মেঘেরওপারেআলো
পর্ব_৩৩
Tahmina_Akhter
প্রায় রাত একটার দিকে মাহরীনের হুট করে মেঘালয়ের কথা মনে পরল। পার্স থেকে মোবাইল বের করে কল করল মেঘালয়ের নাম্বারে।
— হ্যালো? মেঘালয়? কই চলে গিয়েছিস?
মায়ের কন্ঠ শুনে মেঘালয়ের যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পরল। মোবাইল এক কানে ঠেকিয়ে অন্যহাত দেয়ালের ওপরের রেখে কাঁপা গলায় বলল,
— মা, আলো ঠিক নেই৷ ওকে অবজারভেশনে রেখেছে। আমার বাচ্চাটা…
বাকি কথা বলতে পারছে না মেঘালয়। গলার মধ্যেভাগে কি যেন শক্ত হয়ে দলা পাকিয়ে আছে !
— সম্পূর্ণ কথা খুলে বল! কি হয়েছে আলোর?
মাহরীনের ধমক শুনে মেঘালয় সবটা খুলে বলল। সব জানার পর মাহরীন ঠোঁটের ওপর হাত রেখে “ইন্নালিল্লাহ” বলল।
মাহরীনের মনে হলো এত এত দুঃসংবাদ জানার আগে কেন তার মৃত্যু হলো না? বড় ছেলের বউ চলে গেল! নাতনিটা জীবন-মরণের সঙ্গে লড়াই করছে। ছোট ছেলের বউটার কেন এমন অবস্থা হলো?
মাহরীনের পাশে বসে থাকা ইনায়া সবটা শুনলো। ইনায়া মাথাটা দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। মাশফি সেই যে গেছে এখন অব্দি ফিরে আসেনি। তার বাবা-মায়ের এতক্ষণে ঢাকা থেকে চলে আসার কথা। কে জানে এখন অব্দি এলো না কেন? তার আপুর মরদেহ অপেক্ষা করছে দাফনের জন্য। অথচ, কারো মাথাব্যাথা নেই যেন এই ব্যাপারে। এই পর্যায়ে এসে ইনায়ার মনে হলো, মানুষের দেহের যখন মৃত্যু হয়, তখন দেহের মূল্য থাকে না। শোকমাতম প্রকাশ করার চেয়ে মরদেহ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে। যেমন: ইনায়া করছে। তার এত আদরের বড় আপু আজ নেই। সেই আপুর দাফনের চিন্তা তাকে অস্থির করে তুলেছে। অথচ, তার এখন উচিত তার আপুর পাশে বসে তার আপুকে মন ভরে দেখার। অথচ, একা একা তার আপুর লাশের পাশে বসে থাকার সাহস হচ্ছে না। অথচ, এই আপু যখন বেঁচে ছিল তখন ইনায়া আপুর পাশে না বসলে ভালো লাগত না। গল্প না করলে পেটের ভাত বোধহয় হজম হতো না। আচ্ছা, তার আপুর কি এখন রাগ হচ্ছে না ইনায়ার ওপর? হয়ত, বলছে তোর মত বোন আমি কোথাও দেখিনি ইনায়া!
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ইনায়া ডুকরে কেঁদে উঠল। বুক ভেঙে আসছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তানিয়ার বাবা-মা চলে এলো। এরপর, যা হলো তা বর্ণনা করার মত নয়। বুড়ো বাপ-মায়ের বিদায় হবার সময়কালে যখন জোয়ান ছেলে-মেয়ে চলে যায়, তখন কেমন লাগে সেই বুড়ো বাপ-মায়ের? তানিয়ার বাবা-মায়ের চিৎকারে ভারি হয়ে উঠল হসপিটালের করিডর। কিছু কেবিনের রোগীর স্বজনরা বেরিয়ে এলো। কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তো, কেউ কেউ বাচ্চাটার জন্য দোয়া করছিল!
