নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_৯ এর প্রথম অংশ।
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌
এই পর্বের শেষ অংশ কাল সকালেই দিয়ে দিব ইনশাল্লাহ।
নীলা কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল এমন কথা শুনে। মনের ভেতর এক অদ্ভুত অনুভূতি হল। কিন্তু এই অনুভূতির নাম জানা নেই তার। এমন না যে তার এই কথা শুনে ভালো লাগছে। কিন্তু হ্যাঁ ,কোন দিক দিয়েই খারাপ লাগছে না। আগের নীলা হলে হয়তো এতক্ষণে কান্নায় ভেঙে পড়তো এই কথা শুনে। কিন্তু এখন তার এতটাই খারাপ লাগছে যতটা একজন অপরিচিত মানুষের খারাপ খবর শুনেও লাগে। কিন্তু এর বেশি তার খারাপ লাগছে না।
ইরিন আক্তার যতই ছেলের ওপর রাগ করে থাকুক না কেন ছেলের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তার জা রাও তাকে এক দিক দিয়ে সামলাচ্ছে তো আরেক দিক দিয়ে নিজেদের চোখের পানি ঝড়াচ্ছে। যত যাই হোক ইরফান বাড়ির বড় ছেলে ছিল। একটু আগেও যে বাড়িতে হাসি তামাশার শব্দ ছিল এখন সেই বাড়িতে কান্নার শব্দ। আরশি কান্না শব্দ শুনে নিজের রুম থেকে বের হয়ে এলো। হল রুমের এমন অবস্থা দেখে সে কিছুটা অবাক হলো। কিছু না বলে ওপর তারা থেকে নিচে নেমে এলো।
নিলয় মির্জা বলল__
ভাই এখন কান্নাকাটি করে তো লাভ নেই আমাদের আগে হসপিটালে গিয়ে দেখতে হবে ইরফান এখন কেমন আছে।
আরশি কিছুই বুঝতে পারলো না।সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করল_
ইরফানের কি হয়েছে?
নিলয় মির্জা বলল_
এইমাত্র হসপিটাল থেকে কল এসেছিল।ইরফানের নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।
আরশি অবাক হয়ে গেল। ইরফান যখন বাসা থেকে বের হয় তখন তার ঠোঁটে আরশি রহস্যময় হাসি দেখেছিল। আর আরশি খুব ভালো করেই যানে যে ইরফান যেভাবেই হোক নীলাকে প্যারিস যাওয়া থেকে আটকাবে। তাই আরশির বুঝতে সময় লাগলো না যে এইসব ইরফানের করা কারসাজি।
নীলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরশির রিয়েকশন দেখছিল।সে ভেবেছিল আরশি হয়তো কান্না করবে কিন্তু আরশি কে কোনো প্রতিক্রিয়া করতে না দেখে নীলার খটকা লাগলো। তারপর সেই রাতে ইরফান তাকে প্যারিস যাওয়ার জন্য বারবার নিষেধ করছিল। আর ইরফান এবং আরশি তারাও প্যারিস ছিল। তারপর নীলা নিজের বাবার ঘরে যেই কাঙ্খিত জিনিস পেয়েছিল সেই জিনিস সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে তাকে প্যারিস যে করে হোক যেতেই হবে। সেখানে গেলেই সকল রহস্য ভেদ করতে পারবে সে। তাই নীলা তার বুদ্ধির মাধ্যমে বুঝতে পারল এখানে কিছু একটা খটকা আছে। হঠাৎ ইরফানের এক্সিডেন্ট তার ঠিক হজম হচ্ছে না।আর এইবার সে কোনো ছলচাতুরি তে পা দিবে না। নিজেকে তার আরো শক্ত রাখতে হবে।
এমন সময় আরশি নিজের হিডেন ট্যালেন্ট দেখাতে শুরু করল। অর্থাৎ নাটক করতে শুরু করল। চোখে পানি না থাকা সত্ত্বেও নিজের কন্ঠ এমন করলো যেন সে এখনই কেঁদে দিবে। তারপর বলতে শুরু করল __
আমাদের এখানে আর বসে থাকা ঠিক হবে না। ওদের এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে। ইরফান যে সেখানে একা।
তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে বলল_
দেখছিস তোকে সেই দিনই প্যারিস যাওয়ার জন্য না করছিল আর আজে তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল। এত বাধা বিপত্তি আসার পরেও কি তুই প্যারিস যাবি? তাই আর দেরি না করে চল হসপিটালে যাই।
সবাই অবাক হয়ে গেল
কারণ এখন যদি নীলা হসপিটালে যায় তাহলে তার এয়ারপোর্টে আসতে দেরী হয়ে যাবে। আরে এয়ারপোর্ট আসতে দেরি হলে তার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। কারণ হসপিটালে রোড বাম দিকে আর এয়ারপোর্টে রোড ডান দিকে। তাই এখন যদি নীলা হসপিটালে যাই তখন তার এয়ারপোর্টের রাস্তা উল্টা হয়ে যাবে। তখনই নীলা আরশি কে বলল__
আমি যদি এখন হসপিটালে যাই তাহলে আমার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে তাই আমি যেতে পারব না।
তার এই কথা শুনে আরশির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।নীলা নাকি হাসপাতালে যাবে না।যেখানে তার প্রাণপ্রিয় ইরফান ভাই ভর্তি। এটা আরশির হজম হতে সময় লাগলো। কিন্তু উপস্থিত বাকিদের কোন হেলদোল দেখা গেল না।
