্যই এই মাসের মধ্যেই ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন আমার ছেলেমেয়েদের আমি আর কিছুই শুনতে চাই না।”
রাত সাড়ে বারোটায় নূরের মোবাইল বেজে উঠলো ।নুর ভালো করে জানে কে ফোন দিয়েছে ।ফোন ধরবে কিন্তু কথা বলবেনা ।আগেই ঠিক করে রেখেছে নূর ।নূরের কথা যেহেতু শোনে না তাই এখন থেকে নুরও ত্যাড়ামি করবে।
রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন রিসিভ করল নুর ।ও পাশ থেকে সাদাফ বলে উঠলো ,”কি হয়েছে আমার নুরজাহান বেগমের? গাল ফুলি আছে কেন?”
নুর অবাক হয়ে গেল ।ভীষণ অবাক হলো নাম শুনে ।নুরজাহান ! কিন্তু নূরের নাম তো নুরজাহান নয় ?
তাই আর রাগ করে থাকতে পারলো না ।সাথে সাথে বলে উঠলো নূর ,”আমার নাম নুরজাহান না।”
সাদাফ মুচকি হেসে বললো,” নূর অর্থ আলো জাহান অর্থ পৃথিবী অর্থাৎ আপনি আমার পুরো পৃথিবীর আলো ।আপনি না থাকলে তো আমার দুনিয়াটা অন্ধকার এ জন্য আজকে থেকে আপনার স্বামীর দেওয়া নাম নুরজাহান ।আপনার স্বামী আপনাকে নুরজাহান বলেই ডাকবে।”
নুর লজ্জা পেল ।ভীষণ লজ্জা পেল ।নুর তো ঠিক করেছিল গাল ফুলিয়ে থাকবে কথা বলবে না এই লোকের সাথে কিন্তু এই লোক ঠিকই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে নুরের অভিমান ভেঙে ফেলতে পারে। কিন্তু নূর বোঝাবে নুর অভিমান করে আছে তাই আবারও গাল ফুলিয়ে বললো,” কথা বলবো না আপনার সাথে আপনি আমার কথা শোনেননি।”
সাদাফ জানে নূর খুব রাগ করে থাকার অভিনয় করছে ।রাগ তো সাদাফের ফোন দেখেই ভেঙে গিয়েছিল ।তারপরও সাদাফ সিরিয়াস হয়ে বললো,” আমার নুরজাহান বেগমের কি হয়েছে শুনি ?গাল ফুলিয়ে আছে কেন ?কোন কথাটা শুনিনি আমি আমার নুরজাহান বেগমের?”
নূর সাথে সাথে বললো,”এই যে আপনাকে বললাম আজকে রাতে আপনি থেকে যেতেন এটাই শুনেননি ।সবাই কত করে বলল কারো কথাই শোনেননি।”
সাদাফ হাসতে হাসতে বিছানায় মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,” যদি থেকে যেতাম তাহলে তুই খুশি হতি ?থাকতাম কিন্তু তুই তো অসুস্থ ।এজন্যই থাকলাম না ।বলেছিনা যেদিন তুই সুস্থ হবি পুরোপুরি সুস্থ হবি যেদিন একটি রয়েল অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়ে আমার সামনে আসতে পারবি ,খোপায় একটি কাঠগোলাপের ফুল দিয়ে সামনে আসতে পারবি ,হাতে গলায় পড়বি বেলি ফুলের মালা ,সেদিন আমি আসবো।”
নূর লজ্জায় সাথে সাথে এক হাত দিয়ে নিজের চোখ দুটো ঢেকে ফেলল ।আর এক হাতে মোবাইল ধরা ।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে নুর ।লোকটা খালি লজ্জা দেয় নূরকে ।লোকটা কি বুঝে না নুর এসব কথা শুনতে পাচ্ছে ?না অনেক লজ্জা লাগছে নুরের।
