জেন্টাল_মন্সটার
লামিয়ারহমানমেঘলা
পর্ব_০৪
খান মেনশন,
সবাই খুব ভালো মনে গেলেও আসার সময় সবারই মন কম বেশি খারাপ ছিল।
মিরার হাতটা তখনো আদ্রিতা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মিরা আদ্রিতার মাথায় হাত বুলায়।
“ভয় পাস না আমরা বাড়িতে চলে এসেছি এখন আর কিছু হবেনা৷”
ওরা সবাই বাড়িতে প্রবেশ করার পর দেখে আসরাফ খান এবং নেওয়াজ খানও চলে এসেছেন। আদ্রিসের খালুও এসেছে। আজ রাতটা সবাই এ বাড়িতেই কাটাবে।
আদ্রিতা ভেতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক চোখ ঘোরায়। তার চোখ দু’টো আদ্রিস কে খুঁজছে। কোথাও আদ্রিস কে দেখা যাচ্ছে না। আদ্রিতা ভয়ে আছে। যেভাবে রেগে বেরিয়েছে। সেখানে মিরা না থাকলে আদ্রিতাকে নিশ্চিত আরও মার খেতে হতো।
মিরা, আদ্রিতাকে উদাসীন দেখে এগিয়ে এসে আদ্রিতার পাশে বসে,
“কি হয়েছে?”
“কই কিছু নাত।”
মিরা, আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ঐশী বেশ খুশি হয়েছে আদ্রিস যে কথা গুলো বলেছে আদ্রিতাকে। যেখানে আদ্রিতার অপমান হয় সেখানে ঐশী বেশ খুশি হয়।
মিরা, আদ্রিতাকে দেখে জারিফ আর প্রিয়াও ওদের পাশে এসে বসে।
ঐশী তা দেখে বিরক্ত হয়। বলেছে না হয় দু’টো কথাই তাতে এত মানুষ সিমপ্যাথি কেন দেখাচ্ছে।
ঐশী গিয়ে মিশুর পাশে বসে।
“মিশু আপু।”
মিশু ফিরে তাকায়।
“হুম?”
“আদ্রিতাকে সবাই খুব বেশি প্রটেক্ট করে তাইনা?”
“কেন বলতো?”
“দেখোনা আদ্রিস ভাই তেমন কি বা বলেছে। সবাই কেমন ওলে হাসানোর চেষ্টা করছে।”
ঐশী জানে মিশু, আদ্রিতার আপন বোন হলেও আদ্রিতাকে মিশুর থেকে ভালোবাসে প্রিয়া বেশি।
প্রিয়া আদ্রিস এর বোন হলেও আদ্রিসের কাজ কর্ম মোটেই তার পছন্দ নয়।
আপর দিকে মিশুও বিরক্ত হয়। কোথাও না কোথাও মিশুও আদ্রিসকে পছন্দ করে। কিন্তু আদ্রিসত কোন ভাবেই আদ্রিতার পিছুই ছাড়েনা।
“আদ্রিতা নেকু কান্না করেই সব জয় করে নেয়।”
“সেটাই বলো। আমিও তাই বলি। কি বা বলেছে আদ্রিস ভাইয়া। এত কান্না করল মিরা আপুকে জড়িয়ে। সিমপ্যাথি পেতে পছন্দ করে।”
রাত ১২ টা। শহর কখনো নিস্তব্ধ হয়না। কিন্তু শহরের ভেতরের আবাসিক গলি গুলো ঠিকই নিস্তব্ধ হয়।
শহর থেকে বেশ দুরে পরিত্যক্ত এক আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং আছে।
আশেপাশে কেউ না আসার কারণে বেশ গাছ পালা জমেছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এখানে কেউ প্রবেশ করেনা। সবার ভাষ্যমতে এখানে ভূতের আড্ডা হয়। কারণ যে দু একজন এ পাশে এসেছে রাতে তারা প্রায়ই শুনতে পেত কারোর চিৎকার অথবা কান্নার শব্দ। অথচ সকালে ভেতরে তেমন সন্দেহজনক কিছুই দেখা যায়না।
প্রায় ২ বছর ধরেই এমন হওয়ার কারণে এখন মানুষ এটাকে ভূতের বাড়ি বলে মনে করে।
এখানে আর কেউ সাহস করেনা আসতে।
বাড়িটার ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবে বাড়ির নিচে একটি সুরঙ্গ আছে। তা দিয়ে নেমে আসলে বিরাট এক বেসমেন্টে খেয়াল করা যায়। বাড়িটা পুরাতন হলেও বেশ কঠিন এবং শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজের পায়ে।
চারজন গার্ড দেখা যায় পাহারাতে। রুমের মাঝ বরাবর চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় একটি ছেলে চিৎকার করছে। তার মুখের উপর কালো কাপড় দেওয়া। ফাঁসি দেওয়ার আগে যেমন কালো কাপড় বাঁধা হয় তেমন।
