১৫.
Dark_Desire
ডার্ক_ডিজায়ার
দূর্বা_এহসান
“মৃন্ময়”
চিৎকার করে তরু চোখ খুলতেই বুঝতে পারল। এখানে আলো নেই, কেবল অন্ধকারের ভার।চোখে-মুখে ঘাম তার। বাতাসে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ। মাথাটা ব্যথা করছে। চারপাশে কাঠের বাক্স, পুরনো লোহার শেলফ আর মেঝেতে ছড়ানো তার। এক কোণে একটা ছোট জানালা।ধুলোয় বন্ধ। বাইরে থেকে ম্লান আলো ফুঁটো ফুঁটো হয়ে ঢুকছে।
সে নড়তে গেল, কিন্তু হাত-পা যেন ভারী কিছু দিয়ে বাঁধা। চোখ নিচে নামিয়ে দেখল। তার হাত দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা খাটের পায়ার সঙ্গে। গোড়ালিতেও বাঁধন। ঠান্ডা লোহার স্পর্শে শরীর কেঁপে উঠল।
তরুর গলা শুকনো। ঠোঁট ফাটা।মনে পড়ছে কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি। কেউ একজন ভোরে দরজায় নক করেছিল। সে খুলেছিল কিন্তু তারপরে মুখে কাপড় চেপে দেয় কেউ। তারপর সব অন্ধকার।
“কে… কে আছে?”
কাঁপা গলায় বলে উঠল তরু।শব্দটা ঘরের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলো, যেন নিজের প্রতিধ্বনি।কোনো উত্তর নেই।মিনিট পেরিয়ে যায়। বাতাসে ঝুলে থাকা ধুলো রোদে ভাসে, যেন সময়ও এখানে থেমে গেছে।তরু চোখ বন্ধ করে শ্বাস ঠিক করার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে যায় মৃন্ময়ের মুখ।
গুদামঘরের চারপাশে কুয়াশা জমেছে। ভেতরে নিস্তব্ধতা, মাঝে মাঝে পুরনো পাখার কাঁপা আওয়াজ।তরু তখনও বসে আছে। হাতের দড়ি আধখানা খুলে ফেলেছে। আঙুলে চামড়া ছিঁড়ে গেছে, তবুও থামেনি। তার এখান থেকে বেরোতেই হবে।
ঠিক তখনই দরজার বাইরে পদশব্দ।তরু তাড়াতাড়ি আবার হাতটা দড়ির ভেতর ঢুকিয়ে নিল, যেন কিছুই হয়নি।
দরজাটা খুলল।আলোয় ঢুকল একজন মহিলা ।কালো পোশাক, লম্বা চুল বাঁধা। হাতে একটা ছুরি।
তরু তাকিয়ে রইল। মুখটা চেনা মনে হচ্ছে। হালকা আলোয় সে এবার স্পষ্ট দেখতে পেলো।আশ্চর্য হয়ে বললো,”রজনী!”
হাসলো রজনী। কুটিল হাসি।তরুর সামনে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
তরুর বুকের ভেতর কেমন জানি ধাক্কা লাগল।
“তুমি!আমায় কেন এখানে রেখেছ?”
“চল তোকে মারার আগে ,তোর একটা ভুল ভাঙাই”
তরু চোখে চোখ রাখে। রজনীর ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি।তারপর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে, একটা অডিও প্লে করে।রেকর্ডার থেকে ভেসে আসে এক কণ্ঠ, মৃন্ময়ের!
“মেরে ফেল ওকে।একটাও প্রমাণ যেন না থাকে”
তরুর নিঃশ্বাস থেমে গেল। শব্দটা যেন বুকের ভেতর ঢুকে গেল ছুরি হয়ে।চোখের সামনে জ্বলে উঠলো বছর ৪ আগের সেই দিনটা। যেদিন বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল। পাশেই ফোনে ঠিক এই কথাগুলো ছিল।
তরু কাঁপা গলায় বলে উঠল, “এটা…এটা কোথা থেকে পেলে?”
রজনী ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইল।তারপর মৃদু হাসল।
“এইটা? এইটা সেই রাতের রেকর্ড, যেটার কারণে তুই ভুল বুঝেছিলি। তোকে দেখানো হয়েছিল অন্য কিছু।মৃন্ময়কে ‘অপরাধী’ বানানো রেকর্ড টা। মনে আছে?”
