জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৭
ইভেন্টের ভেতর সবাই যে যার মত মজা করে চলেছে। শুধু আদ্রিতা বসে চিকেন কাবাব খাচ্ছে আর আদ্রিস তার পাশে বসে ফোন স্ক্রল করছে। হটাৎ করেই আদ্রিসের ফোন বেজে ওঠে। আদ্রিস ফোন ধরতে ওপাশ থেকে কিছু কথা ভেসে আসে। আদ্রিসের চোখে মুখে রাগ ফুটে ওঠে।
“আসছি।”
কথাটা বলে আদ্রিস ফোন কেটে দেয়।
এরপর আদ্রিতার দিকল তাকায়। আদ্রিতা তার খাবার নিয়ে মস্তিতে আছে।
আদ্রিস আদ্রিতার থেকে প্লেট টা নিয়ে নেয়। আদ্রিতা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো? খাচ্ছিলামত!”
“আমার কথা শোন।”
“কি?”
“আমি বাহিরে যাচ্ছি। তুই যদি মিরা আপুর চাচাত ভাইদের সাথে কোন রকম কথা বলিস। তোকে আমি মেরেই ফেলব কিন্তু। আমার কথাটা ভালো মত মাথায় ঢুকিয়ে নিস। তুই কোন রকম ওদের সাথে কথা বলবি না। আমি না আসা পর্যন্ত তুই নিরিবিলি থাকবি।”
আদ্রিতা, মাথা নাড়ায়।
“আচ্ছা।”
“আদ্রিতা মনে রাখিস তোকে কিন্তু মেরেই ফেলব আমি।”
আদ্রিতার চোখ দু’টো আদ্রিসের দিকে স্থির। আদ্রিস, আদ্রিতার গালে হাত রাখে,
“আমি যাচ্ছি ভদ্র হয়ে থাকবি।”
আদ্রিস উঠে চলে যায়। আদ্রিতা তখন নিজের খাবারে মনোযোগ দেয় আবার।
ধিরে ধিরে হাসি ঠাট্টা নাচে মেতে ওঠে।
স্টেজে উঠে মিশু, ঐশী ড্যান্স করছে। ওদিকে মিরা বউ সাজে বসে আছে। প্রিয়া, আদ্রিতার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এইসব দেখে সেও এনজয় করছে। মিরার চাচাত ভাই বোনও নাচতেছে। সবাই বেশ মজায় আছে।
হটাৎ করেই মালিহা বেগম আদ্রিতার কাছে এসে দাঁড়ায়,
“আদ্রিতা।”
“জি আন্টি।”
“আদ্রিতা বাজার থেকে কাঁচা হলুদ আনতে হবে সামনেই স্বপ্ন। ওখানে কাচা হলুদ পাওয়া যায় একটু নিয়ে আসবে কি?”
“কিন্তু আন্টি আমিত কিছু চিনি না।”
“সাহেল যাবেত তোমার সাথে।”
“সাহেল ভাইয়া আসলে আন্টি।’
” আদ্রিতা প্লিজ ওরা ড্যান্সে ব্যাস্ত, কাঁচা হলুদ না হলে আমার শ্বাশুড়ি হুলুস্থুল বাঁধিয়ে নেবে।”
আদ্রিতা বেগতিক অবস্থায় পড়ল। কি করবে সে যাবে কিন্তু আদ্রিস যে নিষেধ করে গেল। আদ্রিতা বলল,
“বড় মাকে জিজ্ঞেস করব একবার?”
