বেলতুলি – [১৪]
লাবিবা ওয়াহিদ
[অন্যত্র কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
আচমকা একদিন মশিউর সাহেবের নামে চিঠি আসল। নিবিড়ের র্যাঙ্ক বেড়েছে। এখন সে ‘লেফটেন্যান্ট কমান্ডার’ পদে। এ নিয়ে মশিউর সাহেব পুরো এলাকা জুড়ে মিষ্টি বিতরণ করেছেন, জুম্মার দিনে দুই মসজিদে জিলাপি বিলিয়েছেন। তিনি প্রতি র্যাঙ্কেই এই কাজ করেন। ছেলে-মেয়ের যেকোনো উন্নতিতেই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি খুশি তিনিই হন। যাকে তাকে বলছেন,
–“বাঘের বাচ্চা আমার। কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সামনে মাথা নোয়াবে না।”
কতজনে তো বলে বসে, এসব সমুদ্রের সামরিক হবার কোনো মানে আছে? মাঝজাহাজে কী হবে তা তো কেউই বলতে পারবে না। মশিউর সাহেবের বাবা মন এতে কিছু নরম হলেও তিনি লোকের কথাকে পরোয়া করেন না। তিনি সবসময় এটা বলেই নিজেকে বুঝ দেন যে হায়াতের মালিক আল্লাহ। তিনি তার বান্দার শেষদিন লিখে রেখেছেন, সে যেভাবেই হোক। ছেলে যেদিন ট্রেনিং এর জন্য বেরিয়েছিল সেদিনই স্ত্রীকে বলে দিয়েছেন,
–“ভেঙে পড়বে না। যত যাই হোক, ছেলে যেন সুরক্ষিত ফিরে সেই দোয়া করে যাবে। মা-বাবার দোয়ার ওপরে কিছু নেই।”
জাবির মিষ্টি আর জিলাপি দুটোই হাতে পেয়েছে। আজ তার মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল, ভাগ্যিস আর কষ্ট করে পকেটের টাকা খরচ করতে হয়নি। নিবিড়ের র্যাঙ্ক, সে আর বড়ো কি? জাবিরের চুলটা ছেঁড়ারও ক্ষমতা নেই ওই বিচ্ছুর। ভাগ্যিস জাবির যার তার সাথে লাগে না, নয়তো নিবিড়কে কত আগেই গুম করে দিত। সরকারি লোক বলে অনেক বিধি-নিষেধ আছে, তার নেতাও বলে দিয়েছে নিবিড়ের পরিবার থেকে দূরে থাকতে। তাই আর কিই বা করার, বসে বসে মিষ্টি খেয়ে যাও যতক্ষণ অবধি না তার লেজে পা না পড়ে।
জাবির জিলাপি চিবুতে চিবুতে বলল,
–“তোর ভাবীর কথা ক, ওই হারামজাদা নেভির আলাপ হুনতে বহি নাই।”
রিপনের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসতে চাইল,
–“কিন্তু ভাই, আপনে তো তাগোই মিষ্টি খাইতেছেন।”
কিন্তু সে মুখে বলল,
–“ভাবীর খবর ভালো, একদিন ছাদে দেখা গ্যাছে। কাইল, আইজ ঘরতে বাইর অয় নাই।”
–“এই মাইয়া বাইর অয় না ক্যা? এরে দেখার লাগি আমার বুক কেমন ধড়পর ধড়পর(ধড়ফড়) করে তা কি এই জানে?”
–“এইল্লিগাই তো কই প্রস্তাব লইয়্যা যান।”
–“কিয়ের প্রস্তাব? আগে ধুমাইয়া প্রেম না করলে মন ভরে নাকি? বিয়া-শাদির পরে যদি বোর অইয়া যাই? দরকার নাই, আগে প্রেম, পরে সব।”
জাবির থেমে আবার বলল,
–“এহন এডি বাদ্দে আর চল প্রতিবেশি পাড়ায়। কোন হাউ* আমাগো নেতারে হুমকি দিছে দেইখ্যা আহি।”
মৌনোর আজ কেন যেন পায়েশ রাঁধতে ইচ্ছে করেছে। এজন্য সে পায়েশ রেঁধে বসতেই শুনল নিবিড়ের প্রমোশন হয়েছে, সে নিয়ে এলাকায় মিষ্টি বিলানো হচ্ছে। সবার আগে মৌনোদের বাড়িতে মিষ্টি পৌঁছালেও জুনায়েদ ছুটে বেরিয়ে গেছে। মৌনো তাকে পিছুডাক দেওয়ায় বিরক্ত হয়েছিল বটে।
–“বাসায় মিষ্টি আসার পরেও কোথায় যাচ্ছিস?”
