তাজমহল #দ্বিতীয়_খন্ড
পর্ব_২৩
প্রিমাফারনাজচৌধুরী
তাজনাকে একটা হলুদ রঙের ফ্রক পরিয়ে দিল শাইনা। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে ঠোঁট টেনে টেনে কাঁদছে। তৌসিফ বলল,”এইরে বুড়ি কান্না শুরু করে দিয়েছে কেন?”
শাওন বলল,”বাপের সামনে ঢঙ দেখানোর জন্য। মেয়ে কাঁদবে বাপ সেটা দেখে বলবে আমার মেয়েকে কাঁদালি কোন শালা?”
শারমিলা, শাবরিন, তৌসিফ উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে ফেললো। শারমিলা বলল,”বাপের কোল পেলে শান্ত হয়ে যাবে।”
তৌসিফ বলল,”আরও বেশি কাঁদলে তখন তো সমস্যা।”
শাইনা তার কপালে একটা চুমু দিয়ে তৌসিফের কোলে দিয়ে ফেললো। তৌসিফ বেরিয়ে গেল তাকে নিয়ে।
“সাইড সাইড সাইড! বিগ মাদার যাচ্ছেন।”
আফসার সাহেব বললেন,”নানুমণি আব্বার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। কাঁদছে কেন?”
তৌসিফ বলল,”আপনার নানুমণি এত মানুষের হৈচৈ দেখে ভয় পেয়ে গেছে।”
তার কান্না থামছে না কিছুতেই তাই শাহিদা বেগম তৌসিফের কোল থেকে নাতনিকে নিয়ে ফেলে বললেন,
“দাঁড়াও বাবা। ওর বোধহয় খিদে পেয়েছে। এভাবে নিয়ে যেওনা।”
তিনি নাতনিকে না নিয়ে চলে এলেন। শাইনাকে চুপিসারে বললেন,”ওকে একটু খাইয়ে দে। ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু খাওয়াতে হয়।”
শাইনা চেয়েছিল খাওয়াতে কিন্তু ঘর ভর্তি মানুষ দেখে আর পারেনি। তাজনা খেয়েদেয়ে শান্ত হয়ে আবারও চাচার কোলে চলে গেল। তৌসিফ তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
আচমকা বাড়িতে হাজির হওয়ায় ছেলেকে দেখে রওশনআরা, তাজউদ্দীন সিদ্দিকী সবাই বেশ খুশি হয়েছেন। তবে অসন্তুষ্ট এক জায়গায়। এভাবে কাউকে না জানিয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা।
বউয়ের কথায় এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে তো বেশ সমস্যা। তাজদার বুঝিয়ে বলল ব্যাপারটা জটিল। না এসে সে সমাধান করতে পারছিল না। তাই চলে আসতে হয়েছে। শাইনাকে নিয়ে আরও অনেক কথাবার্তা চললো সেখানে। রওশনআরা ছেলের বউ নিয়ে মোটামুটি সব ধরণের অভিযোগ তুলে ধরলেন ছেলের সামনে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বললেন,
"তুমি পছন্দ করে বিয়ে করেছ। এখন ওকে কিছু বলার দরকার হলে তুমি বলবে। আমরা সেখানে কি বলবো? তোমার হয়ে কথা বলতে গেলেও তোমার শ্বশুরবাড়ির শত্রু হয়ে যাব। তোমার মা কি না কি বলেছে তা নিয়ে তোমার বউ কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে। তোমার ভালোর কথা বললেও সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমি তোমার আম্মুকে বলেছি কোনো ব্যাপারে কথা না বলতে। যাওয়ার আগে তোমার আম্মুর সাথে ওর কথা বলিয়ে দিও। ওর শ্বাশুড়ি বৌমা নাকি কথাবার্তা বলেনা অনেকদিন।"
তাজদার চুপচাপ শুনলো পুরোটা। তাসনুভা চা এনেছে। তাজদার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানতে চাইলো,"আম্মু কখন ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে? আমার চেয়ে আম্মু তো ওকে বেশি চেনে জানে।"
শ্বাশুড়ি হওয়ার পর সম্পর্ক কি বদলে যায়? তার আশ্চর্য লাগছে। শত্রু তো সে ছিল। সে ওদেরকে পছন্দ করতো না। আম্মু করতো। আম্মু বরং শাইনাকে প্রটেক্ট করতো। তাহলে? তাহলে ছেলের বউ হওয়ার অপছন্দের তালিকায় কেন গেল? এত মনোমালিন্য কেন বাড়তে লাগলো? রওশনআরা তাকে খুলে বললো যা যা হয়েছে। তিনি নিজে যা বলেছেন তাও আড়াল করলেন না। কারণ তাজদার পরে শ্বাশুড়ির মুখে জানার পর মাকে ভুল বুঝবে। তাজদার সবটা শোনার পর হাত দিয়ে মুখ মুছলো। বলল,
"নুভা তখন কোথায় ছিলে?"
