জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৬
সকাল থেকেই রাজধানী নিস্তব্ধ। কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। আসরাফ খান অফিস রুমে বসে ভাবাছিলেন পর্শুদিনের ঘটনা।
ডি এন এ টেস্ট এর রিপোর্ট আসার পর লাসটা যে এভির ছিল এটা কনফর্ম করা হয়েছে। আসরাফ খান অফিস রুমে বসে কিছু ভাবছিলেন এমন সময় ওনার কেবিনে প্রবেশ করে ওনার সেক্রেটারি লুনা।
“স্যার আসব? “
আসরাফ খানের ধ্যান ফিরে।
“হ্যাঁ এসো।”
“স্যার কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
“তেমন কিছু নয়। কি জন্য আসা?”
“এই যে ফাইল গুলো।”
“ওখানে রেখে যাও।”
লুনা ফাইল রেখে বেরিয়ে যায়।
আসরাফ খান এরপর অফিসের কাজে মনোযোগ দেয়।
আদ্রিস গাড়ির লাইসেন্স পেয়েছে কিছুদিন আগে। তবে সে গাড়ি চালায়নি এখনো।
সে মনে মনে ভেবেছে আদ্রিতাকে নিয়েই সে প্রথম গাড়ি ড্রাইভ করবে।
সবার লাগেজ ওঠানো শেষ হলে আদ্রিতা বের হয়।
আদ্রিস ইসারা করে ড্রাইভার কে চলে যেতে বলে।
সামনের গাড়িটা চলে গেলে আদ্রিতা বেরিয়ে আসে।
“ও মা আমাকে রেখে চলো গেল?”
“এই গাড়িতে ওঠ।”
“এটা কে চালাবে? চাচাত ওই গাড়িতে ছিল।”
“গাধা। যাবি না রেখে যাব এখানে?”
“না না আমি যাব। বিকালে হলুদের অনুষ্ঠান মিস করতে চাইনা।”
আদ্রিতা উঠে বসে। আদ্রিস উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে,
“আপনি গাড়ি চালাবেন?”
“ত কে চালাবে?”
“ইয়ে মানে আপনিত চালান নি কখনো।”
“আমি এখন বাচ্চা নেই আদ্রিতা। আর একটা কথা বলবিত ফেলে দেব জানালা দিয়ে।”
আদ্রিতা ভেংচি কাটে,
“শুধু ধমকায়। কথায় কথায় ধমকায়। “
“কি বলছিস?”
“কিছু বলছি না।”
“না বলাই ভালো।”
কথাটা বলে আদ্রিস ঝুঁকে এগিয়ে আসে আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা একটু ভয় পেয়ে যায়। আদ্রিস সিটবেল্ট লাগিয়ে আদ্রিতার চোয়াল দু’টো চেপে ধরে। আদ্রিতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
“যতক্ষণ চুপ থাকিস ততক্ষণই ভালো লাগে। মুখ খুললে সব সময় বাজেই বকিস।”
কথাটা আলে আদ্রিস ফের ঠিক হয়ে বসে।
আদ্রিতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সব সময় এমন রুড কেন। ভালো লাগেনা তার।
গাড়িটা আদ্রিস বেশ স্মুথলি চালায়। মনেই হয়নি সে নতুন ড্রাইভার।
মিরাদের বাড়িটা এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
মিরা এ বাড়ির বড় মেয়ে।
মিরারর চাচাত ভাই বোন চাচা, চাচি সবাই এসেছে। আদ্রিসের গাড়ি বাড়িতে ঢোকার পর ঐশী দৌড়ে আসে।
আদ্রিস বেরিয়ে আদ্রিতার দিকের দরজা খুলে দেয়। আদ্রিতা বেরিয়ে আসে। ঐশী আদ্রিতাকে, আদ্রিসের সাথে দেখে বিরক্ত হয়ে যায়।
তবুও মুখে হাসি নিয়ে আদ্রিসের সামনে চলে আসে,
“আদ্রিস ভাইয়া। কেমন আছো?”
“ভাইয়া হই তোর আপনি বললেই হয়।”
কথাটা বলে আদ্রিস, ঐশীকে ইগনোর করে ভেতরে চলে যায়। আদ্রিতা তাকিয়ে থাকে।
এরপর মৃদু হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে। ঐশী, আদ্রিতার হাসিটা দেখে ফেলে।
“কিরে তুই হাসছিস কেন?”
“কই হেসেছি?”
“নাহলে কি? দেখলাম তুই হাসলি।”
“না না। আমি হাসিনি।”
আদ্রিতা ভেতরে যেতে নিলে ঐশী আদ্রিতার হাত ধরে বসে। আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“কি হয়েছে?”
“আদ্রিতা এটা কথা ভুলে যাস না। আমি ঐশী, আমার বাবা সরকারি চাকরি করে। তোর বাবা খান কর্পারেশনের সামান্য এমপ্লয়ি মাত্র। সেটাও আসরাফ চাচুর জন্য। নিজেকে খুব বড় কিছু ভাবিস না। তুই কখনোই আদ্রিস ভাইয়ার যোগ্য নস।”
আদ্রিতা ছাড়িয়ে নেয় নিজের হাত।
“তুমিই হও তোমার আদ্রিস ভাইয়ের যোগ্য। আমার কোন ইচ্ছে ও নেই।”
আদ্রিতা ভেতরে চলে যায়। ঐশী রাগী চোখ তাকিয়ে আছে আদ্রিতার যাওয়ার দিকে।
মিরা, আদ্রিতাকে দেখে জড়িয়ে ধরে,
“কিউট মেয়েটা চলে এসেছে।”
আদ্রিতা মিষ্টি হাসে।
“তোর জন্য আমি অনেক সুন্দর একটা জিনিস কিনেছি। “
“আমার জন্য? “
“হ্যাঁ বিয়ের মার্কেট এর সময় কিনেছিলাম।”
“ধন্যবাদ আপু। কিন্তু এত কিছুর কি দরকার ছিল?”
