ডিজায়ার_আনলিশড
✍️ সাবিলা সাবি
পর্ব-২০
মিস ইউনিভার্স সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে জাভিয়ান আর তান্বী ভিলা এস্পেরেন্জার বিলাসবহুল ড্রয়িংরুমে ফিরলো জাভিয়ান সোজা পোশাক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিলো,তাঁর দামী ব্লেজারটি শব্দ করে সে বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেললো।
তান্বী তখনো শান্ত হয়নি। ফাতিমা বোসের প্রতি জাভিয়ানের মনোযোগ এবং তাদের স্প্যানিশ ভাষায় ফিসফিসানি তার সমস্ত ঈর্ষা ও রাগ জমাট করে রেখেছিল। সে সোফার গদিতে শক্ত হয়ে বসে রইলো, তার চোখেমুখে তখন এক স্থবির ক্রোধ স্পষ্ট।
জাভিয়ান টেবিলের সামনে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিলো। ব্লেজার খোলা থাকায় তার গলার দৃঢ় রেখা দৃশ্যমান। সে যখন পানি পান করছিলো, তখন কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে তাঁর অ্যাডাম’স অ্যাপেলের ওপর দিয়ে নেমে এলো।
তান্বী তখন অপলক দৃষ্টিতে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।গড়িয়ে পড়া জলের রেখা, ঢোক গেলার সঙ্গে সঙ্গে গলার পেশীর নড়াচড়া—সবকিছুই তার কাছে ছিল এক তীব্র, প্রায় নিষিদ্ধ আকর্ষণ। তার সমস্ত ঘৃণা মুহূর্তের জন্য সেই শারীরিক সৌন্দর্যের কাছে পরাজিত হচ্ছিল।জাভিয়ানের প্রতিটি ঢোক গেলার শব্দে তার হৃদস্পন্দন প্রায় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছিল।
ঠিক তখনই জাভিয়ান হঠাৎ মাথা তুললো। তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কৌতুক আর স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ ছিল; যা তান্বীর চোখকে মুহূর্তের জন্য বন্দী করলো। তাঁর ঠোঁটে এক ধীর, অর্থবহ হাসি ফুটে উঠলো যেন সে তান্বীর সমস্ত গোপন ভাবনা পড়ে ফেলেছে।
জাভিয়ানের কণ্ঠস্বরে শীতলতা, তাতে খানিকটা কৌতুক আর প্রশ্ন মিশিয়ে সে বললো “কী হলো? এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন?“
ক্রোধ ও লজ্জার তীব্র সংঘাতে তান্বীর সমস্ত শরীর জ্বলে উঠলো।সেই মুহূর্তে সে দ্রুত নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো। সে নিজের বিব্রত ভাব লুকাতে চোখের পাতা শক্ত করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে জবাব দিলো “ডাক্তাররা বলে, ‘অ্যাপেল’ খাওয়া হেলথের জন্য ভালো। হোক সেটা দোকানের আপেল, অথবা কারো অ্যাডাম’স অ্যাপেল।“
তান্বীর সেই সরাসরি এবং ধারালো জবাবে, জাভিয়ানের দৃষ্টিতে ক্ষণিকের জন্য এক তীব্র, আগ্রাসী ঝলক ফুটে উঠলো। তাঁর হাসি মুহূর্তে শিকারীর মতো হয়ে উঠলো। সে পানির গ্লাসটি শব্দ করে রেখে দিলো এবং দ্রুত তান্বীর দিকে ঝুঁকে এলো। দুজনের মধ্যেকার দূরত্ব প্রায় শূন্য হয়ে গেল। জাভিয়ানের উষ্ণ নিশ্বাস তান্বীর মুখে পড়ছিল।
জাভিয়ানের কণ্ঠস্বর মুহূর্তে গাঢ় হলো, তাতে মিশে রইলো এক বিপজ্জনক ইঙ্গিত “ডাক্তাররা আরেকটা কথাও বলে—মিল্ক খাওয়াও হেলথের জন্য ভালো। হোক সেটা গরুর… কিংবা…“
পুর্ণ বাক্য শেষ করার আগেই তান্বী তীব্র ঘোরের মধ্যে নিজের হাত তুলে জাভিয়ানের মুখে চেপে ধরলো। তার চোখ তখন বড় বড়, ভয় ও উত্তেজনায় কাঁপছে।জাভিয়ানের কথার ইঙ্গিত এতটাই স্পষ্ট ছিল যে তার শরীর শিহরিত হয়ে উঠলো।তান্বী প্রায় আর্তনাদ করে, রাগে ও লজ্জায় ফিসফিস করে বললো “আপনার মুখে কোনো ফিল্টার নেই, তাইনা?“
তান্বীর সেই ফিসফিসানি শেষ হতেই জাভিয়ান হাসলো।তাঁর চোখে তখনো সেই আগ্রাসী শিখা জ্বলছিল।সে আলতো করে তান্বীর হাতটি মুখ থেকে সরিয়ে দিলো। সেই স্পর্শ ছিল ক্ষণিকের, কিন্তু তা তান্বীর শরীরে এক তীব্র বিদ্যুৎপ্রবাহ জাগালো।
জাভিয়ান আর কোনো কথা বললো না।সে দ্রুত পায়ে সেই রুম ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো,কারন সেই মুহূর্তে নিজেকে সংযত করা তার জন্যও জরুরি ছিল।
জাভিয়ান চলে যাওয়ার পর, তান্বী হাঁপাতে হাঁপাতে সোফায় এলিয়ে পড়লো। তার হাত তখনও সেই স্থানে কাঁপছিল, যেখানে জাভিয়ানের ত্বক স্পর্শ করেছিল। তার মস্তিষ্ক সেই মুহূর্তের ঘোর থেকে মুক্ত হতে পারছিল না।
তান্বীর মন তখন ভেতর থেকে নিজেকে ধমক দিয়ে বললো “ছিহ্! তান্বী! তুই কী ভাবছিলি?”
কিন্তু এই শারীরিক আকর্ষণ সত্ত্বেও তার মন তাকে কঠিন বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনলো। জাভিয়ানের চারপাশের জগৎ, আজকের অনুষ্ঠানের স্মৃতি (ফাতিমা) এবং তার নিজের অবস্থান—সবকিছু মাথায় এল।
তান্বীর মন তখন তিক্ত হতাশায় ভুগলো এটা ভেবে যে ‘চারপাশে ফাতিমার মতো অগণিত ধনী আর গ্ল্যামারাস মেয়েরা যখন জাভিয়ানের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে… তখন এই সামান্য আকর্ষণ কিছুই নয়। তাদের তুলনায় আমি কে? সে কখনোই আমাকে স্ত্রী হিসেবে মন থেকে মানবে না। আমি তো কেবল তার স্বার্থের জন্য তার কাছে আসা একজন বাইরের লোকই থেকে যাব।
এই নির্মম সত্য উপলব্ধি করে, তান্বীর সমস্ত উত্তেজনা নিভে গেল। তার মনে হলো, জাভিয়ানের সাথে তার জীবনের দূরত্ব শুধুমাত্র শারীরিক নয়—তা শ্রেণিগত, সামাজিক, এবং অনিবার্যভাবে স্থায়ী।
এসব ভাবতে ভাবতেই, অন্যমনস্কভাবে তান্বী হাতে তুলে নিলো টেবিলের ওপর রাখা জাভিয়ানের পান করা জলের গ্লাসটি। গ্লাসের নিচের অংশে তখনও অল্প জল ছিল।অচেতন মনেই সে গ্লাসটি ঠোঁটে ঠেকালো এবং জাভিয়ানের রেখে যাওয়া বাকি পানিটুকু পান করে নিলো।
যখন সে বুঝতে পারলো যে সে ঠিক কী করেছে,জাভিয়ানের ঠোঁট স্পর্শ করা গ্লাসে সে মুখ দিয়েছে—তখন তার মনে অস্বীকারের বিপরীতে এক মৃদু কৌতুক জেগে উঠলো। সে গ্লাসের দিকে আলতো করে একবার তাকালো, আর তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক ক্ষণস্থায়ী, অবিশ্বাস্য হাসি।
এই হাসি ছিল তার ঘৃণা এবং তার আকাঙ্ক্ষার মধ্যেকার এক নীরব সন্ধি—যা প্রমাণ করলো, জাভিয়ানকে যতই সে বাইরের লোক ভাবুক না কেন, তাদের জীবন তখন অলক্ষ্যে মিশে যাচ্ছে।
.