তাসনুভা ছটফটিয়ে উঠে বলল,"আমি তখন ছিলাম না। যদি থাকতাম তাহলে আম্মুকে আটকাতাম। আমি জানি এই সময়টা খুব সেনসেটিভ। আম্মুর ওই কথাটা বলা উচিত হয়নি। আম্মুও ভাবতে পারেনি শাইনা অতটা রিয়েক্ট করবে।"
মনে মনে যদিও সে ভয় পাচ্ছে শাইনা তার ব্যাপারে ভাইয়াকে কিছু বলেছে কিনা। পরে সে নিশ্চিন্ত হলো এটা ভেবে প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সে শাইনাকে এমন কিছু বলেনি যার জন্য শাইনা রিয়েক্ট করতে পারে। বরঞ্চ শাইনার আচার-আচরণ বিরক্ত লাগলে সে নিজেকে সংযত রেখেছে। এমনকি এই কয়েক সপ্তানের সে না শাইনার সামনে গিয়েছে। না কোনো কথা বলেছে। তার মনে হয়েছে শাইনা এখন এমন একটা স্টেজে আছে। তাকে এখন ভালো কিছু পরামর্শ দিলেই তার বিরক্ত লাগতে পারে। ভাইয়া যেহেতু দেশে নেই। কিছু দেখতে পাচ্ছে না সেহেতু কিছু ভুলভাল শুনেই অহেতুক টেনশন করবে এইসব নিয়ে। ভাইয়াকে পীড়া দিয়ে লাভ নেই।
তাজদার মাথা হেঁট করে বসে রইলো। পুরো ব্যাপারটা ঘেঁটে গেছে। প্রথমত ঝামেলার উৎপত্তি তার দিক থেকে শুরু হয়েছে। নইলে আম্মু কিছু বলবে এমন সিচুয়েশন তৈরি হতো না। প্রশয়টা তার দিক থেকে পেয়েছে। রওশনআরা চুপ করে রইলেন। ছেলের সামনে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হবে এটা তিনি কখনো ভাবেননি। আজকের পর থেকে ওর বউকে নিয়ে কোনো কথাই বলবেন না তিনি।
রায়হান তাজদারকে এত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে বলল," তুই এত চাপ নিস না। শাইনাকে বুঝিয়ে বললে ও বুঝতে পারবে। আম্মু তুমিও এমন বেফাঁস কথাবার্তা বলবে না। তোমাদের ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। বড়লোক ছোটোলোক যাইহোক ও পছন্দ করে বিয়ে করেছে। একটা মেয়েও হয়ে গেছে। এখন এইসব বলে কি হবে? নাতনির মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত কথা বলবে। তোমরা পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেছ এখন ওকে এসে সমাধান করতে হচ্ছে।"
রওশনআরা ছেলের মাথায় হাত রাখলেন। ছেলেকে যতটা সম্ভব সান্ত্বনা দিলেন। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বললেন,
"বাদ দাও। সংসারে এমন অনেক কিছু হবে। তোমার মায়ের ওকে কিছু বলার অধিকার আছে।"
অধিকার থাকলেই সব বলা যায় না। অবশ্য এটা বলতে গিয়ে সে নিজেই আটকে গেল। শাইনার মুখে এই সম্পর্ক ভাঙার কথা উঠার আগ অব্দি তার মনে হয়নি, তার মাথায় আসেনি একটা কথা থেকে অনেক ভয়াবহ ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। কথার উপরেই একটা সম্পর্ক বেঁচে থাকে। এই দূর্বল, নড়বড়ে সম্পর্কের সুতোটা শক্ত হওয়ার আগেই ছিঁড়ে যাচ্ছে শুধু কথার জন্য। এখন সবটা কিভাবে ঠিক করবে সে? মাথার রগ দপদপ করছে।
