নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_৮
বাঈজী মহলের মূল ফটকের দুপাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে মশাল। প্রবল মারুতের ঝাপটায় দপদপ শব্দে কেঁপে উঠছে আগুন। সেই কম্পিত আলো মুখ রাঙিয়ে দিচ্ছে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরীদের। তাদের একঘেয়ে জীবন মাহফিলের শোরগোল, নূপুরের নিক্বণ আর বিলেতি মদের নেশা এখান থেকে বহু দূরে। যেন জমিদারবাড়ির মাঝেই বিচরণ করছে আরেকটি ছোট্ট অলস জগৎ।
নবাব তাইমুর গজনবী দৃঢ় পায়ে মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সামান্য কাশি দিলেন। তার কাশির শব্দে তন্দ্রাচ্ছন্ন প্রহরী চমকে উঠল।
জমিদারের বড় পুত্রকে এই অসময়ে, এমন স্থানে দেখে কর্তব্যরত প্রহরীদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। তড়িঘড়ি করে হাতের বর্শা সোজা করে তারা কুর্নিশ করল।
- হুজুর! আপনি? এত রাতে? কোনো হুকুম? কোনো বেয়াদবি হয়ে থাকলে মাফ করবেন হুজুর!
তাইমুর প্রহরীর বিস্ময় মাখানো প্রশ্নের তোয়াক্কা করলেন না বিন্দুমাত্রও। তার গভীর দৃষ্টি তখন বাঈজী মহলের অন্দরমুখী। কণ্ঠে গাম্ভীর্য বজায় রেখে তিনি আদেশ করলেন,
- ভেতরে যাও। হেমাঙ্গিনীর নিকট সংবাদ দাও। আমি তার সাক্ষাৎপ্রার্থী। তাকে বলো, আমি ফটকের বাইরে শুধুমাত্র তার জন্য অপেক্ষা করছি।
প্রহরী আমতা আমতা করে বলল,
- জি হুজুর। কিন্তু বিলকিস সাহেবা যদি…
তাইমুর প্রহরীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। ভয়ে প্রহরীর বাকি কথাগুলো গলার কাছে আটকে রইল।
বাঈজী মহলে গভীর রাতে প্রহরীদের প্রবেশ নিষেধ। নবাব সিকান্দার গজনবীর কড়া হুকুম। কিন্তু জমিদারপুত্রর আদেশ কিভাবে অমান্য করবে তারা? কাজেই প্রহরী আর দ্বিরুক্তি না করে দ্রুতপায়ে ভেতরে চলে গেল।
হেমাঙ্গিনীর তখন সুসজ্জিত কক্ষের পালঙ্কে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। চাপা কান্নার আবেগে তার দেহ কাঁপছে থরথর করে। নরম রেশমি চাদরটি আজ তার আঁখির নোনা জলে ভিজে সিক্ত। এই গল্পের লেখিকার পেইজ ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ তে প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় নতুন পর্ব পোস্ট করা হয়।
হেমাঙ্গিনীর সকল দুশ্চিন্তার মূলে সেই একটিই প্রশ্ন বিদ্যমান। তার স্বর্গতা মায়ের গোপন নৃত্যবিন্যাস, যা এতদিন শুধুমাত্র বিলকিস বানুর নিকট সুরক্ষিত ছিল, তা দিল্লি থেকে আগত অতিথি বাঈজী সিমরান জানল কী করে?