.
.
.
মেইলস্ট্রোম তার ভিলার তার ব্যাক্তিগত রুমের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেছিল। টেবিলের ওপর ছড়ানো ছিল হিরোইন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য, যা সে নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে প্রশমিত করার জন্য সেবন করছিল। ঘরের শীতল মেঝেতে কয়েকটি বিষাক্ত বিচ্ছু ঘুরে বেড়াচ্ছিল, দু-একটি বিচ্ছু তার হাত ও কাঁধ বেয়ে উঠছিল, কিন্তু মেইলস্ট্রোম তখন নিজের ভেতরে এক উন্মত্ত আগুনে পুড়ছিল—তার কোনো খেয়াল ছিল না।
ঠিক তখনই পুনরায় তাঁর ভাবনায় চলে এলো তখনকার সেই দৃশ্যটা। টিভির পর্দা এবং গুপ্তচরের মাধ্যমে আসা নিশ্চিত খবর তার মস্তিষ্কে তীব্র আঘাত হেনেছিলো: তান্বী জাভিয়ানের কাছে, তাও আবার জাভিয়ানের স্ত্রী হিসেবে! এই খবর তার শিরায় শিরায় তীব্র বিষ ঢেলে দিয়েছিলো।
জাভিয়ান তার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে এভাবে নিজের দখলে রেখেছে—এই চিন্তা মেইলস্ট্রোমের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিলো। সে যান পিস্তলটি হাতে তুলে নিয়েছিলো।তার রাগ তখন তখন ধ্বংসাত্মক ঝড়ের রূপ নিয়েছিলো। সে দরজা দিয়ে সবে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়েছিল।
ঠিক তখনই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার মা, ইসাবেলা। ইসাবেলা দরজার সামনে তার ইস্পাত-কঠিন ব্যক্তিত্ব নিয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন।
মেইলস্ট্রোম, যে এই পৃথিবীতে কারো কথা শোনার মতো মানুষ নয়, শুধুমাত্র তার মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে থমকে গেল। এই পৃথিবীতে সে কেবল একজন মানুষের কাছেই নত হতে জানে—সেটি তার মা।
ইসাবেলা তখন মেইলস্ট্রোমের চোখে চোখ রেখে, শান্ত কিন্তু কঠোর কণ্ঠে বললেন “থামো! পিস্তল হাতে কোথায় যাচ্ছ?“
মেইলস্ট্রোমের কণ্ঠস্বরে তীব্র আসক্তি ও হতাশা নিয়ে বললো “মম! ওই মেয়েটা… যাকে আমি ভালোবাসি, যার প্রতি আমি পাগলের মতো আসক্ত—সেই মেয়েটা জাভিয়ানের কাছে! জাভিয়ান তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে তার পরিচয় দিচ্ছে!“
ইসাবেলা তখন ধৈর্য ধরে, কর্তৃত্বের সুরে বললেন “তো তুমি কি এখন ওই বাড়িতে গিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবে? তুমি কি বাচ্চা? তোমার মতো একজন মাফিয়া লিডারের এমন আবেগপ্রবণ আচরণ মানায় না। ওই মেয়েটা তোমাকে চেনেও না!“
মেইলস্ট্রোম তখন হতাশার হাসি হেসে, পিস্তল শক্ত করে ধরে বললো “চিনে না? সমস্যা নেই! আমার কাছে আসলেই ও জানতে পারবে—আমি ওর জন্য কতটা উন্মত্ত!
ইসাবেলা এবার তার ছেলের উন্মত্ত আবেগকে জাভিয়ানের রূঢ় যুক্তির মাধ্যমে আঘাত করলেন।
ইসাবেলা কণ্ঠস্বর গভীর এবং তীক্ষ্ণ করে বললেন “তোমার কি বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? যেহেতু তুমি জানতে পেরেছো সে অন্য কারো স্ত্রী, তাহলে তাকে কেন তোমার করতে চাইছো? এমিলিওর স্ত্রী সে এখন!“
মেইলস্ট্রোম রাগে চোখমুখ কুঁচকে বললো “মম, ইউ নো ! জাভিয়ান কেমন ব্যক্তি! ওই কোনোদিনও কোনো মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করবে না! নিজের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্যই ও তান্বীকে ধরে রেখেছে!“
ইসাবেলা দৃঢ়তা নিয়ে বললো “তুমি মনে হচ্ছে ওর মনের কথা সব জানো না। আগে আমাকে জানতে হবে আসল সত্যটা কী। আমাকে সময় দাও। আমাকে সব তথ্য জোগাড় করতে দাও।“
মেইলস্ট্রোম তার মায়ের দিকে তীব্রভাবে তাকালো। এই মুহূর্তে ইসাবেলার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা ছিল তার কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ। সে জানত, মায়ের ভালোবাসার এই বাঁধন সে কখনোই ভাঙতে পারবে না।
ইসাবেলা তখন কণ্ঠস্বর নরম কিন্তু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছেলের প্রতি ভালোবাসা স্পষ্টতা তার কন্ঠে “তারপর আমি কথা দিচ্ছি, আমি তোমাকে আর বাধা দেবো না। তুমি যা করতে চাও, আমি তোমার পথে আর দাঁড়াবো না।“
মেইলস্ট্রোম আর কোনো তর্ক করলো না। তার ক্রোধ তখন চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছালো। সে পিস্তলটি দূরে ছুঁড়ে না ফেলে, আক্রোশে দেয়াল লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করলো। গুলির শব্দে অন্ধকার প্রকোষ্ঠ কেঁপে উঠলো। মেইলস্ট্রোম রাগে কাঁপতে কাঁপতে পিস্তল ফেলে দিলো এবং দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল। ইসাবেলা তখনও দরজার সামনে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন—তাঁর হাতেই মেইলস্ট্রোমের চরম আবেগের একমাত্র নিয়ন্ত্রণ।
.
.
.
.