তাজদার মা বাবা ভাই বোনের সাথে কথা বলায় তখনো ব্যস্ত ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে হৈহৈ করে তৌসিফ ঢুকলো বাবুকে নিয়ে। ফিসফিস করে হুঁশিয়ারি দিল,
“আনিস ভাই আর শাওনরা আসছে। ফালতু বকা বন্ধ করো সবাই।”
বাপ জেঠাকে একচোট বকে দিল সে। তাজদার দাঁড়িয়ে পড়লো। এতক্ষণের গুমোট পরিবেশ মুহূর্তেই পাল্টে গেল বাবুর আগমনে। সে হাত বাড়িয়ে দিল। তৌসিফ তার কোলে তুলে দিতে দিতে তিতলি আর তাসনুভাকে বলল,
“ফুল নিয়ে আয়।”
ঝিমলি ফুল নিয়ে এল। তাজদারের কোলে বাবুকে দিতেই উপর থেকে ফুল ঝরে পড়তে লাগলো বাবা মেয়ের মাথার উপর। তাজদারের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। নিজের অংশ। নিজের অস্তিত্ব। নিজের রক্ত। কপালে প্রথম পিতৃস্পর্শ রাখলো সে। তারপর কপালে গালে অবিরত ছোট্ট ছোট্ট চুুমুতে ভরিয়ে দিল। নিজের মাথা দিয়ে মেয়ের মুখের উপর ছাদ হয়ে দাঁড়ালো যাতে মুখে ফুলের পাপড়ি না পড়ে।
আনিস তিতলিকে উদ্দেশ্য করে বলল,”হয়েছে আর ফুল ছিটানোর দরকার নেই। বাবুর চোখে পড়বে।”
তাসনুভা হাতের মুঠোয় থাকা ফুলের পাপড়িগুলো তার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে চলে গেল। সবকিছুতে উনার নাক গলাতে হয়। আনিস চুল থেকে পাপড়ি ঝেরে দুলাভাইদের পাশে গিয়ে বসলো। শাইনার বড়ো দুলাভাই বলল,
“বেয়াইন হুট করে রেগে গেল কেন?”
আনিস শোনেনি এমন ভাব ধরে বলল,”ওর আমাদের বাড়িতে যাওয়া দরকার ছিল।”
“হুম, কেকটা কাটুক।”
আনিস আর শাইনার দুলাভাইদের সাথে তাজদারের মোলাকাত আসার সাথে সাথে হয়েছে।
কিছুক্ষণ আগে কেক আর মিষ্টি সন্দেশের পার্সেলটা রিসিভ করতে গিয়েছিল আনিস।
তাজদার বিকেলে তাকে জানিয়েছিল সে এয়ারপোর্টে নামবে কিছুক্ষণ পর। কথাটা শোনার পরে আনিস স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে ভাবতেও পারেনি তাজ তাকে সত্যি সত্যি বলছে।
তাজদার নিজেই মিষ্টি, সন্দেশ, কেক অর্ডার দিয়ে রেখেছিল। আনিসকে বলেছে রিসিভ করে নিতে। সেগুলো রিসিভ করে নিয়ে এসেছে আনিস।
রওশনআরা মধু নিয়ে এলেন ছোট্ট একটা পেয়ালায় করে। তাজদারকে বলল,”আঙুলে করে নিয়ে একটু খাইয়ে দাও।”
তাসনুভা বলল,”হাত স্যানিটাইজ করতে হবে আগে।”
তাজদার তার কথামতো হাত ধুয়ে এল। তারপর তাসনুভা তার কোলে এনে দিল বাবুকে। আঙুলের মাথায় হালকা মধু নিয়ে বাবুরঠোঁটের ফাঁকে রাখলো সে। নরম তরম ঠোঁট দিয়ে বাবার আঙুল কামড়ে ধরলো সে। তাজদার হঠাৎই হেসে ফেললো।
“আঙুল খেয়ে ফেলবেন নাকি?”
হাসছে সে। রওশন এবার একটু নিশ্চিন্ত হলেন। বুকের উপর এতক্ষণ একটা পাথরচাপা ছিল তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারা দেখে।
মেয়েকে নিয়ে কেক কাটলো তাজদার। মেয়ের হাতটা কেকের একপাশে ডুবিয়ে হাত থেকে চেটেপুটে কেক খেল। বাবু তখুনি গলগল কটে দুধসাদা বমি করে দিল বাবার বুকে। সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
“সেরেছে!”