সিমরানের নাচের প্রতিটি মুদ্রা, প্রতিটি ভঙ্গিমা ছিল অত্যন্ত নিখুঁত। যেন ওই শিল্পের আদি গুরু সে নিজে! হেমাঙ্গিনী কিছুতেই এই রহস্য মেলাতে পারছিল না। তবে কি বিলকিস বানু তাকে ধোঁকা দিল? এই প্রশ্নটিও যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হল না। বিলকিস বানু তো সেরকম মানুষ নয়! তবুও তাকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আজ। মনে মনে এমন সিদ্ধান্তেই উপনীত হল হেমাঙ্গিনী।
তার হতাশার আরোও একটি কারণ রয়েছে। জমিদারপুত্র, নবাব তাইমুর গজনবী। আজ মাহফিলে তাইমুরের হাস্যোজ্জ্বল মুখটি বার বার মনে পড়ছে তার। সিমরানের জাদুকরী নাচের শেষে তাইমুরের উন্মত্ত করতালি আর প্রশংসার দৃষ্টি হেমাঙ্গিনীর হৃদয়ে ছুরির মতো বিঁধেছে।
তার মন কু ডেকে উঠছে। তাইমুরের মনযোগ কি তবে এবার সিমরানের দিকে ঘুরে যাবে? অন্দরমহলে ঢোকার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে? হেমাঙ্গিনীর মাঝে চরম আশঙ্কার সৃষ্টি হল। হয়তো তাইমুরের নিকট তার সম্মান ফিকে হয়ে আসবে। মায়ের মৃত্যুরহস্য আর উদঘাটনের করা হবে না। শুধুমাত্র বাঈজী হিসেবে নয় একজন সন্তান হিসেবেও নিজেকে ব্যর্থ মনে হতে লাগল তার। অস্ফুটে বলতে লাগল বার বার,
- আমি হেরে গেছি, মা! আমি হেরে গেছি।
ঠিক তখনই দরজার ওপার থেকে ভেসে এল পরিচারিকা শেফালীর কণ্ঠস্বর।
- বাঈজী সাহেবা, আপনি কি জেগে আছেন?
হেমাঙ্গিনী দ্রুত চোখ মুছল। গলা পরিষ্কার করে জবাব দিল।
- জেগে আছি। বল শেফালী।
- জমিদারপুত্র নবাব তাইমুর গজনবী আপনার জন্য বাঈজী মহলের বাইরে অপেক্ষা করছেন। অনুগ্রহপূর্বক আপনি এক্ষুনি আসুন।
কথাটা শুনে হেমাঙ্গিনীর কান্না মুহূর্তের মাঝে থেমে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসল শোয়া থেকে। এই মধ্যরাতে, যখন তাইমুরের মনোযোগ হারানোর ভয় তাকে গ্রাস করছিল গ্রহণের ন্যায়, ঠিক তখনই তাইমুরের এমন আকস্মিক আগমন তার মাঝে বিস্ময় ছড়িয়ে দিল।
হেমাঙ্গিনীর মনে উঁকি দিল এক নতুন জিজ্ঞাসা।
তবে কি সিমরান জমিদারপুত্রের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে? তাইমুর সিমরানের রূপ উপেক্ষা করছেন? তার নিজের প্রতি তাইমুরের আবেগ এখনও অটুট?
মায়ের রহস্য উদঘাটনের জন্য এই একটি সুযোগই হয়তো তার শেষ ভরসা।
এলোমেলো চুল আর বিধ্বস্ত সাজপোশাক নিয়ে হেমাঙ্গিনী দ্রুত মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল।তার দুচোখে তখনো শ্রাবণের ধারা বহমান।
হেমাঙ্গিনী চোখের জল মুছল না। তার মনে হলো, আজ আর তাইমুরের সামনে লুকানোর কিছু নেই। তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র, তার মায়ের গোপন নৃত্যকলা আজ অন্য কেউ প্রদর্শন করে হাততালি কুড়িয়েছে। সে এখন রিক্ত। একেবারে নিঃস্ব। এই গল্পের লেখিকার পেইজ ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ তে প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় নতুন পর্ব পোস্ট করা হয়।
হেমাঙ্গিনীকে দেখামাত্র তাইমুর এক পা এগিয়ে এলেন। কিন্তু কুঞ্চিত ভ্রুঁ সমেত থমকে দাঁড়ালেন তার হৃদয়ের রাণীর মুখপানে চেয়ে।
আলো আঁধারের খেলায় হেমাঙ্গিনীর অশ্রুসজল চাহনি দেখে তাইমুরের মনে হলো, পৃথিবীর সমস্ত হীরা জহরত এক পাল্লায় আর হেমাঙ্গিনীর নরম গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা অশ্রু অন্য পাল্লায় রাখলে, অশ্রুর ওজনই বেশি হবে।
সে হেমাঙ্গিনী অতি কাছে এসে দাঁড়াল। ব্যাকুল স্বরে শুধালো,
- আপনি কাঁদছেন কেন, বাঈজী সাহেবা?