মিরা, আদ্রিতার গালে হাত রাখে,
“এত ইনোসেন্ট কেন তুই আদ্রিতা? নিজের প্রয়োজন টা কবে বলা শিখবি?”
আদ্রিতা মাথা নুইয়ে নেয়।
“আমিত সবই পাই। আমার ইচ্ছে শুধু পড়ালেখা শেষ করে ভালো কিছু হওয়া। এরপর জানো খুব শখ আমার নামের একটা বাড়ি হবে। পাহাড়ে যাব। মেঘ ধরব। মা বলত, পাহাড়ে গেলে নাকি দুঃখ শেষ হয়ে যায়। আমিও সব দুঃখ পাহাড়কে নিয়ে আসব।”
কথা গুলো বলার সময় আদ্রিতার চোখের কোণায় চিকচিল হয়ে উঠেছিল। মিরা, আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে,
“আমি জানি তুই পারবি। তোর স্বপ্নের পেছনে যে একজন তার জীবনও দিতে পারে আদ্রিতা।”
বিকালে ইভেন্টের আগে সাহেল, ইহান, সোহেল, ইতু, মিতু, রিয়া আরও অনেকেই ঘর ভরে হই হুল্লোড় করছিল।
আদ্রিতাকে শেষ সময়ে মিরা সাজিয়ে দিচ্ছে।
শেষ মেস একটা লাল লিপস্টিক দিয়ে আদ্রিতাকে সাজানো শেষ করে মিরা।
“দেখেছিস কি সুন্দর লাগছে। মাসআল্লাহ এই হলুদ শাড়িতে তোকে কি সুন্দর লাগছে আদ্রিতা।”
“আপু, শাড়িকি সামলাতে পারব?”
“পারবি না মানে। সবাই শাড়ি পরেছে তুই কি করবি তাহলে?”
আদ্রিতা মিষ্টি হাসে।
এমন সময় ওদের রুমে প্রবেশ করে সাহেল,
সাহেলও আদ্রিসের সাথেই এবার এডমিশন দেবে।
সাহেল এক সেকেন্ড এর জন্য আদ্রিতাকে দেখে থেমে গেল। একটা শুকনো ঢোক গিলে গলা পরিষ্কার করল। কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে দু বোন দরজার দিকে তাকায়। সাহেল কাঁচা হলুদ রঙা পাঞ্জাবি পরেছে। আজ সবারই এই রঙা পাঞ্জাবি পরার কথা।
মিরা লিপস্টিক রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে সাহেল?”
“মিরা আপু সবাই ডাকছে নিচে।”
“আসছি।”
“ওকে।”
সাহেল শেষ বার আদ্রিতাকে দেখে বেরিয়ে যায়।
নিচে বাগানের এড়িয়াতে আয়োজন করা হয়েছে। একটা পাশে বউ বসানোর জন্য সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। গান বাজছে। ওদিকে বুফে আয়োজন করা হয়েছে। মেহমানে ভরে উঠেছে পরিবেশ।
আদ্রিতা, মিরাকে নিয়ে বের হয়। বউয়ের কিছু এন্ট্রি ফটোসুট করা হয়।
আদ্রিতা ফটোসুটের সময় সরে আসে সেখান থেকে। আদ্রিতা এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে আদ্রিস কে খুঁজছে। কিন্তু আদ্রিসের দেখা মিলে না। হটাৎ পেছন থেকে কেউ এসে আদ্রিসকে বলে,
“কাকে খুজো?”
আদ্রিতা কেঁপে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে সাহেল কে দেখে দু কদম সরে আয়ে,
“আপনি এত কাছাকাছি কেন এসেছেন?”
“কেন খুব কাছে চলে এসেছি কি?”
“হ্যাঁ। সরে দাঁড়ান।”
সাহেলের কথাটা পছন্দ হয়না। সে আরেকটু এগিয়ে বলে,
“যদি বলি এগাব তখন?”
হটাৎ সাহেলের ঘাড়ে কেউ হাত রাখে,
“তখন মার খাবি ভাই।”
আদ্রিতা হটাৎ আদ্রিস কে দেখে অবাক হয়। পাঞ্জাবি তার শরীরের উপর কি সুন্দর ফুটে উঠেছে৷ বাম হাতে ঘড়ি। ছেলেটাকে এত সুদর্শন কিভাবে লাগে।
“মার কেন খাব? তোর কাছে আসছি নাত।”
আদ্রিস, মুখ বানিয়ে বলে,
“আমার কাছে কেন আসবি। তোর কি ম্যাসিনে সমস্যা।”
“ইউ, তোর ম্যাসিনে সমস্যা।”
“আমার ম্যাসিনে সমস্যা কিনা বিয়ের পর একদিন রুমে কান লাগিয়ে শুনিস। বউয়ের চিৎকার না শুনলে এরপর বলিস।”
“বাবাহ। সেটাত আমিও বলতে পারি। “
“সরি নট ইন্টারেস্টেড।”
কথাটা বলে আদ্রিস, আদ্রিতার কুনুই ধরে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আদ্রিতা বলদ কিছুই বুঝেনি এতক্ষণে কি কথা হয়েছে। সাহেল দেখে রাগ হয় প্রচুর।
“খুব বেশি বিরক্তিকর তুই আদ্রিস।”
চলবে?
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ২
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৩