আনিস হঠাৎই বলল,”বড়োআম্মা আম্মা ওখানে আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। তাজ আজকে দুলাভাইদের সাথে আমাদের ওখানে খাবে। রায়হান ভাই, তৌসিফ আর বড়ো আব্বারাও সবাই।”
তাসনুভা বলল,”মোটেও না। আজকে সবাই আমাদের এখানে খাবে। আমার ভাইয়া নিজের বাড়িতে আগে খাবে। তারপর শ্বশুরবাড়িতে।”
আনিস বলল,”বলে লাভ নেই। আম্মা অলরেডি আয়োজন শুরু করে দিয়েছে।”
তাসনুভা রাগে ফুঁসছিল। রায়হান বলল,”তুমি কাল তোমার রান্না খাওয়াবে সবাইকে। আজ ওদের বাড়িতে যেহেতু আয়োজন হয়ে গেছে।”
তাসনুভা রাগ করে চলে গেল সেখান থেকে।
~~
সেখানকার পুরো দৃশ্যপট ভিডিও করেছিল শাওন। ভিডিও শেষে সে শাইনার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,”দেখ এখানে ঈদ লেগে গেছে।”
শাইনা বাবুর কাপড়চোপড়, কাঁথা, কম্বল ভাঁজ করছিল। আম্মা শুকিয়ে এনে দিয়েছে। ভাঁজ করা হয়নি। ঘরটা গোছগাছ করতে হবে। এলোমেলো হয়ে আছে। তখুনি শাওনের ভিডিওটা এল। ভিডিওটা চালু করে সে কাজ করতে লাগলো।
ব্লু রঙা শার্ট পরনে তাজদার সিদ্দিকীর কোলে হলুদ ফ্রক পরা একটা ফুল জ্বলজ্বল করছে যেটাকে তাজদার সিদ্দিকী সব ভুলে পরম মমতায়, অজস্র আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। ভিডিওটা বারবার শেষ হয়ে আবার শুরু হতে লাগলো। তবুও শাইনার তৃষ্ণা মিটল না।
শাইনার নাকি একজন মায়ের? যে তার সন্তানকে পিতৃস্পর্শ পেতে দেখে সন্তুষ্ট হচ্ছিল। বুকটা ভরে যাচ্ছিল একটা অদ্ভুত অচেনা সুখে।
হয়তো!
হয়তো তাজদার সিদ্দিকী সুদূর লন্ডন থেকে এই দৃশ্যটা দেখতে পায়নি বলে মনোকষ্টে তাকে ওই কথাটা বলে ফেলেছিল।
~
তাজদার হঠাৎ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই তেমন কিছু কেনাকাটা করতে পারেনি। তবে হরেক রকমের চকলেট এনেছে। বাবু, বাবুর মা আর বাড়ির ছোটো সদস্য তিতলি, তাশফিনের জন্য অল্পসল্প কেনাকাটা করেছে।
সাথে আনিসকে দিয়ে কেক, মিষ্টি কিনে আনিয়েছে। যদিও বাবুর জন্মের পর পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিলানো হয়েছিল। অনেকে মুখ মোচড়েছিল এই বলে, মেয়েই তো হয়েছে। মিষ্টি বিলানোর কি দরকার?
কিন্তু তাজদারের কথামতো ঘরের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী মিষ্টি বিলিয়েছিল তৌসিফ আর শাওন মিলে।
শ্বশুরবাড়ির জন্য যা যা এনেছে তা ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়িতে। তিতলির গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শাইনা তার গলা শুনে ঘর থেকে বের হলো।
শারমিলা এসে বলল,”ফকিন্নিদের মতো এটা কি ওড়না পরেছিস? যা কাপড়টা পাল্টা।”
“এটার রঙই এমন। গত সপ্তাহে নামিয়েছি পরার জন্য।”
“তাও পাল্টা। রঙিন কিছু পর।”
“এটা কোনদিকে খারাপ আপা?”
“এত কথা বলিস কেন? যেটা বলছি সেটা কর।”
শাইনা আবারও ঘরে চলে গেল। আলমিরার ভাঁজ থেকে নতুন একটা কাপড় নামালো। এটা তার মামাশ্বশুর দিয়েছিল বাবু হওয়ার পরে। সেলাই করার পর একবারও সে পরেনি। বেবি পিংক, নীল আর সোনালী রঙের উপর। পুরো ড্রেসটা দারুণ সুন্দর। কটনের উপর এমব্রয়ডারি কাজ করা। সেটা পরে বের হতেই দাদীমা সরু চোখে তার দিকে তাকালো। শাইনা বলল,
“এভাবে তাকাচ্ছ কেন?”
“লাল টকটকে কিছু পরতে পারোস নাই?”
শাইনার কিছু বলতে ইচ্ছে করলো কিন্তু সে নিজেকে সংযত করলো। কারণ সে কিছু বললেই দাদীমা এমনকিছু তাকে বলবে যেটা সে সহ্য করতে পারবে না, চিৎকার দিতে ইচ্ছে করবে।
শারমিলা এসে বলল,”এটা ঠিক আছে। মুখে কিছু মাখ। মুখটা কেমন করে রেখেছিস। এত শুকনো কেন?”