সাদাফ যেন ওপাশ থেকে নূরের জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
সাদাফ ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,”লজ্জা পাচ্ছে আমার নুরজাহান বেগম ?লজ্জা গুলোকে জমিয়ে রাখেন ।বলেছি তো যত্ন নিয়ে নিষ্ঠার সাথে আপনার লজ্জা ভেঙে দিব।”
এদিকে সায়মন ফোন দিয়েছে রিমাকে ।রিমা ফোন ধরছেনা ।ফোনের পর ফোন রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিমা ফোন ধরছেনা ।সায়মন বিরক্ত হলো ।কেন ধরছেনা ?দ্রুত হাতে মেসেজ টাইপ করে সেন্ড করলো ।
মেসেজটা ছিল এরকম,”তুই যদি এইবার আমার ফোন না ধরিস তাহলে আমি রুমের বাইরে এসে জোরে জোরে দরজা নক করব ।তারপর সবাই শুনবে মান সম্মান শেষ হয়ে যাবে ।তারপর আমি বলব তুই আমাকে ডেকেছিস।”
রিমা অবাক হয়ে গেল ।সাথে সাথে ব্যস্ত হাতে ফোন দিল সায়মনকে ।সায়মনের ঠোঁটে দুষ্ট মিষ্টি হাঁসি।জানতো এই মেসেজ দিলে অবশ্যই ফোন দিবে ।সায়মন ফোন ধরার সাথে সাথে ওপাশ থেকে রিমা বলে উঠলো সমস্যা কি তোর ?সারাদিন দেখতেছি চোখের সামনে তারপরও কেন ফোন দিস ?আমি তো টেবিলে বসে পড়তেছিলাম ফোন কি আমি দেখেছি?”
সায়মন মুচকি হেসে বললো,” এখন তো মেসেজ দেখেছিস তাহলে ফোন দিয়ে একটু সুন্দর করে কথা বলিস না কেন ?বাসায় তো সারাদিন তোর সাথে আমি এভাবে কথা বলতে পারি না ।
রাতে একটু ফোন দিয়ে আলাদা কথা বলবো তাতে ও তোর এত সমস্যা কেন ?এখন কি আম্মু দেখতেছে? একটু সুন্দর করে তো কথা বলতে পারিস আমার সাথে ?একটু রোমান্টিক কথা বলবি একটু আদর সোহাগের কথা বলবি নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের ।তুই তো কিছুই করিস না?”
রিমা মুচকি হেসে লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বললো,” ও তাই ?তাহলে আপনার সাথে এখন আমার রোমান্স করতে হবে ।হেসে হেসে লজ্জা পেয়ে লাজুক লতার মত কথা বলতে হবে তাইতো?”
সায়মন বলল ,”হ্যা তাই আমি তোর স্বামী হই আর কেউ না জানুক আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তুই কবুল বলেছিস ।তুই তো জানিস তাই আমার সাথে তোর কিভাবে কথা বলা উচিত তুই ভালো করে জানিস।”
এদিকে নূর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে ।সাদাফ বললো,” আর কতক্ষণ চুপ করে থাকবেন আমার নুরজাহান বেগম ?এবার তো কিছু বলেন?”
নূর চোখ খুলে তাকালো ।লজ্জা ভেঙে বললো,”আপনাকে যে বলেছিলাম আমাকে একটা নাকের ফুল কিনে দিতে কবে কিনে দিবেন?”