পরের দিন সকালে। লুসিয়া যখন তার ইউনিভার্সিটি দে লা পাজ-এ পৌঁছালো, তখন পুরো ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছিল থমথমে। গতকাল রাতে আলেক্সান্দ্রোর ওপর হওয়া হামলার খবর বন্য আগুনের মতো ছড়িয়ে গেছে—গুজব চলছে, লুসিয়া নাকি অন্য ছেলেকে দিয়ে তার বয়ফ্রেন্ডকে মার খাইয়েছে। একসাথে ডাবল টাইমিং করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামের পাশে প্রিন্সিপালের অফিস। লুসিয়া, প্রিন্সিপাল এবং আলেক্সান্দ্রর বাবা—সেই প্রভাবশালী মেক্সিকান শিল্পপতি—সেখানে উপস্থিত। আলেক্সান্দ্রোর বাবার চোখে ছিল প্রতিশোধের আগুন। তিনি উচ্চস্বরে লুসিয়ার বিচার এবং বহিষ্কার দাবি করছিলেন।
প্রিন্সিপাল, সেই ক্ষমতাবান শিল্পপতির চাপে লুসিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। পুরো ক্যাম্পাস তখন রুদ্ধশ্বাসে এক বড় ধরনের বিতর্কের অপেক্ষায় স্তব্ধ।
ঠিক সেই চরম মুহূর্তে, ভার্সিটির প্রধান ফটক দিয়ে তীব্র গতির শব্দ করে একটি কালো, দামি স্পোর্টস কার প্রবেশ করলো। গাড়িটির ঝলকানি আর গর্জন ভার্সিটির স্তব্ধতাকে ভেঙে দিল। মুহূর্তের জন্য সবাই থমকে গেল।
গাড়ি থেকে নেমে এলো জাভিয়ান এমিলিও চৌধুরী। তাঁর পরনে ছিল নিখুঁত স্যুট, আর চোখে ছিল কালো সানগ্লাস। জাভিয়ান কোনোদিকে না তাকিয়ে, ধীর পায়ে সানগ্লাসটা নামিয়ে, অত্যন্ত শীতল দৃষ্টিতে প্রিন্সিপালের অফিসের দিকে এগিয়ে গেলো। তাঁর উপস্থিতিতে সেখানকার বাতাস আরও ভারী হয়ে উঠলো।
প্রিন্সিপাল জাভিয়ানকে দেখেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। জাভিয়ান সরাসরি প্রিন্সিপালকে জানালো যে, লুসিয়া তারই বোন। এই কথা শুনে প্রিন্সিপালের প্রায় মাথা খারাপের দশা হলো—তিনি কল্পনাও করেননি যে লুসিয়ার পিছনে এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তি থাকতে পারেন।
আলেক্সান্দ্রোর বাবা, জাভিয়ানের পরিচয় শুনেও তার রোষ থামাতে পারলেন না। তিনি জাভিয়ানের দিকে ফুঁসে উঠে বললেন “আপনি যেই হোন না কেন, আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার চরম মূল্য আপনাদের দিতে হবে!“
জাভিয়ান এক মুহূর্তও নষ্ট করলো না। তাঁর চোখে কোনো সতর্কতা বা রাগ ছিল না—ছিল কেবল নিরপেক্ষ কর্তৃত্ব।
পরের মুহূর্তেই জাভিয়ানের হাত বিদ্যুৎ গতিতে উঠে গেল। ঝপাং শব্দে জাভিয়ান আলেক্সান্দ্রর বাবার গালে কষে এক থাপ্পড় মারলো! সেই আঘাতের তীব্রতায় লোকটি টাল সামলাতে পারলো না। জাভিয়ান কণ্ঠস্বরে এক হিমশীতলতা নিয়ে ঘোষণা করলো “আপনাকে কেউ কোনোদিন বলেনি, জাভিয়ান এমিলিও চৌধুরী—অন্যায় করলে—বয়স্ক মুরব্বি এমনকি মেয়েদের গায়েও হাত তুলতে দ্বিধা করে না? আমার বোনের দিকে চোখ তোলার আগে আপনার একবার অন্তত আমার নামটা মনে করা উচিত ছিল।“
জাভিয়ানের সেই চূড়ান্ত সতর্কবার্তা শুনে আলেক্সান্দ্রর বাবা অপমানে ও ব্যথায় সেখানেই নত হলেন। প্রিন্সিপাল ভয়ে কাঠ। লুসিয়ার বিচার করার সাহস বা ক্ষমতা আর কারো রইলো না।
জাভিয়ান এরপর লোকটির দিকে ঝুঁকে এলো। তার চোখ ছিল একদম স্থির, সেখানে কোনো আবেগ ছিল না—ছিল কেবল ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি। সে যান প্রতিটি শব্দে শীতল কর্তৃত্ব নিয়ে বললো “আপনার ছেলের ব্যাড রেকর্ড আপনার অজানা থাকার কথা নয়। এমন বাস্টার্ড! ছেলে জন্ম দিয়েছেন, যে কিনা আমার বোনকে খারাপ ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে! ওকে যেই মেরে থাকুক, ওর ভাগ্য ভালো যে সে আমার হাতে পরেনি। তাহলে… আপনার ছেলের লাশও আপনি খুঁজে পেতেন না।“
জাভিয়ান এরপর সানগ্লাসটা চোখে পরলো এবং লুসিয়াকে নিয়ে দ্রুত প্রিন্সিপালের অফিস ছেড়ে বেরিয়ে এলো, পেছনে ফেলে গেলেন এক অচল বিশ্ববিদ্যালয় আর এক পরাজিত ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে।
.
.
.
.
জাভিয়ান যখন লুসিয়ার সমস্যার সমাধান করতে ক্যাম্পাসে ঝড় তুলছিলো,তখন সে জরুরি কিছু ফাইলপত্র আনার জন্য তার ব্যক্তিগত সহকারী রায়হানকে ভিলা এস্পেরেন্জায় পাঠিয়েছিলো।
রায়হান যখন ড্রয়িংরুমের টেবিলে জাভিয়ানের ফাইলগুলো গোছাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তান্বী সেখানে এসে দাঁড়ালো। জাভিয়ানের অনুপস্থিতি তান্বীর মনে এক সুযোগের আলো জ্বাললো। সে বুঝলো, জাভিয়ানের জীবনের সবচেয়ে গোপন তথ্য জানার জন্য এটাই সেরা সময়।
তান্বী রায়হানের দিকে আশা এবং কৌতূহল নিয়ে তাকালো।সে আস্তে করে, প্রায় ফিসফিস করে বললো
“রায়হান ভাইয়া… আমায় পেটের মধ্যে একটা প্রশ্ন অ্যাকুরিয়ামের জেলি ফিশের মতৈ লাফাচ্ছে।আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই।“
রায়হান চমকে উঠলো আর ফাইল গোছানো থামিয়ে দিলো।সে জানে, এই বাড়িতে যেকোনো জিজ্ঞাসা বিপজ্জনক হতে পারে। রায়হান চাপা গলায়, সতর্কভাবে বললো “বলুন মিস গজদন্তনি। তবে স্যারের অনুপস্থিতিতে কোনো ব্যাক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না।“ বলেই রায়হান ফাইল গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
তান্বী দৃঢ়তা নিয়ে, সরাসরি তার প্রশ্ন উত্থাপন করলো “মিস্টার জাভিয়ান কেন প্রায়ই কবরস্থানে যান? আর… ওনার কাছে একটা ‘R’ লেখা লকেট আছে—সেটা কিসের?
তান্বীর প্রশ্ন শুনে রায়হানের মুখমণ্ডল মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ফাইল গোছাতে গোছাতে তার হাত থেমে গেল। রায়হানের চোখে তখন জাভিয়ানের প্রতি থাকা চরম ভয় স্পষ্ট।সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, স্বর নীচু করে বললো “সরি মিস… সরি। আমি এ বিষয়ে আপনাকে বলতে পারবো না। স্যার… স্যার জানলে আমাকে মেরে ফেলবেন!“
তান্বী অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো “কেন? কী এমন ভয় আছে এতে?“
রায়হান ফাইলগুলোর দিকে না তাকিয়ে, দ্রুত কথাগুলো শেষ করতে চাইল “কারণ এটা স্যারের দুর্বলতা। আর স্যার তার দুর্বলতা কাউকে জানাতে চাইবেন না। উনি মনে করেন, কেউ তার দুর্বলতা জানলে… তাকে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করবে।“
রায়হানের ভয় দেখে তান্বী বুঝলো, এই তথ্য কতটা স্পর্শকাতর। সে তার কৌশল পরিবর্তন করলো—সে এবার সহানুভূতি ও আবেগ দিয়ে রায়হানের ভয়ের প্রাচীর ভাঙতে চাইলো।সে কণ্ঠস্বরে গভীর আর্তি, নিজেকে তার আপন করে তোলার চেষ্টা “রায়হান ভাইয়া… প্লিজ… আমাকে নিজের বোন মনে করে বলুন না। আমি কথা দিচ্ছি, আমি আপনার স্যারকে এই বিষয়ে কিছুই জানাবো না যে আমি আপনার কাছ থেকে জেনেছি। আপনার কোনো ভয় নেই, আমি সব সামলে নেব।“
রায়হান তখন তান্বীর দিকে তাকালো। তার চোখে ছিল এক অসহায় দ্বিধা—একদিকে জাভিয়ানের ভয়, অন্যদিকে তান্বীর সেই আবেগপূর্ণ অনুরোধ। তান্বীর চোখে তখন জবাব জানার জন্য চরম আকুলতা।
তান্বীর আবেগপূর্ণ অনুরোধ শুনে রায়হান কিছুক্ষণের জন্য নীরব রইলো। তারপর সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
কণ্ঠস্বর কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো “ম্যাডাম… এটা শুধু দুর্বলতা নয়। এটা অনেক বড় ঘটনা। স্যারের অতীত…“
তান্বী তাকে থামিয়ে দিয়ে, দ্রুত কণ্ঠে বললো “আপনি এক কাজ করুন। আমি আপনার জন্য এক কাপ গরম চা নিয়ে আসছি, আপনি বসুন। বাড়িতে এই মুহূর্তে কেউ নেই,আপনি নিশ্চিন্তে আমাকে বলতে পারেন। আমরা ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি এখানে নেই।“
তান্বীর আশ্বাস এবং তার চোখে থাকা আর্তি রায়হানের দ্বিধা অনেকটাই কমিয়ে দিলো। সে ফাইল গোছানো বন্ধ করে সোফায় বসলো।
রায়হান আস্তে করে বললো ”আচ্ছা ঠিক আছে।“
রায়হান তখন মনে মনে ভাবলো “মিস গজদন্তনি তো স্যারের স্ত্রী। জাভিয়ান স্যার নিজেই তো তার দুর্বলতা নিয়ে কখনো কথা বলবেন না। কিন্তু তান্বীর তো জানার অধিকার আছে, না হলে এই জটিল সম্পর্কের পথ সে হাঁটবে কীভাবে? তান্বী ম্যাডামের কাছে হয়তো এই সত্যটা এক ঢাল হিসেবে কাজ করবে।“
রায়হান তার ভয়কে একপাশে রেখে স্থির করলো যে, সে তান্বীকে সেই গোপন সত্য জানাবে—যে সত্য জাভিয়ানকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় এবং যা তার জীবনে তান্বীর মতো আরেকজনকে নিয়ে এসেছে।
.