তরুর শরীর জমে গেল। ‘মৃন্ময়কে অপরাধী বানানো’!! সে আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে রইলো রজনীর দিকে। শব্দ করে হাসলো রজনী।
“ওখানে যা দেখেছিলি, সেটা আমি বানিয়েছিলাম।”
রজনীর কণ্ঠ ঠান্ডা, নিস্তরঙ্গ।
“আমার ভাইয়ের কাজ ধামাচাপা দিতে হয়েছে তো, বুঝলি। তোর বোনের সঙ্গে যা ঘটেছিল, সেটা ওরই কাজ।তোর বোন পুলিশে গেলে সব শেষ হয়ে যেত। মৃন্ময় তো বাঁচাতে গেছিল তোর বোনকে।আর আমি ভালোবাসি মৃন্ময়কে ।আমি জানতাম তুই মৃন্ময়ের ওপর অন্ধ বিশ্বাস করিস। সেই বিশ্বাসটাই ভাঙতে হয়েছিল।”
তরু হঠাৎ সামনে ঝুঁকে এল।গলার স্বর কাঁপছে।
“রাফেজ তোমার ভাই!”
রজনী হেসে উঠল।একরকম শীতল হাসি।যেটা হাসির থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।
“হ্যাঁ”
তরু যেন প্রাণহীন হয়ে পড়ল।চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই বিভীষিকাময় দিনটা।
বছর ৪ আগে,
অরু একটা জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক। তার কলমের সামনে বড় বড় কর্পোরেট কিংবা রাজনৈতিক গোষ্ঠীও কেঁপে উঠত।
রাফেজ,অরু তাকে ভালোবাসত সত্যি মনে, নিঃস্বার্থভাবে।কিন্তু সময়ের সঙ্গে রাফেজ বদলে গেল।হয়তোবা শুরু থেকেই অন্যরকম ছিল।অরুর চোখে ধরা পড়েনি।তরু অনেক আগেই টের পেয়েছিল যে রাফেজের মধ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিক চলছে। কিন্তু অরু তখনো অন্ধ ভালোবাসায় বন্দি।কিন্তু তরুর কথাই শেষমেশ সত্যি হলো।
অরু তখন একটা বড় কনস্ট্রাকশন প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করছিল।সেই কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে রাফেজের নাম উঠে এল। প্রথমে অরু বিশ্বাস করতে পারেনি। তারপর হাতে এল কিছু ছবি, কিছু নথি, আর একটা অডিও রেকর্ডিং।যা প্রমাণ করে যে রাফেজ শুধু অনৈতিক কাজেই জড়িত না, সে অবৈধ চুক্তি, এমনকি মানবপাচার চক্রেরও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তরু প্রথমে চেয়েছিল, অরু যেন দূরে থাকে এসব থেকে। কিন্তু অরু থামেনি। সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল সত্য প্রকাশ করা।রিপোর্ট তৈরির আগের রাতেই তরু লক্ষ্য করেছিল, অরু অদ্ভুত চুপচাপ। সেই রাতে অরু একটা কাঁচা কাজ করে বসে।ফোন করে রাফেজকে। জানায় সকালে সব রিপোর্ট জমা দিবে।
পরের দিন সকালে অরু বের হয়েছিল অফিসে যাওয়ার পথে। কিন্তু সে পৌঁছাতে পারেনি। রাস্তার ধারে একটা পরিত্যক্ত গলিতে পরে থাকতে দেখা যায় তাকে।অচেতন, রক্তে ভেজা। মাথায় আঘাত, শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় বন্ধ।
