বেলতুলি – [০৮]
লাবিবা ওয়াহিদ
[অন্যত্র কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
রত্না রাস্তায় একটি শার্ট পেয়েছে, খুব চেনা-পরিচিত কালো রঙের শার্ট। এটা প্রায়ই নিবিড়কে পরতে দেখেছে সে। এজন্য খুশিমনেই সেটা সে তুলে নিয়ে যায় মুন্সী বাড়ি। এতে করে ভাবল যদি শার্টের বাহানায় তার নিবিড়ের সাথে দেখা হয়ে যায়? দুটো চিঠি দিয়েছে এই অবধি নিবিড়কে, অথচ নিবিড় একটারো জবাব দেয়নি। কত ব্যাকুল হয়ে চিঠিতে লিখেছিল সে অপেক্ষায় আছে নিবিড়ের চিঠির। সেখানে তাদের মুখোমুখি দেখা অবধি হয় না।
শার্টের বাহানায় নিবিড়ের সাথে দেখা হওয়ার বদলে সোফিয়া খানের সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি বড়োই আদর করলেন হবু বউকে, কিন্তু ভেতরে ঢুকতে দিলেন না৷ তাদের রীতি আছে, বিয়ের আগে হবু বউদের শ্বশুরবাড়ি ঢুকতে নেই। এতে করে নাকি সে পুরান হয়ে যায়। রত্নার মন বিষণ্ণ হয়ে যায় এ কথা শুনে। দরজায় দাঁড়িয়েই উঁকিঝুঁকি দিয়ে নিবিড়কে খুঁজল। অগত্যা, শার্টটা সোফিয়া খানমের হাতে দিয়েই সে খালি হাতে ফিরে এলো।
সোফিয়া খানম রত্নার সামনে হাসি-মুখে থাকলেও সে যেতেই তার মুখের রং বদলে গেল। ভেতরে গিয়ে সে চেঁচিয়ে ডাকলেন নিবিড়কে।
–“এই অভদ্র ছেলে! নিচে নাম! রত্না এলে যে ঘরে ইচ্ছাকৃত ঘাপটি মে(১)রে বসে থাকিস তা আমি ভালো করেই জানি। তোকে জন্ম দিয়েছি না আমি, চেনা হয়ে গেছে।”
নিবিড় সত্যি সত্যিই তার রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তার চোখে-মুখে অবাধ বিরক্তি। গলায় গাম্ভীর্য ঢেলে বলল,
–“জানোই যখন তখন বিয়েটা ঠিক করেছ কোন খুশিতে?”
–“এই চুপ! কম মেয়ে দেখেছি তোর জন্য? একটাকেও তোর মনে ধরে না, কেন? আর রত্না কী কম সুন্দর?”
নিবিড়কে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী দেখা গেল না। তবুও সে যথেষ্ট শীতল গলায় বলল,
–“আমার সমস্যা কারো সৌন্দর্যে নয়। আমার সমস্যাটা বিয়েতেই। আমার এখনো পদোন্নতি জরুরি আম্মা। আমার লাইফের কিছু গোল আছে। এসব কেচ্ছা তোমাকে হাজার বুঝিয়ে লাভ হয়েছে? কেন এসমস্ত ইউজলেস প্রশ্ন করে মাথা ধরিয়ে দাও?”
সোফিয়া খানম অসম্ভব রেগে গেলেন ছেলের অযুহাতে। মূলত তার কাছে এসব অযুহাত বই কিছুই লাগে না। তিনি বলেননি এখন বিয়ে করতে, পদোন্নতি হলেই বিয়ে হবে। রত্নার অভিভাবকদের তাই কথা দেয়া। কিন্তু এই ছেলেকে নিয়ে তিনি প্রচন্ড পীড়ায় আছেন। এত ত্যাড়া রগ ঘাড়ের?
–“তোর হাতে আমি রত্নার দুটো চিঠি দিয়েছি, দুটো কেন আমি বাগানে ফেলে দেয়া অবস্থায় পেয়েছি? কারো চিঠি এভাবে ফেলে দেয়? খাম দেখে তো বোঝা যায় খুলেও দেখিসনি।”
নিবিড় এর উত্তর না দিয়ে বলল,
–“নাস্তা দাও।”
–“আগে বল!”
–“তুমি যাতে দেখো তাই ফেলেছি।” নিবিড়ের সহজ স্বীকারোক্তি।
ছেলের এহেম এড়িয়ে চলা দেখে তিনি আরও রেগে গেলেন। চেঁচালেন হাতের শার্ট দেখিয়ে।
–“এটা রাস্তায় কেন পড়ে ছিল? এত উত্তর আগে দে!”
