নিষিদ্ধ_চাহনা
পর্ব_১৬
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫
দূর আকাশে কালো মেঘ জমেছে।চারিদিকে পরিবেশ ঠান্ডা।ক্ষনে ক্ষনে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,,ঝরছে মুষলধারে বৃষ্টি।সেই ভোর রাত থেকেই হুট করে বৃষ্টি শুরু কোনো আগমনী বার্তা ছাড়াই।ঘড়ির সময় অনুযায়ী এখন সকাল নয়টা তবে বাইরের পরিবেশ দেখলে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ছয়টা।আজ আকাশের যেমন মন খারাপ কালো মেঘ এ ছেয়ে পুরো আকাশ ঠিক তেমনই পিহুর মন ও আজ বেশ খারাপ।তার মনেও আকাশের মতো কালো মেঘ।তবে আকাশের মতো বর্ষন হচ্ছে না তার চোখ দিয়ে।
পিহু এক দৃষ্টে বিছানার পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।জানালা দিয়ে মেন রাস্তা দেখা যায়।পিহু জানালার পাশে পা গুটিয়ে হাতে ফিজিক্স বইটা নিয়ে বাইরে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই।বাইরে রাস্তার পাশে কয়েকটা শিশু বৃষ্টি ভিজছে।আর হাসছে,,পিহুর ও খুব ভিজতে ইচ্ছা করছে তবুও নিজের ইচ্ছা কে দমিয়ে রেখে বাচ্চাদের পানি ছুড়াছুড়ি দেখতে থাকলো।পড়া বাদ দিয়ে দুনিয়ার সব কিছু দেখতেই পিহুর ভালো লাগে,পড়তেই বসলেই এই দুনিয়ার যত সংগীত শিল্পী,, চিত্র শিল্পী,,সাহিত্য প্রেমি জেগে উঠে।
পিহু বুজে না এই পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেছিলো।নির্ঘাত সে বেচে নেই নইতো পিহু নিজ দায়িত্বে তাকে খুন করে বুড়িগঙ্গা নদীর পচা পানিতে ফেলে দিতো।তার উপর পিহু আবার কোন আক্কেলে সাইন্স নিয়ে পড়তে গেলো,, বিয়ে করবে সংসার করবে কয়েকশ বাচ্চা কাচ্চা হবে।এসব পড়াশোনা তার জন্য না।কথাটা ভাবা মাত্রই পিহুর চোখ চিকচিক করে উঠলো বইটা খাটের উপর রেখে দ্রুত নেমে দাড়ালো। তারপর হাটা বইটা আবার বিছানা থেকে নিয়ে পড়ার টেবিল এর দিকে এগিয়ে গেলো।বইটা টেবিল এ রেখে পিহু বিড়বিড় করে বললো…
-“দেখ বই তোর জাইগা আমার টেবিল এ তুই আমার পিছু ছেড়ে দে,,আমার কিউট একখান মোবাইল এর কথাও ভুলে যাচ্ছি তোর জন্য।
কথাটা বলে পিহু হাসে আবার বললো..
-“বই তুই আবার রাগ করিস না আমি বৃষ্টিতে ভিজে এসে তোরে আমার কম্বলের মাঝে নিবো,,তুই রাগ করে আবার পরিক্ষায় ফেল করিয়ে দিলে নাবুর বাচ্চা আমারে রিক্সা ওলা দাদুর সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
পিহুর একা একা বক বক করতে ভালোই লাগছিলো হটাৎ বিছানার বালিশের কোনায় অবহেলায় পড়ে থাকা মোবাইল ফোন্টা বেজে উঠে,,পিহু বিরক্ত হয় তার এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কে কল দিলো,,পিহু বিছানার দিকে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে ফিজিক্স বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো..
-“আমার মনে তোর সতিন কল দেছে,,দেখলি যেই তোর লগে কথা বলছি ওমনি কল দেছে,,আর আমার সতিন ওই পেট মুটা ফিজিক্সের মাহবুব স্যার খালি আমারেই পিটাই।বেডার টাকলা মাথাই ঠাডা পড়ুক।
কল বাজতে বাজতে কেটে গেলো।পিহু দ্রুত পা চালিয়ে বিছানার পাশ থেকে ফোন নিয়ে ফোনের স্ক্রীন এ চাপ দিতেই ভেসে এলো জেরিনের আবার কল।পিহু হামি দিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জেরিন বলে ওঠে..
-“কিরে কই ছিলি কল ধরলি না কেন..?
পিহু আবার মুখে হাত দিয়ে হামি তুলে সিরিয়াস কন্ঠে বললো-“পড়ছিলাম..!
-“তুই পড়ছিলি..?
-“কেনো কোনো সন্দেহ..?
-“না না এই বৃষ্টির মাঝে পিহুরানী ঘুমানো বাদ দিয়ে পড়ছিলো হজম হচ্ছে না কথাটা।
পিহু বিরক্তিতে চোখ কুচকালো-“কি জন্য ফোন করেছিস..?
-“আরে আজ স্যার পড়াবেন না..?
-“কোন স্যার..?
-“আরে মাহবুব স্যার..!
কথাটা শুনতে পিহুর মনে শান্তির স্রোত বয়ে গেলো তবে পিহু প্রকাশ না করে পুনরায় জিগালো..
-“কেনো..?
জেরিন একটু মন খারাপ এর সুরে বলে উঠলো..-“আর বলিস না স্যার এর বাবা অসুস্থ গ্রামে যাচ্ছে তারা।
-“কি বলিস সত্যি..?
-“হুম রে..!
-“তাহলে তো পরিক্ষা ও নিবে না..?
-“নাহ কেনো বলতো..?