পরদিন ভোরের আলো ফোঁটার আগেই তানিয়ার লাশ এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হলো তার শ্বশুড়বাড়ির উদ্দেশ্য। বাবুকে দেখার জন্য রয়ে গেল মাশফিদের একজন নিকটাত্মীয়।
তানিয়ার বাবা-মা বারবার চেয়েছিল মেয়ের লাশ ঢাকায় নিয়ে যেতে। কিন্তু মাশফি দেয়নি। মাশফি শেষ রাতের দিকে মসজিদ থেকে ফিরে আসে। এবং তখনি তানিয়ার বাবা এই প্রস্তাব জানায়। মাশফি বারণ করে দেয়। উদাস ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
” আপনার মেয়ে বরাবর স্বার্থপর ছিল, বাবা! স্বার্থপর বলেই সে চলে গেছে।আমার কথা ভাবেনি, আমার সন্তানের কথা ভাবেনি। কিন্তু, আমি তো ওর মত স্বার্থপর নই। আমি যেই শহরে থাকব, সেই শহরে আমার তানিয়া থাকবে।”
এ্যাম্বুলেন্স যখন বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকল। তখন, এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শুনে
চারপাশের বিল্ডিংয়ের অনেক মানুষজন বেরিয়ে আসে এই বাড়িত আসার জন্য।
এ্যাম্বুলেন্স থেমে গেছে। বাগানের একপাশে মশারি খাটানো হয়েছে। যেখানে শেষবারের মত তানিয়াকে গোসল করানো হবে। তানিয়াকে নামানোর জন্য কয়েকজন প্রতিবেশী ছেলে এগিয়ে আসে। যারা বেশিরভাগ মাশফির বয়সী। মাশফি তাদের দেখে বলল,
— শেষবারের মত আমাকে তানিয়ার স্বামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দাও তোমরা। আমি পারব।
মাশফির কথা শুনে তারা ভীষণ দুঃখপ্রকাশ করল। মাশফি তানিয়ার লাশ কোলে তুলে নিলো। তারপর, এগিয়ে যায় খাটিয়ার দিকে। খাটিয়ার পাশেই মশারি খাটানো হয়েছে। খাটিয়ার ওপরে আলতো করে রাখল তানিয়ার লাশকে। খাটিয়ার দিকে তাকিয়ে মাশফির চোখ ভরে উঠল। এত শক্ত আর ঠান্ডা খাটিয়ার ওপর শুয়ে থাকা তানিয়ার কি ব্যাথা লাগছে না? কষ্ট অনুভব হচ্ছে না? খাটিয়ার পাশে মাটিতে বসে পরল মাশফি। তানিয়ার এক গালে হাত রেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তানিয়ার চোখের কোনে চোখের জলের শুকনো ছাপ। মাশফি তাকিয়ে রইল মুখটার দিকে। এই মুখটা আর কখনো দেখা হবে না। এই দেহটা আর কখনো মাশফির দেহের সঙ্গে লেপ্টে থাকবে না। মাশফির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাবে না। মাশফির চোখ ভরে উঠল। হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে থাকে মাশফি।
” মায়া বাড়িয়ে চলে যাওয়া মানুষের স্বভাব। তোমার প্রতি আমার অভিমান যখন ছিল, তখন কেন তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে না? গতকাল দুপুরে আমার কাছে কি চাইলে, তুমি? আমাকে তোমার চাওয়া পূর্ণ করতে দিলে না! তারপর, কি থেকে কি হলো? তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি যে নেই! মনে হচ্ছে এটা আমার দুঃস্বপ্ন। আমার ঘুম ভেঙে যাবে। আমি পাশ ফিরলে তোমার মুখটা দেখতে পারব। তোমার শ্বাসপ্রশ্বাস চলা বুকটার দিকে তাকিয়ে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলব। তারপর, তোমার উষ্ণ দেহটাকে টেনে এনে আমার বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরব৷ তোমার তপ্ত শ্বাস এসে আঁছড়ে পরবে আমার উন্মুক্ত বক্ষে। তোমার ঘুম নষ্ট করার দায়ে তুমি চোখ খুলে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলবে, দিলে তো ঘুমটা নষ্ট করে! “
মাশফি কথাগুলো বলে শেষ করার পর ঝুঁকে তানিয়ার গালে চুমু দিয়ে পাগলের মত হাসতে শুরু করল। আশেপাশের অনেকেই যেন এই ছন্নছাড়া মাশফিকে চিনতে পারছে না। গুরুগম্ভীর মানুষটা স্ত্রী বিয়োগের পর কেমন হয়ে গেছে!