যে সময়টা তাকে তুলে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।তখন তরু ও আরবাজ ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়। ওরা বুঝেছিল, এটা দুর্ঘটনা নয়।সেই রাতেই তরু অরুর ফোনে শেষ রেকর্ড করা কলগুলো শোনে। তার মধ্যে মৃন্ময় এর কন্ঠ শুনে আঁতকে উঠে সে।কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। তার ভালোবাসার মানুষটা এমন কিছু করবে।পরে আরবাজ থেকে জানতে পারে রাফেজ মৃন্ময় এর চাচাতো ভাই। সে সময় তরু সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করে নেয়। ঘৃনা চলে আসে মৃণ্ময়ের প্রতি।
পুলিশ প্রথমে ঘটনাটাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু তরু হাল ছাড়েনি। সে জানত, এটা পরিকল্পিত হত্যা।
অরুর ডেস্কের ড্রয়ারে পাওয়া যায় একটা ইউএসবি ড্রাইভ।যেখানে সংরক্ষিত ছিল সেই প্রমাণগুলো। ঠিক সেই ফাইলগুলোই হতে পারত রাফেজ আর মৃণ্ময়ের পতনের কারণ।
তরু আরবাজ মিলে প্রমাণগুলো পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তদন্ত শুরু হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সব ধামাচাপা পরে যায়।হয়তো টাকা,হয়তোবা ক্ষমতা।
বান্ধবীদের সাথে বাজী ধরে মৃণ্ময়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালেও পরবর্তীতে ভালোবেসে ফেলে মন থেকে।কিন্তু সব যেনো এক মুহূর্তেই ঘৃণায় বদলে যায়।
অরু কোমায় যাওয়ার পর থেকেই তরুর জীবনও যেন থেমে গেছে। প্রতিদিন সে হাসপাতালে যায়, অরুর হাত ধরে বসে থাকে। কথা বলে।যদিও জানে, অরুর থেকে কোনো জবাব আসবে না। তার কিছুদিনের মধ্যে শহর ছাড়ে তারা। অরুকে সেখানে রাখা বিপদজনক হয়ে উঠেছিল।আরবাজ আর একমুহুর্তের জন্য রাখেনি সেখানে।
এক ঝটকায় সেদিন টা থেকে বেরোলো তরু।
“ওটা মৃন্ময়ের ভয়েস ছিল না। ও আসলে বাঁচাতে গিয়েছিল অরুকে, কিন্তু তুই ভাবলি ও-ই দোষী। একটুখানি এডিটিং, একটুখানি মিথ্যা, আর তোর ভালোবাসা শেষ।”
মৃন্ময় বাঁচাতে গেছিল অরুকে!তরুর দৃষ্টি ফাঁকা হয়ে গেল। রজনীর মুখটা কুয়াশার মতো ঝাপসা লাগছে। অরুর কানে যেন সমুদ্রের মতো আওয়াজ, দূর থেকে সেই দিনের করুন সুরে কেউ বলে উঠছে,
“পাখি, আমার দোষ কোথায় ছিল?আমাকে কেন ছেড়ে গিয়েছিলি”
“মৃন্ময়…”
তরু ফিসফিস করে।দুর্বল শরীর।তরুর চোখে জল এসে গেল। মুখ শুকিয়ে কাঠ।
“তুই… তুই এই সব করলি? শুধু তোর ভাইকে বাঁচাতে?”
“না”
রজনী বলল শান্ত গলায়, “শুধু ওকে না। তোকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম। তুই কেড়ে নিয়েছিস আমার থেকে মৃন্ময়কে।”
তরু এখন কাঁপছে। তার চোখে রাগ, দুঃখ, ঘৃণা ।সব মিলেমিশে আগুন।
রজনী ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার চোখের নিচে অন্ধকার ছায়া।
“তুই মরলেই শান্তি আসবে। মৃন্ময়কে নিজের করে পাবো”
তরু চিৎকার করে উঠল, “তুই জানিস না মৃন্ময় এখনো আমায় খুঁজছে! ও আসবে, রজনী! আর সেই দিন তুই নিজের চোখে দেখবি, কাকে ধ্বংস করেছিস!”
শব্দ করে হাসলো রজনী।তরুর মুখের কাছে মুখ এনে বলল,
“ও তোকে কখনোই খুঁজবে না। আমি কি করেছি জানিস?”
“কি?”