ইমরান মির্জা বললেন_ তাহলে এক কাজ করি ,নিলয় আর লায়লা সাথে আবির এবং ইবাদ কে নিয়ে নীলা কে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দে। তারপর তোরা সবাই হাসপাতালে আয়। এবং আমি বাকিদের নিয়ে এখনই হাসপাতালে চলে যাচ্ছি। সবাই সম্মতি জানালো। এমন সময় আরশি আবার নিলাকে বাধা দেওয়ার জন্য বলল
তোর মনে কি এতটুকু মনুষত্ব নেই? বাড়ির বড় ছেলে হাসপাতালে ভর্তি আর তুই কিনা প্যারিস যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস? ছিঃ নীলা ছিঃ নীলা।
নীলার এইবার রাগ উঠে গেলে আরশির কথায়। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ঠিক না তাই সে নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে কন্ঠে গাম্ভীর্য বলল_
আমি কি ডাক্তার নাকি আমি হসপিটালে গেলে ইরফান ভাইয়া তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে? হসপিটালে গিয়ে কেবল তাকে দেখতে পারব এবং ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে পারব। এগুলো তো আমি প্যারিস গিয়ে ভিডিও কলে করতে পারি। তাই খামোখা হসপিটালে গিয়ে নিজের প্যারিস যাওয়া বন্ধ করতে পারবো না আমি।
আরশি স্তব্ধ হয়ে গেল। ছি নীলার কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু বলতে পারল না। বরং কপট রাগ দেখিয়ে বড় বড় কদমে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। এবং নিজে নিজে বলতে লাগলো_
কোন কপালে যে ওই ইরফান শালারে বিয়ে করেছি আল্লাহ খোদা জানে। মানুষের বুদ্ধি মাথাতে না থাকলে অন্তত হাঁটুতে থাকে। এই নির্লজ্জ অসভ্য জানোয়ারের তাও নেই।নীলা কে প্যারিস যাওয়া থেকে আটকানোর জন্য নাকি তিনি নিজের এক্সিডেন্ট করালেন। আহ্ কি বুদ্ধিমান ব্যক্তিটা এসেছে আমার। দুনিয়াতে এমন বোকাচ থাক এই অসভ্য শয়তান বেডারে গালি দিয়া নিজের পাপ করে লাভ নাই। এতই যেহেতু নীলাকে প্যারিস যাওয়া থেকে আটকানোর ইচ্ছা ছিল তাহলে প্রয়োজনে নীলার এক্সিডেন্ট করাতো। তা না করে বলদের মতো নিজের এক্সিডেন্ট করিয়েছে। যা মন চায় তাই করুক আমি কারোর সেবা করতে পারবো না।
ইমরান মির্জা নিজের স্ত্রী,ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী কে নিয়ে নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে রয়ে গেল নীলা, তার মা বাবা, ইবাদ, আবির এবং ইকরা ও তার মা বাবা।
ইকরা কেবল অবাক নয়নে নীলাকে এতক্ষণ যাবত দেখছিল। তার এই নীলাকে চিনতে অনেকটা কষ্ট হচ্ছে। আগের নীলা থাকলে এতক্ষণ নিজের ইরফান ভাইয়ের এক্সিডেন্টের কথা শুনে পাগলের মত কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যেত কয়েকবার। কিন্তু এই নীলা কেমন পাথরের মতোন দাঁড়িয়ে আছে।যেন তার ভেতর কোনো অনুভূতি নেই।অথচ কতটাই না পাগলামি করেছিল কোনো এক কালে।ইকরা কেবল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
মিহাল নিজের কেবিনে বসে পেটে হাত চেপে ইচ্ছে মতন হাসছে। হাসতে হাসতে তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে পড়ল। তার ডেস্কের উপর ফোন লাউড স্পীকের ছিল। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি তাকে একটি খবর শুনিয়েছে এবং সেই খবর শুনেই সে এভাবে হাসছে। সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি তার এমন হাসি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে গেল। কারণ তার জানামতে সে যার জন্য কাজ করে সেই ব্যক্তিটি হৃদয়হীন। তাকে কেউই হাসতে দেখেনি। তার ঠোটে কেবল থাকতো রহস্যময় হাসি। আজ সেই ব্যক্তি গগন ফাটানো হাসি দিচ্ছে যাক অবিশ্বাস্য।
মিহাল হাসতে হাসতে বললো _
কাহিনী কি? নিজের স্ত্রী যাতে প্যারিস না আসতে পারে তার জন্য নিজের এক্সিডেন্ট করিয়েছে? এমন বলদ মানুষ এই পৃথিবীতে এখনো আছে? অথচ এই বলদ মানুষ মিহাল খানের মতো হার্টলেস মানুষকে ঠকিয়ে কত সুন্দর পালিয়ে গেল। আমি এই বলদের ওপর হাসবো নাকি এই বলদ দ্বারা আমি প্রতারণিত হয়েছি তাই নিজের উপর হাসবো ? যাই হোক ওর হাত পা ভেঙ্গে গেলে সেটির ব্যান্ডেজ লাগানোসহ একটি ছবি চাই আমার। সেটি আমি বড় ফ্রেম আকারে বের করবো। এবং বাংলাদেশে এখন আর কোন কাজ নেই প্যারিস চলে এসো।
ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি কেবল জবাবে ইয়েস স্যার বলছ ফোন কেটে দিল।মিহাল নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে আবার সেই আগের ভয়ানক রূপ ধারণ করল। তারপর বাঁকা হেসে বলল__
ওহে নীলাঞ্জনা জানি না কি করে এই সত্য মিথ্যা লড়াইয়ে তুমি যদি এলে। কিন্তু যেহেতু তুমি এসেছ তাই তোমাকেও লড়াইয়ের অংশগ্রহণ করতেই হবে। তবেই তো খেলা জমবে। তোমার মাধ্যমেই তোমার স্বামীর সর্বনাশ করবো আমি। যেমন সে আমার সর্বনাশ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সব থেকে বেশি কষ্ট লাগছে আমার মুনভির কথা ভেবে। ডক্টর মুনভির এতটা খারাপ দিন এসেছে যে সে কিনা এখন বিবাহিত মহিলার সাথে প্রেমের নাটক করবে।
কথাগুলো বলে মিহাল আবার হাসিতে ফিরে পড়লো। আর যেন আজ হাসি থামছে না।
ইরফান যে খুব গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে এমন কিছুই নয়। কেবল তার কপাল ফেটে গিয়েছে যার ফলে কপালে ব্যান্ডেজ লাগাতে হয়েছে। হাত পা ছুলে যাওয়ার কারণে সেখানে ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে।সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে কখন এই খুশির খবর শুনতে পারবে যে নীলা প্যারিসে যায়নি।
এমন সময় তার হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল মির্জা পরিবারের সকলে। ইরফান তাদেরকে দেখতে পেরে নিজের মুখের হাসি লুকানোর চেষ্টা করল এবং সে খুব অসুস্থ এমন ভাব নিতে লাগলো।আরশি দরজার এক কোনায় দাঁড়িয়ে থেকে তার ভাব ভঙ্গিমা দেখছে। কারণ একটু পরই ইরফানের এমন ভাব থাকবে না যখন সে শুনবে নীলা এখানে না এসে প্যারিস যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে চলে গেছে।
ইরিন আক্তার ছেলের পাশে এসে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ইরফান আশে পাশে তাকিয়ে নীলাকে খুঁজতে লাগলো।আরশি তা বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে হাসলো এবং বলল_
নীলা প্যারিসে যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে গিয়েছে তাই হাসপাতালে আসেনি। এতক্ষণে হয়তো তারা সবাই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গিয়েছে। আর ঘন্টাখানেক পর তার ফ্লাইট।
ইরফান সঙ্গে সঙ্গে শোয়া থেকে উঠে বসলো। সবার দৃষ্টি ইরফানের দিকে। আরশি ইরফানের এমন চেহারা দেখে বাঁকা হাসলো। অন্যকে আটকাতে গিয়ে এখন নিজেই হাসপাতালে আটকে গেছে ইরফান। ইরফান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা চাচারা মিলে তাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলেন এবং বললেন তাকে রেস্ট নিতে। ইরফান শুয়ে থেকে যেই না কিছু বলতে যাবে ওমনি তার চাচী তার মুখ টুপ করে চুইংগাম ভরে দিল।আসলে ইরফানের অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই যখন সে অসুস্থ থাকবে তখন সে শুয়ে শুয়ে চুইংগাম চাবায়।তাই তার চাচী হাসপাতালে আসার আগে চুইংগাম কিনে নিয়ে এসেছেন। এখন একের পর এক করে চারটা চুইংগাম ভোরে দিলেন ইরফানের মুখে। ইরফান বেচারা এখন কথা বলতে পারছে না।আরশির না চাইতেও ইরফানের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। নিজের হাসি চেপে রাখতে না পেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল সে। ইরফান তো একদম স্তব্ধ হয়ে গেল ।তার বিশ্বাস হচ্ছে না নীলা তাকে দেখতে না এসে প্যারিস যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে চলে গেছে। এখন যদি সে নীলাকে আটকানোর জন্য এয়ারপোর্টে উদ্দেশ্যে রওনা ও দেয় তার পৌঁছাতে পৌঁছাতে নিলার ফ্লাইট ছেড়ে দিবে। সে এখন চুইংগাম চালাতে চালাতে হতাশা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
চলবে???
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৬(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৭
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৮+বোনাস
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)