নিবিড় শার্টটা দেখল, শার্টটা তার চিনতে অসুবিধে হলো না। মৌনর কাছে হস্তান্তর করা শার্ট রাস্তায়?নিবিড়কে অবাক হতে দেখা গেল না। যা তাঁরছিড়া মেয়ে, এসব তার জন্য ব্যাপারই না। কিন্তু মৌনর জায়গায় রিমঝিম হলে অবাক হতো। রিমঝিম ভদ্র, পরিপাটি করে চলতে জানে। কিন্তু মৌন গোছানো স্বভাবের নয়। সে স্বভাবে ভদ্র হলেও কাজ-কর্মে হ-য-ব-র-ল করে বসবে। সে যতই কিছু একটা গুছিয়ে করার চেষ্টা করুক না কেন, ঝামেলা একটা হবেই।
সোফিয়া খানম এখনো জানেন না গতকাল মৌনর জুতোর ছাপ লাগা শার্ট এটাই। তবে তিনি ভালো করেই শুনেছেন মৌনর এই কাণ্ড। এজন্য গতকাল থেকেই সোফিয়া খানমের মেজাজের পারদ ওঠানামা করছে। গত রাতে তো কয়েক দফা বকাবকিও করলেন মৌনকে। এই মেয়ের কত বড়ো সাহস, এলাকার সবার সামনে তার ছেলেকে জুতো মা(১)রে। ওই হাঁটুর বয়সী মেয়ের যোগ্যতা কী? শুনেছে মেয়ের বয়স ঊনিশ, তবুও কী পরিমাণ বিচ্ছু, কত বড়ো বেয়াদব। গতকালের রাগ তো ছিলই, ভোরে বাগানে প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে রত্নার চিঠিগুলা পেয়েছেন। একদম নিবিড়ের জানালা বরাবর পড়েছে। সেই থেকে তার রাগের মাত্রাটা আরও বেড়েছে। সেই রাগ মাথায় ভীড় করতেই তিনি আবারও মৌনকে বকাঝকা করতে লাগলেন।
–“অসভ্য মেয়ে। কত বড়ো বেয়াদব সে বুক ফুলিয়ে সবার সামনে আমার ছেলেকে জুতো মা(১)রে। সাপের পাঁচ পা দেখে নিয়েছে নাকি? কী পরিমাণ নির্লজ্জ।”
গতকালের ঘটনা মনে পড়ায় নিবিড়ের কপালের রগ ফুলে উঠল আবার। যেই ঘটনা সে মনে করতে চায় না তবুও তার মা তা রসিয়ে রসিয়ে আরও পায়ের রক্ত মাথায় তুলে দিচ্ছে। নিবিড় অযুহাত দিল,
–“আজ বাইরে খাব। তুমি তোমার রাগের সাথে নাস্তা করো, আম্মা।”
বলেই নিবিড় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সোফিয়া খানম পিছু ডাকলেন ছেলেকে। ছেলে ফিরেও চাইলো না। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে আওড়ান,
–“বাপ, ছেলে দুটোই এক পদের হয়েছে। ঊনিশ থেকে বিশ হলেই বেরিয়ে যায়। এদের নিয়ে আমার শেষ বয়সেও শান্তি হবে না।”
মৌন শার্ট খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। ওদিকে তার পরীক্ষা, নাস্তার সুযোগটুকুও পায়নি। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ের টং থেকে একটা কলা আর রুটি কিনে নিল। কলা কিনে কয়েক ধাপ এগোতেই সে অনাকাঙ্খিতভাবে নিবিড়ের মুখের সামনেই পড়ল। ওইযে বলে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়? এবারও তার ক্ষেত্রে সেটাই হলো। নিবিড়ের তীক্ষ্ণ চোখের চাহনিতে মৌনর গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ। ভাবল, নিবিড়ের থেকে শার্টের দাম শুনে কিনে দিবে। পরমুহূর্তেই ভাবল নিবিড়কে কোন মুখে জিজ্ঞেস করবে? মৌন দুশ্চিন্তায় হাতের কলাটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
–“সরি নিবিড় ভাই। বিশ্বাস করুন, আপনার শার্ট বারান্দা দিয়ে উড়ে গিয়েছে, ক্লিপ লাগাতে ভুলে গেছিলাম। জানেনই তো আমাদের খোলা বারান্দা, আগেও একবার এশার ফ্রক হারিয়েছে এভাবে.. আরেকবার জুনায়েদের আন্ডারও..”