.
.
.
ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে চূড়ান্ত তাণ্ডব চালানোর পর জাভিয়ান এবং লুসিয়া দ্রুত পার্কিং লটের দিকে এগিয়ে এলো। গাড়িতে ওঠার আগে জাভিয়ান হঠাৎ লুসিয়ার দিকে ফিরলো। তাঁর চোখে কোনো সহানুভূতি ছিল না, ছিল কেবল তীক্ষ্ণ বিচার। তার কণ্ঠস্বর শীতল, সরাসরি লুসিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো “নিজের মিউজিক রেকর্ডিং এর জন্য এমন জঘন্য ছেলের সাথে কিভাবে রিলেশনে জড়িয়েছিস? তোর কি সামান্য কাণ্ডজ্ঞান নেই?“
লুসিয়া, জাভিয়ানের সেই ভয়াবহ ক্ষমতা প্রদর্শন দেখে তখনো বিস্ময়ে বিহ্বল। তার মাথা নত হয়ে গেল।
লুসিয়া আস্তে করে, অনুশোচনায় বললো “সরি জাভি ভাইয়া। ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। কিন্তু… তুমি কিভাবে জানলে?“
জাভিয়ান উত্তর দিলো না। সে ধীরে ধীরে নিজের সানগ্লাসটি চোখে পরলো। তাঁর মুখ তখন শীতলতার এক মুখোশে ঢেকে গেল।তার কণ্ঠস্বরে চরম কর্তৃত্ব “এই শহরের এমন কোনো ঘটনা নেই, যেটা জাভিয়ান এমিলিও চৌধুরী জানেনা।“ এই বলেই সে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো।
লুসিয়া জাভিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইলো। তার মনে তখন এক জটিল অনুভূতি।সে মনে মনে ভাবলো “আমি ভেবেছিলাম জাভি ব্রো… সে হয়তো আমার প্রতি নিষ্ঠু, সেদিন সে ফারহানকে আমায় মেরে ফেলতে বলেছিল। কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে, সে ততটাও নিষ্ঠুর নয়। সে শুধু নিজের লোকেদের রক্ষা করতে জানে। সে এখন ও আমার ভাই।“
.
.
.
এদিকে তান্বীর আশ্বাস পেয়ে রায়হান স্থির হলো। সে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে কথা শুরু করলো।
তার কণ্ঠস্বরে চরম সাবধানতা “শুনুন মিস গজদন্তনি। আপনি যেহেতু স্যারের স্ত্রী, তাই আপনার অবশ্যই স্যারের অতীত জানার অধিকার রয়েছে। আসলে আপনি যেই লকেটের কথা বলেছেন, সেটা স্যারের বড় ভাইয়ের… তাঁর নাম রাহিয়ান চৌধুরী।“
রাহিয়ান চৌধুরীর নাম শুনে তান্বী চমকে উঠলো। জাভিয়ানের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের অস্তিত্ব তার কাছে ছিল সম্পূর্ণ অজানা।
তান্বী অবাক ও বিহ্বল কণ্ঠে বললো “রাহিয়ান চৌধুরী? তাহলে সে এখন কোথায়? আমি তো এই বাড়িতে তার নাম কখনো শুনিনি!“
রায়হানের চোখে তখন শোকের ছায়া।সে মাথা নামিয়ে, শান্ত কিন্তু ভারী কণ্ঠে বললো “তিনি আর এখন নেই। এই পৃথিবী থেকে বহু দূরে চলে গেছেন।“
কথাটি শুনে তান্বীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। নীরবতার পর তার চোখ বিস্ফারিত হলো।সে আস্তে করে, প্রায় ফিসফিস করে বললো “তার মানে… তার মানে জাভিয়ান চৌধুরী সেই রাহিয়ান ভাইয়ার কবরেই যায়?“
রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো “হ্যাঁ।“
তান্বীর মনে তখন কেবল আরও প্রশ্ন। কেন এই বাড়িতে সবকিছু এত গোপন?
তান্বী ব্যথিত কণ্ঠে বললো “কিভাবে মারা গেছেন তিনি? আর এই বাড়িতে আসার পর এই নামটাও এখন পর্যন্ত শুনলাম না কেনো? কেন এত গোপনীয়তা?“
রায়হান এবার সতর্কতার সাথে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।সে গোপন তথ্য জানানোর ভয়ে স্বর আরও খাদে নামিয়ে বললো “স্যারের কঠোর বারণ আছে। যে রাহিয়ান ভাইয়ার নাম সে ছাড়া কেউ যেন না নেয়। এই বাড়ির কাউকেই তিনি রাহিয়ান ভাইয়ার কবরে যেতে দেন না। যেন রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে সম্পর্কিত সবকিছু তিনি একাই বহন করতে চান।“
রায়হান তখন তান্বীর দিকে তাকালো। জাভিয়ানের এই গভীর ক্ষত এবং তার একাকীত্বের চিত্রটি তান্বীর কাছে সম্পূর্ণ নতুন এক অধ্যায় খুলে দিল।
তান্বির কণ্ঠস্বর কাঁপছে সে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো “কি হয়েছিলো? আমাকে খুলে বলুন সব।“
তান্বীর চোখের সেই তীব্র আকুলতা দেখে রায়হান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সে মাথা নেড়ে সায় দিলো। রায়হান এক গভীর দীর্ঘশ্বাস নিলো। এই গোপন কথাগুলো তার মনে দীর্ঘদিন ধরে চাপ সৃষ্টি করেছিল।
সে নীরবে চারপাশ দেখে নিয়ে, স্বর খাদে নামিয়ে বললো “আপনি নিশ্চয়ই জানেন, স্যার তার বাবা-মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করেন না। বাবা-মায়ের প্রতি তার কোনো মায়া নেই।“
তান্বী মাথা নেড়ে বললো “হ্যাঁ, আমি আসার পর থেকেই দেখছি সে তার বাবা-মায়ের সাথে দূর ব্যবহার করে।“
রায়হান তখন বেদনা নিয়ে বললো “আসলে, রাহিয়ান ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য তার বাবা-মা দায়ী। স্যার আগে এমন ছিলেন না। তিনি খুব শান্ত ছিলেন, ইভেন খুব ভালো স্টুডেন্টও ছিলেন। কিন্তু… এই ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড। তার মেন্টাল হেলথ মোটেও ভালো নয়।“
তান্বী সেই কথা শুনে সোফায় একটু নড়েচড়ে বসলো। তার চোখ জাভিয়ানের প্রতি সহানুভূতিতে ভরে উঠলো।
সে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো “কেন? কী হয়েছিলো?“
রায়হান যেন সেই পুরোনো দৃশ্যে ফিরে গেলো। তার কণ্ঠস্বরও সেই সময়ের বেদনা বহন করছিল।সে বলতে শুরু করলো “আসলে,সময়টা অনেকদিন আগের। তখন রাহিয়ান ভাইয়ার বয়স ছিল ১৬ আর স্যারের ছিল ১৪। ছোট থেকেই তাদের বাবা-মা তাদের ওপর অসহনীয় মানসিক চাপ রাখতেন।“
রায়হান কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে শুরু করলো “তাদের মা, কার্গো চৌধুরী, সবসময় ফ্রেন্ডস, পার্টি, ক্লাব—এসব নিয়ে থাকতেন। ছেলেদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ববোধ, মমতা বা কেয়ার কিছুই ছিল না। আর তাদের বাবা, সায়েম চৌধুরী, ছিলেন এমন একজন মানুষ—যার কাছে সমাজে সম্মান, যশ, খ্যাতি এসবই ছিল মূল। মোট কথা, ছোট থেকেই ছেলেদের এমন প্রেসার দেয়া হতো যে প্রত্যেক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস আনতেই হবে!রাহিয়ান ভাইয়া পড়ালেখায় ততটা ভালো ছিলেন না—ভালো বলতে, তার পড়ালেখার প্রতি তেমন আগ্রহই ছিল না। কিন্তু তার ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল—সে গান গাইবে। তার গানের গলাও ছিল খুব ভালো। সবসময় তার ইচ্ছে ছিল,সে একদিন স্টেজে উঠবে, একদিন সবার আইডল হবে।