“তোর জ্যাকেট পরে এমন ভাবে ঘটনা সাজিয়ে এসেছি যে ও এতক্ষণে নিশ্চই ভাবছে তুই নিজে ওকে ছেড়ে এসেছিস”
তরু স্থির হয়ে গেল। তারপর ধীরে বলল,
“ও তবুও খুঁজবে”
“তুই বেঁচে থাকলে তো”
হাতে থাকা অজ্ঞান করা, ভরা ইনজেকশন তুললো আঘাত করার উদ্দেশ্যে রজনী।তরু চুপ করে তার হাতের দড়ি টানল। আগেই আধখানা খুলে রেখেছিল। এইবার জোরে টান দিতেই দড়ি ছিঁড়ে গেল। তার হাত মুক্ত। ধরে ফেললো রজনীর হাত।এক মুহূর্তেই যেন সব ঘটনা উল্টো হয়ে গেলো।সেই ইনজেকশন রজনীর ঘাড়ে বসালো।
হতবাক হয়ে গেলো রজনী।কিছু বোঝার আগেই তরু কষিয়ে চর মারলো তার গালে।মেঝেতে পড়ে গেলো রজনী।তরু উঠে বসলো তার উপর।এক হাতে চুল শক্ত করে ধরলো। শরীর রাগে দুঃখে কাপছে তার।একটা মানুষ দোষ করেনি তারপরেও সে অপরাধী হয়ে ছিল তরুর চোখে।এই মেয়েটার কারণে।
চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে কয়েকটা থাপ্পর বসালো সে। ইতোমধ্যেই রজনীর চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে।
“আমাকে আলাদা করেছিলি আমার মৃন্ময়ের থেকে!আমাদের চারটা বছর শেষ করে দিয়েছিস তুই।তোকে তো আজকে,,”
থামছে না তরু।একেরপর এক মেরেই যাচ্ছে রজনীকে। র’ক্তা’ক্ত করে ফেলেছে রজনীর মুখ। দুর্বল শরীরে বেশিক্ষণ মারতে পারলো না সে।একসময় হাঁপিয়ে পাশে বসে পড়লো। জ্ঞান হারিয়েছে ততক্ষণে রজনী।
_””
তরু রাস্তায় বেরিয়ে এল কাঁপতে কাঁপতে। শরীরটা দুর্বল, মাথাটা ভার। গুদামঘরের দিকটা এখন অনেক পিছনে। বাতাসে ধুলো, গায়ে রক্ত আর ঘামের গন্ধ। চারপাশে কেউ নেই, শুধু রাস্তার পাশে ঝোপঝাড় আর ভাঙা ল্যাম্পপোস্টের আলো।
সে জানে, এখান থেকে দূরে কোথাও সেই কটেজ টা।পুরনো, পাহাড়ের ধারে। ওটাই এখন একমাত্র জায়গা, যেখানে সে মৃন্ময়কে খুঁজে পাবে।
তরু ধীরে ধীরে হাঁটছে। পায়ে জোর নেই। রজনীর কথা এখনো কানে বাজছে,
“ও তোকে খুঁজবে না।”
তরু ঠোঁট কামড়ে বলে উঠল, “খুঁজবে। অবশ্যই খুঁজবে।”
বৃষ্টি শুরু হলো হঠাৎ। ঠান্ডা জল গায়ে পড়তেই শরীরটা যেন হুঁশে ফিরল। সে দ্রুত হাঁটতে লাগল, তারপর প্রায় দৌড়।
পথে কাদা, অন্ধকার, মাঝে মাঝে ঝিঁঝি পোকার শব্দ। কিন্তু সে থামছে না। একটাই লক্ষ্য,সেই কটেজ। রাস্তায় অটো পেলো। দ্রুত সে উঠে পড়ল।
অনেকক্ষণ পরে দূরে অন্ধকারের মধ্যে একটা ফিকে আলো দেখা গেল। কটেজটা। জানালার ফাঁক দিয়ে মৃদু আলো পড়ছে বাইরে। তরুর বুক ধুকপুক করছে।
সে এগিয়ে গেল। দরজার সামনে এসে থামল। রিসেপশনে বসে থাকা বসু সাহেব ওকে দেখে চমকালেন।তিনি এগিয়ে এলেন। তরু তখন জোরে জোরে স্বাস নিচ্ছে। রুমের দিকে এগিয়ে যেতে ধরতেই বসু সামনে এসে দাড়ালেন।
“ম্যাডাম আপনি!”
তরু তাকালো। কোনো কথা বলল না। মৃন্ময় নিশ্চই রুমে আছে।এখন তার রুমে যাওয়া জরুরি। বসু থামালেন।
“ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?”
“রুমে”
“কোথায় চলে গেছিলেন আপনি। স্যার আপনাকে খুঁজতে খুজতে পাগল প্রায় হয়ে গেছে।”
তরুর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। সে জানতো মৃন্ময় তাকে খুঁজবে।
” স্যার তো রুমে নেই।সেই যে আপনাকে খুজতে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে এখনো ফেরেনি।”
তরুর চিন্তা হলো। সে ওই অবস্থাতেই কটেজের বাইরে এলো। মৃন্ময় নিশ্চই এখানে ফিরে আসবে। হঠাৎ তাকে উদ্দেশ্য করে দুজন বলাবলি করছিল,
“ইনি সেই মেয়ে না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, ইনিই”
এগিয়ে এলো লোকদুজন।একজন প্রশ্ন করলো,
“আপনার নাম পাখি?”