“বড় মা যেতে বলেছে।”
আদ্রিতা মাধবী বেগমের দিকে তাকায়। মাধবী বেগম একটু দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি ইসারা করে হ্যা বলেন। আদ্রিতা তখন আর কিছু বলতে পারেনা। তাকে যেতে হয় সাহেলের সাথে।
সাহেল গাড়িতে ড্রাইভ করছে। আদ্রিতা পাশে বসে আছে।
আদ্রিতার বেশ অসস্তি হচ্ছে। সাহেলের চোখ আদ্রিতার শরীরের উপরেই টিকে আছে। যেন আদ্রিতাকে জামা পরা অবস্থায় রেপ করে ফেলছে। আদ্রিতা বিরক্ত হয়ে সাহেলের দিকে ফিরে চায়।
“আর কতক্ষণ? আন্টি যে বলল স্বপ্ন এখানেই।”
“হ্যাঁ স্বপ্ন এখানেই কিন্তু আমরাত স্বপ্নে যাচ্ছি না।”
আদ্রিতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
“তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“গেলেই বুঝবে।’
” না না না ছাড়ুন আমাকে। আমি যাবনা আপনার সাথে নামান আমাকে।”
আদ্রিতা ছোটাছুটি শুরু করে তা দেখে সাহেল,আদ্রিতার হাত ধরে বসে এক হাতে,
“আদ্রিতা সিনক্রিয়েট করোনা। রাস্তার ভেতর তোমাকে কিন্তু রাগ করতে বাধ্য করোনা আমাকে।”
“ছেড়ে দিন আমাকে। আমি বড় মাকে সব বলে দেব।’
” বলো তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।”
আদ্রিস ইভেন্টে ফিরে চারিদিকে শুধু আদ্রিতাকেই খুঁজছে। হটাৎ করেই আদ্রিসের কাঁধে কেউ হাত রাখে। আদ্রিস ফিরে চায়।
ঐশীকে দেখে বিরক্ত হয়।
“তুমি এখানে কি করছো?”..
“অন্য কাউকে খুঁজছিলে বুঝি?”
“সমস্যা কি তোমার? এত চিপকে থাকো কেন?”
“কই নাত। চিপকে থাকিনা। চিপকা কাকে বলে জানো?”
আদ্রিসের মাথায় এবার একটা বুদ্ধি আসে। সে ঐশীর হাত ধরে বসে হটাৎ করে। ঐশী অবাক হয়ে তাকায়।
আদ্রিস মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে,
“আসলেই চিপকাত অন্য কিছুকে বলে। ত তুমি বলো আদ্রিতা কেথায়?”
ঐশী এই মুহুর্তে প্রচন্ড ব্লাস করছে। ওর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আদ্রিসের দিকে তাকিয়ে ঐশী উত্তর দেয়।
“আদ্রিতাকে, সাহেল ভাইয়া নিয়ে গিয়েছে।”
আদ্রিতার চোখ দু’টো হটাৎ করেই বদলে যায়। ঐশীর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বসে।
ঐশী আহ করে ওঠে,
“কি করছো আদ্রিস লাগছে।”..
” কেথায় গিয়েছে সেটা বলো।”
ঐশী, আদ্রিসের মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। একটু পিছিয়ে যায় ঐশী,
“ভাইয়া তোমার কি হয়েছে?”
“আমি কি জিজ্ঞেস করেছি। কোথায় গেছে?’
” স্বপ্নে গেছে কাঁচা হলুদ আনতে।”
আদ্রিস আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না। ঐশী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ঐশীর দিকে।
আদ্রিস গাড়িতে উঠে স্টেয়ারিং এ জোরে ঘুষি মারে।
“আদ্রিতার বাচ্চা তোকে বলেছিলাম,তুই যাবি না। তুই তাও গেছিস। তোকে আমি আজ মেরেই ফেলব। একটা বার হাতে পাই। অপেক্ষা কর তুই। তোর পা কেটে আমি কুত্তাকে খাওয়াব।
কুত্তার বাচ্চা আজকে তোকে হাতে নাতে ধরী। তোর এক দিন আমার দুই দিন। “
আদ্রিস গাড়ি চালানো শুরু করে ফুল স্প্রিডে।
সাহেলের গাড়িটা একটা সুনসান সড়কে এসে থামে। দু পাশে গাছ পালা বাদে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আদ্রিতা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়।
“এ এটা কোথায়? আমাকে ছাড়ুন। এটা কোথায় নিয়ে এলেন?”