হেমাঙ্গিনী নিজের ঈর্ষাকে চাদরে ঢেকে কম্পিত স্বরে বলল,
- হুজুর, এত রাতে আপনি বাঈজী মহলের বাহিরে কি করছেন? অন্দরমহল ছেড়ে আমার মতো নিভে যাওয়া প্রদীপের কাছে কেন এসেছেন? এ যে বড়ই অশোভনীয়।
তাইমুর অবাক হয়ে শুধালেন,
- এসব কি বলছেন আপনি? কেন বলছেন?
- আজ মাহফিলে নতুন বাঈজীর ওই রূপ আর গুণের কাছে আমি হেরে গেছি, হুজুর। তার জ্যোতির নিকট আমার অবস্থান ধুলিকণার সমানও নয়! আমাকে মাহফিলের অতিথিরা আর কোনোদিনও গ্রহণ করবেন না।
তাইমুর লক্ষ্য করলেন হেমাঙ্গিনীর কণ্ঠে অভিমানের চেয়েও অধিক জাগ্রত ভয়। হারানোর ভয়। তিনি বুঝলেন হেমাঙ্গিনী সিমরানের আগমনে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ শঙ্কিত।
তাইমুর শান্ত গলায় বললেন,
- নক্ষত্র আর প্রদীপের তফাৎ বুঝতে ভুল করবেন না, বাঈজী সাহেবা। প্রদীপের তেল ফুরোলে দীপ্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু নক্ষত্র? চন্দ্রের অনুপস্থিতিতেও সে জ্বলতে থাকে। আপনি নক্ষত্র কোনো প্রদীপ নয়।
হেমাঙ্গিনী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সে আর্তনাদ করে বলল,
- আপনি আমায় মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, হুজুর! আজ মাহফিলে আমি নিজের দ্যুতি হারিয়েছি। সকলে বাঈজী সিমরানের জয়গান গাইছে। আপনিও তো হাততালি দিলেন! তার ওই জাদুকরী নাচের পর আপনি কি আর আমার মত সামান্য বাঈজী, হেমাঙ্গিনীকে মনে রাখবেন? আমার মাঝে তো আর কিছু অবশিষ্ট নেই আপনার মনকে ধরে রাখবার মতো!
তাইমুর হেমাঙ্গিনীর মনের ঝড় কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন। যদিও ঝড়ের আসল কারণ তার অজানা। হেমাঙ্গিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করবার তীব্র বাসনা জাগল তার মনে।
কিন্তু তিনি তার নিঃশ্বাস অব্দি হেমাঙ্গিনীর দেহে পড়তে দিলেন না! তার শরীরে বহমান রক্ত তাকে সংযম শিখিয়েছে। হেমাঙ্গিনীর প্রতি তার সম্মান সীমা লঙ্ঘন করতে দিল না কোনোক্রমেই। তাইমুর হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করলেন। গাঢ় স্বরে বললেন,
- আদেশ করছি, আমার চোখের দিকে তাকান।
হেমাঙ্গিনী অশ্রভেজা চোখে তাইমুরের আদেশ মান্য করল।
- বাঈজী সিমরান আজ যা দেখিয়েছেন তা কেবলই একটি নিখুঁত পরিবেশনা। তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তার পারদর্শীতাকে আমি অবজ্ঞা করতে পারি না। তবে আমার নিকট আপনিই শ্রেষ্ঠ, হেমাঙ্গিনী।
আপনি সেই স্নিগ্ধ জোনাকি, যার আলো অন্ধকারে পথ দেখায়। যার আগমনে আত্মা জুড়িয়ে যায়।আমি সেই অনুভূতির কাঙাল।
হেমাঙ্গিনী বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল তাইমুরের মুখপানে। তার ভারী কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ তার ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে প্রলেপ লাগিয়ে দিচ্ছিল।
তাইমুর আরও একধাপ এগিয়ে এলেন। তবে এই আগানোর মাঝেও বজায় রাখলেন নিরাপদ দূরত্ব।
মৃদুস্বরে বললেন,
- আজ মাহফিলে আমি সিমরানের দিকে তাকিয়েছিলাম সত্য, কিন্তু আমার মনঃশ্চক্ষু সারাক্ষণ আপনাকে খুঁজেছে। সত্যি বলছি!
