ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১
কাঁদতে কাঁদতে রেজিস্ট্রি পেপার ভিজিয়ে ফেলেছে তরু। কোনো ভাবেই সে এই বিয়ে করবে না। মরে গেলেও সাইন করবে না।পাশে দাঁড়ানো মার্জিয়া বেগম চুলের মুঠি চেপে ধরে পর পর দুটো থাপ্পড় মারলেন তরুকে।মেঝেতে ধপ করে পরে গেলো তরু। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো।কিন্তু একটুও মায়া হলো না মার্জিয়ার। আবারো চুলের মুঠি ধরে বসালো।
” সাইন কর”
“করবো না”
আবারো থাপ্পড় মারলেন মার্জিয়া।এবার ঠোঁটের এক পাশ কেটে গেলো তরুর।তবুও সে সাইন করবে না।সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে নির্দয় লোকটা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তরু মুখ ফিরিয়ে নিলো। গলায় দড়ি দিবে তবুও সে এই লোকটাকে বিয়ে করবে না।
মৃন্ময় মার্জিয়াকে ইশারা করলো। মার্জিয়া তৎক্ষণাৎ তরুকে টেনে হিঁচড়ে মৃন্ময়ের পায়ের কাছে ফেলল।মুখ তুললো তরু। মৃন্ময় আলগোছে তরুর মুখের সামনে থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে কি যেন বললো ফিসফিসিয়ে।মুহূর্তেই কেঁপে উঠল তরু।মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সে সাইন করে ফেললো।
তরুর কাঁপা হাত থেকে কলমটা গড়িয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। সই করা পেপার মৃন্ময়ের হাতে চলে গেল মুহূর্তেই। ঠান্ডা, নির্লিপ্ত চোখে সে কাগজের দিকে তাকিয়ে একরকম সন্তুষ্টির হাসি খেলাল ঠোঁটে। মৃন্ময়ের কানে বলা কথাগুলো যেন বিষের মতো গিলে ফেলেছে তরুকে। প্রতিটি শব্দ এখনও কানে বাজছে, বুকের গভীরে জমে থাকা এক অজানা আতঙ্ক যেন ছিঁড়ে খাচ্ছে তার শ্বাস।
মার্জিয়া বেগম তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, যেন দীর্ঘদিনের যুদ্ধ শেষে জয় পেয়েছেন।
“কাজ শেষ,” ঠান্ডা গলায় বললেন তিনি।
তরু মাথা নুইয়ে বসে রইল। তার চারপাশে যেন শব্দহীন এক অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ল। পা নড়ানোর শক্তিও নেই। হঠাৎ অনুভব করলো তার শরীর যেন হাওয়ায় ভাসছে। মৃন্ময় কোলে তুলে নিয়েছে তাকে। সোজা বেরিয়ে গেলো সেই বাড়ি থেকে।গাড়ির ড্রাইভিং সিটে তরুকে কোলে নিয়েই বসলো।
গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন যেন চারপাশের রাতকে ছিঁড়ে ফেলল। জানলার বাইরে গাছপালার ছায়া হুহু করে ছুটে যাচ্ছে। মৃন্ময় স্টিয়ারিং ধরেছে।চোখে শীতল কঠোরতা। তরুকে এক হাতে বুকে চেপে ধরে আছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে তরু।মৃন্ময় স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরলে।অদ্ভুত ভাবে তার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।তরুর কান চেপে ধরলো এমন ভাবে যেনো কোনো শব্দ তার হাত গলিয়ে তরুর কান অব্দি পৌঁছাতে না পারে।
তাদের গাড়ি কিছুদূর যেতেই হঠাৎ তীব্র এক শব্দ হলো। যেনো কোথাও বিশাল বিস্ফোরণ হয়েছে। আসে পাশে সব কিছু অস্বাভাবিক হয়ে উঠল।মানুষের কোলাহল।সব কিছুকে এড়িয়ে গাড়িটা ছুটে চলেছে নিজ গন্তব্যে।
রাস্তার শেষে বিশাল লোহার গেট খুলে গিয়ে থেমে গেল গাড়ি। পাহাড়ি ঢালের গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো এক প্রাসাদ।অর্ধচন্দ্রের আলোয় কালচে নীল দেখাচ্ছে। নিঃশব্দে গেট বন্ধ হতেই বাতাসের শব্দও যেন নিঃশেষ।
মৃন্ময় নেমে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল, “নামো।”
তরু নড়ল না। ক্লান্ত, অবসন্ন। মৃন্ময় কোনো কথা না বলেই তাকে কোলে তুলে নিল। শীতল বাতাসে তরুর কাঁপুনি আরও বেড়ে গেল।প্রাসাদের ভিতরে মৃদু আলো জ্বলছে। বড় বড় ঝাড়লণ্ঠনের নিচে নিস্তব্ধ ফাঁকা হলঘর। মৃন্ময় সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।
এক কোণের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল সে। ঘরটিতে বড় এক জানালা।চাঁদের আলো এসে মেঝেতে রুপালি রেখা এঁকেছে। মৃন্ময় তাকে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।ওয়াশরুমের ভেতর আলো ম্লান।মৃন্ময় তরুকে ধীরে ধীরে মেঝেতে নামিয়ে দিল। তার চোখে ঠান্ডা রাগ। তরু মাথা নুইয়ে ফেলল।সারা শরীর কাঁপছে। ঠোঁটের কোণে জমে থাকা শুকনো রক্ত মৃন্ময়ের চোখে ধরা পড়তেই সে পাশে রাখা তোয়ালে ভিজিয়ে নিল।কথা না বলেই তরুর ঠোঁটের পাশটা আলতো করে মুছতে লাগল। তরু হালকা কুঁকড়ে গেল, কিন্তু প্রতিবাদ করল না। মৃন্ময় হঠাৎ থেমে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের নীরবতার তোয়ালে সরিয়ে নিলো সে।তরুর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। মুহূর্তেই যেন হতবিহ্বল হয়ে গেলো তরু। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেলো।কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। ক্রমশই মৃন্ময় তাকে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছে।শরীরের সব টুকু শক্তি একত্রে করে তরু ধাক্কা দিলো তাকে।কিন্তু এক চুল ও নড়াতে পারল না।