আর এই স্বপ্নই তার কাল হলো।“
রায়হান আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো “কিন্তু তার বাবার কাছে এটা ছিল সস্তা স্বপ্ন। সায়েম চৌধুরীর মনে হতো, গান গাওয়া, স্টেজে ওঠা—এসব তার মাধুর্য ও সম্মানকে আঘাত করবে। রাহিয়ান যাতে গান শিখতে না পারে, সে কারণে তাকে অনেক মানসিক টর্চার করতে থাকেন। দিনের পর দিন ঘরে আটকে রাখতেন। তাদের এক কথা: ভালো রেজাল্ট করতেই হবে! ভালো কোনো ক্যারিয়ার গড়তে হবে।
একসময় রাহিয়ান ভাইয়া আরও জেদ ধরে বসলেন। তখন তার বাবা তার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতেন না।কারণ তাদের পরিবারের সবাই নাকি কথা শোনাতো যে, রাহিয়ান পড়াশোনায় ভালো না, সে অপদার্থ, সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিটার নিয়ে গান গায়।“
রায়হানের কণ্ঠস্বর কাঁপছে তবুও সে কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো “তখন সায়েম চৌধুরী আরও রেগে রাহিয়ান ভাইয়াকে মারধর করতেন। আর এসব কিছুই জাভিয়ান স্যারের চোখের সামনে দেখতেন… তিনি একা একা কাঁদতেন ঘরের মধ্যে।
এই বলে রায়হান আবারও থেমে গেলো। তার চোখ বন্ধ, যেন সেই দৃশ্য আর মনে করতে চায়না। তান্বীর চোখে তখন জল। জাভিয়ানের শৈশবের এই ভয়াবহতা তাকে স্তব্ধ করে দিলো।
তান্বীর চোখ তখন করুণা ও শোকে ভিজে উঠেছে। সে অস্থিরভাবে জানতে চাইল রুদ্ধশ্বাসে কন্ঠে জানতে চাইলো “তারপর কি হয়েছিলো?
রায়হান চোখ খুললো। সেই দিনের ঘটনা মনে পড়ায় তার গলা ধরে এলো।রায়হান তখন বলবে শুরু করলো “রাহিয়ান ভাইয়া যখন পড়ালেখা ছেড়ে গান নিয়েই জেদ ধরলেন, তখন একদিন হঠাৎ করে তার বাবা সায়েম চৌধুরী বললেন—তাকে এই শহর থেকে দূরে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দিবেন। যেখানে সে চার দেয়ালে বন্দি থাকবে এবং শুধু পড়ালেখা করবে আর পরীক্ষা দেবে।
এটাই ছিল রাহিয়ান ভাইয়ার জন্য চূড়ান্ত আঘাত। তার স্বপ্নকে চিরতরে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত!“
রায়হান মাথা নিচু করলো। তারপর বললো “আর সেদিন রাতে… রাহিয়ান ভাইয়া সুইসাইড করলেন। গলায় ফাঁস দিয়ে।“
তান্বীর চোখ তখন বিস্ফারিত। সে নিজের মুখ দু’হাতে চেপে ধরলো।
রায়হানের স্বর তখন শোকে ভারী হয়ে এলো তফঙো সে বলতে লাগলো “সেই লাশ… নিজের চোখের সামনে তার ভাইয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে স্যার আর আগের মতো রইলেন না। তিনি মানসিকভাবে এমনভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েন যে, সেই দিন থেকে সে আর কোনো দিনই তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতেন না—কখনোই না। তিনি শুধু ঘৃণা করতেন তাদের।“
তান্বী তখন জাভিয়ানের বর্তমান রূঢ় আচরণের পেছনের কারণটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো।
রায়হান তখন আরো বললো “ আমার বাবা আগে সায়েম চৌধুরীর অ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন তার কাছেই আমি এই ঘটনা শুনেছিলাম এবং আমি নিজের চোখে রাইহান ভাইয়ার লাশ দেখছিলাম। জাভিয়ান স্যার একদিন হঠাৎ মেক্সিকোর শহরের ব্রিজের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেদিন হয়তো… সেও সুইসাইড করতে চেয়েছিলেন কোনো কারনে হয়তো বা মানসিক ট্রমার কারনে।আর সেদিন আমি তাকে কোনোমতে বাঁচিয়েছিলাম।“
রায়হান তান্বীর দিকে তাকালো। তাদের দুজনের চোখে তখন জাভিয়ানের প্রতি গভীর সহানুভূতি।
রায়হান আবার বললো “সেই দিন, সেই ব্রিজেই স্যারের সাথে আমার গভীরভাবে পরিচয়। তারপর থেকেই… আমি তার সাথে আছি আয় স্যার আয়াকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন কারন আমার নামের সাথে রাহিয়ান ভাইয়ার নামের অনেকটা মিল আছে।“
তান্বী সোফায় এলিয়ে পড়লো। জাভিয়ানের শীতলতা, তার ক্রোধ, তার প্রতিশোধ—সবকিছুর পেছনের সেই ভয়াবহ আদি সত্যটা আজ তার কাছে উন্মোচিত হলো।
রায়হান এবার তান্বীর দিকে এক ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকালো। জাভিয়ানের বর্তমান জীবন নিয়ে সে তার গভীরতম অনুমানটি প্রকাশ করলো। সে আস্তে করে, যেন নিজের মনেই বলছে “আসলে… এখন হয়তো আপনার কারণেই সে আবার নতুনভাবে বাঁচার প্রেরণা পাচ্ছে।“
তান্বী সেই কথাটার অর্থ বোঝার চেষ্টা করছিল এবং রায়হানকে আরও কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে, ঠিক তখনই জাভিয়ানের ফোন কল এলো। রায়হান সাথে সাথে সোফা থেকে লাফিয়ে উঠলো।সে তাড়াহুড়ো করে বললো “স্যার ফোন দিয়েছেন। আমাকে এখনি অফিসে যেতে হবে! আর প্লিজ মিস গজদন্তনি… ভুলেও কিন্তু স্যারকে বলবেন না যে আমি এসব কথা আপনাকে বলেছি। প্লিজ!“
রায়হান আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। সে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।তান্বী তখনো সেখানে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তার চোখের সামনে তখন ভাসছে দু’টি ছবি—একদিকে জাভিয়ানের ভাই হারানোর বেদনা ও নিজের আত্মহত্যাচেষ্টা, আর অন্যদিকে জাভিয়ানের তাকে এভাবে জোর করে বিয়ে করে আনা। জাভিয়ানের প্রতি তার ঘৃণা, করুণা এবং তীব্র আকর্ষণ—সবকিছুই এক জটিল জালে জড়িয়ে গেল। তান্বীর হৃদয়ে এখন আর জাভিয়ানের প্রতি কেবল ঘৃণা বা ভয় রইলো না। সে বুঝতে পারলো—জাভিয়ানের ভেতরের যন্ত্রণা কোনো সামান্য বা বানানো কষ্ট নয়; তা ছিল তার শৈশবের গভীরে প্রোথিত এক ভয়ঙ্কর ট্রমা। তার সেই শীতলতা, রূঢ়তা এবং প্রতিশোধের আগুন—সবকিছুই ছিল তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার এবং বাবা-মায়ের প্রতি ঘৃণার এক ভগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
জাভিয়ানের জীবনের সেই নির্মম সত্য জানার পর তান্বীর মনে তার প্রতি এখন আরও বেশি মায়া হলো। সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, জাভিয়ান কোনো প্রতিশোধপরায়ণ দানব নয়, সে কেবল এক ভয়ঙ্করভাবে আহত মানুষ, যে তার কষ্ট ঢাকার জন্য ক্ষমতার আড়ালে লুকিয়ে আছে।
.
.
.