এমন সময় হটাৎ দরজা খুলে প্রবেশ করে এক কালো পোশাকে আবৃত যুবক। তার মাথায় হুডির টুপি এবং মুখটা মাক্স দিয়ে কভার করা। দৃশ্যমান বলতে শুধু চোখ দু’টো।
যুবক কে দেখে গার্ড’স রা মাথা নুইয়ে সম্মান জানায়।
যুবকটি এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার মুখ থেকে কালো কাপড় সরিয়ে দেয়।
এভি ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।
“ক কে ভাই আপনি? আমাকে এখানে তুলে এনেছেন কেন? আমাকে ছেড়ে দিন। বাবাকে বলে আপনাদের অনেক টাকা দেব।”
এভির কথা শুনে সামনের রহস্যময় যুবক টা অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে। সে হাসিতে মিশে আছে সাইকোনেস। প্রতিটা হাসির শব্দ চার দেয়ালের মাঝে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।
এভি ভয়ে ঘামছে। সে পিছিয়ে নেয় মাথাটা।
ছেলেটা হাসি থামিয়ে এভির দিকে তাকায়। তার চেখে হিংস্রতা। ছেলেটা পকেট থেকে প্যারাক বের করে। এভি ভয়ে আবারো ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু ক্ষমা চাইবার আগেই এভির দু হাতে দুটো প্যারাক গুঁজে দেয়। এভি চিৎকার করে ওঠে।
“আমার দোষ কি ভাই। আমাকে ছেড়ে দিন।”
“যে হাত আমার কলিজার দিকে নোংরা মানসিকতার সাথে এগিয়ে যায়। সে হাতের পরিনাম এটাই হয়। এটাত কেবল শুরু যে চোখ দিয়ে আমার কলিজার শরীরের দিকে তাকিয়েছে সে চোখ আমি খুচে ফেলব। নিজের হাতে।”
এভি ভয় পেয়ে যায়। এভির শরীর এবার মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। এ কেমন নরকে এসে পড়ল সে। সে বার বার ক্ষমা চাইছে কখনো এ মেয়ের জন্য কখনো ও মেয়ের জন্য। এভি তার জীবনে বহু মেয়েকে ইভটিজিং করেছে। তার সাথে ২ -৩ জনকে রেপও করেছে। কিন্তু ওর বাবা বড়লোক হওয়ায় কিছুরই বিচার হয়নি। এভি বুঝতে পারছে না আদও সামনের ছেলেটা তাকে কোন মেয়েকে টিজ করার জন্য শাস্তি দিচ্ছে।
ছেলেটা এভির চিৎকার শুনে শান্তি পায়। যেন তার কান দু’টো এই বাঁচার আকুতি শোনার জন্য ছটফটে করছিল।
ছেলেটা তার গার্ড’স দের ইসারা করে। গার্ড’স রা দু’টো সিক বের করে দেয় ছেলেটার হাতে।
পরমুহূর্তের জন্য এভি মোটেই প্রস্তুত ছিলনা। এভির চোখ দু’টো এক প্রকার খুঁচে বের করা হয়। জ্যান্ত শরীরে এত বড় ধাক্কা সহ্য না করতে পেরে এভি জ্ঞান হারায়। ছেলেটার কালো পোশাক রক্ত রক্ত হয়ে গিয়েছে।এভির এই অবস্থা দেখে ছেলেটার পৈশাচিক আনন্দ পায়। শব্দ করতে হাসতে থাকে। চার দেয়ালের মাঝে এই শব্দ বার বার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসতে থাকে।
খান মেনশন,
সবাই খাওয়া দাওয়া করতে বসেছে। আজ বারবিকিউ পার্টি হয়েছে। আদ্রিস এর খালু আফজাল শেখ বড্ড রসিক মানুষ। তিনি আসলে সব সময় বাচ্চা দের নিয়ে পার্টি করে থাকেন।
আফজান শেখ খাবার নামাতে নামাতে মাধবী বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করেন,
“আদ্রিস কে দেখছি না মাধবী। রাত ১২ টা বাজে ও এত সময় বাহিরে থাকে বুঝি?”
“নাত আদ্রিস ওদের আগেই বাড়িতে এসেছে। দেখলাম মুড অফ। আমাকে বলল ওকে যেন ডিসটার্ব না করি। জানেন ত ভাইয়া ছেলেটা একটু রাগী। তাই ওকে আমি ডাকিনি।”
“ও মা ওরাত ফুচকা খেতে গিয়েছিল। সেখান থেকে আবার কি হলো?”