জুনায়েদের কথা বলতে গিয়েই মৌনর চুপসে গেল। ছি, সে কী বলতে নিচ্ছিল? পরক্ষণেই প্রসঙ্গ পালটে বলল,
–“কলাটা নিন। আমি পরীক্ষাটা দিয়ে এসেই আবারও এলাকায় খুঁজতে বের হবো, পাক্কা।”
দেখা গেল নিবিড় মৌনর কলাটা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো ধমক দিল না। সে রাস্তা-ঘাটে মৌন কিংবা যে কাউকেই এড়িয়ে চলে। বিশেষ করে আশেপাশে লোকজন বেশি থাকলে। শুধু বলল,
–“বিকালে দেখা করবি।”
বলেই চলে যায়। এদিকে মৌন সারা রাস্তা রিকশায় বসে ভাবল, নিবিড় কেন রাগ দেখাল না? আবার যখন রাগ দেখায় তখন সে এটা ভেবে পায় না নিবিড় কেন এত বদমেজাজী?
আজ পরীক্ষা শেষ করে মৌন হাফসাকে দেখল না। সম্ভবত আগেই চলে গেছে। মৌনর খুদা বেশি পেয়েছে বলে সে বিস্কিট কিনে খেতে শুরু করল। এর মাঝে তার সামনে আশিক এসে দাঁড়ায়। মৌন প্রতিবারই আশিককে এড়িয়ে চলে। এবারও এড়াতে বলল,
–“হাফসা নেই। চলে গেছে আগেই।”
আশিক ইতঃস্তত হয়ে বলল,
–“আমার আসলে তোমার সাথে কথা ছিল, মৌন।”
মৌন তাকাল। ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,
–“জি?”
–“আসলে আমাকে দিয়ে একটা ভুল হয়ে গিয়েছে।”
–“সেটা কী?”
আশিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
–“আমি আসলে প্রেমপত্রটা দিয়েছিলাম তোমায়। আমি তখন জানতাম তোমার নামই হাফসা, এজন্য হাফসা নামে চিঠিটা লিখেছি। এখন হাফসার সাথে জড়িয়ে গেছি। কিন্তু সত্যি বলতে মন থেকে আমি তোমাকেই ভালোবাসি। প্লিজ কিছু একটা ম্যানেজ করা যায় না?”
মৌনর মনে হচ্ছে যেন তার মাথা ঘুরছে। দিনে-দুপুরে তারই মুখের সামনে আশিক সহজ স্বীকারোক্তি করেছে ঠিকই, কিন্তু ভুল ভাবে। মৌন হাতের মুঠোয় এক বিস্কুট মুঠিবদ্ধ করে ভেঙে ফেলল। যার জন্য তার বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে সে এসে তাকেই প্রপোজ করছে? হাফসা, তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীকে ধোকা দিয়ে? ভুল করেই হোক, হাফসা তো সত্যিই ভালোবেসেছে আশিককে। এখন সে মেয়েটাকে কী জবাব দিবে? এই টুইস্ট একদমই হজম হচ্ছে না তার।
–“মৌন, কিছু তো বলো। আমি তোমার জবাবের অপেক্ষা করছি।”
®লাবিবা ওয়াহিদ
চলবে~~
বিঃদ্রঃ আমি জানি এ যাবৎ কালের সবচেয়ে ছোটো পর্ব এটাই। প্লিইইজ রাগ করবেন না, আমি এর বেশি লিখতে পারিনি। এখন আবার ঘুমিয়ে যেতে হবে, আগামীকাল পরীক্ষা আছে😭
আপনাদের আজ সুন্দর মন্তব্য করা লাগবে না, শুধু বেশি বেশি রেসপন্স করুন। পেজের রিচ ডাউন হয়ে যাচ্ছে।🥺
Share On:
TAGS: বেলতুলি, লাবিবা ওয়াহিদ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বেলতুলি গল্পের লিংক
-
বেলতুলি পর্ব ১৩
-
বেলতুলি পর্ব ১৮
-
বেলতুলি পর্ব ৭
-
বেলতুলি পর্ব ২
-
বেলতুলি পর্ব ১৬
-
বেলতুলি পর্ব ১০
-
বেলতুলি পর্ব ১
-
বেলতুলি পর্ব ৫
-
বেলতুলি পর্ব ১৭