এদিকে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর লুসিয়া তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীটির সাথে একটি কফি শপে বসেছিল। জাভিয়ানের আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন এবং ফারহানের কথা তার মন থেকে যাচ্ছিল না। লুসিয়া কফির মগে চুমুক দিতে দিতে, অন্যমনস্কভাবে বললো “ জানিসে তো আমাকে ওই আলেক্সান্দ্রর হাত থেকে কে বাঁচিয়েছে?
লুসিয়া তখন ফারহানের সেই তাকে বাঁচানো তারপর সংবেদনশীল স্পর্শের কথা, বাসে তাদের ঘনিষ্ঠতা এবং তার শান্ত ব্যবহারের কথা সব খুলে বললো।
লুসিয়ার বান্ধবী কৌতুকভরা চোখে তাকিয়ে বললো “Wait, wait, wait! তুই কি কোনোভাবে ক্রাশ খেয়েছিস নাকি? তোর মতো একটা মেয়ে, যে কাউকে পাত্তা দিস না, সে একজন সাধারণ ছেলের জন্য এত ভাবছিস!
লুসিয়া সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিলো।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে, দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বললো “ক্রাশ নাকি তা জানি না, কিন্তু… ওর সাথে কিভাবে আবার দেখা হবে সেটা ভাবছি।ফারহান একটু অন্যরকম।“
লুসিয়ার বান্ধবী তার মনের অবস্থা বুঝে মুচকি হাসলো এবং একটি বুদ্ধি দিলো।সে রহস্যময় হাসি নিয়ে বললো “আরে! তুই তো বললি ও তোর ভাবির ভাই! তোর তো কাজটা সহজ হয়ে গেলো।“
লুসিয়া অবাক হয়ে তাকালো।তার বান্ধবী নিজে থেকেই সমাধান দিলো “তুই তোর ভাবি-র কাছ থেকে ওর ফোন নম্বরটা যোগাড় করে নে। আর তোর কাছে যে ওর জ্যাকেটটা আছে, সেই জ্যাকেট ফেরত দেওয়ার বাহানায় আবার দেখা করতে পারিস! এটাই পারফেক্ট বাহানা!“
লুসিয়া এই সহজ কিন্তু চতুর বুদ্ধি শুনে উৎসাহিত হয়ে উঠলো। তার চোখে তখন একটি নতুন আলো। ফারহানের সাথে দেখা করার সুযোগ পাওয়ার এই সহজ উপায়টি তার ভেতরে এক ধরনের আনন্দ সৃষ্টি করলো।
.
.
.
.
মেক্সিকো সিটির উপকণ্ঠে মেইলস্ট্রোমের কঠোর প্রহরায় ঘেরা আস্তানায়, তার এনক্রিপ্টেড ফোনটি বেজে উঠলো। খবরটি ছিল অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি ছিল তার মালিকানাধীন একটি বিশাল,
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জমি নিয়ে। সেই জমিতে কোটি টাকার প্রজেক্ট—একটি জমকালো ক্যাজাডোর শপিং মল, ক্যাসিনো ক্লাব এবং বার—তৈরির কথা। কিন্তু সেই সাইটটিতে সান মাতেও গ্রামের কিছু দরিদ্র মানুষ ঘর তুলে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। প্রজেক্ট শুরু করতে হলে তাদের উচ্ছেদ করা আশু প্রয়োজন।
মেইলস্ট্রোম, তার বর্তমান মানসিক অবস্থা যাই হোক না কেন, সে ছিল ক্ষমতা এবং লাভের এক কঠিন নিয়মের দাস। তার চোখ, যা মুহূর্তকাল আগেও হতাশায় ভরা ছিল, তা এখন নির্মম এবং শীতল হয়ে উঠলো। দরিদ্র মানুষের জীবনের প্রয়োজন নয়, বরং তার সামনে তখন কেবলই সেই কোটি টাকার প্রকল্পের পথে আসা বাধা।
ব্যক্তিগত ক্ষোভ মুছে গেল, তার জায়গায় এলো অপরাধ জগতের শীতল হিসেব।
মেইলস্ট্রোম ফোনে নির্দেশ দিলো, স্বর বরফের মতো ঠান্ডা তার “রাস্তা ক্লিয়ার রাখো। আমি আসছি।“
সে দ্রুত তার ট্যাকটিক্যাল জ্যাকেটটি চাপালো।নিজের বিলাসী সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে সে মুহূর্তের মধ্যে আস্তানা থেকে বেরিয়ে এলো। সান মাতেও গ্রামের সেই বসতির দিকে তীব্র গতিতে ছুটে চললো, যেন তার পথে দাঁড়ানো সেই নিরীহ জীবনগুলোকে পদদলিত করাই এখন তার একমাত্র লক্ষ্য।
মেইলস্ট্রোম যখন সান মাতেও গ্রামের সেই জমিতে তার বিলাসী গাড়ি থেকে নামলো, তখন চারপাশের বাতাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। তার চারপাশে তখন তার সশস্ত্র লোকেরা পাহারায়। মেইলস্ট্রোম তার কালো রূঢ় দৃষ্টিতে বস্তির ছোট ঘরগুলোর দিকে তাকালো।তার কণ্ঠস্বরে কোনো দয়া নেই “সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাও! এই জমি এখন আমার।“
দরিদ্র মানুষগুলো তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার সামনে এসে মিনতি করতে লাগলো। গ্রামবাসী হাতজোড় করে বলতে লাগলো “স্যার, আমরা গরীব মানুষ। আম…আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দয়া করুন…“
ঠিক তখনই, ভিড়ের মধ্য থেকে সেই জমির আসল মালিক, অসিত সরকার (অসহায় ধনী লোক), এগিয়ে এলেন। তিনি সাহস করে মেইলস্ট্রোমের সামনে দাঁড়ালেন। তার কণ্ঠস্বরে ক্ষীণ দৃঢ়তা নিয়ে বললেন “এই জমির দলিল আমার নামে। আর আমি—আমি এসব অসহায় গরীব মানুষকে এখানে থাকতে দিয়েছি।“
মেইলস্ট্রোম শুষ্ক হাসি হেসে বললো “আমি জানি। সেই জন্যই আমি পেপার এনেছি। সাইন করে দিলেই সব মিটে যায়।“
অসিত সরকার প্রতিজ্ঞা করে বললেন “মরে গেলেও আমি এই মানুষদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে সাইন করবোনা।“
মেইলস্ট্রোম তখন তার ঠোঁট থেকে সিগারেটটা ফেললো এবং জুতোর নিচে পিষে নেভালো। তাঁর চোখে তখন উন্মত্ত হিংস্রতা। সে অসিতের সামনে এসে দাঁড়ালো।
তারপর অত্যন্ত ঠান্ডা ফিসফিসানি কন্ঠে বললো “সাইন করতে হবে না। টিপ সই করলেই চলবে।“
অসিত কিছু বোঝার আগেই মেইলস্ট্রোম বিদ্যুতের গতিতে অসিতের ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা চেপে ধরলো।তারপর তার পকেট থেকে ছুঁড়ি বের করে এক টানে আঙুলটা হাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। আঙুলটা মাটিতে পড়ার আগেই মেইলস্ট্রোম সেটিকে ধরে, রক্ত ঝরন্ত আঙুলটি দলিলের নির্দিষ্ট স্থানে জোরে চেপে ধরলো।
মেইলস্ট্রোম রক্তাক্ত দলিল উঁচু করে ধরে বললো, সবাইকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে “এই জমি এখন আমার! সবাই এখনি বেরিয়ে যাও!“
মানুষগুলো ভয়ে পাথর। ঠিক তখনই, ভিড়ের মধ্য থেকে এক বয়স্ক লোক লাঠি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এলেন।
বয়স্ক লোকটা চিৎকার করে বললেন “এসব জুলুম বেশি দিন টিকবে না!আমরা এখান থেকে এক পা ও সড়বো না।“
কোনো দ্বিতীয় চিন্তা না করে, মেইলস্ট্রোম পিস্তল বের করে গুলি করলো। লোকটি সেখানেই লুটিয়ে পড়লো। বাকি গ্রামবাসী ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
মেইলস্ট্রোমের নির্দেশে তার লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে সব গরীবের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে লাগলো। সেই বয়স্ক লোকটিকে যেখানে গুলি করা হয়েছিল, তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছুটে এসে লাশের ওপর পড়ে কাঁদতে শুরু করলো।
মেইলস্ট্রোম তখন ঠাণ্ডা চোখে এই দৃশ্য দেখলো। তার গাড়ি থেকে এক বস্তা টাকা ছুঁড়ে মারলো সেই পরিবারটির দিকে।
বৃদ্ধার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে, টাকা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো “তুই বিনা কারণে আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছিস! আমি আল্লাহর কাছে অভিশাপ দিলাম! তুইও শাস্তি পাবি! কিন্তু তুই মরবি না…তোকে আল্লাহ মৃত্যু দেবেনা তোকে এরচেয়েও কঠিন শাস্তি দিবেন তিনি,আমার স্বামীর মতোই তোর চোখের সামনে তোর সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে কাছের কেউ মরবে… আর তুই তাকে সেদিন বাঁচাতে পারবি না!“
মেইলস্ট্রোম সেই অভিশাপ শুনে কেবল শয়তানের মতো হাসলো। সেই হাসি ছিল তার ভয়হীনতা ও অহংকারের প্রতীক। সে আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে, ধোঁয়া ও কান্নার শব্দ পেছনে ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
.