সাদাফ ঘোর লাগা কন্ঠে মোবাইলেই ফিসফিস করে বললো,” যেদিন আসবো সেদিন অবশ্যই নাকের ফুল নিয়ে আসব ।আপনি প্রস্তুত থাকবেন।”
চলবে_
Neela Rahman
সুখময়যন্ত্রনাতুমি
neela_rahman
পর্ব_১১৭
সকাল সকাল অফিসে চলে এসেছে সাদাফ।সাথে এসেছে হুমায়ুন রহমান এবং ফজলুর রহমান ।আজ কিছু একটা হবে হুমায়ন রহমান জানে ।আর আজকেই বায়ারদের কারণ দর্শানোর শেষ দিন ।আজকেই তাদের নোটিসের উত্তর দিতে হবে ।এক মন ঘাবড়াচ্ছে অন্য মনে ভাবছে সাদাফ বুঝে শুনে যা করার করছে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।
ফজলুর রহমানের ও একটু টেনশন হচ্ছে কি হবে কি হবে ভেবে ! সাদাফ কিছুই শেয়ার করেনি শুধু বলেছে দেখতে থাকো ।ঠিক এমন সময় সাদাফের মোবাইলে ফোন আসলো । নারী ও শিশু শ্রম বন্ধের যে মন্ত্রণালয় রয়েছে সেখান এবং সাথে জাতিসংঘের একটি টিমথেকে ফোন আসলো সাদাফের ফোনে । নীলা রহমান
সাদাফ বললো,” আপনাদেরকে যে ভিডিও ফুটেজটি পাঠানো হয়েছে তা একদম লিগেল এবং অথেন্টিক প্রয়োজনে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন ।কোন প্রতিষ্ঠানের আমরা ইনফরমেশন দিয়ে দিব বাকিটা আপনারা স্বচক্ষে দেখতে পারবেন।”
ফোনের ওপাশ থেকে লোকটি বলে উঠল ,”যদি আপনার পাঠানো ভিডিও ফুটেজটি অথেন্টিক হয় তাহলে আমরা নিজেরাই সেখানে যাব আর কিছু বলতে হবে না ।যেভাবে শিশুদের উপরে নির্যাতন করে শিশুশ্রম করানো হচ্ছে এটি অবশ্যই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এটা যদি ফ্ল্যাশ হয়ে যায় অবশ্যই উনার বাইয়ার রা উনার সাথে কন্ট্রাক্ট বাতিল করবে এবং উনাদেরকে শাস্তি আওতায় আনা হবে।”
সাদাফ ফোন কেটে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল ।আর মাত্র ঘন্টাখানেক ।ঘন্টাখানেকের মধ্যে সাজিদের ফোন নিশ্চয়ই চলে আসবে ।এর মধ্যেই যা করার করতে হবে।
সাদাফের বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে চুপচাপ বসে রইল বাবা বা বড় বাবা কাউকে দেখাতে চাইল না ।চুপচাপ মাথা নিচু করে শুধু অপেক্ষা করতে থাকলো ।ঠিক ঘন্টাখানেক বাদে ফোন আসলো সাজিদের নাম্বারে।ফোনের ওপাশ থেকে কি বললো বুঝা গেল না ।সাদাফ শুরু বললো ,”এখনো সময় আছে তুই নিজে স্বীকার করবি এটা তোর দোষের কারণে হয়েছে ।তাহলে তোর বিরুদ্ধে একশন শুধু আমার অফিস থেকে চাকরীচ্যুত হবি বা কিছু টাকা জরিমানা কিন্তু আমার অফিসে আমার বায়ারদের সাথে চুক্তি ক্যান্সেল হবে না।
নিজের দোষ নিজের দায় নিজের ঘাড়ে নিবি এতে তো এত অনুরোধ করার কিছু নেই ।আর তুই বুঝতে পারছিস যদি না করিস তাহলে এক ঘন্টার মধ্যে তোর কি হতে পারে?”
সাজিদ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না সাদাফের পাঠানো ভিডিও ফুটেজটি সত্য নাকি মিথ্যা।তাই বললো,” যা করার করে নিস ।এটা অবশ্যই কোন অথেন্টিক ভিডিও না ।আমি তোকে দেখে নিব ।”
বলেই ফোন কেটে দিয়ে সাজিদ। ফোন দিল সাজিদের বাবা আমজাদ আহমেদকে ।আমজাদ আহমেদের কপাল ঘেমে উঠছে বারবার ।এই মুহূর্তে সাজিদের ফোন পেয়ে ফোন রিসিভ করে বললো,”হ্যালো।”
সাজিদ ব্যগ্র কন্ঠে বাবার কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছে ?
আমজাদ আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ।বললেন ,”জানিনা কিভাবে কি হল ?কিভাবে যেন ভিডিও ফুটেজ লিক হয়েছে লিগেল এইট পর্যন্ত চলে গেছে ।সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে শিশুশ্রম বন্ধের জন্য সরাসরি অভিজান দিয়েছে।
ভিডিওর সাথে যদি স্বচক্ষে সমস্ত প্রমাণ পেয়ে যায় তাহলে আমার এই ব্যবসা বন্ধ তো হবে তার উপরে বায়াররা আমার সমস্ত চুক্তি ক্যানসেল করবে । এতে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে যে আমার ইন ভয়েস ও ওভার ভয়েস এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স আছে সবকিছু বাতিল হয়ে যাবে।কোটি কোটি টাকা জরিমানা হবে আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে হলো কি থেকে কি হয়ে গেল?”