তানিয়াকে গোসল করানো জন্য ভেতরে নেয়া হলো। ইনায়া সঙ্গেই ছিল। গোসল শেষ করার পর একটি সাদা কাপড়ের (ইজার) উপর চিত করে শোয়ানো হলো।
এরপর কোর্তা পরিয়ে দেয় এবং বক্ষবন্ধনী (সিনাবন্দ) বেঁধে দিলো ।
সবশেষে, চুলগুলো দুটি গুচ্ছে ভাগ করে বুকের ওপর রেখে দিলো। তানিয়ার কোমড় সমান চুলগুলো যেন তানিয়ার দেহের মধ্যভাগ ঢেকে ফেলল।
ইনায়া প্রায়ই তানিয়ার লম্বাচুল দেখলে বিরক্ত হতো। ইনায়ার বিরক্তির জবাবে, তানিয়া বলতো, “দাদি মরে যাওয়ার আগে বারবার চুল কাটতে বারণ করে গেছে আমাদের।কারণ, কি জানিস? নারীরা মরে গেলে তাদের চুল দিয়ে তাদের বুকের ওপর ঢেকে দেয়। এখন যাদের চুল ছোট তাদের কি অবস্থা হবে, বল তো?”
ইনায়া যেন আজ প্রমাণ পেলো তানিয়ার বলে যাওয়া কথার। অথচ, আগে হাসির ছলে উড়িয়ে দিতো।
এরমাঝে আরেকজন এসে একটি ওড়না (লেটাকা) দিয়ে তানিয়ার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দিলো । তারপর, সব কাপড়ের অতিরিক্ত অংশ একসাথে করে কোমর ও পায়ের দিকে ফিতা দিয়ে বেঁধে দিলো। তারপর, মুখের ওপর কাপড়টা খোলার রাখল, যেন শেষবারের মত মহিলা আত্মীয়া, মা, বোন শ্বাশুড়িরা তানিয়াকে দেখতে পারে।
ইনায়া বোনের শেষ সজ্জা দেখছে বসে বসে। তানিয়ার খাটিয়ার সামনে ভিড় জমেছে। তানিয়ার মায়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠল চারপাশ। মাহরীন এবং ইনায়া নিরবে চোখের জল ফেলছে।
এমনসময় ইনায়া ঝাপসা নয়নে ধরা পরল মেঘালয়ের ঢুকে ঢোকার দৃশ্য। ধীরে ধীরে সবাই তানিয়ার খাটিয়ে কাঁধে তুলে নিলো। মাশফি তানিয়ার খাটিয়া কাঁধে নিতে পারল না। তার শরীরের সকল শক্তি যেন ফুরিয়ে এসেছে। মাশফিকে তার এক কাজিন ধরে ধরে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। তানিয়ার বুড়ো বাপ চোখের জল ফেলতে ফেলতে মেয়ের লাশের খাটিয়ার পেছনে রওনা হলো।
তানিয়ার জানা্যা সম্পন্ন করে দাফন করা হলো। মাশফি অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তানিয়ার বাবার চোখের জল ফুরিয়ে গেছে। মেঘালয় মাশফির কাঁধে হাত রাখল। মাশফি ফিরে তাকালো না। সে তখনও তাকিয়ে আছে সদ্য তৈরি হওয়া তানিয়ার কবরের দিকে।
— তোমার মেয়েটা হাসপাতালে পরে আছে। তার কাছে তোমার ফিরে যাওয়া উচিত ভাইয়া। ভাবিকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। কিন্তু, তোমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তোমার চেষ্টা জারি রাখা উচিত।
— যার হায়াত আছে সে সকল বিপদ কাটিয়ে বেঁচে থাকবে। হায়াত না থাকলে বাঁচিয়ে রাখব কি করে? মানুষের জন্ম মৃত্যু সবটাই আল্লাহর হাতে। এত চেষ্টা করেও যে তানিয়াকে বাঁচাতে পারলাম না।কেন পারলাম না? উত্তর আছে তোর কাছে?