“আপা বেশি কথা বলো তোমরা। বাবু কাঁদছে। নিয়ে আসো।”
বাবুর কান্নার শব্দ আরও গাঢ় হচ্ছে।
“আম্মা বাবুকে নিয়ে আসো। কাঁদছে।”
শাহিদা বেগম বললেন,”কাঁদুক। ওর বাপের কোলেই কাঁদছে।”
আনিস ভেতরে ঢুকে এল। বলল,”আম্মা শাওনকে বাজারে পাঠাচ্ছি। কিছু লাগলে বলো। ও নিয়ে আসবে। ভাবি ফ্রুটস আছে কিনা দেখো।”
সাবরিনা এসে বলল,”আপেল শেষ হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ মিষ্টি দই লাগবে। আর কিছু লাগবে না।”
শাহিদা বেগম এসে বলল,”আইসক্রিমের কথা বলবানা?”
“ওহ হ্যাঁ আইসক্রিম আছে অল্প। আরও লাগবে। ভ্যানিলা ফ্লেভারেরটা আনতে বলেন।”
শাওন এসে আনিসের হাত থেকে টাকা নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আশরাফ এসে বলল,”আম্মা আব্বা কোথায়? তাজ এসেছে। সাবরিনা?”
সাবরিনা মাথায় কাপড় তুলতে তুলতে সাড়া দিল।
“জি।”
“দাদীকেও নিয়ে আসো।”
“জি, আসছি।”
শাহিদা বেগম শ্বাশুড়ি আর পুত্রবধূকে নিয়ে বসার ঘরে গেলেন। পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সাবরিনা সালাম দিয়ে বলল,”সবাইকে চমকে দিয়েছেন ভাইয়া।”
তাজ অল্প করে হাসলো মেয়েকে সামলাতে সামলাতে।
“হ্যাঁ, কেমন আছেন?”
“আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বুড়ি কাঁদছে কেন?”
“নিশ্চয়ই কোনো অসুবিধা হচ্ছে। এত ভারী ফ্রকটা পরানোর দরকার ছিল না।”
“আচ্ছা। আমি একটা পাতলা গেঞ্জি নিয়ে আসি। শাইনা?”
“জি।”
শাইনার সাড়া বসার ঘর অব্দি চলে এল। তাজদার সিদ্দিকীর কানেও।
সাবরিনা যেতে যেতে বলল,”বাবুর জন্য একটা পাতলা গেঞ্জি দাও।”
সেই ফাঁকে শাহিদা বেগমের সাথে, আফসার সাহেবের সাথে, দাদীমার সাথে তাজদারের অনেক কথোপকথন চললো। সবাই খুব আস্তেধীরে কথা বলছিল যাতে শাইনার কান অব্দি না যায়। শেষের দিকে দাদীমা বললেন,
“আচ্ছা মিয়া যখন এসে পড়েছে তখন তার বিবিকে সে সামলে নেবে। তোমরা অত টেনশন করো না আর। কি বলো নাতজামাই?”
তাজদার মুচকি হাসলো। দাদীমা জানতে চাইলেন,”মেয়ে কার মতো হয়েছে?”
“আমার মতোই। স্বভাব নিশ্চয়ই মায়ের মতো হবে।”
“শান্ত?”
“রাগ ওঠার অব্দি সবাই শান্ত।”
দাদীমা হেসে বললেন,”মা মেয়ে দুটোই মাথা খাবে এবার।”
“দল কার ভারী হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না এখনো।”
দাদীমা হাসলেন। শাহিদা বেগম নাশতার আয়োজন করে ফেলেছেন। তাজদার মানা করে দিল। সে আর কিচ্ছু খাবে না। শুধু একমগ কফি হলেই যথেষ্ট। মাথা ধরে আছে। আনিস বলল,”তুই শাইনার সাথে দেখা করে আয়। কফি পাঠাচ্ছি আমি।”
তাজদার তার সাথে কথা বলতে বলতে মেয়েকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। শাইনা দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল। আনিসের সাথে সাথে কথা বলতে বলতে তাজদার দরজার কাছটায় তাকানোমাত্রই শাইনার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। একমুহূর্তের জন্য! অথচ মনে হলো। কি যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সে সৌজন্যেতার খাতিরে সালাম দিল।
তাজদার খুব আলতো স্বরে সালামের জবাব দিয়ে ড্রেসটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে দিয়ে বলল,
“একটা পাতলা গেঞ্জি পরিয়ে দাও। এটাতে ওর অসুবিধা হচ্ছে।”
শাইনা বাবুকে তার কোল থেকে নিয়ে নিল। আনিস বলল,”আচ্ছা তোরা কথা বল। আমি কফি পাঠাচ্ছি।”
“এখন দরকার নেই। পরে।”
আনিস রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। শাইনা ঘরে ঢুকলো। বাবু মায়ের কোল পেয়ে শান্ত হয়ে গেছে। শাইনা তাকে বিছানায় শুইয়ে একটা পাতলা টিশার্ট পরিয়ে দিয়ে নাকে নাক ঘষে আদর করলো।তাজদার সেটা দেখে ওয়াশরুমে ঢুকেছে মুখ ধুতে।
তিতলি ঘরে উঁকি দিল।
“হাই!”