সাজিদ শুকনো ঢোক গিললো। ব্যক্তিগত দুশমনির জন্য কি বাবাকে এত বড় ক্ষতি মুখে ফেলে দিল সাজিদ ?
ভয়ে বাবার কাছে কিছুই বলল না ।শুধু জিজ্ঞেস করল ,”তোমার এত সিকিউরিটি দেওয়া সবকিছু তাহলে কিভাবে যে কেউ একজন ভিডিও ফুটেজ বের করতে পারে?”
“জানিনা আমি কিছু জানি না ।তবে শুধু এতটুকু জানি কোন বিদেশি কোন হাইলি এক্সপার্ট প্রফেশনাল দিয়ে করানো হয়েছে ।বাংলাদেশী কারো পক্ষে সম্ভব না কারণ বাংলাদেশের সবচাইতে বড় যারা সিকিউরিটিজ এক্সপার্ট আছে আমি তাদের দিয়েই সিকিউরিটি মেইন্টেইন করাই।”
সাজিদ বাবার সাথে কথা বলে ফোন রাখলো ।দুই মিনিট চিন্তা করল ।করে আবার সাদাফ কে ফোন দিল ।সাজিদের ফোন দেখে সাদাফ এবার মুচকি হাসলো ।মাথাটা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে রিলাক্স হয়ে ফোন রিসিভ করল।
সাদাফ ফোন ধরে বললো,” হ্যালো ।”
ওপাশ থেকে সাজিদ বললো,” ঠিক আছে আমি বাইয়ারদের কাছে স্বীকার করে নিব আমার গাফলতির জন্য এরকম হয়েছে ।কারণ এটা স্বীকার করলে আমার কোন জেল জরিমানা হবে না তোর অফিস থেকে আমার চাকরি টা হারাবো। জরিমানা যা লাগে দিব আমার বাবার অফিসের রেট বন্ধ কর।
আমি জানি যে লোক তুই পাঠিয়েছিস মন্ত্রণালয় থেকে উনি তোর সাথের লোক তোর সাথে আমেরিকায় লেখাপড়া করেছে ।সবকিছু আমার জানা আছে।”
সাদাফ বললো,” এই মুহূর্তে রেট দেওয়া বন্ধ হবে না অভিযান অভিযানের মতো চলবে।তারা তদন্ত করবে রিপোর্টও আসবে ।রিপোর্ট কি আসবে সেটা ডিপেন্ড করে তুই আজকে বাইয়ারদের সরাসরি আমার অফিসে এসে কি উত্তর দিস?”
বায়ারদের সাথে তুই ডিল করবি ।যেহেতু তুই প্রোডাকশনে ছিলি তাদের সাথে ডিল করে শিপমেন্ট ক্যানসেল হবে সেই জরিমানা তুই আমাদেরকে দিবি ।এবং তাদের সাথে আমাদের চুক্তি যেন ক্যান্সেল না হয় তার জন্য যেভাবে যা করণীয় সেটি তুই করবি।
আই প্রমিস তোর পারফরমেন্সে যদি আমি খুশি হই তাহলে তোর অফিসে যে প্রতিবেদন জমা হবে সেই প্রতিবেদনও তুই খুশি হবি।”
দাদাফ মনে মনে বললো,” এটা তো কেবল শুরু তোর অফিসের প্রতিবেদন কথা মত আমি যদি ঘুরিয়েও নেই তোর অন্যান্য সব বিজনেসে নথিপত্র আমার কাছে চলে এসেছে ।শুধু সময়ের অপেক্ষা ।কারণ আমি জানি তুই থেমে থাকবি না অন্য কোন ভাবে অবশ্যই কিছু করার চেষ্টা করবি ।তাই তোকে প্রত্যেক পদে পদে আটকানোর জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই আমার করা আছে।”
তারপর আবার সাদাফ বলে উঠলো ,”পাঁচটায় তো বায়ারদের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হবে সেখানে কারণ দর্শাতে হবে ।আশা করি চারটার মধ্যে তুই আমার অফিসে চলে আসবি ফোন রাখছি।”