মাশফির কথার কোনো জবাব নেই মেঘালয়ের কাছে। একটা সিএনজি ভাড়া করে মাশফি এবং তানিয়ার বাবাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো মেঘালয়। সে এখান থেকে রওনা হলো আলোর কাছে। কে জানে কি অবস্থা এখন?
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মেঘালয় দেখতে পেলো সিতারা বেগম কান্না করছেন। বেড খালি। আলো নেই। মেঘালয় আলোকে না দেখতে পেয়ে সিতারা বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
— মা, আলো কোথায়?
— আলোর খিঁচুনি উঠেছে বাবা। প্রেশার বেড়ে গেছে। তাই ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আলোর সিজারিয়ান অপারেশন করবে। বাবা, আমার আলোর কি হবে? আর আলোর বাচ্চাটা বাঁচবে তো?
মেঘালয় যেন আকাশ থেকে পরল।
— কিন্তু, আমাকে না জানিয়ে এত বড় ডিসিশন কে নিয়েছে? আমাকে কল করে জানালেন না কেন? আপনি কোনো কাগজে সাইন করেছেন?
— না, বাবা। আপনি কোনো কাগজে সাইন করিনি। তোমাকে কতবার কল করলাম তুমি ধরলে না।
সিতারা বেগমের কান্নায় ভারি হয়ে উঠল কেবিন। মেঘালয়ের কল না ধরার কারণও তিনি জানেন। তাই মেঘালয়কে দোষারোপ করতে পারলেন না।
মেঘালয়ের মনে পরল গতকাল রাতে সে কিছু কাগজে সাইন করেছিল। ডাক্তাররা তাকে না জানিয়ে কিভাবে এই কাজ করল?
মেঘালয় কেবিন থেকে বের হলো তড়িঘড়ি করে। অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর একজন নার্স অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো। মেঘালয় নার্সকে দেখে সামান্য কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— আমার ওয়াইফ কেমন আছে?
— আপনারা ওয়াইফের অবস্থা তেমন ভালো না। “ও নেগেটিভ” গ্রুপের ডোনার রেডি রাখুন। কারণ, আপনার ওয়াইফের মাত্রারিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে। হসপিটালের পক্ষ থেকে অলরেডি এক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে।
নার্স কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছিল। মেঘালয়ের শরীর কাঁপছে তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বলল,
— আমার বাচ্চা? আমার বাবু…
— ছেলে বাবু হয়েছিল আপনার। কিন্তু, সে মৃত হয়েছে।
মেঘালয়ের শরীর হুট করে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠল। মেঘালয় এবার নিজেকে সামলাতে পারছে না। কোনোমতে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে রইল। দু-চোখ ভরে উঠল জলে। মেঘালয়ের চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে।
“ছেলে বাবু হয়েছিল আপনার” বাক্যটা যতটা শ্রুতিমধুর। ঠিক ততটাই বিষাক্তের ন্যায় শোনা গেছে “সে মৃত হয়েছে” বাক্যটি।
সিতারা বেগম মেঘালয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নার্সের বলা সব কথা শুনতে পেলেন। চোখটা বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললেন,
” এই আপনি করলেন আল্লাহ! আমার আলোর বাপ নেই। একটা বাপের মত ছেলে সন্তান দিয়ে তাকেও কেড়ে নিলেন! মেয়েটারে বাঁচিয়ে রাখবেন তো? আমার তো কেউ নাই আলোরে ছাড়া। আলোরে ভালো রাখবেন আপনি! আপনার কাছে সারাজীবন একটা বাচ্চা চাইছি। আপনি দেন নাই। আজ আলোরে চাইছি। আলোরে আমার বুকে ফিরিয়ে দেবেন! আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই। আল্লাহ’গো আমার আলোরে আপনি সুস্থ কইরা দেন “
তানিয়ার কবরের পাশে আর একটি কবর খোড়া হলো। মেঘালয়ের ছেলের জন্য। যে কিনা মায়ের গর্ভে কেবল ছয়মাস থাকতে পেরেছে। তার মায়ের গর্ভ থেকে যখন তাকে বের করা হলো সে তখন মৃত ছিল। ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কারণ সঠিক বলতে পারছে না। এদিকে মেঘালয়ের জানতে ইচ্ছে করে তার অপরিণত ছেলের মৃত্যুর কারণ কি?