শাইনা চমকে তাকালো তার দিকে। তিতলি বড়ো বড়ো কয়েকটা বক্স এনে ঘরের মেঝেতে রাখলো। তারপর তাজদারের শার্ট-প্যান্ট শাইনার কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
“আমার ভাইয়ার সাথে কথা না বললে আমিও বলিনা। হুহ! ভাইয়া গোসল করবে। এগুলো দিয়ে আসো। বাই!”
বলেই নেচে-কুঁদে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল।
শাইনা যেভাবে বসেছিল সেভাবে বসে রইলো। তাজনা হাত দুটো নেড়ে নেড়ে আবারও কাঁদছে। তাজদারের গলা ভেসে এল,”শাইনা তিতলি কাপড় এনে দিয়েছে?”
“হুম।”
সে ওয়াশরুমের দরজা খুলে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। শাইনা তার বাড়িয়ে দেয়া হাত দেখে নতুন তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে কাপড়চোপড় বাড়িয়ে দিল।
তারপর মেয়ের কাছে চলে এল। ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে মেয়েকে বুকে টেনে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তাজনা খেতে খেতে থেমে গিয়ে আবার মায়ের মুখের দিকে তাকালো। শাইনা তার কান্ড দেখে হেসে মাথায় আদর করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”ঘুমান।”
কিছুক্ষণ পর ডিমলাইটটা জ্বলে উঠলো। শাইনা চোখে মেলে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো তাজদার সিদ্দিকী তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে তাদের দিকে তাকাচ্ছে। তাজদার হঠাৎই আয়নার দিকে তাকিয়েছে মনে হতেই সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।
মা মেয়ের নড়াচড়া নেই দেখে সে দরজা বন্ধ করে একবার উঁকি দিল। বোঝা যাচ্ছে না কিছু। সে আরেকটু ভালো করে উঁকি দিল। কিন্তু মা মেয়ের নড়াচড়া পাওয়া গেল না।
সে ধীরেধীরে পাশে শুয়ে শাইনাকে ডিঙিয়ে তাজনাকে দেখার চেষ্টা করলো। চোখ বন্ধ। মায়ের বুকের উষ্ণতায় মুখ গুঁজে দুগ্ধ পান করছে নির্বিকার, নিশ্চিন্ত, অপার্থিব শান্তিতে। তাজদারের মনে হলো তার জীবনে দেখা সব সুন্দর দৃশ্যকে ছাপিয়ে গেছে এই মুহূর্তটি। এমন সুন্দর দৃশ্য সে আর কখনো দেখেনি।
~~~
শাইনা এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে থাকলেও আর চুপ থাকতে পারলো না। ওড়না টেনে সে নিজেকে আর মেয়ের মাথাটাকে ঢেকে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে হাঁ করে কি দেখছে? আজব তো!
তাজদার হাত বাড়িয়ে ওড়নাটা সরিয়ে দিল। তারপর শাইনার মাথায় ধীরেধীরে ঠোঁটের স্পর্শ রাখল। শাইনার শরীরটা অজান্তেই কেঁপে উঠল। নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে। অনেকটা ফোঁপানির মতো শ্বাস টানলো সে। ঠিক উঠে যাওয়ার সময় গালে এসে ঠোঁট চেপে দিল তাজদারের ঠোঁটজোড়া। ক্ষণিকের জন্য পৃথিবীর সব শব্দ তখন হারিয়ে গেছে বলে মনে হলো। তাজদারের ঠোঁটজোড়া, মুখটা তার গালে চেপে বসে রইলো। এতেই সব শক্তি ক্ষয়? এটাই তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়নি আর কতবার কতভাবে তুমি বুকের সাথে লেপ্টে থাকা শিশুটিকে, গালের সাথে লেগে থাকা স্পর্শটুকুকে, তাজদার সিদ্দিকীকে অস্বীকার করবে? তাজদার ফিসফিস করে জানতে চাইল,
“আমাকে দেখে তুমি খুশি হওনি?”