–“গলিতে যাই। সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিষ্টিমুখ করার মজা তুমি বুঝবে না আপা।”
জুনায়েদ চলে যেতেই মৌনো তার পায়েশ নিয়ে বসেছে। রিমঝিম এখনো হাসপাতালে, নয়তো তাকে দিয়ে ফিডব্যাক নেওয়া যেত। শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও আজ রিমঝিমের ডিউটি। প্রায়ই তার শুক্রবারে ছুটি থাকে না। এতে অবশ্য রিমঝিমকে বিরক্ত হতে দেখা যায় না। ডাক্তারি সে বেশ সততার সাথে করে, একদম হৃদয় থেকে। হৃদয় থেকে আসা কাজের প্রতি ভালোবাসাই মূলত একদিন সফলতা দেয়।
রিমঝিমের বিয়ে আগামী মাসের বারো তারিখ। হাতে সময় প্রায় পনেরো দিন। এর মাঝেই প্রায় মাসখানেক পেরিয়ে গেছে। পাত্রের বাড়ি থেকে নাকি কোনো জটিলতা আছে, সেজন্যই তারা সময় নিয়েছে। এতে রিয়াজ সাহেব আপত্তি করেননি, পাত্রের সৎসুযোগ হোক। ততদিন অবধি রিমঝিম তার কাছে থাকলে ক্ষতি কী? বরং মেয়ে আরো সময় পেল তাদের মাঝে থাকার। মেয়েকে তো বিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না, ইচ্ছে তো করে আজীবন নিজের কাছে রেখে দিতে। কিন্তু মেয়ের বাবা-মা এই পর্যায়ে এসে অসহায়। মেয়েরা আরেকজনের আমানত হয়, তাদের সেই শক্তি নেই মেয়েকে নিজের বুকে আজীবন বন্দী করে রাখার। যদি পৃথিবীর নিয়ম ভিন্ন হতো তবে রিয়াজ সাহেব মেয়েদের তার কাছেই রেখে দিতেন। তিন-তিনজন মেয়ের বাবা হওয়া কী মুখের বিষয়? কাঁধভর্তি দায়িত্ব, মেয়েদের আগলে রাখার।
নিবিড় নেই এক মাসই হয়ে গেছে। এর মাঝে তার পদোন্নতির খবর আসাটা অবশ্যই সুখের। কামরুলের মুখে শুনেছে নিবিড় নাকি খুলনা থেকে চট্টগ্রামে পোস্টিং হয়েছে এবার। নতুন পদের কিসব নাকি ট্রেনিং আছে, সেসবেই ব্যস্ত– এমনটাই নিবিড় চিঠিতে উল্লেখ করেছে। সে এখনো জাহাজে যায়নি, তা শুনে মৌনো কিছুটা শান্ত হয়। যাক, নিবিড় তবে ঘাঁটিতেই আছে। ভাগ্যিস মৌনো আগেই এই পায়েশটা করেছে, সুখবরের সাথে মিষ্টান্ন উপভোগ করা অন্যরকম অনুভূতি। মিষ্টি খাবারের মধ্যে কেন যেন মৌনোর পায়েশ পছন্দের। মৌনো সামনের সিঙ্গেল সোফাটার দিকে তাকাল। নিবিড় প্রতিবার তাদের বাড়ি আসলে ওই সোফাতেই বসে। তার গা ঘেঁষাঘেঁষি পছন্দ নয়। নিবিড় ইশতিয়াক সবসময়ই ভিন্ন। তার চলন-ধরণ, চিন্তা-চেতনা যার তার সাথে মিলে না। তাই সম্ভবত লোকটা একরোখা, জেদী, নাকে রাগ সুড়সুড় করে।
মৌনো ভাবছে সে এতদিন তো খেয়াল করেনি নিবিড় কোথায় এসে বসে, কোথায় এসে দাঁড়ায়। কিন্তু এক মাস যাবৎ সে এত খুটিয়ে খুটিয়ে পরখ করছে কেন? এইযে এই সোফাতে, রিয়াজ সাহেব বসেন, এশা উলটে বসে, জুনায়েদও টিভিতে খেলা দেখতে বসলে মাঝেমধ্যে বসে। নিবিড় বসেছে এটা তো আর অস্বাভাবিক নয়। সে এত বিশেষও নয় যে নিবিড়ের পূঙ্খানুপুঙ্খ সবকিছুই তার মনে রাখতে হবে। কিন্তু সে এটা ঠিকই টের পায়, নিবিড়ের অনুপস্থিতিতে সে তাকে নিয়ে ভাবছে। খুব সম্ভবত শূন্যতাও অনুভব করছে। এইযে, তার এত সাধের পায়েশ চামচ দিয়ে মুখে পুরছে অথচ স্বাদ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। নিবিড়ের চলে যাওয়া তো স্বাভাবিক ছিল, তাহলে মৌনোর মানতে সমস্যা কোথায়?