আপনার স্থান কেউ নিতে পারবে না। আপনি অনুগ্রহ করে কান্না বন্ধ করুন।
হেমাঙ্গিনীর কান্নার বেগ কিছুটা কমে এলো। কেননা তাইমুরের চোখে সে কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেখে নি। বরং এক গভীর প্রত্যয়ের খোঁজ মিলেছে। স্বস্তি ফিরে পেতেই হেমাঙ্গিনী চোখের জল মুছল।
তাইমুর এবার বিদায় নেওয়ার ভঙ্গি করলেন। যাওয়ার আগে সামান্য হেসে বললেন,
- মনে রাখবেন, বাঈজী সাহেবা! এই গজনবী মাহফিল সকল শিল্পীর জন্য উন্মুক্ত। কাজেই ভবিষ্যতে আরোও অনেক বাঈজী আসতে পারেন। কিন্তু নবাব তাইমুর গজনবীর হৃদয়ে কেবলমাত্র একজন বাইজী-ই বাস করেন এবং সর্বদা করবেন। সেই একজনের নাম ‘হেমাঙ্গিনী’।
তাইমুর আর অপেক্ষা করলেন না। তার গালের কোণে এক চিলতে সুমধুর হাসি নিয়ে দ্রুত পায়ে অন্ধকারের মাঝে মিলিয়ে গেলেন।
হেমাঙ্গিনী তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল উক্ত স্থানে। তার গাল বেয়ে পুনরায় এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তবে এই জল কষ্টের নয় বরং অনুরাগের।
জমিদারপুত্র তাইমুর তার অন্তরে যত্ন করে রোপন করছে প্রেমের বীজ। আর তার ব্যক্তিত্ব প্রতিনিয়ত সেই বীজের পরিচর্যা করছে।
হেমাঙ্গিনী টের পেল। তার লড়াই শুরু হবার আগেই এই মানুষটাকে দুমড়েমুচড়ে ভালোবেসে ফেলবে সে। নিজেকে আটকাতে পারবে না মোটেও! হেমাঙ্গিনীর অব্যক্ত কথাগুলো যেন প্রকৃতিও শুনতে পেল।
সহসা ভেসে আসা উত্তরের তীব্র বাতাস, গাছের পাতার মৃদু ছন্দময় কম্পন আর মধ্যগগনের চাঁদ যেন এই অব্যক্ত কথাগুলোর সহিত সহমত পোষণ করল নির্দিধায়! এই গল্পের লেখিকার পেইজ ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ তে প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় নতুন পর্ব পোস্ট করা হয়।
চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে হেমাঙ্গিনী সেই এক ফোটা জল মুছে ফেলল। মনে মনে বলল,
‘মা, তোমার মৃত্যু রহস্য আমি ভেদ করবই। সাথে সিমরান কোথা থেকে এই নাচ শিখল তাও আমাকে জানতে হবে। আর এই কাজে আমার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে স্বয়ং জমিদারপুত্র।’
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে হেমাঙ্গিনী অস্ফুটে বলে উঠল,
- যার প্রতি আমার মাঝে প্রেম জাগছে। অনিচ্ছায়!
★ বলুন পাঠক, হেমাঙ্গিনীর মতন জমিদারপুত্র নবাব তাইমুর গজনবী-র প্রতি কি আপনার প্রেম জাগ্রত হচ্ছে না?
৪৫০ কমেন্ট এবং ৩০০০ লাইক সম্পন্ন হলে আগামীকাল বিকাল ৫ টায় ৯ম পর্ব আসবে 🙏
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১২
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৫
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৮
-
নিষিদ্ধ রংমহল গল্পের লিংক
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১১