“না”
“কিন্তু ওই লোকটা তো আপনার নাম পাখি বলছিল”
তরুর মনে পড়ল মৃন্ময় তাকে পাখি ডাকে।এদের কাছেও হয়তো তাকে দেখেছিল নাকি জিজ্ঞেস করেছে। সে প্রশ্ন করলো,
“কোন লোকটা?”
” একটা লম্বাটে লোক। আপনার ছবি দেখিয়ে খুঁজছিল।”
“কোথায় তিনি এখন?”
“ঐযে ওদিকে খাদ আছে না। সবাই বারণ করেছিল ওই রাস্তাটা বিপদজনক।কিন্তু উনি তো শুনলেন না। শুনলাম ওদিকে নাকি একটা কালো গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। লোকটার কাছেও এরকম গাড়ি ছিল।আমরা সেদিকেই যাচ্ছিলাম”
তরুর বুক ধুকপুক করে উঠলো।সে আর কিছু ভাবল না। দৌড়ে বেরিয়ে গেল কটেজের গেট পেরিয়ে। পেছন থেকে কেউ কিছু বলছিল, কিন্তু কানে গেল না কিছুই। বৃষ্টি এখন ঝাপসা পর্দার মতো পড়ছে। রাস্তায় কাদা, জল, আর হাওয়ায় গাছের পাতার কাঁপন। তরু হঠাৎ পিছলে গেল, সে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু হাতের ভর দিয়ে নিজেকে সামলে নিল। পায়ে ব্যথা, হাঁটু ছড়ে গেছে, তবু সে থামল না।
পথের পাশে লোকজন জড়ো হয়েছে। কেউ একজন চেঁচিয়ে বলল,
“ওইদিকে যাবেন ! গাড়িটা পুরো উল্টে গেছে, এখনো পুলিশ আসেনি!”
তরু কিছু শুনছে না। দৌড়ে গেল নিচের দিকে, যেখানে রাস্তা ভেঙে গিয়ে গভীর খাদে মিশে গেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, কালো রঙের একটা গাড়ি পাশের পাথরে ঠেস।
সে নিচে নামতে গেল, কিন্তু মাটি পিচ্ছিল। হঠাৎ একবার পিছলে গিয়ে ধপ করে পড়ে গেল কাদায়। হাঁটু কেটে রক্ত বেরোচ্ছে, কাদা লেগে যাচ্ছে মুখে, তবু সে উঠে দাঁড়ালো।
দু’জন গ্রামবাসী এগিয়ে এলো । একজন বলল,
“গাড়ির ভেতরে কেউ ছিল, বুঝতে পারছি না বেঁচে আছে কিনা।”
তরু ঠোঁট কাঁপিয়ে বলল, “দেখতে দিন আমাকে, প্লিজ!
মুহূর্তেই বুকের ভেতর ধপ করে কিছু ভাঙার শব্দ হলো।সে এগিয়ে গেল, কাদা, বৃষ্টি, রক্ত মেশানো মাটির গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। গাড়িটার হেডলাইট এখনো জ্বলছে।তরুর হাঁটু কেঁপে উঠল।সে কাচের টুকরো সরিয়ে দেখল সিটে রক্ত, ছেঁড়া শার্ট, পড়ে থাকা ঘড়ি।ঘড়িটা তুলতেই হাত কাঁপল তার।ওটাই মৃন্ময়ের ঘড়ি।
চারপাশের একজন লোক বলল,
“উনি একাই ছিলেন গাড়িতে। আমরা টেনে তুলেছি, খুব জোরে মাথায় লেগেছিল। অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে।”
তরুর গলা শুকিয়ে গেল। হসপিটাল এ নিয়ে গেছে শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এল তার মধ্যে।
“কোন হাসপাতালে?”
“সিটি হসপিটাল”
চলবে,,
Share On:
TAGS: ডার্ক ডিজায়ার, দূর্বা এহসান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১
-
ডার্ক ডিজায়ার গল্পের লিংক
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৩
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৯
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৬
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১১
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ৭
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১৪
-
ডার্ক ডিজায়ার পর্ব ১০
-
ডার্ক সাইড অফ লাভ পর্ব – ২