হুমায়ূন রহমান যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে এতক্ষণে একটু স্থির হলেন ।এতক্ষন মনে হয় দম বন্ধ করেছিলেন ফজলুর রহমান আর হুমায়ূন রহমান। সাথে সাথে ফজলুর রহমান বলে উঠলেন ,”আমার ছেলে জিনিয়াস একটা ।এত কিছু কিভাবে প্লান করলি ?আমি তো ভেবেছি যা করার অফিসিয়ালি করবি তুই তো সবকিছু ান অফিসিয়াল হ্যান্ডেল করলি।
প্রবলেমটা কখনো অফিসিয়াল ছিল না আব্বু ।সবসময় প্রবলেমটা আনঅফিসিয়াল ছিল ।ও ব্যক্তিগত সমস্যা আমাদের ব্যবসার মধ্যে নিয়ে এসেছিল তাই ওকে প্রতিহত করার জন্য আমার ব্যক্তিগতভাবেই হ্যান্ডেল করতে হয়েছে ।তবে ওকে আমি ছেড়ে দিব না বাবা ।ও আমাদের যেভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে সামনেও করবে তাই ওর প্রত্যেকটা মুভমেন্ট এর উপর আমার নজর রাখা আছে তোমরা চিন্তা করো না।
কথামতো ঠিক চারটায় সাজিদ অফিসে চলে আসলো ।চোরের দৃষ্টি কারো দিকে তাকাতে পারছে না ।এতদিন প্রডাকশনের হেড ছিল কত হম্বিতম্বি কত কি ছিল । সবাই কত সম্মান করত এখন চুপচাপ বসে আছে চোরের মতো।ভার্চুয়াল মিটিং এর জন্য পাঁচটা বাজলে মিটিং হবে সেখানেও সমস্ত দোষ ভুল স্বীকার করে নিতে হবে।
বলতে হবে যে অফিসের কোন গাফলিতি বা প্রোডাকশনে কোন গাফিলতি না ওর চক্রান্তের কারণে এরকম হয়েছে ।সবটা স্বীকার করে নিতে হবে এতে ওর জেল হবে না তবে ওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে ।কোথাও কোনদিন জব করতে পারবেনা এবং ওকে একটি বড় ধরনের অংক জরিমানা ধরা হবে ।শিপমেন্ট ক্যানসেল হওয়ার কারণে।
বেলা পাঁচটা বাজে ভার্চুয়াল মিটিং শুরু হয়ে গেল বাইয়ারদের সাথে ।বায়ারদের সাথে প্রায় আধা ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধকর মিটিং চললো ।সেখানে সাজেদ সবকিছু স্বীকার করে নিল ভিডিও ফুটেজহ কিভাবে কি করেছে ।ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে সব করেছে বললো।এই অফিসের অফিসের স্টাফদের বা প্রোডাকশনের কোন সমস্যা নেই সবকিছু তাদের বোঝাতে সক্ষম হল ।তারা ১৫ দিন সময় দিল শিপমেন্ট ঠিক করার জন্য ।১৫ দিনের মধ্যে যদি ঠিক করে দিতে না পারে সে ক্ষেত্রে ডিল ক্যান্সেল করা হবে না।সবাই খুশি হল এটলিস্ট ১৫ দিন সময় পেয়েছে ।১৫ দিনে শ্রমিক বাড়িয়ে দিলেই শিপমেন্ট আবার রেডি হয়ে যাবে।
সাজিদ যাওয়ার সময় সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এই ঝড় এখানে থামবে না ।এই যুদ্ধ এখানে শেষ হবার নয় ।তোর আর আমার যুদ্ধ ময়দান অন্য তুই ভালো করে জানিস ।আমি তোর সাথে সেখানেই লড়বো ।”
বলেই চুপচাপ অফিস থেকে বের হয়ে গেল সাজিদ।
সাদাফ চোখ বন্ধ করে শুধু মনে মনে বলল ,”তোর আমার যুদ্ধক্ষেত্র কখনোই এক নয় কারণ যেই রানীর জন্য তুই যুদ্ধ করবি সেই রানী শুধুমাত্র আমার।”
চলবে_
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৮
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮২
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১১৩