বেশ কিছুক্ষণ পর তরুকে ছাড়ল।ধপ করে বসে পড়ল সে।মৃন্ময় হাসলো। নিজেও হালকা ঝুঁকে তরুর থুতনিতে হাত রাখলো। উঁচু করে ধরে বলল,
“তোমার ঠোঁট জোড়ার টেস্ট, উম্ম”
কিছু বলতে পারল না তরু।শুধু বসে থাকা ছাড়া।
“দ্রুত গোসল সেরে নেও।তোমার হাতে আছে মাত্র ২০। মিনিট।এর মধ্যে বাইরে বের হবে।এক সেকেন্ড লেট হলে…। তোয়ালে পরে বাইরে বের হবে।কাবার্ড এ শাড়ী আছে।ওখান থেকে লাল টা পড়বে।দরজা যেন লাগানো না হয়।”
বলেই ঝরনা ছেড়ে বেরিয়ে গেলো মৃন্ময়।তরু ঠান্ডা মেঝেতে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ বসে রইল। শরীর কাঁপছে।
ওয়াশরুমের দরজার বাইরে পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেছে।
তরু মাথা তুললো।“এখন না হলে আর কখনও নয়।”
সাবধানে উঠে দাঁড়াল। শ্বাস ধীর করার চেষ্টা করল। মনে পড়ল মাথায় থাকা কাটা টার কথা।যেটা স্কুলের সময় থেকে সব সময় সঙ্গে রাখে। কাটাটা বের করল।
দরজার লক পরীক্ষা করল।সাধারণ স্লাইড লক। কাঁপা হাতের মধ্যে পিন ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে ঘোরাতে লাগল।
মুহূর্তের মধ্যে টিক করে শব্দ হলো। দরজা আধা ইঞ্চি ফাঁক হয়ে গেল।
বাইরে ঘন অন্ধকার। করিডরের দূরের দিক থেকে মৃদু আলো এসে পড়ছে। নিঃশব্দে পা বাড়াল। নিচতলা থেকে যেনো গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ ভেসে এলো।মৃন্ময় বাইরে গেছে।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে একটা জানালার ফাঁক দেখতে পেল। লোহার গরাদ পুরনো।কিন্তু একদিকে মরচে পড়া। পুরো শক্তি দিয়ে গরাদটা ঠেলে দিল। একটুখানি ফাঁক হলো। শরীর সঁপে দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে অবশেষে গরাদের ফাঁক পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল সে।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা রাতের বাতাসে তরুর নিশ্বাস দ্রুত হতে লাগল। দূরে নিচে একটা গ্রাম দেখা যাচ্ছে, মিটমিটে আলো। সে দৌড়াতে শুরু করল।
রাতের পাহাড়ি বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে তরু দৌড়োতে লাগল। খালি পায়ে কাঁকড়া পাথরে পা কাটলেও সে থামল না। গাছের ডাল গায়ে আঁচড় কাটল, কিন্তু সেই ব্যথাও যেন এখন আর কিছু নয়।সবচেয়ে বড় ব্যথা থেকে বাঁচতে হবে তাকে।নিচের দিকে ঢাল ক্রমেই খাড়া হচ্ছে। হঠাৎ এক জায়গায় পা হড়কে গেল। গড়িয়ে পড়ে হাত কেটে গেলো তীব্র পাথরে। রক্ত মিশে গেল ভেজা মাটিতে। দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়াল তরু। মনের ভেতর একটাই শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে।বাঁচতে হবে… যেভাবেই হোক।
দূর থেকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে এল। গ্রামটা কাছে। কিন্তু পেছন দিক থেকে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ির হেডলাইটের ঝলকানি! মৃন্ময় কি ফিরে এসেছে? বুকের ভেতর হঠাৎ তীব্র ধুকপুক।
তরু পাশের ঘন ঝোপের মধ্যে গিয়ে লুকোল। শ্বাস আটকে রাখল। গাড়ির শব্দ ক্রমশ কাছে আসছে। তারপর থেমে গেল। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।তারপর ভারী জুতোর শব্দ শুনতে পেলো।হঠাৎ,,,
চলবে,,,,
Dark_Desire
ডার্ক_ডিজায়ার
দূর্বা_এহসান [ লেখনীতে ]
সূচনা_পর্ব
Share On:
TAGS: ডার্ক ডিজায়ার, দূর্বা এহসান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডার্ক সাইড অফ লাভ পর্ব ১
-
ডার্ক সাইড অফ লাভ পর্ব – ২
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৮
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১২
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৯
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৩(প্রথমাংশ + শেষাংশ)
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৫
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১০
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৪
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৭