বিকেল নাগাদ রত্নার বাড়ি থেকে পায়েশ আসল। রত্না নাকি নিজে রেঁধেছে, তার হবু স্বামীর পদোন্নতির সুখবরে। আজকাল মৌনোর প্রতি তার বেশ দরদ উথলে পড়ছে। মৌনোর সাথে বেশি বেশি মেলামেশা, মৌনোর বাড়ি আসা, আবার মৌনোকে তাদের বাড়ি ডাকা, শপিং এ নিয়ে যাওয়া.. সবকিছুই মৌনো মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে। রত্না দুই ধাপ হাঁটলে বাকি দশটা কথা বলবে নিবিড়কে নিয়ে, নিবিড়ের পরিবারকে নিয়ে। তার হবু শাশুড়ি তার কত যত্ন নেয়, নিবিড়কে সে চিঠি পাঠায়, এমনকি তাদের ফোনে আলাপও হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ মৌনো কখনোই এসব প্রসঙ্গ শুনতে চায় না, রত্নাই যেন রসিয়ে রসিয়ে শোনায়। মৌনো রত্নার শো-অফের বদভ্যেস জানে। কিন্তু কেন যেন মাঝেমধ্যে রত্নাকে ঈর্ষান্বিতও দেখা যায়। শো-অফ করলে তো সবার সম্মুখে করে, তাহলে এবার শুধু মৌনোর সামনেই কেন?
ব্যাপারটা তাদের পাড়ার জ্যোতিও লক্ষ্য করে, যে আপাতত বেলতুলির মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র। সে কঠিন মানুষের পাশাপাশি ভীষণ বিচক্ষণ। মৌনোর প্রতি রত্নার এই অসম্ভব আহ্লাদ বেয়ে পড়া তার সুবিধার লাগে না। তাই তো মৌনোকে গলিতে পেতেই ডেকে নিয়েছিল। সাবধান করে বলেছিল,
–“রত্নার থেকে সাবধানে থেকো। মেয়েটা কিন্তু অত সুবিধের নয়। কখন, কোন চিপাগলিতে ফাঁসিয়ে দিবে তার ঠিক নেই। নিবিড় ভাইয়ের আংটি হাতে জড়ানোর পর থেকেই ভাব বেশি বেড়ে গেছে।”
মৌনো সাবধানে থাকবে বলে কেটে পড়েছিল। জ্যোতি একবার শুরু করলে রত্নার গোষ্ঠী উদ্ধার করে দিবে। তাই তো তার সাথে সহজে কেউ লাগতে যায় না।
এশা পায়েশ দেখেই নাক কুঁচকালো। সে রত্নাকে একদমই দেখতে পারে না। একবার রাস্তার মধ্যে বলা নেই কওয়া নেই তার চুল ধরে টান দিয়েছিল, মারবে মারবে ভাব। সে কী যন্ত্রণা হয়েছিল সেদিন। এমন জঘন্য আচরণ কখনো তার বোনেরাও করেনি। সেই থেকে এশার শত্রুর একজন এই রত্না। সে এটা ভেবে পায় না এই শত্রুকে নিবিড় কী করে বিয়ে করবে? নিবিড়ের শান্তির জীবন তো একজন উনুনে তুলে দিবে।
এশা মৌনোকে বলল,
–“আপু, পায়েশটুকু দাও না।”
–“কী করবি?”