মেঘালয়ের মৃত ছেলেকে বাড়িতে নেয়া হলো না। হসপিটালে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরিয়ে তৈরি করা হলো দাফনের জন্য। মাশফি, মাহরীন, সিতারা বেগম একপলক দেখল মেঘালয়-আলোর অপরিণত ছেলেকে। একেবারে ছোট আকৃতির এক পুতুল যেন। মাহরীন হাত বাড়িয়ে চুমু খেলো। সিতারা বেগম তাকিয়ে রইলেন। এমন ছোট শিশু কখনো দেখেননি তিনি। মাশফি এগিয়ে এসে কোলে নিতে চাইলে, মেঘালয় ভাঙা গলায় বলল,
— আমার ছেলেকে আমি কোলে নেব, ভাইয়া। আর কখনো সুযোগ পাব না যে আমি।
মেঘালয় তার ছেলেকে কোলে তোলার সময় তার চোখের পানি গড়িয়ে পরল ছোট দেহটার ওপর। মাশফি মেঘালয়কে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সে নিজেই এক ভাঙাচোরা দেহ নিয়ে ঘুরছে। মেঘালয়কে স্বান্তনা দেবে কিভাবে?
আলো হসপিটালের পোস্ট অপারেটিভ রুমে অচেতন পরে আছে। আর এদিকে তার নাড়িছেঁড়া মানিককে একটু আগে কবরে শুয়ে রেখে এসেছে মেঘালয়।
হসপিটালের করিডর কোলাহলপূর্ণ। অথচ, মেঘালয়ের মনে হলো এই৷ করিডর জুড়ে সে আর তার ছেলে আছে। মেঘালয়ের তার বুকের দিকে তাকালো। তারপর,হাতদুটোর দিকে তাকালো। এই হাত দুটো দিয়ে তো কোলে তুলল। বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরেছিল। তারপর, এই বুক থেকে সরিয়ে এই দুইহাত দিয়ে নিষ্ঠুরের মত কবরে শুয়ে রেখে এসেছে তার বুকের মানিককে। অথচ, তার বুকের মানিকের থাকার কথা ছিল নরম বিছানায়, মায়ের বুকের উষ্ণতায়।
— পাপ বাপকেও ছাড়ে না, মেঘালয়। তানিয়া চলে গেছে, তার বাপ মায়ের কোল খালি হয়েছে। এবার তোমার সন্তান চলে গেছে। তোমার আর আলোর বুক খালি হলো। হিসেব বরাবর।
কথাগুলো যেন মেঘালয়ের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে তুলল। মাথা উঁচু করে তাকাতেই যাকে দেখতে পেলো তাতেই মেঘালয় বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল সেই মানুষটার মুখের দিকে। কারণ, মানুষটার এসব বলার কারণ সে জানে না।
চলবে…..
Share On:
TAGS: তাহমিনা আক্তার, মেঘের ওপারে আলো
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১৭
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৩৫
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১৩
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৫
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৪০
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৩৮
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১১
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৭
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ২৮
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ২৯