-“আসলে…
পিহু কিছু বলার আগেই জোরে বিকট আওয়াজে একটা বাজ পড়ে।পিহু ছিটকে মোবাইল ফেলে দিয়ে বিছানায় সুয়ে বালিশে মুখ চেপে ধরে।বিশাল ভয় পাই সে।বৃষ্টি ভালোই লাগে তবে আকাশ ডাকা বাজ পড়া বিদ্যুত চমকানো তার কাছে ভিতীকর।খুব ভয় পাই সে।
আতিয়া বেগম রান্না করছেন।প্রতিদিন খুব সকালে রান্না বসালেও আজ ছেলেমেয়েরা বৃষ্টির কারনে বাড়িতে থাকবে।সাদি আজ হসপিটালে যাবে না।পিহুর কলেজ ছুটি একটু আগে কোচিং স্যার ও বলেছেন ফোন দিয়ে ছুটি।ইলিয়াস চৌধুরী সকালে চা খেয়ে ঘুমাই আর দেরি করে নাস্তা করে।তাই আজ আতিয়া বেগম দেরি করে রান্না ঘরে ঢুকেছে।হটাৎ এমন বিকট শব্দে দূরে কোথাও বজ্রপাত হয়েছে বুজতে পারলেন যে কিছু হোক আর না হোক তার পিহু ভয় পেয়েছে।তবে এখন রান্না রেখে যাবে কি করে তাই আর গেলো না।মন দিলো রান্নায়।
যত বেলা বাড়ছে তত আকাশের রঙ কালো হচ্ছে মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ,,সাথে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে চলেছে।এখনকার পানি গায়ে পড়লে জ্বর আশা সাভাবিক।পুরো রুম অন্ধকার করে উদাম গায়ে কোমর অব্দি কম্বল টেনে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে সাদি।সময় মতো উঠে কফি খেয়ে যখন দেখলো বৃষ্টি থামার নামগন্ধ নেই তখন সে আবার সুয়ে পড়েছে,,কাল রাতে সেও ঘুমাই নি,,সাদির রুমের চারিদিক অন্ধকার পিহুর মতে পাতাল পুরি। সাদির ঘুম পাতলা একটু শব্দেই ঘুম ভেঙে যায় তার।
বেশ কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়ে সাদি,,বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে আড়ামোড়া খেয়ে জানালার দিকে এগিয়ে যায় পর্দা সরিয়ে দেওয়ার পর বুঝতে পারে বাইরে এখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,,বৃষ্টির সুক্ষ কনা গুলা বারংবার জানালার সচ্ছ কাচ এ এসে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে গড়িয়ে।সাদি বেশ কিছুক্ষন লক্ষ করলো সেগুলো।তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
পিহু বালিশ ছেড়ে উঠলো তার কানে এখোনো বজ্রপাতের সেই বিকট আওয়াজ টা বাড়ি খাচ্ছে।যদিও সাদে গিয়ে বৃষ্টি তে ভেজার শখ ছিলো তা এই বজ্রপাত এসে মেরে দিয়ে গেলো,,পিহুর খুব কান্না পেলো হটাৎ মনে হলো ফোনের কথা পিহু এপাশ ওপাশ করে নিজের ফোনটা দরজার কোনায় পেলো,ছুটে গিয়ে তুলে নিলো ফোনটা,,ভালো করে পরখ করে দেখলো না কিছু হয়নি,,জেরিনের কল তখনই কেটে গিয়েছিলো নিশ্চয় সেও ভয় পেয়েছে এটা ভেবে পিহুর মনে একটু খুশি উকি মারে।
হটাৎ পিহুর মনটা বিষিয়ে যায়।সকাল থেকে সে একবারো আনিতা বেগম কে মামুনি বলে ডাকেনি,, তার খুব নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে যখন তার মা তার বার বার ডাকার জন্য বিরক্ত হয়ে বলতো..আমি কি হারিয়ে গেছি নাকি যে এতো ডাকিস।পিহুর সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে খুব করে। কই তার মা তো সত্যিই হারিয়ে গেছে,,পিহু উপরে উপরে নিজেরে আড়াল রাখার জন্য চঞ্চল হওয়ার অভিনয় করে যদিও কেও পিহু এতে সফল,,সবাই পিহুকে চঞ্চল মনে করে,,তবে পিহু বড্ড একা,,কেও নেই তার,,কালকে তো মামনি আর বাবাই বলে ডাকাটাও হারালো,পিহু বিড়বিড় করে বলে উঠলো..,
-“আসলেই তো অন্যর বাবা মাকে এসব বলে ডাকবো কেন আমার নিজের নেই মানে আমার সব শেষ,, নিজের থাকলে আগলে রাখো না থাকলো দূরে ভাগো,,পিহুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
ঠিক তখনই দরজার কাছ থেকে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসে…
-“কি বিড়বিড় করছিস আর চোখে পানি কেন…?
পিহু ভড়কে যায় পাশাপাশি কেপে উঠে মৃদু। মুখ উচু করে দরজার পানে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠে…
-“আ..আপনি এখানে..?
চলবে….
-(আজ এটুকুই। পর্বটা বেশ ছোট তবে আলহামদুলিল্লাহ এখন জ্বর কমেছে।কিন্তু আবহাওয়া বদলের জন্য ঠান্ডা পিছু ছাড়ে নি।গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেকো।আনাকে ভুলে যেয়ো না)-
Share On:
TAGS: নিষিদ্ধ চাহনা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১১
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ২৪
-
চার বছরের চুক্তির মা গল্পের লিংক
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১১
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৭
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৫
-
নিষিদ্ধ চাহনা গল্পের লিংক
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১০