এশা চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
–“মাঠে কিছু কুকুর শুয়ে থাকে, ওদের দিয়ে আসি। ওদেরও তো মানুষের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হয়, তাই না?”
মৌনো মুখ চেপে হাসল, এশা মাঝেমধ্যে ভালো কথাই বলে ফেলে। রিমঝিম সবেই রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। এশার কথা কানে আসতেই সে ধমকে উঠল। সাথে সাথেই দুই বোন নিশ্চুপ। এশা তাও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের একটা চেষ্টা করল,
–“মৌ আপু তো আগেই পায়েশ রেঁধেছে বড়ো আপু। এত পায়েশ কী করে খাব? খাবার অপচয় হবে না?”
–“সবাই কী তোর মতো যে অপচয় করবে? এসব পচা কথা কোত্থেকে শিখেছিস? ভালো হবি না?”
বোনের শাসানো শেষ হলে এশা বিরস মনে ঘরের ভেতর চলে গেল। মৌনো বুঝল রিমঝিমের মেজাজ ঠিক নেই। এর মাঝেই রিমঝিমের মোবাইলটা বেজে উঠল। কায়সারের কল। রিমঝিম ধরল না। বাসায় ফেরার আগেই তাদের কথা হয়েছে, সবসময় কথা বলার ওপর থাকতে হবে এমন কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। মানুষের নিজের বাঁচার, প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার, বিশ্রামের সময় দরকার হয়। আজ হাসপাতালে প্রচুর চাপ গেছে। আপাতত সে বেশ ক্লান্ত, বিছানায় গা এলিয়ে দেয়া দরকার।
–“প্রতিবারের মতো এবারও আপনার পদোন্নতিতে আঙ্কেল মিষ্টি বিলাচ্ছে, বলছেন?”
পুরোদিনের টাস্ক শেষে পানির বোতলে চুমুক দিয়েছে নিবিড়। তার একজন জুনিয়র আছে, নাম পালক। ওর সাথেই মোটামুটি তার সখ্যতা। গম্ভীর মুখমন্ডলে কোনোরূপ ভাবান্তর দেখা গেল না। মুখজুড়ে উচ্ছ্বাসও দেখা যাচ্ছে না। বোতলের মুখ লাগিয়ে দিয়ে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল,
–“হুঁ, এটা অবিশ্বাসের কিছু নেই।”
–“আঙ্কেল সত্যিই আপনাদের ভালোবাসে। আমার আব্বা বেঁচে থাকলে বোধ হয় তিনিও এমন করত।”
পালক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরপর নিজেই আবার স্বাভাবিক গলায় বলল,
–“থাক, সমস্যা নেই। পদোন্নতি হলে এবার তো বিয়েই করে ফেলব।”
বলেই হো হো করে হেসে উঠল। নিবিড় ভ্রু কুঁচকে বলল,
–“প্রেমিকা?”
–“হুঁ, তাকে ছাড়া আর কাকে? আমাকে চিটার ভাবছেন নাকি ভাই? হাহা, এমন নই আমি। যাকে কথা দিয়েছি তাকেই বিয়ে করব।”
পালক থেমে আবার বলল,
–“আপনার কী খবর স্যার? বিয়ে-টিয়ে কবে করছেন?”
–“গোল এচিভ করে নিই। তোমাদের মতো ছেলে-পেলেদের মতো এত বিয়ের শখ হয়নি কখনো।”
–“কেন? প্রেমিকা নেই আপনার?”
নিবিড় শক্ত চোখে তাকাল। পালক সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে শুধরে নিয়ে মিনমিন করে বলল,
–“তাই তো, আপনার যা রাগ। চেহারা থাকলে কি হবে, মেয়েরা এমনিতেও রাগী মানুষ দেখতে পারে না। খুব সম্ভবত আপনি প্রেম-টেম কীভাবে করতে হয় তাও জানেন না। কী প্রয়োজন কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করার?”
নিবিড় কাঠ কাঠ গলায় বলল,
–“তোমার কী ভালো হয় না নিজের কাজে ফোকাস দেয়া? আমার লাভ-লাইফ নিয়ে তোমার এত মাথা ব্যথা কেন? রিডিকিউলাস!”