সাহেল গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে আদ্রিতার হাত ধরে আদ্রিতার দিকে তাকায়।
“আদ্রিতা, আমার গার্লফ্রেন্ডের হয়ে যাও প্লিজ।”
আদ্রিতার ঘামছে। ওর প্রচন্ড ভয় লাগছে। আশেপাশে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো বাদে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
“কি করছেন আপনি এগুলো আমি বড় মাকে বলে দেব৷ “
“দেও, বড় মাকেও জানতে দেও আমি মতো নাকে কতটা ভালোবাসি।”
সাহেল কেমন পাগলের মত আচরণ করছে। আদ্রিতা তা দেখে ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগে।
সাহেল এগিয়ে আসতে থাকে। হটাৎ আদ্রিতার হাতের চাপে গাড়ির দরজা খুলে যায়। আদ্রিতা পেছন হয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। আদ্রিতা বেশ ব্যাথা পায়। তবে সেই ব্যাথাকে তোয়াক্কা না করে আদ্রিতা উঠে দৌড় শুরু করে ।
সাহেল চিৎকার করে।
“আদ্রিতার বাচ্চা। বল ভালোবাসি। নাহলে আজ তোর রেহায় নেই।”
সাহেল বেরিয়ে আদ্রিতার পিছু নেয়। এরপর আদ্রিতার কনুই ধরে টান মারে। আদ্রিতা নিজেকে ছুটিয়ে নিতে চায়। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। আদ্রিতা সাহেলের গালে বুকে থাপ্পড় লাগাতে থাকে। কিন্তু সাহেলকে ছাড়াতে পারছে না।
এই ধস্তাধস্তিতে আদ্রিতার শাড়ির এক পাশ খুলে গিয়েছে। আদ্রিতা তা দেখে আরও ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার শুরু করে সে।
হটাৎ করেই সাহেলের গালে জোরেশোরে ঘুষি পড়ে। সাহেল মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তায়।
আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায়।
আদ্রিসের শরীর কাঁপছে রাগে।
আদ্রিতা, কোন কিছু না ভেবে জড়িয়ে ধরে আদ্রিস কে।
আদ্রিস সিংহের ন্যায় হুঙ্কার ছাড়ে,
“শুয়োরের বাচ্চা। তুই আমার আদ্রিতার দিকে হাত বাড়াস। আমার আদ্রিতার দিকে।”
আদ্রিস গিয়ে সাহেলের মুখের উপর ঘুষি মারতে থাকে। সাহেল কাতর হয়ে পড়েছে। আদ্রিতা ভয় পেয়ে যায়। সাহেল মরেই যাবে। আদ্রিতের হাত গলা রক্ত রক্ত হয়ে গিয়েছে। আদ্রিস কে প্রচন্ড ভয়ানক দেখাচ্ছে এই মুহুর্তে।
আদ্রিতা, জড়িয়ে ধরে আদ্রিস কে।
“ছাড়ুন, ছেড়ে দিন প্লিজ প্লিজ।”
“ছাড় আমাকে ওকে আমি মেরেই ফেলব। “
“না না ছাড়ুন। “
আদ্রিস থেমে যায়। আদ্রিতা ভয় পেয়ে আছে। ওদিকে সাহেল রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। আদ্রিস ফোন বের করে কাউকে ম্যাসেজ করে আদ্রিতার চুল ধরে বসে। আদ্রিতা ব্যাথায় কতরে ওঠে। আদ্রিস কোন কথা ছাড়াই আদ্রিতার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরে।
আদ্রিতার কাছে এই ছোঁয়া নতুন। আদ্রিস এর আগে কখনোই এমন করেনি। আদ্রিস, সমান তালে আদ্রিতার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে টানছে। আদ্রিস গালে রক্তের স্বাদ পায়। কিন্তু আদ্রিতাকে ছাড়েনা।
প্রায় ২০ মিনিট পর আদ্রিতার নিঃশ্বাস যখন আঁটকে যাচ্ছে তখন আদ্রিস আদ্রিতাকে ছেড়ে দেয়। আদ্রিতার মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
আদ্রিস, আদ্রিতার ক্ষত ঠোঁটে বৃদ্ধ আঙ্গুল ছোঁয়ায়।
“তোকে বলেছিলাম কোথাও যাবিনা বলেছিলাম?”
“আ আমি যেতে চাইনি আন্টি।”
আদ্রিস ছেড়ে দেয় আদ্রিতার চুল। আদ্রিতাকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে আদ্রিতাকে টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে উঠায়।
আদ্রিতা ভয় পেয়ে গিয়েছে। সে চুপচাপ কোন কথা বলছে না। আদ্রিস যখন দেখে আদ্রিতার শাড়ি এক পাশে খুলে গিয়েছে তখন আদ্যি সের আরও বেশি রাগ হতে লাগে। আদ্রিস দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তোকে আমি মেরেই ফেলব। ইচ্ছে করে মেরে কুটো কুটো করে নদীতে ফেলে দিয়ে আসি। “
আদ্রিতা আরও ভয় পেয়ে যাচ্ছে আদ্রিসের কথা শুনে।
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