জবাব না দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে শোয়া থেকে উঠে গেল শাইনা। তাজদার নিঃশব্দে বিছানার কিনারায় নামল। শাইনা ঠিক দরজা খুলতেই, হঠাৎ এক ঝটকায় তাজদার তার হাত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে তাকে চারপাশ থেকে জড়িয়ে ফেললো। আর কোনোভাবেই পালানোর রাস্তা রাখলো না। পালাতে দিল না। শাইনা অবাক চোখে তার মুখের দিকে তাকালো চোখ তুলে। তাজদার একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,
“আমার সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলো। যা ফোনে বলেছিলে তা সামনাসামনি বলো। আমার দিকে তাকাও। আমি গত দুই রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি জানিনা আমি কি পেয়েছি জীবনে। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি আমি খুব বড়োকিছু হারাতে যাচ্ছি। তোমার সব অভিযোগ আমাকে খুলে বলো। কিন্তু…
শাইনা ধীরেধীরে বলল,
“কিছুক্ষণ আগেই মেসেজ এসেছে। কাবিনের টাকা নিশ্চয়ই। থ্যাংকস। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবেন।”
আবারও একটা ভুল ধারণা। তাকে কে বলেছে এই বাচ্চা মেয়েটিকে বিয়ে করতে? তাজদার তাকে ধীরেধীরে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“কাবিনের টাকা দেয়ার উদ্দেশ্য অন্য। তুমি আমার দিকে তাকাও।”
শাইনা তাকালো না। তাজদার হতাশ কণ্ঠে বলল,
“তুমি কেন কাঁদছো শাইনা?”
“আমি আপনার জন্য নিশ্চয়ই কাঁদছি না, কাঁদব না। কাঁদছি নিজের জন্য। ভবিষ্যতেও যদি কাঁদি নিজের জন্য কাঁদবো। নিজের ভাগ্যদোষে, কর্মদোষে।”
তাজদার তার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলো,
“আমার জন্য তুমি কখনোই কাঁদোনি?”
সরাসরি জবাব শাইনার।
“না।”
“আমি শুনেছি আমার এক্সিডেন্টের খবর শুনে তুমি কেঁদেছিলে।
“হ্যাঁ, স্বাভাবিক। ভেবেছিলাম আপনি..
তাজদার তাকে বাকিটা বলতে না দিয়ে বলল,
“মরে যাব?”
শাইনা অকপটে বলল,”হ্যাঁ।”
তাজদার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“এখন তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে চাও?”
“হ্যাঁ।”
তাজদার হালকা ঝুঁকে তার মুখের দিকে চেয়ে বলল,
“তখন আমি খুব বাঁচব?”
শাইনা কথাটা শুনে তার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তাজদার তার হাত ধরতে যেতেই শাইনা হাত সরিয়ে ফেলে, পিছিয়ে গিয়ে কাঁপা স্বরে ধরা গলায় বলল,
“আই হ্যাভ নো ইমোশনস ফর ইউ।”
“ওকে, No মিনস Not Ordinary, ইউ হ্যাভ এক্সট্রা অর্ডিনারি ফিলিংস ফর মি।”
“মিথ্যে।”
তাজদার জোরপূর্বক হালকা হাসার চেষ্টা করলো।
“এটাই সত্যি। তুমি আমাকে ভালো না বেসে নিজেকে বিজয়ী ভাবার এক অদ্ভুত যুদ্ধে নেমেছিলে। এখন যখন বুঝতে পারছো জিতছো না, বরং হারছো তখনই কষ্টটা তোমার গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।’
শাইনা চলে যেতে চাইলে তাজদার বলল,
“পালিয়ে পালিয়ে কতদিন থাকবে মমতাজ?”
শাইনা থেমে গিয়ে তার দিকে তাকালো।
এই লোকটা কেন এসেছে আজকে? তাকে মেরে ফেলতে? তাজদার ঠোঁটের কোণায় হালকা বিদ্রুপাত্মক হাসি টেনে বলল,
“ছোটো থেকে যাকে ঘৃণা করে এসেছ তার ঘর করতে হচ্ছে এটা তোমার কাছে একটা হার। সবচেয়ে বড়ো হার তার বাচ্চার মা হয়েছ। তারচেয়েও বড়ো হার তার জন্য তোমার মন পুড়ছে। অস্বীকার করবে?”