.
.
.
রায়হানের কাছ থেকে রাহিয়ান চৌধুরী এবং জাভিয়ানের শৈশবের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি শোনার পর রাতে তান্বীর চোখে ঘুম এলো না। জাভিয়ানের সেই কঠিন, নির্মম ব্যক্তিত্বের পেছনে যে এক ভীষণ আঘাতপ্রাপ্ত কিশোর লুকিয়ে আছে, সেই চিন্তা তাকে বিচলিত করে রাখলো। তার মনে এখন আর ঘৃণা নেই, আছে কেবল গভীর মায়া।
অনেক রাতে জাভিয়ান বাড়ি ফিরলো। লুসিয়ার ঝামেলা মেটানো এবং অন্যান্য কাজ সেরে সে যখন তাদের কক্ষে প্রবেশ করলো, তখন ঘর অন্ধকার।সে প্রথমে বিছানার দিকে তাকালো। তান্বীকে সেখানে দেখতে না পেয়ে জাভিয়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল।
জাভিয়ান বিরক্ত কণ্ঠে, মনে মনে বললো “আমার অপদার্থ বউটা কোথায় গেলো? এত রাতেও ঘুমাচ্ছে না কেন?“
সে আলো জ্বালিয়ে দিলো। জাভিয়ানের ঠোঁটে এক বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। জাভিয়ান তখন উচ্চস্বরে ডাকলো “মিসেস ট্রমা! হোয়ার আর ইউ?“
জাভিয়ানের ডাক শেষ হতেই তান্বি বাইরে থেকে কক্ষে প্রবেশ করলো।তার হাতে ছিল এক গ্লাস ঠান্ডা জল। জাভিয়ানের মুখের দিকে কোনো রূঢ়তা না দেখিয়ে, সে শান্তভাবে গ্লাসটি টেবিলের ওপর রাখলো।
জাভিয়ান সেই দৃশ্য দেখে মুহূর্তে স্তব্ধ! সে এক গ্লাস জলের দিকে তাকালো, তারপর তান্বীর দিকে। জাভিয়ান বুঝতে পারলো না, সে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব। এটা সেই তান্বী, যে সব সময় তাকে উপেক্ষা করে? সেই তার জন্য পানি নিয়ে এসেছে?
জাভিয়ান অবাক হয়ে, সন্দেহজনক কণ্ঠস্বরে বললো “তুমি… তুমি কি ঠিক আছো?তোমার কি জ্বর টর এসেছে নাকি?“
তান্বী জাভিয়ানের চোখে চোখ রাখলো। তার চোখে ছিল এক শান্ত দৃঢ়তা, সেখানে বিতর্কের কোনো চিহ্ন ছিল না।সে সহজভাবে উত্তর দিলো “জ্বর আসতে যাবে কেন? আমি একদম সুস্থ।“
জাভিয়ান তান্বীর কথা শুনে আর সন্দেহ কমাতে পারলো না।সে এগিয়ে এসে আলতো করে তান্বীর কপালে হাত রাখলো।দেখলো, তার শরীর একদম স্বাভাবিক, সুস্থ।
তান্বী তখন জাভিয়ানের পাশে সোফার নরম অংশে বসে পড়লো। তার মনে তখন জাভিয়ানের প্রতি কেবল মায়া।সে কণ্ঠে অনুরোধের সুরে বললো “বলছিলাম, কাল কি একটু বাবা-মাকে দেখাবেন? আর হ্যাঁ, আমি চাইছিলাম একটু এলিনা আপুর নামে কোনো একটা মসজিদ বা এতিমখানাতে মিলাদের আয়োজন করতে।“
জাভিয়ান চোখ ছোট করে তান্বীর দিকে তাকালো। এই ধরনের আধ্যাত্মিক বা সংবেদনশীল আলোচনা তান্বীর মুখ থেকে শুনে সে অবাক। তান্বী মাথা নিচু করে বললো “কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই। আপনি কি আমাকে লোন দিতে পারবেন? কথা দিচ্ছি, আমি সময় মতো ফেরত দিয়ে দেবো।“
জাভিয়ান এক বিপজ্জনক হাসি হাসলো।সে আরেকটু ঝুঁকে তান্বীর আরও কাছে এসে বসলো। দুজনের মধ্যেকার দূরত্ব তখন খুবই কম।সে কণ্ঠস্বর গভীর করে, খেলার ছলে বললো “ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে কিছু না কিছু বন্ধক রাখতে হয়। তুমি কি রাখবে আমার কাছে?“
তান্বীর মুখ হতাশায় ভরে উঠলো। সে তার পরিস্থিতি ভালো করেই জানে।সে অসহায়ভাবে বললো “আমার নিজস্ব কোনো অলংকার নেই যে আমি বন্ধক রাখবো। যা আছে আলমারিতে, সব তো আপনার মায়ের দেওয়া। ওগুলো আপনারই।“
জাভিয়ান ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলোতো “আমি এসব কিছু বন্ধক নিবো না।“
তান্বী বিভ্রান্ত হয়ে জানতে চাইলো “তাহলে কি নিবেন?“
জাভিয়ান উত্তর দেওয়ার আগে আরও খানিকটা ঝুঁকে এলো। তার দৃষ্টি তখন তান্বীর ঠোঁটে স্থির। সে ঠোঁটজোড়ার দিকে ইশারা করলো।
জাভিয়ান দম বন্ধ করে দেওয়ার মতো ফিসফিসানি কন্ঠে বললো “এটা।“
তান্বী সেই ইঙ্গিত বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে উঠলো। তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল।সে প্রায় আর্তনাদ করে বলে উঠলো “মোটেও না!“
জাভিয়ান তার অসহায়ত্ব দেখে আরও মজা পেলো।
সে চোখে প্ররোচনা নিয়ে, শান্তভাবে বললো “ভেবে দেখো। শুধুমাত্র একটা কিস—আর অনেক টাকা লোন পাবে।“
জাভিয়ানের শেষ কথা শুনে তান্বী নিজেকে সামলে নিলো। তার মুখ লজ্জায় লাল, কিন্তু কণ্ঠে তীব্র প্রতিবাদ।সে ক্ষোভে ও রাগে বললো “ছিঃ! আপনার কি ধারণা আমি টাকার জন্য আমার বডি সেল করবো?“
জাভিয়ান সেই কথা শুনে হেসে উঠলো।সে তার মাথা নেড়ে সংশোধনী দিলো। জাভিয়ান তখন কৌতুক ও প্ররোচনা কন্ঠ মিশিয়ে বললো “শরীর পর্যন্ত তো যাওয়ার কথা হয়নি। আমি কেবল তোমার ঠোঁটের মূল্য চাইছিলাম।“
তান্বী তখন জাভিয়ানের দিকে ভালো করে তাকালো। তার সমস্ত রাগ যেন মুহূর্তের জন্য সেই শারীরিক আকর্ষণের কাছে থমকে গেল। জাভিয়ানের ঠোঁট সত্যি আকর্ষণীয় একবারে স্ট্রবেরির মতোই তাজা। তার ঠোঁটের আকৃতি ছিল একদম লাভ শেইপের। ঠোঁটের ডানপাশে ছিল একটি ছোট তিল, যা তার চেহারায় এক বিশেষ আকর্ষণ যোগ করেছে।
তান্বীর চোখ স্থির হলো জাভিয়ানের নাকের দিকে—তার নাকের বাম পাশে ছিল মিডিয়াম সাইজের একটা তিল। এরপর সে মাথাটা একটু ঘুরিয়ে তার কান বরাবর তাকালো—কানের নিচেও একটি তিল।তান্বী তখন বিস্ময় ও কৌতুক মিশিয়ে বললো “আপনার শরীরে এতো তিল! আপনি কি তিলের বংশধর নাকি?“
জাভিয়ান এই অপ্রত্যাশিত কৌতুক শুনে সামান্য হাসলো। সে তান্বীর মনোযোগ ঘোরানোর চেষ্টাটা বুঝতে পারলো।তাই সে আলতো করে বললো “যেটা খুশি ভাবো। তার আগে বলো, লোন চাও নাকি না?“
জাভিয়ানের শেষ কথায় তান্বী আর কোনো উত্তর দিল না। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। তার সেই নীরবতা ছিল জাভিয়ানের জন্য যথেষ্ট সংকেত।
জাভিয়ান তখন বসা থেকে উঠে এলো। তার পদশব্দে তান্বী কেঁপে উঠলো। জাভিয়ান তার কানের পাশে মুখ নিয়ে অত্যন্ত গাঢ় কণ্ঠে ফিসফিস করে বললো “নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি…”
তান্বী সেই উষ্ণ নিশ্বাসে কেঁপে উঠলো। জাভিয়ান তখন বুঝলো,তান্বীর ভেতরে সম্মতি আছে।সে তাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো।আর কানের কাছে ফিসফিস করে, চরম প্ররোচনা নিয়ে বললো “যদি চুমু খেতে খেতে আমার হাত অন্য কোথাও চলে যায়, তুমি কি মাইন্ড করবে?“