পালক থমকে যায়, বুঝল নিবিড় রেগে যাচ্ছে। আমতা আমতা করে বলল,
–“সরি স্যার, আর হবে না।”
পালক পরিস্থিতিতে লাগাম টানতে বলল,
–“এখন তো আপনি ফ্রি স্যার, চাইলেই পরিবারে কল দিয়ে খোঁজ নিতে পারেন। হয়তো ভালো লাগবে।”
কিন্তু নিবিড় কল দিল না। সে এখানে আসার পর থেকে একবারও কল দেয়নি। ওই মাঝেমধ্যে বাবাকে শুধু চিঠি লিখেছে। সে মায়ের কাণ্ডে ভীষণ বিরক্ত। তাই একপ্রকার রাগ করেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। মা রত্নাকে গিয়ে আংটি পরিয়েছে তো পরিয়েছেই, কী দরকার ছিল আবার তার নাম্বার দিয়ে দেওয়ার? এই মেয়ের যখন খুশি কল মেসেজ দিয়ে ভরে রাখে। এজন্য নিবিড় প্রায়ই মোবাইল বন্ধ করে রাখে। নিবিড় তো ভাবছে আবার শুধু সুযোগ পাক বেলতুলি যাওয়ার। এবার আর মায়ের মুখের দিকে তাকাবে না। সোজা নিজেই রত্নার বাড়ি গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়ে আসবে। এসব নিবিড়ের কাছে কঠিন কিছু না, সে বরাবরই লাগামহীন। একমাত্র মায়ের খাতিরে লাগাম টেনে ধরেছিল। তবে এখন তা সাময়িক। কিন্তু সেই অবধি অপেক্ষা করা দুষ্কর।মানুষের সহ্যসীমা থাকে, তা ইতিমধ্যেই অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।
নিবিড় কল দিল কামরুলকে। কামরুল তখন বাড়ির বাইরে ময়লা ফেলতে গেছে। মোবাইলে বড়ো ভাইয়ের নাম্বার দেখে তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। কামরুল কল ধরেই বলল,
–“হুকুম করেন বড়ো ভাই।”
–“একটা কাজ করতে পারবি?”
–“অবশ্যই! আপনে বইলাই দ্যাখেন না।”
–“রত্নার মোবাইল ডোবায় ফেলার ব্যবস্থা কর, আমি পরে মোবাইল আনিয়ে দিব। মেয়েটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।”
কামরুল বোকা বনে গেল। সে মেয়ে মানুষের মোবাইলের ধার অবধি পৌঁছাবে কেমন করে?
–“কিন্তু ভাই..”
–“এর জন্য বখশিশ পাবি কামরুল।”
কামরুল মুহূর্তেই গলে গেল। আবার চিন্তিত গলায় বলল,
–“যদি আবার নতুন মোবাইল পাইয়া আপনেরে বিরক্ত করে?”
–“আমি অন্তত একটা দিনের জন্য শান্তিতে থাকতে চাই, কামরুল।”
দুইদিন বাদে দুটো খবর এলো। এক, রত্নার মোবাইল চুরি গেছে আর দুই, কায়সার জেলে। রিয়াজ সাহেবের কাছে এমনই খবর এসেছে। রিমঝিমের হবু স্বামী অর্থাৎ কায়সারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। এখন সে থানায়, পুলিশের হেফাজতে। রিয়াজ সাহেবের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, তার প্রেশার লো হচ্ছে।
®লাবিবা ওয়াহিদ
চলবে—
[যারা গল্পটি পড়ছেন তারা সাড়া দিবেন যেন অন্যান্য পাঠকদের ফিডে পর্বটি পৌঁছায়। অগ্রীম কৃতজ্ঞতা।]
বিঃদ্রঃ রিচেক পরে দিচ্ছি। আগামী পর্ব আসবে বুধবার। আপনাদের গল্পটি কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন, আমি কিন্তু অপেক্ষা করব।
Share On:
TAGS: বেলতুলি, লাবিবা ওয়াহিদ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বেলতুলি গল্পের লিংক
-
বেলতুলি পর্ব ৩
-
বেলতুলি পর্ব ৭
-
বেলতুলি পর্ব ১০
-
বেলতুলি পর্ব ৫
-
বেলতুলি পর্ব ২
-
বেলতুলি পর্ব ৬
-
বেলতুলি পর্ব ১৭
-
বেলতুলি পর্ব ১৩
-
বেলতুলি পর্ব ১১