শাইনা চোখের জলে গাল ভিজে যাচ্ছে।
তাজদার তার গালের একপাশে আলতোভাবে নিজের হাত রাখলো। শাইনা তার চোখের দিকে তাকালো। হাতের এই স্পর্শটুকু অল্প। কিন্তু তার ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।
তাজদার তার ডান গালে আঙুল বুলিয়ে ভেজা গাল মুছে দিতে দিতে বলল,
“বাহ্যিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি এ কথা সত্য। তাই মাঝে মাঝে আমার নিজের মনেই সন্দেহ হতো কখনো তোমার প্রতি বিরক্তি এসে পড়ে কি না। কিন্তু আজ আমি নিজের প্রতি সন্তুষ্ট। আই লাভ অল ইয়োর ফল্টস, মিস্টেইকস, ওভারথিঙ্কিং, ইনসিকিউরিটিজ, ইমপারফেকশনস, স্টাবর্ননেস, মুডস, অ্যাংজায়েটিস এভরিথিং দ্যাট মেকস ইউ ইউ।”
শাইনা তার চোখের দিকে চেয়েই রইলো। তার বাম চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়ালো সাথে সাথে। ভেজা গালটা সাথে সাথে মুছে দিতে দিতে তাজদার বলল,
“আমি পার্ফেক্ট নই। আমি শত চেষ্টা করলেও তোমার মতো হতে পারবো না। তবে তুমি হাজারটা অভিযোগ জমাও। আমি অভিযোগের ভার নিতে না পেরে একদিন হয়তো তোমার মনমতো হয়ে উঠবো। সেই একদিনটা মৃত্যুর আগ অব্দি যেকোনো একদিন আসবেই। কিন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না। আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে? তারচেয়ে বড়োকথা আমি কোথায় যাব? আমার দিকে একটু ভালো করে তাকাও।”
শাইনা তাকালো। চোখমুখ ফুলে উঠেছে। তাজদার দু-হাত তার দুগালের পাশে রাখতেই শাইনা ফুঁপিয়ে উঠে আবারও চেপে গেল। তাজদার বলল,
“আমি লোকটা ভীষণ খারাপ না? তোমাকে খুব কষ্ট দিই। বিনিময়ে তুমিও আমাকে কষ্ট দাও। কিন্তু পালাতে চাইছো কেন? পালিয়ে গেলে আমাকে মুক্তি দেয়া হয়ে গেল না? তুমি আমাকে মুক্তি দেবে কেন? এই যা আমি তোমাকে আবারও জোরাজোরি করছি। তোমার আমার সম্পর্কটাই অমন। যাই করিনা কেন সবটাই দোষের।’
শাইনা দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখ থেকে নীরবে জল গড়াচ্ছে। তাজদার তার হাত তুলে হাতের উল্টোপিঠে একটা চুমু খেয়ে বলল,
“আর রইলো কাবিনের টাকাটা। মানুষ নিয়ম বানিয়েছে বউ দিয়ে ফেলার সময় কাবিনের টাকা দেয়ার। আমি নেয়ার সময় দিলাম। আমি তোমার কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে নিলাম পুরো কাবিনের টাকাটা দিয়ে।”
রাতের খাবারদাবার সবাই মজা করে খেয়েছে। খাওয়ার সময় তাজদার জানালো তারা কাল ঢাকায় চলে যাবে। ফ্ল্যাটে থাকবে যে কয়দিন আছে। তারপর শাইনাকে বাড়িতে দিয়ে চলে যাবে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বলল,”তোমার যা ইচ্ছে।”
শাইনা রান্নাঘরটা সবার হাতে হাতে সামলে দিয়ে ঘরে এসে দেখলো বাবা মেয়ে একই ভঙ্গিতে ঘুমোচ্ছে পা একটা লম্বা করে আরেকটা একটু কুড়িয়ে। সে বিছানার নিচে হাঁটুমুড়ে বসে বিছানায় আলতো করে মাথা রেখে তাজদার সিদ্দিকীর দিকে চেয়ে রইলো। মুখ, গাল, কপাল, ঠোঁট সব আজ একনজরে দেখে নিল সে। এমন নির্লজ্জের মতো করে তাজদার সিদ্দিকীকে কখন দেখেছে সে?
অনেকক্ষণ পর খেয়াল হলো মাথার নিচে বালিশ রাখেনি। সে ধীরেধীরে বালিশ দিল তাজদারের মাথার নিচে। মাথাটা আবারও পড়ে গেল বালিশ থেকে। ওখানে কি এভাবেই এলোমেলো হয়ে বালিশ ছাড়া ঘুমায়?
সে বিছানায় উঠে বসলো। মাথার নিচে এবার ভালোভাবে বালিশটা রাখলো। কিছুক্ষণ পর মাথাটা স্বেচ্ছায় তার কোলের উপর উঠে এল।
কোমরের চারপাশ জড়িয়ে ধরে যেখানে মাতৃত্বের প্রথম দাগ বসেছে সে সেলাইয়ের দাগ তাজদার সিদ্দিকীর ঠোঁটজোড়া ধীরেধীরে স্পর্শ করলো।
চলমান….
Share On:
TAGS: তাজমহল সিজন ২, প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ৫
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১০
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১১
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৪
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১২+১৩
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ২
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ২০
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ১৯
-
তাজমহল সিজন ২ পর্ব ২২