তান্বী সেই কথায় চূড়ান্তভাবে অপমানিত বোধ করলো। সে এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।সে চিৎকার করে বললো “অসভ্য লোক!“
সে ছুটে যাচ্ছিলো, কিন্তু জাভিয়ান তার হাত চেপে ধরে ফেললো।জাভিয়ান স্বর নরম করে কিন্তু কর্তৃত্ব ধরে বললো “ওকে, আমার হাত কোথাও যাবে না। আমি কন্ট্রোল করে রাখবো।“
এই বলে জাভিয়ান এক টানে তান্বীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।১৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতার জাভিয়ানের বুকের কাছেই এসে পড়লো তান্বী। জাভিয়ানের দিকে তাকাতে হলে তাকে ঘাড় এবং চোখ দুটোই উপরে তুলতে হয়, কিন্তু এই মুহূর্তে তান্বী লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো।
জাভিয়ান বাঁকা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো “বাহ! তুমি আবার লজ্জাও পেতে জানো?“
তান্বী রাগে মাথা তুলে তাকালো।সে কণ্ঠে ক্রোধ নিয়ে বললো “আমাকে কি আপনার মতো নির্লজ্জ মনে হয়?“
জাভিয়ান তখন বাঁকা হাসলো। সে তার বাঁ হাতটি বাড়িয়ে তান্বীর গলাটি হালকাভাবে চেপে ধরলো—যা ছিল শাসন ও আকর্ষণের এক মিশ্রণ। তার হাতের দুই নম্বর আঙুলটা তান্বীর কানের কাছে আলতো করে ছুঁয়ে ছিল।
ধীরে ধীরে জাভিয়ান তার মুখ তান্বীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আনলো। হঠাৎ করেই জাভিয়ানের পকেটে রাখা ফোন বেজে উঠলো। তান্বী কেঁপে উঠলো।
তান্বী শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে বললো “আপনার ফোন এসেছে…“
জাভিয়ান চোখ না সরিয়ে, ঠান্ডা গলায় বললো “Forget it.“
জাভিয়ানের ঠোঁটের সাথে তান্বীর ঠোঁট স্পর্শ করার ঠিক আগেই ফোনটি আবার বেজে উঠলো।জাভিয়ানের চোখ তখন ক্রোধে জ্বলে উঠলো। তার সেই মুহূর্তের ঘোর কেটে যাওয়ায় সে চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হলো।
সে এক হাতে পকেট থেকে ফোন বের করলো এবং শক্তিশালী হাতে সেটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো। তীব্র শব্দে ফোনটি ভেঙে গেল।
জাভিয়ান আবার তান্বীর দিকে ঝুঁকলো। তাদের দুজনের ঠোঁটের মধ্যে তখন আর কোনো বাধা ছিল না।
জাভিয়ান আর অপেক্ষা করলো না। ফোন ছুঁড়ে ফেলার পর যেটুকু নীরবতা ছিল, তা ভেঙে গেল। সে এবার তান্বীর অধর সম্পূর্ণভাবে নিজের অধরের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।
স্পর্শের তীব্রতায় তান্বীর সারা শরীর অবশ হয়ে গেল। তার মনে হলো সেদিনের মতোই হয়তো সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। তার বুক জোরে জোরে উঠানামা করতে লাগলো, হৃৎপিণ্ডের গতি এতটাই বেড়ে গেল যে মনে হলো এই বুঝি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।
জাভিয়ানের এক হাত ছিল তান্বীর কোমরে, যা তাকে শক্ত করে নিজের দিকে টেনে ধরেছিল। অন্য হাতটি তখনও তান্বীর গলায়, যা ছিল চরম কর্তৃত্বের প্রতীক। তান্বী সেদিনের মতোই নিজের ঠোঁট খুলে না রেখে শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছিল।
জাভিয়ান সেই বাধাকে উপেক্ষা করলো না। সে গলায় রাখা হাতে ধীরে ধীরে জোরে চাপ দিতেই তান্বীর ঠোঁট সামান্য ফাঁক হয়ে গেলো। আর ঠিক সেই মুহূর্তে জাভিয়ান আবারও সেই ঠোঁট নিজের অধরের গভীরতায় নিয়ে নিলো।
তান্বী তখন তার সমস্ত প্রতিরোধ হারিয়ে ফেলেছে। সে জাভিয়ানের কোমরের কাছে শার্টের দুই পাশ খামচে ধরে রাখলো। তার সমস্ত ভার সে জাভিয়ানের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে।
জাভিয়ান তখন তীক্ষ্ণ যন্ত্রনা নিয়ে নিজেকে সংযম করে রাখছিলো। তার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছিল, কোমরে থাকা হাতটিকে তুলে নিয়ে তান্বীর সারা শরীরে স্পর্শ করতে, কিন্তু সে তার দেওয়া প্রতিজ্ঞা—হাত অন্যত্র যাবে না—ভেঙে দিতে পারলো না। জাভিয়ান নিজের ইচ্ছাকে নির্মমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কেবল তান্বীর ঠোঁটেই নিজেকে স্থির রাখলো।
জাভিয়ান তার সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলো। সেই সংযমের বাঁধন ভেঙে যাওয়ায় তার ভেতরের ক্রোধ ও আকর্ষণ এক হিংস্র রূপে বেরিয়ে এলো।
সে তান্বীর নিচের ঠোঁটে জোরে কামড় বসিয়ে দিলো।
তীব্র ব্যথায় তান্বী আর্তনাদ করে উঠলো এবং নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। সে জাভিয়ানের চওড়া বুকে ধাক্কা দিলো, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না।
জাভিয়ান তখন আরও আগ্রাসী হলো। সে তান্বীর দুটি হাত ধরে এক হাতের মুঠোয় শক্ত করে রাখলো। অন্য হাতটি দিয়ে তান্বীর চুল মুঠো করে ধরে সেই চুম্বনকে আরও হিংস্র ও আগ্রাসী করে তুললো।
এই মুহূর্তে তান্বীর ঠোঁট জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। জাভিয়ানের সেই নির্দয় চাপ এবং ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তার চোখ দিয়ে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়লো। এই চুম্বন ছিল না কোনো প্রেমের বহিঃপ্রকাশ—এ ছিল জাভিয়ানের নিজের ভেতরের যন্ত্রণার এক শক্তিধর প্রকাশ।
চলবে…………
(রিচেক করিনি তাই ভুলত্রুটি থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন )
Share On:
TAGS: ডিজায়ার আনলিশড, সাবিলা সাবি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ৬
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৯
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১২
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৫
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১১
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ১৮
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ২৩
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ৪(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ৫
-
ডিজায়ার আনলিশড পর্ব ২