“আমি ভালো জানিনা ভাইয়া। আদ্রিসের এমনই রাগ হয়।”
“তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু এখন আর রাগ করে থাকলে হচ্ছে না আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসি।”
আফজাল শেখ উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন এমন সময় আদ্রিস শিড়ি বেয়ে নেমে আসে,
“প্রয়োজন নেই আঙ্কেল আমি চলে এসেছি।”
আদ্রিস কে দেখে সব ভাই বোন অবাক। ওরাত ভেবেছিল আদ্রিস ফেরেনি। তবে মাধবী বেগমের কথা শুনে বুঝল আদ্রিস ত ওদের আগে ফিরেছে।
আদ্রিস নেমে খালুকে জড়িয়ে ধরে,
“ইয়াং ম্যান। রাগটা বরাবর তোমার একটু বেশিই।”
“না না একেবারে তা নয়। আমি একটু ডিসটার্ব ছিলাম।”
আসরাফ খান, আদ্রিস কে একটু দেখলেন। এরপর বললেন,
“হয়েছে হয়েছে। এসো সবাই খেতে বসি।”
খাবার টেবিলে আদ্রিসের সব মনোযোগ খাবারের দিকেই ছিল। আদ্রিতা দেখছে আদ্রিস কত নিরিবিলি খাচ্ছে। যেন কিছুই হয়নি।
আদ্রিতা এরপর নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।
জারিফ, আদ্রিতার পাশেই বসেছিল।
জারিফ, আদ্রিতার কানের কাছল ফিসফিসিয়ে বলে,
“আদ্রিস ভাইকে বোঝা যায় না বলো। এইত এত রেগে ছিল। এখন কি শান্ত।”
আদ্রিতা আড় চোখে তাকায়। কুনুই দিয়ে গুতা দেয় জারিফ কে।
“সোজা হয়ে বসো। এত কথা বলোনা।”
আদ্রিসের চোখ দু’টোও আড় ভাবে সেদিকে তাকিয়ে।
এরপর সবাই খাওয়া শেষ করে। যে যার রুমে চলে যায়।
আদ্রিতা বিছনা গুছিয়ে নিচ্ছিল। আজ ওর সাথে মিরা ঘুমাবে। সবাই এসেছে রুমে হবেনা।
মিরা, আদ্রিতার বিছনা গোছানো হবার পর বা পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
“আহ আদ্রিতা তোর রুমটা এত ফ্রেশ থাকে। কি সুন্দর একটা মিষ্টি ঘ্রাণ বাতাসে।”
আদ্রিতা, মিরার পাশে শুয়ে পড়ে।
“তাই বুঝি।”
“হ্যাঁ। তুই সত্যি অদ্ভুত একটা মেয়ে।”
“ও মা সেটা কেন?”
মিরা মৃদু হাসে।
আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“ওটা তুই এখন বুঝবি না। সময় হলে বুঝবি।”
আদ্রিতা মিষ্টি হাসে।
রাত ২ টা।
খান মেনশন তখন ঘুম। কেউই সজাক নেই। সবাই বিকাল থেকে এত মজা করেছে যে ঘুমিয়ে গেছে এত গভীর ঘুমে।
অন্ধকারের মাঝেই উপর থেকে একটি ছায়া মুর্তি ধির পায়ে নিচে চলে আসে।
আদ্রিতার রুমের দরজা খোলাই থাকে। ছায়া মুর্তি সোজা আদ্রিতার রুমে চলে যায়।
আদ্রিতা ঘুমিয়ে আছে।
মিরার হাত আদ্রিতার পেটে।
আদ্রিতার ঠোঁট উল্টে ঘুমায়। দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগে।
ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে আদ্রিতার মুখটা বেশ সুন্দর করেই দেখা যাচ্ছে।
আদ্রিস হাঁটু ভাজ করে বসে,
“আমার ঘুম হারাম করে কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছিস দেখ। ওদিকে আমার চোখে ঘুম নেই। “
আদ্রিস, ঝুঁকে আদ্রিতার কপালে চুমু খায়। এরপর কিছু একটা ভেবে ধিরে মিরাট হাত সরিয়ে দেয় আদ্রিতার পেট থেকে।
আদ্রিতাকে পাজকোলে তুলে নিয়ে আসে নিজের রুমে। আদ্রিতাকে বিছনায় শুইয়ে আদ্রিস পাশে বসে। আদ্রিতার ঘুমন্ত শরীরে দু পাশে হাত রেখে ঝুঁকে আছে আদ্রিস।
“এই বিছনায় তোকে আমার নিচে চাই। আমাদের প্রথম রাত এই বিছনায় হবে। এটা আমার স্বপ্ন জান। তোর ছোট্ট শরীরটা আমাকে নিতে পারবে কবে সেই অপেক্ষা করতে করতে না আমার চুলই পেকে যায়।
সেই সব কিছু ধ্বংস করে দেব যা তোর উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। তুই শুধু আমার থাক, বাকি পৃথিবীকে আমি দেখে নেব। “
আদ্রিস এবার বুঝে আদ্রিতার বুকে মাথা রাখে।
আদ্রিসের চোখে আদ্রিতার জন্য ভালোবাসা এবং আদ্রিতাকে হারানোর ভয় উভয় দেখা যায়।
“কিছু ভয় পাইনা আমি। শুধুমাত্র তোকে হারানোর ভয় ছাড়া পৃথিবীর সব ভয় আমার কাছে ঠুনকো।”
চলবে?
রেসপন্স করো।
Share On:
TAGS: জেন্টাল মন্সটার, লামিয়া রহমান মেঘলা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৯
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৫
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৪
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৭
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১৬
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১১
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ১০
-
জেন্টাল মন্সটার পর্ব ৮
-
জেন্টাল মন্সটার গল্পের লিংক